|২|
কৌশিক হেসে ফেলল,
' সুব্রত সম্পর্কে এই ভুলটা প্রায় সকলেরই হয়। ওর নামে একটু হিন্দুয়ানা থাকলেও সে আসলে মুসলিম। ওর পুরো নাম সুব্রত সরকার।'
লাবণ্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বুকে ঢেউ খেলে গেল অপ্রতিরোধ্য আনন্দ। 'সুব্রত মুসলিম' এই দুটো শব্দই যেন বয়ে আনলো আকাশসম প্রাপ্তি। লাবণ্যর চোখদুটো ঝলমল করে উঠল। এই গোপন আনন্দটুকু হঠাৎ প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার ভয়ে দ্রুত মাথা নিচু করল। চিবুকটা লেগে গেল প্রায় বুকের সাথে। হাতের নখ খুঁটতে খুঁটতে খুব অবহেলায় বলল,
' ও।'
এই 'ও' উচ্চারণ করতেও কেমন লজ্জায় কুঁকড়ে গেল লাবণ্য। কোমল গাল দুটোতে লালচে আভা ছড়াল। কানদুটো গরম হলো। মনে হতে লাগল, পৃথিবী বুঝি জেনে গিয়েছে তার সকল রহস্য! তার এই হৃদয়ঘটিত অপরাধ! কৌশিক লাবণ্যর রক্তিম মুখখানি খুব একটা খেয়াল করল না। সাবলীল ভঙ্গিতে আলাপ এগিয়ে নিল,
' এমন ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাংলাদেশী নারী চিত্রশিল্পী খুব কম চোখে পড়ে। বিখ্যাত চিত্রকারদের মাঝেই দেখুন না, জয়নুল আবেদীন , শাহাবুদ্দিন আহমেদ, মনিরুস ইসলাম, মোহাম্মদ কিবরিয়া, নিতুন কুন্ড, দেবদাস চক্রবর্তী, নাজিব তারেক, চুনিলাল দেওয়ান, মুর্তজা বশীর, এস এম সুলতান, সমর মুজমদার, শিশির ভট্টাচার্য এদের মধ্যে কেউই কিন্তু নারী নন। তাই আপনাকে এখানে দেখে খুব অবাক হয়েছি। আপনার পেইন্টিং গুলোও কিন্তু প্রসংশাযোগ্য। অসাধারণ!'
কৌশিক প্রসঙ্গ পাল্টাতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল লাবণ্য। মুখ তুলে বলল,
' ফাঁকা প্রসংশা করছেন?'
' ফাঁকা প্রসংশা কেন হবে?'
' সুব্রতবাবু যে প্রথম দেখাতেই বিশদ ভুল ধরে ফেলল!'
কৌশিক লজ্জিত হাসল। সন্ধ্যার জল খাবার শেষে ঘরে ফিরতেই সুব্রতর বলা কথাগুলো কানে ভাজতে লাগল লাবণ্যর। সেই পেইন্টিংটির দিকে টানা চেয়ে থেকে নতুন এক কাগজ টানল ক্যানভাসে। রং-তুলি ছড়িয়ে আঁকতে বসল নতুন এক ছবি। যেন, পৃথিবীতে সুব্রতই একমাত্র বিচারক৷ সেই বিচারককে মুগ্ধ করায় লাবণ্যর একমাত্র উদ্দেশ্য। সুব্রত যদি মুগ্ধই না হয়। বিমুগ্ধ দৃষ্টিজোড়া মেলে চেয়ে না-ই থাকে। তবে কেন এতো রঙ মিছিল? কেন এতো আয়োজন? কীসের এতো গর্ব? লাবণ্য রাত জেগে একের পর এক রং মেশাল। কিন্তু একি! সবই যে সেই কৃষ্ণমানবের পোট্রের্ট। রঙের ফাঁকে ফাঁকে নিশ্চুপ চোখদুটোর অজস্র কথা৷ বিরক্তি আর ব্যথায় অস্থির হয়ে উঠল লাবণ্য। চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করল ভিন্ন কোনো থিম। কিন্তু চোখের পর্দায় ভেসে উঠল কৃষ্ণমানবের ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিমা। তার কথা, তার হাসি, তার গাম্ভীর্য। এছাড়া কিচ্ছু না। পৃথিবীটা হঠাৎ খুব ফাঁকা হয়ে গেল লাবণ্যর। এই বিশ্ব-সংসারে কৃষ্ণমানব ব্যতীত আঁকার সাবজেক্ট কিছু অবশিষ্ট রইল না। পাখিরা ডাকল না, মেঘরা ছুটলো না, পৃথিবী জ্যোৎস্নায় ডুবল না।
যখন রাত ফুরাল। ভোরের গাঢ় কুয়াশা হানা দিল বারান্দায়। সেই মুহূর্তে রং-ক্যানভাস ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল লাবণ্য। দুষ্টু মেঘের দল ভীষণ দুষ্টুমিতে ভিজিয়ে দিলো তার গোটা গা। লাবণ্য বারান্দার রেলিং চেপে ক্লান্ত মুখটা আকাশের দিকে মেলে চোখ বন্ধ করল ভীষণ স্বস্তিতে। শিরশিরে বাতাস গায়ে কাঁপন ধরাল, গাঢ় মেঘ ভেজাল চোখের পাঁপড়িটুকু। লাবণ্য কিছুক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে গায়ে পাতলা এক চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে এলো রিসোর্ট থেকে। আশেপাশের পাহাড়গুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় পাহাড়টিতে সাইরু হিল রিসোর্ট। খুব ভোরে, হঠাৎ দেখলে মনে হবে রিসোর্টটি বুঝি ডুবে আছে কোনো এক মেঘ রাজ্যে! লাবণ্য পায়ে পায়ে পাহাড়ের ঢালু দিকটিতে গিয়ে দাঁড়াল। পাহাড়ের পেছন থেকে রাঙা বউয়ের মতোই একটু একটু উঁকি দিচ্ছে নব সূর্য। লাবণ্য গায়ের চাদরটা আরো একটু আগলে নিয়ে মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইল। হঠাৎ ক্যামেরার শাটারের শব্দে চমকে পাশ ফিরে তাকাল সে। তার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে, নিঝুম ভোরের নিস্তব্ধতা চিড়ে, রাঙা সূর্যের ছবি তুলছে এক যুবক। মাথায় গ্রে রঙের শীত টুপি। পরনে কালো রঙের হুডি। লম্বা, ফিট চেহারা। থুতনিতে গভীর খাঁজ। লাবণ্যর হৃদয় কেঁপে উঠল। ভোরের কুয়াশার মতোই আচমকা ঝাপটায় ভিজিয়ে দিয়ে গেল অচেনা এক ব্যথা। সুব্রত পটাপট কিছু ছবি তুলে ভ্রু কুঁচকে ক্যামেরার দিকে তাকাল। ক্যামেরার এংগেল ঠিক করে আবারও কিছু ছবি তুলল। এবার আর ভ্রু কুঁচকাল না। ক্যামেরার স্ক্রিনে চেয়ে মৃদু কন্ঠে বলল, ' চমৎকার।' লাবণ্য অন্যদিকে ফিরে, পাছে প্রকাশ পেয়ে যায় এই ভয়ে, সুপ্ত অনুভূতিগুলোকে আরো গভীর কোনো প্রকোষ্ঠে লুকানোর চেষ্টায় ছটফট করে উঠল। তারপর যখন ফিরে তাকাল তখন সুব্রতর টিকিটুকুর সন্ধান নেই। লাবণ্যর মন খারাপ হয়ে গেল। সুব্রত কী একটি বারও তার দিকে তাকিয়েছিল? একটুকু দেখেছিল তাকে? লাবণ্য বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ বোজল। চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা জল। লোকে বলে, প্রেমে পড়ার মতো সুন্দর অনুভূতি আর কিছুতে হয় না। কিন্তু লাবণ্য জানে, প্রেমে পড়ার মতো ব্যথাময় অনুভূতি আর কিছুতে হয় না। এইযে ঘুমহীন বিছানা, বাসী পড়ে থাকা ভাতের থালা, রংহীন ক্যানভাস, নতুন কিছু ভাবতে না পারা অলস মস্তিষ্ক সবকিছুতেই যে ব্যথা। কেমন দুঃখ দুঃখ ব্যথা। এই ব্যথা বইতে পারাও কী কম ব্যথার? তবুও তোমরা বলবে, প্রেম সুন্দর। তবে শুনো পৃথিবী, প্রেম মানেই ব্যথা। লাল-নীল ব্যথার অসংখ্য পিরামিড।
দুপুরে এক্সিবিশন জমজমাট হয়ে উঠতেই এক্সিবিশন কাভার করতে এলো নাজমুল। লাবণ্যকে শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠে বলল,
' একি! কী অবস্থা তোমার চেহারার! সত্যি করে বলো তো? কাহিনীটা কী? ফিট টিট খাচ্ছ নাকি বারবার?'
লাবণ্য হাসল। প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গিয়ে বলল,
' থিয়েটার কোথায় মঞ্চায়ন হচ্ছে নাজমুল ভাই?'
নাজমুল উপরের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলল,
' থিয়েটার দু'তলায়।'
লাবণ্য কৌতূহল নিয়ে বলল,
' থিয়েটারের নিউজ কাভার করবেন না নাজমুল ভাই?'
নাজমুল ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঘড়ি দেখল। লাবণ্যর পেছনে রাখা পেইন্টিং-এ দৃষ্টি দিয়ে বলল,
' তা তো করবই তবে একটু পর। সাড়ে বারোটায় বাংলাদেশী দলের পারফরম্যান্স। ওটা কাভার করব। এই ব্রিটিশ শালাদের থিয়েটার ফিয়েটার দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়। থিয়েটার হলো ভারতবর্ষের সম্পদ। সেখানে ইংরেজের প্যা প্যা ফ্যা ফ্যা জুড়ে দেওয়ার মানে কী? থিয়েটারের কী বুঝে ওরা? আশ্চর্য!'
' কিন্তু আমার জানা মতে নাট্যকলার উৎপত্তি গ্রীক থেকে। ইংল্যান্ডে নাট্য চর্চা শুরু হয় রোমানদের সময়ে। বাংলা থিয়েটারের চিন্তাও কিন্তু ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু। তবুও থিয়েটারকে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবী করা অন্যায় হচ্ছে নাজমুল ভাই।'
নাজমুল প্রচন্ড বিরক্ত হলো। লাবণ্য হেসে ফেলে বলল,
' বাদানুবাদে না গিয়ে চলুন বরং পারফরম্যান্সটা দেখে আসি। আমি আগে কখনো থিয়েটার প্লে দেখিনি। তাই এক্সপেরিয়েন্স নেই। দেখলে বুঝতে পারব, হু ইজ গুড অর হু ইজ বেটার।'
নাজমুল লাবণ্যর পেছনে ইশারা করে বলল,
' নতুন পেইন্টিং মনে হচ্ছে? কাল দেখিনি। পেইন্টিংটির একজেক্ট এক্সপ্লেনেশন কী বলো তো লাবণ্য? অদ্ভুত এক এট্রাকশন ক্রিয়েট করছে।'
লাবণ্য পেছনে ফিরে তাকাল। ক্যানভাস ভর্তি হরেক রঙের মাঝে দুটো চোখ এঁকে একটা প্রতীকী ছবি এঁকেছে লাবণ্য। এতো এতো রঙের মাঝেও দর্শকের দৃষ্টিকে চুষে নিচ্ছে বাদামী, ঝাপসা সেই চোখ। নাজমুল বিমুগ্ধ হয়ে বলল,
' চোখের দৃষ্টিটা কিন্তু মার্বিউলেসভাবে ফুটিয়ে তুলেছ লাবণ্য। মনে হচ্ছে, জীবন্ত দৃষ্টি। আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি তার প্রাণবন্ততা, স্বপ্ন, অনুভূতি। এক্সট্রা অর্ডিনারি!'
লাবণ্য প্রফুল্ল হাসল। দু'তলার পথে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
' পেইন্টিংটির মেইন থিম হলো প্রাণ। চোখদুটো প্রাণবন্ততার প্রতীক। রং-বেরঙের পৃথিবীতে যৌবনের প্রাণবন্ততা দেখাতেই হরেক রঙের ব্যবহার। মানুষের প্রাণশক্তির প্রগাঢ় প্রকাশ কিন্তু চোখে। আপনার কী মনে হয় নাজমুল ভাই?'
লাবণ্যরা যখন দু'তলায় পৌঁছাল তখন সাড়ে বারো বাজতে পনেরো মিনিট বাকি। মঞ্চে তখন পশ্চিমবঙ্গের নাটক মঞ্চায়ন হচ্ছে। নাজমুল কোথা থেকে দুটো পাস জোগার করে ভেতরে ঢুকার ব্যবস্থা করে ফেলল। থিয়েটার হলটা তখন অন্ধকারাচ্ছন্ন। নাটক মঞ্চে দৃশ্যাপটের সাথে খাপ খাইয়ে চলছে আলো-আঁধারির খেলা। লাবণ্য সীট খোঁজার তোড়জোড়ে ব্যস্ত। হঠাৎ মঞ্চের পেছন দিকে পশ্চিমের অন্ধকার থেকে ভেসে এলো এক বিস্মিত কন্ঠস্বর,
' আরে! লাবণ্য না? আপনি এখানে?'
লাবণ্য ফিরে তাকাল। চোখদুটো ছোট ছোট করে মানুষটিকে চেনার চেষ্টা করল। অতঃপর হেসে বলল,
' কেন? আসতে নেই? আপনাদের নাটক দেখতে চলে এলাম কৌশিক সাহেব।'
কৌশিক হাত ইশারা করে বলল,
' এখানে চলে আসুন। এরপরই আমাদের পারফরম্যান্স।'
লাবণ্য নাজমুলকে রেখে কৌশিকের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। কৌশিক তাকে ব্যাকস্টেজে দলের অন্যান্যদের সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে গেল। ব্যাকস্টেজে তখন তুমুল ব্যস্ততা। সবার মাঝেই ছুটোছুটি ভাব। সুন্দর মতোন দুটি মেয়ে পাশাপাশি বসে মেকাপ নিচ্ছে। লাবণ্য চারপাশটা দেখতে দেখতে বলল,
' আপনিও অভিনয় করছেন নাটকে?'
' সুব্রত ছাড়া দলের বাকি সবাই-ই অভিনয় করে। আজকাল ভালো অভিনয়কর্মী পাওয়া কঠিন। মুনীর চৌধুরী, সেলিম আল দীন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আসাদুজ্জামান নূর, মামুনুর রশিদ, আলী জাকের এদের মতো অভিনয় এখন ক'জন পারে?'
এমন সময় সুব্রতকে দেখা গেল। স্ক্রিপ্ট হাতে, গম্ভীর মুখে তদারকি করছে এদিক ওদিক। কখনো-বা হাত নেড়ে নেড়ে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে। লাবণ্য সেদিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্যকিছু দেখার চেষ্টা করল। মেঘের মতো তুলতুলে গালদুটোতে দেখা দিল লাজুক লালিমা। কন্ঠে এলো রাজ্যসম জড়তা।
' এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এখন কী দাঁড়িয়ে থাকার সময়? আশ্চর্য!'
আচমকা সেই স্বপ্নমাখা কন্ঠে চমকে উঠল লাবণ্য। চোখ তুলে চাইতেই বিরক্ত সুব্রতর উপর চোখ পড়ল। অস্থির দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে আরো অস্থিরতার সাথে ছুটতে লাগল এদিক ওদিক। কৌশিক কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করল। অস্বস্তি দানা বাঁধল লাবণ্যর বুকেও। কৌশিক হাসার চেষ্টা করে বলল,
' আরে! যাচ্ছি যাচ্ছি। এতো চাপ নিচ্ছিস কেন? সব তো রেডি হয়েই গেছে।'
তারপর লাবণ্যর দিকে ইশারা করে বলল,
' ইনি লাবণ্য। চিত্রশিল্পী। কাল এক্সিবিশনে দেখা হয়েছিল, মনে আছে? উনি আমাদের নাটক দেখতে এসেছেন।'
লাবণ্য নাটক দেখতে এসেছে, এই খবরটাতে সুব্রত খুব উচ্ছ্বসিত হল বলে মনে হল না। তবে সপ্রতিভ হেসে বলল,
' ভালো আছেন?'
সুব্রতর প্রশ্নে লাবণ্যর কন্ঠ আটকে গেল। কী অবলীলায় চোখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, 'ভালো আছেন?' কোনো দ্বিধা নেই। নেই কোনো জড়তা। অথচ লাবণ্যর যত ব্যথা। লাবণ্য মাথা নেড়ে উত্তর দেওয়ার আগেই সামনে থেকে সরে গেল সুব্রত। তার অনেক ব্যস্ততা, অনেক কাজ। লাবণ্যর উত্তরের অপেক্ষায় থাকলে তার চলবে কেন? লাবণ্যর পাহাড়সম আত্মসম্মান তীব্র ঝংকারে ভর্ৎসনা করে উঠল, একি অধঃপতন! নারী আত্মসম্মানের গায়ে এমন নষ্ট আঘাত কেন? কেন এতো বৈরাগ্য? কীসের এতো দুঃখযাপন? লাবণ্য প্রতিবাদ করে না। মাথা নিচু করে, অনুতপ্ত অপরাধীটির মতো বসে থাকে চুপচাপ। বুঝতে পারে, একপাক্ষিক প্রেম মানে অভ্যন্তরীন আত্ম শ্রদ্ধায় তীব্র আঘাত। এই আঘাত না সওয়া যায়। না আঘাতের ভয়ে পিছু হটা যায়!
দেড় ঘন্টার নাটকের প্রথম আধঘন্টা দেখেই বেরিয়ে এলো লাবণ্য। দু'তলা থেকে গ্রাউন্ড পর্যন্ত নেমে এলো অনেকটা ঘোরের মাঝে। সাধারণ, সাবলীল নাটকেও কী অসাধারণ অভিনয়! শুধুমাত্র অভিনয় গুণেই যেন নাটকের শেষ পর্যন্ত বসে থাকতে বাধ্য দর্শক। প্রতিটি ভঙ্গিমা, প্রতিটি বাক্যে যেন সত্যিকারের অনুভূতি! জীবন্ত এক জীবনের গল্প! এক্সিবিশন শেষ করে সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমোলো লাবণ্য। নির্ঘুম দু'রাতের ক্লান্তির কিছুটা ভাগ করে নিল বিকেলের ঘুম। কিন্তু নতুন উপসর্গ হিসেবে দেখা দিল, তীব্র মাথা ব্যথা। মাথা ব্যথা যখন অসহনীয় হয়ে উঠল তখন রুম ছেড়ে নিচে নেমে এলো লাবণ্য। পাহাড়ী সুন্দরে দাঁড়িয়ে এক কাপ কড়া চা মাথা ব্যথার সর্ব্বোত্তম ঔষধ। গ্রাউন্ডে নেমে চায়ের অর্ডার দেওয়ার আগেই পেছন থেকে ডেকে উঠল কৌশিক। অদূরে একটা টেবিল দখল করে বসে আছে তাদের দলবল। বসে আছে দলের মধ্যমণি হৃদয় মোহনিয়া কৃষ্ণমানবও।
চলবে....
Writer:- নৌশিন আহমেদ রোদেলা