> ও আমায় ভালোবাসেনি পর্ব ১৯, ২০ এবং শেষ পর্ব - Boipoka365
-->

ও আমায় ভালোবাসেনি পর্ব ১৯, ২০ এবং শেষ পর্ব - Boipoka365

১৯

.
সব ইজি মনে হয় তাইনা রাইদ? সব ইজি আপনার কাছে? 
বিয়ের নামেও তো প্রহসন চালাইছেন । চেতনাহীন অবস্থায় বিয়ে হয়না এটা জানেন না আপনি? 
আর আমাকে তুলে আনলেন সাক্ষী ছাড়া বিয়ে করলেন আমিও মেনে নিলাম , এটা হইলো?? 
,
ক্যাচ ক্যাচ করে আমি ধপ করে বিছানার ওপরে বসলাম । 
রাইদ ডাম্বেল'স নিয়ে এক্সারসাইজ করছিলেন , ওভাবেই বললেন_ কি মনে হয় তোর? আমি অতো কাঁচা কাজ করি?? 
-- মানেহ্? 
-- মিথি মুভি দেখবি? 
-- আপনার মনে হয় আমি মুভি দেখার মুডে আছি? 
-- আরেহ্ দেখ না বাস্তব বাস্তব মুভি । 
,
ডাম্বেল'স গুলো নামিয়ে রেখে উনি ল্যাপটপ নিয়ে বসলেন , কিছুক্ষণ চাপাচাপি করে আমাকে ডাকলেন । 
মুখ বাঁকিয়ে বললাম যাবো না , উনি বললেন_ আরেহ্ আয় তো । 
ফের মুখ বাঁকিয়ে সোফায় ওনার পাশে গিয়ে বসলাম । 
একটা ভিডিও চালু করলো সে । 
ড্রয়িংরুমে রাইদের কাঁধে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকা অবস্থায় আমাকে দেখা যাচ্ছে । 
সেখানে আমরা মোটেই একা  নই , ভাইয়া-ভাবি বাবা , রামিম-সিমি, ফয়সাল-চারু , ফুপ্পি এবং শব্দও আছে । 
আর একজন বৃদ্ধ লোক যাকে রাইদ কাজি সাহেব বলে সম্বোধন করলেন । 
লোকটি যখন কালেমা পড়ছিলেন তখন আমাকে ঝাঁকি দিয়ে জাগানো হলো , চোখ পিটপিট করে আমি বললাম_ আমি কিন্তু রাইদকে ছাড়া আর কাউকে কবুল বলবো না কিন্তু রাইদের তো অন্য কারো সাথে বিয়া দিবে , ওউফ আমার কি হবে?? 
যখন আমি ন্যাকা কান্না করছি তখন রাইদই বললেন_ আমাকেই তো কবুল বলবা জান । চটপট কবুল বলো । 
আমি চোখ বড়বড় করে বললাম_ তোমাকে কবুল বলতে হবে? ইয়েস! রাইদ আমার বর হয় কবুল কবুল কবুল । 
,
সবাই হেসে আলহামদুলিল্লাহ পড়লো । 
রাইদ বিসমিল্লাহ কবুল বলার পরে রেজিস্ট্রি পেপার দেয়া হলো এবং আমি গটগট করে সাইনও করে দিলাম । 
সাক্ষী হিসেবে বাকিরা সাইন করলো । 
শুধু শব্দ যখন সাইন করতে গেলো তখনই কলম টা গেলো ভেঙে । 
ভিডিওটা পজ করে দিলো রাইদ । 
-- ওয়েট কর এখনই শেষ না আগে পরের ভিডিও দেখ । 
আরেকটা ফাইলে গিয়ে আরেকটা ভিডিও ওপেন করলো সে । 
এই ভিডিও তে আমরা রুমে , বেডে শুয়ে আছি । 
রাইদ আমাকে বলছেন ঘুমাতে বাট আমি ঘুম বাদ দিয়ে ওর ওপর চেপে বসে জিদ করে বলছি_ নো ঘুম টুম । বিয়ে হইলো বাসর হবে না? 
তারপর বাকি কাজের সূচনাও আমিই করেছি... 
,
এই ভিডিও দেখার পর লজ্জায় আমি মাথা নিচু করে ফেললাম । 
রাইদ কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন_ ডার্লিং বলো সব দোষ কি আমার একার? তুমি যদি ঘুম থেকে উঠে সব ভুলে যাও তাহলে কি দোষ আমার বলো? 
,
আমি নিজেই তব্দা খেয়ে গেলাম । আমার আবছা কিছু মনে পড়ছে , ভাইয়ারা  হাসাহাসি করছিলেন তারপর রাইদ আমাকে নিয়ে রুমে নিয়ে আসলো ।
হঠাৎ চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে 
আমি চিল্লিয়ে বললাম_ সব দোষ আপনারই । 
রাইদ হেসে ফেললেন_ হ ঠিক । সব দোষ আমার । এখন নতুন টুইস্ট আসবে বুঝলি না? একটু শক্ত কইরা ধর আমারে । 
আমি নাক ফুলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম । 
আমাদের বিয়ের ভিডিওটা ও পুনরায় চালু করলো । 
লাস্ট দিকটাতে শব্দ ভাইয়ার সাইনের জায়গাটায় প্লে করলো আবার । 
পজ করে জুম করার পর বোঝা গেলো কলম টা এমনি এমনি ভাঙ্গেনি , শক্ত করে চেপে ধরার কারণে ভেঙ্গেছে । 
রাইদ বললেন_ কলম ভাঙ্গা দেখছস না? এবার ওর মুখের দিকে তাকা? 
আমিও তাকালাম । 
শব্দ রক্তিম চোখে পেপার টার দিকে চেয়ে আছেন ।
আমি রাইদকে বললাম_ সে ওভাবে তাকায় ক্যান? 
রাইদ এবার হাসতে হাসতে বললেন_ সতীনের বিয়ার রেজিস্ট্রি পেপার দেইখা কি ও খুশিতে নাচবে? 
-- মানেহ্? 
-- মানে হলো শুরু থেকে সবটা তোর পেয়ারে শব্দ ভাইয়া করে যাচ্ছে । 
-- কি শুরু থেকে? 
-- আমার বউ আমার সাথে বিয়ে ক্যান ভাঙ্গলো এটার খোঁজ আমি নিবোনা মনে করেছিলি? 
মিথি তুই যে বিয়ের খানিক আগে একটা ভিডিও পেয়েছিলি সেটা আমি জানি । ভিডিওটা দেখে তোর উচিৎ ছিলো আমাকে এসে জিজ্ঞেস করা , আমার ওপর রাগ দেখানো বাট তুই সেটা না করে চলে গেলি । 
ঠিকাছে তুই ছোট মানুষ তুই চলে গেছিস । কিন্তু তুই ক্যান চলে গেছিস এই খবর তো আমাকে রাখা লাগতো? 
তুই কিন্তু তোর ফোনটা ফেলে গেছিলি রুমে । 
আমি যখন তোর খোঁজে রুমে আসলাম তখনই আমি ঐ ভিডিওটা দেখি ।
আমার নিজেরই মাথা ঘুরছিলো ভিডিওটা দেখে । 
ঐ মুহুর্তে আমি কাউকেই কিছু বলিনি, সবাইকে সবটা মেনে নিতে বলেছি । 
কিন্তু পরে সিলেটে চলে যাওয়ার পর আমি বারবার ভিডিওটা প্লে করে দেখেছি , ক্লু খোঁজার চেষ্টা করেছি । 
জানিস কি পেয়েছি? একটা লোগো ইটালিক অক্ষরে  S লেখা । 
যেটা সবসময়ই কোনো ভিডিও এডিট করলে শব্দ জুড়ে দিতো । 
তার মানে বুঝতে পারছিস? ভিডিওটা শব্দ এডিট করেছিলো/বানিয়েছিলো । 
বিশ্বাস কর এটা দেখে আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছিলো । 
ও আমার সব চাইতে ভালো বন্ধু ছিলো । 
ও এটা কেনো করেছে এই খোঁজ লাগাতে গিয়ে জানা গেলো ও তোকে পছন্দ করতো । 
আর একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার জানিস? 
চারুমতি শব্দকে পছন্দ করতো , ওর লুকস , পয়সা সব দেখে ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল । 
শব্দ এই ব্যাপারটাকে কাজে লাগিয়েছে । 
সেদিন এই অন্তরঙ্গ মুহুর্ত টা আমার আর চারুর নয় , শব্দ আর চারুর । 
চারু তো জানেও না এই ভিডিও টা এভাবে এডিট করা । 
ওকে বলা হয়েছিল আমার কাছাকাছি থাকার নাটক করতে । 
এসবই কিন্তু আমাকে চারু নিজে  বলেছে । 
চারু ফয়সালকে ছেড়েছিলো শব্দকে পাবার জন্য আর শব্দ চারুকে লাস্ট মোমেন্টে ডাম্ব করেছে । 
যার জন্যই চারু আমার কাছে এসে সব বলে দিয়েছে । 
রাইদ হাহা করে হাসছে । 
আমি ওর হাসির মিনিং খুঁজে পেলাম না । 
বোকার মতো জিজ্ঞেস করলাম_ হাসছেন কেনো? 
এবারে রাইদ হঠাৎ চুপ করে গেলো । তারপর বললো_ আমি তোকে দু'বছর থেকে ফলো করে আসছি । তুই কি কি করেছিস সবই আমি খেয়াল করতাম । ফয়সালের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছিলি সেটাও আমি জানতাম । আমার রাগটা কোথায় জানিস? তুই আমাকে ক্লিয়ারলি না কিছু জিজ্ঞেস করেছিস আর না কিছু বলেছিস । 
তোর চাপা স্বভাব টা যদি না থাকতো তাহলে এতদিন না তুই কষ্ট পেতি আর না আমি কষ্ট পেতাম । 
রাইদ উঠে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা ধরলো । 
আমি মাথা নিচু করে বসে থাকলাম । 
ও আবার ফেরত এসে বললো_ ফয়সাল তোকে ছেড়েছিলো কারণ ওর ব্রেইন টিউমার হয়েছে । বাট এখানেও একটা টুইস্ট আছে ।  
ডোন্ট প্যানিক ওর আসলে কিছুই হয়নি । 
ওকে একটা ফেইক রিপোর্ট দেয়া হয়েছে , যেটা দেখে ও ওর অনিশ্চিত লাইফের সাথে তোকে জড়াতে চায়নি । 
তারপর আমার খুব কাছে এসে গালদুটো চেপে ধরে রাইদ বললেন_ যেকোনো পরিস্থিতিতেই তুই শুধু আমার মিথি । আমি অবসেসড্ তোর জন্য , পৃথিবীর কোনো সাইকো লাভারই আমার মতো হতে পারবে না । যতদিন এই রাইদ থাকবে ততদিন মিথি শুধুই তার আর কারো নয় । 
আমাকে ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে রাইদ আবার বললেন_ আমি কিছু কথা তোকে বলিনি এবং তোর কাজ এই কথাগুলো নিজে নিজে খুঁজে বের করা নইলে তোর মাফ নাই ।
,
আমি বিরাট বড় ঘোরের মধ্যে আছি । নিজের হাতে দু'বার চিমটিও কেটে দেখলাম ঘটনা স্বপ্ন নাকি সত্যি । 
নাহ আসলে সত্যিই । 
-- চিমটি কেটে লাভ নাই যা হইতেছে সত্যিই হইতেছে ।
রাইদের গলা শুনে আমি মাথা তুলে ওর দিকে তাকাই । 
শাওয়ার নিয়ে একটা প্যান্ট পরেছে শুধু , গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে সেই টাওয়ালের একাংশ দিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছে নিচ্ছে । 
আমার সামনে এসে বললো_ মাথা মুছে দে । 
সোফায় ধপ করে বসে পড়লো সে । 
আমি দাঁড়িয়ে টাওয়ালটা নিয়ে মাথা মুছে দিচ্ছি আর তার শুরু হয়ে গেলো খুনসুটি । 
আমার কোমরে হাত জড়িয়ে সে একদম কাছাকাছি টেনে নিয়ে একহাত দিয়ে শাড়ির কুঁচির
অংশটা নামিয়ে নাভি বের করে ফেললো তারপর 
ঠোঁট ছোঁয়াতে শুরু করে দিলো । 
আমি অস্থির হয়ে বলছিলাম রাইদ কি হচ্ছে টা কি? 
সে নির্বিকার । 
তাকে থামাতে পারবো না বুঝতে পেরে বললাম_ আমি জানি আমি ভুল করে ফেলেছি , আমাকে কি মাফ করা যায় না? 
সে ঐ মুহুর্তে কোনো জবাব দিলো না , আরো  কিছুক্ষণ ওভাবে থেকে উঠে ক্লোজেটের সামনে গেলো । 
শার্ট  বের করে পরতে পরতে আমাকে প্রশ্ন করলো_ টাই বাঁধতে পারিস? 
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম । 
সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বেঁধে চুলটা সেট করে আমার হাতে কোর্ট ধরিয়ে দিলো ।
ফুল রেডি হবার পর নিচে নামবার কিছুক্ষণ আগে বললো_ শোন মিথি একটা সম্পর্ক টিকে থাকার পূর্বশর্ত হলো বিশ্বাস । 
পার্টনারকে সবার আগে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে হবে এন্ড বিশ্বাস করতে হবে । 
তুই আমাকে বিশ্বাসই করতে পারিসনি , কে না কে একটা ভিডিও পাঠালো সেটা বেইজ করে তুই বিয়ের আসর থেকে চলে গেলি তুই চাইলেই ঐ মুহুর্তে আমায় জবাবদিহি করতে পারতি কিন্তু করিস নি । 
যেখানে আমার পার্টনার আমাকে বিশ্বাসই করতে পারেনি  , অযাচিত ভিডিও দেখে ভালোমন্দ না বুঝেই আমায় ছেড়ে চলে গেছে সেখানে আমার রাগ/ অভিমান করা কি খুব অন্যায় হবে?
তোর ওপর আমার এত তীব্র একটা অভিমান জেগেছে যে এই মুহুর্তে না আমি তোকে ফেলতে পারছি আর না আপন করে নিতে পারছি । 
তোকে ছাড়া নিঃশ্বাস নেয়াও দুষ্কর কিন্তু তোকে দেখলে আমার জখম তাজা হয়ে যাচ্ছে মিথি । 
এই অভিমান তোকেই কমাতে হবে , সম্পর্কে তিক্ততা যাতে না আসে এই দায়িত্ব এখন তোর । 
বলেই রাইদ বেরিয়ে গেলেন । 
কথাগুলো শুনে আমার পৃথিবীই যেন থমকে গেছে ,কষ্টে বুক ভাঙছে আমার । 
ভুল তো আমি করেই ফেলেছি এখন এর মাশুল আমাকেই গুনতে হবে । 
,
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমিও নিচে গেলাম । 
ফুপ্পি আর রাইদ ডাইনিংয়ে বসে আছে , প্লেটে খাবার অথচ তারা খাচ্ছে না । 
আমাকে দেখে ফুপ্পি বললেন_ এতো দেরি করলি কেনো মা? বসে আছি আমরা তোর জন্য । 
-- স্যরি ফুপ্পি ।
ফুপ্পির পাশে গিয়ে বসে আমিও খাবার বেড়ে নিলাম । 
রাইদের খাওয়া আমাদের আগেই হয়েছে । 
ও উঠে যাবার আগে শুধু বললো_ রেডি হয়ে থাকবি , সন্ধ্যায় সিমির আকদ্ । 
আমি মাথা নাড়লাম । 
ও চলে যাবার পর ফুপ্পি জিজ্ঞেস করলেন_সব ঠিক আছে তো মা? 
ফুপ্পির কথা শুনে আমার কান্না পেয়ে গেলো আমার । 
শব্দ করে কেঁদে ফেললাম । ফুপ্পি মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন আমাকে । 
আমি ওনাকে সবটা খুলে বলায় উনি বললেন_ তোর বয়স কম ছিলো , একটা ভুল হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারছি মা । তোর উচিৎ ছিলো আমায় বা রাইদকে জিজ্ঞেস করা কিন্তু তুই করিস নি । যা হওয়ার হয়ে গেছে , কিন্তু মা বল তো তুই কি শুধু ঐ ভিডিওটা দেখেই চলে গেছিলি? 
আমি মাথা নেড়ে বললাম_ মা এসেছিলো ঐ মুহুর্তে , আমায় বলেছিলো আমি যদি তার সাথে যাই তাহলে মা আমাকে আপন করে নিবে আর আমি কিছু চিন্তা না করেই.... 
ফুপ্পি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন_ তোর মায়ের যে কি হয়েছে রে! কেনো যে সে ঐসব কুসংস্কার মাথায় রেখে চলে তাই বুঝতে পারিনা ।
থাক বাবা কাঁদিস না । চল দেখি কোনটা শাড়ি পরবি আমি সিলেক্ট করে দিই । 

,
সন্ধ্যায় ফুপ্পিই আমাকে রেডি করে দিলো । 
একটা সাদা রাজশাহী সিল্ক পরিয়ে গোল্ডেন হিজাব পরিয়ে দিলো তারপর মুখের সাজটাও ফুপ্পিই করিয়ে দিয়েছে । 
গয়না বলতে দু'হাত ভর্তি তার স্বর্ণের চুড়ি আর দু'পায়ে ভারি রূপোর নুপূর । 
সবটা সাজানোর পর ফুপ্পি বললেন_ রাইদের বাবা সবসময় চাইতেন তোকে এভাবে সাজিয়ে দিই , উনি কিন্তু মনে মনে চাইতেন তোকে রাইদের বউ বানাতে । 
আজ তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কিন্তু সে নেই । আঁচলে চোখ মুছে নিলেন ফুপ্পি । 

সেই মুহুর্তে কলিংবেল বেঁজে উঠল  , ফুপ্পি বললেন_ রাইদ এসেছে বুঝি! 
তুই থাক মা আমি দেখি । 
ফুপ্পি চলে গেলেন , আমি চটজলদি নুপূর জোড়া পা থেকে খুলে ফেললাম । 
রাইদ পরিয়ে দিবে এসে । 
,
দশ মিনিটের মাথায় রাইদ এসে পরলেন । 
রেডি হয়েছিস? বলে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আয়নায় তাকাতেই থমকে গেলেন । 
তার পলক পড়ছিলো না চোখের , আমিও আয়নার ভেতর দিয়েই তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । 

সে হঠাৎ করেই বললো_ দেখি এদিকে ফিরে তাকা তো । 
আমি বিনা বাক্য ব্যায়েই তার দিকে ফিরলাম । 
সে দু'হাতে আমার মুখখানা আঁজলা ভরে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো_ বড্ড সুন্দর হয়ে গেছিস দেখছি । মাথা নষ্ট করা সুন্দর! 
আমি কিছু বলার সুযোগ পাইনি তার আগেই সে আমার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে । 
মিনিট পনেরো পর এক প্রকার জোর করেই ছাড়িয়ে নিয়ে দিশেহারা গলায় বললো_ প্রোগ্রামে না গেলে হয়না মিথি? 
-- উহু যাইতে হবে । 
-- প্লিজ মিথি , ওদের তো আবার বিয়ে হবে আমরা  তখন যাই? 
-- নাহ্ । ফ্রেশ হতে যান রাইদ এক্ষুণি । 
আমার সাথে না পেরে বেচারা ফ্রেশ হতে চলে যায় । 
এদিকে আমার ফোনে সিমির কল আসে । 
সিমির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে যাই আমি । 
--  আজ কথা বলেই কাটিয়ে দিবি?
ফের রাইদের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে। 
ফোনটা কেটে ওর কাছে গিয়ে বলি ।
-- আপনি রেডি হয়ে নিন? 
 হুম । বলে  সে পাঞ্জাবি বের করে পরে। 
যাবার আগে আগে নুপূর জোড়া হাতে নিয়ে তাকে বলি_ পরিয়ে দিন না? 
সে এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে_ নিজের কাজ নিজে কর? 
-- প্লিজ রাইদ? 
এবার আর সে না করতে পারেনা । 
আমার খুব খুশি লাগে । 
,
সিমিদের বাসাটা বেশি দূরে না হওয়ায় খুব জলদিই আমরা পৌঁছে যাই । 
আমাদেরকে দেখে সবাই এগিয়ে এসে কথা বলতে শুরু করে । 
চারু আপু আমার হাত ধরে বলে_ স্যরি বোন । তোমার কাছে মাফ চাওয়ার মুখ আমার নেই । তবুও বড় বোন মনে করে মাফ করে দিও । 
তার ওপর রাগ রেখে তো লাভ নেই । 
ইটস ওকে বলে তার সাথে একটা হাগ করি আমি ।
ক্ষমা মহৎ গুন , নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় মানুষকে ক্ষমা করে দিতেন । 
আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকিই বা কতদিন? 

,
শব্দ ভাইয়াও এসেছেন দেখছি । সিমির আকদ টা খুব সুন্দরভাবেই হয়ে যায় । 
পুরোটা সময় খেয়াল করেছি শব্দ ভাইয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকাচ্ছেন আমার দিকে , আমিও রাইদের সাথে সাথে থাকারই চেষ্টা করছি । 
কিন্তু এক ফাঁকে একটা কাজে আমাকে পার্কিংয়ের দিকে যেতে হয় । 

হঠাৎ মনে হয় কেউ আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে । 
ভয়ে পিছু মুড়ে দেখি শব্দ ভাইয়া । 
একটা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে ওনাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসার সময় উনি আমার হাতটা টেনে ধরেন । 
ভয় পেয়ে আমি হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করি । 
-- কি হচ্ছে কি হাত ছাড়ুন শব্দ ভাইয়া? 
-- কেনো ছাড়বো? এই হাত তো আজ আমার হাতেই থাকার কথা ছিলো । 
বাস্টার্ড টা ছিনিয়ে নিয়েছে । 
-- শব্দ ভাইয়া কি বলছেন এসব? 
চিল্লিয়ে উঠি আমি । 
উনি আরো শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরেন আর বলেন_ দেখো মিথি তুমি আমারই হবা । আজকেই আমি তোমাকে নিজের করে নিবো । 
,
ওনার পাগলামি দেখে আমি বেশ ভয়ে পেয়ে যাই । 
চিল্লিয়ে রাইদকে ডাকি । 
একবার ডাকার সাথে সাথেই সে আমার মুখটা চেপে ধরে । 
আমি ধাক্কাতে থাকি তাকে আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি । 
শব্দ দু'হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাউকে ইশারা করে । 
আমি পেছনের ব্যক্তিটাকে দেখার চেষ্টা করি কিন্তু এর আগেই কোমরে সুক্ষ ব্যাথার আভাস পাই তারপর আর কিছু মনে নেই।

২০ 

 অনেক গুলো পানির ঝাপটায় চেতনা ফিরে আমার । 
চোখ  খুলে দেখি আবছা আলো অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা রুমে আমি , হাত নড়ানোর চেষ্টা করতেই দেখি আমাকে বেঁধে রাখা হয়েছে এবং আমার ঠিক সামনেই শব্দ বসে আছেন । 
আমি তাকে দেখে ভীতু কন্ঠে বলি_ আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন?
-- তোমার আসল ঠিকানায় বেবী । 
শব্দ উঠে দাঁড়ায় । আমার কাছে এসে হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে বসে । 
-- কত্ত অপেক্ষা করেছিলাম এই দিনটার জন্য যানো তুমি? সেই প্রথম দেখা থেকেই পাগল হয়ে আছি আমি তোমায় পাবার জন্য । 
মাঝে কত কিছু করলাম  , তুমি বড় হয়ে গেলে । 
জানো বড় হয়ে কতখানি সুন্দর দেখতে হয়েছ তুমি? 
কিউট বাচ্চাটা । 
সে আমার মুখের দিকে হাতটা নিয়ে আসলো । 
আমি মাথা পেছনে করে বললাম_ আপনি এরকম কেনো করছেন? আমি আপনার ফ্রেন্ডের বউ এটা কি ভুলে গেছেন আপনি? লজ্জা বলতে কিছু নেই? 
-- নাহ্ নেই । নেই আমার লজ্জা , ভালোবাসতে কোনো লজ্জা নেই । ঐ রাইদের জন্য ছোট্ট থেকে আমায় কত কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে ড্যু ইয়ূ হ্যাভ এনি আইডিয়া? সব হাসিমুখে কুরবান ছিলো শুধু মিথিকে ছাড়া । 
আমি তো শুধু তোমায় চেয়েছিলাম ওর থেকে,  কিন্তু ও দেয়নি তাই ছিনিয়ে নেবো এখন আমি । 
মিথির সাথে আমাকে ছাড়া আর কাউকে যায় না । সব গুলোকে আমি পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছি । 
সেই তোমার কলেজ লাইফ থেকেই । মনে আছে কতগুলো ছেলে তোমার বন্ধু হতে এসেছিলো? 
ওদেরকে এলাকা ছাড়াই করেছি । 
তারপর ঐ  ট্যাস্কি ড্রাইভার? ওকে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দিয়েছি । আমার মিথির উপর যে নখের আঁচড়ও কাটবে তাকে তো আমি পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিবো ।
ভালোয় ভালোয় রাইদকে সরিয়েছিলাম , ফয়সালকে সরিয়েছিলাম কিন্তু যে মুহুর্তে তুমি আমার হতে শালা রাইদ আবার ব্যাক করলো । 
এমনটা জানলে মা কে বলে আমি তখনি তোমায় নিজের করে নিতাম , বাট চিন্তা নেই এখন করে নিবো । অল ক্রেডিট গোজ টু মা  । 
আফটার অল সে ই আমায় একমাত্র শুরু থেকে হেল্প করেছে। 
,
আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি_ মা কে? 
শব্দ পেছন ঘুরে ডাকে_ মা?? 
অন্ধকার থেকে একটা অবয়ব আস্তে আস্তে হেঁটে আসতে শুরু করে । 
সেটা যতই দৃশ্যমান হয় ততই আমার বুকের মাঝে অজানা কষ্ট হানা দিতে শুরু করে । 
চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে , আপনা আপনিই উচ্চারিত হয়_ মা তুমি? 
শব্দ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে_ হু মা । 
মা ই তো সেই শুরু থেকে আমায় হেল্প করে এসেছে । 
জান তুমি জানো? মা তোমায় কতটা লাভ করে? 
মা জানে তুমি আমার সাথে হ্যাপি থাকবে , দ্যাটস হোয়াই সে ঐ বিয়ে বাড়ি থেকে তোমায় নিয়ে গেলো বাসায় । 
তোমায় আমার হাতে তুলে দেবার ওয়াদা করলো । 
সিরিয়াসলি সে খুব ভালো মা । 
মা যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আমি তার চোখের দিকে তাকালাম । 
ঐ দুই চোখে স্পষ্ট ঘৃণা । 
শব্দ উঠে মায়ের পাশে দাঁড়াতেই মা বললো_ শুভ কাজে দেরী করতে নেই বাবা । কাজি ডাকো তোমাদের চার হাত এক করে দিতে পারলেই আমার শান্তি  । 
আমি চিৎকার করে বললাম_ আমি মরে গেলেও তোকে বিয়ে করবো না । 
কাজি ডাকলে , বিয়ের কথা বললে আমার লাশ দেখতে হবে তোকে । 
এই মিথি শুধুই রাইদের আর কারো নয় । 
সে সম্পূর্ণই রাইদের হয়ে গেছে আর কেউ তাকে পাবে না । 
,
শব্দ রেগে আমার দু গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো । 
টেনে হেঁচড়ে হিজাবটা খুলে নিয়ে চুলগুলো মুঠো করে ধরলো তারপর রাগী গলায় বললো_ তোকে তো আমার হইতেই হবে বাই হুক অর বাই ক্রুক । 
তারপর আমার হাতের বাঁধন খুলে টেনে হিঁচড়ে একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো । 
ওখানে নিয়ে আবার হাত বেঁধে বিছানায় ফেলে রাখা হলো । 
আমি শুধু চিৎকার করছিলাম , দোয়া পড়ছিলাম । 
মায়ের জন্য সমস্ত শ্রদ্ধা উঠে গেছিলো আমার । 
কতক্ষণ পর জানিনা শব্দ আবার আসলো । 
আমাকে বিয়ের জন্য ফোর্স করছিলো কিন্তু আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না । 
শেষে আমি যখন ওকে জারজ বলে গালি দিয়েছিলাম ঠিক তখন ও প্রবল রেগে শার্টের বাটন খুলতে খুলতে বলছিলো_ বিয়ে করা লাগবে না , এমনিতেই তুই আমার হবি । 
তোর গর্ভে যখন আমার বাচ্চা থাকবে তখন দেখবো তাকে তুই কি বলিস! 
আমি এর আগেই চেষ্টা করার ফলে আমার হাতের বাঁধন ধিলে হয়েছিল । 
শব্দ আমার কাছে আসবার পূর্বেই আমি হাতের বাঁধনটা খুলে ফেলেছিলাম । 
ছাড়া পেয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়েছি শুধু । 
এলোপাথাড়ে দৌড়ে গেছি বাঁচবার আশায় । 
সিঁড়িগুলো পেঁচানো ছিলো , সেই সিঁড়ি ঘরে আসার সাথেসাথে কার সাথে যেন প্রবল ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম কিন্তু পড়ে যাইনি । 
ভয়ে বন্ধ হওয়া চোখ মিটিমিটি করে খুলতেই বুঝতে পেরেছি আমি শূন্যে ভাসছি । 
তারপর সামনে তাকাতেই রাইদ দৃশ্যমান হয় , হাত বাড়িয়ে ওকে ছোঁয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতেই ও আমায় কোলে তুলে নেয় । 
ওর বুকেই নেতিয়ে পড়ি আমি । 
ও আমায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে_ আমি এসে গেছি জান । ভয় নেই । 
এর পরের ঘটনাগুলো ধোঁয়াশা । 
,
হাতে থাকা ডায়েরি টা বন্ধ করে উঠে বসে জাফরিন । 
ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দরজা খুলে বের হয় । 
উদ্দেশ্য উপরে মামাণির ঘর । 
সিমিরা শুয়ে পড়েছে মাত্র , এমনসময় দরজায় নক । 
রামিম হেসে বলে_ ঐ যে ভাগ্নি আমার বাকি ঘটনা শুনতে চলে এসেছে । 
সিমিও হেসে বলে_ দরজা খোলো ওকে আসতে দাও । 
রামিম গিয়ে দরজা খুলে দিতেই জাফরিন ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করে । 
সিমির পাশে বসে বলে_ মামানি এর পর কি হলো? মিথি আন্টি কোথায় এখন? 
সিমি ওর ফোলা পেটে হাত রেখে আস্তে করে উঠে বসে । 
তারপর বলতে থাকে_ মিথির পায়ের নুপুরে লোকেশন ট্র্যাকার চিপ লাগানো ছিলো , শব্দ ওকে নিয়ে যাওয়ার আধ ঘন্টা পর যখন সবাই ওর খোঁজ করছিলো তখন রাইদ ভাই বলেন নিশ্চয়ই শব্দ মিথিকে কিডন্যাপ করেছে । 
তারপর পুলিশ সমেত ফোনে দেখানো লোকেশনে পৌঁছে যায় সবাই । 
পেঁচানো সিঁড়ির কাছে মিথিকে পায় রাইদ ভাই । 
রাইদ ভাইকে দেখে ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো পুনরায়৷  
ওকে কোলে তুলে নিতেই পেছনে শব্দ এসে যায় । 
ও রাইদ ভাইয়ের উপর আ্যাটাক করেছিলো বাট সাথে তো রামিম ফয়সাল দু'জনেই ছিলো । 
আর ছিলো পুলিশ । 
শব্দ কে আর মিথির মা কে পুলিশি হেফাজতে নেয়ার পর জানা যায় এ যাবৎ যতকিছু হয়ে এসেছে সবকিছুর পেছনে এই দু'জন মানুষই দায়ী । 
শব্দ এসব কাজে চারুকেও ইয়ূজ করেছে । 
যাহোক চারু তো ভালো হয়ে গেছিলো কিন্তু শব্দ ভালো হয়নি । 
সে আসলে আমাদের ডিপার্টমেন্ট হেড ম্যামের ছেলে, যে মিথিকে ম্যামের বাসাতেও হ্যারাস করার ট্রাই করেছিলো । 
যার আরেকটা নাম স্মরণ । 
এমনকি সে ফয়সাল ভাইয়ের নরমাল মাথা ব্যাথাকে পুঁজি করে ডাক্তার দেখিয়ে অযথা টেস্ট করিয়েছিলো এবং ডাক্তারকে টাকা খাইয়ে একটা ফেইক রিপোর্ট বানিয়েছিলো যেটাতে লেখা ছিলো ফয়সাল ভাইয়ের ব্রেইন টিউমার এবং তার হাতে বেশী সময় নেই । 
তাকে এসব কাজে হেল্প করেছিলো মিথির মা । 
মিথির মায়ের মিথির ওপর রাগের অন্যতম কারণ মিথি ওনার নিজের সন্তান না । 
মিথিকে আঙ্কেল রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলো । 
তানভীর ভাইয়ের পর প্রায় অনেকবছর আন্টির বেবী না হওয়ায় আর ছোট্ট একটা বাচ্চাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে আঙ্কেলের মনে মমতা জাগে , উনি মিথিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন । 
মিথিকে আন্টিও বেশ ভালোই বাসতো কিন্তু বিপত্তি হলো যখন উনি পূনরায় প্রেগন্যান্ট হলেন । 
মিথির ওপর থেকে ওনার মমতা কমে আসলো , অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মতো উনি মিথিকে দেখছিলেন বাট সেদিনের ঘটনায় যখন ওনার মিসক্যারেজ হয়ে গেলো ঠিক তখন থেকে উনি মিথিকে দেখতে পারেন না । 
ওনার সন্তানের খুনি উনি মিথিকেই মনে করতেন আর তাই উনি মিথিকে রাস্তা থেকে সরানোর প্ল্যান করছিলেন সেই ছোট থেকেই । 
সুযোগ আসলো শব্দের মাধ্যমে আর উনি এটা কাজে লাগালেন । 
সবটা শোনার পর রাইদ ভাই খুব কেঁদেছিলেন , মিথির তো চেতনা ছিলো না নইলে মেয়েটা সব শুনে পাথর হয়ে যেত । 
শব্দ আর আন্টিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর পরদিনই খবর আসে শব্দ কোথাও পালিয়েছে আর আন্টি সুইসাইড করেছেন । 
আজ তিন তিনটে বছর পেরিয়ে গেলো , শব্দের খোঁজ আমরা আজ অবধি জানিনা । 
আর মিথি , সে তো আছে লন্ডনে পড়াশোনা কাম্প্লিট করছে সে । 
দিনশেষে সবাই হ্যাপি থাক মা , এই তো চাওয়া । 
,
সবটা শুনে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো জাফরিনের ঠোঁটে । বিড়বিড় করে বললো_ মিথি আন্টি তুমি খুব সুখী হও । 

,
ইন লন্ডন_ 
রাত বারোটা , সাড়ে বারোটার দিকে মিথি বইয়ে চোখ বুলাচ্ছিলো । 
আজ তার চোখে ঘুম নেই দু'টো কারণে ১. আজ তার আর রাইদের আ্যানিভার্সিরি এবং ২. আজ তার জন্মদিনও । 
আজকের দিনেও রাইদ তার সাথে যোগাযোগ করবে না? 
বড্ড অভিমানে মিথির চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো । 
বইটা বন্ধ করে সে বেলকোণীতে গিয়ে দাঁড়ালো । 
সুন্দর হিমেল হাওয়া শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছিলো তার 
, সে চোখ বন্ধ করে যখন এটা উপভোগ করছে তখন কানে কিছু সুক্ষ ভয়েস ভেসে আসলো _ হেই চার্মিং লেইডি হ্যাপি বার্থডে । 
কাট কাট ইংরেজি ভাষায় একটা বাচ্চা মানুষের গলার ভয়েস । 
কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে মিথি ঘরের ভেতরে গিয়ে খুঁজতে থাকে কিন্তু পায়না । 
শব্দর উৎস খুঁজতে খুঁজতে ও ড্রয়িংরুমে এসে পড়ে । 
ড্রয়িংরুমে প্রচন্ড অন্ধকার অথচ মিথির পাক্কা মনে আছে সে এখানে লাইট জ্বালিয়ে শুতে গেছিলো যেটা সে প্রতিদিনই করে । 
মিথির ব্যাপারটা খটকা লাগে , ভয় পেয়ে সে এক পা এক পা এগোয় আর আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করে_ কে এখানে? কথা বলছেন না কেনো? কে? 
এভাবে এক পা এক পা করে এগোতে গিয়ে আচমকা একবার কিসের সাথে পা লেগে হুড়মুড় করে উপুড় হয়ে পড়তে নেয় মিথি কিন্তু মেঝেতে পড়বার আগে কেউ দু'হাতে জড়িয়ে ধরে তাকে । 
সাথেসাথে লাইট জ্বলে ওঠে , তীব্র আলো চোখে পড়ায় মিথির চোখ বন্ধ হয়ে যায় মুহুর্তে । 
কিছুক্ষণের মাঝে আলো এডজাস্ট হলে সে চোখ খুলে হাত জোড়ার মালিককে দেখে চমকে যায় । 
ভ্রু কুঁচকেই বলে_ আপনি? 
লোকটা বলে_ বউ যেখানে সেখানে থাকা কি অস্বাভাবিক? অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলি বুঝি? 
মিথি মুখ বাঁকিয়ে অভিমানরত গলায় বলে_ হ্যাঁ আপনার তো সবসময় এটাই মনে হয় রাইদ । আমার ভালোবাসা কি বোঝেন আপনি? 
রাইদ বাঁকা হেসে বলে_ বাচ্চাটা বুঝি ভালোবাসতেও শিখেছে? 
-- ছাড়ুন আমাকে । 
অভিমানী গলায় বলে মিথি । 
ওকে এক ঝটকায় বুকে টেনে নিয়ে রাইদ বলে_ আর কোনো ছাড়াছাড়ি নাই । তিন বছর ওয়েট করছি আর কত? 
এই গুলুগুলু গাল দুটো তে কামড় দেবার জন্য আমি পাগল হয়ে আছি । 
-- কিহ্ অসভ্য! আপনি কামড় দেবার জন্য এসেছেন? 
উঁহু আরো অনেক কিছুই করবো তো । 
মিথিকে কোলে তুলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে রুমে চলে যায় রাইদ । 
তারপর ওকে নিয়েই বিছানায় গড়িয়ে পড়ে । 
রাইদের পিঠে দু ঘা বসিয়ে মিথি বলে_ ওউফ আটার বস্তা পড়েছে আমার ওপর , নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা আমি । 
রাইদ ওর গালে কামড় দিয়ে বলে_ তোকে আজ মেরেই ফেলবো থাম । 
মিথি যখন পুরোদমে রাইদের ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে তখন ঝট করে রাইদ ওকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় । 
মিথি ক্ষেপে চিল্লিয়ে বলে_ রাইদের বাচ্চা উঠলি ক্যান? আবার সেদিনের মতো করলে তোকে চাক্কু মারবো । 
রাইদ শার্টলেস হয়ে মিথির পাশে শুয়ে বলে_ খুব ঘুম পাইছে বুঝলি! মাথাটা টিপে দে তো ঘুমাই । 
মিথি একদম উঠে ওর পেটের ওপর বসে । 
গলা চেপে ধরে বলে_ মাথা ক্যান তোর গলাটাই চেপে ধরি? 
রাইদ হেসে বলে_ দস্যি বউ আমার । পরে জেল তোমারই হবে । 
-- হইতে দে । 
এটা বলে মিথি রাইদের গলায় জোর সে কামড় বসায় । 
রাইদ মৃদ্যু চিৎকার করে শুধু বলে_ আমার ইজ্জত কাইড়া নিতেছে তো মেয়েটা। 





সমাপ্ত...




Writer:- Sinin Tasnim Sara



NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner