.
কিনঞ্জল গালে হাত দিয়ে এতক্ষণ সাক্ষরের কথাগুলো হা করে শুনছিলো।সাক্ষর তাকাতেই অবাক হওয়ার ভঙ্গিমায় বলল,
"বাবাহ!কত কিছু করে ফেলেছেন আপনি সাক্ষর ভাই।বিয়ের আগে একজনকে ঠোঁটেও চুমু দিয়ে দিলেন।ছিঃছিঃ!"
সাক্ষর ভ্রু কুঁচকে বলল,
"বললাম তো ওটা আমার বয়সী আবেগের ভুল ছিলো।আর খুব যে ছিঃ ছিঃ করছিস তুইও তো নুহাশকে বিয়ের আগেই তোকে চুমু দেওয়ার জন্য কান্নাকাটি করেছিলি।সে বেলায়?"
কিনঞ্জল নাক সিটকিয়ে বলল,
"ইসস!আমি তো কপালে চুমু দিতে বলেছিলাম।আমি কি অতো লুচু ছিলাম নাকি যে বিয়ের আগেই অন্য ছেলেকে ঠোঁটে চুমু দিতে বলব?আমি ছোট হলেও অত গাধী ছিলাম না।"
এই বলেই নিজের কপালের বেবি চুলগুলো ছুড়ে মারার ভঙ্গিতে কানের পেছনে নিলো কিনঞ্জল।সাক্ষর কিনঞ্জলের কথায় প্রথমে রেগে গেলেও পরে কি যেনো ভেবে একটা বাঁকা হাসি দিলো।আর বাঁকা হাসিটা মুখে টেনেই বলল,
"বেশ!আমি ক্যারেক্টারলেস ছিলাম তাই বিয়ের আগে অন্য মেয়েকে চুমু খেয়েছিলাম।আর তুই খুব বুদ্ধিমতী তাই প্রেমিককে কপালে চুমু দিতে বলেছিলি।এটাই বলতে চাইছিস তো?কিন্তু এখন!এখনতো তোর আমার দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে।তো এখন যদি আমি তোর ঠোঁটে চুমু দেই তাহলে তো আর আমি ক্যারেক্টারলেস হয়ে যাবো না।তাই না!তো কি বলিস?দিবো চুমু?"এই বলেই সাক্ষর কিনঞ্জলের ঠোঁটের দিকে ইশারা করল।এদিকে সাক্ষরের এমন পাল্টা আক্রমনে কিনঞ্জলের পুরো মরি মরি অবস্থা।চোখ বড় বড় করে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাক্ষরের দিকে।কিনঞ্জল কল্পনাও করেনি সাক্ষর এমন কিছু বলবে।যদিও কল্পনা না করাটা কিনঞ্জলের বোকামি।যা লাগাম ছাড়া কথাবার্তা সাক্ষরের সেই তুলনায় এটা তো দুধভাত।কিনঞ্জল আমতা আমতা করে টপিক চেইঞ্জ করার জন্য বলল,
"উফফফ!ঠাট্টা করা বাদ দিন সাক্ষর ভাই।জানেন আজকে কলেজে আমার দুই ক্লাসমেট আমাকে খুব হ্যারাসমেন্ট করেছিলো এইজন্যই তো তখন আপনাকে ওভাবে প্রশ্নটা করলাম।"
সাক্ষর কিনঞ্জলের এমন টপিক চেইঞ্জ করার ব্যার্থ চেষ্টা দেখে হেসে দিলো।কিনঞ্জলের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল,
"তুই আমার সঙ্গে থেকে থেকে বেশ স্মার্ট হয়ে যাচ্ছিস কিনঞ্জল।তবে তুই তাও আজীবন ভ্যাবলিই থেকে যাবি।"
"আর আপনিও একটা পিশাচ-ই থাকবেন সাক্ষর ভাই।" এই বলেই কিনঞ্জল নিজের মুখটা দুহাত দিয়ে চেপে ধরল।সাক্ষরের কথা শেষ হতে না হতেই কিনঞ্জলও তালে তাল মিলিয়ে মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছে।ব্যাপারটা সাক্ষর বুঝতে পেরে কিনঞ্জলকে আর তেমন ঘাটালো না।বেশ আয়েশ করেই নিজের ডান-পা’টা কিনঞ্জলের কোলের উপর তুলে দিয়ে বলল,
"পা'টা একটু টিপে করে দেতো।বড্ড ম্যাজম্যাজ করছে শরীরটা।এরপরে আবার পিঠেও ম্যাসাজ করে দিবি।পা'কাটিয়ে বসে ওই কদিন আমাকে অনেক খাটিয়েছিস এখন একটু তো রিটার্ন কর।আর কলেজ এর কথা কি যেনো বলবি?"
কিনঞ্জল কোন ভনিতা ছাড়াই বেশ যত্ন নিয়েই সাক্ষরের পা টিপতে শুরু করল।আর ফাঁকে ফাঁকে আজকে কলেজে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটাই বিস্তারিতভাবে বলল সাক্ষরকে।সেই সাথে চৈতীর ওকে ঢাল হয়ে প্রটেক্ট করার কথাটাও বলল।"
সাক্ষর বেশ মনোযোগ দিয়েই পুরো ঘটনাটা শুনলো।কিনঞ্জলের কোল থেকে পাটা টেনে দিয়ে ঝিম ধরে কিছুক্ষণ বসে রইল।তারপর বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলতে শুরু করল,
"দেখ কিনঞ্জল!প্রথমত রুবাইয়া নামের মেয়েটা তোর বিয়ে হওয়া নিয়ে, নুহাশকে নিয়ে যেভাবে তোকে বাজে ইঙ্গিত দিয়েছিলো আর যে ভাবে তোকে অপমান করার চেষ্টা করেছিলো তোর উচিত ছিলো সাথে সাথে মেয়েটাকে কষে একটা থাপ্পড় মারা।কারন এই টাইপের মেয়েদের বোঝানো আর উলুবনে মুক্তা ছড়ানো একই কথা।টোটাল টাইম ওয়েস্ট।এরা নিজের মতো সবাইকেই নর্দমার কীট মনে করে।তবে আমাকে আর তোকে নিয়ে যা বলেছে সেটা প্রাক্টিকাল কথা।তবে ওদের বলার ধরনটা বাজে ছিলো।তাই এবারও তোর আরেকটা থাপপড় মারা উচিত ছিলো কিংবা তোর ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিলো।কারণ দুজন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের পরের তিনমাসেও কোন শারীরিক সম্পর্ক হয়নি এটা তুই ওদের জীবনেও বিশ্বাস করাতে পারবি না,যদি না ছেলের শারীরিক কোন সমস্যা থাকে।তাই তোর কথাটা ওদের কাছে বলাটাই ছিলো সবচেয়ে বড় বোকামি।মুভিতে,নাটকে এসব হলেও বাস্তবে এসব আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া কিছুই না।স্বাভাবিক ম্যারিড কাপল হলে তো হলোই,আর যদি জোড় করেও কোন মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয় নিজের অনিচ্ছায় কিংবা স্বামীর জোড় জবরদস্তির কবলে পরে হলেও শারীরিক সম্পর্কটা ঠিকই হয়ে যায়।তাছাড়া স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই যদি বিয়ের আগে প্রেম ঘটিত সম্পর্ক থাকে তবুও বিবাহিত কাপলের মধ্যে এমন খুটিনাটি অনেক উইক মোমেন্ট এসেই যায় যখন তারা নিজেদের অজান্তেই এক হয়ে যায়।ঠিক যেমনটা আমি সেদিন শ্যেলীর উপর দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।সেদিনের ঘটনাটাও আমি একটা উইক মোমেন্টেই করে বসেছিলাম।এখন তুই বলতে পারিস,কই আমাদের মধ্যেতো তেমন কোন সম্পর্ক,কিংবা উইক মোমেন্ট আসেনি।তুই এইকথা বললেও আমি বিন্দুমাত্র অবাক হবো না।কারন তুই যা ভ্যাবলি তুই যদি প্রশ্নটা না করিস আমি বরং তাতেই বেশি অবাক হবো।"
এই বলেই সাক্ষর কিনঞ্জলের দিকে তাকালো।কিনঞ্জল বেশ বিরক্তি মুখে ফুটিয়ে বলল,
"হ্যাঁ,আমি জিজ্ঞেস করতাম।কিন্তু এখানে ভ্যাবলি বলার কি হলো?মনে প্রশ্ন জাগলে জিগ্যেস করব না?"
সাক্ষর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"তোর মতো ভ্যাবলিকে মানুষ করা আমার কর্ম না।ভেবেছিলাম তোকে বলব না,রাগ করবি,আবার লজ্জাও পেতে পারিস।তোর মনে যখন এতই প্রশ্ন জাগে,এতই জানার শখ তাহলে শোন।আমি কোন দুধে ধুয়া তুলসি পাতা,কিংবা ব্রক্ষ্মচারী না,যে সারাজীবন তোকে দেখে দেখেই কাটিয়ে দিবো।তোর সঙ্গে এখন একজন ফ্রেন্ডের মত আচরণ করছি,স্বামীর অধিকার ফলাচ্ছি না বলে আমাকে কোন ঋষি-মনিষী ভাবার কারণ নেই।সব কিছুর উর্ধ্বে আমি একটা ছেলে।প্রকৃতির নিয়মে আমারও কিছু চাওয়া পাওয়া আছে।কিন্তু তোকে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই সম্পর্কটাকে সময় দিচ্ছি।পক্ষান্তরে আমি নিজেকে সময় দিচ্ছি।তোর সাথে আমাদের সম্পর্কটাকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।তোর জন্মের পর থেকে আমাদের বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত তোকে আমি বোনের নজর ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখিনি।তাই হুট করেই বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় তোর সাথে সাথে আমিও বেশ হোঁচট খেয়েছিলাম।কিন্তু তুই তো জানিস চাচ্চু আমার কতটা প্রিয়।চাচ্চুর কথা ফেলতে পারব না বলেই তোকে বিয়ে করা।আর তোকে তো আগেই বললাম ক্লাস নাইন-টেন থেকেই নিজের জীবনসঙ্গীকে নিয়ে কত স্বপ্ন বুনে রেখেছি আমি।আর যাকে এতবছর বোনের নজরে দেখছি তাকে যখন আমার কিশোর বয়সের দেখা হাজারটা স্বপ্নমিলিত অর্ধাঙ্গিনীর যায়গায় দেখলাম বড্ড রাগ লেগেছিলো।ভেবেছিলাম আমার জীবনসঙ্গীকে নিয়ে দেখা সব স্বপ্নই বুঝি শেষ হয়ে গেলো।এজন্যই বাসর ঘরে তোকে দিয়ে সারারাত বাতাস করিয়েছি।কিন্তু পরে নিজেরই খারাপ লাগছিলো।কিন্তু তারপরও অনিচ্ছা স্বত্বেও কয়েকবার তোকে কাদিয়ে ফেলেছি আমি।ব্যাপারটা আমাকে বড্ড যন্ত্রণা দিচ্ছিলো।"
.
" তাহলে এখন কি হলো?আপনি তো সেদিন বললেন বিয়ে যখন করেছেন সংসার ও করবেন।আমার সাথে সংসার করলেতো আপনার কোন স্বপ্নই পূরণ হবে না।"
সাক্ষরের কথার মাঝেই কথাটা বলে ফেলল কিনঞ্জল।সাক্ষর এই শুনে বলল,
"কেনো পূরণ হবে না?তুই কি আমার মায়ের পেটের বোন?তোর বাবা আর আমার বাবা ভালো বন্ধু।সেই সূত্রে তোকে এতকাল বোন ভেবেছি।কিন্তু এখন যখন বিয়ে হয়েই গেছে বউ ভাবতে তো কোন সমস্যা নেই।বিয়ে এমন একটা পবিত্র সম্পর্ক।যা কবুল বলার পরপরই আপনাআপনি নিজের জীবনসঙ্গীর প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত প্রেম,ভালোবাসা বা মায়া যাই বলিস এসেই যায়।তুই তো একটা পাষাণ আর খাটাশ মহিলা তাই আল্লাহর দেওয়া রহমত তোর অবধি পৌঁছাতে পারেনি।কিন্তু আমিতো আর তোর মতো খাটাশ নই তাই বিয়ের দুদিন পর থেকে রহমতের ধাক্কায় নিজের অটিস্টিক বউয়ের সেবা শুরু করে দিয়েছিলাম।এগুলো কি আমি এমনিই করেছি?
আমার সব স্বপ্ন আমি তোকে দিয়েই পূরণ করব।তবে তোর ব্যাড লাক।আমার ঠোঁটটা নিজের ভার্জিনিটি অনেক বছর আগেই খসিয়ে ফেলেছে।তাই তোর ফার্স্ট কিস একটা নন-ভার্জিন ঠোঁটেই হবে।তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় কর।আবেগের ঠ্যালায় নিজের ভার্জিনিটি সুন্দরী শ্যেলীতে অর্পণ করে আসিনি।ওটা তোর জন্যই যত্ন করে তুলে রেখেছি।পুরো নন-ইউসড,প্যাকেটজাত মাল!"
এই বলেই সাক্ষর একটা চোখ টিপ মারল কিনঞ্জলকে।আর কিনঞ্জলের কানের কাছে ঠোঁটটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
"আমার সব স্বপ্নগুলোর কথা বললে তুই এক্ষুনি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবি।তাই আপাতত আমার ছোটখাটো একটা ইচ্ছের কথাই শোন,
"আমি আমৃত্যু প্রতিটা রাত তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে,আর প্রতিটা সকাল তোকে আমার বুকের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে চাই।"
কিনঞ্জল গালে হাত দিয়ে এতক্ষণ সাক্ষরের কথাগুলো হা করে শুনছিলো।সাক্ষর তাকাতেই অবাক হওয়ার ভঙ্গিমায় বলল,
"বাবাহ!কত কিছু করে ফেলেছেন আপনি সাক্ষর ভাই।বিয়ের আগে একজনকে ঠোঁটেও চুমু দিয়ে দিলেন।ছিঃছিঃ!"
সাক্ষর ভ্রু কুঁচকে বলল,
"বললাম তো ওটা আমার বয়সী আবেগের ভুল ছিলো।আর খুব যে ছিঃ ছিঃ করছিস তুইও তো নুহাশকে বিয়ের আগেই তোকে চুমু দেওয়ার জন্য কান্নাকাটি করেছিলি।সে বেলায়?"
কিনঞ্জল নাক সিটকিয়ে বলল,
"ইসস!আমি তো কপালে চুমু দিতে বলেছিলাম।আমি কি অতো লুচু ছিলাম নাকি যে বিয়ের আগেই অন্য ছেলেকে ঠোঁটে চুমু দিতে বলব?আমি ছোট হলেও অত গাধী ছিলাম না।"
এই বলেই নিজের কপালের বেবি চুলগুলো ছুড়ে মারার ভঙ্গিতে কানের পেছনে নিলো কিনঞ্জল।সাক্ষর কিনঞ্জলের কথায় প্রথমে রেগে গেলেও পরে কি যেনো ভেবে একটা বাঁকা হাসি দিলো।আর বাঁকা হাসিটা মুখে টেনেই বলল,
"বেশ!আমি ক্যারেক্টারলেস ছিলাম তাই বিয়ের আগে অন্য মেয়েকে চুমু খেয়েছিলাম।আর তুই খুব বুদ্ধিমতী তাই প্রেমিককে কপালে চুমু দিতে বলেছিলি।এটাই বলতে চাইছিস তো?কিন্তু এখন!এখনতো তোর আমার দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে।তো এখন যদি আমি তোর ঠোঁটে চুমু দেই তাহলে তো আর আমি ক্যারেক্টারলেস হয়ে যাবো না।তাই না!তো কি বলিস?দিবো চুমু?"এই বলেই সাক্ষর কিনঞ্জলের ঠোঁটের দিকে ইশারা করল।এদিকে সাক্ষরের এমন পাল্টা আক্রমনে কিনঞ্জলের পুরো মরি মরি অবস্থা।চোখ বড় বড় করে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাক্ষরের দিকে।কিনঞ্জল কল্পনাও করেনি সাক্ষর এমন কিছু বলবে।যদিও কল্পনা না করাটা কিনঞ্জলের বোকামি।যা লাগাম ছাড়া কথাবার্তা সাক্ষরের সেই তুলনায় এটা তো দুধভাত।কিনঞ্জল আমতা আমতা করে টপিক চেইঞ্জ করার জন্য বলল,
"উফফফ!ঠাট্টা করা বাদ দিন সাক্ষর ভাই।জানেন আজকে কলেজে আমার দুই ক্লাসমেট আমাকে খুব হ্যারাসমেন্ট করেছিলো এইজন্যই তো তখন আপনাকে ওভাবে প্রশ্নটা করলাম।"
সাক্ষর কিনঞ্জলের এমন টপিক চেইঞ্জ করার ব্যার্থ চেষ্টা দেখে হেসে দিলো।কিনঞ্জলের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল,
"তুই আমার সঙ্গে থেকে থেকে বেশ স্মার্ট হয়ে যাচ্ছিস কিনঞ্জল।তবে তুই তাও আজীবন ভ্যাবলিই থেকে যাবি।"
"আর আপনিও একটা পিশাচ-ই থাকবেন সাক্ষর ভাই।" এই বলেই কিনঞ্জল নিজের মুখটা দুহাত দিয়ে চেপে ধরল।সাক্ষরের কথা শেষ হতে না হতেই কিনঞ্জলও তালে তাল মিলিয়ে মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছে।ব্যাপারটা সাক্ষর বুঝতে পেরে কিনঞ্জলকে আর তেমন ঘাটালো না।বেশ আয়েশ করেই নিজের ডান-পা’টা কিনঞ্জলের কোলের উপর তুলে দিয়ে বলল,
"পা'টা একটু টিপে করে দেতো।বড্ড ম্যাজম্যাজ করছে শরীরটা।এরপরে আবার পিঠেও ম্যাসাজ করে দিবি।পা'কাটিয়ে বসে ওই কদিন আমাকে অনেক খাটিয়েছিস এখন একটু তো রিটার্ন কর।আর কলেজ এর কথা কি যেনো বলবি?"
কিনঞ্জল কোন ভনিতা ছাড়াই বেশ যত্ন নিয়েই সাক্ষরের পা টিপতে শুরু করল।আর ফাঁকে ফাঁকে আজকে কলেজে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটাই বিস্তারিতভাবে বলল সাক্ষরকে।সেই সাথে চৈতীর ওকে ঢাল হয়ে প্রটেক্ট করার কথাটাও বলল।"
সাক্ষর বেশ মনোযোগ দিয়েই পুরো ঘটনাটা শুনলো।কিনঞ্জলের কোল থেকে পাটা টেনে দিয়ে ঝিম ধরে কিছুক্ষণ বসে রইল।তারপর বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলতে শুরু করল,
"দেখ কিনঞ্জল!প্রথমত রুবাইয়া নামের মেয়েটা তোর বিয়ে হওয়া নিয়ে, নুহাশকে নিয়ে যেভাবে তোকে বাজে ইঙ্গিত দিয়েছিলো আর যে ভাবে তোকে অপমান করার চেষ্টা করেছিলো তোর উচিত ছিলো সাথে সাথে মেয়েটাকে কষে একটা থাপ্পড় মারা।কারন এই টাইপের মেয়েদের বোঝানো আর উলুবনে মুক্তা ছড়ানো একই কথা।টোটাল টাইম ওয়েস্ট।এরা নিজের মতো সবাইকেই নর্দমার কীট মনে করে।তবে আমাকে আর তোকে নিয়ে যা বলেছে সেটা প্রাক্টিকাল কথা।তবে ওদের বলার ধরনটা বাজে ছিলো।তাই এবারও তোর আরেকটা থাপপড় মারা উচিত ছিলো কিংবা তোর ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিলো।কারণ দুজন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের পরের তিনমাসেও কোন শারীরিক সম্পর্ক হয়নি এটা তুই ওদের জীবনেও বিশ্বাস করাতে পারবি না,যদি না ছেলের শারীরিক কোন সমস্যা থাকে।তাই তোর কথাটা ওদের কাছে বলাটাই ছিলো সবচেয়ে বড় বোকামি।মুভিতে,নাটকে এসব হলেও বাস্তবে এসব আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া কিছুই না।স্বাভাবিক ম্যারিড কাপল হলে তো হলোই,আর যদি জোড় করেও কোন মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয় নিজের অনিচ্ছায় কিংবা স্বামীর জোড় জবরদস্তির কবলে পরে হলেও শারীরিক সম্পর্কটা ঠিকই হয়ে যায়।তাছাড়া স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই যদি বিয়ের আগে প্রেম ঘটিত সম্পর্ক থাকে তবুও বিবাহিত কাপলের মধ্যে এমন খুটিনাটি অনেক উইক মোমেন্ট এসেই যায় যখন তারা নিজেদের অজান্তেই এক হয়ে যায়।ঠিক যেমনটা আমি সেদিন শ্যেলীর উপর দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।সেদিনের ঘটনাটাও আমি একটা উইক মোমেন্টেই করে বসেছিলাম।এখন তুই বলতে পারিস,কই আমাদের মধ্যেতো তেমন কোন সম্পর্ক,কিংবা উইক মোমেন্ট আসেনি।তুই এইকথা বললেও আমি বিন্দুমাত্র অবাক হবো না।কারন তুই যা ভ্যাবলি তুই যদি প্রশ্নটা না করিস আমি বরং তাতেই বেশি অবাক হবো।"
এই বলেই সাক্ষর কিনঞ্জলের দিকে তাকালো।কিনঞ্জল বেশ বিরক্তি মুখে ফুটিয়ে বলল,
"হ্যাঁ,আমি জিজ্ঞেস করতাম।কিন্তু এখানে ভ্যাবলি বলার কি হলো?মনে প্রশ্ন জাগলে জিগ্যেস করব না?"
সাক্ষর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"তোর মতো ভ্যাবলিকে মানুষ করা আমার কর্ম না।ভেবেছিলাম তোকে বলব না,রাগ করবি,আবার লজ্জাও পেতে পারিস।তোর মনে যখন এতই প্রশ্ন জাগে,এতই জানার শখ তাহলে শোন।আমি কোন দুধে ধুয়া তুলসি পাতা,কিংবা ব্রক্ষ্মচারী না,যে সারাজীবন তোকে দেখে দেখেই কাটিয়ে দিবো।তোর সঙ্গে এখন একজন ফ্রেন্ডের মত আচরণ করছি,স্বামীর অধিকার ফলাচ্ছি না বলে আমাকে কোন ঋষি-মনিষী ভাবার কারণ নেই।সব কিছুর উর্ধ্বে আমি একটা ছেলে।প্রকৃতির নিয়মে আমারও কিছু চাওয়া পাওয়া আছে।কিন্তু তোকে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই সম্পর্কটাকে সময় দিচ্ছি।পক্ষান্তরে আমি নিজেকে সময় দিচ্ছি।তোর সাথে আমাদের সম্পর্কটাকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।তোর জন্মের পর থেকে আমাদের বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত তোকে আমি বোনের নজর ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখিনি।তাই হুট করেই বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় তোর সাথে সাথে আমিও বেশ হোঁচট খেয়েছিলাম।কিন্তু তুই তো জানিস চাচ্চু আমার কতটা প্রিয়।চাচ্চুর কথা ফেলতে পারব না বলেই তোকে বিয়ে করা।আর তোকে তো আগেই বললাম ক্লাস নাইন-টেন থেকেই নিজের জীবনসঙ্গীকে নিয়ে কত স্বপ্ন বুনে রেখেছি আমি।আর যাকে এতবছর বোনের নজরে দেখছি তাকে যখন আমার কিশোর বয়সের দেখা হাজারটা স্বপ্নমিলিত অর্ধাঙ্গিনীর যায়গায় দেখলাম বড্ড রাগ লেগেছিলো।ভেবেছিলাম আমার জীবনসঙ্গীকে নিয়ে দেখা সব স্বপ্নই বুঝি শেষ হয়ে গেলো।এজন্যই বাসর ঘরে তোকে দিয়ে সারারাত বাতাস করিয়েছি।কিন্তু পরে নিজেরই খারাপ লাগছিলো।কিন্তু তারপরও অনিচ্ছা স্বত্বেও কয়েকবার তোকে কাদিয়ে ফেলেছি আমি।ব্যাপারটা আমাকে বড্ড যন্ত্রণা দিচ্ছিলো।"
.
" তাহলে এখন কি হলো?আপনি তো সেদিন বললেন বিয়ে যখন করেছেন সংসার ও করবেন।আমার সাথে সংসার করলেতো আপনার কোন স্বপ্নই পূরণ হবে না।"
সাক্ষরের কথার মাঝেই কথাটা বলে ফেলল কিনঞ্জল।সাক্ষর এই শুনে বলল,
"কেনো পূরণ হবে না?তুই কি আমার মায়ের পেটের বোন?তোর বাবা আর আমার বাবা ভালো বন্ধু।সেই সূত্রে তোকে এতকাল বোন ভেবেছি।কিন্তু এখন যখন বিয়ে হয়েই গেছে বউ ভাবতে তো কোন সমস্যা নেই।বিয়ে এমন একটা পবিত্র সম্পর্ক।যা কবুল বলার পরপরই আপনাআপনি নিজের জীবনসঙ্গীর প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত প্রেম,ভালোবাসা বা মায়া যাই বলিস এসেই যায়।তুই তো একটা পাষাণ আর খাটাশ মহিলা তাই আল্লাহর দেওয়া রহমত তোর অবধি পৌঁছাতে পারেনি।কিন্তু আমিতো আর তোর মতো খাটাশ নই তাই বিয়ের দুদিন পর থেকে রহমতের ধাক্কায় নিজের অটিস্টিক বউয়ের সেবা শুরু করে দিয়েছিলাম।এগুলো কি আমি এমনিই করেছি?
আমার সব স্বপ্ন আমি তোকে দিয়েই পূরণ করব।তবে তোর ব্যাড লাক।আমার ঠোঁটটা নিজের ভার্জিনিটি অনেক বছর আগেই খসিয়ে ফেলেছে।তাই তোর ফার্স্ট কিস একটা নন-ভার্জিন ঠোঁটেই হবে।তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় কর।আবেগের ঠ্যালায় নিজের ভার্জিনিটি সুন্দরী শ্যেলীতে অর্পণ করে আসিনি।ওটা তোর জন্যই যত্ন করে তুলে রেখেছি।পুরো নন-ইউসড,প্যাকেটজাত মাল!"
এই বলেই সাক্ষর একটা চোখ টিপ মারল কিনঞ্জলকে।আর কিনঞ্জলের কানের কাছে ঠোঁটটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
"আমার সব স্বপ্নগুলোর কথা বললে তুই এক্ষুনি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবি।তাই আপাতত আমার ছোটখাটো একটা ইচ্ছের কথাই শোন,
"আমি আমৃত্যু প্রতিটা রাত তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে,আর প্রতিটা সকাল তোকে আমার বুকের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে চাই।"
এই বলেই সাক্ষর কিনঞ্জলের কানের লতিতে আলতো করে ঠোঁট ছুয়িয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরল।আর মিটমিটিয়ে হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলল।এদিকে কিনঞ্জলের আবার কিসের ঘুম কিসের কি?সাক্ষরের হেন আচরণ আর কথাবার্তায় রীতিমতো কিনঞ্জলের কাপাকাপি আর কান দিয়ে ধূয়া বের হতে শুরু করেছে।লজ্জায় কিনঞ্জলের মরি মরি অবস্থা।
(চলবে)...
লিখা:~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি