> ডাইনিং টেবিল | Romantic Love Story | Bangla Story | Boipoka365
-->

ডাইনিং টেবিল | Romantic Love Story | Bangla Story | Boipoka365


আজকের অফিস পার্টির খাবারটা বেশ ভালো লেগেছে রাফিজের। খাবার শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে সে। সাধারণত এত বেশি খাবার সে খায় না।

হেনাকে সে বারবার করে বলে দিয়েছে আজকে আসতে একটু দেরি হবে। সে যেন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে সে ধীর পায়ে রুমে ঢুকল। সে ভেবেছিল বাতি বন্ধ থাকবে। কিন্তু সে দেখল বাতি জ্বলছে। ডাইনিং এ খাবার সাজিয়ে বসে আছে তার স্ত্রী হেনা।
"তুমি খাওনি এখনো?"
হেনা মৃদু হেসে বলল,
"না। তোমার জন্যই বসে ছিলাম। তুমি হাত মুখ ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি খাবার বাড়ছি।"
"কিন্তু আমি যে বলেছিলাম আমার পার্টি আছে।"
হেনা গল্প করার ভঙ্গিতে বলতে লাগল,
"একবার হয়েছে কি জানো? আব্বু বলেছে অফিসে পার্টি আছে। সেজন্য রাতে বাসায় খাবে না। আম্মু তাই আমার আর তার জন্যই খাবার রান্না করেছে। রাতে বাসায় ফিরতেই আম্মুকে বলল খাবার দিতে।"
রাফিজ জিজ্ঞেস করল,
"কেন? উনি খেয়ে আসেননি?"
"না। আমাদের ছাড়া নাকি উনার আর শেষ পর্যন্ত খেতে ইচ্ছে করেনি। তাই না খেয়েই চলে এসেছেন। আব্বু অভুক্ত কিন্তু ঘরে তখন খাবার নেই। আম্মু আবার ছুটলেন রান্না করতে। সেদিন আম্মু এত লজ্জা পেয়েছিলেন যে কী বলব!"
রাফিজ কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
"লজ্জার কী আছে এখানে?"
"এইযে আব্বু না খেয়ে চলে এসেছেন আর এদিকে আম্মু আব্বুকে ছাড়াই খেয়ে বসে আছেন সেজন্য।"
রাফিজ ছোট্ট করে বলল,
"ওহ আচ্ছা। সেজন্যই তুমি আজকে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছ?"
"হুম, যদি এমন হয় তুমিও আমার জন্য না খেয়ে বাসায় চলে আসো। তাই অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য। তুমি কি খেয়ে এসেছো?"
রাফিজ চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
"না।"
রাফিজ রুমে চলে গেল। তার সত্যিটা বলতে লজ্জা করছিল যে সে তাকে ছাড়াই আয়েশ করে খেয়ে এসেছে।
রাফিজ ভরপেটেই আবার হেনার সাথে খেতে বসল। যদিও রাফিজ বেশি খেতে পারেনা। কিন্তু অনেকটা সময় না খেয়ে আছে ভেবে হেনা অনেকটা খাবার তার পাতে তুলে দিল। রাফিজ কমাতেও বলতে পারছে না। তাহলে হেনা সন্দেহ করবে এই ভয়ে। অনেকটা জোর করেই সে পুরোটা খাবার খেলো।
আর এর ফল পেতে হলো কিছুক্ষণ বাদে। বেশি খাবার খাওয়ার জন্য বুক হাঁসফাঁস শুরু হলো। বিছানায় শুয়ে আছে রাফিজ। তার পাশে হেনা ঘুমাচ্ছে। বমিটাকেও আটকানো গেল না। বদহজম হয়ে গেছে তার।
হড়বড় করে খাটে বসে থেকেই বমি করে ফেলল সে। হেনা উঠে বসল। আর টেবিল ল্যাম্পটাও জ্বালিয়ে দিলো। দেখল রাফিজের অবস্থা অনেকটাই খারাপ।
রাফিজকে ডাক্তার দেখে গেছে। এখন কিছুটা সুস্থবোধ করছে সে।
হেনার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে রাজিফ। পুলিশি জেরা করার মত হেনা জিজ্ঞেস করল,
"তুমি খেয়ে এসেছিলে?"
রাজিফ উপর নিচে মাথা নাড়ালো।
"তাহলে বললে না কেন?"
"তোমার বাবার গল্পটা শুনার পর মনে হলো আমি যদি সেটা বলি তাহলে তোমার মনে হবে আমি হয়ত তোমার বাবার মত তোমাকে ভালোবাসি না।"
তার বাবা তাদের জন্য না খেয়ে এসেছে আর এদিকে তার বর ভরপেট খেয়ে এসে আবার তার সাথে খেতে বসেছে। দুইজনের ভালোবাসা দুই রকম সুন্দর। হেনার চোখে পানি টলমল করতে লাগল।
হেনা তবুও কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
"হয়েছে, এখন আব্বুর সাথে ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় নামতে হবে না। শুয়ে পড়ো।"
রাজিফ শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে বলল,
"তোমার বাবার সাথে প্রতিযোগিতায় নামলে আমি হেরে যাবো। তবুও তোমার বাবা জয়ের ট্রফিটা আমার হাতেই তুলে দিয়েছে।"
হেনা কিছু বলল না। রাফিজের চুলে হাত বুলাতে লাগল।


( সমাপ্ত )






লেখা: অরণী মেঘ
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner