> অন্ধবালক
-->

অন্ধবালক

জাফর সাহেব হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলেন তিনি মানুষের ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারছেন। আবার সেই ভবিষ্যৎ বলতে পারার ব্যাপারটাও বেশ অদ্ভুত। একজন মানুষের জীবনে ভবিষ্যতে যা যা ঘটবে, সবই যে তিনি বলে দিতে পারছেন তা কিন্তু নয়! শুধুমাত্র অবিবাহিত ছেলে-মেয়ের বিবাহ সংক্রান্ত ভবিষ্যৎবাণী মিলে যাচ্ছে। বুঝতে পারছেন না, তাই না? আচ্ছা, একটা উদাহারণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।

জাফর আহমেদ একটা বেসরকারি ব্যাংকের গুলশান ব্রাঞ্চের এইচআর কর্মকর্তা। তার ব্রাঞ্চে জুনিয়র অফিসার পদে নতুন একটা ছেলে জয়েন করল। ছেলেটির নাম সোহেল। প্রাণবন্ত যুবক। অল্প কদিনেই সবার মন জয় করে নিল। 

সোহেলের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ একদিন জাফর সাহেবের মনে হলো- এই ছেলেটি মাস দুয়েকের মধ্যেই বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছে। সে একটা বিয়ে বাড়িতে বেড়াতে যাবে। সেখানে বড় ধরনের একটা ঝামেলা হবে। তারপর বাধ্য হয়ে ছেলেটি নিজের চেয়ে দু’বছরের বড় এক মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসবে। 

ভাবনাটা মাথায় আসার পর জাফর আহমেদের হাসি পেল। এমন একটা চিন্তা তার মাথায় কেন এল? এই ছেলে নিজের চেয়ে দু-বছরের বড় মেয়ে কেন বিয়ে করবে? অদ্ভুৎ চিন্তা! তিনি ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মনের মধ্যে একটা একটা খচখচানি থেকেই গেলো। 

দুইমাস পর একটা কাণ্ড ঘটলো। সোহেল অফিসে আসা বন্ধ করে দিল। কোনো খোঁজ খবর নাই! ফোনও বন্ধ। অফিসের সবাই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল। যে ছেলে একদিনও অফিসে লেট করে আসে না, দুইমাসে একদিনই অফিস কামাই করেনি, সে কেন অফিসে আসা বন্ধ করে দিলো?

সপ্তাহখানেক বাদে হঠাৎ অফিসে উদয় হলো সোহেল। সবাই অবাক চোখে দেখল অমন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ছেলেটা কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে গেছে! আগের মতো হাসছে না, কারো সাথে কথা বলছে না, চুপচাপ নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছে। সেদিন দুপুরের মধ্যে অফিসের ভেতর খবর রটে গেলো। সোহেল নাকি বিয়ে করেছে, তাও নিজের চেয়ে বয়সে দুই বছরের বড় এক মেয়েকে।  

খবরটা আক্ষরিক অর্থেই জাফর আহমেদের মাথা ঘুরিয়ে দিল। তার অদ্ভুত একটা ভবিষ্যৎ চিন্তা বাস্তবে সত্যি হয়ে গেল! কিছুতেই তিনি বিষয়টা মেলাতে পারছেন না। তবে ডিকশনারিতে “কাকতালীয়” নামে একটা শব্দ আছে, যা এই যাত্রায় জাফর সাহেব কে সাহায্য করল মনকে প্রবোধ দিতে। 

কিন্তু পরের ঘটনাটা আর “কাকতালীয়” ক্যাটাগরিতে ফেলা গেলোনা!

***

জাফর আহমেদ বিপত্নীক। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে প্রাচীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার একটা ফ্ল্যাটে থাকেন। একদিন তাদের পাশের ফ্ল্যাটে এক নতুন ভাড়াটিয়া এলো। বাবা-মা আর তাদের দুই ছেলে। বাড়ির কর্তা ভদ্রলোক সরকারি চাকরি করেন। বড় ছেলেকে নিয়ে একদিন তিনি জাফর সাহেবের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলেন। নিজের ছেলেকে দেখিয়ে গর্ব করে অনেক কথা বললেন। ছেলে ভাল চাকরি করে, ভাল বেতন পায়, ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র ছিল, আদব কায়দা জানে আরও নানান প্রশংসা। জাফর সাহেব মনে মনে হাসলেন। তার মাথায় চিন্তা এলো- এই ছেলেটা কদিন বাদেই এক মেজরের মেয়েকে নিয়ে ভাগবে আর ভদ্রলোকের জান খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু এমন চিন্তা মাথায় কেন এলো- ভেবে জাফর সাহেব অবশ্য উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন।

সপ্তাহ খানেক বাদে জাফর সাহেব অফিস শেষে বাড়ি ফিরে মেয়ের কাছে শুনলেন পাশের বাসার বড় ছেলেটা গতরাতে বাসায় ফেরেনি, তার মা-বাবা চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। জাফর সাহেব নিজেও চিন্তায় অস্থির হলেন। তিনি মনে প্রাণে চাইলেন যেন তার ধারনা মিথ্যে হয়। কিন্তু পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তাদের বাড়ি ঘিরে ধরেছে পুলিশ আর আর্মির লোকজন। পাশের বাড়ির ছেলেটা আসলেই একজন মেজরের মেয়েকে নিয়ে ভেগে গেছে! সেই মেজর এসে ছেলের বাবাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে সবার সামনে অপমান করছে।

ব্যাপারটা হজম করতে জাফর সাহেবের খুব কষ্ট হলো। তিনি ঘামতে শুরু করলেন আর বড় বড় শ্বাস নিতে থাকলেন। মেয়েকে বললেন এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দেয়ার জন্য। পানি খেয়ে জাফর সাহেব মেয়েকে বললেন, “মা তোকে এখন একটা কথা বলব, কথাটা কাউকে বলতে পারবি না। কথা দে?”

প্রাচী অবাক হয়ে বললো, “বাবা, তুমি একটা কথা বলবে, সেটা আমি বাইরের মানুষকে কেন বলবো?”
 
জাফর আহমেদ খানিক ইততস্থ করে কথাটা বলেই ফেললেন, “মা রে, আমি অবিবাহিত ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ দেখতে পাই। মুখ দেখে বলে দিতে পারি- কবে, কখন, কার সাথে তাদের বিয়ে হবে!”

প্রাচী তার বাবার কথাটা ঠিক বুঝলো না। জাফর সাহেব মেয়েকে পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বললেন। ভবিষ্যৎবাণী মিলে যাওয়ার দুটি ঘটনা ব্যাখ্যা করলেন। 

প্রাচী খুবই যুক্তিবাদী। সে বিশ্বাস করে জগতের প্রতিটি বিষয় একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। এখানে কারো পক্ষে অস্বাভাবিক বা অলৌকিক ক্ষমতা পেয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই! তাই বাবার কথা তার বিশ্বাস হলোনা। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ মেয়েকে বিশ্বাস করানোর জন্য কিছু ভবিষ্যৎবাণী করলেন জাফর আহমেদ। সবগুলোই সত্যি প্রমাণিত হলো। প্রাচী প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলো। তারপর সে বাবার এই অস্বাভাবিক একটা ক্ষমতা পাওয়ার পেছনে কারণ খুঁজতে থাকলো।

স্টিফেন হকিংস তার “দ্যা গ্রান্ড ডিজাইন” বইয়ে বলেছেন গোটা সৃষ্টিজগতের সবকিছুই একটা “সেট অফ ল” অনুসরণ করে চলছে। সৃষ্টির আদিতেই হয়তো এই “সেট অফ ল” অবতরণ করা হয়েছে, যা ফলস্বরূপ আমাদের এই ইউনিভার্স সর্বদা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরেই আবর্তিত হচ্ছে। এখানে প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান প্রতিনিয়ত একটা ইভোলিউশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ঐ “একই সেট অফ ল”-এর কোথাও সামান্য পরিবর্তন বা অনিয়ম জন্ম দিতে পারে অবিশ্বাস্য কিছু ইভেন্ট। একটা সামান্য অনিয়মকে ব্যালেন্স করার জন্য সৃষ্টি হতে পারে আরও কিছু অনিয়ম।

বাটারফ্লাই ইফেক্ট থিওরিতে যেমনটি বলা হয়েছে, একটা প্রজাপতির ছোট্ট দুটি পাখার দ্রুত নড়াচড়ার ফলে যে বাতাস সৃষ্টি হয়, তার ফলে ইউনিভার্সের অন্য কোথাও বড় একটা ঝড় সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ, সৃষ্টিজগতের কোথাও একটু নিয়মের হেরফের হওয়ার কারণে অন্য কোথাও বিশাল একটা পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। প্রাচীর ধারণা এমনই কোনো অনিয়ম জাফর সাহেবের এই ক্ষমতার উৎস!

***

যে আজীবন নিয়মের মধ্যে চলে, কোনো অনিয়ম সে কখনোই বরদাস্ত করতে পারে না। প্রকৃতি যেহেতু সবসময় একটা “সেট অফ ল”-এর মধ্যে দিয়ে যেতে অভ্যস্ত, তাই নিয়মের বাইরে কিছু ঘটলে প্রকৃতি তা সহজে মেনে নেয় না। কোথাও অস্বাভাবিক কিছু দেখা দিলে, প্রকৃতি তা যত দ্রুত সম্ভব ঠিক করে নেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়।

জাফর সাহেবের ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো। একদিন অফিস যাওয়ার পথে জাফর সাহেবের মারাত্মক অ্যাক্সিডেন্ট করলেন। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো। ডাক্তাররা জানিয়ে দিলেন যে জাফর সাহেবের মস্তিস্কে ইন্টারনাল ড্যামেজ হয়েছে, কিছুতেই বাঁচানো যাবে না, ধীরে ধীরে মৃত্যু হবে তার।

বাবার মৃত্যুশয্যায় প্রাচী তার হাত ধরে পাশে বসে থাকলো। জাফর সাহেব অতি কষ্টে বলতে লাগলেন, “মা… আমার অস্বাভাবিক ক্ষমতা প্রকৃতির পছন্দ না, তাই হয়তো আমাকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছে।”

প্রাচী কিছু বলতে পারছে না। দু’চোখ বেয়ে অশ্রু নামছে তার। 

জাফর সাহেব আবার বললেন, “মা… তোর ভবিষ্যৎ আমি দেখেছি… আমি জানি তোর কার সাথে বিয়ে হবে। তুই কি জানতে চাস?”

মেয়ে কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললো, “চুপ করো বাবা। তোমাকে কিছু বলতে হবে না।”

“আমি তো চুপ করেই যাব…” মেয়ের বাধা মানলেন না জাফর আহমেদ। “শেষ কয়েকটা কথা বলে যাই। মা, তোর বিয়ে হবে একটা অন্ধ ছেলের সাথে…”

প্রাচী কিছু না বলে শুধু চোখ মুছলো।

জাফর সাহেব বলে যাচ্ছেন, “তুই দাড়িয়ে থাকবি একটা বড় রাস্তার পাশে… রাস্তার ওপাশে অন্ধ সেই ছেলেটিকে দেখতে পাবি।” জাফর সাহেবকে দেখে মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনেই সব দেখতে পাচ্ছেন। “ছেলেটি চোখে না দেখলে কি হবে? তার শ্রবণশক্তি প্রবল… সে গাড়ির আওয়াজ শুনে শুনে… রাস্তা পার হয়ে তোর দিকে এগিয়ে আসবে…”

একটু কাশলেন জাফর সাহেব। সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসছে তার। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোতে চাইছে না। অতি কষ্টে বললেন, “জানিস কোনদিন ঘটবে এই ঘটনা?”

“বাবা, চুপ থাকো!” প্রাচী বাবার বুকে হাত বুলিয়ে দিলো, চোখের পানিতে বুকের ওড়না ভিজে যাচ্ছে তার। “তোমার কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে!”

“একটা বাংলা মাসের প্রথম দিন। কোন মাস শুনবি?”

“জানতে চাইনা বাবা। প্লিজ তুমি চুপ কর।”। প্রাচী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল এবার।

জাফর সাহেব শরীরের সব শক্তি এক করেও মাসের নামটা আর উচ্চারণ করতে পারলেন না। তার গলা দিয়ে ঘোঁত ঘোঁত জাতীয় কিছু শব্দ বেড়িয়ে এলো। তাই দেখে প্রাচী ডাক্তার নার্সদের ডাকাডাকি শুরু করলো। চিরায়ত সেই past perfect tense অনুযায়ী ডাক্তার আসার পূর্বেই রোগী মারা গেল।

***

শাহেদের মা আনোয়ারা বেগম পেশায় আইনজীবী। ছেলেকে নিয়ে ইদানীং খুব চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি। হাসি খুশি ছেলেটা হঠাৎ করে আমূল বদলে গেছে। এমন মনমরা অবস্থায় তাকে আগে কখনোই দেখা যায়নি। সময়মত অফিস যাচ্ছে না। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করছে না। টিভিতে খেলা দেখার পাগল অথচ টিভির সামনেই আর বসে না। ছেলের অসংখ্য বন্ধুবান্ধব আছে, কারও সাথে দেখাও করেনা । যতক্ষণ বাসায় থাকে নিজের ঘরে দরজা আটকে বসে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে কিছুই হয়নি। 

আনোয়ারা বেগম প্রথমে সন্দেহ করেছিলেন ছেলেটি হয়ত ড্রাগ ধরেছে। কিন্তু নিজের ছেলেকে তিনি ভাল করেই চেনেন। ছেলে নেশাজাতীয় বস্তু থেকে সব সময় দূরেই থাকে। এখন তিনি সন্দেহ করছেন, শাহেদ হয়তো মেয়েঘটিত কোনো জটিলতায় পড়েছে। 

অন্যান্য দিনের মতো আজও যখন শাহেদ অফিস থেকে ফিরেই ঘরের দরজা আটকে দিলো, আনোয়ারা বেগম সিদ্ধান্ত নিলেন আজ যে করেই হোক জানতে হবে ছেলের কি হয়েছে।

তিনি জোরে জোরে ছেলের রুমের দরজায় ধাক্কা দিলেন। “শাহেদ, দরজা খোল!”

“বিরক্ত করো না মা, ভাল লাগছে না।” ভেতর থেকে শাহেদের উত্তর।

“তুই দরজা খোল বলছি, কথা আছে তোর সাথে।”

শাহেদ দরজা খুলছে না দেখে আরও কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কাধাক্কি করলেন আনোয়ারা বেগম। শেষে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও শাহেদ দরজা খুলে দিল।

আনোয়ারা বেগম ঘরে ঢুকে ছেলের বিছানায় বসলেন, “আজ তোকে বলতেই হবে তোর কি হয়েছে। কোনো আপত্তি শুনছি না”।

“কিছু হয়নি মা। আসলে মনটা ভাল নেই।”

“শাহেদ! আমি তোর মা! তুই জানিস তুই আমার সাথে যেকোনো কথাই বলতে পারিস।”

শাহেদ কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকলো।

আনোয়ারা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করলেন, “মেয়েটির নাম কি?”

শাহেদ চুপ করে থাকলো।

“আমি তোকে একটা কিছু জিজ্ঞেস করেছি শাহেদ!”

শাহেদ মাথা নিচুর করে জবাব দিলো, “প্রাচী”

“মেয়েটিকে তুই ভালবাসিস?”

“হ্যা।”

“মেয়েটি তোকে পছন্দ করে না?”

শাহেদ একমুহূর্ত ইততস্থ করে বললো, “মনে হয় করে।”

আনোয়ারা বেগম হাসলেন, “তাহলে আর সমস্যা কি? মেয়েটির পরিবার রাজি হবে না ভাবছিস? আমি নিজে কথা বলব তাদের সাথে গিয়ে। তুই সম্ভান্ত পরিবারের ছেলে, দেখতে হ্যান্ডসাম, ভালো চাকরি করিস। ওদের রাজি না হওয়ার তো সুযোগই নেই!”

শাহেদ মাথা নেড়ে বললো, “তেমন কিছু না মা!”

“তাহলে কি?” মা অবাক হলেন। “বিষয়টা খুলে বল আমাকে?”

“আসলে তোমাকে বিষয়টা কীভাবে বলবো…” শাহেদ হাত দিয়ে নাক চুলকে বললো, “বিষয়টা একটু অদ্ভুত… তুমি তুমি বিশ্বাস করবে না।”

“বলেই দেখ, বিশ্বাস করি কি না!”

শাহেদ চোখ তুলে তাকালো মায়ের দিকে। “মা, প্রাচীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে গত বছর এক বন্ধুর বড়বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে। সেই থেকেই তাকে খুব ভালো লাগে। প্রাচীও যে আমাকে অপছন্দ করে, তা নয়! কিন্তু মেয়েটি এক অন্ধ ছেলের অপেক্ষায় আছে! প্রাচীর বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তার বাবা নাকি ভবিষ্যৎবাণী করতে পারতেন। অবিবাহিত ছেলে-মেয়েদের মুখ দেখলে বলে দিতে পারতেন- কবে, কখন, কার সাথে বিয়ে হবে। মৃত্যুর আগে তিনি মেয়েকে বলে গেছে তার বিয়ে হবে একটা অন্ধ ছেলের সাথে।

ছেলের মুখে কথাটা শুনে একমুহূর্ত হতভম্ব চোখে তাকিয়ে থাকলেন আনোয়ারা বেগম। তারপর উচ্চ শব্দে হাসতে শুরু করলেন। 

শাহেদ ঠোঁট কামড়ে বললো, “বলেছিলাম না বিশ্বাস করবে না? প্রাচী বলেছে তার বাবা নাকি যতবার ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, প্রতিবারই মিলে গেছে!”

আনোয়ারা বেগম মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসি আটকালেন। তারপর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললেন, “আচ্ছা, বুঝলাম অন্ধ ছেলের সাথে বিয়ে হবে। কিন্তু কবে, কোথায়, কীভাবে হবে সে সম্পর্কে কিছু বলে গেছেন উনি?”

প্রাচীর সাথে অন্ধ ছেলেটির পরিচয় হওয়ার দৃশ্যটি সম্পর্কে জাফর সাহেব যা বলে গেছেন, তা মাকে খুলে বললো শাহেদ। সব শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আনোয়ারা বেগম। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, “এখন কি করবি ভাবছিস?”

শাহেদ মাথা নিচু করে বললো, “আমি প্রাচীকে খুব ভালবাসি মা! ওকে পাওয়ার জন্য কতোটা পাগল হয়ে গেছি আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না! দুই একবার তো ভেবেছি যে প্রয়োজনে অন্ধ হয়ে যাবো!। কিন্তু তোমার কথা ভেবে নিজেকে থামিয়েছি।”

ছেলের মুখে ভয়ংকর কথাটা শুনে আঁতকে উঠলেন আনোয়ারা বেগম। বুঝতে পারছেন তিনি যা ভেবেছেন বিষয়টা তারচেয়েও বেশি সিরিয়াস। তারপরও তিনি মুখে স্বাভাবিক হাসি ধরে রেখে বললেন, “অন্ধ হওয়া লাগবে না। তারচেয়েও ভালো একটা উপায় জানা আছে আমার। কিন্তু খুব রিস্কি হয়ে যায়! তুই কি পারবি এই রিস্ক নিতে?”

শাহেদ মুখ তুলে তাকালো মায়ের দিকে, “অবশ্যই পারবো”।

আনোয়ারা বেগম নিচু কণ্ঠে এক নিঃশ্বাসে কিছু কথা বলে গেলেন। চার দেয়ালের মাঝে সে কথা শুধু শাহেদই শুনলো, আর প্রকৃতি তার সাক্ষী হয়ে রইলো। কিন্তু প্রকৃতি এই কাজে শাহেদকে সাহায্য করবে কি না তা একমাত্র অন্তর্যামীই জানেন।

***

বাংলা আষাঢ় মাসের ১ তারিখ। বর্ষার প্রথম দিন। মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ। কালিদাস তার “মেঘদূত” কাব্যে যেমনটি লিখেছিলেন, “সেই আষাঢ়স্য প্রথম দিবসের মেঘমাশ্লিষ্ট দিন”। 

বর্ষা চলে এলো আর বৃষ্টি হবে না, তাই কি হয়? সকাল বেলাই হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে কেঁদে উঠলো আকাশ। গোটা শহরের বুকে হানা দিলো বর্ষা। ভিজিয়ে দিচ্ছে শহরের গলি, কোণ, আনাচ-কানাচ। শহরের বিল্ডিংগুলো যেন মাথায় তুলে নিচ্ছে ঘন নীল মেঘের পাগড়ি। রাস্তায় রাস্তায় কর্মব্যস্ত মানুষের মাঝে চলছে জলে ভেজার খেলা। 

বাড়ির সামনের বড় রাস্তার কাছে দাড়িয়ে আছে প্রাচী। বৃষ্টি দেখে ছাতা মেলল সে। মৃদু হিমেল বাতাস বইছে, ঠাণ্ডা লাগছে তার। তবুও ঠায় দাড়িয়ে থাকলো। গত তিন বছরে প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিন সে বড় রাস্তায় পাশে দাঁড়িতে থাকে এক অন্ধ ছেলের আগমনের আশায়। বাবা বলেছিলেন ছেলেটি রাস্তা পার হয়ে এগিয়ে আসবে। আজ কি তবে আসবে সেই অন্ধ ছেলেটি? আজ কি দেখা হবে তার সাথে? এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। 

খানিক বাদেই রাস্তার ওপারে একজনকে দেখতে পেলো প্রাচী। শাহেদকে চিনতে পারলো সে। এই বৃষ্টির মাঝে ভিজতে ভিজতে চলে এসেছে শাহেদ। রাগ হলো প্রাচীর। ছেলেটিকে সবকিছু খুলে বলার পরও বিষয়টা বুঝতে চাইছে না। কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না!

শাহেদ তার পকেট থেকে একটা কালো কাপড় বের করলো। সেটা দিয়ে নিজের চোখ বাঁধলো। শাহেদ কি করতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আঁতকে উঠলো প্রাচী। শাহেদ চোখ বাধা অবস্থায় রাস্তা পার হতে চলেছে! রাস্তার এদিকটাতে কোনও ট্র্যাফিক সিগন্যাল না থাকার কারনে গাড়ি গুলো খুব স্পিডে চলে। চোখ-কান খোলা অবস্থায় রাস্তা পার হতে ভয় লাগে! আর চোখ বাঁধা অবস্থায় একাজ করার কথা তো ভুলেও ভাবা যায় না!

শাহেদ কয়েক পা এগিয়ে এলো। ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা ঘটতে শুরু করতেই নিজেকে খুব অসহায় লাগলো প্রাচীর। হাত থেকে ছাতা ফেলে দিল সে। চিৎকার করে শাহেদকে নিষেধ করতে মন চাইছে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না! যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এই মুহূর্তে! নিজের বাবার দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল প্রাচীর। বাবার রক্তমাখা ব্যান্ডেজ বাঁধা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ভীষণ কান্না পেয়ে বসলো। একটা বাস খুব দ্রুত ছুটে আসছে দেখে চিৎকার বলল, “শাহেদ! বাস আসছে, সরে দাঁড়াও”।

শাহেদ বাসের হর্ন শুনে দাড়িয়ে গেলো। বাসটা একেবারে তার শরীর ঘেঁষে ছুটে গেলো। বাসের হেলপার শাহেদকে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকলো। প্রাচী বড় করে শ্বাস নিয়ে নিয়ে মনে মনে বলল, “আল্লাহ, আজ যেন আমাকে আর একটা অ্যাক্সিডেন্ট দেখতে না হয়!”

শাহেদ এক পা দুই পা করে এগিয়ে আসছে। চোখ বাঁধা থাকায় অন্ধের মতো হাতড়ে হাতড়ে সামনে এগোচ্ছে। আওয়াজ শুনে গাড়ির অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছে সে। তাই দেখে প্রাচীর দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে তাকিয়ে থাকতে পারছে না। বেশ কয়েকটা গাড়ি শাহেদের নাকের নিচ দিয়ে চলে গেলো। একটা রিকশা তার পায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে গেলো। একটা সিএনজি শেষ মুহূর্তে কড়া ব্রেক কষে না থামলেই সর্বনাশ হয়ে যেতো! রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে অবশেষে শাহেদ রাস্তা পার হয়ে এলো।

শাহেদের দিকে দৌড়ে গেলো প্রাচী। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললো, “এই কাজটা কেন করলে তুমি?”

শাহেদ চোখ থেকে কাপড়টা খুললো। তাকিয়ে দেখলো প্রাচীর দুচোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। সে হাত বাড়িয়ে প্রাচীর গাল বেয়ে নেমে আসা অশ্রুবিন্দু স্পর্শ করলো। মৃদু হেসে বললো, “এ কি বৃষ্টির জল নাকি কান্নার জল?”

“আমার প্রশ্নের জবাব দাও!” রেগে গেলো প্রাচী। “কেন এই কাজ করলে?”

শাহেদ হাসিমুখেই বললো, “তুমি আমার জন্য কাঁদবে কেন? তোমার তো আমার জন্য চোখের পানি ফেলার কথা না! আমি ধরে নিচ্ছি এটা বৃষ্টির জল।”

নিজেকে সামলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে প্রাচীর। তার মুখ দিয়ে ফোঁপানোর মত একটা আওয়াজ বেড়িয়ে এলো। কথা বলছে না, জানে ঠোঁট নাড়লেই কান্না চলে আসবে।

এবার শাহেদের হাসিটা আরো প্রশস্ত হলো, “বুঝতে পেরেছি! আর ঢেকে রাখতে পারবে না! এটা কান্নার জলই!”

প্রাচী কান্না জড়ানো কণ্ঠে আবার জিজ্ঞেস করলো, “কেন করলে এটা?”

“তোমাকে পাওয়ার জন্য।” শাহেদের উত্তর। “আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি- তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি অন্ধকারকেও আপন করে নিতে প্রস্তুত!”

“তুমি তো মরে যেতেও পারতে! জানো সেটা?”

শাহেদ মাথা ঝাঁকালো। “তোমাকে না পাওয়ার কষ্ট থেকে ওটা বেটার হতো!”

প্রাচী শাহেদের হাত ধরে টান দিলো। “বাসায় চলো, বৃষ্টিতে একদম ভিজে গেছো। ঠাণ্ডা লেগে যাবে।”

শাহেদ হাত ছাড়িয়ে নিলো, চোয়াল শক্ত করে বললো, “তার আগে বলো, আমার ভালোবাসা গ্রহণ করতে তোমার এখনও আপত্তি আছে কি না? নইলে আমি আজ সারাদিন এই কাপড় বাঁধা অবস্থায় রাস্তা পার হতে থাকব।”

কপট রাগে ভ্রু কোঁচকালো প্রাচী। “তুমি কি আমার সাথে আসবে, না কি আমি এখন কান্নাকাটি করে রাস্তায় মানুষ জড়ো করব?”

“আচ্ছা! বাসায় গিয়ে বলবে! চলো।”

হাঁটতে হাঁটতে প্রাচীর একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিল শাহেদ। প্রায় সাথে সাথেই ছাড়িয়ে নিলো প্রাচী। খানিক বাদে আবার প্রাচীই হাত ধরলো শাহেদের । শাহেদ একটু হেসে অন্য হাতে ধরে থাকা কালো কাপড়টা ফেলে দিলো। মনে মনে ভাবলো, ‘যাক! সবকিছু ভালোয় ভালোয় হয়েছে! মায়ের প্ল্যানটা কাজে লেগেছে। প্রাচী কিছুই টের পায়নি!”

বাইরে থেকে দেখতে সলিড মনে হলেও, শাহেদের চোখে বাঁধা কালো কাপড়টা আসলে স্বচ্ছ ছিলো! দেখে দেখেই অন্ধের ভান করে রাস্তা পার হয়ে এসেছে শাহেদ। ঝুঁকি ছিলো, প্রাচী হয়তো চালাকিটা ধরে ফেলতে পারতো। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো বলে পারেনি। 

প্রাচী হয়তো শাহেদকেই নিজের সেই কাঙ্খিত অন্ধ ছেলেটি বলে ধরে নিয়েছে। অন্ধ বলতে কি শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষকেই বোঝায়? ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার আশায় যে জীবন দিতে প্রস্তুত, সে কি অন্ধ নয়? অথবা অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে এর পেছনে। প্রাচী হয়তো শাহেদের কারসাজি ধরতে পেরেছে কিন্তু প্রকাশ করেনি। হয়তো অন্ধ একটি ছেলের হাত ধরে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নিয়তি থেকে মুক্তির একটা পথ খুঁজে নিয়েছে সে। 

আসলে কি ঘটেছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে গেলো। এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জ্ঞানের বাইরে। প্রকৃতি এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছ থেকে সবসময় গোপন রাখে। কারণ গোপনীয়তা প্রকৃতির আদি বৈশিষ্ট্যগুলোর মাঝে একটি। 

***

বৃষ্টির প্রকোপ কমে এসেছে। এখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কমেছে আকাশে মেঘের আনাগোনা। বৈরি আবহাওয়া শেষে রাস্তার দু’ধারে বিপনী বিতানগুলো আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দোকানপাটের শেডের নিচে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন সব বেরিয়ে এলো। রাস্তার দু পাশের গাছগুলো ভিজে যাওয়ায় দেখা যাচ্ছে এক নতুন রূপ। বৃষ্টি শেষে সবুজ পাতার রং আর তাতে জমে থাকা পানির টুপ করে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য যে দেখেনি তার বেঁচে থাকা বৃথা! 

অবশ্য বড় রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবকের কাছে এ দৃশ্য আজীবন অচেনাই রয়ে গেছে। ছেলেটি চোখে একটি মোটা কাচের কালো সানগ্লাস পড়ে আছে। তার হাতে সাদা ছড়ি। ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে রাস্তা পার হবে। সে রাস্তার পাশে সে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে গাড়ির আওয়াজ শোনার জন্য কান পেতে থাকলো। যখন বুঝলো গাড়িগুলো বেশ দূরে দূরে আছে, সে এক-পা, দুই-পা করে রাস্তা পার হতে থাকলো। একটা গাড়ি খুব কাছে চলে আসায় সে একটু থামলো। গাড়ি চলে যেতেই সাদা ছড়িটি পিচের রাস্তায় ঠুকে ঠুকে আবার এগিয়ে গেলো।

এই ছেলেটির জীবন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতায় ঘেরা। বৃষ্টির আগে তার নিজেকে ছন্নছাড়া মেঘের মতো বিষণ্ণ লাগে আর বৃষ্টি শেষে মেঘ কেটে যাওয়া আকাশে উড়তে থাকা একলা চিলের মতো। নিজেকে তার বড্ড একা লাগে। মনে হয় এই পৃথিবীর বৃত্তজুড়ে কেবল সে-ই একা বসবাস করছে। হয়তো তাকে সবাই দেখছে কিন্তু ছেলেটির কেবল মনে হয়- সে এক বিশাল শূন্যতা ছাড়া কিছুই নয়!  

রাস্তাটা পার হয়ে আসার পর তার কাছে মনে হলো- কিছু একটা ঠিক নেই! তার মন বলছিলো আজ তার আজন্ম বিষণ্ণতার অবসান ঘটবে। বিষাদের সমুদ্র থেকে তাকে কেউ আজ একটানে তুলে নিয়ে যাবে অনন্ত প্রশান্তির জগতে। কেন যেন মনে হচ্ছে এইখানে তার জন্য কারো অপেক্ষা করার কথা, যে মানুষটি ভুলিয়ে দেবে তার একাকীত্ব। মানুষটির কাছে সে খুঁজে পাবে ভালোবাসার আশ্রয়। কিন্তু কোথায় সেই আশ্রয়? কেউ তো অপেক্ষায় নেই!

ছেলেটি বেশ কিছুক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে থাকলো। তাকে দেখে একজন পথচারি এগিয়ে এলো। কাঁধে হাত রেখে বললো, “ভাই কি রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না? সাহায্য দরকার?”

ছেলেটি হাসি মুখে বললো, “না না ভাই। আমি একাই যেতে পারবো।”

লোকটি “ওহ আচ্ছা” বলে চলে যেতে উদ্যত হলো। ছেলেটি বলে উঠলো “ভাই, একটু শুনুন।”

“বলুন।”

“একটু দেখুন তো রাস্তার এই পাড়ে কেউ দাড়িয়ে আছে কি না?”

লোকটি আশে পাশে তাকালো। মাথা নেড়ে বললো, “না ভাই, এদিকটায় আপনি আর আমি ছাড়া কেউ নেই।”

“আচ্ছা ভাই।”

ছেলেটি বিষণ্ণ ভঙ্গিতে হাসলো। আবার ছড়ি ঠুকে ঠুকে পথ খুঁজে এগিয়ে যেতে থাকলো।

পথচারি লোকটি আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। ভালো করে আশে পাশে লক্ষ্য করলো কেউ দাড়িয়ে আছে কি না বোঝার জন্য। নাহ! সবাই যার যার পথে এগিয়ে চলেছে। কারো জন্য কেউ থেমে নেই। এই যান্ত্রিক জীবনে কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকবে না- এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। আর প্রকৃতি কোনো অস্বাভাবিকতা পছন্দ করে না!






 
Writer:- নাজিম উদ দৌলা
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner