১৬
বর্তমান এক ফালি রোদ জানালার ফাঁক দিয়ে এসে মিথির মুখের উপর পড়ছে ।
মিষ্টি রোদের তেমন তীব্রতা নেই । রাইদ বসে আছে মিথির বিছানার পাশে , ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে দেখতে ভালো লাগছে ।
মিথিকে নিয়ে রাইদের মনে অভিযোগ নেই আছে শুধু অভিমান , মানুষকে সাফাই দেয়ার সুযোগ দিতে হয়৷
শেষ মুহুর্তে ওকে ধোকা দিয়ে চলে যায় মিথি , যার জন্য চলে গেছিলো সে তো প্রাক্তনকে নিয়ে সুখী হচ্ছে ।
রাইদ ভাবতে পারেনি এতো ভালোবাসার পরেও মেয়েটা ওকে ছেড়ে যাবে ।
আসলে ভুলটা ওরই টিনেজার মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়ানো একদমই উচিৎ হয়নি ।
ব্যাপারটা একটা এক্সপেরিমেন্ট এর মতো।
এই সময় স্বভাবতই কাউকে ভালো লেগে যায় ।
অধিকাংশ মেয়েই এইসময় দেখে ছেলেটার লুক , ছেলেটার ক্লাস এবং লয়ালিটি ।
নাইন-টেনে পড়ুয়া মেয়ে অধিকাংশ সময়ই পরিপাটি, স্টাইলে আর সুঠাম দেহের অধিকারী ছেলেদের উপরে ক্রাশ খায় আবার অনেকের দূর্বলতা থাকে গায়ক ছেলেদের প্রতি ।
হালকা পাতলা গান টান গায় , গিটার নিয়ে ঘোরাফেরা করে এমন ছেলেদরও ভালো লেগে যায় ।
এই সময়টা আসলে রিলেশনে জড়ানোর মতো না কারণ এই সো কলড্ রিলেশনে সিরিয়াস হলে একজনকে কষ্ট পেতেই হবে মাস্ট ।
অবশ্যি সবার ক্ষেত্রে এরকম না , ছেলেরা যদি এই নিব্বিকে ঠিকঠাক হ্যান্ডেল করতে পারে তাহলে এটা নিঃসন্দেহে পরিণতি পর্যন্ত এগোবে ।
৯৫% রিলেশন গুলো এই স্টেজে ভেঙে যাওয়ার পর কিছু ছেলেমেয়ে হয় দেবদাস টাইপ , কথাবার্তা বলা কমিয়ে দেয় , প্রাঞ্চচলতা হারায় , মজা করতে ভুলে যায় , ড্রাগ আ্যডিক্টেড হয় , লেখাপড়া ছেড়ে দেয় এন্ড মোস্ট ইম্পর্টেন্ট ফ্যামিলির থেকে দূরে সরে যায় ।
ট্রাস্ট মি নিব্বি'স এগুলা কিছুই না । ইট ওয়াজ আ মিসটেক । তোমার প্রতিনিয়ত করা ভুল গুলোর মধ্যে এটাও একটা ভুল যে ছেলের প্রপোজাল পেয়ে তুমি নাচতে নাচতে রাজি হইছো ।
ছেলে ডাম্ব করলে অফকোর্স তুমি ব্যাপারটা ভুলে যাবা এন্ড মোস্ট ইম্পর্টেন্ট কাজ তুমি ঐ ফ্রেন্ডটাকে ত্যাগ করবা যে তোমাকে ইনফ্লুয়েন্স করেছিলো এই সময় যে "হ্যাঁ ভাইয়াটা ভালোই , রিলেশন কর দোস্ত" অমুক তমুক!
সে আসলে নিজে মস্তিষ্ক শূন্য একজন মানুষ তোমাকে কি বোঝাবে?
তুমি এটলিস্ট ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পর থেকে বুঝতে পারবা মানুষের মাঝে খোঁজা হ্যাপিনেস টা আসলে কি?
তার আগে তোমার লাইফ অবুঝ বাচ্চাদের খেলনা পাবার মজার মতো ।
আর ছেলেদের ক্ষেত্রে একটাই কথা আপনি ভার্সিটিতে পড়েন অথচ যারে লাইক করছেন সে ক্লাস টেনে ।
তাহলে অফকোর্স আপনি তার আগুপিছু ঘুরে মাথা খারাপ করে দিবেন না । তার ইন্টার লেভেল শেষ করা অবধি ওয়েট করবেন৷
আপনার ধৈর্য ক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্ব একটা মেয়েকে ইমপ্রেসড করে নট মাচো স্টাইল ।
মাচো থাকলে ঐ নিব্বির ছ্যাকা খেয়ে দেবদাস হয়ে যাইতে হবে!
,
রাইদ ভাবছে ওর ভুল একটাই মিথির সামনে তখনি জাহির করা । ও ভুলে গেছিলো মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করলেই সে পুরোটাই পেত ওকে!
খুব অশান্তি শুরু হলো রাইদের মনে ।
ফোনটা বের করে শব্দর নাম্বারে ডায়াল করলো ।
এই একমাত্র বন্ধু যে শুরু থেকে ওর সাথে থেকেছে ।
ফোনটা কানে লাগিয়ে উঠে চলে গেলো রাইদ ।
,
ঘুমটা আচমকা ভেঙে গেলো একটা বুনো পারফিউম এর সুবাসে ।
রাইদ ভাই এসেছিলো কি?
উঠে বসে আশেপাশে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম , হয়তো বেরিয়ে গেছে ।
তবে এসেছিলো যে এটা শিওর!
আড়মোড়া ভেঙ্গে দেয়াল ঘড়িটায় চোখ গেলো ।
সাড়ে আটটা বাজে ।
উঠে বিছানা গুছিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম ।
ব্যস্ততার শুরু , আজ আবার ভার্সিটিতেও যেতে হবে একবার!
,
ঘর থেকে বেরুতেই দেখা গেলো সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে , রিহা খাবার বেড়ে দিচ্ছে , বাবা ওকেও বসতে বললেন পরিবার নিয়ে একসাথে খাবেন।
বাহ্!
বাবাও বসে আছেন দেখছি! ভালোই হলো বাবা থাকলে মা রিহাকে আরো জলদি মেনে নিবেন ।
মনটা খুশি হয়ে গেলো ।
আমাকে এগোতে দেখলেন বাবাই ।
হেসে কাছে ডাকলেন ।
আমি গিয়ে বাবার পাশে দাঁড়াতেই বাবা বললেন_ আমার মেয়েটাকে কতদিন দেখিনি । কেমন আছে মেয়েটা?
আমিও হেসে বললাম_ ভালো । তুমি কেমন আছো বাবা? আর আমার আইসক্রিম কই?
-- আইসক্রিম ফ্রিজে আছে মা । পরে খেয়ো আগে নাশতা খাও বসো ।
বাবার পাশের চেয়ারটা অলওয়েজ আমার জন্য ফাঁকাই থাকে , আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি ।
আমিও বাবার পাশে বসে পড়লাম ।
বাবা খেতে খেতে আমাকেও একবার তুলে খাওয়াচ্ছেন , ইশশ এই ভালোবাসা কি আর কেউ দিতে পারবে কখনো?
বাবার দেখাদেখি ভাইয়াও আমাকে খাইয়ে দিলেন ।
আমিও খাইয়ে দিলাম ওদেরকে ।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প চলছিলো এবং তারই এক ফাঁকে ভাইয়া হঠাৎ বললেন_ বাবা একটা কথা ছিলো যে?
আমরা সবাই আগ্রহী হয়ে তাকালাম ভাইয়ার দিকে , বাবাও বললেন হ্যাঁ বলো?
সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভাইয়া বললেন_ মিথির স্কলারশিপ হয়ে গেছে বাবা ।
সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে ওকে আর সিমিকে হায়ার এডুকেশন এর জন্য ডাকা হয়েছে ।
,
এই নিউজটা মুহুর্তে বিস্ফোরণের কাজ করলো , উপস্থিত সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো ।
বাবা খুব খুশি হয়ে গেলেন । উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললেন ।
আবেগী কন্ঠে বললেন_ আমার মা টা এতো বড় হয়ে গেছে? আলহামদুলিল্লাহ এতো খুশির একটা খবর! কবে যাবে মা তুমি??
ভাইয়া এটার রিপ্লাই করলেন_ বাবা আমি আজ খোঁজ নিচ্ছি , ওর কিছু এক্সাম'স আছে তো । আর ভিসা ক্লিয়ার আছে কি না সব দেখতে হবে!
-- হ্যাঁ দেখো তুমি । আর মিথি মা আজ থেকেই ক্লাস আ্যাটেন্ড করো তুমি । এতো বড় একটা খুশির সংবাদ আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করে আসি ।
বাবা আমায় মাথায় হাত বুলিয়ে ঘরের দিকে চললেন ।
আমি বাবার খুশি দেখে অবাক হয়ে গেলাম ।
না চাইতেও আমার চোখ রাইদের দিকে গেলো ।
সেও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো , আমি তাকাতেই মাথা নিচু করে খাওয়ায় মনযোগী হলো কিন্তু আমি তার চোখে স্পষ্ট জল দেখতে পেলাম ।
এই জল কিসের??
,
রিহা তো খুশির চোটে কি বলবে না বলবে ভেবে পাচ্ছে না , ফুপ্পিও সেম ।
শুধু একজনের মনযোগ সম্পূর্ণ খাওয়ায় আর সে আমার মা ।
তাকে তো আর চেইঞ্জ করা পসিবল না । এটাই আমার নিয়তি!
,
ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে সব খোঁজ খবর নিয়ে নিলাম ।
সবাই আমাকে আর সিমিকে কংগ্রাচুলেট করলো
।
একজন ম্যাম তো দাওয়াতই দিয়ে বসলেন ।
আমরা যেতে চাইছিলাম না বাট উনি এমনভাবে ডিনারে ইনভাইট করলেন যে আর না বলা পসিবল হলো না ।
,
ক্লাসগুলো করে সিমিসহ একবার নিউ মার্কেটে ঢু মেরে আসলাম ।
ম্যামের বাসায় তো আর খালি হাতে যাওয়া যায় না!
মার্কেটে গিয়েই চমৎকার একটা ফ্লাওয়ার ভাস পছন্দ হয়ে গেলো ।
ডিসিশন নিয়ে ওটাই কিনে ফেললাম সাথে সিমি আরো কিছু নিলো ।
কথা হলো সন্ধ্যায় ও আমায় বাসা থেকে পিক করবে ।
তখনকার মতো যে যার বাসায় চলে গেলাম ।
প্রচন্ড টায়ার্ড থাকার দরুণ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েই একটা ঘুম দিয়ে দিলাম ।
এক ঘুমে বিকেল ।
ঘুম থেকে উঠে সবার আগে বাবার কাছে গিয়ে পারমিশন টা নিয়ে নিলাম ।
তারপর তৈরি হবার পালা ।
আজ ভার্সিটি থেকে আসার পর ফুপ্পি বা রাইদের সাথে একবারও দেখা হয়নি ।
হাহ্ হয়ে যাবে!
এখন রেডি হবার পালা ।
ম্যাম আজ শাড়ি পরে যেতে বলেছেন , গুরুজনের কথা কি আর ফেলা যায়?
আলমারিতে একটা লাল আর একটা কালো-আ্যাশ কম্বিনেশনের শাড়ি ছাড়া আর কোনো শাড়ি নেই ।
লাল শাড়ি পরে যাওয়াটা কিরকম ব্যাপার!
আর কালোটা রাইদের দেয়া । কিছুই বুঝতে পারছি না কি করবো!
আমার মা তো সেরকম না যে তার থেকে চাইবো!
বড্ড চিন্তাভাবনা করে কালোটাই পরতে হলো ।
সাথে হালকা সাজগোজ করে আ্যাশ কালারের হিজাব পরে নিলাম ।
হাতে যখন চুড়ি পরছি ঠিক ঐ সময়ে রাইদের ভয়েস ভেসে আসলো_ শাড়ি ঠরকিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে??
আমি পেছন ঘুরলাম না , রাইদ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তার প্রতিবিম্ব আয়নায় ভাসছে ।
চুড়িগুলো পরতে পরতে বললাম_ ম্যামের বাসায়।
-- ম্যামের বাসায় শাড়ি পরে? ক্যান ম্যাম তোর শ্বাশুড়ি হয়? তার ব্যাটার লগে বিয়া বসবি?
,
এর জবাব আমি দিলাম না ।
সে আবার বললো_ তা কোন ম্যামের বাসায় যাওয়া হচ্ছে?
আমার ততক্ষণে রেডি হওয়া শেষ । ব্যাগটা হাতে নিয়ে সিমির নাম্বার ডায়াল করে ওনাকে বললাম_এতোকিছু জেনে তো আপনার কাজ নেই রাইদ ভাই ।
তারপর বেরিয়ে আসলাম কানে ফোন ঠেকিয়ে ।
ভেতর থেকে একটা কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ আসলো কিন্তু ফিরে দেখতে মন চাইলোনা আমার ।
,
সিমিসহ গাড়ি করে ম্যামের বাসায় পৌঁছুলাম ।
বসুন্ধরায় ম্যামের বাসা , বাসা দেখে রীতিমত মুগ্ধ আমরা ।
বিশাল জায়গা জুড়ে একটা ডুপ্লেক্স বাসা , বাসাটা সম্পূর্ণ টাই মার্বেল পাথরের , লাইটের আলোয় শুধু ঝলমল করছে চারিদিক ।
গেইট দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডান সাইডে বিশাল এক বাগান আর বামে সুইমিংপুল ।
সুইমিংপুল এর সোজাসোজি দোতলায় একটা বিশাল বেলকোনী আর বেলকোনীটাও রঙ্গিন আলোয় ঝলমল করছে ।
আমার একবার মনে হলো কেউ আমাকে দেখছে , আমি বেলকোনীতে একবার তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখা গেলো না ঐ মুহুর্তে ।
সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম ।
ম্যাম নিজে রিসিভ করলেন আমাদেরকে ।
তার সেই কি আন্তরিকতা!
ম্যাম নিজে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখালেন ।
জানা গেলো ওনার দুই ছেলে একজন বাইরে সেটেলড্ আর একজন সেনাবাহিনী তে ।
ম্যাম সিঙ্গেল মাদার , হাজবেন্ড এর সাথে ডিভোর্স পর বেচারি একা হাতে দুই সন্তানকে মানুষ রকরেছেন , এই পথটা যদিও কঠিন ছিলো তবে তাকে পথ সহজ করে দিয়েছিলেন মহান আল্লাহ পাক আর পুঁজি ছিলো পড়াশোনা ।
পড়াশোনার জোরে , পরিশ্রমে আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে তার ভালো জব , লাক্সারিয়াস লাইফ!
ম্যামের সাথে আমাদের অনেক গল্প হলো ।
আমাদের অনেক আ্যাডভাইস দিলেন তারপর খাওয়াদাওয়ার পার্ট ।
ডিনারের সময় অবশ্যি আমরা ওনার ছেলের খোঁজ করছিলাম কিন্তু উনি বললেন ছেলে নাকি কোন কাজে বাইরে গেছেন ।
অগত্যা আমাদের একাই খেতে হলো ।
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে আমরা দ্বিতীয় দফা বাড়িটা ঘুরে দেখছিলাম ।
স্টাডি রুমের সামনে আসতেই ম্যামের হঠাৎ ফোন আসলো আর ম্যাম ফোনটা রিসিভ করতে নিচে নেমে গেলেন ।
সিমি বললো সেও এই ফাঁকে ওয়াশরুমে যাবে , আমাকে সাধলো কিন্তু আমি স্টাডি রুম দেখায় বেশি আগ্রহী ছিলাম ।
ও যাওয়ার পর একা একাই স্টাডি রুমে ঢুকে গেলাম ।
বিশাল বিশাল বুক শেলফ গুলিতে অজস্র বই ।
একটা একটা করে বই ছুঁয়ে দেখছিলাম মুগ্ধ নয়নে হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেলো ।
হালকা ভয় পেয়ে আমি নড়াচড়া করবার চেষ্টা করলাম কিন্তু তার আগেই কেউ একজন আমায় টেনে কিসের সাথে হেলানি দিয়ে চেপে ধরলো এবং একহাতে আমার দু'হাত চেপে ধরে অন্যহাতে আমার মুখটা চেপে ধরলো ।
ব্যাপারটা এতটাই তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে আমি কিছুই করতে পারলাম না ।
প্রচন্ড ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছিলো আমার ।
লোকটা আমাকে পেছন করে হাত মুড়ে চেপে ধরেছিলো , আমি ছাড়াতে পারছিলাম না ।
তবুও প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছিলাম ।
সম্ভবত দুই মিনিট পর আমার কানের কাছে লোকটার নিঃশ্বাস অনুভব করলাম ।
সে ফিসফিস করে বললো_ আমার মায়াবতী কতদিন পর এই মুখটা দেখার সৌভাগ্য হলো বলোত?
তোমায় শাড়িতে দেখে আমি ডেস্পারেট হয়ে যাচ্ছি , নিয়ন্ত্রণ হারালে কিন্তু দায়ভার তোমার ।
আমাকে এভাবে পাগল করে দেবার কি খুব দরকার ছিলো বলো?
শব্দ করে আমার হিজাবের উপরই ঘাড়ে চুমু খেলো লোকটা আর মাথার পেছন সাইডেও চুমু খেলো ।
আমি সুপরিচিত একটা পারফিউমের স্মেল পাচ্ছিলাম কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না পূর্বে কোথায় এই স্মেল পেয়েছি ।
আমি তো জোর জবস্তি করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু এতে লোকটা আরো জোরে চেপে ধরছে । মুখ চেপে ধরার দরুণ আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আর মুখ দিয়ে শুধু উমম উমম শব্দ আসছে এর বেশি কিছু নয় ।
হাল ছেড়ে আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলাম এবং প্রায় সাথেসাথেই সিমি আমার নাম ধরে ডেকে উঠলো ।
ও স্টাডি রুমের দিকে আসছে বুঝতে পেরে আমিও বুদ্ধি পেয়ে ফাঁকা কিক দিলাম , পাশেই কিছু একটা ছিলো যেটা আমার পায়ের ধাক্কায় পড়ে গেলো এবং মোটামুটি জোরে শব্দ হলো ।
এতেই কাজ হয়ে গেলো সিমি স্টাডি রুমের ভেতরে এসে বললো_ মিথি তুই কি এখানে? তুই ঠিক আছিস?
লোকটা এবার আমাকে ছেড়ে দিলো এবং মুহুর্তেই আমিও চিল্লিয়ে বললাম সিমি লাইট জ্বালা ।
সিমি লাইট জ্বালালো ফোনের আলো দিয় খুঁজে কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে , কারো হদিস পাওয়া গেলো না আর ।
সিমি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো_ কি হইছে মিথি এনি প্রবলেম?
আমি মাথা নেড়ে বললাম হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যাওয়ার ভয় পেয়ে গেছিলাম , নাথিং এলস্ ।
-- আর ইয়ূ শিওর?
-- হুউউ ..
আমাদের কথার মাঝে ম্যাম চলে আসলেন ।
তাকে আর কিছু বললাম না তবে বুঝতে পারলাম না ব্যক্তিটা কে কিন্তু পারফিউমের স্মেল বড্ড পরিচিত মনে হলো আমার ।
বিশাল এক চিন্তা মনজুড়ে ঘুরপাক খেতে লাগলো , ম্যামের বাসায় এসে হ্যানস্তা কে করতে পারে আমাকে?
১৭.
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১ টা ।
বড্ড ক্লান্ত থাকায় বাবার সাথে শুধু দেখা করেই বিছানায় গড়িয়ে পড়েছি , চেইঞ্জ করারও শক্তি নেই যেন!
শুধু শাড়িটা খুলে এক পাশে রেখেই ঘুম ।
ঘুমটা হালকা হয় মাথায় কারো ছোঁয়া পেয়ে ।
মনে হচ্ছিল মাথায় কেউ পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আবার মনে হচ্ছিল এক দৃষ্টিতে কেউ তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
হাতটা অতোটা মোলায়েম না , বুঝে গেলাম কে এসেছে ।
চোখ বন্ধ করেই বললাম_ রাইদ ভাইয়া মাঝরাতে আবার এসেছেন আপনি?
-- হ্যাঁ এসেছি । একশোবার আসবো ।
-- আমি তো চলেই যাবো তবুও এসব না করলে হয়না?
এবার আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরলেন রাইদ ।
-- তুই যাবি মানে? যেতে চাইলেই আমি তোরে যাইতে দিবো? অতো ইজি সবকিছু? তুই আমাকে জবাবদিহি করবি আগে তারপর যাবি ।
কেনো তুই বিয়ের আসর থেকে পালাইলি? আমার মাঝে কমতি ছিলো কিসের??
,
আমি এবার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসলাম ।
মাথায় রাগ ভর করতে শুরু করলো আমার ।
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বললাম_ মাঝরাতে এসব নাটক আমার ভালো লাগছে না রাইদ ভাই । আপনি প্লিজ যান তো ঘুমাতে দিন আমাকে ।
-- ঘুমাতে দিবো মানে? গত দু'বছর থেকে আমার রাতের ঘুম, জীবনের শান্তি সব নষ্ট করে তুই শান্তির ঘুম ঘুমবি এটা আমি মানবো কি করে? সেদিন কতটা অপমানিত হতে হইছিলো আমাকে , আমার মা কে এই সম্পর্কে আইডিয়া আছে তোর?
বেঈমান কোথাকার , নিমোকহারামি করেছিস তুই । যার বাড়িতে থাকলি , সব দায়দায়িত্ব যে নিলো তাকেই চরম অপমান করে আসলি?
,
কথাটা শুনে প্রচন্ড রাগ হলো ।
রাগে চোখে পানি এসে গেলো আমার । স্থির থাকতে পারলাম না , চিল্লিয়ে উঠলাম_ নিমোকহারামি আমি করেছি নাকি তুই করেছিস?
আমার ফিলিংসের কোনো মূল্যই তোর কাছে ছিলো না । একটা মেয়ে তোকে টিন এজ থেকে ভালোবাসে , তোকে নিয়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখলো আর তুই কি করলি? তাকেই ঠকালি? তুই জানতিস না পৃথিবী বাপ-ভাইয়ের পর তোকেই সব থেকে বেশী ভালোবেসেছি তাহলে ঠকালি ক্যান আমাকে বল ঠকালি ক্যান?
এতোই বডি নিড ছিলো যে নিজের বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে...
ছিঃহ্!
আমাকে বলতি, তোর জন্য তো জান কুরবান ছিলো ।
অমানুষ কি করে পারলি এত নিচ কাজ করতে?
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে কেঁদে ফেললাম আমি ।
রাইদ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
আমার কান্নার দমক বেড়ে যাচ্ছে , ও দুই কদম এগিয়ে এসে আমার ডান হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো_ মিথি কি বলছো এগুলো?
এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে বললাম_ চলে যাও এখান থেকে ।
,
সে গেলো না উল্টো আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলো আস্তে আস্তে বললো_ মিথি তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না প্লিজ ক্লিয়ার করো ব্যাপারটা? আমাকে শুনতে দাও , বুঝতে দাও?
আমি ওকে সরানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ও সরলো না , শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো ।
আমি ধাক্কাতে ধাক্কাতেই হাফিয়ে গেলাম , পিঠ খামচে ধরে শব্দ করে কেঁদে ফেললাম ।
-- আপনি এটা একদমই ঠিক করেননি রাইদ ভাই। আমাকে একবার বললেই কি আমি নিজেকে উজাড় করে দিতাম না? কেনো ধোঁকা দিলেন আমাকে? কি কমতি ছিলো আমার মাঝে??
,
রাইদ আমাকে সোজা দাঁড় করিয়ে মুখটা আঁজলা ভরে নিলো তারপর ফিসফিস করে বললো_ মিথি আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছি , ধোঁকা কেনো দিবো? তুমি এসব কেনো বলছো?
,
আমি শুধু ওর দিকে তাকালাম , ওর চোখে পানি ।
বাইরে দরজা নকের শব্দ হলো , ভাইয়া আমার নাম ধরে ডাকছেন আর বলছেন মিথি কি হইছে? দরজা খোল বাচ্চাটা!
মিথি??
ভাইয়ের গলা শুনে আমি রাইদকে সরিয়ে দিলাম । মুখ ফিরিয়ে বললাম_ আমি আপনাকে ঘৃণা করি রাইদ । কোনো কিছু বলবার নেই আর না আছে শোনবার । আপনি চলে যান আমার সামনে থেকে ,নইলে আমি কিছু করে বসবো ।
বাকি যে ক'টা দিন আছি আমাকে শান্তি দিন ব্যাস!
,
দরজা ধাক্কানো বেড়ে গেলো । রাইদ রেগে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন ।
ভাইয়া ভেতরে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?
আমি ভাইয়ার বুকে পড়ে কেঁদে কেঁদে বললাম_ ভাইয়া ও কেনো করেছিলো ওরকম? আর কেনো এখন আমার সামনে আসছে? আমাকে চাইছে কেনো?
ভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন_ তুই আমাকে কসম না দিলে তো আমি ঠিকই ওকে জবাবদিহি করতাম । কিছু ভুল বোঝাবুঝিও তো হতে পারে মিথি কিন্তু তুই ই তো..
,
মিথি ভাইয়ের বুকে পড়ে বিড়বিড় করে শুধু বললো_ ওরা কেউই চাইতো না আমাকে ভাই । আমাকে কেউ চায়না কেনো বলতে পারো?
,
রাইদ রুমে এসে চুপচাপ বসে আছে , চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে ।
ও বুঝতে পারছে না মিথি ওগুলো বললো কেনো?
কোনো ভুল বোঝাবুঝি তো নিশ্চয়ই হয়েছে , আর কেউ ওকে ভুল বুঝিয়েছে । সেটা কে?
কোন বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড এর কথা বললো মিথি?
বেশ ভাবনায় পড়ে গেলো রাইদ ।
,
হাতে একটা রাবারের বল নিয়ে বারবার দেয়ালে ঢিল দিচ্ছে আর ক্যাচ ধরছে শব্দ ।
মুখে একটা বাঁকা হাসি ।
একা একাই সে বলছে_ আমার যেটা চাই সেটা পেয়েই ছাড়ি , হয় আপোষে নয়তো ছিনিয়ে নো ম্যাটার সেটা আমার খুব আপন কারো জিনিস!
আর তুমি তো আমার ভালোবাসা , তোমাকে অন্যকেউ কেড়ে নিবে এ সাধ্য আছে কার??
তারপর বলটা ছুঁড়ে দিলো আয়নায় , ঝনঝন শব্দে হুট করে ভেঙে গেলো আয়নাটা ।
মেঝে থেকে উঠে একটা কাঁচ টেনে নিলো শব্দ , বা হাতে একটা আঁচড় কাটা মাত্র গলগল করে রক্ত বেরুতে লাগলো ।
সেই রক্ত আঙ্গুলে তুলে আস্তে আস্তে বললো_ তোমার অপেক্ষায় এভাবেই রক্তাক্ত হতে থাকবো মিথি , কবে আসবা তুমি? ভালোবেসে উষ্ণ আলিঙ্গন করবা আর আমি পরম শান্তিতে তোমার বুকে মুখ গুঁজবো ।
আমার পরম শান্তির ঠাঁই ।
ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো শব্দ , পৈশাচিক হাসি ।
,
হাতে থাকা রিপোর্ট টাতে আরো একবার চোখ বুলালো ফয়সাল ওর ঠিক সামনে বসে দু'হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে চারু ।
ফয়সাল ওর কান্না দেখে আলতো হেসে বলে_ জানো চারু? তুমি চলে যাবার পর আমি বড্ড ভেঙে পড়েছিলাম এবং এসময় আমাকে সামলেছিলো মিথি ।
ওকে দেখে মনে নতুন করে বাঁচার আকাঙ্খা জাগলো , বড্ড ভালোবেসে ফেললাম ওকে কারণ অবস্থাটা আমাদের একই রকম ছিলো আর তাই দু'জন দু'জনকে বুঝতাম খুব ।
কিন্তু ওর ইনফ্যাচুয়েশন তৈরী হয়েছিল আমার ওপর ।
একবার মনে হতো ওর সাথে রাইদের বিয়ে হবার কথা ছিলো ওকে ভালোবাসা কি আমার ঠিক হবে? কিন্তু তারপরই মনে হতো ওর ভালো থাকার অধিকার আছে । ও যেভাবে ভালো থাকতে চায় সেভাবেই থাকবে ।
তাই আমি ওকে ভালোবাসতে শুরু করলাম কিন্তু দেখো তোমার শূন্যতা আমার শরীরে যে মারণ রোগের বীজ বুনে গেছিলো এটা কি আমি জানতাম বা ও জানতো??
নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর চারু , না তুমি ছেড়ে যেতে না রাইদের সাথে ওর ছাড়াছাড়ি হতো না আমরা আজ এই পজিশনে আসতাম ।
আজ বড্ড অসহায় আমরা সবাই । বড্ড অসহায়!
১৮.
কেটে গেছে আরো দু সপ্তাহ , রাইদরা চলে গেছে অনেকদিন হলো ।
মায়ের সাথে রিহার সম্পর্কটা সহজ হচ্ছে আস্তে আস্তে ।
এদিকে ম্যামের আমাদের বাসায় আনাগোনা শুরু হয়েছে ।
কারণে-অকারণে ম্যাম আমার সাথে দেখা করতে আসছেন , বাবার সাথে গল্প করছেন- মায়ের সাথে গল্প করছেন।
আমি একটা জিনিস লক্ষ করেছি উনি সুযোগ পেলেই ওনার ছেলেদের নিয়ে গল্প করেন ।
সিমিকে ব্যাপারটা বলায় সিমি সেদিন মজা করে বললো ম্যাম মেইবি তোকে ছেলের বউ বানাতে চায় ।
ব্যাপারটা আমলে না নিলেও মাঝেমধ্যে ভাবায় আমাকে ।
শুনেছি বড় ছেলে শুভ বিদেশে বিয়ে করেছে আর ছোট ছেলে স্মরণ এখনো অবিবাহিত ।
স্মরণ নামটা বড়ই পরিচিত লাগে আমার বাট বুঝতে পারিনা কোথায় শুনেছি বা দেখেছি ।
,
গতকাল রাতে ফুপ্পি বাবাকে ফোন করে বললেন রাইদের বিয়ে করিয়ে দেয়া উচিৎ ।
হাহ্ পৃথিবী টা এরকমই , প্রত্যেকটা মুহুর্ত অপেক্ষা করে থাকে নতুন মুখ দেখবার জন্য ।
কেউ কাউকে ছাড় দেয় না , নিজের জায়গা নিজেকেই বানিয়ে নিতে হয় আান্ড ইটস ন্যাচারাল ।
শোনা যাচ্ছে রাইদের সাথে ওর মায়ের বান্ধবীর মেয়ে কেয়া'র বিয়ের কথা উঠেছে ।
কেয়া আপু আমার চাইতে বয়সে প্রায় তিন বছরের বড় ।
একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে মাত্র ক'মাস হলো ।
রাইদের সাথে বেশ মানাবে তবে আমার বড্ড বেশীই খারাপ লাগছে ।
বাবা যখন কাল ডেকে বললেন রাইদের বিয়ের কথা তখন বুকটা ধক করে উঠেছিলো আফটার অল হি ইজ মাই লাভ..
মাঝেমধ্যে মনে হয় রাইদকে গিয়ে সব কিছুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে আসি কিন্তু হঠাৎ করে আর ইচ্ছে করেনা ।
কিছুদিন যাবৎ একটা আননোউন নাম্বারও বড্ড জ্বালাতন করছে ।
সকাল বিকেল মেসেজ দিয়ে মাথাই খারাপ করে দেবার জোগাড় ।
পরিচিত কাউকে নাম্বারটা ট্র্যাক করবার জন্য দিবো ভাবছি কিন্তু আমার পরিচিত তেমন কেউ নেই ।
যাহোক মোটামোটি ব্যস্ত সময় কাটতে লাগলো আমার ।
কয়েকদিন থেকে বাবা আমায় ইশারায় বিয়েশাদীর কথা বোঝানোর চেষ্টা করছেন , ম্যামের মৌন প্রস্তাব ভালোই কাজে দিয়েছে মনে হচ্ছে ।
ভাইয়া আমায় অবশ্যি বলেছিল ডিরেক্ট কিন্তু আমি বলে দিয়েছি আমার লেখাপড়া শেষ না হওয়া অবধি এই বিষয় নিয়ে ভাবতে চাইছি না ।
ভাইয়া বুঝতেই পেরেছিলেন আমি এটা কেনো বলেছি , উনি শুধু জবাবে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন_ তোর ভালো থাকাটা ইম্পর্টেন্ট বাচ্চা । তুই যেভাবে ভালো থাকতে চাস সেভাবেই সব হবে ।
,
সময় খুব দ্রুত চলছিলো , এর মাঝে সিমি আর রামিম ভাইয়ের আকদ করার প্ল্যান হয় ।
সিমির পড়াশোনা শেষে অনুষ্ঠান করে বিয়েটা দেয়া হবে আপাতত পরিবার পরিজন নিয়ে আকদ ।
আকদের দুই দিন আগেই আমাকে যেতে হলো সিমির বাসায় ।
ওর কাজিন সংখ্যা অনেক আর তাছাড়াও ওর যেহেতু বাবা-মায়ের মিল হয়ে গেছে সেহেতু আঙ্কেে আন্টির আত্মীয় পরিজনও বেশী ।
বেশী লোকের ভীড়ে আমার বড্ড অস্বস্তি আর তাছাড়াও এরা অনেকেই জানে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল এবং বিয়েটা কোনোভাবে ভেঙে গেছে ।
আমি মনে করেছিলাম হাজার হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আমায় ।
কিন্তু আল্লাহ্ রহমতে তেমন কেউই প্রশ্ন করেনি ।
আকদের আগের দিন হালকা হলুদ ছোঁয়ানোর প্রোগ্রাম হলো।
সিমি আর রামিম ভাইয়ের বাসাটা পাশাপাশি , দু'টো ছাদে একইসময়ে হলুদের প্রোগ্রাম হলো ।
বেশ মজাই হয়েছে অবশ্য ।
পুরোটা সময় জুড়ে রাইদের সাথে অসংখ্য বার আমার চোখাচোখি হয়েছে , ফয়সাল অবশ্যি চারুর সাথে সাথেই আছে ।
কথা হয়েছে শব্দ ভাইয়ার সাথে । সে ছাদের কিনারায় এসে এসে কথা বলেছে আমার সাথে ।
তার কথার ভাঁজ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে ।
সেদিকে আর বেশী নজর দিই নি আমি ।
সন্ধ্যায় মেহেদী পরানো হয় ওকে । আমিও দু'হাত ভরে মেহেদী পরলাম । কেবলই ঐদিনের কথা মনে হচ্ছিল আমার , সেদিনও দু'হাত ভরে মেহেদী পরেছিলাম ।
স্বপ্নের গাঢ় রঙ ধারণ করেছিলো হাতে কিন্তু..
,
সব অসহ্য লাগতে শুরু করলো , উঠে ছাদে চলে গেলাম ।
ছাদে আপাতত কেউই নেই , হিমেল হাওয়া বইছে ।
শান্তশিষ্ট পরিবেশ বেশ ভালো লাগছে আমার ।
প্রকৃতিকে যখন খুব করে অনুভব করছি তখন হঠাৎ একজোড়া হাত আমাকে শক্ত আলিঙ্গনে বন্দী করে ফেললো ।
চমকে উঠে বন্ধ চোখজোড়া খুলতেই পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে _ শুনলাম তোর বিয়ের সম্বন্ধ আসছে?
স্মিত হেসে বললাম_ মেয়েরা বড় হলে বিয়ের সম্বন্ধ আসবে এটা তো অস্বাভাবিক কিছু না আর বিয়ের সম্বন্ধ তো আপনারও আসছে ইনফ্যাক্ট বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে অলমোস্ট ।
-- আচ্ছা তো সব খবর পেয়েছিস?
-- হুম ।
-- তবুও কিছু যায় আসছে না?
-- নাহ্!
-- কি বললি?
-- যা সত্যি তাই ।
-- কিন্তু আমার যে বড্ড যায় আসছে । অন্য কারো ঘরে তোকে দেখা আমার পক্ষে অসম্ভব ।
-- হাহ্ প্রহসন বাদ দিন আর ছাড়ুন আমাকে । অন্যের ঘরে কি? বিছানায় যাওয়ারও রাইট আমার আছে কিন্তু আপনার কিছু যায়-আসবার রাইট নেই ।
-- তোর সাহস দেখে আমি অবাক হই মিথি ।
-- অবাক হবার কিছুই নেই ইটস নরমাল এন্ড সো ট্রু । সো লিভ মি নাউ ।
জোর করে ছাড়িয়ে চলে যেতে চাইলাম কিন্তু ডান হাত তার হাতে শক্ত করে ধরা পড়লো ।
এক ঝটকায় কাছে টেনে নিয়ে গালে হাত বুলিয়ে বললেন_ ঠিক এই মুহুর্তের পর থেকে যা হবে তার জন্য শুধু তোর জিদ দায়ী মিথি । আর হ্যাঁ স্যরি ইন এডভান্স!
আমি ভ্রুজোড়া কুঁচকে কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু তার আগেই একটা রুমাল আমার নাকে চেপে ধরলো শক্ত করে ।
মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো কয়েক মুহুর্তেই আর তারপর...
,
জ্ঞান ফিরেই চোখে অন্ধকার ছাড়া কিছু নজরে আসলো না ।
একটা নরম তুলতুলে বিছানায় শুয়ে আছি মনে হলো আর আমাকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে , তার উষ্ণ নিঃশ্বাস বুকে অনুভব করছি ।
মাথার সাথেসাথে শরীরেও হালকা ব্যাথার আভাস পাচ্ছি ।
আচ্ছা আমি কোথায় আছি? ছিলাম কোথায়?
মাথায় একটু প্রেশার দিতেই মনে পড়ে গেলো সবটা ।
তার মানে আমি এখন রাইদের সাথে আছি??
ব্যাপারটা মাথায় আসতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু পারলাম না , উল্টো ও আরো জাপটে ধরে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো_ মিথি ডিস্টার্ব করিস না , ঘুমাইতে দে ।
আমি রাগে চেঁচিয়ে উঠলাম_ আপনি কি করে করতে পারলেন এটা?
-- কি করছি আমি?
-- কি করেছেন বুঝতে পারছেন না?
রাগে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি ।
সে মহা বিরক্ত হয়ে বললো_ মিথি একদম কান্নাকাটি করবি না বলে দিলাম , কান্না অফ ।
আমি যা করছি মোটেই ভুল কিছু করিনাই বা পর নারীর সাথে করিনাই ।
যা হইছে বউয়ের সাথেই হইছে , এখন চোপ্!
,
এ কথা শুনে আমার আসলেই কান্না থেমে গেলো ।
চরম অবাক হয়ে বললাম_ বউ মানেহ্?
সে বিড়বিড় করে বললো_ মানে ঠিক চার ঘন্টা আগে তোর সাথে আমার বিয়ে হইছে আর দুই ঘন্টা আগে...
আর কিছু না বলে আমার বুকে মুখ গুঁজলো সে , আর আমি চরম বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে মরার মতো পড়ে রইলাম ।
তার কথার মানে বুঝতে আমার বড্ড কষ্ট হতে লাগলো ।
কি হচ্ছে আমার লাইফে? আমিই বুঝতে পারছি না ।
সে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি আমি পাগল হয়ে গেলাম?
চলবে...
Writer:- Sinin Tasnim Sara