Golpo |
লায়লা বেগমের কথা শুনে জীবনে প্রথমবারের মতো অতি আক্রোশে চড় মারলেন নিজের স্ত্রীর গালে জাহিদ মিয়া। পরক্ষণেই যেই তান্ত্রিককে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে যাবেন ঠিক তখনি এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হলেন তিনি। তান্ত্রিককে স্পর্শ করার পূর্ব মুহূর্তেই অদৃশ্য এক শক্তি জাহিদ মিয়াকে প্রায় দশ হাত দূরের সূঁচালো একটি বাঁশের কঞ্চি বরাবর ছিটকে ফেলে দিলো। বাঁশের ধাঁরালো কঞ্চিটা জাহিদ মিয়ার পিঠ বরাবর ঢুকে পুরো পেটের মাঝখান দিয়ে বের হয়ে গেলো। লায়লা বেগম এহেন দৃশ্য দেখে এক প্রকান্ড আত্মচিৎকারে দৌড়ে তাঁর স্বামীর দিকে ধেঁয়ে আসলেন। তিনি ঠিক কীভাবে তাঁর স্বামীকে বাঁচাবেন এই মুহূর্তে তা যেন তাঁর মাথাতেই আসছে না। এদিকে জাহিদ মিয়া যেন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন প্রতিক্ষণে ক্ষণে। তিনি কথা বলার শক্তিটাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলস্বরূপ।
আলিফা বাহিরে নিজের মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে হকচকিয়ে উঠলো। ও ভাবছে, এতো রাতে কী এমন বিপদ ঘটতে পারে যে মা চিৎকার করলো? অনেকটা কৌতুহলবসত ঘর থেকে বের হয়ে উঠোনের এককোণে তাকাতেই আলিফা থমকে দাঁড়ালো। বাবা বলে এক চিৎকার দিয়েই দৌড়ে কাঙ্ক্ষিত স্থানে হুমড়ি খেয়ে পরলো আলিফা। নিজের বাবাকে এই অবস্থায় দেখবে তা যেন তাঁর ভাবনাতেই ছিলোনা। অনেকটা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জাহিদ মিয়া আলিফাকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
-মা আমি যদি জীবনে কোনোদিন তোর প্রতি অবিচার করে থাকি তবে আমায় ক্ষমা করে দিস। আর তুই একমুহূর্ত এখানে থাকিস না, এক্ষণি পালিয়ে যা।
এই বলেই জাহিদ মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পরলেন। তাঁর সজীব প্রাণটি এখন আর এই নিথর নিস্তব্ধ দেহটিতে নেই, পাড়ি জমিয়েছে দূর আকাশের অন্তরায়। চোখের সামনে নিজের স্বামীর এরকম করুণ মৃত্যু দেখে স্বভাবতই এক হিংস্রতার জন্ম নিলো লায়লা বেগমের মনে। অশুভ তান্ত্রিকটি এখনো একমনে নিজের মন্ত্র সাধন করছেন বেশ দৃঢ়তার সাথেই। লায়লা বেগম পাশে থাকা গাছ কাঁটার কুড়ালটা হাতে নিয়ে খুব শক্ত করে মুষ্ঠিবদ্ধ করেই অনেকটা দ্রুততার সহিত এগিয়ে গেলেন তান্ত্রিকের দিকে। যেই তান্ত্রিকের মাথা বরাবর কুড়াল দিয়ে আঘাত করতে যাবেন ঠিক তখনি অজানা কোনো এক কারণে তাঁর সমস্ত শরীর প্যারালাইজড রোগীর মতোই অবশ হয়ে গেলো। পরক্ষণেই মাটিতে পরে মৃগী রোগীর মতো কাতড়াতে শুরু করলেন লায়লা বেগম। এটাও যে তান্ত্রিকের অশুভ শক্তির রোষানলে পরে ঘটেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আলিফা নিজের বাবার করুণ মৃত্যুর অন্তর নিজের মায়ের এহেন মুমূর্ষু অবস্থা দেখে আর স্থির থাকতে পারলোনা। আলিফার মাথায় এখন ঠিক দুটো চিন্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রথমত ভাবছে আমি যদি এখন মাকে বাঁচাতে যাই তবে এই শয়তান তান্ত্রিক আমারও কী ক্ষতি করবে?
দ্বিতীয়ত আমি কী বাবার কথামতো এক্ষণি পালিয়ে যাবো? পালিয়ে যদি না যাই তবে আমাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে যদি আমার জন্মদাতা পিতার কোনো ক্ষতি করে তবেতো আমি সকলকেই হারাবো।
আলিফা নিজের অবচেতন মন নিয়ে গন্তব্যহীন পথের রেশ ধরে ছুটে চলছে। হঠাৎই দৌড়ানো অবস্থায় আলিফার কানে বেঁজে উঠলো,
-আলিফা পালাও, পালাও।
পরক্ষণেই এক ভয়ঙ্কর অট্টহাসি তাঁর মধ্যকর্ণে আঘাত করলো। এই গভীর রাতে আলিফা কোথায় যাচ্ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই তবে আলিফার মন বলছে এই বিপদ থেকে বাঁচতে হলে শুধুই ছুটতে হবে এব্যতীত আর কোনো পন্থা নেই। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎই আলিফা কোনো এক সুঠাম দেহী পুরুষের সাথে ধাক্কা খেলো। যেই মাটিতে লুটিয়ে পরবে সেই মুহূর্তেই পুরুষটি তাঁর হাত ধরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। আলিফাও বেশ কিছুক্ষণ নিজের অবচেতন মন নিয়ে ছেলেটির বুকে লেপ্টে রইলো। পরক্ষণেই আলিফা বাস্তবে ফিরে ছেলেটি থেকে নিজেকে অতিদ্রুততার সহিত ছাড়িয়ে নিলো। ছেলেটির দিকে তাকাতেই আলিফা অবাক হবার চূড়ান্ত সীমায় পৌছে গেলো। একি! এতো সেই ছেলেটি যার নিকট আলিফার বাবা বিড়াল রূপে বন্ধুর ন্যায় অবস্থান করেছিলো। এই ছেলেটিও কী তবে কোনো জ্বীন নাকি তার মতোই রক্তে মাংসে গড়া এক মানুষ। আলিফার কৌতুহলের অবসান ঘটিয়ে ছেলেটি বলল,
-আলিফা এক্ষণি এখান থেকে চলো। ঐ ভয়ঙ্কর তান্ত্রিক তোমার বাবার খোঁজেই এখানে এসেছেন। তোমার মনে হয়তো অজস্র প্রশ্ন লুকিয়ে রয়েছে আমার সম্বন্ধে। সবকিছুই বলবো কিন্তু এখানে থাকাটা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়।
আলিফার মন বলছে, পৃথিবীতে যদি এইমুহূর্তে আল্লাহ ব্যতীত তাকে আর কেউ বাঁচাতে পারে তবে এই ছেলেটিই হবে। অনেকটা বিশ্বাস নিয়ে ছেলেটির হাত ধরে আলিফা দৌড়াচ্ছে। ছেলেটি তাঁকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা সম্পর্কে আলিফা অবগত নয় ঠিকই তবে ছেলেটি যে তাঁকে বাঁচাতে চায় এ নিয়ে তাঁর মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। প্রায় কতক্ষণ যে দুজন ছুটেছে তাঁর কোনো হিসেব নেই। হঠাৎই একটি পুরোনো বাংলোতে আলিফা ছেলেটির সাথে উপস্থিত হলো। বাংলোটিতে একবার চোখ বুলাতেই আলিফার মস্তিষ্কে হালকাভাবে অতীতের দৃশ্য ফুটে উঠলো। আলিফা খুব মনোযোগ দিয়ে এই জীবন্ত স্বপ্নটার খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করছে। হ্যাঁ এই জায়গাটিতেই সে জন্ম হয়েছিলো আর এখানেই তাঁর জন্মদাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়েছিলো।
ভিতরে প্রবেশ করতেই আলিফা চারিপাশের সৌন্দর্য্য দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল। বাইরে থেকে বাংলোটি যতটাই কুৎসিত দেখাচ্ছিল ভিতরের দৃশ্য যেন তার সম্পূর্ণই উল্টো প্রকৃতি ধারণ করেছে। আলিফাকে একটি রুমে বসিয়ে ছেলেটি স্বল্প সময়ের জন্য রুম ত্যাগ করলো। আলিফা এখনো নিজের কৌতুহলভাব কাঁটিয়ে উঠতে পারছে না। কিছুক্ষণ অন্তর ছেলেটি রুমে প্রবেশ করেই আলিফার পাশাপাশি বসে একটি অদ্ভুত তাবিজে ঝোলানো গোলাকার বস্তু এবং একটি ছুড়ি সদৃশ হাতিয়ার এগিয়ে দিলো। আলিফা অনেকটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকাতেই ছেলেটি বললো,
-আলিফা! এই দুটো জিনিস সবসময় তোমার সাথে রাখবে। এগুলো তোমাকে অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করবে। আমার সম্পর্কে হয়তো তোমার মনে অজস্র প্রশ্ন লুকিয়ে রয়েছে যে আমি কে বা আমার সাথে তোমার বাবার কী সম্পর্কে থাকতে পারে? তাইতো? শোনো তবে,
বিশ বছর আগের কথা... আমি ছিলাম তখন খুবই ছোটো আর আমার বাবা ছিলেন একজন কবিরাজ। তিনি দুষ্টু জ্বীনদের বোতল বন্ধি করে মাটিতে পুতে ফেলতেন। এই নিয়ে স্বভাবতই বাবার প্রতি তাঁদের অজস্র ক্ষোভ ছিলো। তাঁরা প্রতিনিয়তই চাইতো কীভাবে আমাদের ক্ষতি করা যায়। কিন্তু আমার মা আর আমার শরীরে বাবা এমন কিছু তাবিজ বেঁধে দিয়েছিলো যে জ্বীনেরা আমাদের স্পর্শ করাতো দূরের কথা কাছাকাছিই আসতে পারতো না। কিন্তু একদিন ক্ষুদ্র একটি ভুলের কারণে আমার মাকে সেই দুষ্টু জ্বীনদের হাতে বলি হতে হয়েছিলো। বাড়ির ভিতরে অবস্থানকালে সেই তাবিজ না পরলেও আমাদের কিছু হতোনা কারণ আমার বাবা আগেই বাড়িটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ির বাহিরে গেলে অবশ্যই সেই তাবিজ পরেই বের হতে হতো আমাদের। কিন্তু সেদিন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ভুলবসত আমার মা তাবিজটি নিজ রুমে ফেলে এসেছিলেন। আর এই সামান্য ভুলটিই তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সেদিন আমার মায়ের লাশ পাওয়া গিয়েছিলো এক পরিত্যক্ত ডোবার মধ্যে। তারপর থেকে বাবার মনে দুষ্টু জ্বীনদের প্রতি আক্রোশ ক্রমেই বেড়ে চলছিলো। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তোমার বাবা মায়ের বিবাহতে কাজি ছিলেন আমার বাবা। তিনি প্রথম থেকেই জানতেন যে তোমার বাবা একজন জ্বীন কিন্তু তিনি কখনোই তা প্রকাশ করেননি। বাবার এই উপকারের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তোমার বাবা আমার বাবাকে প্রতিনিয়তই সাহায্য করতেন। কিন্তু যেদিন মায়ের সাথে সাথে আমার বাবাকেও সেই দুষ্টু জ্বীনদের হাতে বলি হতে হয়েছিলো সেদিন আমি খুব একা হয়ে গিয়েছিলাম। বাবার মৃত্যুক্ষণে তোমার বাবা আমার বাবাকে কথা দিয়েছিলেন যে, আমার মানব সন্তান কে আমি লালিত পালিত করতে পারিনি ঠিকই কিন্তু তোমার সন্তানকে আমি কখনোই হাতছাড়া করবোনা।
বাবা অনেকটা নিশ্চিন্তে সেদিন পরলোকগমন করেছিলেন। তোমার বাবা কেবল মাত্র আমার বন্ধুই নয় বরং একজন বাবাও বটে।
আলিফা এতক্ষণ যাবৎ ছেলেটির মুখে কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তেই চোখের জলধারা ছেড়ে দিলো। আলিফা ভাবছে, তাঁর বাবা এতোই ভালো যে নিজের সন্তানকে অন্যের আশ্রমে পাঠিয়ে অন্যের সন্তানকে লালন পালন করেছে।
-আলিফা! তোমার বাবাকে সেই শয়তান তান্ত্রিক বোতলবন্ধি করে ফেলেছে। যে করেই হোক তাঁকে বাঁচাতে হবে।
আলিফা অনেকটা হন্তদন্ত হয়ে বললো,
-ঐ তান্ত্রিককে আমি নিজ হাতে খুঁন করবো। ও আমার এই বাবা মাকেও মেরে ফেলেছে।
ছেলেটি আলিফার কথা শুনে অনেকটা ইতস্তত ভঙ্গিতে বললো,
-ওখানে অজস্র বিপদ অপেক্ষা করছে, তোমার যাওয়ার দরকার নেই।
ছেলেটির কথার তোয়াক্কা না করে আলিফা বললো,
-আপনি যদি আমাকে না নিতে চান তবে আমি একাই যাবো।
উপায়ন্তর না পেয়ে ছেলেটি বললো,
-আচ্ছা চলো তবে। আর একটি কথা, তুমি যদি কোনো মুহূর্তে বিপদে পরো তবে তোমার হাতের এই ছুড়িটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। মনে রাখবে, আমি ঐ অশুভ শক্তির মাঝে সামান্য এক কীটমাত্র। নিজের জীবন নিয়েও আমি হাজারো সংশয়ে রয়েছি।
ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলছে আলিফা আর ছেলেটি, যেই পথ দিয়ে সেই তান্ত্রিকের নিকট এসেছিলেন লায়লা বেগম। আলিফা অনেকটা সাবলীলতার সহিত ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো,
-আচ্ছা আপনার নাম কী? আর আপনি কীভাবে না দেখেই সবকিছু বলে দিতে পারেন?
ছেলেটি ক্ষানিকটা মুচকি হেসে বললো,
-এতোদিন পর আমার নাম জানতে ইচ্ছে হচ্ছে? অথচ আমি যে তোমাকে কত ভালো...
-কী কত ভালো?
-না কিছুনা। আমার নাম মিলহান। এটা তোমার বাবারই দেওয়া। আর এতোদিন জ্বীনের সাথে বসবাস করে এসেছি আর না দেখে কিছু বলতে পারবো না তা কী হয়?
-আমার বাবাকে একদম জ্বীন বলবেন না। জ্বীন আমার নিকট গালির মতো মনে হয়।
-হাহাহা। আচ্ছা ঠিক আছে।
এই গভীর রাতে ঘন জঙ্গলের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাওয়াটা চারটে খানি কথা নয়। আলিফার অন্তরে এখনি বেশ কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে কিন্তু তাঁর মন একটি কথাই বলছে, বাবাকে ঐ শয়তান থেকে বাঁচাতে হবে। হঠাৎই ছেলেটি থমকে দাঁড়ালো আর সাথে সাথে আলিফাও।
-কী হয়েছে?
-আমরা পৌছে গেছি। ঐ যে দেখো তান্ত্রিক মন্ত্র পাঠ করছে।
-এখন কী করবেন?
-তুমি এখানে দাঁড়াও।
এই বলেই ছেলেটির হাতে থাকা কুড়াল সদৃশ বস্তুটি নিয়ে তান্ত্রিকের নিকট এগিয়ে গেলো। একমুহূর্ত দেরী না করে কুড়ালটি তান্ত্রিকের মাথা বরাবর বসিয়ে দিলো মিলহান। কিন্তু একি তান্ত্রিকের কিছুই হচ্ছে না। মাথার সাথে এখনো গেঁথে রয়েছে কুড়ালটি ঠিক সেই অবস্থাতেই তান্ত্রিক পিছনে ঘুরেই মিলহানের গলাটা ধরে বিশ হাত দূরে ছিটকে ফেলে দিলো। একটি মরা গাছের সাথে বারি খেয়ে মুহূর্তেই মিলহানের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করলো। এদিকে আলিফার এহেন দৃশ্য দেখে হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। শয়তান তান্ত্রিক মাথা থেকে কুড়ালটি ছাড়িয়ে ক্রমশই এগিয়ে গেলো মিলহানের দিকে। মিলহানের অবস্থা বেশ করুণ, ও ভাবছে আজ বোধহয় আলিফার বাবাকে আর বাঁচাতে পারলাম না। নিজের জীবনটা বোধহয় এই তান্ত্রিকের হাতেই সমাপ্তি ঘটবে। মিলহানের সামনে এসে সেই ভয়ঙ্কর চোখ নিয়ে যেই মিলহানকে কুড়াল দিয়ে আঘাত করতে যাবে ঠিক সেই সময় তান্ত্রিক এক আত্মচিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলো। আলিফা এখনো তান্ত্রিকের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপছে। কারণ ওর ভাবনাতেই ছিলোনা যে এই শয়তানকে ও সেই অদ্ভুদ হাতিয়ার দিয়ে মেরে ফেলতে পারবে। হঠাৎই তান্ত্রিকের দেহটি সজীবতা থেকে শুটকি সদৃশ হয়ে গেলো। আলিফা দৌড়ে এসে মিলহানকে মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু আঘাতে জর্জরিত হয়ে ওর দুর্বল দেহটি যেন দাঁড়াতেই পারছেনা। তবুও অনেকটা কষ্টার্জিতভাবে উঠে দাঁড়ালো মিলহান। তান্ত্রিকের মন্ত্রসাধনের স্থানে একটি কাঁচ সদৃশ বোতল বেশ দৃঢ়তার সহিত দাঁড়িয়ে রয়েছে। মিলহান আলিফাকে ভর করে সেই বোতলটির নিকট এসেই বোতলটির মুখটি খুলে দিলো। হঠাৎই বোতল থেকে ধোঁয়া বের হয়ে এক মানবমূর্তি আকার ধারণ করে পরক্ষণেই সেটি মাটিতে লুটিয়ে পরলো। আলিফা বাবা বলে এক চিৎকার দিয়ে সেই মানবমূর্তির অবয়বটিকে জড়িয়ে ধরলো। অনেকটা কাতর কন্ঠে অবয়বটি বলে উঠলো,
-আলিফা! আমার জীবনের মেয়াদ আর বেশিক্ষণ নেই, আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে আমায় ক্ষমা করে দিয়ো। আর মিলহানের হাত কখনো ছেড়োনা। আমি তোমাকে মিলহানের নিকট অর্পণ করে গেলাম। চিরবিদায় তবে আজ।
এইবলেই মানবমূর্তির অবয়বটি শূণ্যে বিলীন হয়ে গেলো। আলিফা বাবা বলে পুনরায় এক চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পরলো। মিলহান মনে মনে বলছে,
-আলিফা! আমি জানি তোমার মনে আজ কতটা কষ্ট জমে রয়েছে। নিজের দুই দিকের পিতা মাতাকে হারিয়ে আজ তুমি নিঃস্ব। কিন্তু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, জীবনের প্রতিটি বিপদের বাকে বাকে তোমাকে নিজের প্রাণ উজার করে সাহায্য করে যাবো। তুমি আজ আমার নিকট এক গচ্ছিত আমানত। আমার সাধ্য নেই এই আমানতের খেয়ানত করা।
পূর্ব আকাশের রক্তিম সূর্যের আভাটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। একটি মুমূর্ষু ছেলে একটি মেয়ের উপর ভর করে এগিয়ে চলছে অজানার পথে। এই বন্ধন যে দুটো হৃদয়ে প্রাণের স্পন্দন থাকা অবধি ভাঙ্গবে না তা প্রতিটি ভোরের পাখির কল কাকলীই বলে দিচ্ছে। এই বন্ধনে নেই কোনো বক্রতা আছে শুধু এক পরিপূর্ণ ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং আস্থা।
ভালো থাকুন ভালো রাখুন প্রিয় মানুষটিকে।
.
(সমাপ্ত)
Writer: Misk Al Maruf