![]() |
নতুন মা - Bangla Story |
মাত্র ছ'হপ্তা হল মৌয়ের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই এক আজব উৎপাতে হাড়মাস ভাজা ভাজা হয়ে যাচ্ছে মৌয়ের। বিয়ের সময় সাধ করে পার্লার থেকে পার্ম করিয়ে হাইলাইট করানো চুলগুলো গোছা গোছা হয়ে শাওয়ারে দেহত্যাগ করছে রোজ উৎপাতটির কারণে। অন্য কিছু সমস্যা হলে মৌ এতদিনে হেয়ারফলের কারনেই সমস্যার পিণ্ডি চটকে তিলকাঞ্চন করে দিতো..কিন্তু এক্ষেত্রে কিচ্ছুটি করার জো নেই। কারণ মূর্তিমতী উৎপাতটি হলেন মৌয়ের শাশুড়ি..সৌম্যর একমাত্র মা । অনন্যাদেবী।
কলেজ লাইফ থেকে সৌম্যর সাথে পরিচয় মৌয়ের। কোনো এক বর্ষার প্যাচপেচে সন্ধেয় আলো ঝামড়ানো শহরের কোনো এক বাস স্টপে টিউশনি ফেরত মৌ'কে দেখেই হড়কে গিয়েছিলো অফিসফেরত সৌম্য। মৌ'ও যে হড়কায়নি তা নয়..কিন্তু বেশ কিছুদিন সৌম্যকে নাকানিচোবানি খাইয়ে নিজের মার্কেট ভ্যালু বোঝানোর প্ল্যান ছিলো ওর। কিন্তু তার মাঝেই একদিন মৌ রিয়্যালাইজ করেছিলো যে গভীর চোখের টল ডার্ক হ্যান্ডসাম ছেলেটা কবেই যেন ওকে অধিকার করে নিয়েছে। তারপর প্রেম পর্বের নিয়মমাফিক সিটি সেন্টার..বইপাড়া
র গলিঘুঁজি ঘুরে..নন্দনে বেশ কটা বোধগম্যর বাইরের লেভেলের মুভি দেখে..স্টারবাকসে গ্যালন গ্যালন কফি খেয়ে একদিন সৌম্য তিতিবিরক্ত হয়ে বললো..এবার সম্পর্কটাকে নেক্সট লেভেলে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। এবং এই কাজের ফার্স্ট স্টেপ স্বরূপ সৌম্য আগামী রবিবার নিজের মায়ের সাথে মৌ'কে দেখা করাতে চায়।
রবিবার সকালে মৌ রেডি হচ্ছিলো সৌম্যদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। সৌম্য বলেছিলো ওর মা খুবই প্রোগ্রেসিভ চিন্তাভাবনার। তাই শাড়ি টাড়ি পরার দরকার নেই। ভদ্রমহিলা কতটা প্রোগ্রেসিভ দেখার জন্য মৌ একবার অনন্যা সেন বলে ফেসবুক আর ইনস্টায় সার্চ মেরেছিলো..কিন্তু খুঁজে পায়নি। নিজের মনেই হেসেছিলো মৌ! আজকালকাল দিনে যে সোশ্যাল সাইটেই নেই সে আবার কেমন প্রোগ্রেসিভ কে জানে! মৌয়ের মা তো দিব্যি আছে ফেসবুকে | হ্যাঁ..সারাদিন নিজের ওয়ালে ঠাকুর দেবতার ফটো শেয়ার আর কাজিনদের ফটোয় "হাই" লেখা ছাড়া আর কিছু করেনা বটে..কিন্তু তাও আছে | আর সেখানে সৌম্যর মায়ের কোনো অস্তিত্বই নেই ফেবুতে। যদিও সৌম্য গল্প করেছিলো ওর মায়ের ব্যাপারে যে মাত্র ষোলো বছর বয়েসে বিয়ে হয় ভদ্রমহিলার..আর সতেরোতেই সৌম্য জন্মায়। কিন্তু অদম্য জেদের কারনে ভদ্রমহিলা মাস্টার্স শেষ করে চাকরি জয়েন করেন এবং এখন একটা বেসরকারি ব্যাংকে ভালো পজিশনে আছেন। সৌম্য যখন মাত্র দশ বছরের..তখন একটা কার ক্র্যাশে সৌম্যর বাবা মারা যান। অনন্যাদেবী চাইলে বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু উনি সেই রাস্তায় যাননি। সৌম্যদের সল্টলেকের বাড়িতে গত আঠেরো বছর ধরে মা-ছেলে এবং দুই ফুলটাইম কাজের লোক নিয়েই ওনার সংসার চলছে। সৌম্যর থেকে ওর মায়ের ব্যাপারে শুনে মৌয়ের খুবই ইচ্ছে হত মহিলার সঙ্গে দেখা করার। তাই অবশেষে যখন সুযোগ এসেছিলো..মৌ বেশ উত্তেজিত ছিলো ব্যাপারটা নিয়ে। ব্লু জিনসের সাথে একটা হালকা পিংক কুর্তি পরে মৌ যখন রেডি..ঘড়িতে তখন পাক্কা দশটা বাজছে। ঠিক তখনই নিচে সৌম্যর গাড়ির হংক শুনতে পেয়েছিলো মৌ।
সৌম্যদের বাড়ি পৌঁছোতে এগারোটা বেজেছিলো প্রায়। দরজার বেল বাজিয়েছিলো সৌম্য। আর মৌ উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছিলো প্রবল ব্যক্তিত্বময়ী এক মহিলার যাকে শুধুমাত্র ছবিতে দেখেছে এবং যার স্ট্রাগল এবং সাক্সেসের গল্প শুনে ইন্সপায়ার হয়ে এসেছে এতদিন। বেল বাজানোর কিছুক্ষনের মধ্যেই দরজা খুলেছিলেন তিনি এবং তার পরই শুরু হয় আসল গল্প!
দরজা খুলে অনন্যাদেবী একগাল হেসে "আয় সোনা" বলে মৌ'কে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আর মৌ? মৌয়ের চোখগুলো রাজভোগ হয়ে গিয়েছিলো অনন্যাদেবীকে দেখে। বেশ লম্বা..রোগা পাতলা..জলপাইরঙা স্কিনের মালকিন অনন্যাদেবী যেন বয়েসকে পঁয়ত্রিশের ঘরে আটকে রেখেছেন। দেখে বোঝাই যায়না উনি সৌম্যর মত একটা দামড়া ছেলের মা। সঙ্গে অনন্যাদেবীর পরনের টি শার্ট আর ক্যাপ্রি..আর কলারবোনে উঁকি মারা "আয়্যাম লাইফ" লেখা ট্যাটুটা মৌ'কে পুরো স্পেলবাউন্ড করে দিয়েছিলো। অনন্যাদেবীর পাশে মৌয়ের নিজেকে কেমন যেন "চিকনি চামেলির পাশে পুরানি হাভেলি" টাইপের মনে হচ্ছিলো। শাশুড়ি এত সুন্দর কি করে হতে পারে..মৌ ভেবে পাচ্ছিলোনা। এতদিন বন্ধুদের কাছে শাশুড়ি সম্পর্কে রাগি..হিংসুটে..
ঝগড়ুটে..কেয়ারিং..লাভিং ইত্যাদি প্রচুর বিশেষন শুনেছে। কিন্তু সুন্দরী? উঁহু। খুবই রেয়ার ব্যাপার। অনন্যাদেবী খুব সুন্দর করে অনেক কথা বলছিলেন মৌয়ের সাথে..দুপুরে চেপে চেপে অনেক খাওয়ালেন..একটা সুন্দর ড্রেস গিফট করলেন। কিন্তু মৌ কিছুতেই সহজ হতে পারলোনা। মৌয়ের খালি মনে হচ্ছিলো যে সৌম্য ওকে বিরাট ধোঁকা দিয়েছে। সৌম্যর ওকে বলা উচিত ছিলো যে ওর মা ঠিক শাশুড়ি মা টাইপের নয়। এত সুন্দরী ট্যাটুওয়ালা মহিলা শাশুড়ি মা হতে পারেন না।
সৌম্যর বাড়ি থেকে ফেরার সময় মৌ এতটাই আপসেট আর অন্যমনস্ক ছিলো..যে গাড়ি থেকে নামার সময় সৌম্যকে উবের ড্রাইভার ভেবে টাকা দিতে যাচ্ছিলো। যাই হোক..সৌম্যটা ভেবলা..খেয়াল করেনি। বাড়ি ফিরে মৌ ভেবেছিলো বিয়েটা ক্যানসেল করে দেবে। কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়। সৌম্যকে অসম্ভব ভালোবাসে ও। আর সৌম্যর মা সুন্দরী - এই গ্রাউন্ডে যদি ও বিয়ে ক্যান্সেল করে তাহলে মৌ একদম শিওর যে মৌয়ের নিজের মা-ই ওকে ব্যাগ প্যাক করে পাগলা গারদ পাঠাবে। অনেক ভেবেচিন্তে মৌ ডিসাইড করলো ব্যাপারটা মা বাবার উপর ছাড়বে। ওরা যদি সৌম্যর মা'কে দেখে কোনো তেমন রিয়্যাকশন দেন..তখন না হয় ভেবে দেখা যাবে!
সেরকম কিছুই হলনা। মৌয়ের বাবা মা সৌম্যর মত সোনার টুকরো তার ওপর মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া ছেলে পেয়ে এমন আদেখলেপনা শুরু করলেন যে ওরা অনন্যাদেবীর পালাজো পরে হবু বৌমার বাড়ি আসা..বা কলারবোনের "আয়্যাম লাইফ"..বা " আমি শুধু গ্রিন টি খাই" বা "মাটনটা খুব স্পাইসি হয়েছে..আমায় কম দিও" টাইপের আদিখ্যেতা সম্পূর্ণ ওভারলুক করে গেলেন। উড বি বর থেকে শুরু করে গোটা গুষ্টির হাবভাবে গা জ্বলে যাচ্ছিলো মৌয়ের। সারাদিন হা হা হি হি করে কাটিয়ে ফেরার সময় অনন্যাদেবী মৌ'কে জড়িয়ে ধরে খুব এক চোট আদর করলেন। কিন্তু মৌ আড়ষ্ট হয়ে রইলো। ওর কেমন যেন মনে হচ্ছিলো এত সুন্দরী মহিলা কিছুতেই এত ভালো হতে পারেননা। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোথাও একটা ঝোল আছে। সৌম্যও যাওয়ার আগে একটু হামি খেতে চাইছিলো মৌকে..সবাইকে লুকিয়ে..কিন্তু মৌয়ের কটমটে চাউনি দেখে আর সাহস পায়নি ছেলেটা। তারপর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মৌ'কে অবাক করে যখন সৌম্যর মা গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসলেন..মৌ আরেকবারের মত বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো! এটা শাশুড়ি??!
সৌম্যর মায়ের কাঁটাটা মাথায় খচখচ করলেও বিয়েতে ব্যাগড়া দেয়নি মৌ। কারন সৌম্যকে ছেড়ে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ওই ভদ্রমহিলাকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলেছে ও। আর এড়িয়ে চলবেই না বা কেনো? ভদ্রমহিলা উইয়ার্ড। ড্রাইভ করতে করতে রাস্তায় কেউ বাজে চালালে উনি রীতিমতো জোশের সাথে "হ্যাট বেহেনচো" বলে গাল দেন..তুখোড় ইংরেজিতে অবাধ্য লোকজনকে ঝেড়ে কাপড় পরান..বাড়িতে সন্ধেবেলায় ডেমি লোভাটো চালিয়ে হেড ব্যাং করেন...ইনস্টাগ্রামে ওনার প্রোফাইলের নাম নটি অ্যানি..লুচি তরকারি ভাত মাছের সাথে জন্মের আড়ি করে ব্রেকফাস্ট লাঞ্চে সিরিয়াল স্যালাড চেবান..স্টার জলসা জিবাংলাকে লাথ মেরে নেটফ্লিক্স আর গেম অফ থ্রোনসে মেতে থাকেন! এ কি কোনো দিক থেকে শাশুড়ি মেটেরিয়াল?? এক সাথে বাইরে বেরোলে অনন্যাদেবী যা পুরুষের অ্যাটেনশন পান..মৌ তার সিকিভাগও পায়না। এ কি রে বাওয়া!
তার উপর ভদ্রমহিলা প্রচন্ড উদাসীন। অন্য শাশুড়িরা যেমন কথায় কথায় বৌ'কে টন্ট করে জীবন ঝালাপালা করে দেয়..অনন্যাদেবী তার ধারপাশও মাড়ান না। কখনো মৌ ইচ্ছে করে রান্নায় বেশি তেল দিলে..বা উদ্ভট সেজে থাকলে বা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বেড়িয়ে দু পাত্তর খেয়ে রাত বারোটায় বাড়ি ঢুকলেও তাতে অনন্যাদেবীর কোনো বক্তব্য নেই। উলটে সৌম্য ওনার সামনে রিয়্যাক্ট করলে উনি সৌম্যকে শান্ত করেন। আর ওনার এই ভালোমানুষিতেই মৌয়ের মনে আরো বেশি করে সন্দেহ জাঁকিয়ে বসে। অনন্যাদেবী যেন একটা মাকড়সার জাল বিছিয়েছেন..যাতে মৌ'কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে তারপর নিজের আসল চেহারা দেখাবেন। মৌ..সৌম্যকে বা নিজের বাড়িতে কিছু বলতে পারেনা এই নিয়ে। কারন বাস্তবিকই অনন্যাদেবীকে সন্দেহ করার কোনো কারন নেই। এর ফলে ওর মনের অশান্তি আস্তে আস্তে মুখেও প্রকাশ পেতে শুরু করলো। সৌম্যর মা'ও দূরত্বটা আঁচ করতে পারছিলেন। ওনার ঘন ঘন ফোন করে মৌয়ের খোঁজ নেওয়া..বা কোনো কিছু বানিয়ে মৌ'কে খেতে বললে মৌয়ের যে রিয়্যাকশন আসতো তাতে উনি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলেন মৌয়ের কোনো সমস্যা হচ্ছে। মৌ'কে জোর করতেও ইচ্ছে হতনা ওনার। সবকিছু ছেড়ে এসেছে মেয়েটা..সময় দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ভেবে উনি সময়ের হাতেই ছেড়েছিলেন ব্যপারটা।
আস্তে আস্তে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো..আর এর মধ্যেই একদিন সৌম্যকে অনসাইটে যেতে হল মাস তিনেকের জন্য। মৌ ঠিক করলো কয়েকদিন মায়ের কাছ থেকে ঘুরে আসবে। অনন্যাদেবীও এক কথায় রাজি হলেন। মায়ের কাছে এসে মৌয়ের বেশ হালকা লাগছিলো। সৌম্য দুবেলা ফোন করছিলো। অনন্যাদেবীও করছিলেন। মৌ নিয়মরক্ষার খাতিরে কথা বলে ফোন রেখে দিতো। অনন্যাদেবীও বোধহয় আঁচ করেছিলেন মৌয়ের কথা বলতে অনীহাটা। তাই বেশি ঘাঁটাতেন না। মৌ মনে মনে ভাবতো.. বাঁচা গেছে। যত দূরে থাকে ততই মঙ্গল।
সেদিন সকাল থেকে আকাশভাঙা বৃষ্টি। টিভিতে নিম্নচাপের সতর্কবার্তা ছিলোই। বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াও শুরু হল। কিচেনে মা খিচুড়ি বানাচ্ছিলেন। হঠাৎ মৌয়ের পেটে একটা অদ্ভুত ব্যথা শুরু হল। অস্বস্তিটা গত কয়েকদিন ধরে ছিলোই..কিন্তু আজকের ব্যথাটা যেন অসহ্য। মৌ চিৎকার করে মা বাবাকে ডাকতে বাধ্য হল। ব্যথাটা এতই অসহনীয় ছিলো..যে মৌয়ের মনে হচ্ছিলো ও এক্ষনি জ্ঞান হারাবে। বাইরে তখন বৃষ্টিতে ধূসর..বাড়ির ড্রাইভারও ছুটিতে। মৌয়ের বাবা তক্ষুনি ফ্যামিলি ডাক্তারকে ফোন করলেন..তিনি লক্ষন শুনে বললেন..মনে হচ্ছে এপেন্ডিসাইটিস। ইমিডিয়েট হসপিটালাইজড করতে হবে। মৌ ততক্ষনে নেতিয়ে পড়েছে..ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখের সামনে ও দেখছিলো বাবা পাগলের মত হাসপাতালে ফোন করে এম্বুলেন্স ডাকছে। আর ওয়াটার লগিংয়ের কারনে সবাই আসতে মানা করে দিচ্ছে। বাবার হাহাকারটা অস্পষ্ট হয়ে কানের কাছে মিলিয়ে যাওয়ার আগে মৌ শুধু বলতে পেরেছিলো.."মা'কে ফোন করো"।
পরের কয়েকটা ঘন্টায় চেতন অবচেতনে থেকে মৌ দেখেছিলো কিভাবে তার এতদিন এক্সেপ্ট করতে না পারা শাশুড়ি মা সমস্ত ঝড়ঝাপটা অগ্রাহ্য করে এসে মৌ'কে নিয়ে ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো..কিভাবে সমস্ত ঝক্কি সামলে বিনা টাইম ওয়েস্ট করে মৌ'কে ওটিতে ঢুকিয়েছিলো। মৌ কাঁদছিলো। শরীরের কষ্টকেও ছাপিয়ে যাচ্ছিলো মনের কষ্ট।
সকাল বেলা যখন ঘুম ভাঙলো মৌয়ের..কিউবিকলটা একরাশ সোনালি আলোয় ভরে আছে। মৌ চোখ খুলে দেখলো পাশে সোফায় পুরোদস্তুর ফর্মাল পোষাকে বসে আছেন অনন্যাদেবী। কিছু কাজ করছিলেন ল্যাপটপে। মৌকে জেগে উঠতে দেখে এগিয়ে এলেন..মিষ্টি করে হেসে বললেন.."কেমন আছিস সোনাই? ঠিক লাগছে এখন একটু"। মৌয়ের গলার কাছে একটা যন্ত্রণা দলা পাকাচ্ছিলো। এতদিন ধরে একটা মানুষকে ভুল মূল্যায়ন করার যন্ত্রনা। মৌ অতিকষ্টে বললো..আমার বেডে একটু বসবে মা? তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমোবো? মৌয়ের কথা অনন্যাদেবীর অবিশ্বাস্য লাগছিলো। এই প্রথম মেয়েটা তাকে মা বলে ডাকলো? নাকি শোনার ভুল? নিশ্চিত হতে উনি বললেন..তোর মা তো বাড়ি গেছে সোনাই। কাল সারারাত ওদের অনেক স্ট্রেস গেছে..তাই আমি ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। ওরা দুপুরে আসবেন। আমি তারপর অফিস চলে যাবো। মৌয়ের খুব কান্না পাচ্ছিলো..সেটা সামলে নিয়ে ও কোনোমতে বললো.."কেনো? তুমি ট্রাউজার্স পরে আছো বলে কি আমায় ঘুম পাড়াতে পাড়বেনা"?
অনন্যাদেবীও কাঁদছিলেন..অনেক
বছর পর। না..সৌম্যকে এবার দু'টো ভালো খবর দিতে হবে। মৌ সুস্থ বোধ করছে..আর অনন্যাদেবী আজ আবার নতুন করে মৌয়ের মা হয়েছেন!
Written by:- Apon km