Leave a message
> শেষের কবিতা
-->

শেষের কবিতা


পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ- শেষের কবিতা
লেখক:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ধরণ: কাব্যধর্মী উপন্যাস

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা ব্যারিস্টার অমিত রায় নিজেকে পাঁচজনের একজন না বলে পঞ্চমজন ভাবতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। -ধারণায় আধুনিক হলেও তার সবকিছুতে মৌলিকত্বের ছাপ বিদ্যমান। তার জীবনে নারীর অভাব নেই। তার জন্য কন্যাদায়গ্রস্ত মায়েদের অপরিসীম আগ্রহ থাকলেও কন্যারা ঠিকই জানে যে অমিত ধরাছোঁয়ার বাইরের এক সত্তা - যার রূপমাধুরী দূর থেকে অবলোকন করা যায় ; কিন্তু কাছে গিয়ে স্পর্শ করা যায় না। অমিত গতানুগতিক ফ্যাশানে বিশ্বাসী না,বরং তার পছন্দ স্টাইল। অমিতের ভাষ্য,"ফ্যাশানটা হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী।"
শিলঙয়ে বেরাতে গিয়ে ছোটখাটো এক দুর্ঘটনার মাধ্যমে দেখা হয় অমিত আর লাবণ্যের। লাবণ্যের পুরো নাম লাবণ্য দত্ত। পশ্চিমি কলেজের অধ্যক্ষ অবনীশ দত্তের কন্যা সে। অবনীশ দত্ত তার প্রিয় কন্যাটাকে সর্বোচ্চ জ্ঞানদানের চেষ্টা করেছেন। পিতার ইচ্ছে লাবণ্য যদি জীবনে দাম্পত্য সম্পর্কে না-ও জড়ায় তবু নিজের পাণ্ডিত্যই তার সার্বক্ষণিক সহচর হবে।
প্রথম সাক্ষাতেই লাবণ্যের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে অমিত। অমিতের দৃষ্টিতে লাবণ্য সাধারণের মধ্যেই অসাধারণ। লাবণ্যের সম্পর্কে অমিতের ধারণা হলো এই যে, ড্রয়িংরুমে এই মেয়ে অন্য পাঁচজনের মাঝখানে পরিপূর্ণ আত্মস্বরূপে দেখা দিত না। পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না...
লাবণ্যকে পাবার জন্য অমিতের চেষ্টার ত্রুটি রইলো না। শহুরে অমিত বসতি গাড়লো প্রত্যন্ত শিলঙয়ে। কিন্তু লাবণ্যের মন অনেক বেশিই হিসেবী। অমিতের ঘরছাড়া স্বভাব তার কাছে অবিদিত নয়। সে জানে অমিতকে বেশিদিন আঁচলে বেঁধে রাখা যায় না। যে গুণ অমিতকে তার কাছে টেনেছে সেই গুণের দর বেশিদিন রইবে না অমিতের কাছে। এসব কারণে খুব ভালোবাসা সত্ত্বেও অমিতের আহ্বানে সে তাৎক্ষণিক সাড়া দিতে পারেনি।
এভাবেই নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে 'শেষের কবিতা'র কাহিনি।
পাঠ শেষে প্রতিক্রিয়া: 'শেষের কবিতা' রবিঠাকুরের শেষের দিকে কবিতা। বইয়ের প্যাটার্ন ভালোভাবে খেয়াল করলে লক্ষণীয় যে এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণধর্মী রচনা তাঁর। গভীরভাবে নজর দিলে বুঝা যায় এতে ভাববার মত প্রচুর উদ্ধৃতি আছে । উপন্যাসে লেখক অমিতের দিকে একটু বেশি নজর দিয়েছেন। পুরো উপন্যাসে তিনি অমিতের অভ্যাস, দর্শন, মনস্তত্ত্বের দিকে জোর দিয়েছেন। নায়ককে এত বেশি হাইলাইট করার নজির বাংলা সাহিত্যে কমই দেখা যায়। উপন্যাসের চরিত্রগুলোও অমিতের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষিত হয়েছে। কেটি মিত্তির, নরেন, সিসি, লিসি, যোগমায়া, শোভনলাল- প্রত্যেকটি চরিত্রকে লেখক পরিচয় করিয়েছেন অমিতের নজরে।
উপন্যাসের চরিত্রায়নে লেখক সজাগ দৃষ্টি দিয়েছেন। কেতকীকে লেখক আপাতদৃষ্টিতে বেখাপ্পা টাইপের একটা চরিত্র হিসেবে পাঠকের কাছে পরিচয় করিয়ে দিলেও পরক্ষণে তার অতীতের আটপৌরে রূপটিও কারো অজানা থাকেনি।
শোভনলাল চরিত্রের ব্যাপ্তি কমসময়ের হলেও গুরুত্বের দিক থেকে মোটেও হেলা করার মত ছিল না যা উপন্যাসের পরিণতিতে আমরা দেখতে পাই।
যোগমায়া চরিত্রটিকে লেখক অমিত আর লাবণ্যের জীবনে অনেকটা বড়ায়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
শেষে আবারও অমিত আর লাবণের দ্বারস্থ হওয়া যাক! অমিত তার ভালোবাসাকে ব্যাপ্তভাবে আকাশে মুক্ত রাখতে চেয়েছে- যা তাকে অন্তরে সঙ্গ দেবে। আবার আরেক ভালোবাসাকে সংসারে যুক্ত রেখে নিতে নিতে চেয়েছে অসঙ্গের স্বাদ। কেতকীর ভালোবাসাকে সে রেখেছে ঘড়ায় তোলা জল করে -যাকে সে প্রতিদিন তুলবে আর ব্যবহার করবে। আবার লাবণ্যের ভালোবাসাকে রেখেছে দিঘি করে, যাতে তার মন সাঁতার কাটবে। লাবণ্যের পক্ষ থেকে এমন মারপ্যাঁচের সিদ্ধান্ত না থাকলেও মনের দোলাচলবৃত্তি নেহায়েত অপ্রতুল ছিল না।
পরিশেষে 'শেষের কবিতা' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমনই এক নান্দনিক সৃষ্টি যা পাঠক যতবারই পড়বে প্রত্যেকবার নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবে। সুতরাং যারা পড়েননি তারা অচিরেই পড়ে ফেলতে পারেন দারুণ এই বইটি
!


Writer:- 
Zinnatuzzohora Bithy
 

Delivered by FeedBurner

a