আর এদিকে আমার বউ তুলনা স্বরুপ অনেক শিক্ষিত ভাবির চেয়ে। সারাক্ষন জীন্স টপ পড়ে থাকে। আমার বন্ধুরা আসলে তাদের সামনে গিয়ে হাসি ঠাট্টাই ব্যস্ত থাকতো। নিজের কাছে ব্যাপার গুলো খুবি ভালো লাগতো। বন্ধুরাও বউয়ের প্রশংসা করতে করতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলতো। এসব কান্ড দেখে রীতিমত রাগ চরম সীমায় পৌছায় আমার। কে শোনে কার কথা। কাজের বুয়ার সাথে সারাক্ষন চেঁচামেচি করে যেতেই থাকতো। বউয়ের কাছে মনেই হতো না যে কাজের বুয়াও মানুষ। কিভাবে ওর মানসিক পরিবর্তন করা যায় এটা ভেবে পাচ্ছিলাম না।
বউয়ের অত্যাচারে কাজের বুয়াটা অসুস্থ হয়ে যায়। তাই কিছুদিন কাজ করতে আসেনি। আর এদিকে বউটা আমার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে রাখছে।
একদিন রাত এগারোটার দিকে বউ বলছে-
--- এই শুননা! আমার নাটকে অভিনয় করার খুব ইচ্ছে। আর তুমি তো সারাক্ষন দেখি লেখালিখি নিয়ে ব্যস্ত থাকো। আমার জন্য একটা স্ক্রিপ্ট লিখো না?
বউয়ের কথা শোনে মুহূর্তেই মাথা বিগড়ে যায় আমার। যার নাকি ব্যবহারই ঠিক নেই সে করবে নাটক। ভাবছি আর একা একা হাসছি। আমার হাসি দেখে বউ বললো-
--- তুমি এভাবে হাসছো কেন কথা শোনে?
- তোমার মাঝে ধৈর্য বলতে কিছু আছে? তুমি করবে আবার নাটক! ব্যাপারটা কত হাস্যকর একবার ভাবোতো! যদি ধৈর্যই থাকতো তাহলে এখন এভাবে বলতে পারতে না।
--- জ্বী না! আমি পারবো। তুমি লিখবে কিনা তাই বলো?
- হ্যাঁ লিখবো।
বউয়ের কথা শোনে হাসিতে ঘুম আসছিল না। যার কোনো চরিত্র বলতে কিচ্ছু নেই তার মুখে অভিনয়ের কথা। আবার এটাও ভাবলাম, ও তো অভিনয় খুব ভালো ভাবে করতে জানে। ওকে দিয়েই কাজ হবে। দেখি বুঝিয়ে শুনিয়ে ওরে ঠিক করতে পারি কিনা। ব্যাপার গুলো বড় ভাই-ভাবি, মা-বাবার কাছে শেয়ার করলাম। শোনে সবাই হাসছে আমাকে নিয়ে। বলছে বউয়ের সাথে সাথে আমিও নাকি পাগল হয়েছি।
তার দুই দিন পর রাতে বউকে বললাম-
--- এই শুননা! তোমাকে নিয়ে অলরেডি আমার স্ক্রিপ্ট লেখা হয়ে গেছে। তুমি খুব শিগ্রই নাটকে অভিনয় করতে পারবে। তোমাকে পুরো দেশের মানুষ চিনবে। তখন তুমি তো আবার আমাকে চিনবে?
আমার কথা শোনে ও খুশিতে আত্মহারা প্রায়। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। শুধু হাত নাড়াচ্ছে।
- সত্যি লিখছো? এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে লিখছো? তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা?
ওর মুখে ভালোবাসার কথা শোনে হাসছি আর ভাবছি " ভালোবাসা না ছাই" তোমারে সায়েস্তা করনের কৌশল অবলম্বন করতেছি।
--- কিন্তু একটা সর্ত আছে? সেটা হচ্ছে, তুমি তো নাটকে প্রথম অভিনয় করতে যাচ্ছো। তাই তোমাকে তারা ছোট-খাটো ক্যারেক্টার দিবে।
আমার কথা শোনে ও রেগে বললো-
- আমার চেহারা কি কোনো অংশে কারো চেয়ে কম? নাটকে দেখি কত কালো মেয়ে মেকাপ মেরে ফর্সা হয়ে অভিনয় করে। আর আমার তো মেকাপ করা লাগবে না। এমনিতেই পার্ফেক্ট আমি।
--- অাহ্ তুমি ব্যাপারটা বুঝছো না কেনো? তুমি তো নতুন। একবারেই তো নায়িকার চরিত্রে অভিনয় দিবে না তারা।
কিছুটা চুপ থাকার পর ও ভেবে বললো-
- আচ্ছা আমি রাজি। তবে কোন চরিত্রে অভিনয় করতে হবে আমাকে তাই বলো।
--- কাজের বুয়া হিসেবে। তবে নাটক করে বড় ক্যামেরা দিয়ে আর আমরা করবো মোবাইল দিয়ে।
এটা শোনে খুশির পরিবর্তে রাগে আগুন।
- কিহ্! কাজের বুয়ার অভিনয় করবো তাও আবার মোবাইল দিয়ে ভিডিও করবে তুমি?
--- আরে এতো রাগাচ্ছো কেনো তুমি? ক্যামেরার করা নাটক তো বেশি ভাইরাল হয়না। আর দেখো মোবাইল দিয়ে ভিডিও করলে কোটি কোটি মানুষ তোমাকে চিনবে জানবে।
কিছুটা রাগ কমিয়ে বললো-
- আচ্ছা আমি রাজি। কবে থেকে অভিনয় শুরু করতে হবে তাই বলো?
--- কাল থেকেই আমরা নাটক করা শুরু করতে পারি।
এদিকে মনের মধ্যে খুব ভয় হচ্ছে আমার। যদি ও কোনো ভাবে আমার করা প্লান বুঝতে পারে আমি শিউর ও আমাকে তালাক দিয়ে চলে যাবে। যা করার বুদ্ধি খাটিয়ে করতে হবে।
অভিনয় যেহেতু কাজের বুয়ার তাই কাজের বুয়াকে আমি ১৫ দিনের ছুটি দিলাম। কাজের বুয়া ছুটির কথা শোনে মন মরা হয়ে আছে। বুঝতে পারছি বুয়া কিসের জন্য মন মরা হয়ে আছে। ওর মন মরা দেখে বুয়াকে বললাম- খালা, আপনাকে ছুটি দিয়েছি ঠিকই তবে বেতন ঠিক ভাবে পাবেন। আপনি পনেরো দিন আরাম করেন। ছুটি পেয়ে খালা খুশি হয়ে আমার জন্য মঙ্গল কামনা করতে থাকে। গরিবের করা মঙ্গল কামনা একদিন ঠিকই সফল হবে এটা আমার বিশ্বাস। ব্যাপার গুলো বাড়ির সবাইকে ক্লিয়ার ভাবে বললাম। তারাও ভয় পাচ্ছে খানিকটা। তবুও মনের ভিতর সাহস নিয়ে কাজ করতে হবে। এদিকে কাজের বুয়া চলে যাওয়ার সময় তার যত ময়লা জামা-কাপড় সব আমি নিয়ে আসি বউয়ের জন্য।
অভিনয় যেহেতু কাজের বুয়ার তাই কাজের বুয়াকে আমি ১৫ দিনের ছুটি দিলাম। কাজের বুয়া ছুটির কথা শোনে মন মরা হয়ে আছে। বুঝতে পারছি বুয়া কিসের জন্য মন মরা হয়ে আছে। ওর মন মরা দেখে বুয়াকে বললাম- খালা, আপনাকে ছুটি দিয়েছি ঠিকই তবে বেতন ঠিক ভাবে পাবেন। আপনি পনেরো দিন আরাম করেন। ছুটি পেয়ে খালা খুশি হয়ে আমার জন্য মঙ্গল কামনা করতে থাকে। গরিবের করা মঙ্গল কামনা একদিন ঠিকই সফল হবে এটা আমার বিশ্বাস। ব্যাপার গুলো বাড়ির সবাইকে ক্লিয়ার ভাবে বললাম। তারাও ভয় পাচ্ছে খানিকটা। তবুও মনের ভিতর সাহস নিয়ে কাজ করতে হবে। এদিকে কাজের বুয়া চলে যাওয়ার সময় তার যত ময়লা জামা-কাপড় সব আমি নিয়ে আসি বউয়ের জন্য।
আজ নাটকের প্রথম দিন। বউকে সোজা বলে দিলাম কোনো রকম সাজুগুজু করা যাবে না। তোমার ক্যারেক্টার কাজের বুয়া। কোনো জমিদারের মেয়ে না।
সাজুগুজু বাদ দিয়ে ময়লা জামা-কাপড় পরলো। বউ ময়লা কাপড় পড়ে বললো-
সাজুগুজু বাদ দিয়ে ময়লা জামা-কাপড় পরলো। বউ ময়লা কাপড় পড়ে বললো-
--- এরকম ময়লা কাপড় কেউ পড়বে?
ওর কথা শোনে খুব রাগ হচ্ছিল তখন আমার।
- কাজের বুয়া পড়তে পারলে তুমি পারবে না কেন? তুমি হীরার তৈরি নাকি? যদি পড়তে না পারো তাহলে নাটকে অভিনয় করতে হবে না।
--- না না! আমি পারবো। সব পারবো আমি।
এদিকে বাড়ির সদস্যদের সব ময়লা কাপড় একত্রে আমি গুছিয়ে রেখেছি বউয়ের জন্য। কাপড় গুলো ওর সামনে ছুড়ে মেরে বললাম-
- এই নে ফকিরের বাচ্চা। দশ মিনিটে কাপড় পরিষ্কার করে থালা-বাসন ধুয়ে দিস।
বউকে গালি দেয়াতে ও আমার সাথে রাগ দেখিয়ে বললো-
--- কিহ্ আমি ফকিরের বাচ্চা? এই বুয়ার অভিনয় আমি করতে পারবো না।
আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বললাম- তাহলে আমি নাটক বন্ধ করে দেই?
- না, আমি করবো।
এভাবে কিছুদিন কাজ করতে করতে দেখি বউটা আমার শুকিয়ে যাচ্ছে। আমার ঝারি, মা-বাবার গালি এগুলোও যেন মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে শুধু অভিনয়ের জন্য। কিছুতেই আর কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। তবুও আমি আরো বেশি বেশি চাপ দিচ্ছি শুধু বুঝানোর জন্য। কাজের বুয়াও আমাদের মত মানুষ। তাদেরও মন বলে কিছু আছে।
বারো দিন হতে চলছে নাটকের। বউয়ের মাঝে অনেক পরিবর্তন আসছে। সবার সাথে ফ্রি ভাবে এখন কথা বলছে। বাড়ির সব কাজ না বলাতেই একা একা করছে। কিছু ভুল হলেই আমি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছি। ও কাঁন্না করে দেই আমার গালি শুনে।
এক পর্যায়ে বলে উঠলো-
এক পর্যায়ে বলে উঠলো-
--- আমি আর বুয়ার অভিনয় করতে পারবো না। ক্ষমা চাচ্ছি।
- তাহলে বুঝতে পেরেছো সকল বুয়া গুলো কত কষ্ট করে অন্যের বাড়ি গিয়ে কাজ করে! এসব কিছু ছিল আমার সাজানো প্লান। যাতে তোমার বিবেক জাগ্রত হয়।
বউ আমার কথা শোনে কেঁদেই দিল। আমার কাছে সে মাথা নত করে ক্ষমা চাচ্ছে। সে নিজে গিয়ে বুয়ার কাছেও ক্ষমা চেয়ে আসে।
(সমাপ্ত)
লেখা:- জহিরুল ইসলাম।