ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে আমার কিছুক্ষন আগে। আজ আমারর বাসর রাত। খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। কিন্তু আমার কিংবা আমার ইচ্ছাতে বিয়ে হয় নি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। এক বখাটে যুবকের লালসার শিকার আমি। আমার বাবা,মার গলায় ছুরি ধরে আমায় বিয়ে করেছে। এর আগে বিভিন্ন ভাবে আমায় জালাতন করত ও। বড় লোক বাপের ছেলেরা যেমন হয় আর কি। এরা যতই ভাল হোক না কেন এরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। আমাকে অনেক বার প্রপোজ করেছে কিন্তু আমি তো কোন দিন কোন গুণ্ডার বউ হতে চাই নি। আমি আবির কে ভালবাসি জেনেও আমায় জোড় করে বিয়ে করেছে সে..কিছু সময় পর দরজা লাগানোর আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম পশুটা আমার দিকেই আসছে.....
-একদম আমার কাছে আসবেন না বলে দিলাম...
-আমি তোমাকে ভালবাসি তিশা...
-ভালবাসার কি বুঝেন আপ্নারা...শুধু ভোগ করাকেই ভালবাসা এটাই মানেন আপ্নারা....
-কিন্তু তিশা...(বলে আমার দিকে এগিয়ে আস্তেছে)
আমি একটা ছুরি তার দিকে ধরলাম...
-খবরদার আমার সামনে আসবি না...আমার সামনে আসলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলব....
তন্ময় কিছু না বলে বাইরে চলে গেল...
।
।
খুব কান্না আসছে আমার। কি দোষ করেছিলাম আমি যে আমার সাথেই এমন হল।আমি কখনো ভাবতেই পারি নি এমন একটা ছেলের সাথে জীবন কাটাতে হবে আমার....
।
।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। বাবা মা আর আমি তিনজনের সুখি পরিবার আমাদের। ছোট বেলা থেকে খুব ইচ্ছা ছিল বি সি এস ক্যাডার হব। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছি সব সময়। ইন্টার মিডিয়েট দিয়ে ঢাবিতে চান্স পাই। আমার পড়াশোনার সুবিধার জন্য পুরো পরিবার ঢাকায় চলে আসি। প্রথম দিন গিয়ে দেখি কিছু ছেলে মিলে একটা ছেলেকে মারছে..আমি কোন দিনি অন্যায় দেখতে পারি নি....
-কি হল আপ্নারা ছেলেটাকে এভাবে মারছেন কেন....
-তুই কে?যেখান থেকে এসেছিস ওইখানে যা...
-আপ্নারা আমার সামনে একজনকে মারবেন আর আমি চুপ করে থাকেবো নাকি?(রাগ দেখিয়ে)
-এই শোন একে যেমন দেখতেছিস ছেড়া ফাটা কাপড়..বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর একি অবস্থা হবে....
-ঠাস ঠাস...তোদের সাহস হয় কিভাবে এমন ভাবে কথা বলার.....
-তোর সাহস কিভাবে হয় মারার...বলেই আমার হাত ধরে ফেলে.....
-ছাড়ুন ছাড়ুন বলছি....
-এই ছেড়ে দে..(পেছন থেকে বলল)
কথা বলার পরি ছেলেটা আমায় ছেড়ে দেয়। পিছিনে ঘুরে দেখলাম একটা ছেলে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার মাঝে ভয় কাজ করছে....
-কি নাম তোর....
-জি তিশা...
-তোকে আমার ভাল লাগছে। আমি তোকে বিয়ে করতে চাই...
তার মুখ থেকে কথাটা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে যাই। কোন মতে সেই খান থেকে বেরিয়ে আসি। খোজ নিয়ে জানতে পারি ছেলেটার নাম তন্ময়। বড় লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া ছেলে। বখাটেগিরি করে বেড়ায়.....
।
।
এরপর থেকে দেখতাম কোন ছেলে আমার সাথে থাকত না। ছেলেগুলা আমাকে দেখলে ভাবি ভাবি বলে ডাকত। তন্ময় আমাকে বারবার প্রপোজ করলেও ওকে দেখে আমার খুব রাগ হইত.....
-তিশা আই লাভ ইউ...
-ঠাস ঠাস...
এই নে আমার উত্তর...
-আমি তোমাকে আমার করেই ছাড়বো.....
-এখান থেকে গেলে খুশি হব...
তন্ময় চলে গেল। আমার বান্ধুবিরা আমায় এসে বলল...
-তন্ময় ভাই মনে হয় তোকে সত্যি ভালবাসে...
-এইসব ছেলেকে আমি ভালবাসি না... তোরা ভাল করেই জানিস আমি আবির কে ভালবাসি....
-যাই হোক আজ যেটা করলি তুই কেউ থাকলে এতক্ষনে কবরে শুয়ে থাকত....
।
।
দিন দিন তন্ময় এর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেল। ওর ভয়ে আবির আমার সাথে বেশি সময় থাক্ত না। একদিন আমাকে আবিরের সাথে দেখে ফেলে....সেইদিন সন্ধায় আমার বাসায় জোড় করে ঢুকে।আমার মা বাবার গলায় ছুরি ধরে বলে...
-তুমি যদি আমায় বিয়ে না করো তাহলে তোমার মা বাবাকে শেষ করে দিব....
সেইদিন ভয়ে বিয়ে করি। তারপর সে তার মা বাবাকে নিয়ে আসে। আমার বাবা তার বাবার কম্পানিতে জব করে। তারা আমাকে বউ হিসেবে মেনে নেয়। যার ফলে আজ বিয়ে হল.....
।
।
কিছু না ভেবে আবির কে ফোন দিলাম....
-আবির আমাকে এইখান থেকে নিয়ে যাও প্লিজ...
-তুমি চিন্তা করিও না সময় মতো তোমাকে আমি নিয়ে যাব....
আবিরের সাথে কথা বলে ফোন রাখা মাত্রি পেছনে ঘুরে দেখি তন্ময় দাঁড়িয়ে...
-কার সাথে কথা বলছিলে....
-আপনাকে বলতে হবে নাকি....
মুহুতেই একটা জানোয়ারের রুপ ধারন করল সে। কুকুরের মত মারতে থাকল আমাকে। সিগারেট দিয়ে আমার হাতে ছেকা দিতে লাগল সে....
-আমার খুব লাগছে প্লিজ আমায় ছেড়ে দে...
খেয়াল করলাম উন্মাদের মত করছে সে। আমাকে মনে হয় মেরেই ফেলবে সে। খুব কস্ট লাগছে
কিন্তু জানোয়ারটার চোখেও পানি।আমি কোন মতেই ছাড়াতে পারছি না ওর থাবা থেকে। ও অল্প অল্প করে আমাকে সিগারেটের ছেকা দিতে লাগল...
-প্লিজ আমায় ছেড়ে দেন আমার খুব কস্ট হচ্ছে....
চলবে...
Writer:- Aronno Joy