প্রিয় নীরা,
আমার দেখা সবচেয়ে বোকা মেয়ে তুমি।শুধু বোকা নও, ভয়াবহ বোকা।এই চিঠি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তুমি বুঝতে পারোনি নাম পুরুষ আমিই ছিলাম।অথচ, আমি ভেবেছিলাম তুমি দু- তিনটে চিঠি পাওয়ার পরেই বুঝে ফেলবে।তুমি যে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে এতোটা কাঁচা, তা কিন্তু আমি জানতাম না।
তুমি কী পুরুষ পড়নি?পড়লে তো জানার কথা আমি,আমরা আমাদের,তুমি,তোমরা, তোমাদের ; এইগুলো ছাড়া বাকি সব নাম পুরুষ। মানে হচ্ছে সব জায়গায় তৃতীয় ব্যাক্তিটাই নাম পুরুষ হয়।আমি তো তোমাদের পরিবারে তৃতীয় ব্যাক্তিই ছিলাম।তাই নামের পরিবর্তে এই সম্বোধন ব্যবহার করতাম।তোমার ঘরের জানালা দিয়ে প্রতি রাতে আমিই চিঠিগুলো ছুঁড়ে মারতাম।যদিও কাজটা ঠিক ছিল না।কিন্তু অন্যভাবে দিলে তুমি বুঝে যেতে। তাই সাহস হয়নি।
এবার আসি হাতের লেখার কথায়।আমি বা হাতি হলেও, আমার ডানহাত অকেজো নয়।ঐ হাত দিয়েও আমি লিখতে জানি।তবে জঘন্য হয় সে লেখা।তাছাড়া অনেক বেশি লিখতেও পারি না।তোমাকে চিঠিগুলো লিখতাম আমি ডানহাত দিয়ে।তাই লেখার অবস্থা এতো বাজে হতো।চিঠিগুলোও ছোট হতো।এইবার মাথার জট খুলেছে?
পড়ানো শুরু করার পর থেকেই তোমাকে খুব ভালো লাগতো। তবে সেটা ছিল কেবল ভালোলাগা।অন্যরকম অনুভূতি শুরু হয় গত দু- মাস থেকে।আমি হুটহাট তোমার প্রেমে পড়িনি।তোমাকে ঘিরে অনুভূতিরা দেয়াল তুলেছে ধীরে ধীরে। মনে আছে, গ্রীষ্মের শেষ সপ্তাহের কথা?কোনো এক দুপুরে পড়তে এসেছিলে তুমি।হঠাৎ করেই শুরু হলো কালবৈশাখীর তান্ডব।মনে হচ্ছিলো, দমকা বাতাসে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে।ঘরের জানালা খোলা থাকার কারণে তীব্র বাতাস তোমার বইয়ের পাতা এলোমেলো করে দিলো,মাথায় দেয়া ঘোমটা ফেলে দিল,তোমার এলোমেলো চুলগুলো আমার সামনে নিয়ে এলো।সেই মুহুর্তে হতচ্ছাড়া বাতাস শুধু তোমাকেই এলোমেলো করে দেয়নি,আমার দুর্বল মনটাকে আরো দুর্বল করে ফেললো।না চাইতেও সারাটা সময় একনাগাড়ে পর্যবেক্ষণ করেছি তোমায়।সর্বনাশের শুরু সেখানেই।হাঁটু ভেঙে,পা পিছলে সেই যে পড়েছি ;এখনো সেখান থেকে এখনো উঠতে পারিনি।
আমি চলে যাচ্ছি নীরা।ইচ্ছে করে নয়,বাধ্য হয়ে।আমার পায়ের তলার মাটিটা যদি একটু স্থায়ী হতো,তবে আমি কখনো তোমাকে ফেলে যেতাম না।
বেকার ছেলেদের প্রেমে পড়া পাপ।কারণ তাদের ক্ষেত্রে ভালোবাসার চাইতে অক্ষমতার পাল্লা ভারী থাকে।সেই পাপটাই আমি করেছি।এখন পুড়ছিও আমি।তুমি কী আমার জন্য অপেক্ষা করবে,নীরা? আমি ফিরে আসব।প্রতিজ্ঞা করছি,কোনো একদিন আমি ফিরে আসব।আজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে রাতের আধারে পা বাড়াচ্ছি,কোনো একদিন সম্রাটের মতো আসব।তুমি কী ততোদিন আমাকে মনে রাখবে নীরা?
আমার বইগুলো সব তোমায় দিয়ে দিলাম।যত্ন করে রেখো।নিজের যত্ন নিয়ো,ভালো থেকো।আশা করছি খুব শীঘ্রই দেখা হবে।
প্রিয় নীরা,ভালোবাসি।
ইতি
রেদোয়ান।
চিঠিটা পড়ে হাহাকার করে উঠলো কুসুম।কত ভালোবাসে লোকটা! নীরাপু কত ভাগ্যবতী!কুসুমের একটু একটু খারাপ যে লাগছে না, তা নয়।শত হলেও তার প্রথম অনুভূতি।নীরা উদাসীন চোখে জানালা দিয়ে চেয়ে রইলো।এই জানালা দিয়েই চিঠি ফেলতো রেদোয়ান।
---" নীরাপু,তোমার কেমন লাগতেসে?"
অমনোযোগী চোখে তাকালো নীরা।
---" কেমন লাগবে?"
---" না মানে,এখন তো জানলাই তোমারে কে চিঠিগুলো দিত।তোমারও কী এখন রেদোয়ান ভাইরে ভালো লাগে? "
---" রেদোয়ান ভাইয়াকে আমার সবসময়ই ভালো লাগতো।চমৎকার একটা মানুষ তিনি।"
---" মানে,আমি এইরকম ভালো লাগার কথা বলছি না,আমি...
কুসুমকে থামিয়ে দিলো নীরা।
---" তুই একটা গাধা কুসুম।আমাকে কেউ এসে ভালোবাসি বলবে আর আমিও লাফাতে লাফাতে বলব ভালোবাসি! এটা কী সম্ভব! তিনি চাকরির জন্য ঢাকায় গেছেন।মেধাবী মানুষ। হয়তো চাকরি পেয়েও যাবেন।তোর কী মনে হয়,তখন আমার মতো একটা গ্রামের মেয়েকে তার মনে থাকবে? কখনোই না।জীবন তো আর নাটক- সিনেমা না।"
---" আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না, নীরাপু। "
কুসুমের মাথায় আলতো টোকা দিলো নীরা।
---" মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি,ঢাকায় যাওয়ার পর রেদোয়ান ভাইয়া পুরোদমে বদলে যাবে। আশেপাশের সুন্দর,শিক্ষিত, আধুনিক মেয়েদের ভীড়ে তোর নীরাপুর কথা তার মনেও থাকবে না।দেখে নিস।"
বিশ্বাস করলো না কুসুম। অবিশ্বাসের সুরে বললঃ" এহ,বলসে তোমারে।উনি মোটেও ওরকম না।"
---" মিলিয়ে নিস আমার কথা।"
---" যদি তোমার কথা না ফলে? যদি রেদোয়ান ভাইয়া আবার আসে?"
---" আমার মনে হচ্ছে আসবে না।"
---" ধরো যদি আসে?তখন?"
---"সেটা তখন দেখা যাবে।যা এখন এখান থেকে।সকাল সকাল তোর সাথে আলাপ করে আমার মাথা ধরে গেছে।দূর হ এখন।"
***
নীরাদের গ্রামের চেয়ারম্যানের নাম কাশেম খান।তিনি টানা দুইবার চেয়ারম্যান হয়েছেন।গ্রামজুরে তার একচেটিয়া জনপ্রিয়তা। তাই চেয়ারম্যান গিন্নি কমলা বানুর অহংকারের শেষ নেই।তার স্বামী লাখে একটা।তার ছেলে মেহরাব কোটিতে একটা।এরকম ভাগ্যবতী মহিলা হতে গেলে সারাজীবন পূণ্য করতে হবে।এই তার ধারণা।
সকাল সকাল কমলা বানু রান্নাঘরের বারান্দায় বসে আছেন।মুখে পান চিবোচ্ছেন,হাতে বানাচ্ছেন নারকেলের নাড়ু।ছেলেটা খুব পছন্দ করে যে! কমলা বানু তার ছেলে মেহরাবের প্রতি বড্ড দূর্বল। এতোটা দূর্বলতা মেয়ের প্রতি নেই।কমলা বানুর কাজের মাঝেই কাশেম সাহেব এলেন রান্নাঘরে।
---" কমলা নাস্তা দেও বসার ঘরে।"
কমলা বানু একবার পানের পিক ফেললেন বাইরে।
---" কেউ কী আইছে?"
---" হুম।ঐ যে পাশের গ্রামে মোখলেস ঘটক আছে না,সে আসছে।"
ঘটকের নাম শুনে কপাল কুঁচকে ফেললেন কমলা বানু।
---" সকাল সকাল ঘটকের কী কাম?"
---" মেহরাবের জন্য একটা পাত্রীর খবর নিয়া আসছে।"
---" আমি হেরে কইছিনি এহন পোলা বিয়া দিমু?"
---" আহা,রাগ করছো কেন? ছেলে- মেয়ে বড় হলে এরা আসেই।"
ফুঁসে উঠলেন কমলা বানু।
---" আপনের আহ্লাদ আপনের কাসেই রাখেন।আমার পোলার বিয়ার বয়স হয় নাই।পোলার বিয়ার বয়স হইলে আমি নিজেই পাত্রী খুঁজুম।কোনো ঘটকের দরকার নাই।আর শুনেন,আপনেও কিন্তু কাউরে কোনো কথা- টথা দিবেন না।পোলারে কষ্ট কইরা বড় করছি।আগে পোলার কামাই খামু তারপর বিয়ার কথা ভাবুম।বউ আইলে কী আর তহন পোলায় বাপ- মায়ের কথা চিন্তা করব?"
কাশেম সাহেব তিক্ত মেজাজে আবারো বসার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।সারা গ্রামে তিনি ডাকসাইটে চেয়ারম্যান। অথচ, নিজের বউয়ের কাছে বিড়াল।দু-টাকার দামও দেয় না কমলা তাকে।কাশেম সাহেব মনে করেন, জীবনের সবচেয়ে অলুক্ষণে সময়ে কমলার সাথে তার বিয়ে হয়েছে।অসহ্য, জাহেল একটা মহিলা।মাথামোটা মহিলা মনে করে পৃথিবীতে সে একাই ঠিক,বাকি সবাই ভুল।
কমলা বানু নাড়ুর থালা হাতে নিয়ে মেহরাবের ঘরে ঢুকলেন।বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ছেলেটা।কমলা বানু পাশে বসে হাত বুলিয়ে দিলেন ছেলের গায়ে।সোনার টুকরা ছেলেটা গ্রামে আসলেই শুকিয়ে যায়।ছেলের মুখের দিকে তাকালে স্বর্গীয় আনন্দ খুঁজে পান কমলা বানু।
অবশ্য মেহরাব গর্ব করার মতোই একটা ছেলে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে এবার। রেজাল্ট এখনো বেরোয় নি।করোনা আসার আগে যখন প্রাইমারি স্কুলে সরকারি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল,তখন শখের বশেই বন্ধুদের সাথে অনলাইনে আবেদন করে মেহরাব।ভাগ্য ভালো থাকায় মেধাবী মেহরাব চাকরিটা পেয়েও গেছে।কিন্তু শিক্ষকতা করা আর হয়নি, করোনার জন্য।স্কুল - কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলে এসেছে গ্রামে।কাজ-কর্ম, পড়ালেখা কিছু নেই।সারাদিন কেবল গ্রামে ঘুরে বেড়ায়।মেহরাব দেখতে খুব সুন্দর।যতটা সুন্দর হলে সচরাচর মানুষের চোখে পরে, ততোটাই সুন্দর।চেহারার মতো আচরণও খুব সুন্দর। কোনো অহংকার নেই ভিতরে।মেহরাবের আরেকটা পরিচয় অবশ্য আছে।সে একজন কার্টন ব্লগার।তার কার্টুনগুলো নেট দুনিয়ায় বেশ জনপ্রিয়।
কমলা বানু ছেলের মাথায় বার কয়েক হাত বুলিয়ে দিলেন।মৃদু স্বরে বললেনঃ" আব্বা,উঠো।তোমার লেগা নাড়ু বানাইছি।খাইবা না?"
মায়ের আদরমাখা ডাকেও উঠলো না মেহরাব।বরং দু- একবার কপাল কুঁচকে আবারো ঘুমিয়ে পড়লো।
আর বিরক্ত করলেন না কমলা বানু।থাক ঘুমাক,ছেলেটা।তার একটামাত্র ছেলে।এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে করবেটা কী?
***
বিকেলে ইশরাক দোকানে বসে অকারণেই খুব রেগে গেল।অবশ্য অকারণে নয়।তার দোকানের সামনে দিয়ে রিমার বাবার ঠিক করা প্রবাসী, তার পরিবার নিয়ে রিমাকে দেখতে গেছে কিছুক্ষণ আগে।রিমার কথা শুনে ইশরাক কালকেই এর খোঁজ নিয়েছিল।তাই মূহুর্তেই চিনে ফেলেছে।ঘটনা এখানেই শেষ নয়।মেয়ে দেখার জন্য মিষ্টি, কেক সব ইশরাকের দোকান থেকেই কিনেছে।ইশরাক না পেরেছে কিছু বলতে,না পেরেছে সইতে।জমিয়ে রাখা রাগটুকু দোকানের কর্মচারীর উপরই দেখালো।অসহ্য লাগছে সব। গ্রামে বিয়ে করার জন্য কি আর মেয়ে ছিল না? রিমাকেই কেন পছন্দ করতে হবে?
বিকালে কুসুম - নীরা একসাথে পুকুর পাড়ে হাঁটছে।রেদোয়ান নেই, তাই তাদের পড়াও নেই।একটামাত্র মানষ নেই বাড়িতে।অথচ, পুরো বাড়িটা কেমন খালি খালি লাগছে।হাঁটতে হাঁটতে পুকুরের সিঁড়ির দিকে চলে গেল দুজনে।ওরা দুজন একসাথে থাকলে অনেক কথা বলে।কুসুম কথা বলতে বলতে এদিক - ওদিক চোখ ঘুরালো। তখনি চোখে পড়লো বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মেহরাবকে।কুসুমের চোখে চোখ পড়তেই মেহরাব উল্টো দিকে হাঁটা দিলো।কপাল কুঁচকে গেল কুসুমের।কুসুম তাদের বাড়ির আশেপাশে প্রায়ই দেখে মেহরাবকে।কী এতো দেখতে আসে মেহরাব? এদিকে দেখার মতো কী আছে?
সময় কত দ্রুত চলে যায়! রেদোয়ান যাওয়ার পর কেটে গেছে ছয় মাস।ছয় মাস! অনেকটা সময়।সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে বহু কিছু।রিমার বিয়ে ভেঙে গেছে।রিমার বাবার প্রবল আগ্রহ থাকলেও অনিচ্ছুক ছিলেন রিমার মা।তিনি কিছুতেই বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবেন না।তাছাড়া, ছেলে বিদেশে ছিল বহু বছর।রিমার সাথে তার বয়সের পার্থক্য অনেক।রিমার মা যখন মেয়ে বিয়ে দিতে আপত্তি জানালেন তখন রিমার বাবা কি তান্ডবটাই না করেছিলেন।তিনি কষ্ট করে মানুষ করেছেন এখন বিয়েও দেবেন তিনি।এখানে রিমার মা কেন কথা বলবে? এতো বড় সাহস তাকে কে দিলো?ইশ! কী ঝামেলাটাই না হয়েছিল কয়েকটা দিন।
রেদোয়ান যাওয়ার পর কারো সাথে যোগাযোগ করেনি।এমনকি ইশরাকের সাথেও না।এ নিয়ে অবাকের শেষ নেই কুসুমের।একটা মানুষ এভাবে হাওয়া হয়ে যায় কি করে? ঢাকা কী জাদুর শহর? নীরা নির্বিকার।যেন এটাই হওয়ার ছিল।কুসুম প্রায়ই নীরার সামনে রেদোয়ানের কথা তুলে।সে অবাক কন্ঠে নীরাকে প্রশ্ন করেঃ" নীরাপু,তুমি কী ভবিষ্যতের কথা জানতে? তোমার কথা কীভাবে মিলে গেল?"
নীরা তখন মুচকি হাসে।বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলেঃ" এটাই হওয়ার ছিল, কুসুম।তিনি নিশ্চয়ই এতোদিনে চাকরি পেয়েছেন।চাকরি না পেলে গ্রামে চলে আসতেন।তিনি এখন তার সমকক্ষ একজন খুঁজবেন।আমি তো তার সমকক্ষ নই।"
ক্ষোভ জমে কুসুমের মনে।মাত্র ছয় মাসে যে ভুলে যায়,সে কী করে এতো ইনিয়ে বিনিয়ে চিঠি লিখে? আবার বলে ফিরে আসবে! এই কী ফিরে আসার নমুনা?রেদোয়ানকে এখন কুসুমের ঠকবাজ মনে হয়।চিঠি ভরে কেবল ছলনার কথা লিখে গেছে।মেয়েরা ছল করলে তাদেরকে ছলনাময়ী বলা যায়।কিন্তু পুরুষদেরকে কী বলা যায়?তাদেরকে কী প্রতারক বলা যায়? তবে কী রেদোয়ান প্রতারক? ভাবতে পারে না কুসুম।রেদোয়ানকে এখনো ঘৃণা করতে পারে না।তার কথা মনে হলেও শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসে।
এই কয়েকমাসে অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে তওসিফের।আজকাল তাকে ঘরেই বেশি দেখা যায়।সবার সাথে সম্পর্ক ভালো হয়েছে।নীরা-কুসুম প্রথমে অবাক হয়েছিল খুব।এতো পরিবর্তন! অবিশ্বাস্য! তবে তারাও মানিয়ে নিয়েছে।আজকাল সন্ধ্যার পর ঘরে চায়ের আড্ডা খুব জমে।কোনোদিন চায়ের সাথে মুড়ি-চানাচুর,আবার কোনোদিন চিড়ে ভাজা।অথবা, ইশরাক বাজার থেকে ফেরার পথে নোনতা বিস্কিট নিয়ে আসে।সেই বিস্কিট চায়ে ভিজিয়ে গল্পে মাতে ছয় ভাই-বোন।ইরা- তোহা- টুনি এই তিনজন তওসিফের একনিষ্ঠ ভক্ত।কতোদিন পর তারা মেজ ভাইকে আগের মতো পেয়েছে।তাই আঠার মতো লেগেই থাকে তওসিফের সাথে।
মেহরাবের আচরণ এখন চোখে পড়ার মতো।আজকাল তাকে নীরাদের বাড়ির আশেপাশে প্রায়ই দেখা যায়।কখনো ব্যস্ত সকালে আবার কখনো অলস বিকালে।মেহরাবের সারাদিন কোনো কাজ থাকে না।তাই এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে কেবল টইটই করে বেড়ায়।তবে,এ গ্রামে থাকলে তাকে ঘুরেফিরে সেই নীরাদের বাড়ির পিছনেই দেখা যায়।বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা।এই দৃশ্য অনেকের চোখেই পরেছে।নীরার চোখে পরেছে কয়েক মাস আগে।
বর্ষা তখন সবে বিদায় নিয়েছে।এমন এক বিকালে নীরা ঘরে বসে ছিল একা। হাতে কোনো কাজ না থাকায় জানালা দিয়ে বাইরের বাঁশ গুনছিল।এমন সময় কুসুম এলো ঘরে।
---" নীরাপু চল একটু ঘুরে আসি।"
---" কই যাবি?"
---" চল কবরস্থানের দিকে যাই।"
নীরা খুব ভীতু মেয়ে।তাই রাজি হয় না।
---" না সেদিকে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।মাগরিবের আগে কবরস্থানে যাওয়া ভালো না।"
---" আরে চল না।কবরের কাছে যাব না।কবর থেকে একটু দূরে একটা বকুল ফুলের গাছ আছে।গাছটা ওখান থেকে তুলে উঠোনে লাগাব।শুধু গাছটা তুলতে যতক্ষণ লাগে ততোক্ষণই থাকব।চল না।"
নাছড়বান্দা কুসুমের সাথে পেরে উঠে না নীরা।তাই পা বাড়ায় কবরস্থানের দিকে।
কুসুম গাছ তুলতে ব্যস্ত।নীরা ভীত চোখে চারদিকে দেখে।নীরা বরাবর কবরস্থান থেকে দূরে থাকে।চোখ বুলিয়ে আশপাশ দেখতেই, নজরে আসে মেহরাবকে।নীরা অবাক হয় খুব।তার মনে হচ্ছিল, মেহরাব নজর বাঁচিয়ে তাদেরকেই দেখছে।তবে খুব বেশি ভাবে না নীরা।মাগরিবের আগেই পা বাড়ায় ঘরের দিকে।এ তো গেল একদিনের কথা।এরপর থেকে প্রায়ই নীরার নজরে পরতো মেহরাব।নীরাদের পুকুরের বিপরীতে যে বড় রাস্তা আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকত সে।একদিন নীরা-কুসুম একসাথে পুকুর পাড়ের জামগাছের নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। মেহরাবও দাঁড়িয়ে ছিল বড় রাস্তায়। তাকে প্রথমে নজরে আনে কুসুম।সাথে সাথেই তার মেজাজ খারাপ হয়।সমস্যা কী এই লোকের?
---" নীরাপু,দেখ তো ওই লোকটা এতোক্ষণ আমাদেরকেই দেখছিল না?"
---" আমার মনে হয় আমাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল।"
---" কী দেখে এতো?"
---" মনে হচ্ছিল আমার নজর বাঁচিয়ে তোকে দেখছিল।"
---" আমার তো মনে হয় আমাকে পাহারা দিয়ে তোমাকে দেখছিল।ছেলে কী ট্যাড়া নাকি?"
ফিচেল হাসে নীরা।কৌতুক করে বলেঃ" তোকেই দেখছিল আমি নিশ্চিত।"
কুসুম কম কীসে? সেও হেসে বলেঃ" ফাইজলামির একটা লিমিট আছে,নীরাপু।তুমি সুন্দর, আমার চাইতে বড়, শিক্ষিত। তো তোমাকে রেখে আমাকে কেন দেখবে?"
এরকম প্রায়ই মেহরাবকে দেখে নিজেদের মধ্যে কথা বলে ওরা।মেহরাব শুধু ওদের নজরেই না একদিন তওসিফের নজরেও পরে।তওসিফ প্রায়ই দেখে চেয়ারম্যানের ছেলেকে বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে।প্রথম প্রথম কিছু মনে করেনি সে।কিন্তু একসময় দেখলো নীরা-কুসুম যখন বাড়ির পুকুরপাড় বা কবরস্থানের দিকে যায়,ঠিক তখনই মেহরাবকে দেখা যায়।সেই সময় খটকা লাগে।প্রত্যেক দিন তো আর কাকতালীয় হতে পারে না।
তওসিফ তাই গোপনে জয়নব বেগমকে হুশিয়ার করে দেয় সে।জয়নব বেগম নিজেও সচেতন মা।বাড়ির মেয়েদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি না।তাই এক রাতের বেলা নীরা-কুসুমের ঘরে যান।
---" তোরা কালকে থেকা পুকুরপাড়ে যাবি না।"
অবাক হয়ে যায় দুজনে।
---" কেন মেজমা?"
---" আমি না করছি তাই যাবি না।আর কুসুম কবরস্থানে যাইতে হইলে ভোরের দিকে যাবি।বিকালে যাতে ওইদিকে যাইতে না দেখি।আমার কথা না শুনলে দুইটার পা ভাইঙা ঘরে বসায়া রাখুম।"
নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয় ওরা।কুসুম ভেবেই পায় না এতো কঠোর কেন মেজমা?
তার দুদিন পরে বিকেল বেলা,নীরা একা একা উঠোনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।কুসুম কোথায় যেন গেছে।এমন সময় নীরা দেখে মেহরাবকে।সদর দরজা দিয়ে ধীর পায়ে নীরাদের বাড়িতে ঢুকছে সে।নীরার কাছে এসেই নিসংকোচ আবেদন করে।
---" আমাকে একগ্লাস পানি খাওয়াবে নীরা?"
নীরা প্রথমে হতভম্ব হলেও পরে দ্রুত পায়ে পানি আনতে ছুটে। মেহরাব খুব সুন্দর করে পানি খায়।খাওয়ার পরে নীরাকে কিছু বলতে যাবে, এমন সময় সেখানে আসে কুসুম।কুসুমকে দেখে আর কিছু বলে না মেহরাব।গ্লাস ফিরিয়ে দিয়ে আবার সদর দরজার দিকে পা বাড়ায়।নীরা নিশ্চিত হয় কুসুমকে দেখেই কিছু বলেনি মেহরাব।নাহয় বলতো।
সেদিন থেকেই কেন যেন নীরার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়,নীরাকে দেখতেই মেহরাব রোজ এদিকে আসে।মনে মনে একটু রোমাঞ্চ অনুভব হয় নীরার।আর দশটা সাধারন মানুষের মতো নীরাও সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট। তাই সহজেই মেহরাবের সৌন্দর্য দাগ কাটে নীরার মনের গভীরে।এমন সুন্দর একটা মানুষ যদি হয় ভবিষ্যত, তবে কিন্তু মন্দ হয় না।
***
রাত নয়টা।শহরে এটুকু রাতকে সন্ধ্যা হিসেবেই ধরে।তবে,গ্রামের হিসাব ভিন্ন।গ্রাম শহরের মতো এতোটা নিশাচর হয়নি এখনো।বাংলাদেশের প্রায় গ্রামগুলো ঘুমিয়ে পরে সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই।চেয়ারম্যান বাড়িতে আজ এখনো কেউ ঘুমায়নি।মেহরাব কী যেন করছে ঘরের দরজা লাগিয়ে।কমলা বানু রান্নাঘরে খাবার গরম করছেন।রাতে খাওয়া হয়নি কারো।ঘরের ছুটা কাজের লোকগুলো চলে গেছে।কমলা বানু কাজের লোক পছন্দ করেন না।ঘরে কাজের লোক কেন রাখতে হবে?কাজের লোকই যদি রাখতে হয় তবে ঘরের মহিলাদের কাজ কী?তারা কী পায়ের উপর পা তুলে খাবে নাকি? ছিঃ! কি বিচ্ছিরি ব্যাপার।তাই কমলা বানুর জন্য বাড়িতে স্থায়ী কোনো কাজের লোক নেই।দু-তিনটে ছুটা কাজের লোক আছে। তারা ক্ষেত-খামারের কাজ করে।কমলা বানুর অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেল রান্নাঘরের চুলা ঠেলে।
চেয়ারম্যান, কাশেম খান তার শোবার ঘরে। তার একটা ইজি চেয়ার আছে।এটা বড় শখের জিনিস।তিনি যখনই খুব চিন্তায় থাকেন,এখানে আয়েশী ভঙ্গিতে বসে থাকেন।আজো বসে আছেন।ইদানিং একটা বিষয় নিয়ে তিনি খুব চিন্তায় আছেন।চিন্তার বিষয় দিন দিন বেড়েই চলেছে।
মেহরাবকে আজকাল শুধু মাছ ব্যাপারীদের বাড়ির আশেপাশে দেখা যায়।ব্যাপারটা শুধু একদিন হলে কথা ছিল।প্রায়ই দেখা যায় ওকে।বিষয়টা দৃষ্টিকটু।কাশেম খানের শত্রুর অভাব নেই গ্রামে।তাদের অনেকের চোখেই পড়েছে।কানা-ঘুষাও করছে তারা।মাছ ব্যাপারীদের বাড়িতে বিবাহযোগ্য মেয়ে আছে।মেহরাব জোয়ান ছেলে।তাই দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে কষ্ট হয় না কারো।এ নিয়েই চিন্তায় আছেন কাশেম খান।যদি একটা বদনাম তুলে দেয়,তখন কী হবে?কপালের ঘাম ছুটে যায় কাশেম খানের।বহুদিনের সঞ্চিত সম্মানের প্রাসাধ ভেঙে পরতে দু-মিনিট সময় লাগবে না।ছেলেটা যে আসলে কী করে!
কমলা বানু ঘরে ঢুকলেন ঘন্টাখানেক পর।পানদানী হাতে নিয়ে এসেছেন তিনি।কাশেম সাহেব ভাত খাওয়ার আগে প্রতিদিন পান খান।কমলা বানু খাটের উপর পানদানী রেখে এগিয়ে গেলেন ঘরের উত্তর দিকের জানালার দিকে।জানালার বাইরে অনেক ঝোপঝাড়। রাতের বেলায় অনেক জোনাকি পোকা দেখা যায় সেখানে।এরা চোখে দেখতে সুন্দর। কিন্তু যখন সমস্বরে কোরাস গায়,তখন তা মোটেও কানের জন্য সুখকর হয় না। কমলা বানু জানালার পাল্লা দুটো টেনে ভিতর থেকে লাগিয়ে দিলেন।জোনাকি পোকার ডাক তার সহ্য হয় না।
কাশেম সাহেব কমলাকে দেখতে পেয়ে বললেনঃ" কমলা, মেহরাব খেয়েছে?"
---" না।কি যেন করে,কইছে পরে খাইব।"
---" এদিকে এসে একটু বসো তো,কথা আছে।"
কমলা বানু স্বামীর কাছে এসে খাটের উপর বসলেন।চুন,সুপারি,জর্দা দিয়ে পান বানাতে বাবাতে কান দুটোকে খাড়া করে রাখলেন কাশেম সাহেবের কথা শোনার জন্য।
---" কমলা, মেহরাবের মতিগতি ইদানিং আমার ভালো লাগছে না।"
স্বামীর হাতে পান তুলে দিয়ে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ " কেন,কী করছে হেয়?
---" তোমার ছেলে বোধহয় বিয়ে করতে চায়।"
অবাক হয়ে গেলেন কমলা বানু।কিন্তু তা কয়েকটা সেকেন্ডের জন্য। কয়েক সেকেন্ড পর অবাক পরিণত হল রাগে।মেহরাব বিয়ে করতে চাইলে নিশ্চয়ই তাকে বলত।এসব নিশ্চয়ই কাশেম সাহেবের চালাকি।ছেলেটাকে বিয়ে দেয়ার জন্য একেবারে উঠে-পড়ে লেগেছে।
---" আপনে অন্য কোনো কথা থাকলে কন।আমার পোলার বিয়ার বয়স হয় নাই।এডি আপনে বানায়া বানায়া কইতাসেন।"
রাগে ফুঁসে উঠলেন কাশেম সাহেব।এই মহিলা এতো বেশি কেন বুঝে! তিনি আছেন তার চিন্তায়,আর এই মহিলা আছে আজগুবি সব ভাবনা নিয়ে।হাহ! অসহ্য।কাশেম সাহেব থমথমে গলায় বললেনঃ" বাজে কথা যদি বলতে হয়, তবে উঠে যাও এখান থেকে।আমার চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।তোমাকে ডেকেছিলাম একটু পরামর্শ করতে। কিন্তু তুমি তো সেই মহিলা না।যাও এখান থেকে।মেজাজ খারাপ করো না আমার।"
কমলা বানু চিনেন এই কন্ঠ।তাই একটু দমে গেলেন।কাশেম সাহেব এমনিতে খুব ঠান্ডা মানুষ।তবে রাগ উঠলে তখন মানুষ খুন করার ক্ষমতা রাখেন।তাই কমলা বানু মিনমিনে সুরে বললেনঃ" রাগেন কেন?কী হইছে খুইলা কন? মেহরাব কী উল্টা - পাল্টা কিছু করছে?আমার পোলা তো ওইরকম না।"
---" মেহরাবকে আজকাল শুধু মাছ ব্যাপারীদের বাড়ির আশেপাশে দেখা যায়।বাইরে থেকে ওদের বাড়ির দিকে উঁকি দেয়।"
প্রথমে বিশ্বাস করলেন না কমলা বানু।অবিশ্বাসের সুরে বললেনঃ" কি কইতাছেন এগুলি?আপনে নিজের চোখে দেখছেন নাকি কেউ আপনেরে কইসে?"
---" প্রথমে লালুর মুখে শুনেছি।তারপর একদিন নিজের চোখে দেখেছি।ঘটনা সত্যি।"
---" কী দেখতে যায় হেনে?"
---" বুঝো না কী এতো দেখতে যায়? সব ভেঙে বলা লাগবে কেন? ওদের বাড়িতে বড় একটা মেয়ে আছে,কি যেন নাম ভুলে গেছি।"
---" কার কথা কন? কুসুমের? ওই যে শ্যামলা কইরা মাইয়াডা,আমগো নূরের বান্ধবী?"
---" নাহ।কুসুম তো ছোট। ওর বড় একটা বোন আছে।"
---" নীরার কথা কন?"
---" নাম জানি না আমি।হতে পারে।"
কমলা বানুর চোখের উপর ভেসে উঠলো নীরার মুখখানি।কুসুমের একটা বোন আছে।বেশ সুন্দর চেহারা।যাক,ছেলের রুচি আছে তবে।
কাশেম সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।তারপর যখন কথা বলার জন্য মুখ খুললেন,তখন তার গলায় ফুটে উঠলো আক্ষেপের সুর।
---" কত আশা করেছিলাম, ছেলেকে বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে দেব।আনিসকে মনে আছে তোমার?ঐ যে আমাদের বাসায় আসতো,স্বর্ণের ব্যবসা করতো।ওর মেয়েটা কি সুন্দর।শিক্ষিত অনেক।অনার্সে পড়ছে বোধহয়।ঐ মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ ছিল।বউ করে ঘরে আনলে সারা গ্রামের মানুষ হুমরি খেয়ে পরতো।"
---" থাক কি করবেন এহন।পোলায় পছন্দ করছে।এর মাঝে তো আমগো কিছু করার নাই।আর নীরাও খারাপ না। সুন্দর,ভদ্র।চিনি আমি ওরে।"
---"তবুও,মেয়ের পরিবার আমাদের থেকে অনেক নিচু।মাছের ব্যবসায়ী, হাহ!আমার বেয়াই হবে মাছের ব্যবসায়ী!লজ্জার কিছু থাকবে না।বেয়াইকে নিয়ে আমি কোথাও যেতে পারব?"
---" থাক কী করবেন এহন।পঁচা শামুকে পাও কাটছে পোলায়।এহন কী করন যাইব? পাও কাইট্টা ফালায়া দিবেন নাকি হাঁটা বন্ধ কইরা পায়ের দিকে তাকায়া থাকবেন?"
---" সেটাই।"
---" আমি কী জিগামু মেহরাবরে?এমনো তো হইতে পারে,আমরা যা ভাবতাছি বা দেখতাছি তা ঠিক না।সত্যিডা হয়তো অন্যকিছু।"
---" না, কমলা।ওর আচরণ ঠিক লাগছে না।অনেক মানুষ কানাঘুষা করছে।এতোজনের একসাথে ভুল।হতে পারে না।"
***
নীরাদের ঘরে সবাই ভাত খেতে বসেছে।সবাই বলতে বাড়ির পুরুষেরা।নীরার বাবা-চাচারা চার ভাই ও তওসিফ।ইশরাক অনুপস্থিত এখনো।জয়নব বেগম ভাত বেরে দিচ্ছেন,শাহানা বেগম সব এগিয়ে দিচ্ছেন।নীরাদের খাবারের ঘরটা ছোট,তাই সবাই একসাথে বসে খেতে পারে না।
নীরা ঘরের এককোনে বসে পিটুশকে কথা শিখাচ্ছে।
---" পিটুশ বল, আমার নাম পিটুশ।আ মা র না ম পি টু শ।"
পিটুশ কি বুঝলো কে যানে! নীরার কথায় তাল না মিলিয়ে ঝিমাতে শুরু করলো।নীরা বিরক্ত হলো খুব।ওই পিটুশটা একটা পাজি।নীরা যা বলে পিটুশ কখনোই তা বলে না।অথচ, কুসুম যাই শেখাবে তাই বলবে।ফাজিল তোতাপাখি।
জয়নব বেগম নীরাকে হাঁক দিয়ে বললেনঃ" নীরা,যাতো ইশরাকরে ডাইকা নিয়ায়।পোলাডা কী খাইবো না?"
নীরা পা বাড়ালো ইশরাকের ঘরের দিকে।যদিও অন্ধকার রাতে অন্ধকার উঠোনের মাঝ দিয়ে ইশরাকের ঘরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তার।তবুও মা যেহেতু বলেছে,তাই অগত্যা যেতেই হবে।
ইশরাক একা ঘরে রিমার সাথে কথা বলছে।রিমার বাবা ঘুমিয়ে গেছে তাই রিমা ফোন দিয়েছে ইশরাককে।ইশরাক ফোন হাসিমুখে ধরলেও এখন বিরক্তিতে ছেয়ে গেছে মেজাজ।রিমার বাবা আবার এক পাত্র ধরে এনেছে। ছেলে শিক্ষক।পাশের গ্রামের হাইস্কুলে চাকরি করে।ইশরাক ভেবে পেল না, রিমার বাবা এতো পাগল কেন হয়ে গেছেন,আশ্চর্য!আর তাছাড়া ছেলে খুঁজবে ভালো কথা। গ্রামে ইশরাকের মতো একটা সুপাত্র আছে,সেদিকে কেন চোখ দিচ্ছে না এই লোক? ইশরাককে কী তার চোখে পড়ছে না?
এমন সময় ঘরে এলো নীরা।
---" ভাইয়া তোমারে আম্মা ডাকে।"
---" কেন? "
---" ভাত খাবা না?"
---" যা,তুই আসতেছি।"
---" এক্ষুনি যাইতে বলছে কিন্তু।"
---" আচ্ছা,যা তুই।"
নীরা আবার খাবার ঘরের দিকে ছুটলো নীরা।আজ নাকি অমাবস্যা। তাই চারদিকটা অন্ধকার।নীরা ভীত পায়ে উঠোনের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ পরলো রেদোয়ানের ঘরের দিকে।ঘরটা বাইরে দিয়ে আঁটকে দেয়া। কী যেন ভেবে নীরা সেদিকে গেল।আলতো হাতে খুলে দিল ঘরের দরজা। বন্ধ ঘর ভ্যাপসা গন্ধে ভরে আছে।নীরা বাতি জ্বেলে টেবিলের কাছে গেল। টেবিল ভর্তি গল্পের বই।রেদোয়ান খুব পড়ুয়া ছেলে।নীরা চোখ বুলিয়ে পুরোটা ঘর দেখলো।চেয়ারগুলোতে হাত বুলিয়ে দিল।তারপর হাতে তুলে নিল সবার উপরে থাকা চরিত্রহীন বইটা।রেদোয়ান শরৎচন্দ্রের বিশাল ভক্ত।নীরা বইয়ের পাতা উল্টে ফেললো।এই বইটা তার পড়া হয়নি।অবশ্য পাতা উল্টে খুব অবাক হলো নীরা।কারণ, সেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল,
"তোমাকে দেখলে হাজারবার চরিত্রহীন হতে ইচ্ছে করে নীরা।
সকাল থেকে একটু একটু ঠান্ডা পড়েছে।সূর্যের আলোর ঝাঝালো তাপ নেই।নিস্তেজ তাপে মেঘনা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন নীরার বাবা, কামরুল হোসেন।এমনিতেই ঠান্ডা তার উপর নদীর পাড়।বেশ ঠান্ডাই লাগছে তার।ভয়ংকর বাতাসে হাঁড়ে কাপন ধরার জোগাড়। এ বাতাস যেন শীতের আগমনী বার্তা।
কামরুল সাহেবের নাজুক স্বাস্থ্য। বেশি ঠান্ডা বা বেশি গরম কোনোটাই তার সহ্য হয় না।চার ভাইয়ের মধ্যে মেজ হলেও সবার আগে বুড়িয়ে গেছেন তিনি।প্রতিদিন নদীর পাড়ে আসতেও ভালো লাগে না।ইচ্ছে করে সারাদিন কাঁথা মুরি দিয়ে অলস সময় কাটাতে।কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়।তার পিছুটান অনেক।দুটো মেয়ে, একটা স্ত্রী। কাজ না করলে তার চলবে কেন?তাই হাজার অসুস্থতা, হাজার শখ - আহ্লাদ মাটি দিয়ে প্রতিদিন চলে আসেন নদীর পাড়ে।একটু আত্মত্যাগে যদি স্ত্রী-সন্তান ভালো থাকে, তবে তাই হোক।
কামরুল সাহেব একটু অমনোযোগী হতেই একজন জেলে ফস করে একটা ঢাউস সাইজের রুই মাছ সরিয়ে ফেলল।এখানে যেই দামে বেচতে হবে বাজারে তারচেয়ে তিনগুন বেশি দামে বেচা যাবে।তবে দৃশ্যটি চোখ এড়ালো না কামরুল সাহেবের।এতো বছরের অভিজ্ঞতায় যদি এতুটুকু চালাকি না ধরতে পারেন, তবে তিনি কীসের মাছ ব্যাপারী?কামরুল সাহেব আসামি জেলেটাকে ডেকে বললেনঃ" মাছটা দিয়া দে।"
মুখের রঙ উবে গেল জেলের।তবুও অস্বস্তি চেপে রেখে বললঃ" সব মাছই তো দিলাম। আবার কীয়ের মাছ চান?"
---" যেই রুই মাছটা বদির পাতিলে লুকাইছোছ ওইটা।"
---" কসম কোনো মাছ লুকাই নাই।"
---" আচ্ছা, ঠিকাছে দিস না।ভাবছিলাম তোরে ওই মাছের লেগা দুইহাজার টাকা বাড়ায়া দিমু।তয় তুই যখন চাস না....
লোভে চকচক করে উঠলো জেলের চোখ।সে তড়িঘড়ি করে বললঃ" এবারের মতো মাফ কইরা দেন ভাই।ভবিষ্যতে আর এমন করুম না।এহনি মাছ আইনা দিতাছি।"
মনে মনে হাসলেন কামরুল সাহেব।ব্যাটার লোভ কত! এই মাছ বাজারে নিলে অনায়াসে চার হাজার টাকা বিক্রি হবে।দুহাজারের লোভেই তাকে দিয়ে দিল।গাধা কোথাকার।
বোধহয় সকাল এগারোটা বাজে। কামরুল সাহেব ও তার বড় ভাই ইদ্রিস আলী আড়তে বসে আছেন।তাদের দুজনের কাজ আপাতত শেষ।তবুও বাড়ি না যেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন।এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন চেয়ারম্যান কাশেম খান।কামরুল সাহেব ও ইদ্রিস আলী অবাক হলেন খুব।তারা সাধারনত উঁচুস্তর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের থেকে দূরেই থাকেন।অবাক হলেও তা প্রকাশ করলেন না ইদ্রিস আলী। এগিয়ে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানালেন।
---" আসসালামু আলাইকুম ভাই।কি খবর?"
কাশেম খান এগিয়ে যেয়ে হাত মেলালেন।মুচকি হেসে বললেন,
---" আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। আপনারা,কেমন আছেন?"
---" আমরাও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।হঠাৎ এইদিকে যে? মাছ কিনতে আসছেন নাকি?"
---" না ভাই।আপনাদের কাছে অন্য একটা দরকারে এসেছি।একটু বসে কথা বলার সময় হবে?"
ইদ্রিস আলী অবাক হলেও মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে বললেন বাহিরে তিনটে চেয়ার পেতে দিতে।ভিতরে অনেক আঁশটে গন্ধ।ইদ্রিস আলী ও কামরুল সাহেবের সহ্য হলেও কাশেম খানের সহ্য হবে না। তাই এই ব্যবস্থা।
কাশেম খান, কামরুল সাহেব ও ইদ্রিস আলী বসার পর, কাজের ছেলেটা তিনকাপ চা এনে দিল।কাশেম খান চায়ে লম্বা এক চুমুক দিয়ে কথা শুরু করলেন।
---" আমি আসলে আপনাদের কাছে এসেছি আপনাদের বাড়ির বড় মেয়ে নীরার বিষয়ে কথা বলতে।ওতো কলেজে পড়ে শুনলাম।তার মানে আঠারো বছর হয়েছে।মেয়ের বিয়ে-সাদির চিন্তা - ভাবনা করছেন নাকি?"
ভয়াবহ অবাক হলেন দুই সহোদর। আজ বোধহয় তাদের অবাক হওয়ার দিন।কামরুল সাহেব অবাক কন্ঠেই বললেনঃ" হ, নীরার আঠারো বছর হইছে কিন্তু আমরা এহন তার বিয়া দিতে চাইতাছি না।তার মায়ের ইচ্ছা মাইয়া অনেক পড়ব,তারপর বিয়া দিব।আমারো ওই একই ইচ্ছা।কেন? কিছু হইছে?"
---" না,না কিছু হয়নি।আপনারা যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা বলতে চাই।"
ইদ্রিস আলী শশব্যস্ত হয়ে বললেনঃ"অনুমতি নেয়ার কি আছে ভাই? আপনে কন কী কইবেন।"
---" আমি নীরা মাকে আমার মেহরাবের বউ হিসেবে নিতে চাই।"
সহসা কোনো কথা বলতে পারলেন না কামরুল সাহেব ও ইদ্রিস আলী। এ তাদের কল্পনাতীত।এটা এমন একটা প্রস্তাব, যা মেনে নিতে কষ্ট হবে আবার সরাসরি প্রত্যাখান করাও সম্ভব না।ইদ্রিস আলী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেনঃ" আপনে চিন্তা-ভাবনা কইরা কইতাছেন? না মানে আমি বুঝাইতে চাইতাছি,আমগো ও আপনাগো মাঝে অনেক তফাৎ। তারউপর মেহরাব বাবা অনেক শিক্ষিত,চাকরি ভালো, অনেক বছর ঢাকা ছিল।আমগো নীরার এইসব কিছুই নাই।হয়তো একটু সুন্দর, এই আরকি।তাই বলতাছিলাম।"
কাশেম খান আশ্বাসের ভঙ্গিতে হাসলেন।
---" আপনি চিন্তা করবেন না।আমি সবকিছু চিন্তা করেই বলেছি।"
কামরুল সাহেব এবার মুখ খুললেন।
---" আপনে মেহরাব বাবার লগে কথা কন।এহনকার দিনে পোলাপানের মতামত না থাকলে সংসারে সুখ হয় না।আগে আমগো সময়ে তো বাপ - মা যেই মাইয়ার কথা কইছে তারেই বিয়া করতে হইছে।এখন আবার দিন-দুনিয়ার ভিন্ন স্বাদ।মেহরাব বাবা তো অনেক বছর ঢাকা ছিল সেখানে তার পছন্দ থাকতেই পারে।আপনে তার সাথে যদি আগে আলোচনা করতেন তাইলে ভালো হইতো আরকি।"
এক্ষেত্রে একটু মিথ্যা বলতে হলো কাশেম খানকে।কারণ,তিনি এখানে এসেছেন তা মেহরাব কেন কমলা বানুও জানে না।কাউকে না জানিয়ে একটা অপ্রিয় কাজ করতে এসেছেন তিনি।তবুও মাথা নেড়ে বললেনঃ" আমি সবার সাথে আলোচনা করেই এসেছি।মেহরাব রাজি না হলে এতো তাড়াতাড়ি ওর বিয়ের কথা ভাবতাম না আমরা।আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।এখন আপনাদের ইচ্ছা।মেয়ে আপনাদের, চিন্তা-ভাবনাও আপনাদের।সময় নিন। সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে জানাবেন।আমি অপেক্ষা করব।"
কাশেম খান উঠে গেলে চিন্তায় পরে গেলেন দুই ভাই।কী করা উচিৎ এখন?
***
দুপুর বেলা দেবর,ভাসুর, স্বামী সবাইকে একসাথে বাড়িতে ফিরতে দেখে অবাক হলেন জয়নব বেগম।সাধারণত, তারা একসাথে বাড়িতে ফিরে না।তাছাড়া,কামরুল সাহেবের চেহারাটা কেমন যেন শুকনো শুকনো ঠেকছে।কামরুল সাহেব ঘরে ঢুকে গায়ের ফতুয়া পাল্টানোর সময় জয়নব বেগম জিজ্ঞেস করেই ফেললেনঃ" কী হইছে আপনের? কোনো সমস্যা? "
---" না। দুপুরের খাবার একটু তাড়াতাড়ি দিও তো।আর তুমিও হাতের কাজ শেষ কইরা রাইখো।জরুরি কথা আছে।"
কি কথা তা আর জিজ্ঞেস করলেন না জয়নব বেগম।সময় হলেই বরং জানা যাবে।
নীরার বিয়ের কথা উঠলো খাওয়ার সময়।নীরা,কুসুম,ইরা,তোহা ছাড়া এখানে বাড়ির সবাই উপস্থিত।ইদ্রিস আলীই প্রথমে কথা পারলেন।
---" জয়নব, আমগো নীরার লেগা একটা সম্বন্ধ আইছে।"
---" মাইয়া বড় হইছে,এইগুলি আইবই।পোলা কে?"
---" চেয়ারম্যান বাড়ির পোলা মেহরাব।"
মেহরাবের নাম শুনে অবাক হলেন সবাই। নীরার সেজ কাকা,জাভেদ ভাত চিবোতে চিবোতে বললেনঃ" মাশাল্লাহ, পোলা তো ভালো।আমগো নীরারে দেখছেনি হেয়?"
পাশ থেকে কথা বলল তওসিফ।
---" ওই ছেলে কয়েকদিন আগে বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়িতে উঁকি দিত।আমি নিজের চোখে দেখেছি।এরকম ছেলে ভালো হবে না।নিষেধ করে দিও মেজ কাকা।"
তওসিফকে ভয়ানক এক ধমক দিলেন জাভেদ সাহেব।আঙুল উঁচিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললেনঃ" মাইনষের পোলারে খারাপ কওয়ার আগে নিজের দিকে তাকা হারামজাদা।ওর যেই যোগ্যতা তা আগে তূই পারলে অর্জন কইরা দেখা।তারপর বড় বড় কথা কইছ।"
বাবার কথার দিকে মনোযোগ দিলো না তওসিফ।সবাই বিশ্বাস করলেও তার বাবা এখনো তাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি।তাই কিছু না বলে চুপচাপ ভাত খেতে শুরু করলো।জয়নব বেগম দেখলেন মূল কথা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সবাই।তাই ইদ্রিস আলীর মনোযোগ আকর্ষণ করে বললেনঃ" ভাইজান আপনেরা কথা-টথা দিছেন নাকি? না দিলে নিষেধ কইরা দেন।এতো তাড়াতাড়ি মাইয়া বিয়া দেয়ার ইচ্ছা নাই আমার।মাইয়ার ব্রেইন ভালো। পড়তাছে, পড়ুক।তাছাড়া, চেয়ারম্যান বাড়িতে গেলে মাইয়া মানায়া নিতে পারব? সম্বন্ধ করতে হয় সমানে সমানে।আমরা তাগো সমান না।এহন আপনেরা কী কন?"
শাহানা বেগম দূরে বসে ছিলেন।তিনি মাথার আঁচল সামনে টেনে দিয়ে বললেনঃ" বুইঝা শুইনা মত দিও ভাবি।মাইয়াগো চাহিদা থাকতে দিয়া দিতে হয়।তারা যহন এতো আগ্রহ করতাছে,তহন এতো ভাইব না।পোলা ভালো,পরিবার ভালো, তারাই কথা উঠাইছে।তাই, আমার মনে হয় অমত না করলেই ভালো হয়।মাইয়া তো বিয়া দিতেই হইব।আজ হোক আর কাল।"
ইদ্রিস আলীও শাহানা বেগমের কথায় তাল মিলিয়ে বললেনঃ"মেজ বউ, দেখ নীরার বিয়া তো দিতেই হইব।এর চেয়ে ভালো সম্বন্ধ আর পাইবা না।তাছাড়া, তারা খুব আগ্রহ করতাছে।স্কুল - কলেজ বন্ধ।পড়ালেখাও তো হইতাছে না।কামরুলের শরীরটাও খারাপ।একটা মাইয়ার যদি গতি করতে পারে তাও ভালো।এখন ভাইবা দেখ,কী করবা।"
জয়নব বেগম কিছু বললেন না।কেবল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন স্বামীর চিন্তিত মুখের দিকে।
***
চেয়ারম্যান বাড়িতে সবাই খেতে বসেছে।সবাই বলতে কেবল মেহরাব,কমলা বানু ও কাশেম খান।কমলা বানু বেছে বেছে মুরগির মাংসগুলো মেহরাবের পাতে দিচ্ছেন।ছেলেটা যে কেন শুকিয়ে যাচ্ছে দিন দিন! কাশেম খান এক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে মেহরাবকে উউদ্দেশ্য করে বললেনঃ"তোমার জন্য একটা সু-খবর আছে মেহরাব।"
---" কী বাবা?"
---" আজকে মাছের আড়তে গিয়েছিলাম।ইদ্রিস আলী, কামরুল হোসেনরে বোধহয় তুমি চিনো।চিনো না?"
---" জ্বি চিনি।"
---" ওনাদের সাথে কথা বললাম আজকে।তোমার বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করে আসলাম,ওই বাড়ির বড় মেয়ে নীরার সাথে।"
কমলা বানু প্রথমে অবাক হলেও পরে খুব খুশি হলেন।বউ হিসেবে নীরাকে তার খুব পছন্দ।তিনি সন্তুষ্টির হাসি হেসে বললেনঃ" আলহামদুলিল্লাহ।মাইয়া হিসাবে নীরা খুবই ভালো।কোনো খারাপ রেকর্ড নাই।"
---" এই জন্যই কথা বলে আসলাম আজ।তারা বলেছে চিন্তা-ভাবনা করে জানাবে।
কাশেম খানের কোনো অভিব্যক্তি নেই।তিনি নির্বিকার।এখানে বিয়ে না হলেই তিনি বরং খুশি হতেন।তবে কমলা বানু খুশি হলেন খুব।এরকম একটা ফুটফুটে মেয়ে তার ঘরে সংসার করবে ভাবতেও ভালো লাগছে।
আর মেহরাব? সে কেবল অবাক চোখে বাবা - মায়ের দিকে চেয়ে রইলো।ভাত খাওয়া বন্ধ করে দুবার অস্ফুটস্বরে নীরার নাম জপ করলো।
চলবে...
Writer:- হালিমা রহমান