খেতে বসে মা বলল-- মুখে কোন রুচি পাই নারে বাজান। শরিষার তেল আর শুকনো মরিচ-পেয়াজ দিয়ে আলু ভর্তা হলে ভাল লাগত।
আমি কিছু বলার আগেই আমার স্ত্রী রুবি ঝাঁঝাল গলায় বলল--মা আলুর কেজি এখন ষাট টাকা। তাছাড়া আলু শর্করা জাতীয় খাবার। শরীরের জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। আপনার আবার ডায়াবেটিস আছে। বুড়ো বয়সে আরো বেশি ক্ষতিকর।
.
.
পরদিন রুবি বলল, বাবা আসবেন তাড়াতাড়ি একটু বাজারে যাও। বাবা বড় গলদা চিংড়ি খুব পছন্দ করেন। গরুর মাংসের সাথে আলুটাও পছন্দ। ভাল দেখে আলু নিয়ে আসবে।
অবশ্য অবশ্যই..
বাজার থেকে আধ ঘন্টা বাদে ফিরলাম।
চিংড়ি দেখে রুবির ভুরু কুঁচকে গেল।
এত ছোট চিংড়ি? তাও আবার হাফ কেজি?
এতদিন পর বাবা এসেছেন আর তুমি কিনা.. বলেই রুবি চিংড়ির পলিথিন আমার দিকে ছুড়ে মারল।
সিক্স পিটানো বলের মত আমি মুহুর্তে চিংড়ির পলিথিন লুফে নিলাম।
বললাম, তোমার বাবা প্রেসার,ডায়াবেটিসের রুগী। চিংড়িতে হাই কোলেস্টেরল। উনার মঙ্গলের কথা ভেবেই ছোট চিংড়ি এনেছি।
আলু কই? বউ হুংকার দিয়ে বলল।
দাড়াও এনেছি। প্যান্টের সাইড পকেট থেকে তিনটি তিনটি মোট ছয়টি মিডিয়াম সাইজের আলু বের করলাম।
বউ হা করে তাকিয়ে রইল। কতটুকু আলু এনেছ?
হাফ কেজি
হাফ কেজি!!হাফ কেজি আলু আনতে তোমার লজ্জা করল না?
লজ্জা করল বলেই তো পকেটে করে এনেছি। আবার কে দেখে ফেলে! আজকালকার দিনে এক আধটু চালাক চতুর না হলে কি চলে, বল ?
হায় আল্লাহ এ কোন আজব প্রানীর সাথে আমারে সংসার করতে পাঠাইছ?
তুমিতো ভাল করেই জানো আলুর কেজি এখন পঞ্চাশ টাকা। তাছাড়া আলু শর্করা জাতীয় খাবার। শরীরের জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। বুড়ো বয়সে আরো বেশি ক্ষতিকর। তাই না?
ওফঃ আজকাল তোমার কাজকর্ম দেখলে ঘেন্নায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।
ছি ছি লক্ষিটি এভাবে তুমি আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে উৎসাহিত করতে পারো না। তোমাকে ছাড়া আমি বড় অসহায়।
রুবির চোখ থেকে আগুনের হল্কা বেরোচ্ছিল।
আমি সব উপেক্ষা করে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।ওর ডান হাতটা নড়াচড়া করে বললাম-- বাবা তো অনেক দিন পর আমাদের বাসায় আসছে তাইনা? ছোট মেয়ে বলে কথা! জানি কত কি নিয়ে আসবে! তুমি বাবাকে ফোন করে বলো এসবের দরকার নেই। সিচুয়েশন ডিম্যান্ড বলতে একটা কথা আছেনা? তুমি বরং বলে দাও আসার সময় বাবা যাতে ৫০ কেজির এক বস্তা আলু নিয়ে আসে।
নাদান কোনহানের। বলেই রুবি রাগে গরগর করে রান্না ঘরের দিকে গেল।
বালিশে মুখ চাপা দিয়ে নিজের হাসি আটকালাম।
( সমাপ্ত )
লেখা: মেহেরাব মাশুক