১
"কখনও না দেখে প্রেমে পড়েছেন?" প্রশ্নটা করে উত্তরের অপেক্ষা করলোনা শুভ্র। "আমি পড়েছি। হ্যাঁ, বলতে দ্বিধা নেই, না দেখেই টানা তিনটা বছর আমি ভালোবেসে গিয়েছি একজনকে। সামনাসামনি দেখা তো দূরের কথা, একটা ছবিও দেখিনি আমি তার। কিন্তু তাও আমি তাকে ভালোবেসে গিয়েছি। আসলে, আমার কাছে মানুষের বাহিরের আবরণের চেয়ে ভিতরের অংশ টা বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। তাই, অণুর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমি ভালবেসেছি তার ভিতরের মানুষটা কে। আপন করে নিয়েছিলাম বাহ্যিক খোলসের ভিতরে থাকা তার অন্তরের সত্ত্বা কে। হ্যাঁ, পরে অবশ্য তাকে দেখেছিলাম। কিন্তু সে আরেক মহাভারত! অবশ্য যদি শুনতে চান, শোনাতে কোনো আপত্তি আমার নেই। কী, শুনবেন?"
এতক্ষিণ ধরে শুভ্রর কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মত গিলছিলো অধরা। শুভ্রর সাথে তার পরিচয় বেশী দিনের না। কিন্তু এই অল্প ক'দিনেই তাদের মধ্যে খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অবশ্য, এখানে কৃতিত্ব শুভ্ররই কিছুটা বেশী। শব্দের পিঠে শব্দ বসানোর এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে শুভ্রর। যেকোনো কারো সাথেই মুহুর্তেই ভাব জমিয়ে ফেলায় তার জুড়ি মেলা ভার। লেখালেখিও করে টুকটাক। অধরা মাঝে মাঝে আশ্চর্য না হয়ে পারেনা শুভ্রর এই গুণ দেখে।
এদিকে, অধরার কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আবার প্রশ্ন করলো শুভ্র, " কী হলো! কিছু বলছেন না যে? তাহলে কী ধরে নেবো শুনছেন না আপনি?"
"না, না! বলুন!" তড়িঘড়ি করে বললো অধরা, "আমি শুনতে চাই। মুচকি হাসলো শুভ্র। বললো, " শুনুন তবে..."
নিজের ঘটনা টা বলে চললো শুভ্র। আর মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে থাকলো অধরা।
২
"তখন সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেছি।" বলতে থাকলো শুভ্র, স্কুল কলেজে পড়ার সময়ে যে কড়া শাসনের মধ্যে ছিলাম, সেটা ততদিনে বিদায় নিয়েছে। হাতে আমার অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু কোনো কলেই আড্ডা বাজি করার অভ্যাস না থাকায়, বন্ধু মহলের লম্বা আড্ডা গুলোয় খুব কমই যেতাম। আসলে জীবনের প্রায় সম্পূর্ণটাই কড়া শাসনের মধ্যে কাটানোর কারণে আমি মারাত্মক ঘরকুনো হয়ে পড়েছিলাম। আর তাই, তুখোড় আড্ডাবাজি হাওয়ার বদলে হলে উঠলাম ফেসবুক আসক্ত। কারণে অকারণে বারবার ফেসবুকিং করতাম। আমার আসক্তি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো যে, ফেসবুকিং করতে ভালো না লাগলেও ফেসবুকিং করতাম। তাহলে বুঝুন অবস্থা! অবশ্য, কাজের কাজ যে একেবারেই কিছু হয়নি তা নয়। কৈশোর থেকেই টুকটাক লেখা লিখিতে অভ্যাস ছিল আমার। সেই অভ্যাসের হাত ধরেই ফেইসবুক আসক্তির মধ্যে আমি লেখালেখি টা কে ঢুকিয়ে ফেললাম। বেশ কিছু গ্রুপে আর পেইজে আমার লেখা প্রকাশ হতে লাগলো। অল্প সময়েই বেশ জনপ্রীয় হয়ে উঠলাম। যাক, সে কথা পড়ে বলা যাবে। আপাতত আগের কথায় ফিরে আসি। কী যেন বলছিলাম? হ্যাঁ, অণু। তখন ডিসেম্বর মাস। সকালে পোস্ট করা একটা গল্পের কমেন্ট বক্সে ঘুরছি। একটি ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়ের গল্প লিখছিলাম। তারই প্রথম কিস্তি ছিলো ওটা। তো, আমি কমেন্ট বক্সে ঘুরছি গঠনমুলক কমেন্ট এর আশায়। কিন্তু বিধিবাম! যেদিকে তাকাই, সেদিকেই শুধু নেক্সট আর নেক্সট! যেনো নেক্সটের বাম্পার ফলন হয়েছে আমার গল্পের কমেন্ট সেকশন এ! হ্যাঁ, আপনি হয়ত বলতে পারেন, পাঠক পরবর্তী পর্বের জন্য আগ্রহী বিধায় এই নেক্সটের ছড়াছড়ি। কিন্তু এই নেক্সট এর স্রোতে সব গঠনমূলক কমেন্ট যে বানের জলে ভেসে যায়! প্রায় শ'খানেক কমেন্ট ঘেটে তবে একটা গঠনমূলক কমেন্ট পাওয়া যায়। যাই হোক, কমেন্ট বক্সের প্রায় অর্ধেকটা চষে বেড়ানো শেষ, এমন সময়ে মেসেঞ্জারটা টুং করে জেগে উঠলো। তখন রাত মোটামুটি ভালই গভীর। ঘড়ির ঘন্টার কাঁটা দুই কে ছেড়ে দিয়ে তিনের দিকে ছুটে চলেছে। এই নিশুতি রাতে কে নক দিলো, এটা দেখার জন্য খানিকটা কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। ইনবক্সে যেয়ে দেখি, ক্যামেলিয়া গোমেজ অণু নামের একজন ম্যাসেজ দিয়েছে। আপনি হয়তো ভাববেন, এইভাবে কেনো বলছে লোকটা! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে , সেসময়ে আমার ফ্রেন্ডলিস্টের সিংহভাগই ছিলো অচেনা লোকজনের দখলে। অণুও সেসময়ে ছিলো তেমনি একজন। তাই, ম্যাসেজটা সিন করা নিয়েও খানিকটা দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছিলাম আমি। হঠাৎ করেই চোখ গেলো তার নামের নিচে মোটা অক্ষরে ভেসে ওঠা তিন শব্দের ম্যাসেজটার দিকে। মানুষ অপরিচিত কাউকে ম্যাসেজ দিলে সাধারণত হাই-হ্যালো দিয়ে শুরু করে। আর এই যায়গা দিয়েই অণু একটু ভিন্ন ছিলো। সে লিখেছিলো, 'একটু সময় হবে?'। মেয়েটার নক দেওয়ার ভঙ্গিটা ভালো লাগলো। তাকে প্রায় সাথে সাথে জানিয়ে দিলাম যে সময় আছে আমার কাছে। তারপরের কয়েকটা ম্যাসেজ খুবই সাধারণ। টুকটাক কেমন আছেন-কী করছেন এর পর মেয়েটা আসল কথায় আসলো। আসলে আমার সেদিন সকালে পোস্ট করা গল্পটার সাথে তার জীবনের বেশ কিছু ঘটনা আকস্মিক ভাবে মিলে গিয়েছিলো। ব্যাপারটা আমার মধ্যে মিশ্র একটা অনুভূতির সৃষ্টি করেছিলো। যাহোক, কোনো এক আশ্চর্য কারণে সেদিনের পর থেকে অণুর সাথে আমার প্রতিদিন ই টুকটাক কথা হতে লাগলো। প্রথম প্রথম দিনে দু-চারটা ম্যাসেজ বিনিময় হলেও, আস্তে আস্তে তার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সময়ের সাথে সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকায় এক পর্যায়ে প্রায় সারাদিনই খুদেবার্তা চালাচালি চলতে থাকলো। তার সাধাসিধে কথাগুলো কেন জানি খুব ভালো লাগতো।কিন্তু এত ঘনিষ্ঠতা স্বত্তেও মাঝে মাঝে ওর পরিচয় নিয়ে আমার মনের ভিতর খটকা লাগতো। ওর সারা প্রোফাইল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওর একটা ছবি পাইনি আমি। এমনকি, ইনবক্সে ছবি চাইলেও সে কথা ঘুরিয়ে ফেলতো। মাসখানেক কথা বলার পর একদিন কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই আমি আমার সন্দেহের কথা ওকে সরাসরি জানিয়ে দেই। তাকে সোজাসাপটা বলে দেই যে তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে আর কোনোরকম কথাবার্তা চালানো আমার পক্ষে আর সম্ভব না। কিন্তু সে তাও নারাজ। ছবি সে কিছুতেই দিবেনা। আমিও এদিকে নাছোড়বান্দা। এক পর্যায়ে মেজাজ খারাপ করে ফেইসবুক থেকে লগ আউট করে বেরিয়ে গেলাম। ঐদিন সাড়সদিন আইডিতে আর ঢুকিনি। এমনকী, পরদিন বিকালে যখন স্মি নদীর পাড়ে বসে সিগারেট টানছি, তখনও আমার এই ফেইসবুক হরতাল বহাল তবিয়তে বজায় ছিলো। কেনো সেদিন এসব করেছিলাম জানিনা। সেটা কী ছিলো? বিরক্তি, রাগ না অভিমান? আসলে তার উত্তর আমার কাছে এখনও নেই। একমনে একটার পর একটা সিগারেটের দেহ পুড়িয়ে ভস্ম করছিলাম। চার নম্বর সিগারেট টা ধরাবো, এমন সময়ে ফোনটা পকেট এর ভিতর থেকে চিৎকার করে উঠলো। পকেট হাতড়ে ফোন বের করে দেখি, অপরিচিত নাম্বার। কলটা রিসিভ করলামনা। কিছুক্ষণ পর আবার সেই নাম্বার থেকে ফোন। পাত্তা দিলামনা। দুমিনিট পর আবারো সেই নাম্বারের জ্বালায় ফোনটা আর্তনাদ করে উঠলো। এবারো ফোনের বেদনা আমলে নিলাম না। কিন্তু, তার পরবর্তী দশমিনিট ধরে ফোনের ক্রমাগত চ্যাচামেচির অত্যাচার সইতে না পেরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ফোনটা ধরলাম।"
এতটুকু বলে শুভ্র তার সামনে রাখা পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়ালো। এক নিঃশ্বাসে গ্লাসটা খালি করার পর, সরাসরি তাকালো সে অধরার মুখের দিকে। অধীর আগ্রহে পরবর্তী ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছে সে। গভীর কালো চোখজোড়ায় কৌতুহল চিকচিক করছে সাগরের লোনা জলে সিক্ত বালুর মত। অধরার চোখের দিকে চেয়ে কেন জানি হঠাৎ করেই বুকের বামপাশটা চিনচিন করে উঠলো শুভ্রর। বেশ কিছুক্ষণ তারা দুজনেই নিরব থাকলো। শেষমেশ অধরাই নিরবতা ভাঙলো।
"তারপর?"
"পরের টা নাহয় পরেই বলি," মুচকি হেসে বললো শুভ্র।
"এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা," অভিমানের সুর স্পষ্ট অধরার গলায়।
"ক'টা বাজে সেদিকে খেয়াল আছে?" শুভ্রর কথায় এতক্ষণ পর ঘড়ি দেখার কথা মনে পড়লো অধরার। আসলেও অনেক দেরি হয়ে গেছে। ছেলেটা তার কথা ভেবেই থেমে গিয়েছে। তবুও বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠলো তার মাখনরঙা চেহারায়। সেটা দেখতে পেয়েই শুভ্র বললো, "কালকে নাহয় যে যায়গার ঘটনা, সে যায়গাতেই গিয়ে বলবো।" অবাক হলো অধরা। "মানে?"
রহস্যময় ভাবে হাসলো শুভ্র, "তার আগে বলুন, বিশ্বাস করেন তো আমায়?"
"নিঃসন্দেহে! " স্পষ্ট জবাব অধরার।
" তাহলে কালকে সকালে তৈরী থাকবেন। "
"কোথায় যাচ্ছি আমরা?"
"আপাতত আপনি আপনার বাসায় আর আমি আমার বাসায়। চলুন, আপনাকে ড্রপ করে দিই।"
চলবে.....
"তখন সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেছি।" বলতে থাকলো শুভ্র, স্কুল কলেজে পড়ার সময়ে যে কড়া শাসনের মধ্যে ছিলাম, সেটা ততদিনে বিদায় নিয়েছে। হাতে আমার অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু কোনো কলেই আড্ডা বাজি করার অভ্যাস না থাকায়, বন্ধু মহলের লম্বা আড্ডা গুলোয় খুব কমই যেতাম। আসলে জীবনের প্রায় সম্পূর্ণটাই কড়া শাসনের মধ্যে কাটানোর কারণে আমি মারাত্মক ঘরকুনো হয়ে পড়েছিলাম। আর তাই, তুখোড় আড্ডাবাজি হাওয়ার বদলে হলে উঠলাম ফেসবুক আসক্ত। কারণে অকারণে বারবার ফেসবুকিং করতাম। আমার আসক্তি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো যে, ফেসবুকিং করতে ভালো না লাগলেও ফেসবুকিং করতাম। তাহলে বুঝুন অবস্থা! অবশ্য, কাজের কাজ যে একেবারেই কিছু হয়নি তা নয়। কৈশোর থেকেই টুকটাক লেখা লিখিতে অভ্যাস ছিল আমার। সেই অভ্যাসের হাত ধরেই ফেইসবুক আসক্তির মধ্যে আমি লেখালেখি টা কে ঢুকিয়ে ফেললাম। বেশ কিছু গ্রুপে আর পেইজে আমার লেখা প্রকাশ হতে লাগলো। অল্প সময়েই বেশ জনপ্রীয় হয়ে উঠলাম। যাক, সে কথা পড়ে বলা যাবে। আপাতত আগের কথায় ফিরে আসি। কী যেন বলছিলাম? হ্যাঁ, অণু। তখন ডিসেম্বর মাস। সকালে পোস্ট করা একটা গল্পের কমেন্ট বক্সে ঘুরছি। একটি ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়ের গল্প লিখছিলাম। তারই প্রথম কিস্তি ছিলো ওটা। তো, আমি কমেন্ট বক্সে ঘুরছি গঠনমুলক কমেন্ট এর আশায়। কিন্তু বিধিবাম! যেদিকে তাকাই, সেদিকেই শুধু নেক্সট আর নেক্সট! যেনো নেক্সটের বাম্পার ফলন হয়েছে আমার গল্পের কমেন্ট সেকশন এ! হ্যাঁ, আপনি হয়ত বলতে পারেন, পাঠক পরবর্তী পর্বের জন্য আগ্রহী বিধায় এই নেক্সটের ছড়াছড়ি। কিন্তু এই নেক্সট এর স্রোতে সব গঠনমূলক কমেন্ট যে বানের জলে ভেসে যায়! প্রায় শ'খানেক কমেন্ট ঘেটে তবে একটা গঠনমূলক কমেন্ট পাওয়া যায়। যাই হোক, কমেন্ট বক্সের প্রায় অর্ধেকটা চষে বেড়ানো শেষ, এমন সময়ে মেসেঞ্জারটা টুং করে জেগে উঠলো। তখন রাত মোটামুটি ভালই গভীর। ঘড়ির ঘন্টার কাঁটা দুই কে ছেড়ে দিয়ে তিনের দিকে ছুটে চলেছে। এই নিশুতি রাতে কে নক দিলো, এটা দেখার জন্য খানিকটা কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। ইনবক্সে যেয়ে দেখি, ক্যামেলিয়া গোমেজ অণু নামের একজন ম্যাসেজ দিয়েছে। আপনি হয়তো ভাববেন, এইভাবে কেনো বলছে লোকটা! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে , সেসময়ে আমার ফ্রেন্ডলিস্টের সিংহভাগই ছিলো অচেনা লোকজনের দখলে। অণুও সেসময়ে ছিলো তেমনি একজন। তাই, ম্যাসেজটা সিন করা নিয়েও খানিকটা দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছিলাম আমি। হঠাৎ করেই চোখ গেলো তার নামের নিচে মোটা অক্ষরে ভেসে ওঠা তিন শব্দের ম্যাসেজটার দিকে। মানুষ অপরিচিত কাউকে ম্যাসেজ দিলে সাধারণত হাই-হ্যালো দিয়ে শুরু করে। আর এই যায়গা দিয়েই অণু একটু ভিন্ন ছিলো। সে লিখেছিলো, 'একটু সময় হবে?'। মেয়েটার নক দেওয়ার ভঙ্গিটা ভালো লাগলো। তাকে প্রায় সাথে সাথে জানিয়ে দিলাম যে সময় আছে আমার কাছে। তারপরের কয়েকটা ম্যাসেজ খুবই সাধারণ। টুকটাক কেমন আছেন-কী করছেন এর পর মেয়েটা আসল কথায় আসলো। আসলে আমার সেদিন সকালে পোস্ট করা গল্পটার সাথে তার জীবনের বেশ কিছু ঘটনা আকস্মিক ভাবে মিলে গিয়েছিলো। ব্যাপারটা আমার মধ্যে মিশ্র একটা অনুভূতির সৃষ্টি করেছিলো। যাহোক, কোনো এক আশ্চর্য কারণে সেদিনের পর থেকে অণুর সাথে আমার প্রতিদিন ই টুকটাক কথা হতে লাগলো। প্রথম প্রথম দিনে দু-চারটা ম্যাসেজ বিনিময় হলেও, আস্তে আস্তে তার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সময়ের সাথে সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকায় এক পর্যায়ে প্রায় সারাদিনই খুদেবার্তা চালাচালি চলতে থাকলো। তার সাধাসিধে কথাগুলো কেন জানি খুব ভালো লাগতো।কিন্তু এত ঘনিষ্ঠতা স্বত্তেও মাঝে মাঝে ওর পরিচয় নিয়ে আমার মনের ভিতর খটকা লাগতো। ওর সারা প্রোফাইল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওর একটা ছবি পাইনি আমি। এমনকি, ইনবক্সে ছবি চাইলেও সে কথা ঘুরিয়ে ফেলতো। মাসখানেক কথা বলার পর একদিন কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই আমি আমার সন্দেহের কথা ওকে সরাসরি জানিয়ে দেই। তাকে সোজাসাপটা বলে দেই যে তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে আর কোনোরকম কথাবার্তা চালানো আমার পক্ষে আর সম্ভব না। কিন্তু সে তাও নারাজ। ছবি সে কিছুতেই দিবেনা। আমিও এদিকে নাছোড়বান্দা। এক পর্যায়ে মেজাজ খারাপ করে ফেইসবুক থেকে লগ আউট করে বেরিয়ে গেলাম। ঐদিন সাড়সদিন আইডিতে আর ঢুকিনি। এমনকী, পরদিন বিকালে যখন স্মি নদীর পাড়ে বসে সিগারেট টানছি, তখনও আমার এই ফেইসবুক হরতাল বহাল তবিয়তে বজায় ছিলো। কেনো সেদিন এসব করেছিলাম জানিনা। সেটা কী ছিলো? বিরক্তি, রাগ না অভিমান? আসলে তার উত্তর আমার কাছে এখনও নেই। একমনে একটার পর একটা সিগারেটের দেহ পুড়িয়ে ভস্ম করছিলাম। চার নম্বর সিগারেট টা ধরাবো, এমন সময়ে ফোনটা পকেট এর ভিতর থেকে চিৎকার করে উঠলো। পকেট হাতড়ে ফোন বের করে দেখি, অপরিচিত নাম্বার। কলটা রিসিভ করলামনা। কিছুক্ষণ পর আবার সেই নাম্বার থেকে ফোন। পাত্তা দিলামনা। দুমিনিট পর আবারো সেই নাম্বারের জ্বালায় ফোনটা আর্তনাদ করে উঠলো। এবারো ফোনের বেদনা আমলে নিলাম না। কিন্তু, তার পরবর্তী দশমিনিট ধরে ফোনের ক্রমাগত চ্যাচামেচির অত্যাচার সইতে না পেরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ফোনটা ধরলাম।"
এতটুকু বলে শুভ্র তার সামনে রাখা পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়ালো। এক নিঃশ্বাসে গ্লাসটা খালি করার পর, সরাসরি তাকালো সে অধরার মুখের দিকে। অধীর আগ্রহে পরবর্তী ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছে সে। গভীর কালো চোখজোড়ায় কৌতুহল চিকচিক করছে সাগরের লোনা জলে সিক্ত বালুর মত। অধরার চোখের দিকে চেয়ে কেন জানি হঠাৎ করেই বুকের বামপাশটা চিনচিন করে উঠলো শুভ্রর। বেশ কিছুক্ষণ তারা দুজনেই নিরব থাকলো। শেষমেশ অধরাই নিরবতা ভাঙলো।
"তারপর?"
"পরের টা নাহয় পরেই বলি," মুচকি হেসে বললো শুভ্র।
"এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা," অভিমানের সুর স্পষ্ট অধরার গলায়।
"ক'টা বাজে সেদিকে খেয়াল আছে?" শুভ্রর কথায় এতক্ষণ পর ঘড়ি দেখার কথা মনে পড়লো অধরার। আসলেও অনেক দেরি হয়ে গেছে। ছেলেটা তার কথা ভেবেই থেমে গিয়েছে। তবুও বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠলো তার মাখনরঙা চেহারায়। সেটা দেখতে পেয়েই শুভ্র বললো, "কালকে নাহয় যে যায়গার ঘটনা, সে যায়গাতেই গিয়ে বলবো।" অবাক হলো অধরা। "মানে?"
রহস্যময় ভাবে হাসলো শুভ্র, "তার আগে বলুন, বিশ্বাস করেন তো আমায়?"
"নিঃসন্দেহে! " স্পষ্ট জবাব অধরার।
" তাহলে কালকে সকালে তৈরী থাকবেন। "
"কোথায় যাচ্ছি আমরা?"
"আপাতত আপনি আপনার বাসায় আর আমি আমার বাসায়। চলুন, আপনাকে ড্রপ করে দিই।"
চলবে.....
Writer:- Hassan Mushfiqur Rahman