আমি আনিসাকে জীবনসঙ্গিনী হিবেসে চাই।জানি, সমাজের নজরে এটি খুবই অপ্রীতিকর।তবুও সমাজ ভুলে আমি এটি নির্দিধায় স্বীকার করি যে,আমার এ অসম্পূর্ণ ও সঙ্গীহীন জীবনে আনিসাকে আমি সম্পূর্ণতা ও সঙ্গী হিসেবে চাই।আমার চাওয়াটা কি ভুল?
উত্তরে একটি মুচকি হাসি দিয়ে রিদান তার সামনের টেবিলের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই মোহ,ডাঃফেইজের পেছন থেকে বলে ওঠে,
-একদম ভুল নয় আঙ্কেল।
কথাটি বলতে বলতেই মোহ এসে রিদানের পাশের চেয়ার টায় বসে পরে।ঠোঁটে হাসিটা লেগে আছে তার।ডাঃফেইজ অবাক হয়ে মোহ ও রিদানের দিকে তাকিয়ে আছেন।রিদান,ডাঃফেইজের এমন চাহনি দেখে একটু হাসি নিয়ে বলতে শুরু করে,
-ফেয়রির বিয়ের দিনই আপনার অনুভূতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা হয়ে যায় আমার।তাই বাসায় এসে এ নিয়ে অনেকটা সময় ভাবি।আসলে,মায়ের একাকিত্ব টা কমানোর জন্যেই তাকে আমরা আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু এতে কি তার একাকিত্ব টা কমেছে?উহু না।আমরা, আমাদের নিজের কাজে এতো টাই ব্যস্ত থাকি যে মাকে তেমন সময়ই দেওয়া হয় না।এমনও অনেকটি দিন গিয়েছে যখন আমাদের সময় হয়নি মায়ের কাছে যাওয়ার আর মা ও হয়তো নিত্যদিন তার মেয়ের শশুর বাড়ি যাওয়াটায় স্বস্তিবোধ করেন না।এটিই স্বাভাবিক। এভাবে মায়ের একাকিত্ব টা আমরা কাটাতে পারবো না কখনই।আর একাকিত্ব ব্যতীতও আরো অগণিত বিষয়েই একজন সঙ্গীর প্রয়োজন হয় তাই সবটা ভেবে আমি এ বিষয়ে মোহের সাথে কথা কথাটা আবশ্যক বলে মনে করি।তাই ওর সাথে কথা বলে এ বিষয়ে ওর মতটা জানতে চাই।আর আলহামদুলিল্লাহ,আমরা দুজনেই এ বিষয়ে সহমত প্রকাশ করি।তারপর আপনি যখন কল দেন তখনই আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পারি যে, আসলে কি নিয়ে কথা বলতে চান।মোহের সামনে কথা বলতে হয়তো আপনি অস্বস্তি বোধ করতেন তাই আগেই মোহকে আপনার সামনে আনিনি।আসলে আমি চাইছিলাম আপনার বক্ত করা অনুভূতিগুলো মোহ শুনুক।
সবটি শুনে ডাঃফেইজ ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে রিদানের মাথায় হাত রেখে বলে ওঠেন,
-অসাধারণ ছেলে তুমি।নিজের মা কে নিয়েও হয়তো ছেলেরা অতোটা যতোটা তুমি তোমার শাশুড়ীকে নিয়ে ভাবলে।বেশ বিচক্ষণতার সাথেই সবদিক কতোই না সুন্দর করে পরিচালনা করো।তুমি যে বুদ্ধিমান তা আগে থেকেই জানতাম আজ তা আবারও প্রমাণিত হয়ে গেলো।
-ধন্যবাদ আঙ্কেল।কিন্তু মা আর মোহনা আপু এখনো এ বিষয়ে কিচ্ছুটি জানে না।তারা ব্যাপারটি কিভাবে নিবে এখন সেটিই ভাব্বার বিষয়।
ঠোঁটের হাসিটি বিলীন হয়ে মুখে চিন্তার ছাপ ফেলে ডাঃফেইজ বলে ওঠেন,
-হুম!
-আপনি চিন্তা করবেন না আমি ভাবছি কি করা যায়।(রিদান)
-আমি নয় আমরা।(মোহ মুচকি হেসে রিদানের হাতটি ধরে বলে ওঠে)
উত্তরে রিদানও আলতো হাসে।মোহ-রিদানকে দেখে নিয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে ডাঃফেইজ বলে ওঠেন,
-তোমাদের উপর বিশ্বাস আছে। আমার যদি কিছু করতে হয় তাহলে অবশ্যই জানাবে।আর রিদান,অনেক বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছি তোমার উপর।ক্ষমা করবে তোমার আঙ্কেলকে।
-একদমই না আঙ্কেল।যা করছি নিজের মায়ের জন্য করছি।
-এ জন্যেই অসাধারণ তুমি।(মুচকি হেসে বললেন ডাঃফেইজ)তাহলে আজ উঠি?
-জ্বি আচ্ছা।
-মোহ মা,তুমি এ বিষয়টি মন থেকে মেনে নিয়েছো তো?
-জ্বি আঙ্কেল।
-আচ্ছা,আসছি।(মোহের মাথায় বুলিয়ে দিয়ে ডাঃফেইজ স্থান ত্যাগ করে)
-আপনি অতি-অসাধারণ,মিঃহাসবেন্ড।(বলেই রিদানের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় মোহ)
!!
হসপিটালের বেডে বসে আছে মোহনা।আর তার সামনেই বসে আছে আরুশ।মোহনার হাত দুটি শক্ত করে ধরে আছে সে।মেয়েটি ভয়ে চুপসে আছে।এ দৃশ্য যেনো আরও বাড়িয়ে তুলছে আরুশের মাঝে চলা তুফানকে।প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারানোর ভয় বারবার চোখজোড়া ভিজিয়ে তুলছে তার।বহু কষ্ট তা গাল গড়িয়ে পড়া থেকে আটকে রেখেছে আরুশ।কারণ এখন তার দুর্বলতা প্রকাশ,মোহনাকে আরও দুর্বল করে দিবে।মাথা নিচু করে নিজের জলে টইটম্বুর চোখজোড়া লুকোনোর চেষ্টায় ব্যস্ত আরুশের কানে হটাৎ মোহনার ক্রন্দনরত স্বরে উচ্চারিত শব্দ এসে পৌঁছায়।ওমনি মাথা তুলে তাকায় সে তার স্ত্রীর দিকে।
-এ সব তোমার জন্য হইছে।(মোহনা)
-কি করেছি আমি?(অবাক হয়ে বলে ওঠে আরুশ)
-তোমার ওভারলোড আদরের জন্যেই আমার এতো কষ্ট করতে হচ্ছে।
-এ্যা!
-হ্যাঁ।কে বলছিলো এতো আদর করতে?(ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে মোহনা)
মোহনার এমন বাচ্চামি কন্ঠে বলে ওঠা কথাটি শুনে ফিক করে হেসে দেয় আরুশ।তার চোখদুটিতে জল টলমল করছে আর ঠোঁটে হাসি।আরুশের এমন চেহারায় মায়া হচ্ছে মোহনার।সে আর দেরি না করে আরুশকে জরিয়ে ধরে আরুশের বুকে মাথা রেখে বলে ওঠে,
-আমি আরও অনেকটা সময় চাই তোমার সাথে কাটাবার জন্যে।আরও অনেক অনেক স্বপ্ন দেখতে চাই তোমার সাথে।আমি এখন মরতে চাই না,আরুশ।
-বাজে বকো না।কিছু হবে না তোমার।তোমার কিছু হলে তোমার বাচ্চা পালবে কে?(একটু মজা করেই বলে আরুশ।কারণ সে এভাবে মোহনার কান্না সহ্য করতে পারছে না।)
-কি বললি তুই?বাচ্চা পালবে কে?আমারে খালি বাচ্চা পালবার জন্যেই লাগবে তোর?
-না না।আমার চুল টানার জন্যে,গালি দেওয়ার জন্যে,অন্য মেয়ের দিকে তাকালে রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকাবার জন্যে,আমার সকালের আরামের ঘুম হারাম করবার জন্যে,বক বক করে আমার কান ঝালাপালা করার জন্যে আরও অনেক আকামের জন্য তোমাকে লাগবে।
-ওহ আমি শুধু এগুলোই করি?ভালোবাসি না?
-বাসো তো।তোমার ঝগড়াটে শাশুড়ী মাকে।যে বকেই চলে আর তুমি শুনেই চলো আর তাকেই ভালোবাসো।এদিকে আমি বেচারা বর টা এতো ভালোবাসি কিন্তু গালি ব্যতীত কিছুই পাই না।(মন খারাপের ভান ধরে বলে আরুশ)
মোহনা ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-তোমাকে ভালোবাসি দেখেই মাকে ভালোবাসি।তোমাকে ভালোবাসি তাই তোমার সাথে জড়িত সবাটাই ভালোবাসি।
ঠোঁটে এক প্রশান্তিময় হাসি ফুটিয়ে মোহনাকে আরেকটু শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে আরুশ বলে ওঠে,
-ভালোবাসি।
মোহনা,আরুশের বুকে আরেকটু মুখ গুঁজে বলে ওঠে,
"অনেক বেশি ভালোবাসি,মিঃহাসবেন্ড"
হসপিটালে,মোহনার কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মোহ,রিদান,রিদি,দিহান ও তাদের বাবা-মা সেই সাথে মোহনার শশুর-শাশুড়ী ও।আর আনিসা বেগম হসপিটালের নামাজের রুমে নফল নামাজ পড়ে চলছেন।কিছু সময় পরই মোহনার সিজার শুরু হবে।সবার মাঝেই কাজ করছে এক ভয়ের অনুভূতি।
এক দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসতে চলেছে নতুন অতিথি।কিন্তু এ নিয়ে কেউই তেমন খুশি প্রকাশ করতে পারছে না।নতুনকে পাবার জন্যে পুরনোকে বিদায় দেওয়ার সাহস কারো মাঝেই নেই।
মোহের চোখ বারংবার জলে ভরে উঠছে।তাও নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রাখার চেষ্টায় লেগে আছে সে।সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে হসপিটালের চেয়ার গুলোয়।ওদের থেকে অনেকটা দূরে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে মোহ-রিদান।মোহ তার ভিজে যাওয়া চোখজোড়া মুছবার জন্যে হাতটি উঠাতেই অন্য কারো হাতের স্পর্শ পায় সে।রিদান মোহের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আলতো করে মোহের চোখজোড়া মুছে দেয়।মোহ একদৃষ্টিতে দেখে চলছে রিদানকে।রিদানের চোখজোড়াও টলমল করছে।কিন্তু এর কারণ বুঝতে পারছে না মোহ।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রিদান জরিয়ে ধরে মোহকে।মোহকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে নিয়ে রিদান বলে ওঠে,
-আমার বাচ্চা লাগবে না মোহ।
-মানে?
-আরুশ ভাইয়া কীভাবে সহ্য করছে জানি না তবে আমি সহ্য করতে পারবো না।কোনো দরকার নেই আমাদের বাচ্চার।আমার তুমি হলেই চলবে।
কথাটি শুনা মাত্র মোহের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।সে ও রিদানকে বেশ শক্ত করে জরিয়ে ধরে মনে মনেই বলে ওঠে,
"ভালোবাসি মিঃহাসবেন্ড"
সিজার শুরু হয়ে গিয়েছে।আরুশ ঠিক ওভাবেই ছটফট করছে যেভাবে জবাই করবার সময় একটি মুরগী করে।আরুশকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ ওর রুহকে ওর ভেতর থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রিদান শক্ত করে ধরে আছে মোহের হাত।আরুশের অবস্থা দেখে রিদানের ও যে অবস্থা খারাপ হচ্ছে তা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।মোহ তা বেশ উপভোগ করছে।সেই সাথে অনুভব করছে রিদানের ভালোবাসাটা।
সব অনুভূতি কি ভাষায় প্রকাশ করতে হয়?
কিছু কিছু অনুভূতি তো মন থেকে অনুভব করতে হয়। যেমনটি মোহ করছে তার মিঃহাসবেন্ডের ভালোবাসা।
প্রায় ঘন্টা পাড় হবার পর নার্স বেরিয়ে এলো এক ফুটফুটে মেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে।অবাক করা বিষয়টি হলো নার্স বাইরে এসেই আরুশের হাতে বাচ্চাটিকে দিয়ে বলে ওঠলো,
"আপনার মেয়ে"
একটি বারও জিজ্ঞেস করলো না বাচ্চার বাবা কে?কি করে বুঝলো বাচ্চাটা আরুশের!
আরুশ বাচ্চাটি কোলে নিয়ে অশ্রু মিশ্রিত চোখে একবার দেখে নিয়ে চটজলদি নার্সকে জিজ্ঞেস করলো,
"মোহনা কেমন আছে?ঠিক আছে ও?"
"ঝাক্কাস আছে"
বলে মুচকি হাসলেন নার্সটা।আরুশ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নার্সের দিকে।কারণ এমন উত্তর মোহনাই দেয় তাকে।নার্স আরুশের অবাক হওয়াটা বুঝতে পেরে এক গাল হেসে বলে ওঠেন,
"আপনার বউ বলেছে,রুমের গেটের একদম কাছে কান্না করা লাল মুখ নিয়ে যে দাঁড়িয়ে থাকবে সেই বাচ্চার বাবা।আর তিনি এ ও বলেছেন বাচ্চার বাবা তার বাচ্চাকে ভালো করে না দেখেই বাচ্চার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করবে।আর ও উত্তরটিও সে ই শিখিয়ে দিয়েছেন।"
আলতো হেসে আরুশ তাকায় তার বাচ্চার দিকে।বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর বাচ্চার কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।এ এক অন্য রকম প্রশান্তি যা এক বাবাই অনুভব করতে পারে।
একে একে সবাই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর দেয়।এতোক্ষণ বিমর্ষ হয়ে থাকা মুখগুলোয় এখন আনন্দ ফুটে উঠেছে।সবাই ব্যস্ত হয়ে পরেছে বাচ্চাকে নিয়ে।
মোহনার জ্ঞান ফিরবার পর চোখ খুলে দেখে আরুশ তার সামনেই বসে আছে।আরুশ মোহনার মাথার কাছে বসে মোহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।মোহনা চোখ খুলতেই আরুশ ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
"কষ্ট হচ্ছে?"
মোহনা ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে মাথা ডানে-বামে ঘুরিয়ে না বুঝায়।মোহনা উঠতে চাইলে আরুশ তাকে সাহায্য করে।মোহনা বসবার পর আরুশ তার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে জরিয়ে ধরে নিজের সাথে।মোহনাও আরুশের সাথে লেপ্টে থাকে।অনেকটা সময় এভাবে পার করবার পর আরুশ বলে ওঠে,
-তুমি কি করে জানলা আমি কেঁদে মুখ লাল করে ফেলবো?
-কারণ তুমি একটা কাঁদুনে।(ঠোঁট চেপে হেসে বলে ওঠে মোহনা)
-আর বাবুকে না দেখেই তোমার কথা জিজ্ঞেস করবো তা কি করে বুঝলে?
এবার মোহনা আরুশের বুক হতে মাথা উঠিয়ে আরুশের চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-আমার মিঃহাসবেন্ড যে তার স্ত্রীকে অনেক অনেক ভালোবাসে তা অজানা নয় আমার।
কথাটি শুনে আরুশের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।আবারও উভয়ই জরিয়ে যায় একে অপরের মাঝে।
!!
নাতিকে কোলে নিয়ে বসে আছেন আনিসা বেগম।তার পাশেই বসে আছে মোহনার শাশুড়ী ও শশুর। তিন জনে মিলে আদরে ভরিয়ে তুলছে বাবুকে।ঠোঁটে হাসি নিয়ে তা ই দেখে চলছে দিহান।হটাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনটি পকেট থেকে বের করে তাতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই "টিস্যু" লেখাটি ভেসে ওঠে চোখের সামনে।নিজের অজান্তেই ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে দিহানের।সবার থেকে একটু দূরে যেয়ে কলটি রিসিভ করতেই কানে ভেসে আসে সে পরিচিত কন্ঠটি।
-মোহনার আপুর ডেলিভারি তো আজ!সব ঠিক আছে তো?তুমি ঠিক আছো তো?
-তিশা!আমার ভাগনি হয়েছে।(বেশ উত্তেজিত কন্ঠে কথাটি বলে ওঠে দিহান)
-আলহামদুলিল্লাহ।
-তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না আমি কতোটা খুশি।
-তোমার অনুভূতি না বললেও আমি বুঝি।
তিশার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কথায় কি উত্তর দেবে তা বুঝে উঠতে পারছে না দিহান।হটাৎ দিহান খেয়াল করে তিশা তাকে তুমি করে বলছে।
-আজ তুমি করে বলছো যে?
-কারণ আমি বেহায়া।খুব খুব বেহায়া।তুমি ভালো না বাসলেও আমি বাসি।
দিহানের কিছু বলে ওঠার আগেই তিশা কলটি কেটে দেয়।দিহান কলটি কেটে যাওয়া বুঝতে পেরে ফোনটি নিজের দৃষ্টির সামনে এনে "টিস্যু" লেখাটির ওপর হাত বুলিয়ে আলতো হাসে।
!!
বাবুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিদি।বাবুর বিভিন্ন দুষ্টুমির মাঝে তার মনে পরে মিহাদের কথা।ছেলেটির সাথে সকাল দিয়ে কথা হয়না।চটজলদি ফোনটি হাতে নিতেই দেখে ছেলেটি ৮ বার কল দিয়েছে।জিভে আলতো কামড় বসিয়ে রিদি কল দেয় মিহাদকে।কল দেওয়ার সাথে সাথেই কল রিসিভ করে মিহাদ।
-তুমি ঠিক আছো?আচ্ছা শোনো একদম চিন্তা করবে না সব ঠিক হবে।আর তুমি কি কান্না করছো?কিছু বলছো না কেন?
-আপনি বলতে দিলে তো বলবো।(আলতো হেসে বলে ওঠে রিদি)
মিহাদও একটু হাসে।সেই সাথে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে সে,রিদির স্বাভাবিক কন্ঠস্বর শুনে।রিদি আবারও বলে ওঠে,
-কংগ্রেস! আপনি হবু খালুজান হয়ে গিয়েছেন।
-কি বলো!!(খুশিতে বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে মিহাদ)
-হুম।ভাগনি হয়েছে।
-আলহামদুলিল্লাহ।
হটাৎ পেটে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় মোহের।রিদান তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে পেটে স্লাইড করতে করতে ঘাড়ে দু-তিনটে চুমু বসিয়ে দেয়। নিজের ঘাড়ে রিদানের ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই কেঁপে ওঠে মোহ,শক্ত করে খামচে ধরে বিছানার চাদরটি।ধীরে ধীরে রিদান ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে মোহের কানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে ওঠে,
"শুভ জন্মদিন মোহ"
কথাটি শুনতেই মোহ,রিদানের দিকে ফিরে শোয়।রিদানের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক কন্ঠে বলে ওঠে,
-আজ আমার জন্মদিন?
-জ্বি।তারিখ টা খেয়াল আছে?
-ভুলেই গিয়েছিলাম। (বলে একটু হাসে মোহ)
রিদান উত্তরে কিছু না বলে আলতো করে মোহের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতেই দরজায় নক করার আওয়াজ পায় তারা।মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটিয়ে বিছানা ছাড়ে রিদান।রিদানের হালে বেশ হাসি পাচ্ছে মোহের।ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে সে।দরজা খুলতেই আনিসা বেগম,তমা বেগম এবং রিয়াদ সাহেব রুমে প্রবেশ করে। আনিসা বেগমের হাতে নুডলস আর তমা বেগমের হাতে একটি কাপ চকোলেট আইসক্রিম।দু মা,মোহের দুপাশে এসে বসে পরে।রিদান ও তার বাবা পায়ের দিকটায় বসে।তারপর চারজন একসাথে বলে ওঠে,
"জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা"
মোহের চোখমুখে খুশি ছেয়ে গিয়েছে।মোহ স্বপ্নেও ভাবেনি তার জন্মদিনটি সবাই এভাবে বিশেষ বানিয়ে দিবে।সকলের শুভেচ্ছা পেয়ে মোহ যেনো তার খুশি ধরে রাখতে পারছে না।শুভেচ্ছা জানানোর পর প্রথমে আনিসা বেগম মোহকে খাইয়ে দেয় তার হাতের রান্না করা নুডলস। তারপর তমা বেগম মোহকে খাইয়ে দেয় তার হাতের তৈরি করা আইসক্রিম।দু মায়ের এতোটা ভালোবাসা পেয়ে মোহের খুশিতে মোহের চোখের কোণে পানি জমে গিয়েছে।হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি টা মুছে সে একে একে তার দু মাকেই জরিয়ে ধরে।বড়দের থেকে অনেকটা দুয়া,আদর,ভালোবাসা পায় মোহ।নিজের ভাগ্যের ওপর নিজেরই হিংসে হচ্ছে তার।তার মতো এমন ভাগ্য ক'জনে পায়?
অনেকটা সময় চারজন মিলে গল্প করে।তারপর বড়রা সবাই মোহ-রিদানের রুম ত্যাগ করে।বড়রা যেতেই চটজলদি রিদান রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানায় এসে বসে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে মোহের দিকে।মোহের ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিতেই যাবে তখন মোহ হাত দিয়ে বাঁধা দেয়।রিদানের ঠোঁটে হাত রেখেই বলে ওঠে,
"নামাজ পড়তে হবে তো।"
কথাটি শুনা মাত্র রিদানের মুখে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে।করুন দৃষ্টিতে কিছুটা সময় মোহের দিকে তাকিয়ে থাকার পর মোহের থেকে সরে যায় রিদান। রিদানের এমন অসহায়ত্বটা খুব উপভোগ করছে মোহ।সেই সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে হেসে চলছে সে।যা রিদানের নজর এড়ালো না।
অতঃপর উভয়ই নামাজ শেষ করে বিছানায় এসে শুতেই রিদান মোহের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে মোহের হাতদুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে বলে ওঠে,
-তখন তো খুব হাসছিলা।এখন কে বাঁচাবে তোমায়?
সবকিছু এতোটা দ্রুত হলো যে মোহের কিছুই বোধগম্য হলো না।তাও সে কিছু বলবার জন্যে মুখ খুলতেই রিদান মোহের ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।মোহের ঠোঁটের স্বাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে পরে সে।কিছুটা সময় অতিবাহিত হতেই মোহও সাড়া দিতে শুরু করে।অবশেষে একে অপরের মাঝে হাড়িয়ে যায় তারা।
!!
সব বন্ধুরা মিলে দেখা করার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী সবাই উপস্থিত হলেও তিশা ও রোশানের দেখা মেলেনি এখন অব্দি।প্রায় ৩৫ মিনিট পর দেখা পাওয়া যায় তিশা ও রোশানের।তারা একই সাথে এসেছে। রোশানের বাইকে তিশার আসাটা মোটেই ভালো লাগলো না দিহানের।তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলো না সে।সব বন্ধুরা মিলে আড্ডায় মেতে উঠলো।আড্ডা দেওয়ার মাঝেই বেশ ক'বার দিহান তাকিয়েছে তিশার দিকে।আর যতোবারই তাকিয়েছে ততোবারই মেজাজ খারাপ হয়েছে তার।কারণ রোশান বারংবার কথার মাঝে তিশাকে স্পর্শ করছে।তিশা বারবার হাত সরিয়ে দিচ্ছে রোশানের,সেই সাথে বিরক্তিও প্রকাশ করছে কিন্তু রোশান বন্ধু হওয়ায় হয়তো তিশা তেমন কিছু বলতে পারছে না তাকে।
অনেকটা সময় এসব সহ্য করলেও আর সহ্য করতে পারলো না দিহান যখন দেখলো রোশন, তিশার কোমরে হাত দিয়েছে।কিছু না বলেই উঠে যেয়ে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় দিহান,রোশানের গালে।তাল সামলাতে না পেরে চেয়ারসহ উল্টে পরে যায় রোশান।আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।দিহান এসবের পরোয়া না করে রোশানের শার্টের কলার ধরে ওকে দাঁড় করিয়ে বলে ওঠে,
-বলেছিলাম না তিশার থেকে দূরে থাকতে?হ্যাঁ?তাও তোর সাহস কি করে হয় ওর গায়ে হাত দেওয়ার?
এটি বলে আবারও দিহান মারতে যায় রোশানকে কিন্তু রোশান দিহানের হাত ধরে নেয়।একটি ধাক্কা দিয়ে দিহানকে নিজের থেকে সরিয়ে বলে ওঠে,
-কি হয় তিশা তোর?ওর থেকে দূরে থাকতে বলার তুই কে?একবার নয় দশবার ছুঁবো তিশাকে, বিয়েও করবো!তুই কে আটকানোর?
রোশানের কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় দিহান।ঠিকই তো বলছে রোশান।তার কি কোনো অধিকার আছে তিশার ওপর?মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে অনেকটা সময় এসব ভাবতে থাকে দিহান।রেস্টুরেন্টে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি দিহানের দিকে।সবার মাঝেই দিহানের উত্তর জানার আগ্রহ কাজ করছে।অধিকার নেই দিহানের তা ঠিক কিন্তু সে চাইলেই যে অধিকার টা পেয়ে যাবে তাও অজানা নয় তার।অনেক হয়েছে এবার অধিকার টা চায় দিহান।অন্য কোনো দিকে দৃষ্টিপাত না করে তিশার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সে।দিহানকে এভাবে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে তিশার হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই চলছে।তিশার অনেকটা কাছে এসে তার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে দিহান বলে ওঠে,
-তিশা,আমি জানি না আমি তোমায় ভালোবাসি কিনা।আমি জানি না আমি তোমায় নিজের মাঝে অনুভব করতে পারি কিনা।কিন্তু হ্যাঁ,তোমার সেসব বেহায়াপনা,আমাকে বিরক্ত করা,আমার অতিরিক্ত কেয়ার করা এসবটাকে আমি সারাজীবন চাই।কারণ এ ক'দিন আমি এগুলোর অভাবটা খুব করে অনুভব করেছি।
তিশার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে থামে দিহান।তিশা তো পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে দিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।দিহান কিছুটা সময় চুপ থেকে আবারও বলে ওঠে,
-আমি সারাটা জীবন তোমার হয়ে থাকতে চাই,টিস্যু। রাখবে আমায়?
এবার মনে হয় পাথরের মূর্তির মাঝে প্রাণ সঞ্চারিত হলো।চোখের কোণা দিয়ে কয়েক ফোটা জল টপটপ করে গড়িয়ে পরছে সেই সাথে তিশার ঠোঁটে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি।সে চোখে জল ও ঠোঁটে হাসি নিয়ে অপলক তাকিয়ে আছে দিহানের দিকে।এ যে অতি কাঙ্ক্ষিত কেউকে পাওয়ার এক তীব্র প্রশান্তি।এ এক অবক্ত্য অনুভূতি।দিহান কিছু টা সময় তিশাকে দেখে নিয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে তিশাকে।তিশাও চোখবুঁজে চুপটি করে লেগে থাকে দিহানের বুকের সাথে।
!!
বাবুকে ঘুম পাড়িয়ে দোলনাটায় শুইয়ে দিয়ে মোহনা বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।আজ তার মনটা ভারাক্রান্ত।পরন্ত বিকেলের সে মোহনীয় আকাশে তাকিয়ে নিজের মনের ভেতর চলা বিভিন্ন চিন্তাধারায় একটু ডুব দেওয়ার চেষ্টায় লেগে যায় সে।
আচ্ছা সে কি খুব স্বার্থপর?
তা নাহলে কেন সে নিজের মায়ের খুশিটা মেনে নিতে পারছে না?
তার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে মোহ ও সে ব্যতীত অন্য কারোও অধিকার থাকবে তার মায়ের ওপর।অন্য কেউও ভাগ বসাবে তার মায়ের ওপর।মোহনা যেনো মানতেই পারছে না,তার মায়ের ভালোবাসাটা অন্য কারো সাথে ভাগ করতে হবে তার!
হিংসে হচ্ছে ডাঃফেইজকে!খুব খুব হিংসে হচ্ছে।সেই সাথে রাগও।কেন ডাঃফেইজ তার মায়ের ভালোবাসায় ভাগ পাতাতে এসেছে?কেন ও লোকটা তার থেকে তার মাকে দূরে নিয়ে যেতে চাইছে?
হ্যাঁ,ওই লোকটাকে বিয়ে করলে তো অনেকটা দূরত্ব বেড়ে যাবে মোহনা ও তার মায়ের মাঝে।কারণ,মা ও লোকটাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরবে।তখন কি মা এতোটা ভাববে তাকে নিয়ে?
নিজের অজান্তেই মোহনার চোখ দিয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পরলো।নাহ!সে কোনোভাবেই মানতে পারছে না এটি।সে কখনোই তার মাকে ঔ লোকটার সাথে সহ্য করতে পারবে না।বাবা যতই খারাপ হোক সন্তান হয়তো রাগ থাকতে পারে কিংবা দূরে থাকতে পারে কিন্তু কখনোই নিজের মায়ের সাথে বাবা ব্যতীত অন্য পুরুষ সহ্য করতে পারে না।এটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের।
ঠোঁট কামড়ে ধরে নিরবে নিজের চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে মোহনা।হটাৎ নিজের পেটে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে যায় মোহনা।চটজলদি নিজের চোখ দুটি মুছে নেয় সে।আরুশ এটি দেখেও কিছু না বলে মোহনার ঘাড়ে আলতো করে কয়েকটি চুমু দিতে দিতে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে সে।মোহনার গালে দু'টি চুমু দিয়ে সে বলে ওঠে,
-কাঁদবা ভালো কথা।কিন্তু আমায় বলে তো কাঁদতে পারো!
মোহনা,আরুশের কথায় অবাক হয়ে আরুশের দিকে ফিরে বলে ওঠে,
-মানে?আমি কাঁদবো তাতে তোমার কিচ্ছু যায় আসে না?
মোহনার কথা শুনে ঠোঁটে আলতো হাসি নিয়ে মোহনার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নেয় আরুশ।তারপর নাকে নাক লাগিয়ে বলে ওঠে,
-তা কখন বললাম?যদি আমায় বলে কাঁদতে তাহলে তোমার এই নাক টা জলে টইটম্বুর থাকতো না।তুমি কাঁদতে থাকতা আর আমি তোমার সামনে বসে থেকে তোমার নাকের পানি মুছে দিতাম।
আরুশের কথাটি শুনে ফিক করে হেসে ওঠে মোহনা। হাসতে হাসতে বলে ওঠে,
-খাটাশ একটা।
উত্তরে আরুশ কিছু না বলে মোহনার কপালে চুমু বসিয়ে দেয়। তারপর বলে ওঠে,
-জানি তুমি কেনো কাঁদছিলে।মায়ের কথাটি ভেবে,তাইতো?
-হুম।(নিচের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে মোহনা)
-মা,তোমাদের জন্য নিজের জীবনের ১২টি বছর একা পাড় করে দিয়েছে।তুমি কি চাইছো,মা তার বাকি জীবন টাও এভাবে পাড় করে দিক?
-আমি কি খুব স্বার্থপর,আরুশ?
-উহু।তুমি মাকে খুব বেশি ভালোবাসো তাই জন্যেই বিষয়টি মানতে পারছো না।কিন্তু আবেগ দিয়ে নয় বিবেক দিয়ে ভাবতে হবে তোমায়।তোমার জন্য আমি তো আছি।কিন্তু মা খুব একা।তুমি আর মোহ থেকেও নেই।তোমরা,তোমাদের জীবনে ব্যস্ত।একটি মানুষের খুব প্রয়োজন মার।তাকে আর ত্যাগ করতে দিও না।এখন তার জীবনে কিছু রং এনে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।
-সমাজ এটি মেনে নিবে?আর আম্মু-আব্বু কি ব্যাপারটি মানবে?
-এসব কিছু ভেবো না।শুধু মাকে নিয়ে ভাবো।আর আম্মু-আব্বুকে আমি বুঝিয়ে বলবো।
-হুম।তাও........
-মোহ তোমার ছোট হয়েও বড়দের মতো ব্যবহার করছে আর তুমি এক বাচ্চার মা হয়েও বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করছো।ইয়া আল্লাহ শেষ পর্যন্ত একটা বাচ্চাই জুটলো আমার কপালে!!(অভিনয় করে কথাটি বলে আরুশ)
মোহনা হেসে আরুশের নাকটি চেপে ধরে বলে ওঠে,
-এই বাচ্চাটাকেই আপনি নিজের সঙ্গিনী বানিয়েছেন, মিঃহাসবেন্ড।এখন বুঝেন ঠেলা।
কথাটি শেষ হতেই দু'জনে হেসে ওঠে।
!!
সকাল থেকেই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আনিসা বেগম।আজ বাবুর জন্মের ৭ম দিন।সন্ধ্যায় আকিকার অনুষ্ঠান হবে কমিউনিটি সেন্টারে।সেই সাথে রিদি ও মিহাদের এনগেজমেন্ট আজই সে একই সেন্টারে।৬ টা থেকে ৮ টা অব্দি অননুষ্ঠিত হবে আকিকা আর ৮ টা দিয়ে রাত ১০ টা অব্দি এনগেজমেন্ট।একই দিনে দু দু'টি অনুষ্ঠান হওয়ায় বেশ ব্যস্ত সবাই।রিদি ও তার পরিবারের সবাই আনিসা বেগমের বাসায় এসে থাকছেন।বিয়ে টা ১৫ দিন পর।বিয়ে অব্দি তারা আনিসা বেগমের সাথেই থাকবেন।
সন্ধ্যায় ভালোভাবেই আকিকা সম্পাদিত হলো।বাবুর নাম রাখা হলো আহানা।এ নামটি বাবুর দাদিই রেখেছেন।অবশেষে শুরু হলো এনগেজমেন্ট এর প্রস্তুতি।রিদিকে এখনও সেন্টারে আনা হয়নি।ধীরে ধীরে সেন্টারটি খালি হবার সাথে সাথে আরো মেহমানদের আগমন হচ্ছে। এখন যেসব মেহমান আসছে তারা সবাই মিহাদের পরিবার থেকে। কারণ রিদির আত্নীয়রা আকিকায় উপস্থিত ছিলো।
এনগেজমেন্ট নিয়ে কোনো উৎসাহই নেই মিহাদের মনে।তার কাছে এসবই যেনো সময়ের অপচয়।বিয়েতে এখনো ১৫ দিন বাকি ভাবতেই মনটা বার বার খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার।পারলে এখনই বিয়ে করে নিতো সে।কি অদ্ভুত! রিদিকে ভালোবেসে আসছে বছর ধরে।কিন্তু বিয়ে টা ঠিক হওয়ার পর দিয়ে রিদিকে নিজের বউ রুপে দেখার ইচ্ছে বা আকাঙ্খা টা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।দেরি টা সহ্যই হচ্ছে না তার।
আকিকা ও এনগেজমেন্ট উভয়েরই দাওয়াত পেয়েছেন ডাঃফেইজ।তিনি ও তার মা উভয়ই শরিক হয়েছেন এ দু'টি অনুষ্ঠানে।ডাঃফেইজের মা অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতেন আনিসা বেগমকে নিজের ছেলের জন্যে।ছেলের যৌবন থাকতে কতোই না চেষ্টা করেছিলেন তিনি বিয়ে দেওয়ার।কিন্তু ছেলে তার কোনো কথাই শোনেনি।অবশেষে আনিসা বেগমকে দেখে আশার আলো জ্বলে ওঠে তার মনে।তাই তো সেদিন হাটু ব্যথাকে কাজে লাগিয়ে ডাঃফেইজকে পাঠিয়ে দিলেন আনিসা বেগমের দোকানে।তারপর নিজেই ডাঃফেইজকে বলেন আনিসা বেগমকে নিয়ে ভাব্বার কথা।
অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে বেশ খানিকক্ষণ কথা কথা হয় আনিসা বেগম ও ডাঃফেইজের।কিন্তু টা শুধু আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার্থেই হয়তো বলেছেন আনিসা বেগম।ডাঃফেইজ খেয়াল করলেন আনিসা বেগম তাকে যথেষ্ট এড়িয়ে চলছেন।এতে বেশ মন খারাপ হয় ডাঃফেইজের।
অন্যদিকে আনিসা বেগম খেয়াল করছেন রিদান ও আরুশ বেশ খাতিরদারি করছে ডাঃফেইজ ও তার মায়ের।মোহ ও ডাঃফেইজের সাথে অনেকটা সময় গল্প করেছে।এ সবই বেশ সন্দেহজনক মনে হচ্ছে আনিসা বেগমের কাছে।একটি বাইরের মানুষকে নিয়ে এতোটা কেনো মাতামাতি করছে সবাই?
চলবে...
Writer:- Mahzabin