> ফ্যামিলি কাণ্ড ৪ র্থ পর্ব
-->

ফ্যামিলি কাণ্ড ৪ র্থ পর্ব


___ " মাঝে মাঝে মন চায় তেলাপোকা বেঁটে তোরে খাওয়ায়ে দেই, তাহলে হয়তো যখন তখন এই চোখ থেকে পানি পড়া রোগ বন্ধ হবে"।
রাসেল গলার স্বর উঁচিয়ে বলল। নুপুর নাক টানতে টানতে বলল,
___ " আমাকে নামিয়ে দেন "।
___ " তোরে কি আমি দশ তলা বিল্ডিংয়ের উপরে উঠায়ে রাখছি নাকি যে তোরে নামায়ে দেব "।
নুপুর আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকে রাসেলের দিকে, মনে মনে বারবার বলতে থাকে " কি এমন করেছিলাম যে এই গজব আমার সাথেই এমন করে''।
___ " কি রে তুই মনে মনে কি ভাবতেছিস?"
___ " মনে মনে ভাবনার উপরেও কি ট্যাক্স দিতে হয় নাকি "।
নুপুরের ব্যাঁকা উওর শুনে রাসেল সোজা দুম করে ওকে খাটের উপরে ফেলে দিল। ধুপ করে খাটের উপর পড়েই নুপুর বাঁ হাত দিয়ে কোমর চেপে দেখতে লাগল হাড্ডি সব ঠিকঠাক আছে কি না। রাসেল এক হাঁটু খাটের উপর দিয়ে নিচু হয়ে নুপুরের গাল চেপে ধরল। হিসহিসিয়ে বলল,
___ " তুই যে নিঃশ্বাস নিস না সেটার উপরেও তোর ট্যাক্স দিতে হবে মনে রাখিস। "
মোটামুটি হুমকি দিয়ে রাসেল সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নুপুরের চোখ দিয়ে টপটপ করে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়তে লাগল। এ পানি দুঃখের না অসম্ভব রাগের। এই লোকটা সব সময় ওর সাথে এমন করে কেন? প্রতিদিন ভাবে এমন করলেই কড়া করে দু কথা শুনিয়ে দেবে। কিন্তু দেখা যায় সামনে আসলে ও কেমন জানি কুঁকড়ে যায়। রাসেল বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরেজ হুড়মুড়িয়ে রুমে এসে মানহা আর নুমা ঢোকে। নুপুর ওদের আড়াল করে চোখ মুছতেই নুমা এসে নুপুরের মুখের অবস্থা দেখে বলল,
___ " কি রে নুপুর তোর চেহারা এমন বাংলার পাঁচের মত হয়ে আছে কেন?"
___ " নুমা এসব বাদ দিয়ে নুপুরকে আসল কথাটা বলতো।"
নুমার কথা থামিয়ে দিয়ে মানহা বলে উঠলো। ততক্ষনে নুপুর ওদের দিকে ফিরে বসেছে। নুপুর প্রশ্ন করবে তার আগেই নুমা গদগদ কণ্ঠে বলল,
___ " জানিস নুপুর ভাইয়া করেছে কি?"
___ " কি করেছে? "
___ " ভাইয়া আজকে যে মেয়ে দেখতে গিয়েছিল না.... "
___ " হুম জানি তো মেয়ে দেখতে গিয়েছিল। আমি শিওর যে এবারও মেয়ে পছন্দ হয় নি।"
___ " এই তুই এত কথা বলিস কেন রে নুপুর। কথা শেষ করার আগেই কথার মধ্যে শুধু বাঁ হাত না পুরো শরীরই ঢুকিয়ে দিস।"
নুপুরের উপরে বিরক্ত হয়ে বলল নুমা। নুপুর কিছু না বলে চুপ করে রইল। এর পর মানহা আর ধৈর্য্য ধরতে না পেরে বলল,
___ " চুপ চুপ চুপ, ভাইয়া যে মেয়ে দেখতে গিয়েছিল সেই মেয়ের বদলে মেয়ের ফুপাতো বোনকে পছন্দ করে এসেছে "।
___ " কি বললে মানহা আপু? "
দরজার কাছ দিয়ে মুখ উঁকি দিয়ে বলে উঠলো মিলি। নুমা আর মানহা চমকে উঠে পেছনে তাকালো। নুপুরের মুখটা ভেঁটকি মাছের মত হাঁ হয়ে গেল। মিলির পেছনে পেছনে জিমিও এসে দাঁড়ালো। ওরা দুজনে এরুমেই আসছিল হঠাৎ মানহার লাষ্ট কথাটা শুনে থমকে গেল। একটু ধাতস্থ হয়ে মিলি মানহাকে প্রশ্ন করল,
___ " কি ব্যাপার মানহা আপু তুমি নুপাপুকে কাহিনী বলতেছ আমরা কি দোষ করলাম।"
___ " মিলি আসলে মানহা আপু আমাদের কিছু বলতেই চায় নাই "।
পেছন থেকে জিমি বলে উঠলো। মানহা আমতা আমতা করে বলল,
___ " আরে না তেমন কিছু না... "
___ " এই মানহা থামতো, আর মিলি জিমি তোদের বলি পিচ্চি মানুষ পিচ্চিদের মত থাকবি নাক একদম গলাবি না বড়দের মাঝে "।
নুমা বেশ গলা চড়িয়ে কথাটা বলল। জিমি মুখ বাঁকিয়ে বলল,
___ " আমরা পিচ্চিদের মতই আছি বড়াপু না হলে কবেই ফয়সাল ভাইয়ার কথা বড়দের কানে চলে যেত।"
এবার যেন জোঁকের মাথায় লবন পড়ার মত নুমা চুপসে গেল। এর মধ্যেই রাতের খাওয়া দাওয়ার জন্য ডাক পড়ল সবার। খাওয়ার টেবিলে হাওয়া বেগম বারবার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতে থাকলের জয়ের দিকে। এই গাধাটা সব সময় একটা না একটা ঝামেলা পাকাতেই থাকে। জয়ের মনে হচ্ছে আল্লাহ না করুক ওর মায়ের যদি কোন মতে চোখ দিয়ে আগুন বের হবার শক্তিটা থাকতো তাহলে এতক্ষনে পুড়ে কাবাব হয়ে যেত নির্ঘাত। আল্লাহ যা করে ভালর জন্যই করে।
পরের দিন সকালে হাওয়া বেগম মেয়েদের বাড়িতে কথা বলে অনেক কষ্ট করে সব বুঝিয়ে সুঝিয়ে ম্যানেজ করলে। ডাইনিং রুমে সবাই নাস্তা করছিল এমন সময় হাওয়া বেগম গটগট করে হেঁটে এসে হাজির হলেন খাবারের টেবিলের কাছে। কোন ভূমিকা না করেই সোজা জয়ের বরাবর তাকিয়ে বললেন,
___ " শোন যে মেয়ে তুই পছন্দ করেছিস সেই মেয়ের নাম পরী "।
হাওয়া বেগমের কথা শুনে সবাই খাওয়া রেখে তার মুখের দিকে তাকালো। অপেক্ষা করতে লাগল বাকি কথা শেষ হওয়ার জন্য। হাওয়া বেগম বেশ খানিক্ষন চুপ থেকে বললেন,
___ " আজ বিকালে আমরা সবাই যাব সেই মেয়ে দেখতে৷ মেয়ের বাড়ি বরিশাল কিন্তু মামার বাসায় বেড়াতে এসেছে তাই সেই বাসায়ই যাব।"
___ " আম্মা সবাই মানে?"
জয় ফস করে প্রশ্ন করল হাওয়া বেগমকে।
___ " সবাই মানে তোমার পাঁচ বোন, ভাইয়েরা তারপরে দুই মামা আর আমি আর তোমার খালামনি এই কয়েকজন যাব। "
___ " আম্মা এত জন গেলে তো ওরা জনসংখ্যা দেখেই বিয়ের প্রস্তাব না করে দেবে।"
___ " তোমাকে তো সুখী পরিবারের মত তিনজনকে নিয়ে পাঠানো হয়েছিল তখন তুমি নায়িকা বাদ দিয়ে সাইড নায়িকাকে নিয়ে ডান্স করে এসেছ।"
মায়ের অকাট্য যুক্তির পরে জয় আর কিছুই খুঁজে পেল না বলার জন্য। একটু পরেই আবার জয় বলল,
___ " আম্মা এই পাঁচ শাকচুন্নীরে রেখে যাওয়া যায় না?"
___ " ওই রাম ছাগল তুই এগুলা কি কি বলতেছিস? এরা তোর বোন না? "
এই বলে ঝাড়ি দিয়েই হাওয়া বেগম চলল রান্না ঘরের দিকে। উনি চলে যেতেই নুপুর চোখ মুখ কুঁচকে ধীরে ধীরে বলল,
____ " ভাইয়া তুমি ভাল করেই বলতে পারতে আমরা যেতাম না শাকচুন্নী বলার কি দরকার ছিল।"
জয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে নুমা বলল,
___ " আমরা তো তোমার বোন আমরা শাকচুন্নী হলে তুমি খোক্কস। "
___ " ঠিক আছে আমরা তো শাকচুন্নী আসুক তোমার বউ সবার আগে ঘাড় মটকাবো ওই মালটার।"
জিমি সোজা হুমকি দিয়ে বসল। নুমা মিলির দিকে ফিরে বলল,
___ " কিরে মিলি কিছু বলবি কি না এই খোক্কসটারে! "
___ " বড়াপু ওস্তাদের মার শেষ রাত্রে। এখন এইডারে কিছুই কমু না "।
এই বলেই মিলি খাবারের টেবিল থেকে উঠে চলে গেল। মানহাও মুখ ভেঙচি কেটে বলল,
___ " যাও যাও কালকে মেয়ের ফুপাতো বোনকে পছন্দ করে এসেছো আজকে ওদের বাড়ির কাজের বুয়াকে পছন্দ করে আসো।"
জয় রাগ দেখিয়ে টেবিল থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়ালো। ঘুরেই মুচকি এক হাসি দিয়ে বড় বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। যাই হোক এই বান্দরনী গুলো যাচ্ছে না এটাই আনন্দের। এগুলো গেলে বিয়ের চান্স জিরো হয়ে যেত। নুপুর রুমে আসতেই দেখলো মানহা আর নুমা রেডি হচ্ছে কলেজ যাওয়ার জন্য। মিলি জিমি বেরিয়ে গেল ওদের স্কুলের জন্য। আর জয় চলল ওর দোকানে। সব কাজ গুছিয়ে হাওয়া বেগম নুপুরকে বললেন দরজা লাগাতে। উনি যাবেন উনার ছোট বোন রেনুর বাসায়। দরজা লাগিয়ে নুপুর বসার রুমে বসে টিভি দেখলে লাগল। কি যেন একটা প্রোগ্রাম হচ্ছিল সবে শুরু হয়েছে এর মধ্যেই ডোরবেলটা বেজে উঠলো। নুপুরের মুখে বিরক্তির একটা চাপ দেখা দিল। এই অসময়ে এলোটা কে? দরজা খুলেই নুপুরের বেশ কিছুক্ষন লাগল হজম করতে। সাদা টিশার্ট আর কালো থ্রিকোয়াটার প্যান্ট পরে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাসেল। নুপুরের চোখ ধীরে ধীরে রাসেলের উপর থেকে নিচে নামতে লাগল। হাঁটুর বেশ খানিকটা নিচে থেকে পা উন্মুক্ত রাসেলের। পায়ের পশম গুলোর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল নুপুর। রাসেল বেশ অবাক হয়ে দেখল.......


চলবে...


Writer:- মারিয়া আফরিন নুপুর
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner