> নবীর জীবনের গল্প - হজরত মুহাম্মদ - নবী - Arif Azad - আরিফ আজাদ
-->

নবীর জীবনের গল্প - হজরত মুহাম্মদ - নবী - Arif Azad - আরিফ আজাদ

সেই চৌদ্দ শ’ বছর আগেকার সময়। চারপাশে বংশ, গোষ্ঠী আর ক্ষমতার দ্বন্ধ। যার বংশ যতো সমৃদ্ধ, যতো মর্যাদাসম্পন্ন, নের্তৃত্ব আর অহংকারের বড়াই তার ততো বেশি। বংশ মর্যাদার প্রতাপ আর ক্ষমতার জোর সেখানে এতো বেশি প্রগাঢ় ছিলো যে— নিঁচু বংশের কিংবা অপ্রসিদ্ধ বংশের কারো সাথে সেই সময়ে সম্পর্ক পাতানোটাই ছিলো রীতিমতো মানহানিকর ব্যাপার।

এমন একটা সময়ে, এমন একটা সমাজে যদি কারো বংশের নাম-নিশানাও না পাওয়া যায়? যদি না-ই জানা যায় যে, সে কোন বংশের, কিংবা অজ্ঞাত থেকে যায় তার বংশ পরম্পরা— তার ব্যাপারে সমাজের চাহনি আর আচরণ কেমন হবে, তা কি অনুমেয় নয়?

হ্যাঁ, এমন একজন সাহাবি হলেন জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। অন্য অনেক সাহাবির মতোন তিনি খুব বেশি আলোচিত নন। জুলাইবিব শব্দের অর্থ হলো— যে অনেক বেশি খাঁটো। তার শারীরিক গড়ন স্বাভাবিকের তুলনায় খাঁটো হওয়াতে তার নামই হয়ে যায় জুলাইবিব। কেবল খাঁটোই নন, তার গায়ের রঙ ছিলো কুচকুচে কালো। একে তো বংশ পরম্পরা অজানা, তার উপর আবার খাঁটো আর কালচে গাত্র বর্ণ— সব মিলিয়ে ওই সমাজের কাছে তিনি যে ব্রাত্য আর অবাঞ্চিত থাকবেন— তা তো বলাই বাহুল্য।

জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কেউই পছন্দ করতো না। বংশ মর্যাদা নেই, কালচে গায়ের রঙ, কৃশকায় শরীর, এমন একজন লোকের সাথে ওই সমাজে কেউ মেয়ে বিয়ে দেবে— তা কি কল্পনাতেও ভাবা যায়?

কিন্তু, জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর যে বড্ড সংসার পাতানোর শখ। একটা ছোট্ট কুড়েঘর, একটা ছোট্ট সংসার, তাতে আলো করে আসবে একঝাঁক তারা, সেই তারাদের ঝিকিমিকি আলোয়, সেই পাখিদের কিচিরমিচির কলরবে ভরে উঠবে উঠোন— এমন স্বপ্ন কে না দেখে? জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুও দেখেছিলেন। কিন্তু সমাজ যে বড্ড নিষ্ঠুর! এখানে হৃদয়ের চেয়ে চেহারা, আর মনুষ্যত্বের চেয়ে বড় হলো বংশ মর্যাদা।

একদিন, এক প্রশস্ত বিকেলে, খুব মন খারাপ করে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। এই একটা মানুষের কাছে এসেই তিনি শান্তি পান। দু’দন্ড সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারেন। নবিজী ব্যতীত, এই তল্লাটে জুলাইবিবের আর কোন বন্ধু নেই। নবিজীর পাশে বসে, ওই আদিগন্ত নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘আচ্ছা ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি জান্নাতে যেতে পারি, তাহলে কি আমি জান্নাতের হুর বিয়ে করতে পারবো?’

নবিজী আঁচ করতে পারলেন জুলাইবিবের মর্মযাতনা। অন্তরের গহীনে সংসার পাতানোর যে অদম্য শখ জুলাইবিবের, সেই শখ থেকেই যে এমন হাহাকার করা প্রশ্নের আবির্ভাব— তা নবিজী ধরে ফেললেন। তিনি বললেন, ‘জুলাইবিব, আমি কি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো?’

নবিজী বিয়ের ব্যবস্থা করবেন জুলাইবিবের! যার ধূলো লেগে ধন্য হয়েছে গোটা ধরণী, যাকে রাব্বুল আ’লামীন বাছাই করেছেন জগতের রহমত হিশেবে, যার অঙ্গুলি হেলনে দু টুকরো হয়ে যায় দূর আকাশের চাঁদ, সেই মানুষটা জুলাইবিবের বিয়ের বন্দোবস্ত করবে— এটা কি স্বপ্নেরও অতীত নয়? জুলাইবিব, যাকে সমাজের কোন মানুষ পছন্দ করেনা, যার নেই কোন বংশীয় মর্যাদা কিংবা ক্ষমতার উৎস, ঠিক তার জন্যে নিজেকে অন্যের দুয়ারে নিয়ে যাবেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ— তা কি ঘোর লাগা মধুর কোন স্বপ্নের চাইতেও বেশিকিছু নয়?

কিন্তু, ইনি যে মুহাম্মাদুর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হয়ে এসেও যিনি মিশে যান মাটির সাথে। সবচাইতে সম্ভ্রান্ত বংশের হয়েও যার কাছে বংশ মর্যাদার নেই কানাকড়ি পরিমাণ মূল্য।

নবিজীর কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠলো জুলাইবিবের মন। এরচেয়ে স্বস্তিদায়ক কোন কথা জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু কি এর আগে কখনো শুনেছেন? এরচেয়ে তৃপ্তিদায়ক কোন আশার আলো কখনো কি তার সামনে প্রতিভাত হয়েছিলো? নবিজীর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। তার চোখেমুখে মুগ্ধতার অপার বিস্ময়!

ঠিক ঠিক নবিজী জুলাইবিবের বিয়ের বন্দোবস্তের তোড়জোড় আরম্ভ করলেন। এক আনসারী সাহাবিকে ডেকে বললেন, ‘তোমার কন্যাকে কি বিয়ে দেবে?’

জগতের সবচাইতে সেরা মানুষটা জানতে চাইছেন তার মেয়ের বিয়ের কথা, আনসারি সাহাবি তো আনন্দে আত্মহারা! তিনি ভাবলেন, নবিজীই সম্ভবত তার নিজের জন্য প্রস্তাব রেখেছেন। আর, এমন একটা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবে— সে আবার কোন দূর্ভাগা? 

আনন্দের আতিশয্যে উৎফুল্ল হয়ে আনসারী সাহাবি বললেন, ‘সুবহানআল্লাহ! ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার কাছে কন্যা বিয়ে দিতে পারবো, এরচাইতে মহা সৌভাগ্যের ব্যাপার আমার জন্য আর কি হতে পারে?’

নবিজী বললেন, ‘না, আমি আমার জন্যে বলিনি’।

একটু থতমত খেলেন যেন আনসারী সাহাবি। বললেন, ‘তাহলে, ইয়া রাসূলাল্লাহ?’

নবিজী বললেন, ‘জুলাইবিবের জন্য’।

জুলাইবিব! তাকে কে না চেনে? দেখতে অসুন্দর, কৃশকায় শরীর, বংশ-মর্যাদাহীন এই মানুষটাকে চেনে না, এমন মানুষ এই তল্লাটে দেখা মেলা ভার! তার কিছুই নেই। এই কিছু না থাকাটাই যেন সবার কাছে তাকে অধিক পরিচিত করে তুলেছে। সেই জুলাইবিবের জন্য নবিজী তার মেয়ের প্রস্তাব রাখলেন? কিন্তু, ইনি যে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল। তার মুখের ওপর ‘না’ বলে প্রত্যাখ্যান করবে, এমনটা তো চিন্তাও করা যায়না। আনসারী সাহাবি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার স্ত্রীর সাথে একটু পরামর্শ করতে চাই এই ব্যাপারে। আপনি আমাকে একটু সময় দিন’।

স্ত্রীর কাছে এসে আনসারী সাহাবি বললেন, ‘শুনছো, নবিজী আমাদের কন্যাকে বিয়ের জন্য চাইছেন’।

এই কথা শুনে আনসারী সাহাবির স্ত্রীর চেহারা ঝলমল করে উঠলো। এ যেন মেঘ না চাইতেই অবিরাম ধারার বর্ষণ। খুশিতে যেন তার চোখ দিয়ে পানি এসে যায়। বললেন, ‘সুবহানআল্লাহ! এটা তো ভারি আনন্দের সংবাদ। নবিজী আমাদের কন্যাকে বিয়ে করবেন, এ তো মহাখুশির ব্যাপার’।

আনসারী সাহাবি বললেন, ‘না, নবিজী নিজের জন্য প্রস্তাব করেন নি’।

-‘তাহলে?’

-‘তিনি জুলাইবিবের জন্য চেয়েছেন আমাদের কন্যাকে’।

মুহূর্তে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে কন্যার মায়ের মাথায়! এটা কিভাবে সম্ভব? জুলাইবিব, যার কোন বংশ-মর্যাদা নেই, যে দেখতে অসুন্দর, কৃশকায়— এমন লোকের কাছে কিভাবে কন্যা বিয়ে দেওয়া যায়? মহিলা তার অভিমত ব্যক্ত করলেন। বললেন, ‘নবিজীকে বলুন, জুলাইবিবের কাছে আমরা আমাদের কন্যাকে বিয়ে দিতে পারবো না’।

স্ত্রীর অভিমত শুনে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্যে গৃহের বাইরে পা বাড়ালেন আনসারী সাহাবি। হঠাৎ, গৃহের অভ্যন্তর থেকে একটি কোমল, অথচ দৃঢ় কন্ঠস্বর ভেসে এলো বাতাসে।

-‘আব্বা’।

থমকে দাঁড়ালেন আনসারী সাহাবি। এই ডাক তার চেনা, এই কন্ঠ তার অতি পরিচিত। তার কন্যা, যার জন্যে বিবাহের পয়গাম পাঠিয়েছেন নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এ যে তারই গলা। তিনি জবাবে বললেন, ‘বলো, আমার কন্যা’।

মেয়েটি বিনীত গলায় বললো, ‘আমার বিয়ের ব্যাপারেই কি কথা হচ্ছিলো?’

-‘হ্যাঁ’।

-‘কোথাকার প্রস্তাব?’

-‘নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠিয়েছেন। তিনি তোমাকে জুলাইবিবের জন্য প্রস্তাব করেছেন’।

বিস্ময়ের সাথে মেয়েটি বলে উঠলো, ‘সুবহানআল্লাহ। আপনাদের কি মত এতে?’

-‘তোমার আম্মা রাজি নেই। জুলাইবিবের সাথে তোমার আম্মা তোমাকে বিয়ে দিতে কিছুতেই ইচ্ছুক নয়। এই সংবাদ নবিজীকে দেওয়ার জন্যই আমি তার কাছে যাচ্ছি’।

মেয়েটি বললো, ‘আব্বা, কার প্রস্তাব আপনারা ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে আপনাদের কোন ধারণা আছে? আল্লাহর রাসূলের পাঠানো প্রস্তাবকে আপনারা অপছন্দ করছেন কিভাবে? আপনারা কি কুরআনের এই আয়াত শোনেন নি, যেখানে বলা হচ্ছে, ‘আল্লাহ ও তার রাসূল কোন ব্যাপারে নির্দেশ দিলে, কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর উচিত নয় তা ব্যতীত নিজেদের জন্য অন্য কোনোকিছু চিন্তা করা। আর, যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করলো, সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে’। [১]

আব্বা, নবিজীর পাঠানো প্রস্তাবের ব্যাপারে আমার কোনোই দ্বিমত নেই। তিনি নিশ্চয় আমার জন্য অকল্যাণকর কোনোকিছু চাইবেন না। আমি সন্তুষ্টচিত্তে এই প্রস্তাবে রাজি আছি। আপনি দয়া করে আমাকে নবিজীর কাছে নিয়ে চলুন এবং তাকে বলুন তিনি যেন আমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন’।

এই মহীয়সী নারী, যার সাহস, সততা আর সত্যিকার আল্লাহ ভীতির কাছে সেদিন পরাজিত হয়েছিলো বংশ মর্যাদার গৌরব। যার দৃঢ়তার কাছে ভেঙে পড়েছিলো বাহ্যিক সৌন্দর্যের দেয়াল। দুরন্ত সাহসের এই রমণীর সাথেই নবিজী জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিয়ে দেন।

একটা সংসার পাতানোর যে অদম্য অথচ অসম্ভব স্বপ্ন বুকে লালন করেছিলেন জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু, সেই স্বপ্নটাকে পূর্ণমাত্রা দিতে সর্বাগ্রে এগিয়ে এসেছিলেন নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জাত-পাত নেই বলে যাকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে পুরো সমাজে, তার সাথে আল্লাহর রাসূলের কী অটুট দোস্তি! দেখতে অসুন্দর আর কৃশকায় বলে সকলের কাছে যে লোকটা অস্পৃশ্য, তার সাথে নবিজীর কী সুন্দর মাখামাখি! এই নাহলে তিনি রহমাতুল্লিল আলা’মীন? মাটি আর মানুষের সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার এই যে অনন্য ক্ষমতা—  এটাই কি মক্কার অন্য সবার চেয়ে তাকে আলাদা করে মেলে ধরেনি?

বিয়ে হলো। সংসার হলো। এরপর একদিন ডাক এলো জিহাদের। শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মুখ লড়াই। যুদ্ধের জন্য রণ সাজে সজ্জিত মুসলিম বাহিনী। প্রস্তুত জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুও। ময়দানে, নির্ধারিত সময়েই শুরু হলো শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ। মরছে শত্রু, শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা বরণ করে নিচ্ছে মুসলিম যোদ্ধারাও। একপর্যায়ে, অবসান হলো সবকিছুর। স্থবিরতার ছায়া নেমে এলো রণাঙ্গনে।

এখানে-ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত্রুপক্ষ আর মুসলিম বাহিনীর অনেকের লাশ। নিজ নিজ আপনজন, আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজে নিচ্ছে অনেকেই। নবিজী সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা কাকে কাকে হারিয়েছো?’

তারা বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লল্লাহ! আমরা অমুক অমুককে হারিয়েছি’।

তিনি আরেকদল সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা কাকে কাকে হারিয়েছো?’

তারা বললেন, ‘আমরা অমুক অমুককে হারিয়েছি, ইয়া রাসুলাল্লাহ’।

তখন, বিষণ্ণ চেহারায় নবিজী বললেন, ‘আমি হারিয়েছি আমার জুলাইবিবকে’।

চারদিকে খোঁজা শুরু হলো। কোথায় আছে জুলাইবিব? খুঁজতে খুঁজতে, একটা কূপের কাছে পাওয়া গেলো জুলাইবিবের লাশ। শাহাদাতের পেয়ালা পান করে, অনন্ত জীবনের পানে উড়াল দিয়েছেন এই মহান সাহাবি। অশ্রু-ভরা নয়নে নবিজী জুলাইবিবের লাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নিশ্চয়, আমি জুলাইবিবের জন্য, আর জুলাইবিব আমার জন্য’।

দুনিয়ায় সংসার পাতানোর স্বপ্নকে অসম্ভব দেখে, একদিন খুব মন খারাপ করে জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজীকে বলেছিলেন, ‘আচ্ছা ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যদি জান্নাতে যেতে পারি, তাহলে কি আমি জান্নাতের হুর বিয়ে করতে পারবো?’
জুলাইবিবের লাশকে সামনে রেখে, সেদিন নবিজী বলেছিলেন, ‘জুলাইবিব, তুমি নিশ্চয় তোমার কাঙ্খিত সঙ্গিনীকে পেয়ে গেছো’।

বংশ-মর্যাদা নেই, কৃষ্ণকায় গাত্রবর্ণ আর কৃশকায় শরীরের জন্য যে জুলাইবিব সমাজের সর্বত্র অবাঞ্চিত আর ব্রাত্য হয়ে ছিলেন— নবিজীর কাছে তার কী অপার মর্যাদা! যার কথা শুনলে সকলে ভ্রুকুঞ্চিত করে ফেলতো, তার জন্যে মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুকের ভেতর থেকে উজাড় করেছেন কী অসামান্য ভালোবাসা! এই যে নিরেট বাস্তব আর স্বার্থহীন ভালোবাসা— এই ভালোবাসা তো এমন মহা মানবের হৃদয়ের গহীন থেকেই উৎসারিত হওয়া সম্ভব। জানি, এইসব ভালোবাসা মিছে নয়।

রেফারেন্সঃ
[১] সূরা আল আহযাব,  আয়াত-৩৬

[ 'নবিজীবনের গল্প' বই থেকে নেওয়া একটা গল্প। সেই চৌদ্দ শ’ বছর আগেকার সময়। চারপাশে বংশ, গোষ্ঠী আর ক্ষমতার দ্বন্ধ। যার বংশ যতো সমৃদ্ধ, যতো মর্যাদাসম্পন্ন, নের্তৃত্ব আর অহংকারের বড়াই তার ততো বেশি। বংশ মর্যাদার প্রতাপ আর ক্ষমতার জোর সেখানে এতো বেশি প্রগাঢ় ছিলো যে— নিঁচু বংশের কিংবা অপ্রসিদ্ধ বংশের কারো সাথে সেই সময়ে সম্পর্ক পাতানোটাই ছিলো রীতিমতো মানহানিকর ব্যাপার।

এমন একটা সময়ে, এমন একটা সমাজে যদি কারো বংশের নাম-নিশানাও না পাওয়া যায়? যদি না-ই জানা যায় যে, সে কোন বংশের, কিংবা অজ্ঞাত থেকে যায় তার বংশ পরম্পরা— তার ব্যাপারে সমাজের চাহনি আর আচরণ কেমন হবে, তা কি অনুমেয় নয়?

হ্যাঁ, এমন একজন সাহাবি হলেন জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। অন্য অনেক সাহাবির মতোন তিনি খুব বেশি আলোচিত নন। জুলাইবিব শব্দের অর্থ হলো— যে অনেক বেশি খাঁটো। তার শারীরিক গড়ন স্বাভাবিকের তুলনায় খাঁটো হওয়াতে তার নামই হয়ে যায় জুলাইবিব। কেবল খাঁটোই নন, তার গায়ের রঙ ছিলো কুচকুচে কালো। একে তো বংশ পরম্পরা অজানা, তার উপর আবার খাঁটো আর কালচে গাত্র বর্ণ— সব মিলিয়ে ওই সমাজের কাছে তিনি যে ব্রাত্য আর অবাঞ্চিত থাকবেন— তা তো বলাই বাহুল্য।

জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কেউই পছন্দ করতো না। বংশ মর্যাদা নেই, কালচে গায়ের রঙ, কৃশকায় শরীর, এমন একজন লোকের সাথে ওই সমাজে কেউ মেয়ে বিয়ে দেবে— তা কি কল্পনাতেও ভাবা যায়?

কিন্তু, জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর যে বড্ড সংসার পাতানোর শখ। একটা ছোট্ট কুড়েঘর, একটা ছোট্ট সংসার, তাতে আলো করে আসবে একঝাঁক তারা, সেই তারাদের ঝিকিমিকি আলোয়, সেই পাখিদের কিচিরমিচির কলরবে ভরে উঠবে উঠোন— এমন স্বপ্ন কে না দেখে? জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুও দেখেছিলেন। কিন্তু সমাজ যে বড্ড নিষ্ঠুর! এখানে হৃদয়ের চেয়ে চেহারা, আর মনুষ্যত্বের চেয়ে বড় হলো বংশ মর্যাদা।

একদিন, এক প্রশস্ত বিকেলে, খুব মন খারাপ করে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। এই একটা মানুষের কাছে এসেই তিনি শান্তি পান। দু’দন্ড সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারেন। নবিজী ব্যতীত, এই তল্লাটে জুলাইবিবের আর কোন বন্ধু নেই। নবিজীর পাশে বসে, ওই আদিগন্ত নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘আচ্ছা ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি জান্নাতে যেতে পারি, তাহলে কি আমি জান্নাতের হুর বিয়ে করতে পারবো?’

নবিজী আঁচ করতে পারলেন জুলাইবিবের মর্মযাতনা। অন্তরের গহীনে সংসার পাতানোর যে অদম্য শখ জুলাইবিবের, সেই শখ থেকেই যে এমন হাহাকার করা প্রশ্নের আবির্ভাব— তা নবিজী ধরে ফেললেন। তিনি বললেন, ‘জুলাইবিব, আমি কি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো?’

নবিজী বিয়ের ব্যবস্থা করবেন জুলাইবিবের! যার ধূলো লেগে ধন্য হয়েছে গোটা ধরণী, যাকে রাব্বুল আ’লামীন বাছাই করেছেন জগতের রহমত হিশেবে, যার অঙ্গুলি হেলনে দু টুকরো হয়ে যায় দূর আকাশের চাঁদ, সেই মানুষটা জুলাইবিবের বিয়ের বন্দোবস্ত করবে— এটা কি স্বপ্নেরও অতীত নয়? জুলাইবিব, যাকে সমাজের কোন মানুষ পছন্দ করেনা, যার নেই কোন বংশীয় মর্যাদা কিংবা ক্ষমতার উৎস, ঠিক তার জন্যে নিজেকে অন্যের দুয়ারে নিয়ে যাবেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ— তা কি ঘোর লাগা মধুর কোন স্বপ্নের চাইতেও বেশিকিছু নয়?

কিন্তু, ইনি যে মুহাম্মাদুর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হয়ে এসেও যিনি মিশে যান মাটির সাথে। সবচাইতে সম্ভ্রান্ত বংশের হয়েও যার কাছে বংশ মর্যাদার নেই কানাকড়ি পরিমাণ মূল্য।

নবিজীর কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠলো জুলাইবিবের মন। এরচেয়ে স্বস্তিদায়ক কোন কথা জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু কি এর আগে কখনো শুনেছেন? এরচেয়ে তৃপ্তিদায়ক কোন আশার আলো কখনো কি তার সামনে প্রতিভাত হয়েছিলো? নবিজীর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। তার চোখেমুখে মুগ্ধতার অপার বিস্ময়!

ঠিক ঠিক নবিজী জুলাইবিবের বিয়ের বন্দোবস্তের তোড়জোড় আরম্ভ করলেন। এক আনসারী সাহাবিকে ডেকে বললেন, ‘তোমার কন্যাকে কি বিয়ে দেবে?’

জগতের সবচাইতে সেরা মানুষটা জানতে চাইছেন তার মেয়ের বিয়ের কথা, আনসারি সাহাবি তো আনন্দে আত্মহারা! তিনি ভাবলেন, নবিজীই সম্ভবত তার নিজের জন্য প্রস্তাব রেখেছেন। আর, এমন একটা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবে— সে আবার কোন দূর্ভাগা? 

আনন্দের আতিশয্যে উৎফুল্ল হয়ে আনসারী সাহাবি বললেন, ‘সুবহানআল্লাহ! ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার কাছে কন্যা বিয়ে দিতে পারবো, এরচাইতে মহা সৌভাগ্যের ব্যাপার আমার জন্য আর কি হতে পারে?’

নবিজী বললেন, ‘না, আমি আমার জন্যে বলিনি’।

একটু থতমত খেলেন যেন আনসারী সাহাবি। বললেন, ‘তাহলে, ইয়া রাসূলাল্লাহ?’

নবিজী বললেন, ‘জুলাইবিবের জন্য’।

জুলাইবিব! তাকে কে না চেনে? দেখতে অসুন্দর, কৃশকায় শরীর, বংশ-মর্যাদাহীন এই মানুষটাকে চেনে না, এমন মানুষ এই তল্লাটে দেখা মেলা ভার! তার কিছুই নেই। এই কিছু না থাকাটাই যেন সবার কাছে তাকে অধিক পরিচিত করে তুলেছে। সেই জুলাইবিবের জন্য নবিজী তার মেয়ের প্রস্তাব রাখলেন? কিন্তু, ইনি যে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল। তার মুখের ওপর ‘না’ বলে প্রত্যাখ্যান করবে, এমনটা তো চিন্তাও করা যায়না। আনসারী সাহাবি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার স্ত্রীর সাথে একটু পরামর্শ করতে চাই এই ব্যাপারে। আপনি আমাকে একটু সময় দিন’।

স্ত্রীর কাছে এসে আনসারী সাহাবি বললেন, ‘শুনছো, নবিজী আমাদের কন্যাকে বিয়ের জন্য চাইছেন’।

এই কথা শুনে আনসারী সাহাবির স্ত্রীর চেহারা ঝলমল করে উঠলো। এ যেন মেঘ না চাইতেই অবিরাম ধারার বর্ষণ। খুশিতে যেন তার চোখ দিয়ে পানি এসে যায়। বললেন, ‘সুবহানআল্লাহ! এটা তো ভারি আনন্দের সংবাদ। নবিজী আমাদের কন্যাকে বিয়ে করবেন, এ তো মহাখুশির ব্যাপার’।

আনসারী সাহাবি বললেন, ‘না, নবিজী নিজের জন্য প্রস্তাব করেন নি’।

-‘তাহলে?’

-‘তিনি জুলাইবিবের জন্য চেয়েছেন আমাদের কন্যাকে’।

মুহূর্তে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে কন্যার মায়ের মাথায়! এটা কিভাবে সম্ভব? জুলাইবিব, যার কোন বংশ-মর্যাদা নেই, যে দেখতে অসুন্দর, কৃশকায়— এমন লোকের কাছে কিভাবে কন্যা বিয়ে দেওয়া যায়? মহিলা তার অভিমত ব্যক্ত করলেন। বললেন, ‘নবিজীকে বলুন, জুলাইবিবের কাছে আমরা আমাদের কন্যাকে বিয়ে দিতে পারবো না’।

স্ত্রীর অভিমত শুনে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্যে গৃহের বাইরে পা বাড়ালেন আনসারী সাহাবি। হঠাৎ, গৃহের অভ্যন্তর থেকে একটি কোমল, অথচ দৃঢ় কন্ঠস্বর ভেসে এলো বাতাসে।

-‘আব্বা’।

থমকে দাঁড়ালেন আনসারী সাহাবি। এই ডাক তার চেনা, এই কন্ঠ তার অতি পরিচিত। তার কন্যা, যার জন্যে বিবাহের পয়গাম পাঠিয়েছেন নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এ যে তারই গলা। তিনি জবাবে বললেন, ‘বলো, আমার কন্যা’।

মেয়েটি বিনীত গলায় বললো, ‘আমার বিয়ের ব্যাপারেই কি কথা হচ্ছিলো?’

-‘হ্যাঁ’।

-‘কোথাকার প্রস্তাব?’

-‘নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠিয়েছেন। তিনি তোমাকে জুলাইবিবের জন্য প্রস্তাব করেছেন’।

বিস্ময়ের সাথে মেয়েটি বলে উঠলো, ‘সুবহানআল্লাহ। আপনাদের কি মত এতে?’

-‘তোমার আম্মা রাজি নেই। জুলাইবিবের সাথে তোমার আম্মা তোমাকে বিয়ে দিতে কিছুতেই ইচ্ছুক নয়। এই সংবাদ নবিজীকে দেওয়ার জন্যই আমি তার কাছে যাচ্ছি’।

মেয়েটি বললো, ‘আব্বা, কার প্রস্তাব আপনারা ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে আপনাদের কোন ধারণা আছে? আল্লাহর রাসূলের পাঠানো প্রস্তাবকে আপনারা অপছন্দ করছেন কিভাবে? আপনারা কি কুরআনের এই আয়াত শোনেন নি, যেখানে বলা হচ্ছে, ‘আল্লাহ ও তার রাসূল কোন ব্যাপারে নির্দেশ দিলে, কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর উচিত নয় তা ব্যতীত নিজেদের জন্য অন্য কোনোকিছু চিন্তা করা। আর, যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করলো, সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে’। [১]

আব্বা, নবিজীর পাঠানো প্রস্তাবের ব্যাপারে আমার কোনোই দ্বিমত নেই। তিনি নিশ্চয় আমার জন্য অকল্যাণকর কোনোকিছু চাইবেন না। আমি সন্তুষ্টচিত্তে এই প্রস্তাবে রাজি আছি। আপনি দয়া করে আমাকে নবিজীর কাছে নিয়ে চলুন এবং তাকে বলুন তিনি যেন আমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন’।

এই মহীয়সী নারী, যার সাহস, সততা আর সত্যিকার আল্লাহ ভীতির কাছে সেদিন পরাজিত হয়েছিলো বংশ মর্যাদার গৌরব। যার দৃঢ়তার কাছে ভেঙে পড়েছিলো বাহ্যিক সৌন্দর্যের দেয়াল। দুরন্ত সাহসের এই রমণীর সাথেই নবিজী জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিয়ে দেন।

একটা সংসার পাতানোর যে অদম্য অথচ অসম্ভব স্বপ্ন বুকে লালন করেছিলেন জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু, সেই স্বপ্নটাকে পূর্ণমাত্রা দিতে সর্বাগ্রে এগিয়ে এসেছিলেন নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জাত-পাত নেই বলে যাকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে পুরো সমাজে, তার সাথে আল্লাহর রাসূলের কী অটুট দোস্তি! দেখতে অসুন্দর আর কৃশকায় বলে সকলের কাছে যে লোকটা অস্পৃশ্য, তার সাথে নবিজীর কী সুন্দর মাখামাখি! এই নাহলে তিনি রহমাতুল্লিল আলা’মীন? মাটি আর মানুষের সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার এই যে অনন্য ক্ষমতা—  এটাই কি মক্কার অন্য সবার চেয়ে তাকে আলাদা করে মেলে ধরেনি?

বিয়ে হলো। সংসার হলো। এরপর একদিন ডাক এলো জিহাদের। শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মুখ লড়াই। যুদ্ধের জন্য রণ সাজে সজ্জিত মুসলিম বাহিনী। প্রস্তুত জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহুও। ময়দানে, নির্ধারিত সময়েই শুরু হলো শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ। মরছে শত্রু, শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা বরণ করে নিচ্ছে মুসলিম যোদ্ধারাও। একপর্যায়ে, অবসান হলো সবকিছুর। স্থবিরতার ছায়া নেমে এলো রণাঙ্গনে।

এখানে-ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত্রুপক্ষ আর মুসলিম বাহিনীর অনেকের লাশ। নিজ নিজ আপনজন, আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজে নিচ্ছে অনেকেই। নবিজী সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা কাকে কাকে হারিয়েছো?’

তারা বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লল্লাহ! আমরা অমুক অমুককে হারিয়েছি’।

তিনি আরেকদল সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা কাকে কাকে হারিয়েছো?’

তারা বললেন, ‘আমরা অমুক অমুককে হারিয়েছি, ইয়া রাসুলাল্লাহ’।

তখন, বিষণ্ণ চেহারায় নবিজী বললেন, ‘আমি হারিয়েছি আমার জুলাইবিবকে’।

চারদিকে খোঁজা শুরু হলো। কোথায় আছে জুলাইবিব? খুঁজতে খুঁজতে, একটা কূপের কাছে পাওয়া গেলো জুলাইবিবের লাশ। শাহাদাতের পেয়ালা পান করে, অনন্ত জীবনের পানে উড়াল দিয়েছেন এই মহান সাহাবি। অশ্রু-ভরা নয়নে নবিজী জুলাইবিবের লাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নিশ্চয়, আমি জুলাইবিবের জন্য, আর জুলাইবিব আমার জন্য’।

দুনিয়ায় সংসার পাতানোর স্বপ্নকে অসম্ভব দেখে, একদিন খুব মন খারাপ করে জুলাইবিব রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজীকে বলেছিলেন, ‘আচ্ছা ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যদি জান্নাতে যেতে পারি, তাহলে কি আমি জান্নাতের হুর বিয়ে করতে পারবো?’
জুলাইবিবের লাশকে সামনে রেখে, সেদিন নবিজী বলেছিলেন, ‘জুলাইবিব, তুমি নিশ্চয় তোমার কাঙ্খিত সঙ্গিনীকে পেয়ে গেছো’।

বংশ-মর্যাদা নেই, কৃষ্ণকায় গাত্রবর্ণ আর কৃশকায় শরীরের জন্য যে জুলাইবিব সমাজের সর্বত্র অবাঞ্চিত আর ব্রাত্য হয়ে ছিলেন— নবিজীর কাছে তার কী অপার মর্যাদা! যার কথা শুনলে সকলে ভ্রুকুঞ্চিত করে ফেলতো, তার জন্যে মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুকের ভেতর থেকে উজাড় করেছেন কী অসামান্য ভালোবাসা! এই যে নিরেট বাস্তব আর স্বার্থহীন ভালোবাসা— এই ভালোবাসা তো এমন মহা মানবের হৃদয়ের গহীন থেকেই উৎসারিত হওয়া সম্ভব। জানি, এইসব ভালোবাসা মিছে নয়।

রেফারেন্সঃ

[১] সূরা আল আহযাব,  আয়াত-৩৬

Writer:- Arif Azad

নবিজীবনের গল্প' বই থেকে নেওয়া একটা গল্প।
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner