"আমরা কী পৃথিবীর সব শাক খেয়ে ফেলছি না আম্মু?''
" কেন এমন মনে হলো বাবা?"
"এই যে আমরা প্রতিদিন শাক দিয়ে ভাত খাই না,না, ভাত দিয়ে শাক খাই।"
ছেলের কথা শুনে চুপ করে রইল মিতু।কথাটা ভুল নয়।গত কয়েকমাস ধরে বাড়ির পেছনের অল্প একটু জমিতে হওয়া কলমি শাক,আলু শাক,পুইশাক এসব খেয়েই বেচে আছে মা-ছেলে।মাছ-মাংস শেষ কবে খেয়েছে তা মনে করতে পারে না ও।ভাত যোগাড় করতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয় সেখানে মাছ-মাংসের আশা করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।মাকে চুপ করে থাকতে দেখে হৃদয় আবার বলে ওঠে,
"আচ্ছা আম্মু, আমরা যদি পৃথিবীর সব শাক খেয়ে ফেলি তাহলে অন্য মানুষেরা কী খাবে?"
ছেলের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ভাষা খুজে পায় না মিতু।ছেলেটার দিকে তাকালে ওর বড় মায়া হয়।রিয়াদ বেচে থাকলে তো ওদেরকে এই দুর্দিন দেখতে হতো না।মৃত্যুর আগে তো ও রিয়াদকে কথা দিয়েছিল হৃদয়কে ভালো রাখবে।কিন্তু মিতু তো পারছেনা হৃদয়কে ঠিকমত খাওয়াতে,পরাতে।
হাজারো কষ্টের মাঝে এই ছেলেই মিতুর আশার আলো।ছেলে বড় হয়ে মানুষ হলে তবেই তো মিতুর সুদিন ফিরবে!
________________________
ভাতের থালায় থাকা শাক ভাজি দেখে মিতুর চোখে অতীত ভেসে ওঠে।নিজের নিয়তির উপর ভীষন হাসি পায় ওর।পঁচিশ বছর পরও এই শাক ওর পিছু ছাড়লো না।
রিয়াদকে কী জবাব দেবে তা ভাবলে আজও আৎকে ওঠে মিতু।রিয়াদ তো বলেছিল ওর ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করতে।
( সমাপ্ত )
লেখা: সাজিদ