> সামান্য একটা বিড়াল | Bangla Thriller Story | বাংলা নতুন থ্রিলার গল্প
-->

সামান্য একটা বিড়াল | Bangla Thriller Story | বাংলা নতুন থ্রিলার গল্প

মাত্র ৫ লাখ টাকার অভাবে ব্যবসাটা শুরু করতে পারছি না! ভাবা যায়? কত জায়গায় লোনের জন্য চেষ্টা করলাম! কোনো লাভ হলো না। এক ব্যাংকে লোনের জন্য অ্যাপ্লাই করেছি, ব্যাংক কর্মকর্তা তেমন দামই দিলো না। বললো, “হঠাৎ চাকরি ছেড়ে বিজনেসে নামতে চাইছেন কেন? আজকাল বিজনেসের সিচুয়েশন তো ভালো দেখি না।”

কথাটা শুনে আমি রেগে গেলাম। আরে ভাই! আমি ব্যবসা করবো, আমার ইচ্ছে! তোর কাছে লোন চেয়েছি, ব্যস! এত প্রশ্নের কি আছে?

আমার রাগ দেখে লোকটা সাথে সাথেই বলে দিলো, “যান, যান! এমন রগচটা মানুষকে আমরা লোন দেবো না।”

এরপর গেলাম আরেক ব্যাংকে, সেখানেও একই অবস্থা। এই প্রশ্ন-সেই প্রশ্ন! শেষে বললো, “১০ লাখ টাকার মূল্যের কোনো সম্পত্তি মর্টগেজ রাখতে হবে।”

লাও ঠ্যালা! লোন নেবো পাঁচ লাখ, বন্ধক দিতে হবে ১০ লাখ!

শুধু ব্যাংক না। আরো অনেকের কাছেই গিয়েছি লোনের জন্য। কেউই কোনো এক অদ্ভুত কারণে লোন দিতে রাজি হচ্ছে না। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন অনেকের কাছেই চেয়েছি। ইন্টারেস্টসহ ফেরত দেবো বলেছি। কেউ দিতে রাজি হয়নি। শেষে লজ্জার মাথা খেয়ে নিজের শ্বশুর মশাইয়ের কাছে চাইলাম। তিনি বললেন, “বাবা, এই বয়সে ভীমরতি কেন হলো তোমার? কি সুন্দর একটা চাকরি করতে! ৬০ হাজার টাকা স্যালারি। রাগের মাথায় চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নামা কি ঠিক হচ্ছে?”

আমি বললাম, “রাগের মাথায় না। ঠাণ্ডা মাথায়ই ছেড়েছি। প্রতিদিন বসের দূর্ব্যবহার আর নিতে পারছিলাম না!”

শ্বশুর আমাকে নতুন চাকরি খুঁজতে বললেন। বিজনেসে নাকি এখন লাভবান হওয়ার সুযোগ নাই ব্লা ব্লা ব্লা… মন মেজাজ খারাপ করে চলে এলাম আমি। আমার শ্বশুর সুদের ব্যবসায়ী, তাবৎ দুনিয়াকে লোন দেয়, আর আমি চাইতে গেলে নীতিকথা শোনায়!

তবে এই কঠিন সময়ে আমার স্ত্রী মারিয়াকে পাশে পেয়েছি। সে অলটাইম আমাকে বলে এসেছে- “তোমার মন যা করতে চায়, তুমি তাই করো। এমন জীবন কেন বেছে নেবে, যে জীবনে তুমি সুখী হতে পারবে না?”

মূলত ওর দেওয়া সাহসের কারণেই আমি চাকরিটা ছেড়ে দিতে সাহস পেয়েছি। অনেক দিন যাবত ভাবছিলাম ছেড়ে দেবো। ৬০ হাজার টাকা স্যালারি দিয়ে ২ লক্ষ টাকার খাটুনী করায়। ছুটি চাইলে পাওয়া যায় না, কাজে একটু ঝামেলা হলেই বাজে আচরণ! আর কত মানা যায় এসব? নিজের মেধা অন্যের প্রতিষ্ঠানে অপচয় করে প্রতিষ্ঠানের পরিচয়, আমার নিজের কি লাভ হচ্ছে? তারচেয়ে এবার নিজের পরিচয় গড়বো।

কিন্তু সমস্যা বাধলো টাকার জন্য। বিজনেস শুরু করার জন্য ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। আমার নিজের সেভিং-এ ১০ লাখ আছে। লাগবে আরো ৫ লাখ টাকা। ৫ লাখ পাবো কোথায়?

খুব দুঃখ করে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস লিখে পোস্ট করে দিলাম-

“এই দেশে উদ্যোক্তা গড়ে ওঠার কোনো সুযোগ নাই! চমৎকার একটা বিজনেস আইডিয়া আছে মাথায়। কিন্তু মাত্র ৫ লাখ টাকার অভাবে শুরুই করতে পারছি না। ব্যাংক, ফাইন্যান্সিং কোম্পানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- সবার কাছেই গিয়েছি। কেউ বন্ধক ছাড়া লোন দিতে রাজি না। নিজের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনরাও মুখ ফিরিয়ে নিলো! এই দুঃখ কাউকে বলে বোঝানোর উপায় নাই!”

স্ট্যাটাসটা দেওয়ার ঠিক তিন ঘণ্টায় মাথায় আমার কাছে ফোন এলো। একটা আননোন নাম্বার থেকে। আমি রিসিভ করতেই জিজ্ঞেস করলো, “আপনি সেলিম খন্দকার বলছেন?”

আমি উত্তরে বললাম, “হ্যাঁ বলছি”।

ওপাশ থেকে বলা হলো- “আমি একটা প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন করেছি। গোপনীয়তার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের নাম আপনাকে বলতে পারছি না। আমরা জেনেছি যে আপনি মাত্র ৫ লাখ টাকার অভাবে একটা বিজনেস শুরু করতে পারছেন না। আমরা আপনাকে টাকাটা দিতে চাচ্ছি”।

লোকটার কথা শুনে আমি যার পর নাই আনন্দিত হলাম! লোকটা আমার ঠিকানা নিয়ে নিলো। পরদিন বিকাল ৫টায় টাকা নিয়ে আসবে বলে জানালো।

পরদিন…

ঠিক পাঁচটায় ঘরের কলিং বেল বেজে উঠলো। হোয়াট আ টাইমিং! আমি দরজা খুলে দিয়ে দেখি একজন অচেনা লোক দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে একটা বিড়াল, অন্য হাতে একটা ব্রিফকেস। গায়ে সবুজ শার্ট, শার্টের উপর কালো রঙের সোয়েটার, জিন্সের প্যান্ট আর পায়ে কালো জুতো। লোকটা হাসিমুখে বললো, “আমার সাথেই আপনার কথা হয়েছিলো ফোনে।”

আমি পাল্টা হাসি দিয়ে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালাম। লোকটাকে ভেতরে ঢুকতে দিলাম। পথ দেখিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় এনে বসালাম। আমার স্ত্রী মারিয়া এলো চা-নাস্তা নিয়ে। লোকটা কোলের ওপর বেড়ালটাকে রেখে প্রথমে ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেলো। তারপর চায়ের কাপে এক চুমুক দিলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আমার নাম নোয়েল রড্রিগেজ। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা আপনার বিজনেস শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড দিতে আগ্রহী।”

“আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। বসে আছি লোকটার মুখোমুখি।

“আগেই বলেছি- গোপনীয়তার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের নাম আমি আপনাকে বলতে পারছি না। তবে আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি আপনার বিজনেস শুরু করার জন্য মোট ১৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। আমরা আপনাকে পুরো টাকাটাই দিতে চাইছি।”

আমি একটু হেসে বললাম, “দ্যাটস সো কাইন্ড অফ ইউ। কিন্তু আমার আসলে ১৫ লাখ দরকার নেই। আমাদের সেভিংস আছে ১০ এর মতো। ৫ লাখ লোন পেলেই বিজনেস শুরু করতে পারবো।”

নোয়েল রড্রিগেজ চায়ের কাপে আরেক চুমুক দিলো। মুচকি হেসে বললো, “আপনি আসলে আমার কথাটা বোঝেননি মিস্টার সেলিম। আমি লোন কিংবা ধার দিতে আসিনি, পুরো টাকাটা এমনিতেই আপনাকে দিতে চাইছি।”

লোকটার কথা শুনে আমার দুই চক্ষু ছানাবড়া! মারিয়ার দিকে তাকালাম, দেখলাম সেও খুব অবাক হয়েছে। লোকটা বলে কি? পুরো দুনিয়া ঘুরে আমি ৫ লক্ষ টাকা লোন পেলাম না, আর সে আমাকে ১৫ লক্ষ টাকা এমনি এমনি দিতে চাইছে?

আরেকবার চায়ের কাপে চুমুক দিলো নোয়েল। বললো, “বুঝতে পারছি অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন আজকের বাজারে এমন দরদী কে আছে যে বিনা শর্তে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে দেবে? না নেই! আমরাও বিনা শর্তে আপনাকে টাকাটা দেবো না। ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে আপনাদের।”

“কি কাজ?” নিজের অজান্তেই কথাটা বেরিয়ে এলো আমার মুখ থেকে।

নোয়েল তার কোলের বিড়ালটার গায়ে হাত বুলিয়ে বললো, “এই বিড়ালটাকে হত্যা করতে হবে।”

হোয়াট? আমি ঝট করে দাঁড়িয়ে গেলাম। “একটা বিড়াল হত্যা করলে আমাকে ১৫ লক্ষ টাকা দেবেন? আপনি কি ফাজলামি করতে এসেছেন এখানে?”

নোয়েল স্বভাবসুলভ মুচকি হেসে ব্রিফকেসটা খুললো। ভেতরে অনেকগুলো ১ হাজার টাকার নোটের বান্ডেল দেখা গেলো। নোয়েল টাকাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বললো, “কি মনে হয়? ফাজলামি করছি আমি?”

আমি আবার ধপ করে বসে পড়লাম সোফায়। কি বলবো বুঝতে পারছি না! এতক্ষণে আমার স্ত্রী মারিয়া মুখ খুললো, “আমার মনে হচ্ছে না সামান্য একটা বিড়াল খুন করার বিনিময়ে আপনি টাকা দিতে চাইছেন। এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণ আছে?”

নোয়েল হাসি ধরে রেখে বললো, “আপনি বুদ্ধিমতি। ঠিকই অনুমান করেছেন।”

“আমরা বিষয়টা পুরোপুরি জানতে চাই”। মারিয়া বললো।

“পুরোটা তো বলা সম্ভব নয়। তবে যতটুকু বলা সম্ভব, ততটুকু বলছি আমি…”

নোয়েল চায়ের কাপে শেষ একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করলো- “দেখুন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি কোনো ফাইন্যান্সিং কোম্পানি নয়। এটি একটি বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট। পৃথিবীর সর্বত্র আমাদের শাখা রয়েছে। আমাদের কার্যক্রম চলে অত্যন্ত গোপনে। আপনি কোনো পত্রিকা, টিভি চ্যানেল বা অনলাইনে আমাদের নাম শুনবেন না। আমরা মানুষের সাইকোলজি নিয়ে গবেষণা করি। মানুষের ব্রেইনে যে নিউরন থাকে তা তো জানেনই। আমাদের প্রত্যেকের ব্রেইনের নিউরন মিলে সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীব্যপী এক বিশাল নিউরাল নেটওয়ার্ক। আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে সেই নেটওয়ার্কে এক্সেস করতে সমর্থ হয়েছি। অর্থাৎ, আপনাদের কার মাথায় কি চলছে সব কিছুই আমরা জানতে পারছি। আর এই প্রযুক্তি একদিনে আবিষ্কার হয়নি। বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই আমাদের গবেষণা চলছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে গবেষণার ফলাফল ট্রান্সফার হচ্ছে। বিজ্ঞানী মারা যাচ্ছেন, নতুন বিজ্ঞানী যুক্ত হচ্ছেন, গবেষণা কখনো থেমে নেই।”

আমি আর মারিয়া হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নোয়েল রড্রিগেজের দিকে।

নোয়েল বললো, “বুঝতে পারছি আমার কথাগুলো আপনাদের কাছে একটু অবিশ্বাস্য লাগছে। কিন্তু এতটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে আমি একবর্ণও মিথ্যে বলছি না। আমাদের গবেষণার একটা ভালো উদ্দেশ্য আছে। আমরা মানুষের মাথার খারাপ চিন্তাগুলো সব পাল্টে দিতে চাই। ধরুন, আপনি কারো সাথে বাজে ব্যবহার করতে যাচ্ছেন, সাথে সাথেই আমরা সেটা বুঝতে পারি। এরপর আমরা আপনার মাথা থেকে বাজে ব্যবহার করার চিন্তাটা সরিয়ে দেবো। ফলে আপনি আর কারো সাথে বাজে ব্যবহার করবেন না!”

নোয়েলের কথা শুনে আমার চোখের সামনে আমার সাবেক বসের চেহারা ভেসে উঠলো।

নোয়েল বলে যাচ্ছে, “কাউকে মারতে চাইছেন, গালি দিতে চাইছেন, কারো ক্ষতি করবেন ভাবছেন, মিথ্যা বলতে চলেছেন, অসৎ কাজে জরাতে চাইছেন- এইরকম যত কুচিন্তা মানুষের মাথায় আসবে, সাথে সাথে আমরা ব্রেইন থেকে চিন্তাটা সরিয়ে দেবো। ফলে মানুষ আর খারাপ কিছু করবে না! এই পৃথিবীর সবাই ভালো মানুষে পরিণত হবে। পৃথিবীটা পরিণত হবে স্বর্গে।”

“তাহলে শুরু করছেন না কেন?” মারিয়া জিজ্ঞেস করলো।

“ছোট একটা সমস্যার কারণে পারছি না। মানুষের খারাপ চিন্তাগুলো পাল্টে দেওয়ার জন্য আমাদের আগে বুঝতে হয় কীসের প্রেক্ষিতে ঐ খারাপ চিন্তাটা মাথায় আসে। অর্থাৎ, ব্রেইনে সাইকোলজিক্যাল স্টিমুলিটা পিন পয়েন্ট করতে হয়। মানুষের প্রায় সব খারাপ চিন্তার পেছনে সাইকোলজিক্যাল স্টিমুলি খুঁজে পেয়েছি আমরা। কিন্তু একটা বিষয় এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। তা হচ্ছে- খুন করা। কোনো এক অদ্ভুত কারণে মানুষের খুন করার চিন্তার পেছনের সাইকোলজিক্যাল স্টিমুলিটা আমরা ব্রেইনে খুঁজে পাচ্ছি না। তাই মানুষের মাথায় খুন করার চিন্তা এলে আমাদের প্রযুক্তি ধরতে পারছে না। ফলে খুন করা থেকে মানুষকে বিরত করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই মুহূর্তে আমাদের সমস্ত গবেষণা চলছে খুন করার উপর। আর এই কারণেই মানুষকে দিয়ে খুন করাতে হচ্ছে। যেমন আপনাদের বললাম- বিড়ালটাকে খুন করতে। আপনাদের ব্রেইনে আমরা নজর রেখেছি। কোন প্রেক্ষিতে আপনারা খুনটা করেন সেটা ধরার চেষ্টা করবো।”

আমি অধৈর্য্য কণ্ঠে বললাম, “কিন্তু সামান্য একটা বিড়াল খুন করা মানুষ খুন করার মধ্যে বিশাল পার্থক্য! দুটো কাজের পেছনে চিন্তাটা তো এক হতে পারে না!” 

“আমরা সেটা ভালো করেই জানি। কিন্তু মানুষকে দিয়ে তো আর মানুষ খুন করানো সম্ভব নয়। তাই একটা বিকল্প উপায় বের করেছি”। নোয়েলের চোখ-মুখে ষড়যন্ত্রের হাসি। বুঝতে পারলাম সে পুরোটা আমাদের বলেনি। গল্পের এখনও কিছুটা বাকি আছে। কয়েক সেকেন্ড বিরতি নিয়ে সে বললো, “মানুষের ব্রেইনের মতো পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর ব্রেইনেও এক্সেস আছে আমাদের। আমরা চাইলে মানুষের ব্রেইনের সাথে একটা প্রাণীর ব্রেইন কানেক্টেড করে দিতে পারি। ফলে ঐ প্রাণীটি যদি মারা যায়, তাহলে কানেক্টেড থাকা মানুষটিও ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা যাবে। অর্থাৎ, আপনারা এই বিড়ালটিকে হত্যা করলে, একজন মানুষও সাথে সাথে মারা যাবে।”

আমি চমকে উঠলাম, “হোয়াট? কে মারা যাবে?”

“চিন্তার কিছু নেই। তাকে আপনারা চেনেন না। সে আপনাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কিংবা চেনা-জানা লোকদের মধ্যে কেউ নয়। সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষ, যে মরে গেলে আপনাদের কিছুই যায় আসে না।”

“আমরা এই কাজ করতে পারবো না!” আমি রেগে গিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। “আপনি দয়া করে আসুন। আমাদের টাকা লাগবে না।”

নোয়েল উঠলো না। সে হাসি মুখে বললো, “আপনি খামোখাই রাগ করছেন মিস্টার সেলিম। আমরা আপনাকে সামান্য একটা বিড়াল খুন করতে বলছি। টেকনিক্যালি মানুষটাকে আসলে আমরা খুন করছি।”

“কিন্তু সেটা তো আমার ইচ্ছায় হচ্ছে!” আমি নাছোড়বান্দার মতো বললাম।

“এক্সাক্টলি! আমরা আপনার ঐ ইচ্ছেটাকেই ব্রেইনে পিন পয়েন্ট করতে চাচ্ছি।”

আমি মারিয়ার দিকে তাকালাম, তাকেও হতভম্ব মনে হচ্ছে।

“কাম অন, মিস্টার সেলিম! এমন তো না যে আপনি কখনো কারো মৃত্যু কামনা করেন নাই! স্কুলে কামাল নামে এক সহপাঠী ছিলো, একবার ক্লাসে আপনার প্যান্ট খুলে দিয়েছিলো; সারিকা, আপনার সাবেক প্রেমিকা, আপনার সাথে ছলনা করে বিয়ে করেছে এই দুবাই ফেরত ব্যবসায়ীকে; তারপর আপনার বস, যে দুই বেলা বাজে ব্যবহার করতো- এদেরকে অসংখ্যবার খুন করতে ইচ্ছে করেছে আপনার, তাই না? এখন যদি আপনার ইচ্ছা রাখতে অন্য কেউ তাদের খুন করে, সেই খুনের দায়ভার তো আপনার নয়!”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আবার বসে পড়লাম সোফায়।

“রিল্যাক্স! আপনাকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে না। ভাবার মতো যথেষ্ট সময় পাবেন।” বলে নোয়েল ব্রিফকেস থেকে গুণে গুণে ৫টা বান্ডেল বের করে সেন্ট্রাল টেবিলের উপর রাখলো। “এইখানে মোট ৫ লাখ টাকা আছে। এটা আমি আপনাকে এখনই দিয়ে যাচ্ছি। আর বিড়ালটা রেখে যাচ্ছি। সাত দিন পর ঠিক এই সময়ে আসবো। এর মধ্যে যদি আপনারা বিড়ালটাকে খুন করেন, তাহলে বাকি ১০ লাখ পাবেন। আর যদি খুন না করেন, তাহলে এই ৫ লাখ টাকা আর বিড়ালটাকে ফেরত নিয়ে যাবো। সিদ্ধান্ত আপনার হাতেই!”

আমি বললাম, “ধরুন, আমরা বিড়ালটাকে মারলাম না। এই টাকাও ফেরত দিলাম না আপনাকে। কি করবেন তাহলে?”

নোয়েল মুচকি হেসে বললো, “ভুলে যাচ্ছেন যে আপনার ব্রেইনে আমাদের এক্সেস আছে? আমরা চাইলে এমন কিছু করতে পারি যাতে আপনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যেতে পারেন! আপনি নিশ্চয়ই তা চান না?”

আমি আর কথা বাড়ালাম না।

নোয়েল রড্রিগেজ ব্রিফকেস বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। “তাহলে দেখা হচ্ছে সাত দিন পর” বলে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। আমি আর মারিয়া নির্বাক তাকিয়ে রইলাম ছোট্ট সুন্দর বিড়ালটার দিকে।

দুদিন পর…

বিড়ালটা এখন আমার স্ত্রী মারিয়ার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে গেছে। খেতে-বসতে-উঠতে সারাক্ষণ বিড়ালটাকে হাতের কাছেই রাখছে। কুচকুচে কালো চোখ, ধবধবে সাদা গায়ের পশম, শুধু মুখ ঘাড় ও গলার কাছে কিছু অংশে কালো রং। অদ্ভুত সুন্দর একটা বিড়াল। আর ভীষণ লক্ষ্ণী। একদমই জ্বালাচ্ছে না। ছোট ছোট পায়ে হাঁটে, যত্ন করে খায়, মানুষের বাচ্চাদের মতো চিৎ হয়ে ঘুমায় আর টিভি চললে চুপচাপ টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে। দুদিনেই বিড়ালটার প্রতি খুব মায়া জন্মে গেছে আমাদের। মারিয়া বিড়ালের একটা নাম দিয়েছে- টুশকি! 

মারিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছে- টুশকিকে খুন করার প্রশ্নই আসে না। নোয়েল এলে আমরা টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। প্রয়োজনে নোয়েলকে উল্টো কিছু টাকা দিয়ে টুশকিকে কিনে রেখে দেবো।

আরও দুদিন চলে গেলো…

বিড়ালের মতো ঐ ৫ লাখ টাকার উপরেও মায়া জন্মে গেছে আমার। এতোগুলো টাকা! এই টাকা হাতে আসার পর আবার ফেরত দিয়ে দিতে হবে? ভাবতেই খারাপ লাগছে! ৪ দিন রাখার পর টাকাগুলো এখন আমার নিজের টাকা বলেই মনে হচ্ছে! এই কারণেই মানুষ ধার নেওয়া টাকা আর ফেরত দিতে চায় না! কিন্তু টাকাগুলো রাখতে গেলে টুশকিকে হত্যা করতে হবে। আর টুশকিকে হত্যা করা মানেই হচ্ছে- একজন মানুষকে হত্যা করা! একজন মানুষকে হত্যার চিন্তা কীভাবে করি? দরকার নেই আমার এই টাকার…

৫ম দিন।

হঠাৎ খবর এলো আমার বড়ভাই হাসপাতালে। অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। হন্ত দন্ত হয়ে হাসপাতালে গেলাম। দেখলাম ভাবি আর ভাইয়ের বড় মেয়ে শেফালি খুব কাঁদছে। শেফালি বললো, “চাচাজান, বাবার মারাত্মক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। ডাক্তার বলছে একটা পা কেঁদে বাদ দিতে হবে!”

শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার বললেন, “ইমার্জেন্সি অপারেশন করালে পা হয়তো বাঁচানো যাবে। সেক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা খরচ হবে”।

টাকার কথা শুনে ভাবি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমার বড় ভাই সামান্য একটা চাকরি করেন। হঠাৎ করে ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব। ভাবি আমাকে বললেন, “সেলিম, আমি কষ্ট করে হয়তো এক লাখ টাকা জোগাড় করতে পারবো। বাকিটা কই পাবো?”

আমার বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেলো। আমি চাকরিহীন বেকার জীবনে আছি, ভাইকে কীভাবে সাহায্য করবো। যে ভাই আমাকে কাঁধে চড়িয়ে পাড়া ঘুড়ে বেড়াতেন, এখন থেকে তাকে এক পায়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে- এই দৃশ্য আমি কীভাবে সহ্য করবো?

আমার মনে পড়ে গেলো নোয়েল রড্রিগেজের দেওয়া ৫ লক্ষ টাকার কথা! আমি দৌড়ে বাড়িতে এসে সেখান থেকে ১ লক্ষ টাকা নিলাম, আবার হাসপাতালে গিয়ে ভাবির হাতে তুলে দিলাম। কিন্তু নোয়েলকে তো ৫ লক্ষ টাকাই ফেরত দিতে হবে! সে কথা পরে ভাবা যাবে, আগে আমার ভাইয়ের পা বাঁচুক!

ষষ্ঠ দিন।

আমি ভয়ে ভয়ে ১ লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলার ব্যাপারটা মারিয়াকে জানালাম। মারিয়া সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর বললো, “ঠিক আছে। বড় ভাইয়ের বিপদে আমাদের তো সাহায্য করতেই হতো।”

“এখন কি হবে মারিয়া? এই এক লক্ষ টাকা নোয়েলকে কীভাবে ফেরত দেবো?”

মারিয়া দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “ফেরত দেওয়ার দরকার নেই, কি বলো? যা করতে বলেছে তাই করে ফেলি?”

মারিয়া অবাক হলো আমার কথা শুনে, “কি বলছো তুমি সেলিম? একজন মানুষ মারা যাবে তোমার কারণে!”

“আমি প্র্যাকটিক্যাল হওয়ার চেষ্টা করছি”। আমি বললাম, “পনেরো লক্ষ টাকা মানে অনেকগুলো টাকা। আমার বিজনেসটা শুরু করে দিতে পারবো। সেভিংস-এ হাত দিতে হবে না। একটা বিজনেস দাঁড়াতে হলে কমপক্ষে তো ১ বছর লাগে। সেভিংস খরচ করে ফেললে এতদিন চলবো কি করে? তাছাড়া… প্রতিদিন সারাবিশ্বে কতজন মারা যায় জানো? সেই সংখ্যায় ১ যুক্ত হবে… এইতো!”

মারিয়া মাথা নিচু করে রাখলো। আমি মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নিলাম।

সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার পর আমার খুব হালকা লাগছে। বাসায় কিছু নতুন ফার্নিচার দরকার। বিকেলে স্বামী-স্ত্রী বের হলাম ১ লক্ষ টাকা নিয়ে। কিছু ফার্নিচার, কিছু দরকারি জিনিস আর মারিয়ার জন্য সুন্দর একটা নেকলেস কিনে নিয়ে আসলাম। মারিয়া খুব খুশি। মন খারাপ ভাবটা নেই আর।

কিন্তু বিপত্তিটা ঘটলো রাতে খাওয়ার সময়। দুজনে খেতে বসেছি, এই সময় টুশকি এসে মারিয়ার পায়ের কাছে বসে রইলো। ফ্যাল ফ্যাল করে বিড়ালটা তাকিয়ে আছে মারিয়ার দিকে। মনে হচ্ছে যেন বাচ্চা খিদে পেয়েছে বলে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখে মারিয়া আর সহ্য করতে পারলো না। বিড়ালটাকে বুকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

আমি নির্বাক তাকিয়ে থাকলাম। স্ত্রীর কান্না দেখে আমারও খুব কষ্ট লাগছে।

মারিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “সেলিম, আমি কিছুতেই টুশকিকে মারতে দেবো না! কিছুতেই না! ও আমার সন্তান!”

আমার মাথায় যেন দুশ্চিন্তার আকাশ ভেঙে পড়লো! “কি বলছো মারিয়া? কাল বিকেলে নোয়েল আসবে টাকা ফেরত নিতে। তাকে টাকা দেবো কোথথেকে?”

মারিয়া কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললো, “আমি কাল সকালে আব্বুর কাছে যাবো। আব্বুর কাছ থেকে চেয়ে দুই লক্ষ টাকা নিয়ে আসবো যেভাবেই পারি। কিন্তু টুশকির কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না!”

আবার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম আমরা দুজনে। টুশকি থাকছে, টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

কিন্তু বিধিবাম!

রাতের বেলা ফোন এলো মারিয়ার কাছে। জানা গেলো মারিয়ার বাবা স্ট্রোক করেছেন। দুজনে ছুটলাম হাসপাতালে। গিয়ে দেখি মারিয়ার বাবার অবস্থা গুরুত্বর। যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। আইসিইউতে রাখা হয়েছে। সারারাত যমে মানুষে টানাটানির পর ভোর বেলা যমের জয় হলো। চলে গেলেন মারিয়ার বাবা। মারিয়া অজ্ঞান হয়ে গেলো।

৭ম দিন।

মারিয়ার বাবাকে কবর দিয়ে বাড়ি ফিরলাম বেলা ১২টার দিকে। দরজনা খুলে ঢুকতেই টুশকি দৌড়ে এলো। আমি কোলে তুলে নিলাম তাকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বিড়ালটা মারিয়াকে খুঁজছে। মারিয়া আসেনি, তার বাবার বাড়িতেই আছে। মারিয়ার মায়ের অবস্থা ভালো না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।

নোয়েল আসবে বিকাল ৫টায়। হাতে সময় আছে ৫ ঘণ্টা। যা করার এর মধ্যেই করতে হবে। এই অল্প সময়ে টাকা জোগাড় করার উপায় নেই। সেভিংস থেকে দুই লক্ষ দিয়ে দিলে আমার আর বিজনেস করাই হবে না! স্বপ্নটা নষ্ট হয়ে যাবে! সামান্য একটা বিড়ালের প্রাণ বাঁচাতে আমি নিজের স্বপ্নটা জলাঞ্জলি দিয়ে দেবো? মনটাকে পাথর করলাম- টুশকিকে হত্যা করবো।

কীভাবে হত্যা করবো তাই ভাবছি। ভারী কিছু দিয়ে মাথায় একটা বারি দিলে কিংবা ধারালো বটি দিয়ে একটা কোপ মারলেই বিড়ালটা কুপোকাত হয়ে যাবে। কিন্তু এতটা নির্দয় হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না! মারতে হবে বিষ দিয়ে।

বেরিয়ে পড়লাম বাসা ছেড়ে। কয়েকটা ফার্মেসিতে খোঁজ নিলাম। এক ফার্মেসিতে একটা ওষুধ পেলাম অদ্ভুত ধরনের। খাওয়ার পর বেড়ালটা প্রথমে ঘুমিয়ে যাবে। তারপর এক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হবে নিঃশব্দে। হার্ট বন্ধ হয়ে যাবে। কোনো কষ্টই পাবে না। ইউরোপের অনেক দেশে নাকি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণীর বংশবিস্তার রোধে এই ওষুধ ব্যবহার হয়। দামও অনেক।

আমি ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরে এলাম। এক বাটি দুধ নিলাম। দুধে ওষুধ মেশালাম। তারপর টুশকিকে খেতে দিলাম। বলতে আপত্তি নেই যে বিবেক বার বার বাধা দিচ্ছিলো। কিন্তু মাথার মধ্যে কি এক অদ্ভুত খেয়াল ঢুকে গেছে। তার কারণেই আমি ভয়ংকর কাজটা করে ফেললাম- সম্ভবত এই অনুভূতিটাই হচ্ছে মানুষের ব্রেইনের সাইকোলজিক্যাল স্টিমুলি যা নোয়েলের প্রতিষ্ঠান খুঁজে বেড়াচ্ছে।

কথা মতো কাজ হলো। দুধ খাওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলো টুশকি। আমি তার ছোট্ট ঘুমন্ত দেহটা বিছানায় রেখে একটা কম্বল জড়িয়ে দিলাম চারিদিকে। এরপর অপেক্ষা…

৩টা বাজলো।

আমি উঠে গিয়ে টুশকিকে নাড়ানোর চেষ্টা করলাম। নড়ছে না বিড়ালটা। বুঝলাম চিরতরে ঘুমিয়ে গেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বুকের ভেতর কি যেন ব্যাথা মোচড় দিচ্ছে। কান্নার একটা দলা পাক খেয়ে গলা বেয়ে উঠে আসতে চাইছে। আমি জোর করে সব চেপে রাখলাম! যা হয়ে গেছে, তা হয়ে গেছে। এখন আর ভেবে লাভ কি?

৪টা বাজলো।

কলিং বেলের আওয়াজ হলো। কি ব্যাপার? নোয়েল কি এক ঘণ্টা আগেই চলে এলো? আমি দরজা খুলে দেখি মারিয়া দাড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ কান্নার কারণে চোখ মুখ ফুলে আছে। তবে অনেকটা স্বাভাবিক লাগছে এখন।

মারিয়া ঢুকলো বাসার ভেতরে। ব্যাগের চেইন খুলে দুটো টাকার বান্ডেল বের করলো। “এই যে তোমার টাকা নিয়ে এসেছি। টুশকি কোথায়?”

আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম টাকাগুলোর দিকে!

মারিয়া এগিয়ে গেলো বেডরুমের দিকে, “টুশকি? অ্যাই টুশকি? এই যে আম্মু চলে এসেছি…” 

খানিকক্ষণ পর টুশকিকে কোলে নিয়ে ফেরত এলো সে, “অ্যাই! টুশকি উঠছে না ঘুম থেকে? কি করেছো তুমি আমার মেয়েকে?”

আমি কিছু বলতে পারলাম না। স্থির বসে থাকলাম!

মারিয়া কাঁদলো না। কিছুক্ষণ অপ্রকৃতস্থের মতো হাসলো। তারপর বসে থাকলো টুশকিকে কোলে নিয়ে। দুই হাতে মন ভরে আদর করতে থাকলো মৃত বেড়ালটাকে। এই দৃশ্য সহ্য করা যাচ্ছে না। বুক ভেঙে যাছে আমার। নিজেকে মনে হচ্ছে পাপিষ্ঠ নরাধম!

বিকাল ৫টা।

কলিং বেলের আওয়াজ। দরজা খুলে দেখি নোয়েল দাঁড়িয়ে আছে। স্বভাবসুলভ হাসছে। আগের দিনের মতো আজ আর তাকে স্বাগতম জানালাম না। বিনা বাক্যব্যয়ে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালাম। নোয়েল ঘরের ভেতরে পা দিয়েই বললো, “কংগ্রাচুলেশন মিস্টার সেলিম! টাস্ক কমপ্লিট! আপনারা ১৫ লক্ষ টাকা জিতে নিয়েছেন!”

আজ নোয়েলের এক হাতে একটা ব্রিফকেস, আরেক হাতে একটা বড় বাকশোর মতো, কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। সে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসেই ব্রিফকেস খুলে টাকা বের করতে থাকলো। গুণে গুণে ১০টা এক হাজার টাকার বান্ডেল বের করে টেবিলে রাখলো।

“এই যে আপনাদের বাকি ১০ লক্ষ টাকা”।

মারিয়া তখনও টুশকির লাশ কোলে নিয়ে বসে আছে। সে ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করলো, “কে মারা গেলো?”

নোয়াল অবাক হলো, “মানে?”

আমি আঙুল দিয়ে টুশকির লাশ দেখিয়ে বললাম, “বিড়ালটার মৃত্যুর কারণে… কে মারা গেলো?”

“ওহ! তাকে আপনি চিনবেন না! আপনাদের অচেনা কেউ!” নোয়েল হাসলো আবার, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “সো, ডোন্ট ওরি অ্যাবাউট দ্যাট! আপনি বিজনেস শুরু করে দিন! এনজয় ইওর লাইফ!”

নোয়েল উঠে দাঁড়ালো। যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়েছে, পেছন থেকে মারিয়া জিজ্ঞেস করলো, “ঐ বক্সে কি আছে?”

নোয়েল ঘুরে তাকালো। তারপর কালো কাপড়টা সরালো বাকশোর উপর থেকে। দেখা গেলো একটা লোহার খাঁচা। ভেতরে টুশকির মতো দেখতে আরেকটা বেড়াল। নোয়েল বললো, “সামান্য একটা বিড়াল। এটা নিয়ে আমি এখন আরেকজনের কাছে যাবো।”

“কার কাছে যাবেন?” আমার প্রশ্ন।

মুচকি হাসিটা ফিরে এলো নোয়েলের ঠোঁটে, “তাকে আপনি চিনবেন না! আপনাদের অচেনা কেউ!”

আতংকের একটা ঢেউ উঠলো আমার শিড়দারা বেয়ে। একটা ঢোক গিললাম। বুঝতে পারলাম আমার দুই হাঁটু কাঁপছে!








Writer:- নাজিম উদ দৌলা







(টুয়েলাইট টিভি সিরিজের "বাটন" এপিসোড অবলম্বনে)
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner