> ফ্যামিলি কান্ড ৫ম পর্ব
-->

ফ্যামিলি কান্ড ৫ম পর্ব


রাসেল বেশ অবাক হয়ে দেখলো নুপুর আগাগোড়া অবাক হয়ে ওকে দেখে যাচ্ছে। রাসেল নুপুরকে বলল,
___ " কি রে তুই চোখের মধ্যে এক্সে মেশিন ফিট করিয়েছিস নাকি? "
নুপুর বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল রাসেলের প্রশ্ন শুনে। আমতা আমতা করে বলল,
___ " মানেটা কি? "
___ " মানে হল তুই আমাকে যে ভাবে দেখছিলি আমি তো ভেবেছিলাম তোর চোখের মধ্যে এমন কিছু আছে যে জামার নিচে কি আছে সেটাও দেখছিস পুরোটাই। "
___ " এটা কোন ধরনের কথা রাসেল ভাই? "
___ " আচ্ছা তোকে কি এবাসার দারোয়ান হিসেবে এপয়েন্ট করেছে নাকি নুপুর।"
এবার নুপুরের রাগে গা কিরকির করতে লাগল। ঝগড়ার উপরে কেউ যদি পিএইচডি করে তাহলে সেটা হল উনি। ওয়ার্ল্ড ঝগড়ার প্রতিযোগিতা হলে নির্ঘাত উনি গোল্ড মেডেল নিয়ে আসতেন।
___ " কি রে কথা বলিস না কেন তুই?"
রাসেলের কথায় নুপুরের চিন্তায় ছেদ পড়ে। বেশ কড়া করেই উওর দেয়,
___ " এবাসার দারোয়ান আমি না "।
___ " তাহলে দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন দরজার সামনে? "
তখন নুপুরের খেয়াল হয় সত্যিই তো এতক্ষন যাবত দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। নুপুর সরতে যাবে তার আগেই রাসেল ওকে কোলে তুলে নেয় হঠাৎ করেই। এত দ্রুত ঘটনাটা ঘটে যে নুপুর বুঝতেই পারে না হলটা কি? যখন বুঝল তখন ও রাসেলের ঘাড়ের উপরে। শুরু হল নুপুরের হাত পা ছোঁড়াছুড়ি। রাসেল আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দিল৷ তারপর শান্ত স্বরে নুপুরকে জিজ্ঞেস করল,
___ " আন্টি কই গেছে রে?"
___ " রাসেল ভাই আমাকে এক্ষুনি ঘাড় থেকে নামান। খালা খালামনির বাসায় গেছে চলে আসলে ঝামেলা হয়ে যাবে।"
___ " এই টুকু ল্যাদা একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে জানতাম না তো।"
এবার নুপুর স্থির হয়ে গেল। হাত পা ছোঁড়াছুড়ি বাদ দিয়ে বেঁকিয়ে রাসেলের মুখ দেখার ট্রাই করতে লাগল। হাল ছেড়ে দিয়ে প্রশ্ন করল,
___ " কার বয়ফ্রেন্ড?"
___ " কার আবার বয়ফ্রেন্ড তোর বয়ফ্রেন্ড।"
___ " আমার বয়ফ্রেন্ড??মানেটা কি?"
রাসেল নুপুরের কথা শুনে আক্রোশের সাথে ওকে সোফার উপরে প্রায় ছুঁড়েই মারল। নুপুর সোফার উপরে পড়তেই সোজা ওর পেটের উপরই উঠে বসে পড়ল শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে। নুপুরের দম যেন প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম। দুহাত দিয়ে রাসেলকে সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। রাসেল চোখে আগুন ঝরিয়ে বলল
___ " আর যদি দেখেছি আরিফ না টারিফ ওর সাথে ঢলাঢলি করতে সোজা মেরেই ফেলবো তোরে আমি।"
___ " ও আমার ফ্রেন্ড।"
আটকা নিঃশ্বাসে কোন মতে বলল নুপুর। রাসেল এবার এমন একটা কাজ করল যেটা নুপুর কখনও ভাবতেই পারে নি। নুপুরের মুখের কাছে মুখ এনে বেশ জোরেই একটা কামড় বসিয়ে দিল ওর ঠোঁটের উপরে। নুপুর যেন হাল ছেড়ে দিল। মরে যাক ও তাহলে হয়ত এই লোক একটু শান্তি পাবে। এর মাঝেই কলিংবেলের শব্দে নুপুরের পেটের উপর থেকে নামল রাসেল। দরজা খুলল রাসেল নিজেই খুলে দেখে সামনে জয় দাঁড়িয়ে। জয় আর রাসেল কি যেন ফুঁসফাস করে জয়ের রুমে চলে গেল। নুপুর কিছু না বলে সোফার উপর পড়ে পড়ে কাঁদতে লাগল। একটু পরে হাওয়া বেগম আসতেই ও ওর রুমে যেয়ে দরজা জানলা আটকে কাঁদতে লাগল। এই লোকটা আস্ত একটা পিশাচ টাইপের। এমন চার মন ওজনের শরীর নিয়ে কেউ কারো পেটের উপরে বসে নাকি?
মিলি জিমি স্কুল থেকে ফিরে এসেই দেখে নুপুরের মুখের উপরে মিনিমান আধমনি এক মেঘ জমেছে। তাই কিছু না বলেই চুপ করে রইল দুইজনেই। কিন্তু ঝামেলা বাঁধল একটা ক্লিপ নিয়ে। মিলির মাথায় ক্লিপটা দেখেই জিমি ঠাস করে এক চড় মারল মিলির মাথায়। জিমি ক্ষেপে যেয়ে বলল,
___ " চুন্নী কোথাকার! আমার ক্লীপ মাথায় দিয়েছিস কেন?"
___ " ওই তুই চূন্নী তোর যে জামাই হবে সেটা চোরের রাজা। তুই আমারে মারলি কেন?"
স্বশব্দে জিমিকে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল মিলি। এই তো লেগে গেল দুজনে। নুপুরের মেজাজ এমনিতেই প্রচন্ড খারাপ ছিল৷ তাই সোজা হয়ে বসে মিলি জিমি দুজনের চুল খপ করে দুহাত দিয়ে চেপে ধরল। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
___ " না থাকবে বাঁশ না বাজবে বাঁশি। দুজনের চুলই কামিয়ে ন্যাড়া করে দেব। তখন আর ক্লীপ নিয়ে ক্যাঁচালও হবে না।"
মিলি জিমি দুজনেই পড়িমরি করে নুপুরকে বলল আর হব না এমন। নুপুর সোজা বাংলায় বলল,
___ " প্রতিদিন এই বিলাই চড়াচড়ি ভাল লাগে না এর চেয়ে ভাল চুল কামিয়ে ফেল তাহলে আর সমস্যা হবে না।"
নুমা আর মানহা আসায় তখনকার মত মামলা শান্ত হল। সেদিন বিকালে বাসায় মুরব্বিরা গেল জয়ের পছন্দের মেয়ে দেখতে। বাসায় ফিরল সবাই বেশ টেনশন নিয়ে। নুপুররা পাঁচবোন খুব মনোযোগ দিয়ে পাশের বাসার দুই ভাইয়ের বউয়ের ঝগড়া দেখছিল। এমন সময় পেছন থেকে ওদের নিলুফা মানে ওদের ছোট মামি এসে ডাক দিল। বসার ঘরে ডেকে গেল পাঁচ জনকেই। ড্রইংরুমে ঢুকেই নুপুরের মনে হতে থাকল কিছু তো একটা হয়েছে। পরে হাওয়া বেগম শুরু করলেন কথা। মেয়ের বাড়ি থেকে বলা হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের অনুষ্ঠান করতে হবে। আর তার রাম ছাগল ছেলেও নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল এক সপ্তাহের মধ্যে এত বড় একটা অনুষ্ঠান কি করে এত যোগাড় করবেন উনি। রাসেল বসা ছিল শিহাবের পাশেই ও উঠেই অমনি বলল,
___ " আন্টি চিন্তা করবেন না। আমরা তো আছিই। আগামী এক সপ্তাহে বাসায় যাব না। আপনার সব কাজেই হেল্প করব আমরা। "
রাসেলের কথা শুনে হাওয়া বেগম যেমন ভরসা পেলেন ঠিক নুপুর যেন জমে বরফ হয়ে গেল। এই এক সপ্তাহ এই লোক এবাড়িতে থাকলে নির্ঘাত ওকে লোটা কম্বল নিয়ে হিমালয় বাসী হতে হবে। ঠিক এমন সময় রাসেল নুপুরের দিকে তাকাতেই দেখলো নুপুর বিড়বিড় করে কি কি যেন আউড়াচ্ছে। রাসেলের মধ্যে তখন অন্যচিন্তা চলছে রকেটের গতিতে।
পরের দিন থেকে বাড়ির চেহারাই বদলে গেল। রেনু খালামনি ছোট খালুকে প্রায় টাণা হ্যাঁচড়া করেই নিয়ে এল এই বাড়িতে। ছোট খালু বলল,
___ " আচ্ছা রেনু আমাদের বাসা তো বেশি দূরে না তাহলে এখানে এসে থাকার মানে কি?"
___ " শোনো আমি তোমার মাষ্টারনী না। যাতে কেন কখন কি জন্য এসব বোঝাবো। থাকতে বলেছি থাকবা ব্যাস....."।
___ " কোন কুক্ষনে যে বাড়ির ছোট মেয়ে বিয়ে করার জন্য মত দিয়েছিলাম কে জানে?"
___ " এই এই এই কি বললে তুমি?"
___ " না না বলছি কি তোমার শপিং কখন করবে? বিয়ে উপলক্ষে একটা শপিং করা লাগে না?"
শপিংয়ের কথায় রেনু যেন একটু নরম হল। চোখ মুখ কুঁচকিয়ে বলল,
___ " টাকা দিয়ে যেও আপাদের সাথে যেয়ে করে নেবো "।
এই বলেই রেনু চলে গেল। ছোট খালু মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। আর একটু হলে আজকে পৈত্রিক জানটাই খোয়াতো।
রাসেল নুপুরের বুকের উপরে সটানে শুয়ে আছে। নুপুর বারেবার চেষ্টা করছে তাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাসেল যেন এক ফোঁটাও সরছে না। নুপুরের বুকের মধ্যে নাক দিয়ে ঘসছে। নুপুরের গলা বুক রাসেলের উপ্তত্ত নিঃশ্বাসে যেন পুড়ে যাচ্ছে। নুপুরের প্রচন্ড দম বন্ধ হয়ে আসছে। এক অজানা অনুভূতি লাগছে ওর। হঠাৎ ওর চারিপাশে কালি গোলা অন্ধকার হতে শুরু করল। আর ঠিক তখনই.........


চলবে...


Writer:- মারিয়া আফরিন নুপুর
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner