> কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৬
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৬


ভোরবেলা দরজায় কারো নক করার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় সাক্ষরের।পাশেই তাকিয়ে দেখে কিনঞ্জল কম্বল মুড়ি দিয়ে খাটের ওপাশে জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে।বেকুবটা আরেকটু ওদিকে গেলে বিছানা থেকেই পরে যাবে।এই দেখে সাক্ষর কম্বলের নিচেই কিনঞ্জলের পিঠ আর কোমর আগলে ধরে এনে বিছানার মাঝ বরাবর এনে শুয়িয়ে দিলো।গতকাল রাতের কথাগুলো ধরেই বোধহয় অমন দুরে সরে শুয়ে আছে মহারাণী।এই ভেবেই মুচকি হাসল সাক্ষর।কিনঞ্জলের শোয়ার ধরন একদম সুবিধের না।ঘুমের মধ্যেই হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করে,নয়ত ঘুমের মধ্যে সাক্ষরের হাতটাকে কোলবালিশ বানিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকে।একদিন তো সাক্ষরের গলার উপর ঘুমের ঘোরে পা উঠিয়ে দিয়েছিলো কিনঞ্জল।তবে এই নিয়ে সাক্ষর কিনঞ্জলকে কিছুই বলেনি।কারণ ওর শোয়ার ধরন ছোট বেলা থেকেই এমন।এইসব ভেবেই কম্বলটা কিনঞ্জলের গায়ে ভালোমতন জড়িয়ে দিয়ে কপালের এককোণে উষ্ণ ঠোঁটজোড়া ছুয়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল সাক্ষর।আড়মোড়া ভেঙ্গে দরজা খুলতেই দেখে বাইরে সাফিন চাচ্চু আর তাহা,তাহি তিনজনই জগিং সুট পরে দাড়িয়ে আছে।তবে সাক্ষর তা খেয়াল করেনি। সাক্ষর চোখ কচলাতে কচলাতে দরজায় হেলান দিয়ে বলল,
"কি ব্যাপার চাচ্চু?এত সকাল সকাল আমার রুমে?এনিথিং সিরিয়াস?”
সাফিন পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,
"আমরা জগিং করতে যাচ্ছি।ভাবলাম তোকে আর টুকটুকিকেও নিয়ে যাই।"
"সকাল সকাল জগিং করতে যাচ্ছো,জিমে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছো নাকি?"
এই শুনে সাফিন তার বিখ্যাত হৃদয়কাড়া হাসিটা মুখে ঝুলিয়ে বলল,
"নো,ইয়াং ম্যান।জিমে যাওয়া বন্ধ করে তোর বাবার মত ভুড়ি বানানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই।তোর বাবার ডিকশনারিতে তো ক্যালরি বার্ণ বলে কোন শব্দ নেই যেটা আছে তা হলো শুধু ক্যালরি আর্ন।মায়ের ডায়বেটিস এর সমস্যা জানিসই তো।তাই মাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোবো।
আর তুই,টুকটুকি,তাহা,তাহি গেলে মা সময়টাকেও বেশ ইনজয় করবে।এই বয়সে নাতি-নাতনীদের সঙ্গ মেডিসিনের চাইতেও বেশি কাজ করে।যা জলদি গিয়ে রেডি হয়ে আয়।"
সাক্ষর মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল,
"চাচ্চু আমরা আজকে না গেলে হয় না।কালকে থেকে সিউর জয়েন করব তোমাদের।আর কিনঞ্জলও বোধহয় যেতে চাইবে না।"
এই শুনে সাফিন বিরক্ত হয়ে বলল,
"তোদের জেনারেশনের এই এক সমস্যা।বড্ড আলসে তোরা।সব কয়টা ফার্মের মুরগী।আমি কোন কথা শুনতে চাই না।তোরা যাবি মানে যাবি।"
সাক্ষর কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে বলল,
"উফফ!তুমি ভুল ভাবছো চাচ্চু।ব্যাপারটা আলসেমির না। যাবো না বলছি কারণ আমরা দুজনেই গতকাল বেশ রাত জেগেছি।খুব বড়জোড় তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছি দুজন রাতে।টায়ার্ডনেস এখনো কাটেনি।এরপর আবার আমার অফিস আছে,কিনঞ্জলের কলেজ আছে।তাই এখন আরেকটু ঘুমাতে চাইছিলাম।তোমরা আজকে যাও না।আমরা নেক্সট ডে তোমাদেরকে জয়েন করব।"
সাক্ষরের কথা শেষ হতে না হতেই সাফিন সরু চোখে সাক্ষরের দিকে তাকিয়ে,বাম ভ্রু নাচিয়ে মিটমিটিয়ে হেসে বলল,
"ওহ তাহলে এই ব্যাপার!রাত জাগা,টায়ার্ডনেস,তিন ঘন্টা ঘুম।ভালো,বেশ ভালো!!তা শাওয়ার না নিয়ে আমার সামনে সং সেজে দাড়িয়ে আছিস কেনো?যা রুমে যা!"
এই বলেই সাফিন মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছিলো।সাক্ষর সাফিনের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে পাশে তাহা,তাহি আছে বলে এক কদম এগিয়ে গিয়ে সাফিনকে জড়িয়ে ধরল।কানের কাছে মুখটা নিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে নিচু আওয়াজে বলল,
"ছেলে আর ছেলের বউকে নিয়ে একটু তো রয়ে সয়ে কথা বলো চাচ্চু।তার মধ্যে আবার পাশে তাহা,তাহিও দাড়িয়ে আছে।ওরা যদি বুঝতে পেরে যায়?"
এই দেখে সাফিন হেসে নিজেও সাক্ষরকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে বলল,
"ছেলে-মেয়ে তো বন্ধুর মতই হয়।আমি কি তোদের মত ব্যাকডেটেড নাকি?আর তাহা,তাহি এসব বুঝবে না।সো চিল মামা!তা গুড নিউজ কবে পাচ্ছি?"
এই শুনে এবার সাক্ষর নিজেও হেসে দিলো।আর হাসতে হাসতেই বলল,
"তুমি একটা চিজ চাচ্চু।তা তোমার এক্সাইটমেন্টে
পানি ঢালার জন্য একটা কথা বলি।গুড নিউজ পেতে পেতে তুমি আমি দুজনেই বুড়ো হয়ে যাবো।যে আন্ডা-বাচ্চা আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছো তোমরা।এখন অবধি ঠোঁটে ঠোঁট মেলাতে পারলাম না আর তুমি আছো গুড নিউজের আশায়।জাস্ট তোমার মেয়ের কানের লতিতে একটু চুমু দিয়েছিলাম গতকাল রাতে তাতেই তোমার টুকটুকি মা সেই যে ভাইব্রেশন মোডে চলে গিয়েছিলো।গুড নিউজের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলে তোমার টুকটুকি মাকে আর খুজেও পাওয়া যাবে না।"
এই বলেই শরীর কাপিয়ে হাসতে লাগল সাক্ষর।আর সাফিন সাক্ষরের পিঠে চাপড় মেরে বলল,
"মুখে লাগাম লাগা হতচ্ছাড়া।তুই তো আমার চেয়েও এক কাঠি উপর দিয়ে যাস।আর ঠোঁটে ঠোঁট মেলাবি মানে।তোর ঠোঁট আমি বোয়াল মাছ দিয়ে খাওয়াবো।তোর ওই এঁটো ঠোঁটে আবার আমায় মেয়েকে চুমু খেতে চাস।শ্যেলীকে চুমু দেওয়ার সময় মনে ছিলো না?
"নাহ!"
এই বলে দুজনেই হেসে দিলো।আর এদিকে তাহা,তাহি ওদের ভাই আর মামার সকাল সকাল এমন জড়িয়ে ধরে হাসাহাসি করার তেমন বিশেষ কোন মর্ম উদ্ধার করতে না পেরে ওখান থেকে চলে গেলো।আর সাফিন হাসতে হাসতেই বলল,
"টুকটুকিকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দুজনে ১৫মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আয়।আমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র ছেলের বউয়ের ঠোঁটে ঠোঁট মেলানোর ইচ্ছে কি আমি অপূর্ণ রাখতে পারি?সিচুয়েশন তৈরি করার দ্বায়িত্ব আমার।আর বাকিটুকুর দ্বায়িত্ব তোর।বাকিসব কাপঝাপ আমার টুকটুকি মাকে একটু ম্যাচিউর আর মেন্টালি প্রিপায়ার্ড হতে দে, তারপর হবে।আপাতত এইটুকুতেই খুশি থাক।
তবে আমি অনেক খুশি হয়েছি যে তুই আমার কথা রেখেছিস।কিনঞ্জলকে নিজের মত করে সময় দিচ্ছিস।নিজেদের সম্পর্কটাকে সময় দিচ্ছিস।তুই নিজেও জানিস না তোর এইটুকু কম্প্রোমাইজ কিনঞ্জলের চোখে তোর ঠিক কতটা সম্মান বাড়িয়ে তুলেছে।আর এই সম্মানটুকুই একদিন তোর কাছে ভালোবাসা হয়ে ধরা দিবে।কিনঞ্জলের সামনে তুই নিজেকে একজন কামুক পুরুষ রুপে না বরং একজন প্রকৃত পুরুষ হিসেবে প্রমান করেছিস সাক্ষর।যে কিনা নিজের স্ত্রীকে ভোগের সামগ্রী ভাবে না,নিজের মাথার তাজ,নিজের জীবনসঙ্গী,অর্ধাঙ্গিনী মানে।I'm really proud of you my son."
এই বলেই সাফিন সাক্ষরের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।আর সাক্ষর নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে রুমে ঢুকে পরল।

(চলবে)...

লিখা:~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি

 

Delivered by FeedBurner

a