> ও আমায় ভালোবাসেনি পর্ব ১, ২, ৩ - Boipoka365
-->

ও আমায় ভালোবাসেনি পর্ব ১, ২, ৩ - Boipoka365

০১.

স্যরি মিথি পারলে মাফ করবে আমাকে । আমি আসলে চারুকে ভালোবাসি তোমাকে না , সেই স্কুল লাইফ থেকেই আমাদের সম্পর্ক ছিল কিন্তু মাঝখানে একটা তিক্ত সময় না চাইতেও চলে আসে .. 
চারু আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না ব্যাপারটা! 
আর এ কারণেই... 
আই হোপ তুমি বুঝতে পারবে আর প্লিজ পারলে মাফ করবে আমাকে? 
,
এতটুকু বলেই থামলো ফয়সাল । 
আমার চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইছে , হৃদয় ভেঙে চুরমার! কিন্তু তবুও নিজেকে সামলে রেখেছি বড্ড কষ্ট করে । 
দু'টো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করার অধিকার আল্লাহ আমাকে দেননি আর ভালোবাসা জোর করে আদায় করে নেবার শক্তিও দেননি! 
এই ব্যাপারে আমি কি বলবো খুঁজে পেলাম না । 
কান্নাগুলি গলার মাঝে এসে আটকে গেছে , আমিই আটকে রেখেছি জোর করে ।
বহু কষ্ট নিজেকে সামলে একটু হাসলাম আমি । 
হেসেই ফয়সালকে বললাম_ যাক প্ল্যান কাজে লাগলো তাহলে? 
-- প্ল্যান? 
ফয়সাল আর চারু আপু দু'জনেই একসাথে বলে উঠলো আমাকে । 
-- হুউউ , প্ল্যানই তো ।
আপনাকে আর চারু আপুকে মেলাবার জন্য কত্ত পরিশ্রম করতে হলো আমাকে , অভিনয় করলাম ভালোবাসার যাতে আপু জেলাস হয় আর আপনার কাছে ফিরে আসে । 
উফফ আমার পরিশ্রমের ফল পেলাম তাও আবার এত্ত মিষ্টি একটা! 
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে হলো আমাকে জোর করেই.. 
আমার কথা শুনে ফয়সাল আর চারু আপু দু'জনেই হেসে ফেললো ।
একসাথে বললো_বাচ্চাই রয়ে গেলে তুমি! 
আমিও মাথা নাড়িয়ে বললাম_তা তো অবশ্যই! 
তারপর আমিই আগে বললাম_ উহুম উহুম আমার কিন্তু জলদি খুশির খবর চাই। 
চারু আপু একটু লজ্জা পেলো আর ফয়সাল মাথা চুলকে বললো _পাবে পাবে! 
তারপর আরো কিছু বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই আমার ফোনটা বেঁজে উঠল । 
ফোনটা পেয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম মনে হলো । 
এক্সকিউজ মি বলে উঠে সাইডে চলে আসলাম । 
বাবা কল করেছেন , কিন্তু আমি আসলে রিসিভ করলাম না ।বাবার কন্ঠ শুনলে আমি মোটেই কান্না আটকাতে পারবো না তাই বেশ কিছু সময় ব্যায় করে ফোন কেটে ওদের কাছে গেলাম । 
ব্যাগ নিতে নিতে তাড়াহুড়ো করে বললাম_ আমার আসলে এক্ষুণি বাসায় যেতে হবে , বাবা কল করেছিলেন । 
ফয়সাল বললেন_আরেহ্ বসে যাও খানিকটা আঙ্কেলকে আমিই বুঝিয়ে বলবো । 
আমি বললাম_নাহ্ রেজাল্ট খারাপ হয়েছে বাবা বেশ রেগে আছেন! আমি বরং যাই... 
তল্পিতল্পা করে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে আসলাম । 
আসার সময় বলে আসলাম_খুব ভালো থাকবেন আপনারা! 
বিনিময়ে ওরা হাসলো । আপু বললো তুমিও ভালো থেকো । 
মনে মনে শুধু বলে উঠলাম_ আমার ভালো থাকাটাই আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি এখন কি আর ভালো থাকতে পারবো? 
,
রিকশা করে যাওয়ার সময় ঠিক করে ফেললাম আমি আজই লন্ডন চলে যাব । 
ফয়সালকে মিথ্যে বলেছি আমি , আমার রেজাল্ট খারাপ হয়নি বরং এতটাই ভালো হয়েছে যে আমাকে ল-নিয়ে বিদেশে পড়বার সুযোগ দেয়া হয়েছে । 
৪ বছরের কোর্স , ভেবেছিলাম মানুষটাকে ছাড়া এতদিন থাকতে পারবো না তাই যেতে চাইছিলাম না কিন্তু আজ মানুষটার থেকে দূরে যাওয়া বড্ড প্রয়োজন মনে হচ্ছে । 
জীবনটা বড়ই অদ্ভুত , আমরা যা চাই তা পাইনা 
এই চিরন্তন সত্যটি আমি একদম ছোট থেকেই পদে পদে টের পেয়েছি । 
ছোট থেকেই আমি সবসময় চাইতাম অন্য সবার মত একটা নরমাল লাইফ , নরমাল ফ্যামিলি । 
পুরো পৃথিবীর কাছে আমার পরিবার নরমাল হলেও আমার কাছে মোটেই নরমাল ছিলো নাহ । 
কারণ আমি ছোট থেকেই আমার মায়ের ভালোবাসা পাইনি । 
এর কারণ হলো মা মনে করেন তার একটা সন্তানকে আমি খুন করেছি । আচ্ছা এমনও কি হয়? কেউ নিজেরই ভাই/বোনকে খুন করতে পারে কখনো? 
পারেনা । এটা সবাই জানে শুধু মা বিশ্বাস করেনা । 
মা যখন চার মাসের গর্ভবতী তখন বয়স আমার সাত । 
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পর মেলায় যাব বলে বায়না করছিলাম । 
বাবা তখন অফিসিয়াল কাজে চট্টগ্রাম গেছেন । 
মা বলছিল আমায় বিকেলে নিয়ে যাবে কিন্তু আমার তক্ষুনি যাওয়া চাই! 
আমি রেগে , কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ করে ফেললাম । 
মা খাবার দিয়েছিলেন সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে একাকার করে দিয়েছিলাম । 
মা যখন ঘরে আসলেন আমাকে থামাতে তখন খাবারের সাথে যে পানি পড়েছিল ফ্লোরে, সেই পানিতে স্লিপ কেটে উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন । 
পেটে আঘাত লেগে মিসক্যারেজ হয়ে গেলো আর তারপর থেকে হয়ে গেলাম আমি খুনি । 
অদ্ভুত ভাবে সেইদিনের পর থেকে আমার জীবনে রাগ আর জিদের কোনো জায়গা থাকলো না । 
হয়ে গেলাম নরম সরম , শান্তশিষ্ট অবহেলিত একটি মেয়ে । 
মা আমাকে দেখতে পারতেন না বলে বাবা ফুপির বাসায় রেখে আসলেন । 
ফুপি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন , তিনি চেষ্টা করতেন মায়ের অভাব পূরণ করার কিন্তু মা তো মা ই হয় । ফুপি কি মা হতে পারে?? 
ফুপির বাসায় আমার দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু সেখানকার ঠিকানাটাও স্থায়ী হলো না আমার । 
ও লেভেল শেষ করার পরপরই ফুপির ছেলে রাইদ ভাই আসলেন বিদেশ থেকে । 
আর এরপরই আমার জীবনের আরেকটা অধ্যায়ের সূচনা হলো । 
যার সমাপ্তি হয়তো ফয়সালের কাছে এসে ঠেকলো.. 



কোথা থেকে আসা হচ্ছে নবাবজাদির? রিকশা থেকে নামা মাত্রই কথাটি কানে আসলো । 
মাথা উঁচু করে দেখলাম মা বেলকোণীতে কফির কাপ হাতে করে এদিকে তাকিয়ে আছেন,চোখে মুখে তার রাজ্যের বিরক্তি । 
একটুখানি হাসলাম , রিকশাওয়ালা মামা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন । 
পার্স থেকে পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে ওনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বাজারের ব্যাগ দু'টি নামালাম৷ 
উনি এখনো অবাক সুরে তাকিয়ে । 
যেতে নিয়ে আবার ফিরে এসে ওনাকে বললাম_মামা কাউকে বলোনা যেন এই বাড়ির একটা মেয়েকে এভাবে ডাকা হয় আর প্রশ্ন করা হয় ঠিকাছে? 
আমার কথা শুনে রিকশা চালক ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন । 
আবার মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন । আমি হাসলাম , লোকটা জলদি রিকশায় টান দিলেন । 
এবার আমার শব্দ করে হাসতে মন চাইলো , নিশ্চয়ই পাগল ছাগল ভাবছে আমাকে । 
কাজের মেয়ে ভাবতে পারতো কিন্তু আমার শরীরে মোটামুটি একটা দামী কালো আবায়া পরা ছিলো , হাতেও সেরকমই দামী ব্যাগ আর ফোন । 
এমন লুক দেখে তো কাজের মেয়ে ভাবা চলেনা , অযৌক্তিক হতো ভাবনাটা! 
যাহোক পথিমধ্যে আমি বাজার করে নিয়েছিলাম , বাজার করার কথা আমার নয় তবুও কি মনে করে দাঁড়িয়েছিলাম বাজারের দিকটা । 
আমি জানতাম মাস কাবারী বাজার শেষ , তাই আর দেরী না করে সব কিনে নিয়ে নিয়েছি । 
ব্যাগ দু'টো প্রচন্ড ভারী হওয়ায় হাত ছিঁড়ে যাবার যোগাড় আমার , তবুও একা একাই টানতে হচ্ছে । 
আমাদের বাসাটা ৪ তলা কিন্তু থাকি আমরা তিন তলাতে । 
দোতলা বেয়ে উঠতেই আমার অবস্থা নাস্তানাবুদ । 
না পেরে সিঁড়ি ঘরের দিকটায় একটু দাঁড়ালাম , নিঃশ্বাস দ্রুত ওঠানামা করছে আমার । 
দু মিনিট না বসলে মনে হয় দম আটকে মরে যাব!
তাই নিচের সিঁড়িতে বসে পড়লাম , উপর থেকে মায়ের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । মা কাকে জানি বলছে "এতটুকু আসতে নবাবজাদির এত সময় লাগে?" 
কথাটা শুনে আমার হাসি পেলো , ইশশ আসলেই আমি নবাবজাদি হলে বুঝি আমার পা মাটিতে পড়তো না? 
তবে হঠাৎ মাথায় আসলো মা কাকে বলছে এসব? 
বাবা এইসময় বাসায় নেই কারণ কালকেই ওনাকে রাজশাহী যেতে হয়েছে একটা কাজে আর আজকে ফোন করে উনি ওটাই জানাচ্ছিলেন আমাকে । 
তাহলে কোনো ভাড়াটিয়ার সামনে? উহু মা আর যাই করুক কোনো ভাড়াটিয়াকে ডেকে কিত্তন করার মানুষ না । তাহলে আমাদের বাসায় কেউ এসেছে? 
এমনসময় নাকে খুব পরিচিত একটা ঘ্রাণ ভেসে আসলো , একটা মাতাল করা বুনো পারফিউম । 
সাথেসাথেই মাথায় আসলো ফুপ্পি এসেছে? তারমানে রাইদ ভাই?
চট করে উঠে দাঁড়ালাম আমি আর দাঁড়ানো মাত্রই পেছন থেকে একটা গলা ভেসে আসলো_কোথায় যাওয়া হয়েছিল? 
কন্ঠস্বর টা নিমেষেই আমার হৃদক্রিয়া থামিয়ে দিতে নিচ্ছিলো । 
আমি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম শুধু , রাইদ ভাইয়া এতদিন পর আমাদের বাসায়? 
কিন্তু কেনো?? 
আমাকে আর বেশি ভাবতে হলো না , উনি নিজ দায়িত্বেই আন্সার টা দিয়ে দিলেন । 
-- আমি নিজ ইচ্ছায় আসিনি এখানে , আম্মাই ধরেবেঁধে নিয়ে আসলেন । নইলে তোর মত মানুষের মুখও দর্শন করিনা আমি । 
,
রাইদ ভাইয়ার কথাটা একটুখানি খারাপ লাগলো কিন্তু কিছু বললাম না । 
নিচু হয়ে ব্যাগদুটো তুলে নিলাম । 
তারপর তাকে পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম ভেতরে । 
পেছন ঘুরে না দেখলেও আন্দাজ করা যায় রাইদ ভাইয়া একটু অবাকই হয়েছেন । 
কিন্তু অবাক হওয়ার তো কিচ্ছু নেই, অবাক নামক শব্দটি আমার ডিকশনারিতে নেই তাই মানুষের অবাক হওয়া বিষয়টা আমার ভালো লাগেনা । 
ভেতরে যেতেই বাজারের ব্যাগ হাতে ঘেমেনেয়ে একাকার আমিকে দেখে ফুপ্পি ছুটে আসলেন কাছে । 
-- ও মা তুই এই বড় বড় ব্যাগ গুলি নিয়ে আসলি ক্যামনে মনাপাখি? 
ব্যাগ টেনে নিয়ে বললেন ফুপ্পি । ওনার ভালোবাসাময় ডাকটা আমার হজম হলো না , আবার ওনার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললাম_ কখন আসলেন ফুপ্পি? 
-- এইতো ঘন্টাখানেক হলো এসেছি । বললেন ফুপ্পি । 
ব্যাগগুলি থেকে বাজার বের করার সময় আমি জিজ্ঞেস করলাম_এসেই কিন্তু যাওয়া হবেনা ফুপ্পি , আমি রান্না করবো খেয়ে তারপর যাবেন । 
ফুপ্পি রান্নাঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একগাল হেসে বললেন_ এবার এক সপ্তাহের সফরে এসেছি রে.. তোর হাতের রান্না খেয়ে মোটাতাজা হয়েই যাব! 
ফুপ্পির কথাটা শুনে আমার একটুখানি অন্যরকম লাগলো । এই মুহুর্তে রাইদ ভাইয়াকে একদিন সামলানোই কষ্টকর সেখানে উনি এক সপ্তাহ থাকবেন । 
আমি নিজের এই দূর্গতি সামলে বাবাকে লন্ডন যাওয়ার কথা বলবো নাকি রাইদ ভাইকে সামলাবো? 
রাইদ ভাইকে সামলানোর প্রশ্ন আসছে কারণ রাইদ ভাই তার আকৈশোরের সমস্ত রাগ যে এবার আমার উপর  ঝাড় তে এসেছেন তা তার মুখচোখ দেখেই বুঝে নিয়েছি । 
আমি জানিনা কেনো তার আমার উপর এতো রাগ! 
অবশ্যি জানিনা বললে ভুল হবে , জানি অবশ্যই জানি । 
একমাত্র কারণ হলো ভালোবাসা । 

এই ভালোবাসাই একটা জিনিস যা মানুষকে একদিকে ভেঙেচুরে শেষ করে দেয় , অনেকের জীবনে খুশির ঢল নামিয়ে আনলেও ৮০% মানুষেরই জীবনটা তছনছ করতে এই জিনিসটাই যথেষ্ট । 
মানুষ বলে ভালোবাসা ছাড়া পৃথিবী গড়ে ওঠেনি , এটা অবশ্যই ঠিক ।
পৃথিবী গড়ে ওঠার জন্য যেই ভালোবাসা সেটা সম্প্রীতির , সম্প্রদায়গত! 
আর এই ভালোবাসা নারী পুরুষের সম্পর্ক সৃষ্টির সূচনার । 
খুঁজলেই পাওয়া যাবে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ সম্পর্কের সাথে মানিয়ে নিতে থাকে । 
মানিয়ে নিতে নিতে যে মায়ার জন্ম দেয় তাকেই তারা সাংসারিক ভালোবাসার নাম দিয়ে দেয় । 
আর যারা আসলেই ভালোবাসা নামক কিছু একটা পায় তাদের কথা বিশ্লেষণ করার মতো ভাষা হয়তো আমার নেই । 
অবশ্যি ভালোবাসাটাও স্বার্থের জন্য । নিজে ভালো থাকতেই মানুষ সঙ্গী বেছে নেয় । জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে গিয়ে মানুষের সঙ্গীর প্রয়োজন হবেই আর এরজন্যই তার ভালোবাসার সৃষ্টি । 
ভালোবাসা শব্দটা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই । এটা হয় সংজ্ঞাহীন তাই ওদিকটায় যাওয়ার দরকার নেই । 
আপাতত আমার ভাবনা_ আমি কি করবো? 
আমি যে এই দেশে এই মানুষগুলোর সামনে থাকার মতো মনোবল হারিয়ে ফেলেছি সেটা আজ সকালেই বুঝেছি তাই এ দেশে থাকা আমার পক্ষে আসলেই সম্ভব নয় । 
ফুপ্পির সাথে হালকা পাতলা কথা সেরে রুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে । 
কাপড় পাল্টে হাতমুখ ধুয়ে একটু বেলকোণীতে দাঁড়িয়েছি অমনি রাইদ ভাইয়া এসে হাজির । 
এসেই সর্বপ্রথম তিনি বললেন_ যে নাগরের জন্য ছাড়ছিলি , এতো কাহিনী করলি সে কি থাকলো তোর? ঠিকই তো উড়াল দিলো আর মাঝখানে তোর আসল রূপ বাইর কইরা দিলো । 
রাইদ ভাইয়ার কথায় বিরক্ত হলেও জবাব দিলাম না আমি । 
কিছুক্ষণ দম নিয়ে উনি আবার বললেন_ কিরে কথা কস না ক্যান? 
এবারও জবাব দিলাম না আমি । এই ব্যাপারটা উনি নিতে পারলেন না । 
ফুঁসে উঠে আচমকা আমার ডান বাহু খুব শক্ত করে চেপে ধরে তার দিকে ফেরালেন , লাল টুকটুকে চোখজোড়া দিয়ে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চিল্লিয়ে বললেন_ভং ধরছস? নতুন নতুন রং ঢং তোর না? আমি কিছু বলতেছি আর তুই আমাকে ইগনোর করতেছিস । কিহ্ বাজারের ছেলে মনে হয় আমাকে? যে আমি বলেই যাব আর তুই আমাকে পাত্তা দিবি নাহ? এতো কিসের ভাব তোর? 
,
আমি বার কয়েক ওনার থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু উনি ছেড়ে না দিয়ে আরো চেপে ধরছিলেন । 
না পেরে আমিও চেঁচিয়ে উঠলাম_ কি হচ্ছে কি রাইদ ভাইয়া? ছাড়ুন আমার ব্যাথা লাগছে.. 
-- ব্যাথা পাবার জন্যই তো ধরেছি আমি! 
বাহু ছেড়ে দিয়ে এবার কবজি চেপে ধরে রাগে ফুঁসতে লাগলেন উনি । 
-- আপনি কি চান বলুন তো? আমার সাথে এরকম করার মানে টা কি? 
বাধ্য হয়েই বললাম কথাটা । 
-- আমি কি চাই জানিস না তুই? 
ওহহো জানবি কি করে? আছে তো একটা নাগর , ওর প্রেমেতেই অন্ধ তুই । চোখ কান সব প্রেমে টইটুম্বুর হয়ে বন্ধ হয়ে আছে । 
বেঈমান কোথাকার! ঐ নাগরের জন্যই তো একদিন আপন মানুষ গুলার সাথে ধোঁকাবাজি করেছিলি তাহলে আজ সে নাগর অন্য জনের হাত ধরে কেনো চলে গেলো? 
রাইদ ভাইয়ের এ প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই । মাথা নিচু করে চোখের পানি আড়াল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আমি , কথার মার প্রচন্ড । 
কখনো কেউ অপর ব্যক্তিটাকে কিছু বলবার আগে ভেবে নেয় না অপর ব্যক্তিটার কেমন লাগবে? 
মানুষের মুখ দিয়ে বের হওয়া কথা যেন গুলির মতো , অন্তর ছেদ করে দেয়! 
আর এই জখমের কোনো প্রতিষেধকও নেই । 
রাইদ ভাইয়া আমাকে আরো কয়েকটা কথা শোনাতেন যদি না মা বাইরে থেকে ডেকে উঠত! 
মায়ের ডাক শুনে উনি আমার হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে আঙুল তুলে শাসিয়ে বললেন_সব কিছুর হিসাব আমি নেবো! 
.
উনি যাবার পর হঠাৎ আমার প্রচন্ড হাসি পেলো , হাসতে হাসতে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়লাম । 
সিনেমা চলছে আমার জীবনে , প্রথমেই সবার অবহেলার পাত্রী ছিলাম কিন্তু তারপর কিশোরী মনটা যখন একজনকে প্রচন্ডভাবে ভালোবেসে ফেললো ঠিক ঐ সময়ে খুব খুব আপন কারো কথা শুনে ভালোবাসাকে ভুলবার প্রহসন করতে হলো । 
ভালোবাসা ভোলা সম্ভব নয় কিন্তু কয়েক বসন্ত পেরিয়ে আরো একজন নিয়ে এলো ভালোবাসার উষ্ণ স্পর্শ । বেহায়া মন দ্বিতীয় বার তার সহানুভূতিকে ভালোবাসা ভেবে ধোঁকা খেলো । 
,
চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে আমার । 
চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে , ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলছি_কেনো আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করলে? কেউ তো ভালোবাসেনা আমাকে । কেনো ভালোবাসেনা? না পরিবার আর না.. 
কেউ ভালোবাসেনি , সেও না । 
হঠাৎই গুনগুনিয়ে উঠলাম ও আমায় ভালোবাসেনি , অতল এ ভালোবাসা তলিয়ে দেখেনি , ও আমায় ভালোবাসেনি.. 
আমি হয়তো পাগল হয়ে যাচ্ছি , যাক অন্তত মুক্তি দিতে পারবো তাহলে...
,
দরজার আড়ালে রাইদ দাঁড়িয়ে , ওর চোখে মুখে মেঘের ঘনঘটা, ছলছল চোখে ও ফিসফিসিয়ে বলে_ আমি তো ভালোবাসি তোকে , খুব! তবে তুই কেনো আমায় ভালোবাসিস না? ঐদিন বিয়ের আসর থেকে যার জন্য ভাগলি সেও তো তোকে ছেড়ে গেলো । বল আমার কাছে আসলে খুব খারাপ থাকতি? 
,
,

চারুমতি আর ফয়সাল বসে আছে একটা পার্কে । 
ফয়সালের দৃষ্টি সামনের লেকটার মাঝে নিবদ্ধ আর চারুর দৃষ্টি ফয়সালের মাঝে । 
চারু হঠাৎ বলে ওঠে_ মিথি তোকে অনেক বেশীই ভালোবাসে ফয়সাল । 
জবাবে ফয়সাল মৃদু হাসে । 
-- আমি জানি চারু । একটা সময় ছিলো যখন আমি ওকে মোটেই বুঝতে চাইতাম না , ইচ্ছে করত না । ও কত কিই না করেছে নিজেকে আমার সামনে কতভাবেই উপস্থাপন করেছে কিন্তু আমার কখনো আগ্রহ জন্মায়নি ওর প্রতি বা জন্মালেও আমি খুব করে দমন করেছি সেটা আর তার কারণ একমাত্র তুই । তুই চলে যাবার পর আমি মেয়েদেরকে বিশ্বাস করতে চাইতাম না । 
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম একজনকে দেখে সবাইকে বিচার করা মোটেই উচিৎ নয় । 
যখন এটা বুঝতে শিখলাম , উপলব্ধি করতে পারলাম তখন নিয়তি অন্য কিছু চাইলো । 
প্ল্যান না? ছোট্ট মেয়েটা কতখানি মিথ্যে বলা শিখেছে , নাটক করতে শিখেছে । 
সবসময় সত্যি কথা বলা সত্বেও আমি অবিশ্বাসী ভাবে ওকে বলতাম একটা মিথ্যে বলেছো তো দিবো দুই গালে দু'টো তাতেই নাকি ওর খুশি লাগতো । হাসতো , বলতো আপনার শাসন গুলি মিষ্টি লাগে আমার , এখন সত্যিই মিথ্যে বলবো কিন্তু! যদিওবা পরে আর বলতো না । 
অথচ আজ? কত সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যে বলছে , অভিনয় করছে । 
আর সবটা জেনেও হাসিমুখে আমায় বিশ্বাস করতে হচ্ছে, ওকে দেখাতে হচ্ছে ওর রকস্টার আর ওকে বোঝে না! 
আজ নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছে , নিজ হাতে একদিন ধ্বংসের পথে নামলাম , অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে ও জীবনে চলে আসলো আর তারপর..? 
তারপর বড্ড যন্ত্রণার মাধ্যমে আজ দু'জন দু'জনকে ছাড়াতে হচ্ছে! 
ও হয়তো কখনো জানতেই পারবে না এই অমানুষটাও ওকে প্রচন্ড ভালোবাসতো, প্রচন্ড.... 
ফয়সাল উঠে লেকের ধারে দাঁড়ালো । 
আর চারু বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে একা একাই বললো_সব নষ্টের মুল আসলে আমিই! 




চলবে...




Writer:- Sinin Tasnim Sara
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner