Leave a message
> কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৮
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ১৮


ড্রয়িংরুমে সোফায় মুখটা গোমড়া করে বসে আছে সাফিন।আর বসে বসে একগাদা কথা শুনছে সবার।বিশেষ করে সাক্ষরের দাদি বেশ করে কথা শোনেচ্ছে সাফিনকে।আর পাশেই সাক্ষর কম্বল মুড়ি দিয়ে সোফায় বসে মায়ের হাতে গরম গরম স্যুপ খাচ্ছে।আর কিনঞ্জল পাশে বসে সাক্ষরের শার্টের গলা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বুকে গরম তেল মালিশ করে দিচ্ছে।বেচারা ঠান্ডার চোটে কথাই বলতে পারছে না।
সকালের দিকে সেই আকস্মিক বৃষ্টি আসার মূল মাথা হলো গিয়ে সাফিন।সে সেই যে সকালে সাক্ষরকে বলেছিলো সিচুয়েশন তৈরি করার দ্বায়িত্ব তার,সেই দ্বায়িত্ব পূরণ করতে গিয়েই নিজের প্রাণ প্রিয় ভাইপোকে একেবারে শয্যাশায়ী বানিয়ে দিয়েছে।সাফিন নাকি ভেবেছিলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে সাক্ষর কিনঞ্জলকে প্রপোজ করবে,তার পর কিস করবে।আর পেছন থেকে সাফিন সাউন্ড বক্সে ওদের জন্য একটা রোমান্টিক গানও প্লে করে দিবে।কিন্তু হয়েছে পুরো তার উল্টো।একে তো এই ডিসেম্বরের ঠান্ডায় প্রায় ঘন্টাখানেক সাক্ষর কোন গরম কাপড় ছাড়া বাইরে ছিলো আর তারপর সকাল সকাল এরকম পানিতে ভিজলো,তারপর আবার সেই ভেজা কাপড়ে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঠান্ডা একেবারে বুকে বসে গেছে।এমনিতেই সাক্ষরের ঠান্ডার ধাচ বেশি।এসির হাওয়াতেই ওর ঠান্ডা লেগে যায় সেখানে এরকম একটা বিচ্ছিরি কান্ডে বেচারার পুরো নাজেহাল অবস্থা।তবে কিনঞ্জলের তেমন কোন সমস্যা হয়নি।পুরো রাস্তা গাড়িতে সাক্ষরের বুকে হেলান দিয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে আসলেও বাসায় এসে চেইঞ্জ করে এককাপ আদা চা খেয়ে সে এখন বেশ ঝরঝরে।তাই এখন সে মন-প্রাণ দিয়ে স্বামীসেবা করছে।একবার সাক্ষরের বুকে গরম সরিষার তেল মালিশ করছে তো একবার হাতের তালুতে।আবার কিছুক্ষন পর পায়ের তালুতেও তেল মালিশ করে শরীর গরম করার চেষ্টা করছে।পুরো একটা কম্বল পেচিয়ে রাখার পরেও সাক্ষরের শরীর এখনো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে।সাক্ষরের মা সাক্ষরকে স্যুপটা খায়িয়ে দিয়ে কিচেনে চলে যেতেই কিনঞ্জলও শাশুড়ির পেছন পেছন চলে গেলো কোন হেল্প করতে হবে নাকি এই দেখতে।এদিকে সাফিনের অমন পাশের সোফায় মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে সাক্ষর ফ্যাসফ্যাসে গলায় সাফিনকে নিজের পাশে আসতে বলল।সাফিনও কথা না বাড়িয়ে গটগট করে হেটে এসে সাক্ষরের পাশে ধপ করে বসে পড়ল।আর সাক্ষরের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
"এই জন্যই কারো ভালো করতে নেই।এখন সবার বকা খাচ্ছি আমি আর তুই বসে বসে স্যুপ খাচ্ছিস!"
এইবার সাক্ষর একটু জোরেই হেসে দিলো।আসলে বাড়ির সবাই আসল কাহিনি জানে না।সাফিন নিজেই বাচ্চা ছেলেমেয়ে দুটোকে লজ্জায় ফেলতে চাইনি বলে বাসায় বলেছে,"ও মজা করে ওদের দুজনের গায়ে পানি ছুড়ে মেরেছে।"এজন্যই মূলত আরও বেশি বকা খাচ্ছে সাফিন।সাক্ষর নিজেও সাফিনের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
"সবই ঠিক ছিলো চাচ্চু।বৃষ্টিটাও সাপে বর হতো যদি সঙ্গে জ্যাকেটটা থাকতো।আশিকি২ মুভির আদিত্য রায় কাপুরের মতোন তাহলে আমিও রাস্তায় দাড়িয়ে জ্যাকেট মাথায় দিয়ে তোমার মেয়েকে চুমু দিতাম।কিন্তু সেখানেও তো তুমিই ভিলেন হয়ে দাড়ালে।মেসেজ করে বললে যাতে জ্যাকেট না নেই।চুমু কি তোমার মেয়ের শাল মাথায় দিয়ে করতাম নাকি?"
এই বলেই চাচা-ভাতিজা দুজনেই ফিক করে হেসে দিলো।আর এই দেখে সাক্ষরের দাদি যেনো বাজখাঁই কন্ঠে তেতে উঠলেন।ছোট ছেলেকে ধমকে বলে উঠলো,
"দুই শয়তান মিলে কি ফিসফিস শুরু করেছিস তোরা।তোরা কি আমাকে কখনো শান্তি দিবিনা।আর সাফিন তুই এই বুড়ো বয়সে শিং ভেঙে বাছুরের দলে নাম লিখিয়ে পানি ছুড়াছুড়ি খেলতে যাস।আর মন্টু এই হতচ্ছাড়ার সঙ্গে তুই এখনো ফিসফিস করছিস?"
"তুমি চুপ করো তো বুড়ি।আমার চাচা আমার শরীরে পানি নয় পেট্রোল ছুড়ে মারুক।তোমার তাতে কি?
"মরণ!যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।" এই বলেই সাক্ষরের দাদি পানের ডালা থেকে একটা পান মুখে গুজে দিলো।"
এরমধ্যেই সাক্ষরের মা সবার জন্য চা আর নাগেট করে নিয়ে আসলো।আর কিনঞ্জল পেছন পেছন এসে সবার হাতে চা দিয়ে সাক্ষরের পাশে বসে পড়ল।কিনঞ্জল কিচেনে বসেই এক কাপ চা আর তিন-চারটে নাগেট পেটে চালান করে দিয়েছে।তাই আপাতত ওর আর কোন কাজ নেই।সাক্ষরের পাশে বসেই ফেসবুকিং করছিলো।প্রায় মাস তিনেক পর আজকে নিজের আইডিতে ঢুকলো।নুহাশের ব্যাপারে বাসায় জানাজানি হবার পর সেই যে ফোনটা নিয়ে নিয়েছিলো তারপর আর ফেইসবুকে ঢোকা হয়নি কিনঞ্জলের।নিউজফিডে নুহাশের দু-চারটে পোষ্ট আশা করলেও তেমন কিছুই পেলো না কিনঞ্জল।তাই সার্চ অপশনে গিয়ে নুহাশের আইডির নামটা লিখতেই অনেকগুলো আইডির প্রথমেই নুহাশের আইডিটা ভেসে উঠলো।শুভ্র সাদা রঙের একটা পাঞ্জাবি পরে স্নিগ্ধ একটা হাসি ঝুলানো ছবি প্রোফাইলে ভাসছে।ছবিটা মাস সাতেক আগে কিনঞ্জলই তুলে প্রোফাইল পিক দিতে বলেছিলো।এখনো চেইঞ্জ করেনি নুহাশ।প্রোফাইলে ঢুকবো না ঢুকবোনা করেও কিনঞ্জল একটা অদৃশ্য শক্তির কাছে হেরে গিয়ে আইডিতে ঢুকেই গেলো।কিন্তু পরমুহূর্তেই কি যেনো ভেবে প্রায় সাথে সাথেই নুহাশকে ব্লক দিয়ে আইডিটা লগ আউট করে ফেলল কিনঞ্জল।


(চলবে)...

লিখা:~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি









 

Delivered by FeedBurner

a