> কনে দেখা আলোয় পর্ব ৫
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ৫


"কিরে কিনঞ্জল,ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?জলদি বের হ!সামান্য হাতে মুখে পানি দিতে এত সময় লাগে নাকি?"
খাবার হাতে সাক্ষর রুমে ঢুকে দেখে কিনঞ্জল তখনো ওয়াশরুম থেকে বের হয়নি।তাই খাবারটা বেডসাইড টি টেবিলে রেখে বাধ্য হয়েই দরজায় টোকা দিচ্ছিলো আর কিনঞ্জলকে ডাকছিলো।বেশ কয়েকবার টোকা পরার পরই কিনঞ্জল একটা সি-গ্রীন রঙের কামিজ পরে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হলো।নাক-মুখ একদম লাল টুকটুকে হয়ে আছে কিনঞ্জলের।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওয়াশরুমেও কান্না করেছে।তবে কিনঞ্জলকে দেখে এই মূহুর্তে সাক্ষরের কেবলই গুটিকয়েক লাইন মনে পড়ছে।
"মেয়েরা যদি জানতো গোসলের পর মাথায় টাওয়েল জড়ানো অবস্থাতেই তাদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে। তাহলে সব মেয়ে বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের উৎসবে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে যেতো।"
~হুমায়ূন আহমেদ (তিথির নীল তোয়ালে)
এতকাল সাক্ষর কেবল গল্প-উপন্যাস মনের খোরাক মেটানোর জন্যই পড়েছে।তবে আজকাল কেনো জানি কিছু বিশেষ চরিত্রের সাথে নিজের বেশ মিল খুজে পায়।সেসব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে ফেলে দিয়েই কিনঞ্জলের হাতে ধরে বিছানায় বসিয়ে,মাথার তোয়ালেটা একটানে খুলে কিনঞ্জলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে দিতে দিতে বলল,
"গোসল করেছিস কেনো?কতবার বলেছি জাস্ট হাত-মুখ ধুয়ে বের হয়ে যাবি।"
"মাথা ব্যাথা করছিলো তাই ভাবলাম গোসল করলে বুঝি একটু ভালো লাগবে।"
ধরা গলায় মিনমিন করে বলল কিনঞ্জল।
"মাথার আর কি দোষ।যেভাবে মরাকান্না জুড়ে দিয়েছিলি মাথাতো ব্যাথা করবেই।তা এতো কান্নার কারনটা কি শুনি?"
চুল মুছে দিতে দিতেই বেশ নরম গলায় কথাগুলো বলছিলো সাক্ষর।কান্নার কারনটা জানতে চাইতেই কিনঞ্জলের বুকের বা পাশটায় আবার চিনচিন করে উঠল।কান্নাগুলো ভেতরে ভেতরে দলা পাকিয়ে আসছিলো।তবে এবার কিনঞ্জল নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য বলল,
"তোয়ালেটা দিন সাক্ষর ভাই।আমি নিজেই চুলটা মুছে নিচ্ছি।"
সাক্ষর তোয়ালেটা বিছানার একপাশে রেখে নিজে কিনঞ্জলের পাশে বসে বলল,
"টপিক চেইঞ্জ করার চেষ্টা করিস না কিনঞ্জল।কি হয়েছিলো বলতো?তুই তখন কান্নার সময় বারবার বলছিলি আমি নাকি তোর জীবনটা শেষ করে দিয়েছি।তোকে বিয়ে করলাম কেনো?আমি যতদূর জানি এই বিয়েটা তোর ইচ্ছেতেই হয়েছে।তাহলে তখন তুই এইসব বলছিলি কেনো?তোকে কি বাসা থেকে প্রেশার দিয়েছিলো আমাকে বিয়ে করার জন্য?"
কিনঞ্জল কিছুই না বলে মাথা নিচু করে বসে রইল।সাক্ষর জবাবের অপেক্ষায় কিনঞ্জলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।কিন্তু কিনঞ্জল নির্বাক।কেবল বারবার ঢুক গিলে কান্নাটা আটকানোর চেষ্টা করছিলো।সাক্ষর বুঝতে পেরে কিনঞ্জলের গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
"কিরে বল,ভয় নেই আমি কাউকে কিছুই বলব না।তবে একটা কথা প্লিজ কোন মিথ্যা বলিস না।"
কিনঞ্জল বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে ছলছলে চোখে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
"রাজি না হওয়ার কারন?তোর প্রতি আমার রুড বিহেভিয়ার?"
কিনঞ্জল মাথা নাড়িয়ে 'না' জানালো।
"তাহলে আমাকে পছন্দ না এইজন্য?"
কিনঞ্জল এবারো মাথা নাড়িয়ে 'না' জানালো।
"তবে?তবে কেনো রাজি ছিলি না?পড়াশোনা কম্পলিট করে বিয়ে করতে চেয়েছিলি?”
কিনঞ্জল হাতের উল্টোপাশ দিয়ে চোখের পানি মুছে ধরা গলায় বলল 'না,সাক্ষর ভাই'।
এবার সাক্ষর দু'হাতের মুঠোতে মাথা ঠেকিয়ে বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে কি জানি ভাবছিলো।আর কিনঞ্জল সাক্ষরের পাশেই বসে
মাথা নিচু করেই টপটপ করে চোখের পানি ফেলছিলো।আর পা নিয়ে মেঝেতে খুটছিলো।হুট করে সাক্ষর ওভাবে মাথা নুয়িয়েই বলল,
"কে সেই খোশনসিব?যে কিনা তোর পুরো মনে রাজত্য করছে।যার জন্য নিজের বরের সামনে বসে তারজন্য চোখের জল ফেলছিস?"
সাক্ষরের কথাটা শুনতেই মূহুর্তের মধ্যেই কিনঞ্জলের চেহারার রঙ পালটে গেলো।যদিও কথাটা সাক্ষর আন্দাজে ঠিল মারার মত করেই বলেছিলো।তবে এখন কিনঞ্জলের ভাবমূর্তি দেখেই যা বুঝার বুঝে নিয়েছে সাক্ষর।নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার জন্য সাক্ষর দুম করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রুমের ভেতর অনবরত পায়চারি আর একহাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে ঘুষি মেরে নিজের রাগটা যথাসম্ভব কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে লাগল।একপর্যায়ে সাক্ষর রক্ত চোখে কিনঞ্জলের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলল,
সেদিনকার ওই ছেলেটাকে তুই ভালোবাসতি?যাকে প্রাঞ্জল(কিনঞ্জলের ভাইয়া) আর আমি ইভটিজার ভেবে মেরেছিলাম?"
কিনঞ্জল সাক্ষরের এমন অগ্নিমূর্তি দেখে ভয়ে খানিকটা শব্দ করেই কান্না করে দিলো আর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।এবার সাক্ষর খানিকটা চেঁচিয়েই বলল,
"তাহলে সেদিন আমরা যখন ছেলেটিকে মারছিলাম আমাদের কিছু বলিসনি কেনো?
কিনঞ্জল নাক টেনে হিঁচকি তুলে কাদতে কাদতে তোতলিয়ে বলল,
" ভ..ভয়ে।"
"বাহ!তোর ভয়ের জন্য একটা নিরপরাধ ছেলে পরে পরে মার খাচ্ছিলো আর তুই মুখে কুলুপ এঁটে দাঁড়িয়ে ছিলি।তখন না হয় ভয়ে বলিসনি। কিন্তু তারপর,তারপর তো বলতে পারতি।বলেছিলি?মনে একজনকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করতে লজ্জা করলো না।আমাকে তুই ঠকিয়েছিস কিনঞ্জল,সেই সাথে আমার পরিবারকেও ঠকিয়েছিস!"
কিনঞ্জল কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে বলল,
"বাসায় সাহস করে জানিয়েছিলাম বলেই ওরা আমাকে জোড় করে আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছে সাক্ষর ভাই।আর আমি কাউকে ঠকাইনি।ঠকিয়েছে তো আমাকে আমার পরিবার।আপনাকে অনেকবার জানানোর চেষ্টা করেছিলাম।তবে ওই ঘটনার পর মা আমার ফোনটা নিয়ে নিয়েছিলো আর আপনিও আমাদের বাসায় আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন।তাই কোনভাবেই আমি আপনার সঙ্গে কন্টাক্ট করতে পারছিলাম না আর বাসায় বলেও কোন লাভ হয়নি।হাজার চেষ্টা করেও আমি বিয়েটা আটকাতে পারিনি সাক্ষর ভাই।আপনাকে আমি ঠকাইনি।"
এই বলেই ডুকরে কেঁদে উঠল কিনঞ্জল।সাক্ষর নিজের রাগটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেই বুঝতে পারল সে বিশাল ভুল করে ফেলেছে।একে তো কিনঞ্জলের মনের এই অবস্থা তার উপর ও নিজেও কিনঞ্জলের উপর চেঁচামেচি করছে।এই এতকিছুর মধ্যে এই বেচারির দোষটা কোথায়?ভেবেই এবার নিজের উপর রাগ হচ্ছে সাক্ষরের।'ড্যাম ইট!'বলেই দেয়ালে একটা লাথি মারল নিজের বোকামির জন্য।বেশ কিছুক্ষণ ধরে নিজেকে শান্ত করে ধীরপায়ে হেটে গিয়ে আবারও কিনঞ্জলের পাশে বসল সাক্ষর।কিনঞ্জল তখনো মাথা নিচু করে কাঁদছিলো।সাক্ষর ঠান্ডা গলায় বলল,
"স্যরি!আমি ইচ্ছে করে তোকে হার্ট করতে চাইনি।কিন্তু তুইতো জানিস আমি একটু বদমেজাজি।অল্পতেই রেগে যাই।নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনা।"
কিনঞ্জল নিশ্চুপ।কিন্তু ফুপিয়ে কান্না ঠিকই করছিলো।সাক্ষর কিনঞ্জকে কাধে আলতো করে হাত রেখে বলল,
"বললাম তো স্যরি।আগে তুই কান্না থামা।তোর এইসব ভ্যা ভ্যা করে কান্নাকাটি আমার সহ্য হয় না।"
কিনঞ্জল এবার দু'পা বিছানায় তুলে হাটুতে ভর দিয়ে উঠেই সাক্ষরকে জড়িয়ে ধরল।কান্না করতে করতে বলল,
"আমার সঙ্গেই কেনো এমনটা হতে হলো সাক্ষর ভাই।আমিতো জেনেশুনে কখনো কারো ক্ষতি করিনি।তবে আমার সঙ্গেই এমনটা কেনো হলো?এখন না আমি আপনার সাথে মন দিয়ে সংসারটা করতে পারব আর না নুহাশের কাছে ফিরে যেতে পারব।কি করব আমি?"
এই বলেই সাক্ষরকে জড়িয়ে ধরেই কান্না করতে লাগল।সাক্ষর নিজেও কিনঞ্জলকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
"কিনঞ্জল তোর বয়স এখন মাত্র ১৭ বছর।১৮ হতে আরও ৫মাস পঁচিশ দিন বাকি।তাই তোর সঙ্গে বিয়ের কথা উঠতেই আমি স্ট্রেইট না করে দিয়েছিলাম।কিন্তু পরে চাচী আম্মু আর চাচার কথা শুনে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছিলাম।তাদের ভয় ছিলো নুহাশকে মারার কারনে যদি রাগের বসে তোর কোন ক্ষতি করে ফেলে তাই তারা রিস্ক নিতে চাইছে না।আর জন্মসনদে তোর বয়স বাড়িয়ে ১৮ করা আছে।তাই তোর আর আমার বিয়েতে ধর্মীয় বা আইনত কোন সমস্যাই নেই।আর আমার বয়স জানিস কত?২৫বছর। বয়সে আমি তোর চেয়ে গুনে গুনে আট বছরের বড়।দুনিয়াদারি সম্পর্কে তোর চেয়ে আমার একটু হলেও বেশি জ্ঞান আছে।তোর আজকের বিহেভিয়ার দেখেই আমি কারনটা খানিকটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছি।তাই ব্যাপারটা তোকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছি।তবে আমি বাকিটা তোর মুখেই শুনতে চাই।কারন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক একটা খোলা বইয়ের মতো হয়ে হয়।যাতে একে অপরকে নির্দ্বিধায় পড়তে পারে।দুজনের মধ্যে কোন লুকোচুরি থাকে না।তাই আমি চাইনা আমাদের সম্পর্কেও কোন লুকোচুরি থাকুক।তোর আর ওই ছেলে নুহাশ না কি যেনো বললি তোদের মধ্যে কি এখনো সম্পর্ক আছে?"
কিনঞ্জল সাক্ষরের বুকে মুখ গুজেই ফুঁপিয়ে কেঁদে মাথা নাড়িয়ে না জানালো।
"ব্রেক-আপ কবে হয়েছে?"
"সম্পর্কটাই তো গড়ে উঠল না ব্রেক-আপ হবে কি করে সাক্ষর ভাই?"
"মানে,সম্পর্ক হয়নি মানে?তুই তো বললি তুই আর নুহাশ দুজন দুজনকে ভালোবাসিস।"
সাক্ষর অবাক হয়ে প্রশ্ন করতেই কিনঞ্জল এবার সাক্ষরের বুক থেকে মাথা তুলে বসল।সাক্ষর কিনঞ্জলের হাত দুটো শক্ত করে ধরতেই কিনঞ্জল একে একে ওর আর নুহাশের সম্পর্ক হওয়া থেকে শুরু করে একটু আগে ওর আর নুহাশের ফোনালাপের সবটাই সাক্ষরকে বলল।সাক্ষর কিছুক্ষন ঝিম ধরে বসে থেকে বলল,
"ক্লাস নাইনে তোর বয়স কত ছিলো রে কিনঞ্জল?চৌদ্দ না পনেরো?এই বয়সেই তুই প্রেম করে বেড়াতিস।আর বাসায় এমন একটা ভাব নিতিস যেনো ভাজা মাছ উলটে খেতে জানিসনা।আর আমার সামনে এলে তো ছাগলের বাচ্চার মতো ভ্যা ভ্যা করিস নয়ত মুখে তালা মেরে বসে থাকিস।"
"আমি আপনাকে ভয় পাই সাক্ষর ভাই।"
মুখটা কাচুমাচু করে বলল কিনঞ্জল।
"তা তো ভয় পাবেই।বরকে ভয় পাবে আর বাইরে প্রেম করে বেড়াবে।তবে মানতে হবে তোর চয়েজ ভালো ছিলি।ছেলেটার আসলেই গোল্ডেন হার্ট।
নয়ত যে বয়সে তুমি নেচে নেচে প্রেম করতে গিয়েছিলে অন্য কেউ হলে এতদিনে 'খেয়ে ছেড়ে দিতো'।"
"ছিঃ!আপনি কি অশ্লীল সাক্ষর ভাই।মুখে কি আপনার কিছুই আটকায় না।"
খানিকটা চাপা ক্রোধ নিয়েই কথাটা বলল কিনঞ্জল।
"হ্যা,এখনতো আমি অশ্লীল হবোই।তুমি করতে পারবা আর আমি বললেই দোষ।সত্যি করে বলতো কিনঞ্জল ছেলেটার সাথে কি কি করেছিস?"
সাক্ষর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করতেই কিনঞ্জল এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
"আপনি আসলেই একটা আস্ত অশ্লীল সাক্ষর ভাই।এসব কি খারাপ খারাপ কথা জিজ্ঞেস করছেন আমাকে।আর আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে জেনেও এতটা স্বাভাবিক কিভাবে আছেন আমিতো সেটাই বুঝতে পারছি না।"
"অস্বাভাবিক হওয়ার তো কিছু নেই।আবেগের বসে আজকাল সবাই দু একটা রিলেশন এ জড়িয়ে থাকে।আর তোকে স্বাভাবিক করার জন্য আমি একটু ফান করছিলাম।তুই আমাকে ভয় পাস সেটা ঠিক আছে।কিন্তু আমার থেকে কিছু লুকাবি না।এবার বল,এখনো ফিরে যেতে চাস নুহাশের কাছে?"
কিনঞ্জল দ্বিধান্বিত গলায় বলল,
"না,ওর কাছে তো আমার ভালোবাসা নাকি টিনএইজের আবেগ।"
"এটাতো তুই অভিমান করে বললি।তো এখন কি করবি?"
"জানিনা।"
"জানিনা বললে তো হবেনা।একটা না একটা ডিসিশন তো নিতেই হবে।"
"কিনঞ্জল নিশ্চুপ।"
সাক্ষর খানিকটা কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করল,
"নুহাশ যদি রাজি হতো তবে কি তুই সত্যিই আমাদেরকে ছেড়ে পালিয়ে যেতি?"
কিনঞ্জল মাথা নিচু করে বলল,
"হয়তো,হয়তোবা না!প্রথমে পাগলামি করলেও নুহাশের কথাগুলো শুনে এখন আমি বেশ দোটানায় ভুগছি সাক্ষর ভাই।নুহাশের কথাগুলো আমাকে সত্যিই খুব ভাবাচ্ছে।ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি আমি।আমি নুহাশকে সত্যিই ভালোবাসি ভাবতাম বলেই এতবছর ভালোবেসেছি কখনো সেই ভালোবাসাটাকে ফিল করতে পারিনি বা চেষ্টাও করিনি।ওর সঙ্গে আমার কাটানো একান্ত সময় গুলো ছিলো বাদাম খাওয়া,আমার পড়াশোনা নিয়ে কথাবার্তা,হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো,মুভি দেখা ব্যাস এতটুকুই।আমার দিক থেকে কখনোই শেয়ারিং,কেয়ার করা ব্যাপারগুলো ছিলো না।যদিও এই নিয়ে নুহাশের কোন অভিযোগ ছিলো না তবে আমার অভিযোগের পাল্লাটা ছিলো ভীষণ ভারী।আমি খুব করে চাইতাম নুহাশ আমাকে ভালোবাসুক।সেদিন আপনার আর ভাইয়ার কাছে নুহাশ মার খেয়েছিলো একমাত্র আমার কারনে।সেদিন আমাদের থেকে একটু সামনে বসা কাপল একে অপরেকে চুমু দিয়েছিলো সেই দেখে আমি নিজেই খুব জেদ করেছিলাম যাতে নুহাশও আমাকে একটা চুমু দেয়।কিন্তু নুহাশ সত্যিই একজন প্রকৃত মানুষ ছিলো।কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না।তাই আমি রাগ করে চলে আসছিলাম আর পেছন পেছন নুহাশও আসছিলো।হাত ধরে আমাকে বার বার আটকানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু আমার ছটপটানির জন্য থামাতে পারছিলো না।তাই বাধ্য হয়ে আমাকে দু'হাতে চেপে ধরে কপালে চুমু দিয়েছিলো আর আমি অভিমান করে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করছিলাম।তখনই আপনি আর ভাইয়া এসে নুহাশকে ইভটিজার ভেবে মারছিলেন।আর আমিও ভয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলাম।আমার উচিত ছিলো সব ভয়ডর ভুলে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে সেভ করার।"
এবার সাক্ষর বেশ দৃঢ় গলায় বলল,
"বাহ!ভালোবাসার ডেফিনেশন তো বেশ ভালোই শিখেছিস।প্রকৃত ভালোবাসা,খাটি ভালোবাসা,আবেগ আরও কত কি?আমি আবার অতো উদার নই।যে বউ অন্য ছেলেকে ভালোবাসে বলে দান-খয়রাত করার জন্য বউকে অন্য ছেলের হাতে তুলে দিবো।বিয়ে যখন করেছি সংসারও করব।যদিও তোকে আমার খুব একটা পছন্দ না।তবে এডজাস্ট করে নিবো।"
এই বলেই সাক্ষর ভাজির প্লেটটা সামনে রেখে রুটি ছিড়ে কিনঞ্জলের মুখে দিলো আর নিজেও খেতে লাগলো।খেতে খেতে খেতেই কিনঞ্জল জিজ্ঞেস করলো,
"আচ্ছা সাক্ষর ভাই,ভালোবাসা ছাড়া কখনো সংসার করা যায়?দাদি বললো সে নাকি ভালোবাসা ছাড়াই দাদার সাথে প্রায় ২৫ বছর সংসার করেছে।তারপর নাকি তাদের প্রেম ভালোবাসা হয়েছে।হয়তো যায়!এই দেখেন না আমি আপনাকে আগে জমের মতো ভয় পেতাম।আর আজকে নিজের টপ সিক্রেটগুলো আপনার সঙ্গে শেয়ার করলাম।এই যে আপনি খায়িয়ে দিচ্ছেন এতেও কিন্তু আমার ভয় লাগছে না।এগুলো কি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে বলেই?এইসব বলতে বলতেই খাওয়াটা শেষ করে প্লেটটা পাশে রেখে কিনঞ্জলের দিকে পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে সাক্ষর থমথমে গলায় বলল,
"তোর বুঝতে ভুল হয়েছে কিনঞ্জল।বিয়ে হয়ে গেছে বলেই আমি বা তুই কেউ চেইঞ্জ হয়ে যায়নি।আমি তোর কষ্টটা শেয়ার করার জন্য আর তোর পেট থেকে কথা বের করার জন্যই কিছুটা সময়ের জন্য তোর সাথে ফ্রেন্ডলি আচরণ করেছি।আদতে আমি সেই আগের সাক্ষর আর তুই ভ্যাবলি কিনঞ্জলই আছিস।যে কিনা চৌদ্দ বছরে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ভাইয়ার বয়সী একজনকে প্রেম করবি বলে প্রপোজ করেছিলি।গাধী কোথাকার!"
কিনঞ্জল এবার মুখটা কাঁচুমাচু করেই বলল,
"আপনিও তো ভাইয়ার বয়সী।আপনাকে বিয়ে করতে পারলে নুহাশকে প্রপোজ করলেই আমি গাধী হয়ে গেলাম।"
সাক্ষর এই পর্যায়ে একদম চেঁচিয়ে উঠল।রেগে গিয়ে বলল,
"একটু ভালো করে কথা কি বলেছি একদম মাথায় উঠে নাচছিস?এত নির্লজ্জ কেনো তুই কিনঞ্জল?পড়ার নামে স্কুল-কলেজে প্রেম করে বেড়াস,বয়ফ্রেন্ড এর কাছে চুমু খেতে চাস,আবার আজকে দুবার আমাকে জড়িয়ে ধরেছিস।কান্না করছিলি বলে আমি তখন কিছু বলিনি।"
এই বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সাক্ষর।আর কিনঞ্জল নিজের বিস্ময় কাটিয়ে দুচোখ ভরা পানি নিয়ে বলল,
"আমি আর কক্ষনো আপনাকে জড়িয়ে ধরব না সাক্ষর ভাই।আপনি আসলেই একটা পিশাচ!"

(চলবে)

Writer:- নাজমুন নাহার তৃপ্তি

 

Delivered by FeedBurner

a