Leave a message
> কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৭
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৭


সাক্ষর রুমে এসে দেখে কিনঞ্জল ঘুম থেকে উঠে গেছে।সেইসাথে অলরেডি বিছানা গুছানো,রুম ঝাড়ু দেয়া,রুমের পর্দা সরানো,বারান্দায় লাগানো ফুলগাছ গুলোতে পানি দেওয়া সব কাজ সেরে মাত্রই ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরোলো কিনঞ্জল।রাতে পরে থাকা প্লাজো আর লং টি-শার্ট চেইঞ্জ করে এখন একটা মেরুন রঙা জয়পুরি লং ফ্রক পরেছে।চোখ দুটো ঘুম হয়নি বলে বেশ ফোলা ফোলা আর লালচে হয়ে আছে।তবুও দেখতে মন্দ লাগছে না।
সাক্ষর মনে মনে খানিকটা হাসলো।কিনঞ্জল যেনো দিনকে দিন নিজেই সংসারী হয়ে উঠছে।যে কিনঞ্জল কিনা বিয়ের প্রথম মাস দুয়েক সকাল ৮টার আগে কোনদিন বিছানা ছাড়েনি,নিজের হাতে খেতে হবে বলে ক্ষিদে লাগেনি বলে খেতে চাইতো না।সেই কিনঞ্জল এখন রাত জাগার পরেও ভোরবেলা উঠে ঠিকই রুমের সব গোছগাছ করে সাক্ষরের মাকেও কমবেশি রান্নায় হেল্প করে।আর যদি কাজটা না পারে তাহলে বসে বসে শ্বাশুড়ির সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠে আর ফাঁকে ফাঁকে কাজটা শিখে নেওয়ার চেষ্টা করে।সময়মতো দাদির পায়ে তেল মালিশ করে দেয়,তাহা-তাহির হোমওয়ার্ক করতে হেল্প করে।তবে সাক্ষরের মা(হামিদা বেগম)কিনঞ্জলের খেতে না চাওয়ার ব্যাপারটা প্রথম দিকেই বুঝতে পেরে গেছিলো।তাই তিনি নিজের হাতেই খায়িয়ে দিতো কিনঞ্জলকে।এমনকি এখনো তিনিই খায়িয়ে দেয়।নিজের কোন মেয়ে ছিলোনা বলে ছোটবেলা থেকে কিনঞ্জলকে নিজের মেয়ে বলেই মনে করে এসেছেন হামিদা।কেবল মাঝখানে কিছু বছর পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে মেয়েটাকে তেমন কাছে পায়নি।তাই বিয়ের পরও কিনঞ্জলকে পুত্রবধূর চাইতে নিজের মেয়ে বলেই বেশি মনে করেন হামিদা।হয়তো কিনঞ্জলের জায়গায় অন্য কোন মেয়ে তার ছেলের বউ হলে এই বারতি যত্ন-আত্তীটুকু তিনি করতে পারতেন না।কারন আমাদের দেশে শত হলেও বউ-শ্বাশুড়ির মধ্যে অদৃশ্য একটা দেয়াল থেকেই যায়।
বাইরে এখনো আলো ফোটেনি।বেশ ভালোই অন্ধকার রয়েছে এখনো।সাক্ষর ফ্রেশ হতে যাওয়ার আগে কাবার্ড থেকে কি মনে করে যেনো একটা নীল রঙের শাড়ি বের করে কিনঞ্জলের হাতে দিয়ে বলল,
"আমরা মিনিট পনেরোর মধ্যেই বাইরে বেরোবো।তাই জলদি তৈরি হয়ে নে।কোথায় যাবো?কেনো যাবো?এইসব প্রশ্ন করলে ঠাটিয়ে চড় মেরে সবকয়টা দাঁত ফেলে দিবো।এখন বল শাড়ি পরতে হেল্প লাগবে নাকি একাই পারবি?"
কিনঞ্জল সাতসকালে সাক্ষরের এমন উদ্ভট আবদার আর আচরণে খানিকটা বিরক্ত হলেও মুখে শুধু বলল,
"না আমি একাই পারব।"
"গুড।"
এই বলেই সাক্ষর কিনঞ্জলের হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আর যেতে যেতেই তোয়ালেটা আলতো করে নাকে চেপে ধরল।একটা অদ্ভুত মিষ্টি,মনমাতানো সুবাস সাক্ষরের নাকে ভেসে আসছে।হতে পারে গন্ধটা কিনঞ্জলের ফেইস-ওয়াশের বা বডি ওয়াশের।আবার কিনঞ্জলের গায়ের গন্ধও হতে পারে।সাক্ষরতো আর কিনঞ্জলের ততটা কাছে এখনো যায়নি যতটা কাছে গেলে একে অপরের শরীরের সুবাসটুকুও চিনতে পেরে যায়।তাই আপাতত সুবাসটার উৎস না খুঁজে প্রানভরে সুবাসটুকু উপভোগ করতে লাগলো।সাক্ষর ফ্রেশ হয়ে বের হয়েই দেখে কিনঞ্জল এরমধ্যে পুরো শাড়ি শরীরে জড়িয়ে নিয়েছে।এখন নিচু হয়ে কুচিগুলো ভাজ করার চেষ্টা করছে।যেহেতু শাড়িটার নতুন তাই কুচি সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে কিনঞ্জলকে।সাক্ষরকে রুমে দেখে কিনঞ্জল যেনো খানিকটা শান্তি পেলো।সাক্ষরকে ডেকে কুচিগুলো ধরে দিতে বললেই সাক্ষর হুড়মুড়িয়ে এসে একটানে কুচিগুলো খুলে ফ্লোরে ফেলে দিলো।এদিকে কিনঞ্জল বেচারি সাক্ষরের হেন কান্ডে পুরো থ হয়ে গেছে।একরাশ বিষ্ময় চোখে নিয়ে সাক্ষরের দিকে তাকাতেই সাক্ষর একটা হু কেয়ারস লুক নিয়ে বলল,
"আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম হেল্প লাগবে কিনা?তুই না করলি কেনো?এর শাস্তি এইটা।আর এখন আমি তোকে হেল্পও করব না।নিজে নিজে রেডি হ।এই বলে সাক্ষর কাবার্ড থেকে নিজের একটা স্কাই-ব্লু রঙের শার্ট,আর ব্লু জিন্স প্যান্টটা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে চলে গেলো চেইঞ্জ করে যেহেতু কিনঞ্জল ঘরে রেডি হচ্ছে।আর এদিকে কিনঞ্জল মনে মনে সাক্ষরকে একশ একটা গালি দিয়ে ফ্লোর থেকে শাড়িটা নিয়ে আবার কুচি তুলে কুচিগুলোর মাথায় পিন দিয়ে আটকিয়ে নিজেই ভাজগুলো ঠিকঠাক করে কোমরে গুজে রেডি হয়ে গেলো।কানে,গলায়,হাতে অলরেডি কিছু সিম্পল অর্ণামেন্টস পরাই আছে আর নাকে সাক্ষরের দেওয়া নাকফুলটা।তাই কিনঞ্জল আর কোন বাড়তি সাজগোজে না গিয়ে কেবল ঠোঁটে একটু লিপজেল দিয়ে গায়ে শাল জড়িয়ে নিলো।আর সাক্ষরও রেডি হয়ে জ্যাকেটটা নিতে গেলেই হঠাৎ ফোনে সাফিন চাচ্চুর ছোট্ট একটা মেসেজ আসলো,
" tui ajke jacket pore ber hos na r tuktukike ekta shal gaye diye niye ay.amra berobo ekhon."
সাক্ষর দ্রুতহাতে সাফিনকে মেসেজের রিপ্লাই দিলো,
"ei thanday jacket chara ber hobo keno?"
"toke ja bollam tai kor.joldi ay."
সাক্ষর হতাশ হয়ে কিনঞ্জলের দিকে তাকাতেই দেখে কিনঞ্জল নিজেই শাল পরেছে।তাই কথা না বাড়িয়ে কিনঞ্জলকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।নিচে আসতেই সাফিন,দাদি,তাহা, তাহি সবাই কিনঞ্জলের দিকে ভূত দেখার মত তাকিয়ে রইল।সাতসকালে জগিং করতে যাবার সময় কাউকে এমন শাড়ি পরে পুতুল সাজতে কে কবে,কাকে দেখেছে।তবে কেউ প্রশ্ন করে আর সময় অপচয় না করে বেরিয়ে পরল।
এখনো বাহিরে বেশ অন্ধকার।সূর্য উঠেনি।এত সকাল সকাল বেরোনোর একমাত্র কারণ সাক্ষরের দাদি।তিনি বাহিরের মানুষদের সামনে যেতে তেমন স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না।তাই অন্ধকার থাকতেই বের হয়ে আবার আলো ফোটার আগেই বাসায় ফিরবে এমনটাই ইচ্ছে তার।একটা পার্কের ভেতরে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে সবাই।জায়গাটা মূলত জগিং এর জন্যই বেশ জনপ্রিয়।সব বয়সের মানুষ সকাল সকাল হাঁটতে আসে এখানে।তবে এখন কেবল কয়েকজন বৃদ্ধা আর তাদের সঙ্গে থাকা দু-একজন বাড়ির লোক ছাড়া কেউ নেই এইদিকে।হয়ত তারাও সাক্ষরের দাদির মতোই অত লোকের কোলাহলে হাঁটাটা পছন্দ করেন না।
ভোরের আলো প্রায় ফুটতে শুরু করেছে।এরই মধ্যে সবাই প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।সাক্ষর আর কিনঞ্জল দুজনে পার্কের ঝিলের ধারের রাস্তাটা ধরে হাঁটছে।আর সাফিন আর দাদি মাঠের মধ্যে দিয়েই ধীরে ধীরে হাঁটছে।আর অন্যদিকে তাহা,তাহি বাচ্চাদের জন্য দোলনা,স্লিপার বসানো জায়গাটার ওদিকে দৌড়াদৌড়ি করছে।এই দেখে সাফিন পকেট থেকে ফোনটা বের করে ড্রাইভারকে কল করে আনিয়ে সাক্ষরের দাদি,তাহা,তাহিকে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।তবে ওর প্লানের ব্যাপারে কাউকে কিছু বুঝতে দেয়নি।এখন ওর কাজে লেগে পরার সময় এসে গেছে।হাতে সময় একদম কম।
হাঁটতে হাঁটতেই কিনঞ্জল আড়চোখে সাক্ষরের দিকে বারবার তাকাচ্ছে।ডিসেম্বরের এই সময়টাতে সকালে বেশ ঠান্ডা পরে।অথচ সাক্ষর পাতলা একটা শার্ট আর জিন্সে পরে পকেটে হাত দুটো গুজে দিব্যি ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছে।তারপরও দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেচারার অবস্থা একদম কাহিল। ক্ষণে ক্ষনে জমে যাচ্ছে যেনো।এই দেখে কিনঞ্জল নিজেই সাক্ষরকে বলল,
"সাক্ষর ভাই,পা দুটো ব্যাথা করছে।আর হাঁটতে পারব না।ঝিলের ধারের ওই বেঞ্চটাতে গিয়ে বসি চলেন।"
কথাটা যেনো সাক্ষরেরও বেশ মনে ধরল।ঠান্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে।পা দুটো চলতেই চাইছে না।তাই সাক্ষরও আর কথা না বাড়িয়ে দুজনে গিয়ে বেঞ্চটাতে বসল।সাক্ষর কিনঞ্জলের থেকে বেশ খানিকটা দুরত্ব বজায় রেখে বসে দুই হাতের তালু ঘষে শরীর গরম করার চেষ্টা করছে।সেই সাথে মনে মনে সাফিনের পিন্ডি চটকাচ্ছে।কি দরকার ছিলো মেসেজ করে জ্যাকেটটা না পরে আসতে বলার।সাক্ষরের এমন বেহাল দশা দেখে কিনঞ্জল নিজেই সাক্ষরের গা ঘেষে বসল।আর নিজের শরীরের চাদরটা ডান হাত দিয়ে আগলে ধরে নিচু আওয়াজে সাক্ষরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
"চাদরের ভেতরে আসুন।নয়ত ঠান্ডা লেগে যাবে।"
ব্যাস এই দুটো বাক্যতেই যেনো সাক্ষরের একটা হার্টবিট মিস করে গেলো।কিনঞ্জল!যে মেয়ে কিনা ওকে দেখলে ভয়ে,লজ্জায়,জড়তায় চোখ তুলেই তাকাতে পারে না।সেই আজকে সাক্ষরকে নিজের চাদরে ঢোকার জন্য ডাকছে।তবে কি এজন্যই সাফিন চাচ্চু ওকে জ্যাকেট আনতে মানা করেছিলো?এসব ভাবতে ভাবতেই সাক্ষর পুরো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছিলো।এই দেখে কিনঞ্জল নিজেই চাদরটুকু সাক্ষরের গায়ে জড়িয়ে দিলো।বেঞ্চটার পাশের একটা বুনোফুল গাছ রয়েছে।বাতাসের মৃদু তরঙ্গে সেই ফুলের সুবাসটাও ওদের দুজনের নাকে ভেসে আসছিলো।ব্রেঞ্চের আশেপাশে বেশ কতগুলো শুকনো পাতা ঝরে পরে আছে।আর সামনেই একটা ঝিল।কিছুক্ষণ পরেই লাল আভা ছড়িয়ে সূর্যমামা আলো দিতে আসবে।কিনঞ্জলের সাথে এই প্রথম কোন সূর্যোদয় দেখবে সাক্ষর।তাও আবার একই চাদরে জড়িয়ে।ভাবতেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে সাক্ষরের।
একটা সাত বছরের বাচ্চা ছেলে ফ্লাক্স হাতে চা বিক্রি করছিলো।আর সাথেই চার-পাঁচ বছরের মিষ্টি একটা মেয়ে পিঠা বিক্রি করছে।যেহেতু বাচ্চাদুটো একসাথেই ছিলো সাক্ষরের এক ডাকেই দুজন কাছে এসে গেলো।হালকা কথাবার্তায় জানা গেলো ওরা দুজন ভাই-বোন।পাশের একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।আর সকালের এই সময়টুকুতে চা,পিঠা এসব বিক্রি করে বাবাকে সাহায্য করে।চা,পিঠা সব ওর মা বানিয়ে দিয়েছে।সাক্ষর বাচ্চাদুটোর মাথায় হাত বুলিয়ে ওদের কাছ থেকে একটা ভাপাপিঠা আর এককাপ চা কিনে নিলো।
সূর্য নিজের উত্তাপটুকু ছড়িয়ে দিতে পূব আকাশে উদিত হচ্ছিলো।আর পাশাপাশি ঝিরিঝিরি বাতাসের জন্য খানিকটা শীত শীতে করছিলো দুজনের।তবে সময়টা কোন স্বর্গীয় মুহূর্তের চেয়ে কম ছিলো না।সাক্ষর আর কিনঞ্জল দুজনেই একই চাদর জড়িয়ে পাশাপাশি বসে এই স্বর্গীয় মুহূর্তটুকু উপভোগ করছিলো।হুট করেই সাক্ষর কিনঞ্জলের দিকে খানিকটা ঘুরে তাকালো।নিজের বাহু দ্বারা কিনঞ্জলকে জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল,
"তোকে বলেছিলাম না আমার সব স্বপ্ন আমি তোকে দিয়েই পূরণ করব।সময় এসে গেছে আমার প্রথম স্বপ্ন পূরণ করার।লাইফে প্রথম কাউকে প্রপোজ করতে যাচ্ছি।রাজি না হলে তোকে এই ঝিলের পানিতে চুবাবো।এই বলেই সাক্ষর কিছুক্ষণ আগের কিনে রাখা চা টা হাতে নিয়ে কিনঞ্জলের সামনে হাটুতে ভর করে বসে পড়ল।কিনঞ্জলও প্রায় সাথে সাথেই বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো।ঝিরিঝিরি বাতাসে কিনঞ্জলের চুলগুলো আর শাড়ির আঁচল দোল খেতে লাগল।সাক্ষর চায়ের কাপটা কিনঞ্জলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করল,
I want to live,fall in love with you every single time.wanna see every sunrises & sunsets of my life with you.untill the end of my life!even i don’t wanna waste my another breath without you.I'll treat you like a queen.because you are my pride,crown of my head.i may not be your first love,but i intend to be your last.
(আমি তোর সঙ্গে বাঁচতে চাই,প্রতিটা মূহুর্তে তোর প্রেমে পড়তে চাই।জীবনের প্রতিটা সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত আমি তোর সঙ্গে দেখতে চাই জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত।এমনকি আমি আমার একটা নিশ্বাসও তোকে ছাড়া অপচয় করতে চাই না।আমি তোকে রাণীর মতো ট্রিট করব।কারণ তুই আমার অহংকার,আমার মাথার তাজ।আমি হয়ত তোর প্রথম প্রেম না,কিন্তু আমিই তোর শেষপ্রেম হতে চাই।)[পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে উপরের ইংরেজিটুকুর অনুবাদ করে দিলাম]
সাক্ষরের এমন আকষ্মিক কান্ডে কিনঞ্জল পুরো থ হয়ে গেছে।কি বলবে,কি বলবে না কিছুই বুঝতে পারছে না।কিনঞ্জলের কোন উত্তর না পেয়ে সাক্ষর আবারো বলল,
"কিরে?বুড়ো হবি আমার সঙ্গে কিনঞ্জল?জীবনের শেষ সূর্যোদয়টাও আমি তোর সঙ্গে এই বেঞ্চটাতে বসেই দেখতে চাই।"
এই বলেই সাক্ষর মুগ্ধ চোখে কিনঞ্জলের দিকে তাকাতেই কিনঞ্জলও মুখে হালকা মুচকি হাসি ঝুলিয়ে সাক্ষরের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিলো।আর সাক্ষরও সাথে সাথেই বিশ্বজয় করা হাসি মুখে ঝুলিয়ে উঠে দাড়িয়েই ভাপা পিঠাটার এক কোনা ভেঙে চায়ে ডুবিয়ে কিনঞ্জলের মুখে পুরে দিয়ে বলল,
"মিষ্টি মুখ করুন মিসেস সাক্ষর।প্রথমবার কাউকে প্রপোজ করে প্রথম বারেই সফল আমি।তাই বলে পাবলিক প্লেসে,লোক সমুক্ষে প্রেম-ভালোবাসা দেখানোর জন্য জড়িয়ে ধরা বা চুমু দেওয়া কোনটাই আমার ধাতে নেই।ওগুলোর জন্য অনেক সময় পরে আছে।বউটা আমার আরেকটু ম্যাচিউর হোক,আমাকে মন থেকে মেনে নিক।তাছাড়া মুহূর্তগুলো একান্তই তোর আর আমার।লোক দেখানো ভালোবাসার কোন প্রয়োজন নেই।এখন আমাকে মিষ্টিমুখ করা।"
কিনঞ্জল অবাক দৃষ্টিতে সাক্ষরের কথাগুলো শুনলো।টিভি-সিরিয়ালে,ফেসবুকে ও সারাজীবন দেখে আসলো প্রপোজ করার পর একে অপরকে আলিঙ্গন করার দৃশ্য,চুম দেওয়া।ভালোই লাগত সেসব কিনঞ্জলের।কিন্তু কখনো এভাবে ভেবেও দেখেনি যে সেই মুহূর্তটুকু কেবল একান্তই ভালোবাসার মানুষ দুটোর।লোক-সমুক্ষে ওসব বেহায়াপনা করা আর সাক্ষরের ওর প্রতি আজকের সম্মানটুকুতে আকাশ পাতাল তফাৎ।ভাবতেই এক অজানা ভালোলাগা ওর সমস্ত শরীরটাকে গ্রাস করছে।একজন প্রকৃত মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে আজকে নিজেকে খানিকটা হলেও ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে কিনঞ্জলের।এর মধ্যেই সাক্ষরের ডাকে ধ্যান ভেঙে ভাঙাপিঠার আরেকটা টুকরো চায়ে ডুবিয়ে সাক্ষরের মুখে পুরে দিলো।পিঠা খেতে খেতেই সাক্ষর বলল,
"আমিই বোধহয় এই জগতের প্রথম স্বামী।যে কিনা নিজের স্ত্রী-কে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া পানসে চা দিয়ে প্রপোজ করল।কিন্তু পিঠা দিয়ে খেতে কিন্তু মন্দ লাগছে না।তুইও তো আমার পানসে বউ।তাই তোর কপালে ফুলের বদলে পানসে চা জুটলো।"
এই বলেই সাক্ষর আয়েশ করে বেঞ্চটাতে বসতেই ঘটল আরেক কান্ড। ঝরঝরিয়ে উপর থেকে বৃষ্টির পানি পরতে লাগল।কিন্তু ডিসেম্বরে বৃষ্টিই হবে কেনো?আকাশও তো পরিষ্কার।আর অবাক কান্ড হলো কেবল ওদের জায়গাটুকুতেই বৃষ্টির পানি পরছে।আশেপাশে পরছে না।



(চলবে)...

লিখা:~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি

 

Delivered by FeedBurner

a