Leave a message
> কনে দেখা আলোয় পর্ব ১২
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ১২


"আপনার গানের গলা কিন্তু চমৎকার!গানটাকে প্রফেশনালি নিলেন না কেনো?"
ভোর সকালে আধো খোলা চোখে ঘুম জড়ানো কন্ঠে সাক্ষরের দিকে তাকিয়ে বিছানায় বসেই কথাটা বলল কিনঞ্জল।সাক্ষর কেবলই গোসল শেষ করে রুমে ঢুকেছে।পড়নে কালো টাউজার আর তোয়ালেটা কাধে ফেলে রাখা।সামনের ভেজা চুলগুলো তখনো কপালে লেপ্টে রয়েছে।কিনঞ্জলের কথা শুনে সাক্ষর ধীরপায়ে হেটে বিছানায় কিনঞ্জলের সামনাসামনি বসে ঠান্ডা স্বরে বলল,
"গান শুনেছিলি তুই?পুরোটা সময়ইতো আমার কাধটাকে বালিশ আর বুকটাকে বিছানা ভেবে বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমিয়ে ছিলি।"
সাক্ষরের কথার পিঠে কিনঞ্জল মাথা নাড়িয়ে বলল,
"উহুম!আমি তো একটুও ঘুমাইনি।ঘুমের অভিনয় করেছি মাত্র।আপনার গান শুনতে শুনতে আমার হঠাৎ করেই কেমন জানি লাগছিলো তাইতো কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম।"
সাক্ষর কিনঞ্জলের কথায় হালকা হাসলো।হাসিটা কেনো জানি কিনঞ্জলের কাছে আজকের ভোরের মতই স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিলো।সাক্ষর মুখে মুচকি হাসি টেনেই বলল,
"তা কিরকম লাগছিলো তোর?যে আমাকে একদম শিকলের মতো পেঁচিয়ে রেখেছিলি?
"জানি না।আমার সাথে ওরকম কোন অনূভুতির এর আগে পরিচয় হয় নি।আমার কেনো জানি খুব সুখ সুখ পাচ্ছিলো।ইচ্ছে করছিলো আপনার বুকের সাথে ওভাবেই মিশে থাকতে।"
সাক্ষর এবারো মুখে হালকা হাসি টেনে বলল,
"নুহাশের বুকেও যখন লেপ্টে থাকতি তখনও কি তোর এরকম সুখ সুখ পেতো?"
কিনঞ্জল মাথা নাড়িয়ে বলল,
"উহু!আমি তো কখনো নুহাশকে জড়িয়েই ধরি নি।নুহাশ শুধু সেদিন আমাকে আটকানোর জন্যই জাপটে ধরে কপালে চুমু দিয়েছিলো তবে আমিতো ওকে জড়িয়ে ধরিনি।আর সেদিন খুব রাগ করেছিলাম বলেই হয়ত কিছু ফিল করিনি।আর তারপরতো ভাইয়া আর আপনি এসে পরেছিলেন।যা ভয় পেয়েছিলাম তখন আবার সুখ-টুক পায় কি করে?"
কিনঞ্জলের কথা শুনে এবার সাক্ষর একটু শব্দ করেই হেসে দিলো।কিনঞ্জলের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
"তাহলে তো তোর আরও ভয়াবহ কিছু অনুভব করার কথা ছিলো।রাগ,ভয় আর ভালোবাসার মানুষের প্রথম স্পর্শ সব মিলেমিশে একাকার অবস্থা।আর তুই বলছিস কিছুই ফিল করিসনি।"
কিনঞ্জল বিরক্তি নিয়ে বলল,
"ধুরর!আমার সত্যিই সেদিন কিছু ফিল হয়নি সাক্ষর ভাই।তবে কালকে যে কেনো ওরকম ফিল হলো?তবে আপনি যখন আমাকে কোলে তুলে ছাদ থেকে নামছিলেন তখন আমার নিজেকে কেমন প্রিন্সেস প্রিন্সেস মনে হচ্ছিলো আর আপনাকে মনে হচ্ছিলো জ্যাক হেসলউড।"
সাক্ষর মুখে বিস্ময়ভাব ফুটিয়ে বলল,
"ইনি আবার কেরে কিনঞ্জল?এখন এটা বলিস না এই জ্যাকফ্রুটও তোর এক্স ছিলো।"
এই এতক্ষনে কিনঞ্জল খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।কিনঞ্জলের এই এক বাজে স্বভাব।ও খুব জোরে শব্দ করে আর শরীর কাপিয়ে হাসে।কিনঞ্জল হাসতে হাসতেই বলল,
"ধুরর!জ্যাক হেসলউড তো এবছরের মিস্টার ওয়ার্ড উইনার।যদিও আমার কাছে ওকে দেখতে শ্বেত রোগীদের মত লাগে।তবুও নামের সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষের খেতাবতো রয়েই যায়।গতকাল রাতে আমার নিজেকে ডিজনিল্যান্ড এর প্রিন্সেস আর আপনাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ আমার স্বপ্নের প্রিন্স চার্ম মনে হয়েছিলো।আর ছাদটা ছিলো কুঞ্জবন।হাজার হাজার ফুলে সজ্জিত ছিলো আমার সেই কুঞ্জবনটা।আর দোলনাটাকে মনে হচ্ছিলো রাধাকৃষ্ণের ঝোলন।আপনার গাওয়া গানটা কেনো জানি আমাকে একদম ভেতর থেকে নাড়া দিচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো গানটা বুঝি আমার জন্যই লেখা হয়েছিলো।প্রত্যেকটা সুর একদম বুকে গিয়ে লাগছিলো।আর আপনি যখন আমাকে বুকে আগলে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামছিলেন তখন আমার নাকে আতরের খুশবু ভেসে আসছিলো।মনে হচ্ছিলো হাজারটা প্রজাপতি উড়ে এসে আমাকে দুষ্টুমির ছলে হাজারটা বাহানায় ছুয়ে দিচ্ছিলো।খুব সুখসুখ পাচ্ছিলো।তবে আপনিতো গটগট করে এসে আমাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলেন।আরেকটু কোলে নিয়ে থাকলে কি হতো?"
কিনঞ্জলের কথায় সাক্ষর অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
"জলন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই শ্রেয়!নইলে কখন কি অঘটন ঘটে যাবে কেউ টেরও পাবো না।"
কিনঞ্জল ভ্রু কুঁচকে বললো,
"কি বললেন?"
সাক্ষর কিনঞ্জলের দিকে তাকিয়ে বলল,
"তো এখন উঠবি কোলে?রাতেতো তোকে বেশিক্ষণ কোলে না রেখে অপরাধ করে ফেলেছি।এখন কোলে নিয়ে পাপমোচন করি।"
কিনঞ্জল ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
"এখন কোলে নিলে কি আর আমার কাল রাতের মত সুখ সুখ লাগবে?না আপনি এখন আমার জন্য গান গাইবেন,না এখন আকাশে চাঁদ আছে আর না হাজারটা প্রজাপতি এখন আমার জন্য ধেই ধেই করে উড়বে!"
সাক্ষর বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বলল,
"প্রজাপতি আর চাঁদের খবর জানি না।তবে তুই চাইলে আমি এখন গান গাইতে পারি।তবে আমি কিন্তু সিচুয়েশন বুঝে গান গাই।"
কিনঞ্জল বেশ খুশি হয়েই দাঁড়িয়ে পড়ল।যদিও এখনো বাইরে সম্পূর্ণ আলো ফুটেনি তবুও কিনঞ্জল বিছানা ছেড়ে নেমে রুমের পর্দাগুলো টেনে দিলো।আর রুমের লাইট অফ করে দিয়ে দেয়ালে টানানো স্টার শেইপের টুইংকেল লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিলো।পুরো ঘরজুড়ে এখন মিটিমিটি মিষ্টি আলোয় কানায় কানায় ভরপুর।কিনঞ্জল ফিরে এসে বলল,
"নিন এবার কোলে তুলুন।আকাশের চাঁদতো আর আমার কথায় ভোর সকালে আকাশে উঁকি দিবে না তাই আমার আকাশের তারাগুলো জ্বালিয়ে দিলাম।"
এই বলেই কিনঞ্জল সাক্ষরের ঘাড়ে নিজের ডান হাতটা তুলে দিলো।সাক্ষরও মুচকি হেসে খানিকটা ঝুকে কিনঞ্জলকে কোলে তুলে নিলো।সকাল সকাল গোসল করায় সাক্ষরের পুরো শরীর বরফের মতো হিম হয়ে আছে।কিনঞ্জল দু'হাতে সাক্ষরের গলা জড়িয়ে ধরেই সাক্ষরের ভেজা লোমশ বুকে মাথাটা এলিয়ে দিলো।কিনঞ্জলের নাকে আবারো সেই আতরের খুশবুটা ভেসে আসছে।আবছা আলোয় রুমটাও যেনো নিজেকে স্বর্গীয় রুপে সাজাতে ব্যাস্ত।কিনঞ্জল সাক্ষরকে গান শুরু করার জন্য তাগাদা দিতেই সাক্ষর একটা বাঁকা হাসি হেসে গলা খাকারি দিয়ে উঠল।কিনঞ্জল বিরক্তি নিয়ে একবার সাক্ষরের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বুকে মাথা রাখল।আর সাক্ষর আবারো হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে গান ধরল,
(গানটা স্কিপ করলে আজকের পর্বের কিছুই বুঝবানা কেউ।আসল কাহিনি তো গানেই।😁😁)
i hate it when you call me bro or bhaiya
তুমি কবে হলা আমার বাপের মাইয়া
এমনটা হতে দেবো না...না..
আমি মানি না
হলেই হবো স্বামী
রিং দেবো দামী,শোনোওও.....
আমার বাচ্চার মাম্মি,ঘুরাবা কত তুমি
আর আমাকে তুমি,আর কিভাবে বুঝাবো তোমায় ah ah ah...
তোমার ভালোবাসা চাই
Yeah,nooooo
ভাইয়ের অভাব নাই
তারপরও কেনো তুমি চাও এতগুলো ভাই?
তোমার প্রেমিকদের লাইনে আছি দাঁড়ায়
পাঁচ বছর খারায়....
i hate it when you call me bro or bhaiya
তুমি কবে হলা আমার বাপের মাইয়া
এমনটা হতে দেবো না...না..
আমি মানি না
হলেই হবো স্বামী
রিং দেবো দামী,শোনোওও.....
গান শেষ হতে না হতেই কিনঞ্জল সাক্ষরের কোল থেকে ধপ করে নেমে গেলো।মুখে একরাশ লজ্জা আর অস্বস্তি ফুটে উঠেছে।আর সাক্ষরের মুখে তখনো সেই দুষ্টু হাসিটা এটে আছে।সাক্ষর গান শুরু করতেই কিনঞ্জলের মুখের রঙ ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছিলো।তাই গান শেষ হতে না হতেই কোল থেকে নেমে গিয়ে সাক্ষরকে মনে মনে হাজারটা বকা দিচ্ছে আর ভাবছে,
"পিশাচটা ইচ্ছে করেই আমাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য গানটা গেয়েছে।তা ওনাকে ভাই ডাকবো না তো কি ডাকবো।এতবছর ধরে ভাইয়া ডেকে আসলাম।এখন একদিনেই কি অভ্যাস বদলানো যাবে?আপনি আসলেই পিশাচ সাক্ষর ভাই।"
আর মুখে বলল,
"আপনি আসলেই খুব বাজে সাক্ষর ভাই।আমাকে এরকমভাবে লজ্জা না দিলেও পারতেন।"
এই শুনে সাক্ষর আবার সুর তুলে বলল,
"আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না।
এইবার আর কিনঞ্জল রুমে একদন্ডও দাড়ালো না।একদৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আর এদিকে সাক্ষর কিনঞ্জলে কান্ডকারখানা দেখে মিটমিটিয়ে হেসে ক্লোজেট থেকে শার্ট বের করে গায়ে জড়াতে জড়াতে গুনগুনিয়ে আবার গান ধরল,
"আমি হবো রাত আর তুই হবি চাঁদ জোসনায় ঘর আমাদের...."

(চলবে)...

লিখা~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি

 

Delivered by FeedBurner

a