> Mr husband পর্ব ২৭ এবং শেষ পর্ব - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story
-->

Mr husband পর্ব ২৭ এবং শেষ পর্ব - Romantic story - ভালোবাসার গল্প - Bangla Love Story

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছিলো মোহ।হটাৎ ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করায় থেমে যায় সে।রিদান ধীরে ধীরে মোহের পেটে হাত রেখে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে তাকে।ঘাড়ে নাক ডলতে ডলতে কানের পেছন দিকটায় চুমু বসিয়ে দেয় রিদান।মোহের পুরো শরিরে যেনো বিদ্যুৎ বয়ে গেল।সে পেছন ফিরে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো রিদানকে।রিদান একটু হেসে মোহের পিঠ থেকে চুল সরিয়ে ধীরে ধীরে মোহের পিঠে নিজের হাতের স্পর্শ এঁকে দেওয়া শুরু করে।খানিকটা সময় এভাবে চলার পর মোহ রিদানের বুকে মাথা রেখেই কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে, 
-দেরি হয়ে যাচ্ছে। 
-হোক।
ঠিক এমন সময় মোহের শাশুড়ী চেচিয়ে মোহকে ডেকে ওঠে।মায়ের আওয়াজ কানে আসতেই রিদান ঝট করে ছেড়ে দেয় মোহকে।এ দেখে বেশ হাসি আসে মোহের,সে ঠোঁট চেপে হেসে এগিয়ে যায় নিজের শাশুড়ীর রুমের দিকে।
এদিকে রিদান তার মাথা চুলকে হেসে ওঠে। 
শাশুড়ির রুমে আসতেই মোহের চোখে পরে বিছানায় বেশ ক'টি শাড়ি বের করে রাখা হয়েছে।মোহ রুমে আসতেই তমা বেগম বলে ওঠেন,
-দেখ তো মোহ,রিদির বিয়েতে কোনটা পড়লে মানাবে আমায়।
মোহ ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে শাড়ি গুলো দেখা আরম্ভ করে।দেখার মাঝেই মোহের চোখ যায় রিয়াদ সাহেবের দিকে।তিনি মুখটি বাংলা পাঁচের মতো করে বসে আছেন।তাকে উদ্দেশ্য করে মোহ বলে উঠলো, 
-বাবা,আপনিও আসেন।আমরা দুজন মিলেই নাহয় মায়ের শাড়ি পছন্দ করে দেই।
রিয়াদ সাহেবের কিছু বলার আগেই তমা বেগম বলে ওঠেন,
-আরে রাখ তো।ওর যা পছন্দ তা পড়ে আর বিয়েতে যাওয়া সম্ভব হবে না।
-বুজলে মোহ মা,তোমার শাশুড়ী ভুলে যাচ্ছেন যে তিনি নিজেও আমার পছন্দের।আসলেই পছন্দ খারাপ আমার তা না হলে........
আর কিছু বলতে পারেন না রিয়াদ সাহেব।তমা বেগম অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তার দিকে।এ দেখে একটু ঢোক গিলে ওয়াশরুমে ঢুকে যান তিনি।
এসব দেখে বেশ হাসি পায় মোহের।তাও হাসি চাপিয়ে একটি শাড়ি পছন্দ করে দেয় সে তার শাশুড়ীকে।

!!
সেন্টারে সব কাজ ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে কি না তাই তদারকি করছে দিহান।কাজের মাঝেই হটাৎ নিজের কলারে টান অনুভব করে সে।তিশা তার কলার টেনে ধরে সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে আসে।তিশাকে দেখে দিহানের যেনো হৃৎস্পন্দন থেমে যাচ্ছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে তিশাকে।মেয়েটি লাল রং এর শাড়ি পড়েছে।সেই সাথে লাল রঙের সাদা পাথর বসানো হিজাব।মুখে স্মুথ মেকআপ।দিহান অপলক তাকিয়ে আছে। 
এদিকে তিশাও বেশ কিছু সময় দিহানের দিকে তাকিয়ে থাকার পর নিজের দুহাত দিয়ে দিহানের গলা জরিয়ে ধরে বলে ওঠে, 
-হায়,মে মার যাওয়া।
-কিহ!!
উত্তরে তিশা একটু হেসে বলে ওঠে, 
-তোমারে দেখলেই মনে কয়,তোমার কলে আমার পোলা বইয়া আব্বা আব্বা কয়!(সুর দিয়ে গানের মতো করে কথাটি বলে তিশা)
এদিকে তিশার এমন উক্তি শুনে কাশি শুরু হয়ে যায় দিহানের।এটি দেখে তিশার হাসির বেগ আরও বেড়ে যায়। আর দিহান কাশি থামিয়ে তিশার হাসি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে আরম্ভ করে।দিহানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি থামিয়ে তিশা আবারও দিহানের গলা জরিয়ে ধরে চোখেচোখ রেখে বলে ওঠে,
-চলো না আজই বিয়ে করে নিই।
-কেন?(এক ব্রু উঁচু করে প্রশ্নটি করে দিহান)
উত্তরে তিশা কিছু না বলে টুপ করে দিহানের নাকে চুমু বসিয়ে দৌড় দেয়।কিছু টা দূরে যেয়ে পেছন ফিরে বলে ওঠে, 
-এটায় আর গুনাহ হতো না তাহলে।
তিশার দিকে তাকিয়ে নাকে হাত দিয়েই হেসে ওঠে দিহান।

!!
অবশেষে এলো সে বিশেষ বেলা।অনেক সাধনার পরেই তো আজ মিহাদ পেতে চলছে তার প্রিয়শীকে।কত প্রতিক্ষার পর যে সে এ দিনটির দেখা পেল টা শুধু সেই জানে।
ঠিক তার সামনেই বসে আছে তার ভালোবাসা,যাকে শুধু তিনটি বার কবুল বলেই নিজের স্ত্রী হিসেবে পেয়ে যাবে মিহাদ।অপলক দৃষ্টিতে দেখে চলছে সে রিদিকে।তার মাঝেই মিহাদের কানে আসে,
"বলো,কবুল"
কিন্তু মিহাদ বলতে পারছে না।একরাশ অনুভূতি জড়সড় হয়ে আছে তার মাঝে।কথাগুলো গলায় আঁটকে যাচ্ছে বারেবার।চোখ টাও ছলছল করছে।
এদিকে সবাই চিন্তায় পরে গেলো মিহাদের কবুল না বলায়।কেউ বুঝে উঠতে পারছে না কেন মিহাদ কবুল বলছে না।মিহাদের এভাবে কবুল না বলায় রিদির মাঝেও ভয় কাজ করছে।সে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকে মিহাদের দিকে।
অবশেষে এক লম্বা শ্বাস নিয়ে মিহাদ এক নিঃশ্বাসে বলে ওঠে, 
"কবুল,কবুল,কবুল"
ব্যাস,এতেই সবাই যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।সেই সাথে সবাই হাত তালি দিলো।রিদিরও কাঁদো কাঁদো চেহারায় হাসি ফুটে উঠলো। 

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর সবার খাবার পর্ব টাও যখন শেষ অর্থাৎ বিদায় বেলায়,মোহ-রিদান আনিসা বেগমের হাত ধরে এবং মোহনা-আরুশ ডাঃফেইজের হাত ধরে বর-কনের স্টেজে নিয়ে গেলেন।মাইক হাতে নিয়ে মোহনা বলে উঠলো,
"আজ আপনাদের সবার সাথে আমাদের একটি খুশি ভাগ করে নিতে চাই।"
মোহনা কথাটি শেষ করে মাইকটি মোহকে দেয়।তারপর মোহ বলতে আরম্ভ করে, 
"আমাদের মা,আমাদের কথা এবং এ সমাজের কথা চিন্তা করে নিজের জীবনের ১২ টি বছর নষ্ট করেছে আর এখনও করতে চাইছে।কিন্তু সন্তান হওয়ায় আমরা তাকে এটি করতে দিতে পারি না।"
তারপর মোহ মাইকটি রিদানের কাছে দেয়।
"আমরা তার নিঃসঙ্গ জীবনে একটি সঙ্গী এনে দিতে চাই।তার বেরঙ্গ জীবনে রং ভরে দিতে চাই।বাকি জীবন টা যেনো মন ভরে বাঁচতে পারে সে পথটি সুগম করে দিতে চাই।"
তারপর রিদান মাইকটি আরুশের কাছে দেয় এবং আরুশ বলতে আরম্ভ করে,
"এনি হলেন ডাঃফেইজ। যাকে আমরা আমাদের মায়ের জন্য যোগ্য হিসেবে নির্বাচন করেছি এবং নিজেদের বাবা হিসেবেও।"
তারপর মোহ-রিদান, মোহনা-আরুশ চারজনই মাইকের কাছে এসে বলে ওঠে, 
"আশা করি আপনারা সবাই দোয়া করবেন।"
উপস্থিত সবাই নিস্তব্ধ হয়ে আছে।কেউ কিছুই বলছে না।কিন্তু একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।
এদিকে আনিসা বেগম যেনো পাথর হয়ে গিয়েছেন।বিন্দু পরিমাণ নড়াচড়া করছেন না তিনি,তার চেহারায়ও নেই কোনো অনুভূতির ছাপ। 
নিস্তব্ধ পরিবেশ টায় ধিরে ধিরে মৃদু আওয়াজের উৎপত্তি শোনা যাচ্ছে।কথাগুলো এমন যে,
"বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে ধরছে।"

"দুই মাইয়া বিয়া দিয়া এখন নিজের বিয়ার শখ জাগছে।"

"আরেহ!দেহো গিয়ে বুড়ো বয়সে আবার শরীরের জ্বালা বাড়ছেনি!"

"দেখছো!বুড়ো বয়সে এই।না জানি যুয়ানকালে কার কার লগে শরীরের খিদে মেটাইছে।"

ব্যাস আর শুনতে পারলেন না আনিসা বেগম।এগিয়ে গেলেন সে নিজের মেয়েদের দিকে।
এদিকে মোহ ও মোহনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তারা ভাবতেই পারেনি,তাদের এসব কথা শুনতে হবে।তারা যেনো কিছু বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। হটাৎ নিজের মাকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে সেদিকে দৃষ্টি স্থির করে তারা।
আনিসা বেগম এগিয়ে এসেই ঠাস ঠাস করে দুজনের গালে চর বসিয়ে দেন।তারপর চোখে জল নিয়ে বলে ওঠেন, 
"অনেক বড় হয়ে গিয়েছো? মায়েরও মা হতে চাইছিলে তোমরা?এ বিষয়টি আলাদাভাবে জানানো গেলো না আমায়?এ সমাজ নিয়ে ধারণা রাখ না দেখেই এমনটি করেছো তোমরা।কি ভেবেছো এভাবে সবাইকে বলবে আর সবাই তোমাদের সমর্থন করবে?জীবনটাকে এতোটা সহজ ভাবো তোমরা?আসলে আমারই ভুল আমিই ব্যর্থ হয়েছি তোমাদের বাস্তব জ্ঞান দিতে।"
বলেই চলে যাচ্ছিলেন আনিসা বেগম। কিন্তু হটাৎ এক শব্দ কানে আসায় থেমে যান তিনি।
ডাঃফেইজ মাইক হাতে বলে ওঠেন, 
"দাঁড়ান আনিসা।এই সমাজের খুব ভয় আপনার।সমাজে সবার কাছে ভালো হওয়াটাই কি মূল লক্ষ্য আপনার?
কই সেদিন যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন তো বলেছিলেন সমাজ আপনাকে যাই বলুক আপনি ভীত শুধু মাত্র আপনার সন্তানদের নিয়ে।তাহলে আজ কেন পিছ পা হচ্ছেন?"
কথাটি শেষ হতেই আনিসা বেগম ফেরেন ডাঃফাইজের দিকে।একটু থেমে ডাঃফেইজ আবারও বলতে শুরু করে,
"দেখুন আপনার মেয়েদেরকে,আপনার মেয়ে জামাইদেরকে।তারা জানতো সমাজ এটি ভালভাবে মেনে নিবে না।কিন্তু তারা কারও পরোয়া না করে শুধু মাত্র আপনার খুশির দিকটি ভেবেছে,আপনার কথা ভেবেছে।ঔ যে ও দিক টায় দাঁড়িয়ে আছে আপনার বেয়াইনরা তারাও আপনার সাথেই আছে।আপনি কতোটা ভাগ্যশালী আপনার পুরো পরিবার আপনার সাথে দাঁড়িয়ে আছে।আমরা সবাই আপনার হয়ে এ সমাজের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত।কিন্তু আপনিই ভীতুদের মতো পলায়ন করতে চাইছেন।তাই আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে বড়ই অভাগী আপনি।"
কথাটি শেষ করে মাইকটি রেখে চোখের জলটি মুছে নিয়ে স্টেজ থেকে যেই নামতে যাবে তখনই বাঁধা পায় ডাঃফেইজ। পেছন ফিরে দেখেন আনিসা বেগম তার হাতটি ধরে আছেন।আনিসা বেগম, ডাঃফেইজের হাত ধরে স্টেজে নিয়ে এসে মাইকটি নিয়ে বলে ওঠে, 
"সমাজটা আসলে গঠিত হয় সমাজে বসবাসরত মানুষদের নিয়ে।আমাদের বাঙালি সমাজটি বড়ই কুৎসিত। কারণটি জানেন কি?
কারণ হলো আমাদের সমাজে বসবাসরত আপনাদের মতো নিচু মানসিকতার মানুষ।যারা অন্যের খুশিটা দেখতে পারে না,কোনো মানুষকে উৎসাহিত করতে পারে না,সব বিষয়ই নোংরা নজরে দেখে সেসব মানুষের জন্যেই আমাদের সমাজ টা আজ কুৎসিত।এতো দিন সমাজের ভয়ে দমে থাকলেও আর না।কারণ আমার সাথে আমার পরিবার আছে।আমার পরিবার আমার জন্যে লড়তে প্রস্তুত তবে আমি কেন পিছ পা হবো?নিজের লড়াই নিজেরই লড়তে হয়।পরিবার তো সহযোগী মাত্র।আমার সন্তান যখন এতো সাহস দেখিয়েছে তবে লড়বে তাদের মা আপনাদের মতো মানুষের কটু কথার বিরুদ্ধে আর ফেইজকেই আমি বিয়ে করবো।"
কথাটি বলে মাইকটি রেখে আনিসা বেগম এগিয়ে যান তার মেয়েদের কাছে।দু-মেয়ের গালে দুটি চুমু দিয়ে তিনি বলে ওঠেন,
"সমাজের মানুষের কটু কথার ভয়ে দেখতেই পাইনি, আমার পুরো পরিবার আমাকে কতটা ভালোবাসে, আমাকে নিয়ে কতটা ভাবে!ভাগ্যবতী আমি এমন চার ছেলে-মেয়ের মা হতে পেরে এবং এমন সমন্ধি পেয়ে।এখন আর সমাজের ভয় নেই আমার।মাফ করবি না তোদের মাকে?"
মোহ ও মোহনা উভয়ই তার মাকে জরিয়ে ধরে।রিদান আর আরুশ পাশ থেকে বলে ওঠে, 
"আমরা তো আর কারো ছেলে নই।"
আনিসা বেগম তার মেয়েদের ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে রিদান ও আরুশকেও জরিয়ে ধরেন।সেই ফাঁকে মোহ ও মোহনা গিয়ে ডাঃফেইজকে আনিসা বেগমের পাশে দাঁড় করিয়ে বলে ওঠে, 
"এখন থেকে আমাদের মায়ের সাথে সাথে বাবাও আছে।"
ডাঃফেইজ ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে জরিয়ে নেন মোহ ও মোহনা কে।

আসলে পরিবার সাথে থাকলে আর কেউকেই লাগে না।সমাজ আর সমাজের মানুষ তাদের নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিলেও পরিবার পাশে থাকলে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।তাই সমাজের কথা না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবুন এবং নিজেদেরকে নিয়ে ভাবুন।





সমাপ্ত...






Writer:- Mahzabin




NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner