Bangla Comics |
গতকাল থেকে আমাদের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। আজ সকালে একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিল। কোনোক্রমে তাড়াহুড়া করে উঠে বিছানা থেকেই জয়েন করলাম।
স্যার বলল, 'আমাকে শুনতে পাচ্ছ? দেখতে পাচ্ছ?'
একজন বলল, 'পাচ্ছিইই।'
অন্য জন বলল, 'না স্যার, পাচ্ছি না।'
কিন্তু আমি বুঝলাম না, শুনতে না পেলে ও না স্যার বলল কিভাবে!
সে যাইহোক আরেকজন আবার গলায় একটু খবরদারি ভাব এনে বলল, 'স্যার বাদে বাকি সবাই আপাতত মিউট করো, প্লিজজজজ।'
হ্যালো হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং..ওয়ান টু থ্রি করতে করতেই দশ মিনিট চলে গেল। অবশেষে মোটামুটি সবাই কানেক্ট হলাম। ক্লাস শুরু হলো।
কিছুক্ষণ ক্লাস করার পর কেমন একটা ঝিমুনি ঝিমুনি ভাব চলে আসল। সকালের ক্লাস ঘুমাতে ঘুমাতে করার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ভিডিওটা মিউট করে একটু চোখ বুঝলাম।
অল্প অল্প নাক ডাকাও শুরু করেছিলাম বোধহয়। ভিডিও মিউট করলেও অডিওটা মিউট করতে খেয়াল নেই। স্যারের বাসাটা মনেহয় কোনো রাস্তার পাশে। এই লক ডাউনের মধ্যেও ভালোই গাড়িঘোড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কপাল ভালো সেই শব্দে নাক ডাকার শব্দটা চাপা পড়ে গেল।
আর এই দিকে এর মধ্যে আম্মা কখন ঘর ঝাড়ু দিতে আমার রুমে চলে আসল খেয়াল করিনি। রুমে এসে আমার এই অবস্থা দেখে আম্মা ঘর ঝাড়পোঁছ করার পরিবর্তে সাতসকাল বেলা আমাকেই একচোট ঝাড়পোঁছ করে গেল।
দুঃস্বপ্ন দেখছি ভেবে আমি ধরফরিয়ে উঠলাম। যখন ভুলটা ভাঙল তাড়াতাড়ি আবার ক্লাসে জয়েন করলাম।
কয়েক মিনিট ক্লাস করার পর আবার একটু বিরক্ত বিরক্ত লাগা শুরু হলো। বাথরুমে গেলাম একটু।
আম্মা দেখে বলল, 'এই তোর ইম্পরট্যান্ট ক্লাস করার নমুনা?'
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, 'এটাই আমার স্টাইল।'
বাথরুম থেকে শুধু শুধু ঘুরে এলাম। মনে হচ্ছে একটা সিগারেট না খেলে ঠিকমতো কিছুই বের হবে না। এখন মিজানকে খুব মিস করছি। ক্যাম্পাসে মিজানই আমার সিগারেট টানার পারমানেন্ট সঙ্গী।
মিজানকেও তো দেখলাম ক্লাস করছে। কী করব? একটা মেসেজ দিয়ে বলব না-কি, 'দোস্ত তুই একটা ধরা, এই দিকে আমিও একটা ধরাই। আর তো উপায় নাই। তা-ও একসাথে খাই দু'জন। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো আরকি!'
তৎক্ষনাৎ মনে পড়ল আরে এখন তো রোজা চলে। রোজার মাস। তখন এক দৌড়ে আবার গিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসলাম।
স্যার বকবক করেই চলেছে। এবার আমিও একটু মনযোগ দিলাম। ভাবলাম এতক্ষণ যা করার করেছি এখন একটু ভালোভাবে শুনি। পাশ তো করা লাগবে। এই সেমিস্টারে রিটেক আসলে বাজান আমার আর টাকা দিবে না। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো হলো একাকটা জল্লাদ শ্বাশুড়ি। এই দূর্যোগের সময়ও সেই শ্বাশুড়ি যৌতুকের মতো করে গলায় পাড়া দিয়ে টাকা আদায় করে নিচ্ছে।
ক্লাসে খুব মনযোগ দিয়েছি। এইভাবে মনযোগ দিয়ে ক্লাস করলে আমার টপ হওয়া এবার আর আটকায় কে! আম্মা কী পাশের বাসার আন্টিদের এমনিতেই বলে, আমার ছেলেটা না ভাবি পারে আসলে। কিন্তু পড়তেই চায় না। মনযোগটা-ই নাই ওর।
ক্লাস করছি। একটু পর দেখি ছোটবোন আনিশা এসে আমার পিছনে দাঁড়ানো। আমি চোখ দিয়ে ইশারা করলাম কী চায়। কিছু বলে না। একটু পর আমার পিঠের উপর এসে ঝুঁকে দাঁড়াল। আমি কনুই দিয়ে একটা গুঁতা দিলাম। অমনি ম্যা ম্যা করে কান্না শুরু করে আমার পিঠে আঁচড় পাছড় করতে করতে বলতে লাগল, 'এএএএএ..আমার চক্কেট কই? আমার চক্কেট কই রাখছ..দাও। এএএএ..'
আনিশার অমন চিৎকার শুনে আম্মা তাড়াতাড়ি রান্না ঘর থেকে ছুটে আসল। কোনোক্রমে আড় কোলে করে ও-কে নিয়ে গেল।
একটু পর আম্মা এসে জানতে চাইল চকলেট কই রাখছি। কান্না থামছে না। আমিও আমার বুকে এক পাহাড় কষ্ট চেপে বাধ্য ছেলের মতো বলে দিলাম টেবিলের দ্বিতীয় ড্রয়ারে।
গতকাল আব্বু ও-কে অনেকগুলা চকলেট এনে দিয়েছিল। আমি সেখান থেকে কয়েকটা চুরি করেছিলাম। কিন্তু এখন শেষ রক্ষাটা আর হলো না।
ক্লাস শেষ। স্যার লাইন কেটে দিবে দিবে অবস্থা। তখুনি লীজা তোরজোর করে এক প্রকার চিৎকার করে বলে উঠল, 'স্যার স্যার...প্লিজ মনোপলি মার্কেটটা সম্পর্কে যদি আরেকটু বলতেন। ক্লিয়ারলি বুঝিনি তখন ওটা।'
স্যার এক গাল হেসে দিলেন। যেন লীজা প্রশ্ন করেছে দুনিয়াতে এরচেয়ে সুখের আর কিছু নাই। স্যার মনের সুখে আরো দশ মিনিট বকবক করলেন।
অবশেষে শেষ হলো। তবুও আমার বুক ধরফর ধরফর করছে এই না লীজা এক্ষুণি আবার কিছু একটা বলে উঠে। ক্লাসে থাকলে নাহয় দুজন দুই পাশ থেকে চেপে ধরা যেত। কিন্তু অনলাইনে তো আর সেই সুযোগ নেই।
না, লীজা আর কিছু বলেনি। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি আম্মা আমার পিছনে দাঁড়ানো।
বলল, 'কিরে..ক্লাস শেষ?'
আমি শুধু ঘাড় নেড়ে বললাম, 'হু'
আমার হু বলতে দেরি হলো কিন্তু আম্মার সাথে সাথে চিৎকার করে উঠতে দেরি হলো না। আম্মা তার কন্ঠে উসাইন বোল্টের গতি এনে গলার সব রগ ফুলিয়ে বলে উঠল, 'স্যার স্যার..রাফি না করলা খায় না। আপনি ওরে একটু বুঝান।'
আম্মার আকষ্মিক এমন চিৎকারে স্যার আর তেমন কিছু বলতে পারল না। শুধু ক্লাসে আমি যেমন স্যারের দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে থাকি স্যারও অমন করে স্ক্রীনের অপর পাশ থেকে হাব্লার মতো তাকিয়ে থাকল।
( সমাপ্ত )
Writer: Rajib Debnath