> সন্ধ্যার একটু পর পর্ব ০১
-->

সন্ধ্যার একটু পর পর্ব ০১


রুহি বললো, " আপু তোর সঙ্গে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে তিনি নাকি গতকাল রাতে চেয়ারম্যান বাড়ির কাজের মেয়েকে জোর করে জড়িয়ে ধরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। আর একটু আগে কথা গুলো চেয়ারম্যান সাহেব মামাকে কল দিয়ে বললো, আমার তো শুনেই হাতপা কাঁপছে। "

রুহির কথা কানে যেতেই হাত দিয়ে চায়ের কাপ নিচে পরে গেল নিপার। নিপা অবাক চোখে তখন তাকিয়ে থেকে বললো, " কি বললি রুহি? "

- বড়মামা তো এটাই বললো তাকে নাকি মোবাইল করে জানিয়েছে চেয়ারম্যান সাহেব। 

- বাবা কোথায়? 

- মামা তো বাইরে গেল। 

- তোর কি মনে হয় যে হাবিব এমন কিছু করতে পারে, আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। 

- কিন্তু সেই কাজের মেয়েটা নিজের মুখে নাকি কাঁদতে কাঁদতে চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করে শাস্তি দাবী করছে। আমি বুঝতে পারছি না, তিনি একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হয়ে কীভাবে এমন কাজ করতে পারে? আর তাছাড়া সপ্তাহ খানিক পরে তোমার সঙ্গে তার বিয়ে হবে। 

- তুই চল আমার সঙ্গে। 

- কোথায়? 

- যে বাড়িতে হাবিব থাকে সেই চেয়ারম্যান বাড়ি যাবো, তাড়াতাড়ি চল। 

- কিন্তু সেখানে তোমার যাওয়া কি ঠিক হবে? 

- কেন হবে না? আমি সরাসরি নিজের মুখে তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই। 

- কিন্তু...

- তোকে যেতে হবে না, আমি যাচ্ছি। 

- ঠিক আছে চলো।

তড়িঘড়ি করে কোনরকমে বোরকা পরে বেরিয়ে গেল রুহি এবং তার মামাতো বোন নিপা। খুলনা শহরের খালিশপুরে মামার সঙ্গে থাকে রুহির মা এবং রুহি। রুহির মামার একমাত্র মেয়ে নিপা, তার সঙ্গে বিয়ে হবার কথা পাশেই প্রভাতী স্কুলের শিক্ষক আহসান হাবিবের। আর সেজন্যই কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে দুদিন আগে খুলনা এসেছে নিপা। 

রুহির বাবার ফাঁসি হবার পর নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে, বাহিরের জমিজমা বিক্রি করে বড়মামার সঙ্গে বাস করছে। রুহির মামি খুব ভালো, তিনিই জোর করে তার ননদকে কাছে নিয়ে এসেছে। এর মাঝখানে রুহি ও তার মা পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে ছিল ছোটমামার কাছে। 

পৌরসভার মোড় ঘুরে তারা কোহিনূর মোড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কারণ কোহিনূর মোড়ের ঠিক কাছেই চেয়ারম্যান বাড়ি। তবে এই বাড়ির যিনি চেয়ারম্যান হিসাবে খ্যাত তিনি এখন আর কোন চেয়ারম্যান নয়। একসময় রূপসার ওপাড়ে কোন একটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, আর তিনি এখানে বাড়ি করেন। আস্তে আস্তে এই বাড়িটা চেয়ারম্যান বাড়ি হিসাবে পরিচিত হয়ে গেছে সবার কাছে। 

চেয়ারম্যান বাড়িতে প্রবেশ করে নিপা অবাক হয়ে গেল, কারণ সে ভেবেছিল এখানে অনেক মানুষ জমা হয়ে গেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তেমন কাউকে চোখে পরছে না, তবে যেই ৪/৫ ব্যক্তি বসার ঘরে বসে আছে তাদের মধ্যে নিপার বাবাও আছে। নিপাকে দেখে নিপার বাবা খানিকটা বিব্রত হয়ে গেল কিন্তু কিছু বললো না। সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে হাবিব, নিপার দিকে একবার তাকিয়ে চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি নামিয়ে নিল। 

নিপা কোনরকম ভনিতা না করে হাবিবের সামনে গিয়ে বললো:-

- এসব কি শুনছি হাবিব? 

- হাবিব চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 

- নিপা চিৎকার করে বললো, আমার কথার উত্তর দাও না কেন? সবাই এসব কি বলছে? 

- হাবিব শুধু তার নিচু মাথাটা সোজা করে নিপার অগ্নি দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইল। 

- কথা বলছো না কেন? 

- কি বলবো? 

- সবাই কি বলছে? 

- তোমাকে সবাই কি বলছে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে তুমি কোনটা বিশ্বাস করো? 

- আমি তোমার মুখ দিয়ে শুনতে চাই। 

- তুমি যেটা বিশ্বাস করবে সেটাই, আমার সম্বন্ধে ধারণা তোমার মোটামুটি আছে। 

- ঘুরিয়ে কথা বলতে চাই না, তুমি আমাকে বলো তো কেন এমন জঘন্য কাজ করতে পারলে? 

- তুমিও কি সবার মতো অবিশ্বাস করো? 

- সবাই কি তোমার শত্রু? কেন সবাই তোমার সঙ্গে বা তোমাকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেবে? 

- তোমার যদি ধারণা হয় যে আমি এমন কাজটা করতে পারি তাহলে আমি অপরাধী। 

ঠাস করে এক চড় মেরে কাঁদতে কাঁদতে নিপা বললো " সপ্তাহ খানিক নিজেকে ধরে রাখতে পারলি না কুলাঙ্গার? তারপর বিয়ে হতো আমার সঙ্গে, আর এতই যদি অধৈর্য তাহলে আমাকে বললি না কেন? আমি তো খুলনাতেই ছিলাম, তাই আমাকে বললে আমি তোর শরীরের যন্ত্রণা ভালো করে মিটিয়ে দিতাম। তখন আর তোর ভদ্রতার মুখোশের আড়ালের পিশাচ রূপ ওই মেয়েকে দেখতে হতো না। " 

- হাবিব চুপচাপ। 

রুহি তখন নিপাকে টান দিয়ে সরিয়ে নিল, আর তার বাবা বললো " এসব কি হচ্ছে নিপা? "

- নিপা বললো, আপনারা ওকে চরম শাস্তি দিবেন যাতে কেউ এমন কাজ না করে। শিক্ষকের মতো মহান একটা পেশায় জড়িত থেকে এমন ঘৃণিত কাজ যেন কেউ না করতে পারে। 

হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল নিপা, আর তার সঙ্গে সঙ্গে রুহিও বের হয়ে গেল। উপস্থিত সকলেই চুপ করে একটা অঘটন উপভোগ করে গেল। তারপর তারাও চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। নিপার বাবা বসে আছে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে, তখনই হাবিবকে ভিতরের ঘরে পাঠানো হলো। 

হাবিবের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর, চাকরির জন্য খুলনা শহরে পরে আছে। প্রভাতী স্কুলের সভাপতি হচ্ছেন চেয়ারম্যান সাহেব তাই তিনি নিজের ঘরে এনে রেখেছে তাকে। ছাদের চিলেকোঠার ঘরে বাস করতো হাবিব, আর তিনবেলা তার রুমের মধ্যে খাবার নিয়ে আসতো কাজের মেয়েটা। তবে নিপার সঙ্গে হাবিবের পরিচয় হয়েছে মাস তিনেক আগে, তারপর সেই পরিচয় থেকে ভালবাসা আর ভালবাসা দিয়ে বিয়ের কথা হচ্ছিল। 

ঘন্টা দুই পরে নিপার কাছে খবর আসলো, হাবিব চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে বসে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু মারা যায়নি তাই তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। 

সন্ধ্যা বেলা চেয়ারম্যান সাহেব এসে নিপার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললো " যদিও এটা আমাকে লিখেছিল কিন্তু আমার মনে হচ্ছে চিঠিটা তোমার ও পড়া উচিৎ। " 

চিঠি নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে পড়তে শুরু করলো নিপা। 

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব, 

পৃথিবীতে দম ফুরিয়ে গেছে তাই ত্যাগ করলাম। তবে মৃত্যুর আগে একটা ঘটনা জানাতে খুব ইচ্ছে করছে। নিপার সঙ্গে পরিচয় হবার ঘটনা। 

মাস তিনেক আগের কথা, ঢাকা থেকে "সুন্দরবন এক্সপ্রেসে" খুলনা আসছিলাম। আবহাওয়া ছিল খুবই খারাপ, কিন্তু ট্রেনের মধ্যে সেই আবহাওয়া বেশ চমৎকার লাগছিল। খারাপ আবহাওয়ার কারণে ট্রেন সেদিন লেইট হলো, রাত দুইটার দিকে খুলনা শহরে পৌছলাম। যশোর পার হয়েই ঝড়ের কবলে পরেছিলাম তবুও ট্রেন আস্তে আস্তে করে ঠিকই চলছিল। যদিও সকলের ধারণা ছিল যে রেললাইনের উপর গাছ উপড়ে পরতে পারে বা ভেঙ্গে পরতে পারে। সেই ভয়ে চালক হয়তো ট্রেন থামিয়ে রাখবেন, কিন্তু সেটা হয়নি। 

স্টেশন থেকে বের হলাম তখন ঝড় নেই কিন্তু বৃষ্টি দিয়ে ভেসে যাচ্ছে শহর। আশ্চর্য হলাম কারণ এই ঝড়বৃষ্টির রাতেও বাহিরে তখন তিন-চারটা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। আমার সঙ্গে তেমন কিছু ছিল না বলে আমি ঝটপট বাহিরে এসে একটা রিক্সা ঠিক করে নিলাম। মালপত্র নিয়ে বাকিরা এসে আমরা যারা রিক্সা দখল করেছি তাদের উপর বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমাকে নিয়ে রিক্সা যখন বের হয়ে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করে নিপাকে দেখতে পেলাম দাঁড়িয়ে আছে। হাত দিয়ে চুল ঠিক করছিল কিন্তু আমি ভেবেছিলাম সে হাতের ইশারা করেছে। তাই রিক্সা থামিয়ে তার কাছে গেলাম, আর যখন জানতে পারলাম যে আমাকে ডাকে নাই তখন নিজেকে বোকা ভাবলাম। তারপর যখন জানলাম সেও নাকি খালিশপুর যাবে তখন আমার সঙ্গে রিক্সায় উঠতে প্রস্তাব করলাম। বুড়ো রিক্সা ওয়ালা দেখা মেয়েটা একটু ভেবেই রিক্সার মধ্যে উঠতে রাজি হলো। 

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে, সমস্ত রাস্তা তখন পানি জমে তলিয়ে গেছে প্রায়। রিক্সায় বসে ভিজতে ভিজতে জড়সড় হয়ে বসে আছি, সে এক অদ্ভুত অনুভূতি ছিল। মৃত্যুর দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে আজ সেই বৃষ্টিভেজা রাতটা খুব মনে পরছে। এ জীবনে আর কোনদিন একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা হবে না, কি অদ্ভুত তাই না? হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মতো বলতে ইচ্ছে করে " আর কিছুদিন পর পৃথিবী পৃথিবীর মতো থাকবে, এভাবেই শ্রাবণে বৃষ্টি নামবে, টিনের চালে সেতার বাজবে, আকাশ ভেঙ্গে জোৎস্না নামবে কিন্তু আমি থাকবো না। "

খালিশপুরে পৌঁছে অবাক হলাম, ঝড়ের কবলে পরে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। নিপাদের বাসা হারিয়ে গেছে বাড়ির সামনের বড় গাছটি উপড়ে পরেছে বলে। আর তখন হঠাৎ করে ঝড় আরও বেড়ে গেছে, এদিকে নিপা তাদের বাসায় ঢুকতে পারছে না। আমি তখন বাধ্য হয়ে তাকে বললাম আমার সঙ্গে আসতে, সে রাজি হলো। রিক্সায় বসে আমি যে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সেটা তাকে বলেছিলাম আর টুকটাক পরিচয় হয়েছিল। দ্রুত কোহিনূর মোড়ে এসে আপনার এই বাসায় প্রবেশ করতে পারলাম, গেইট বন্ধ ছিল কিন্তু আপনি তো একটা চাবি দিয়ে রেখেছেন আমাকে। 

কোনমতে চিলেকোঠার ঘরে তাকে নিয়ে গেলাম, আপনাদের মেিন দরজা নক করেছিলাম বেশ কয়েকবার কিন্তু সাড়াশব্দ নেই। তারপর তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলাম, ততক্ষণে ছাদ ভেসে যাচ্ছে প্রায়। কোনরকমে রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করলাম, দুজনেই ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছি যেন ভেজা দুটো কাক। নিপার সেই ভেজা চুল আর ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে রইলাম বেশ কিছু সময়। নিপা সেটা বুঝতে পেরে বেশ লজ্জা পেয়েছিল, মনে হয় ভয়ও পাচ্ছে। আমি তাকে পোশাক পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বৃষ্টিতে ভিজে ছাদে দাঁড়িয়ে তার ভেজা শরীর চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আহ কত সুন্দর। 

বইপড়ার টেবিলে বসে রাতটা কাটিয়ে দিলাম, আর আমার বিছানায় শুয়ে সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঠান্ডায় কম্বল জড়িয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল নিপা। ভোরবেলা বৃষ্টির মধ্যেই খুব সাবধানে ওকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে গেলাম তার বাসার দিকে। কারণ একটা অবিবাহিতা মেয়ে আমার সঙ্গে রাতে ছিল সেটা কেউ না জানুক। আমরা দুজন ছাড়া আজ আপনি তৃতীয়জন জানতে পারলেন সেই রাতের কথা। 

প্রচুর ঝড়বৃষ্টির রাতে যেই সুন্দরী রূপবতী নিপাকে নিজের বিছানায় পেয়েও আমি সারারাত চেয়ারে বসে হুমায়ূন আহমেদের " কোথাও কেউ নেই " উপন্যাস পড়ে কাটিয়ে দিলাম। সেই নিপা কেন বা কীভাবে বিশ্বাস করলো যে একটা কাজের মেয়ে দেখে আমি মনুষ্যত্ব ভুলে যাবো? 

খুব অদ্ভুত পৃথিবী, অদ্ভুত তার মানুষগুলো। 

ইতি,

আহসান হাবিব। 

★★★

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ নিয়ে পাশাপাশি হাঁটছে সাজু ভাই ও তমা সুলতানা। দীর্ঘ ২৪ দিনের ইউরোপ ভ্রমণ শেষে এই মাত্র দেশে ফিরেছে সাজু ভাই, তাকে রিসিভ করার জন্য অপেক্ষা করছে কবিতা। 

তমার সঙ্গে সাজু ভাইয়ের পরিচয় হয়েছে বিমানে বসে, তমা সপরিবারে লন্ডনে থাকে। কিন্তু বিশেষ কারণে বাংলাদেশে এসেছে, তবে সেই বিশেষ কারণটা সাজু ভাই এখনো জানে না। তমা যখন নিজ থেকে কিছু বলে নাই তখন সেও নিজে আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে নাই। 

তমাকে রিসিভ করতে এসেছে একটা ছেলে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই তমা এসেছে। কবিতা তো সাজুকে দেখে আবেগে ভেসে উঠলো, আর সাজু তখন তমার দিকে তাকিয়ে বললো:-

- ভালো থেকো সবসময়, নিজের ব্যক্তিগত কাজ শেষ হলে আমাকে স্মরণ করিও। লন্ডনে ফিরে যাবার আগে সম্ভব হলে আরেকবার দেখা হবে। 

- তমা বললো, আপনিও ভালো থাকবেন, খুব ভালো করে এনজয় করলাম ভ্রমণটা। এতটা সময় দুজনের গল্প করতে করতেই পেরিয়ে গেল, কখন যে বাংলাদেশে ল্যান্ড করলাম বুঝতে পারিনি। 

- দোয়া রইল তোমার কাজ দ্রুত সফলভাবে সম্পন্ন হোক, তারপর কিছুদিন নিজের মাতৃভূমি ঘুরে দেখার অনুরোধ রইল। 

- মাতৃভূমি ঘুরে দেখার অনুরোধ গ্রহণ করলাম তবে আপনার বিশেষ কাজ না থাকলে আপনাকে সঙ্গে নিয়ে দেশটা ঘুরতে চাই। কারণ আপনার সঙ্গে ঘুরতে বেশ ভালো লাগবে, আর আপনি তো গোয়েন্দা গল্পের লেখক আবার রহস্যের উন্মোচন করতে পারেন। এমন রহস্যময় মানুষের সঙ্গে দেখা হবে কখনো ভাবতে পারিনি সাজু সাহেব। 

- দেশ ভ্রমণ করার অনুরোধ গ্রহণ করার জন্য মেলা মেলা ধন্যবাদ। 

- আমি যদি আমার কাজের জন্য আপনাকে স্মরণ করি বা আপনার সাহায্য দরকার হয় তবে আমি কি সাহায্য পাবো? 

- স্মরণ করিও, আপ্রাণ চেষ্টা করবো কারণ কোন এক বাঙালী মেয়ে ব্রিটেনে গিয়ে যাতে বলতে না পারে " নিজের দেশের মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েও পাইনি! "

- বেশ মজার লোক আপনি। 

- হাহাহা। 

গাড়ির মধ্যে গাল ফুলিয়ে রাগান্বিত হয়ে বসে আছে কবিতা, সাজুর সঙ্গে কোন কথা বলছে না। বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে তারপর সাজু ভাই বললো 

- কি ব্যাপার? মহারাণী হঠাৎ রাগ করেছে কেন? 

- চুপচাপ। 

- আমার সঙ্গে কেউ কথা না বললে আমি কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে যাবো বলে দিলাম। 

হঠাৎ করে গাড়ি ব্রেক করলো কবিতা, সাজু ভাই কিছু একটা বলতে যাবে তখনই মোবাইল বেজে উঠল। বিমানবন্দরে নেমেই বাংলাদেশের সিম ওপেন করেছে সাজু ভাই, কিন্তু একটু পরেই যে অপরিচিত নাম্বার দিয়ে কল আসবে সেটা ধারণা ছিল না। 

- সাজু বললো, হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। 

- একটা মেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো, ভাইয়া ওয়া আলাইকুম আসসালাম, আপনি কি সাজু ভাই? 

- জ্বি আমি সাজু ভাই, কে আপনি? 

- আমার নাম রাবেয়া, আমার স্বামীকে গতকাল রাতে খুন করা হয়েছে ভাইজান। সকাল থেকে আপনাকে কল দিচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না, তারপর আপনার বন্ধু সজীব ভাইয়ের কাছে জানতে পারি যে আপনি নাকি বিকেলে দেশে ফিরবেন। 

- বলেন কি?

- হ্যাঁ ভাইজান, আপনি যদি একটু আসতেন তাহলে আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার পেতাম। 

- আচ্ছা আমি আপনাকে কিছুক্ষণ পর কল দিচ্ছি। 

কল কেটে দিয়ে সাজু সজীব এর কাছে কল দিয়ে বললো:-

- তোকে কি সকালে রাবেয়া নামের কোন মেয়ে কল করেছে? 

- হ্যাঁ দোস্ত, আমাদের সেই চিরপরিচিত খুলনা খালিশপুরের বাসিন্দা, আর খুনটা সেখানে হয়েছে বলে খুব আগ্রহ হচ্ছে। 

- বলিস কি? 

- হ্যাঁ সাজু, আর তাছাড়া রুহি তো এখন সেই খালিশপুরে আছে। 

- বাহহ অসাধারণ। 

- যে লোকটা খুন হয়েছে তার সঙ্গে লন্ডনের তমা নামের এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রাবেয়া মেয়েটা সেই লন্ডনের মেয়েকে সন্দেহ করছে, সে নাকি টাকা দিয়ে খুন করিয়েছে। 

- কি নাম? ত.ত. তমা? 

- হ্যাঁ, তমা সুলতানা লন্ডন প্রবাসী। 

চলবে... 

আপনাদের আগ্রহের উপর সাজু ভাই সিরিজের এই (সন্ধ্যার একটু পর) গল্পটা নির্ভর করছে। 

তাই সকলের মতামত আশা করছি। 




( সমাপ্ত )





লেখা:- 

মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner