> এই আলো আঁধারীর পথ পর্ব ৪৫ - Romantic Love Story - Boipoka365
-->

এই আলো আঁধারীর পথ পর্ব ৪৫ - Romantic Love Story - Boipoka365


Romantic Love Story


সকালের সূর্য আকাশে ঝলমল করছে।আড়মোড়া ভেঙে উঠতে না উঠতেই কি ভীষণ তেজ তার!সূর্যের তাপে সকালের স্নিগ্ধ আমেজ ঢাকা পরে গেছে।তুরা পা গুটিয়ে বিছানায় বসে আছে।শুধু শুধু বসে নেই।সে ছবি আঁকছে।খুব মনোযোগ দিয়ে কাগজে রং তুলির আঁচড় কেটে চলেছে সে।এলোমেলো চুলগুলো আলগা খোঁপায় জড়ানো।কিছু অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খল চুল কপাল আর গালের উপর পরে আছে।জানালার পর্দার ফাঁক ফোকর দিয়ে একফালি রোদ তার মুখের একপাশে এসে পরেছে।সেদিকে তার বিশেষ মনোযোগ নেই।মনোযোগ ছবি আঁকার দিকে।

আবরার ঘরে এসে ঢুকলো।বিছানায় বসে তুরার দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে হালকা কাশলো।তুরা দৃষ্টিপাত করলো না।তার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো না।আবরার এবার কঠিন গলায় বলল, 

"ছবি আঁকা হয় নি?"

তুরা চোখ তুলে তাকালো।ঠোঁটে হাসি টেনে বলল, 

"না,হয় নি।"

আবরার হতাশ গলায় বলল, 

"তুরা!ছবি আঁকা দিয়ে কি পেট ভরবে?খালি পেটে কতক্ষণ বসে থাকবে?"

তুরা এবার হাতের রঙ তুলি রাখলো।মুখ ফুলিয়ে বলল, 

"আমি একটু আগে নাস্তা খেয়েছিলাম না?বমি হয়ে গেলে কি আমার দোষ?"

"না,সেটা তোমার দোষ নয়।কিন্তু বমি হয়েছে বলে যে আর খাচ্ছো না,সেটা অবশ্যই তোমার দোষ।"

"আবার খেলে আবার বমি হবে।তাই এখন আর খেতে ইচ্ছা করছে না।"

আবরার এবার কঠিন গলায় বলল, 

"খেতে ইচ্ছা না করলেও খেতে হবে।তুমি বসো।আমি খাবার নিয়ে আসছি।"

আবরার উঠে চলে গেল।কিছুক্ষণ পরেই খাবার নিয়ে ফিরে এলো।তুরার সামনে বসলো।খাবার মুখের সামনে তুলে বলল, 

"খাও।"

তুরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও খাবার মুখে নিলো।মনে মনে প্রচ্ছন্ন অভিমান হলো।শুধু বাবুর জন্য কত দরদ!এমনি সময় তো খাইয়ে দিতে আসে না!

আবরার তুরাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলল, 

"চেহারার এ কি অবস্থা করে রেখেছ?চুল আঁচড়াও নি কেন?এই চেহারায় কেউ তোমাকে দেখলে ভাববে আমি বোধহয় তোমাকে মারধর করেছি।"

তুরা ফিক করে হেসে ফেললো।বলল, 

"চুলে ভীষণ জট পাকিয়ে গেছে।তাই আঁচড়াতে ইচ্ছা করে নি।ভীষণ বিরক্ত লাগছিল।"

আবরার ছোট করে নিঃশ্বাস ফেললো।তুরা আজকাল খুব অল্পতেই বিরক্ত হয়ে পরে।মাঝে মাঝেই অকারণে তার মন খারাপ হয়ে যায়।হুট করে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত সব কথাবার্তা বলে সে।এইতো কাল রাতেই বারান্দায় দুজন জড়াজড়ি করে বসে ছিল।তুরা চট করে বলে উঠেছিল,গোলাপ ফুলগুলো ভীষণ সুন্দর।আমার ইচ্ছা করছে ফুলগুলো চিবিয়ে খেতে।এগুলো কি খাওয়া যায় না?

স্ত্রীর এহেন কথা শুনে আবরার নক্ষত্রময় আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে।এসব প্রেগন্যান্সির পরিবর্তন।মেনে নেওয়া ছাড়া আর কি করার আছে?আবরার তুরাকে খাওয়ানোয় মনোযোগ দিলো।খাওয়ানো শেষ করে আবরার উঠে গেল।তুরা আঁকার খাতাটা আবার হাতে নিলো।কিন্তু আর ছবি আঁকতে ইচ্ছা করলো না।খাতা,রঙ,তুলি,সব গুছিয়ে সে বিছানার একধারে রেখে দিলো।

আবরার ফিরে এলো।তার হাতে নারিকেল তেলের বোতল আর চিরুনি।সে তুরার পিছনে গিয়ে বসলো।তারপর স্ত্রীর চুলে তেল লাগাতে শুরু করলো।তুরা হতভম্ব হয়ে বলল, 

"তুমি চুলে তেল লাগাতে পারো নাকি?"

আবরার হেসে বলল, 

"বুবুর চুলে মাঝে মাঝে তেল মাখিয়ে দিতাম।"

তুরা কথা বলল না।তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।আবরার এত যত্ন করে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে যেন তুরার প্রতিটি চুলকেও সে ঘুম পাড়িয়ে দেবে।তেল মাখিয়ে চুলে বিনুনি বেঁধে দিলো আবরার।তারপর তুরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।এই মেয়েটাকে দেখে এত মুগ্ধতা কি করে আসে সেটা আবরার বুঝতে পারে না।নিজের বউ বলেই কি তাকে এত রূপবতী মনে হয়? কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো সে।তুরা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিতেই আবরার তার গালে আলতো করে চুমু বসিয়ে দিলো।মুগ্ধ গলায় বলল, 

"এইতো!এবার আমার বউকে একদম আমার কাজলের লক্ষ্মী মায়ের মতো লাগছে।"

তুরা মাথা নিচু করেই হাসলো।আবরার উঠে দাঁড়িয়ে তেলের বোতল আর চিরুনি ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো।তুরা বিছানা ছেড়ে নেমে আবরারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।আবরার ঘুরে দাঁড়াতেই তুরা দুই হাত বাড়িয়ে দিলো।বলল, 

"নিচু হও।"

আবরার মাথা নিচু করলো।তুরা দু'হাতে স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে তার পায়ের উপর দুই পা রেখে দাঁড়ালো।আবরার ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

"কি চাই?"

তুরা প্রশস্ত হেসে বলল, 

"হাঁটতে চাই।আমায় নিয়ে হাঁটো।"

আবরার হেসে ফেললো।তুরার কোমড় জড়িয়ে ধরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাঁটতে শুরু করলো।গুটি গুটি পা ফেলে ঘর থেকে বারান্দায় এলো।বারান্দার এই মাথা থেকে ওই মাথা ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে শুরু করলো।

.

রায়না ভাইয়ের বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয়েছিল।নিচ থেকে মাথা উঁচু করে আবরারের বারান্দার দিকে তাকাতেই এই দৃশ্য চোখে পরলো তার।একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে সে চেয়ে রইলো সেদিকে।

.


তিনদিন হলো রেখা আর মাহিনের কানাডায় পৌঁছানোর।কানাডায় এখন মধ্যরাত।বৃষ্টি হচ্ছে বলে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।এই দেশের আবহাওয়া আর সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে বেশ অসুবিধাই হচ্ছে তাদের।রেখা গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে বিছানায় মাহিনের পাশে বসলো।বিছানার একপাশে মিতি আর তিতি ঘুমিয়ে আছে।মাহিন এসে থেকেই ভীষণ ব্যস্ত।এখনও সে কাজ করছে।

রেখা কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকলো।মেয়েদের গায়ে চাদর টেনে দিলো।বিছানায় হেলান দিয়ে বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো মাহিনের দিকে।খানিকক্ষণ পর ধীরে ধীরে বলল, 

"তুমি ঘুমাবে না?"

মাহিন ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল, 

"এইতো কিছুক্ষণ।"

রেখা আবার কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, 

"তুলি ভিডিও কল করেছিল।তুরা প্রেগন্যান্ট।আমার ভীষণ খুশি লাগছে।"

মাহিন ছোট করে বলল, "হুম।"

তার ঠিক পরেই সে রেখাকে বলতে চাইলো,তুমি ঘুমিয়ে পরো।বলতে গিয়েই তার মনে পরলো তুলির বলা কথাগুলো।তুলির কথানুযায়ী একটা কাজও সে আজ করে নি।শুধু আজ নয়,গত তিনদিন যাবৎ এই ব্যাপারে সে উদাসীন থেকেছে।হঠাৎ কি মনে করে যেন মাহিন ল্যাপটপ বন্ধ করলো।ল্যাপটপ পাশের টেবিলে রেখে রেখার দিকে তাকিয়ে বলল, 

"মাকে ওষুধ দিয়েছ,রেখা?"

রেখা তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে বলল, 

"হ্যাঁ।মা ঘুমিয়েও পরেছেন এতক্ষণে।মা বলছিলেন উনার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না।"

"ভালো না লাগারই কথা।মিতি তিতি কিছু বলছে?"

"না,ওরা বেশ আনন্দেই আছে।নতুন জায়গা আগ্রহ নিয়ে দেখছে।ওদের কাছে সবচেয়ে মজার লাগছে এখানকার ভাষা।কিছু তো বুঝতে পারছে না।শুধু লোকজনের কথাবার্তা শুনে দুজন মিলে মিটিমিটি হাসছে।এইতো আজ দুপুরেই,জানালা দিয়ে কাদের যেন কথপোকথন শুনেছে।তারপর দুজন মিলে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো।এত বদমাশ তোমার মেয়ে দুটো!"

মাহিন হেসে ফেললো।রেখা মুগ্ধতা নিয়ে তার দিকে তাকালো।হাসলে মানুষটাকে এত সুন্দর লাগে!কতদিন পর হাসলো মানুষটা?শেষ কবে হাসি দেখেছিল সে মাহিনের?মনে পরে না রেখার।

মাহিন চুপ করে বসে থাকলো কিছুক্ষণ।রেখাও কোনো কথা বলল না।মাহিন হাত বাড়িয়ে স্ত্রীর হাত ধরতে চাইলো।কিন্তু পারলো না।কোথায় যেন বাধা পাচ্ছে।আশ্চর্য!এমন হচ্ছে কেন?কাজের ব্যস্ততায় সত্যিই কি তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে?ঠিক কতটা দূরত্ব তৈরি হলে স্ত্রীর হাত ধরতেও দ্বিধা হয়?কতটা!

মাহিন চেষ্টা করেও বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলো না।কিছুক্ষণ নীরব থেকে হালকা কেশে বলে উঠলো, 

"রেখা,তুমি কি আমার সাথে খুশি?মানে সুখী?"

রেখা হতভম্ব হয়ে মাহিনের দিকে তাকালো।তার চোখেমুখে বিস্ময়।ভীষণ বিস্ময়ে সে কথা বলতে পারলো না।স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো সে।স্ত্রীর চোখের স্তব্ধতা আর বিস্ময় হয়তো মাহিন বুঝতে পারলো না।সে আবার প্রশ্ন করলো,

"তুমি আমার সাথে সুখী নও,রেখা?ভেতরে ভেতরে কি তুমি খুব দুঃখী?আমি কি সত্যিই তোমাকে সময় দেই নি?অবহেলা করে ফেলেছি?আমার মেয়েদের প্রতিও উদাসীনতা দেখিয়ে ফেলেছি।তাই না,রেখা?"

রেখা এবার মুখ ফিরিয়ে দৃষ্টি নত করে ফেললো।দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে উথলে আসা কান্নাটা আটকে রাখার চেষ্টা করলো।খুব নিঃশব্দে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো তার।কোনো কথাই বলতে পারলো না।মাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেললো।শান্ত গলায় বলল, 

"আমি মানুষটা কেমন যেন,রেখা।তুলি যে যন্ত্র মানব বলে,ঠিকই হয়তো বলে।ভালোবাসতে ঠিক জানি না।কিভাবে ভালোবাসতে হয় বুঝি না।কাজকর্মে উন্নতি করবো,স্ত্রী সন্তানদের সব চাহিদা পূরণ করবো সেটাকেই জীবন বলে মনে হতো।পরিবারকে যে আলাদা করে সময় দেবো,দিতে হবে,সেটা ভাবতে পারি নি কখনো।আমার মনে হতো,একই বাড়িতেই তো থাকি।আলাদা করে সময় কাটানোর কি আছে?আমি গর্দভ!তাই না,রেখা?"

কথাগুলো শেষ করে মাহিন মৃদু হাসলো।সে নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেল।এতগুলো কথা কি করে বলে ফেললো সে?

মাহিনের শান্ত স্বরের কথাগুলো কানে যেতেই রেখার ভেতরে শিহরণ হলো।স্বামীর হঠাৎ এতটা পরিবর্তনের কারণ সে বুঝতে পারলো না।বুঝতে চেষ্টাও করলো না।ভেতরের অনুভূতিতে তার চিন্তাভাবনা জট পাকিয়ে গেছে।এলোমেলো মস্তিষ্কে কিছু সময় শক্ত হয়ে বসে রইলো রেখা।একটা সময় পর সে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠলো।মাহিন রেখার কাঁধে হাত রেখে বলল, 

"রেখা,কেঁদো না।"

রেখা এবার মাহিনের বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো।হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।মাহিনের শার্ট আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, 

"তুমি খুব খারাপ।বড্ড অবহেলা করেছ আমাকে।বড্ড বেশি!আমি কত যে কেঁদেছি,তুমি তার কিছুই জানো না।কিচ্ছু না।তুমি তার খোঁজই রাখো নি কখনো।নিজের প্রয়োজনের সময় ছাড়া কখনো কাছে টানো নি।কোনোদিনও জিজ্ঞেস করো নি,রেখা তুমি কেমন আছ?মাস শেষে হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছ।মেয়ে দুটো কখন কি বায়না করে,কখন ওদের একটু ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করে,কখন ওদের বাবার হাত ধরে হাঁটতে ইচ্ছা করে,সেসব কিছুই খেয়াল করো নি।ওদের শরীর খারাপ হলে হাতে টাকা দিয়ে বলেছ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও।ওদের তবুও মাঝে মাঝে আদর করেছ।কিন্তু আমাকে?আমার জ্বর হলে আমার কপালে একবার হাত রাখারও সময় হয় নি তোমার।জীবনে এত টাকা দিয়ে কি করবো যদি স্বামীর ভালোবাসা না জোটে?প্রতিটা দিন আমি চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছি শুধুমাত্র তোমার সাথে একটু কথা বলার আশায়,তোমার বুকে মাথা রেখে আমার সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে যাওয়ার আশায়।ভেবেছি আমার সারাদিনের কাজগুলো খুঁটে খুঁটে তোমায় বলবো।তোমার কাছে শুনবো তোমার সারাটা দিন কেমন ছিল।কিন্তু তুমি!কখনো সেই সুযোগই দাও নি।তুমি ভীষণ খারাপ,মাহিন।ভীষণ খারাপ!"

হৃদয়ে জমাট বাঁধা রক্তের মতো বন্দি হয়ে থাকা কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে উগড়ে দিয়ে রেখা থেমে গেল।তবে তার কান্না থামলো না।ডুকরে কাঁদছে সে।মাহিন কথা বলছে না।সে শুধু স্ত্রীকে দু'হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে তার।আলিঙ্গনের এত বিশুদ্ধ অনুভূতি আগে কখনো তার হয় নি।মনে মনে তুলির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো সে।মাত্র কয়েকটা কথা বলেই কি অসম্ভব সুন্দর অনুভূতির সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিলো মেয়েটা!তুলি মেয়েটা তো অসাধারণ!


কনে দেখা আলো বারান্দায় এসে পরেছে।সূর্য ডুবুডুবু করছে।রায়না মনমরা হয়ে বসে আছে।তার চোখে ভাসছে তুরাকে নিয়ে আবরারের হেঁটে বেড়ানোর দৃশ্য।তার মনের ভেতর খচখচ করছে।সে যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতো,তাহলে সেও তো পারতো তনয়ের পায়ে পা রেখা হাঁটতে।রায়না তার মন খারাপের কারণ বুঝতে পারছে না।এক জীবনে সব পাওয়া যাবে না,এই কথাটা রায়না সবসময় মনে রাখে।সে তার জীবনে অনেক কিছু যেমন পায় নি,তেমন অনেক কিছু পেয়েছেও।তনয়কে পেয়েছে জীবনে।তাহলে এই সামান্য কারণে মন খারাপের কি আছে?

তনয় ঘরে এসে ঢুকলো।বারান্দায় গিয়ে রায়নার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, 

"রায়না,সন্ধ্যা হয়ে এলো তো।মা ডাকছে তোমাকে।"

রায়না দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, 

"আসছি।"

তনয় হাঁটুগেড়ে বসলো।রায়নার হাত দুটো ধরে বলল, 

"মন খারাপ কেন?"

রায়না ঠোঁটে হাসি টেনে বলল, 

"কই মন খারাপ?আমার মন তো ভালোই।জানো?আজ সকালে ভাইয়ের বাসায় গিয়ে দেখলাম ভাই তুরাকে নিয়ে পায়ে পায়ে হাঁটছে।দৃশ্যটা এত সুন্দর লাগলো!ওদেরকে দেখে আমার মন আরও ভালো হয়ে গেছে।"

তনয় তীক্ষ্ণ চোখে রায়নার দিকে তাকালো।রায়না থতমত খেয়ে গেল।আমতা আমতা করে বলল, 

"এ...এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?"

তনয় উঠে দাঁড়ালো।চট করে রায়নাকে কোলে তুলে নিলো।তারপর বারান্দার এমাথা থেকে ওই মাথা হাঁটতে শুরু করলো।রায়না আশ্চর্য হয়ে বলল, 

"কি করছো,তনয়?"

তনয় ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে জবাব দিলো, 

"তোমাকে নিয়ে হাঁটছি।তুমি কি ভেবেছ?তোমার ভাই একাই নিজের বউকে নিয়ে হাঁটতে পারে?আমি পারি না?"

রায়না স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো তনয়ের দিকে।তার চোখে টলটলে পানি।ধীরে ধীরে তার চোখের সামনে তনয়ের মুখটা ঝাপসা হয়ে আসছে।একগুচ্ছ হলদে আলো তনয়ের মুখে এসে পরেছে।কনে দেখা আলোয় তনয়কে কি ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে!

.


চলবে..........




Writer: Alo Rahman

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner