গতকাল ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছিলাম আর ছবির ক্যাপশন ছিলো,”এই রোমান্টিক আবহাওয়ায় যার বউ নাই তার কোলবালিশ আছে অথচ আমার বউ কোলবালিশ কোনটাই নাই ”
আজ সকালে দেখি আমার গার্লফ্রেন্ড শ্রাবণী একটা কোলবালিশ নিয়ে আমার অফিসে এসে হাজির। আমায় দেখে মিষ্টি হেসে বললো,
“তোমার তো কেউ নেই তাই তোমার জন্য একটা কোলবালিশ নিয়ে আসলাম”
আমি কিছুটা ভয়ে ভয়ে বললাম,
-পোস্টটা তো আমি মজা করে করেছি। তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন?
শ্রাবণী দাঁতে দাঁত চেপে
- “তোমায় কে বলেছে রোমান্টিক আবহাওয়ায় একা একা থাকতে? এতোদিন বিয়ের কথা বললে বলতে, “আগে পড়াশোনাটা শেষ করি” পড়াশোনা শেষ হবার পর যখন বিয়ের কথা বললাম তখন বলেছো, “আগে একটা চাকরির ব্যবস্থা করি” এখন চাকরি পাবার পর যখন বিয়ের কথা বলি তুমি শুধু এই সমস্যা ওই সমস্যা দেখাও। সত্যি করে বলো তো তুমি কি চাও?”
আমি বিড়বিড় করে বললাম,
-শান্তি চাই।
- “ঠিক বুঝলাম না? কি বলেছো তুমি?”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
- “আসলে সামনের মাসে আমার মামাতো বোনের বাচ্চা ডেলিভারি। ওর বাচ্চাটা হয়ে গেলেই আমরা বিয়ে করে নিবো?”
শ্রাবণী অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- “মামাতো বোনের বাচ্চা ডেলিভারির সাথে আমাকে বিয়ে না করার কি সম্পর্ক?”
কথাটা বলার পর বুঝতে পেরেছি আমি কতবড় বোকামি করেছি। আসলে শ্রাবণীর রাগী চেহারা দেখলে আমি আমার ভিতর থাকি না। সব এলোমেলো হয়ে যায়। জানি না কোন আহাম্মক বলেছিলো মেয়েরা রাগলে সুন্দর লাগে। কিন্তু আমার তো মনে হয় নারী জাতি রাগলে ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মতো লাগে। আমি তখন বললাম,
- আসলে আমার মামাতো বোনটা ৯ মাসের প্রেগন্যান্ট। ও আমায় বারবার বলেছে আমার বিয়েতে নাকি ও নোরা ফাতিহির মতো বেলি ডান্স দিবে। একটাবার কল্পনা করে দেখো আমাদের বিয়ে হচ্ছে আর সেই বিয়েতে সকল মানুষের মাঝে ৯মাসের প্রেগন্যান্ট একটা মেয়ে বেলি ডান্স দিচ্ছে। বিষয়টা কতটা জঘন্য হবে বুঝতে পারছো?
কথাটা শোনার পর শ্রাবণী যখন চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো তখন আমার অফিস কলিগ শাহীন ভাই এসে হাজির। এই লোকটাকে দেখলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি এমনও দেখেছি ৬ বছরের সংসার ভেঙে গেছে উনার এক কথাতে। উনি আমাকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
-“আরে পিয়াস সাহেব, আপনি এখানে। আপনাকে নিয়ে তো পুরো অফিসে আলোচনা হচ্ছে”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-আমাকে নিয়ে আলোচনার কি আছে?
শাহীন সাহেব আমার আরো কাছাকাছি এসে বললো,
- “ GM ম্যাডাম তো আজ উনার দেড় বছরের বাচ্চাটাকে নিয়ে অফিসে এসেছে। বাচ্চাকে দেখে তো আমরা সবাই অবাক। হুবহু আপনার মতো দেখতে। সেইম আপনার মতো নাক, মুখ, কান। সবাই বলাবলি করছে এই বাচ্চাটা আপনার। আর এজন্যই নাকি ম্যাডাম আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা চোখে দেখে। তাছাড়া বহুদিন আগে শুনেছিলাম আফিশিয়াল কাজে আপনারা দুইজন একবার কক্সবাজার গিয়েছিলেন তখন নাকি হোটেলে একটা রুমেই খালি ছিলো। আপনারা নাকি একসাথে একই রুমে রাত কাটিয়ে ছিলেন ।”
কথাটা শুনার পর আমি বিরক্ত হয়ে উনাকে বললাম,
- “আপনি এইসব আজগুবি কথা কোথা থেকে শুনেন?”
শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, মেয়েরা রেগে গেলে সুন্দর লাগে না, সুন্দর লাগে তখন যখন মেয়েরা অনেক কষ্টে কান্না চেপে রাখে। কি ভয়ংকর রকম সুন্দর লাগছে শ্রাবণীকে। শ্রাবণী কিছু না বলে চলে যেতে লাগলো। আমি পিছন পিছন যেতে যেতে বললাম,
-বিশ্বাস করো ম্যাডামের সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া আমার তো বাবা হবার সম্ভাবনাই নেই?
শ্রাবণী আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো,
- “কেন সম্ভাবনা নেই?”
কথাটা বলার পর চিন্তা করতে লাগলাম, এটা আমি কি বললাম! আমি সবসময় উল্টো পাল্টা বেফাঁস কথা বলে বিপদে পড়ি।
শ্রাবণী রেগে বললো,
- “কি হলো চুপ করে আছো কেন?”
আমি কি বললো না বলবো ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করি দেয়ালে একটা পোস্টার আর তাতে লেখা, “ আপনি কি বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন? তাহলে আপনার একমাত্র ঠিকানা হাকিম কবিরাজ। যোগাযোগঃ০১৭—----”
আমি মাথা নিচু করে দেয়ালের পোস্টারটা শ্রাবণীকে দেখিয়ে বললাম,
-আমার উনার কাছে যেতে হয় প্রায় সময়। বাকিটা তুমি বুঝে নাও
শ্রাবণী আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
- “ছিঃ পিয়াস, তুমি এইসব নিয়ে ভয় পাচ্ছো কেন? আমার এইসবের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এইসব আলতু ফালতু কবিরাজের কাছে না গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখালে তুমি ঠিক হয়ে যাবে। এখন চলো আমাকে ফুচকা খাওয়াবে।”-----
—
—---
কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। শ্রাবণীকে নিয়ে যখন ফুচকার দোকানে গেলাম তখন খেয়াল করি আমার মামাতো বোন লামিয়া সেখানে। আমাকে দেখে সে আমার কাছে এসে বললো,
- “উনিই তাহলে শ্রাবণী ভাবি? আচ্ছা তোরা এখনো বিয়ে করছিস না কেন? আমার কতদিনের শখ তোর বিয়েতে আমি নাচ করবো”
শ্রাবণী অবাক হয়ে বললো,
- “তুমি না প্রেগন্যান্ট?”
লামিয়া আরো অবাক হয়ে বললো,
-“ নাউযুবিল্লাহ, আমার তো বিয়েই হয় নি। তাহলে প্রেগন্যান্ট হবো কিভাবে?”
শ্রাবণী রাগে যখন চলে যেতে লাগলো তখন আমি ওর পিছন পিছন এসে ওর হাতটা ধরে বললাম,
- “প্লিজ তুমি আমায় ভুল বুঝো না। আসলে আমি বিয়ে করতে ভয় পাই আমার বাবার জন্য?”
শ্রাবণী চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
- “মানে কি! তোমার বিয়ে করার সাথে আংকেলের কি সমস্যা?”
আবার বেফাঁস কথা বলে ফেলেছি। বেচারা বাবার উপর এখন দোষ চাপাতে হবে। আমি শ্রাবণীকে বললাম,
-জন্মের পর থেকেই দেখেছি বাবা মায়ের উপর অত্যাচার করে। রঞ্জিত মল্লিক প্যান্টের বেল্ট খুলে যেমন গুন্ডাদের মারতো তেমনি প্রতি রাতে বাবা প্যান্টের বেল্ট দিয়ে মাকে মারতো। অথচ মা বাবা প্রেম করে বিয়ে করেছিলো। আমার ভয় হয় বিয়ের পর আমিও যদি বাবার মতো বদলে যায়। তোমার উপর অত্যাচার করি।
কথাগুলো বলে হালকা আবেগে কেঁদে দিলাম। শ্রাবণী আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
“এমন কিছুই হবে না।তুমি যাকে এতো ভালোবাসো তার গায়ে তুমি কখনো হাত উঠাতে পারবে না?”---
—
—---
একদিন সকালে শ্রাবণী আমাদের বাসায় এসে হাজির। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই বাবা রান্নাঘর থেকে বের হয় কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মাকে বললো,
- “ওগো শুনছো? সকালের নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে। তোমার নাস্তা করা হয়ে গেলে আমি প্লেটগুলো ধুয়ে অফিস যাবো।একটু যদি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে”
শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- “হারামি, আমি বিয়ের আগেই আজ বিধবা হবো”---
রাস্তায় আমি দৌড়াচ্ছি আর ভাবছি, “শ্রাবণীকে কি করে বলি বাবাকে দেখে আমার বিয়ের শখ মিটে গেছে। আল্লাহ ৩০টা দিন মা বাবাকে দিয়ে সংসারের সমস্ত কাজ করায়। আমার সাথে যদি এমন হয়। সেই ভয়েই তো বিয়ে করি না…
( সমাপ্ত )
লেখা: আবুল বাশার পিয়াস