Leave a message
> ভালোবেসে ভুল করিনি পর্ব ১ - Bangla Love Story
-->

ভালোবেসে ভুল করিনি পর্ব ১ - Bangla Love Story


কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ মাঝ পথে বৃষ্টি শুরু হলো।
বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য দৌড় দিলাম। সামনে থেকে যে একটা গাড়ি আসছে বৃষ্টির জন্য দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি টা যখন অনেক কাছে চলে এসেছে ঠিক তখন কে যেন আমাকে টেনে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। আমি বুঝতে পারলাম এটা কোন পুরুষ। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগল। ছেলে টা অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। আমি ছোটার জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু তার শক্তির সাথে পেরে উঠলাম না। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে আমাকে ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।কারন ছেলেটা আর কেউ না আমার ফুফাতো ভাই সামির। আমার থেকে ছয় বছরের বড়। আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার মতো ছেলে তো ভাইয়া না।কারন সবসময় ভাইয়া আমার সাথে রাগিভ্ ভাব নিয়ে থাকে আর কারনে অকারণে বকাবকি করে।
-
ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম কারণ তার চোখ লাল হয়ে গেছে। ভাইয়া যখন অনেক রেগে যায় তখন এমন লাল হয়।
হঠাৎ ঠাশ করে আমার গালে একটা চড় দিলো ভাইয়া। আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।এখন কিছু বললে আরো থাপ্পড় খেতে হবে।
ভাইয়া রাগী লুক নিয়ে বলল,
মামার কি এতোই টাকার অভাব পড়ছে যে তোর বৃষ্টি যে ভিজে হেটে হেটে বাড়ী ফিরতে হবে?
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলাম,
ভাভাভাইয়া আমার হেহেটে আসতে ভালো লাগে।
ভাইয়া বললো,
এখন যদি কোন দুর্ঘটনা হতো তাহলে কি হতো?আর বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ছাড়া এসেছিস কেন? নাকি ছেলেদের তোর এই ভেজা শরীর দেখানোর জন্য ইচ্ছে করেই ছাতা আনিসনি?
কথাটা শুনে আমার রাগে মাথা গরম হয়ে গেল। সকালে তো অনেক রোদ ছিল, আমি জানতাম কি হঠাৎ করে বৃষ্টি নামবে। কিন্তু মুখে কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ভাইয়া বললো,
এখন ও এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছিস, তারাতাড়ি আমার গাড়িতে গিয়ে বস। আমি দুমিনিট এর মধ্যেই আসছি।
ভাইয়ার কথা শুনে সামনে তাকিয়ে ভাইয়ার গাড়ি দেখতে পেলাম। তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। ভিজে যাওয়ার কারণে একটু শীত করতে লাগলো। গাড়ির কাচ দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম ভাইয়া ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। বৃষ্টিতে ভেজার কারনে ভাইয়াকে অনেক সুন্দর লাগছে।এমনেতেই অনেক হ্যান্ডসাম ছেলে ভাইয়া। আমার বান্ধবীরা তো সামির ভাইয়া বলতেই পাগল। আমি আবার অত মহামারী সুন্দর না।সবসময় সাধারণ ভাবেই থাকি। অবশ্য ভাইয়ার জন্য বাধ্য হয়েই সাধারণ ভাবে থাকতে হয় কারণ একটু সেজেগুজে কোথাও গেলে কোথা থেকে জেনো ভাইয়া আমার সামনে হাজির হয়ে বলে ,
এমনেতেই দেখতে ভালো লাগে না তোকে আর সাজলে তো একদম জোকারের মতো লাগে তোকে।এসব কথা শুনে অনেক আগেই সাজা বাদ দিয়ে দিছি।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর ভাইয়া একটা শপিং এর প্যাকেট দিয়ে বললো,
মিশ্মি পোশাক গুলো পাল্টে নি তানাহলে ঠান্ডা লাগবে তোর। আমি ধুয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।
এই বলে ভাইয়া চলে গেল। প্যাকেট টা খুলে দেখলাম অনেক সুন্দর রঙ্গ ফ্রক। গাড়িতেই পোশাক গুলো পাল্টে ভাইয়া কে ডাকদিলাম। ভাইয়া এসে কোনো কথা না বলে ড্রাইভিং করা শুরু করলো। পনেরো মিনিট এর মধেই বাসায় পৌছে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে যেয়ে আবার ফিরে এসে ভাইয়া কে বললাম,
হঠাৎ তুমি ওদিকে কেনো গিয়েছিলে ভাইয়া!
ভাইয়া বললো,
সেটা তোর না জানলেও চলবে।
এই বলে চলে গেল। আমি বাসায় ঢুকে সুজা নিজের রুমে চলে গেলাম।
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিহাকে কল দিলাম কিন্তু ফোন টা ওয়টিংয়ে পেলাম। নিশ্চয়ই ওর বয়ফ্রেন্ড আবিরের সাথে কথা বলছে। আমার সব ফ্রেন্ড এর বয়ফ্রেন্ড আছে শুধু আমারই নেই।কেউ আমাকে প্রপোজ করেই নি।যাও একজন করেছিল কিন্তু পরের দিন তাকে আর দেখতে পাইনি। আমি ওতোটাও অসুন্দর না।
মার ডাক শুনে খাবার খেয়ে এসে একটা লম্বা ঘুম দিলাম। বিকেলে সামির ভাইয়া পড়াতে আসলো।সেই ক্লাস এইট থেকে ভাইয়া আমায় পড়ায়।অন্য কোনো সারের কাছে প্রাইভেট পড়তে দেখিনা। নিজের এতো বড় অফিসের কাজ ফেলে কেনো যে আমাকে পড়াতে আসে সেটাই বুঝতে পারিনা।
হঠাৎ মনে হল কাল ভাইয়ার দেওয়া ম্যাথ টা করিনি।এর শাস্তি যে অনেক ভয়াবহ সেটা আমি জানি।

পড়ার টেবিলে বসে ভাইয়ার দেওয়া ম্যাথ টা করার জন্য সবে খাতা টা বের করেছি অমনি ভাইয়া রুমে চলে আসলো। আমি খাতা টা লুকিয়ে ফেললাম। ভাইয়া রুমে এসেই চেয়ার টেনে বসে বললো,
কাল যে ম্যাথটা দিয়েছিলাম সেটা দেখা,
আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম,
ভাইয়া অংকটা করতে মনে ছিল না।
ভাইয়া আমার দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
কেন কাল রাতে কোন প্রেমিকের কথা ভাবছিলি যে সামান্য একটা কাজ করতে দিয়েছিলাম সেটা ভুলে গেলি?
আমি চুপ করে রইলাম।
আমার উত্তর না পেয়ে ভাইয়া বললো,
আজকে বাসার সব কাজ করবি তুই। রাতের রান্না টাও তুই করবি।
আমি আস্তে করে বললাম,
ভাইয়া আমি তো রান্না করতে পারিনা।
ভাইয়া বললো,
রান্না করতে না পারলে ৫০০বার কান ধরে উঠবস করবি।
কথাটা শুনে আমি ভয়ে একটা ডুক গিললাম।
তার পর বললাম ,
না না আমি রান্না করতে পারবো।
ভাইয়া বললো,
এখন এই রুমটা মুছে দে।
আমি ঘর মোছার জিনিস পত্র নিয়ে এসে রুমটা মুছা শুরু করলাম। একবার ভাইয়ার দিকে উঁকি দিয়ে দেখলাম ভাইয়া লাকসাহেবের মতো চিয়ারে বসে মোবাইল টিপছে আর আমাকে কাজের মেয়ের মতো খাটাচ্ছে। ইচ্ছে করছে বালতির পানিগুলো ভাইয়ার মাথায় ঢেলে দিতে।
অনেক সময় নিয়ে রুমটা মুছে বালতিটা কিচেন রুমে রেখে আসতে গেলাম।
আমার হাতে বালতি আর আমার অবস্থা দেখে মা আর জরিনা খালা হাসতে লাগল। জরিনা খালা কে দেখে মনে হলো অনেক খুশি হয়েছে কারন আমি রুমটা না মু
পরিষ্কার করলে তারি করা লাগতো।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়া কিচেন রুমে এসে মাকে বললো,
মামী আজ মিশ্মি একাই রান্না করবে।
কথাটা বলতে দেরী হয়েছে কিন্তু জরিনা খালার কিচেন রুম থেকে বেরতে দেরী হয়নি। সুজা ড্রয়িং রুমে গিয়ে টিভি অন করে স্টারজলসার চ
সিরিয়াল দেখতে লাগল।
আর মা বললো,
সামির মিশ্মি তো রান্না করতে পারেনা।
মার কথা শুনে আমি অনেক খুশি হলাম ভাবলাম মা হয়তো আমার কষ্টটা বুঝতে পেরে এই কথা বলছে, কিন্তু আমার ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে মা বললো,
ও কি না কি রান্না করবে পরে আমাদের সবার রাতের খাবার খাওয়া হবে না।
নিজেরা খেতে পারবে না বলে না করছে। আমার আত্মসম্মানে লাগলো কথাটা তাই আমি বললাম,
তুমি এখান থেকে চলে যাওতো মা। আমি তোমার থেকে অনেক ভালো রান্না করতে পারি।
আমার কথা শুনে মা চলে গেল কিন্তু ভাইয়া দেয়ালের সাথে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম কি রান্না করা যায় হঠাৎ মনে হলো বিরিয়ানি রান্না করলে অনেক ভালো হবে। কিন্তু বিরিয়ানি তো আমি রান্না করতে পারিনা। অবশ্য মোবাইল দেখে রান্না করতে পারতাম কিন্তু ভাইয়ার সামনে মোবাইল দেখে রান্না করলে আমাকে আর আস্ত রাখবে না ভাইয়া।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়া বললো,
কি হলো সং এর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি রান্না কর আমি যেনো রাতে খেয়ে বাসায় যেতে পারি।
আমি মনে মনে বললাম,
কেন ফুপি কি রান্না করা না যে আমার রান্না করা খাবার তোমার খেয়ে যেতে হবে?
একটা কল আসায় ভাইয়া কিচেন রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আমি দৌড়ে রুমে গিয়ে মোবাইল নিয়ে আসলাম। ইউটিউবে বিরিয়ানি রান্না করা দেখে রান্না করতে লাগলাম। রান্না যখন শেষের দিকে তখন ভাইয়া এসে হাজির হলো। আমি মোবাইল টা লুকিয়ে ফেললাম।
তারপর কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে খাবার টেবিলে পরিবেশন করে রাখলাম।বাবা অফিস থেকে আসার পর সবাই এক সাথে খেতে বসলাম।আপু তো বিরিয়ানি দেখে অনেক খুশি হলো কারণ বিরিয়ানি আপুর ফেবারিট খাবার। মা_বাবা খাবার মুখে দিয়ে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম ভাবলাম বিরিয়ানি রান্না হয়তো ভালো হয়নি তাই একটু বিরিয়ানি মুখে দিয়ে দেখলাম কিন্তু রান্না তো ভালোই হয়েছে।
মা আমাকে বলল,
তুই নিজে এটা রান্না করেছিস?
আমি রেগে বললাম,
না ভুত এসে রান্না করে দিয়ে গেছে।
ভাইয়া বাঁধে সবাই আমার রান্নার প্রশংসা করলো।আজ পর্যন্ত ভাইয়ার মুখ থেকে আমার নামে কোন প্রশংসা বের হয়নি।
খাওয়া দাওয়া সেরে রুমে এসে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখনি ভাইয়া এসে বললো,
এখনি ঘুমিয়ে পড়েছিল কেনো? কাল যে ম্যাথটা দিয়েছিলাম সেটা এখন আমার সামনে করবি।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
তার জন্য তো শাস্তি দিয়েছো তাহলে আবার করতে যাবো কেনো?
ভাইয়া বললো,
ওটা তো ভুলে যাওয়ার জন্য দিয়েছি।এখন যদি ম্যাথ টা না পারিস তাহলে সারা রাত জাগিয়ে রাখবো।
এমনেতেই অনেক ঘুম পাচ্ছে তাই অনেক সাহস জুগিয়ে বললাম,
তোমার যদি এতই পড়ানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে নিজের বোন রিয়াকে পড়াও না কেন, আমার অপুকেও তো পড়াতে পারো।
ভাইয়া আমার কথা শুনে বললো,
ওরা কি তোর মতো গাধা নাকি?
আমি বললাম,
আমি মুটেও গাধা না। যথেষ্ট মেধাবী ছাত্রী।
ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,
সেটা তো আমার পড়ানোর জন্য হয়েছিস। ভুলে গেছিস, ক্লাস সেভেনে থাকতে অংকে ফেল গেছিলি।
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চুপসে গেলাম। চুপ চাপ পড়ার রুমে গিয়ে অংকটা করে দেখালাম।
ভাইয়া চলে যাওয়ার পর রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। তখন হঠাৎ মনে হলো আজ তো আপুকে আকাশ ভাইয়ার ফ্যামিলি থেকে দেখতে আসবে। ঠিক দেখতে আসবে না একেবারে বিয়ের ডেট ফাইনাল করবে আজ। আকাশ ভাইয়া আর আপু দুজন দুজনকে ভালো বাসে।
অনেক মানুষ যখন আসবে তাহলে নিশ্চয়ই অনেক কাজ থাকবে তাই ঠিক করলাম আজ কলেজ যাবো না।
কিচেন রুমে উকি দিয়ে দেখলাম মা আর জরিনা খালা নানারকম পদ রান্না করছে।
আমি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি অন করে মাকে খাবার দিতে বললাম।
মা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে খাবার দিয়ে গেল।
১০টার দিকে মোবাইলে ভাইয়ার কল আসতে লাগল। আমি ফোনটা অফ করে কার্টুন দেখায় মনোযোগ দিলাম।
কিন্তু ঠিক তার পনেরো মিনিট পর ভাইয়া আমাদের বাসায় এসে হাজির হলো।
-
-
-
চলবে.........




Writer:- Tanjina islam
 

Delivered by FeedBurner

a