Comics |
ক্রাশের আগামী পরশু জন্মদিন। এই দিনটাকে যেভাবে হোক কাজে লাগাতেই হবে। অনেক অপেক্ষা করেছি এমন একটা দিনের জন্য৷ অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়েছি পরশু আমার সাথে দেখা করার জন্য। সে রাজি হয়েছে বলেছে তার বাসায় সন্ধ্যার বার্থডে পার্টিতে জয়েন করতে। তার ফ্যামিলি মেম্বার, বন্ধুরা সহ অনেকেই থাকবে। আমি এখন ভাবছি কিভাবে তাকেসহ তার ফ্যামিলিকে পটানো সম্ভব।
'উমমমম! তাকে একলা ছাদে ডেকে সামনে হাটু গেঁড়ে বসে গোলাপ দিয়ে বলব, আই লাভিউ নাকি রিং দিয়ে বলব উইল ইউ ম্যারি মি?'
-ধুর! এসবে কাজ হবে না। এগুলো করে তো ছেলেরা। আর কেউ যদি দেখে ফেলে তবে সর্বনাশ।
তাহলে গিয়ে হাত চেপে ধরে বলবো 'ভাই প্লিজ ফিরিয়ে দিয়েন না আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি আর অনেক ভালোবাসি'
-মাথা পুরাই গেছে। ভাই বললে সে তো বলবে আচ্ছা বোন আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
নাহ্! এভাবে হবে না। আর এতে তো ফ্যামিলির কেউ পটবে না উল্টো ছ্যাচড়া বলবে আমাকে।
কি করা যায়?
-গুগলে সার্চ করা যায়!
কিভাবে বাঙালি মেয়েরা তার পছন্দের মানুষের সাথে প্রথম দেখা করতে যায়, কিভাবে ইম্প্রেস করে তাদেরকে।
সার্চ করার রেজাল্ট তো দেখছি বাঙালি মেয়ে মানেই শাড়ি আরকি শাড়ি'তেই নারী। কিন্তু আমার তো শাড়ি নাই। তাছাড়া আমি শাড়ি পড়তেও পারিনা। আর হাতে একটা টাকাও নাই যে পার্লারে গিয়ে সেজেগুজে আসবো। তাছাড়া গিফ্ট কিনতেও তো কম হলে পাঁচ হাজার টাকা লাগবেই। কি করা যায়!
মা'কে শাড়ির কথা বললে দিবে ঝাটার বারি। একবার মায়ের শাড়ি পড়ে পিকনিকে গিয়েছিলাম বাসায় আসার পর দেখি শাড়ির প্রিন্টের থেকে আমার লাগানো দাগের প্রিন্ট'ই বেশি। সেবার থেকে মা বলেছে শাড়ির নাম বললেই খাবো ঝাটার বারি।
এখন কি করা যায় ভাবছি!
অতঃপর মাথায় দারুন একটা আইডিয়া এসেছে।
মা?
-কি বল?
''তুমি না বলেছিলে সেদিন, ভালো একটা পাত্র আছে। ছেলের বাবা-মা সহ কয়েকজন আসতে চায় আমাকে দেখতে''
-হ্যাঁ বলেছিলাম তো। তুই তো সেটা শুনেই রাগারাগি করে ফ্রিজে, প্রত্যেকটা বাথরুমে, কিচেনসহ সব আলমারিগুলোতে তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে নিজের রুমটাও বন্ধ করে দিলি। বললি যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা তোকে কথা দিচ্ছি যে তোর বিয়ের কথা আমরা তোর পারমিশন ছাড়া ভাববো না ততক্ষণ তুই তোর রুমও খুলবি না আর চাবিও দিবিনা কোনো কিছুর। তারপর থেকে তো আমরা তোর বিয়ের কথা ছেড়েই দিয়েছি ভাবা।
"হ্যাঁ সেটা আমি বলেছিলাম। কিন্তু মা এখন আমি তোমাদেরকে পারমিশন দিচ্ছি যে ছেলেপক্ষকে আসার জন্য আমাকে দেখতে।"
-ওরে বাবা! হঠাৎ কি এমন হলো শুনি যে আপনি যেচে পড়ে এসে বিয়ের কথা বলছেন?
"মা! তুমি কি চাও আমি আজীবন তোমাদের বোঝা হয়ে থাকি? পাড়াপ্রতিবেশি তোমাদের কথা শুনাক?"
-অবশ্যই চাই না। আর তুই তো আমাদের কাছে বোঝা না। সন্তান কখনও বোঝা হয়।
"হ্যাঁ তা ঠিক। তবে তোমাদেরও তো বয়স হয়েছে জামাইয়ের মুখ দেখতে তো ইচ্ছে করে। তাই বলছিলাম যে তোমারা তাদেরকে পরশু সকালেই আসতে বলো।"
-পরশু? পরশু সকালেই কেন? তাদের সময়ের বিষয় আছে না!
"তাদেরকে তো পরশু বলবে না। তাদেরকে এখন কল করে বলবে যে পরশু বিকেলে আসতে। তাহলে তারা পরশু ফ্রী হয়ে থাকবে।"
-পরশুই কেন তাদের আসতে হবে। পরে আসলে সমস্যা কি?
"না মা পরশুই লাগবে৷ তারপর হলে কিন্তু আমি পারবো না।"
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখতেছি।
"আর একটা কথা!"
-বল?
"আমি কিন্তু ঐদিন তোমার একটা শাড়ি পড়বো আর পার্লারে গিয়ে সাজবো। টাকা কিন্তু তুমি দিবে।"
-আচ্ছা ঠিক আছে।
অবশেষে পার্লারে এলাম।
বিউটিশিয়ান আপু জিজ্ঞেস করলেন "আপু কিভাবে সাঁজতে চান?"
আমি বললাম 'সিম্পলের ভিতরে অল্প একটু গর্জিয়াস আরকি আপু যেভাবে সাঁজলে কেউ চোখ ফেরাতে পারবে না বাংলা নাটক-সিনেমার মত দেখলেই দু'চোখে তাক লেগে যাবে'
আপু আমার কথা শুনে হাহা করে হেসে উঠলেন।
সাঁজা শেষে আমি আয়নায় তাকাতেই আপুকে বললাম "আপু আপনি কি আমাকে সাঁজানোর বদলে প্লাসটিক সার্জারী করে দিয়েছেন নাকি?
আপু আবারও হাহা করে হেসে উঠলেন।
আমি বাসায় ফিরলাম। গিয়ে দেখি ছেলেপক্ষ অলরেডি আমার জন্য ওয়েট করছে৷ আমি যেতেই মা বললো আয় মা বসতো এখানে।
আমি মাথায় কাপড় দিয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে বসলাম। আমি বসতেই পাশের বাসার আন্টি আমার প্রশংসা জুড়ে দিলেন তাদের কাছে। আমি নাকি সকাল থেকে এসব নাস্তা বানিয়েছি, পিঠা বানিয়েছি, পায়েস রেঁধেছি। তারপর নাকি পাশেই একটা বান্ধবীর বাসায় গিয়েছি শাড়ি পড়তে।
অথচ আমি এখনও লবন আর চিনির পার্থক্য মুখে না দিয়ে বুঝতেই পারিনা। রান্না তো দূরের।
যাই হোক ছেলেপক্ষ এবার আমাকে প্রশ্ন করা শুরু-
"কি নাম তোমার মা?"
-তৃষ্ণা।
"কিসে পড় তুমি?"
-অনার্স তৃতীয় বর্ষ।
"কোন সাবজেক্ট?"
-ইংরেজি।
"বাহ্ ভালো সাবজেক্ট তো। তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
-আপাতত ইম্প্রেস করা।
" মানে?"
-ওহ্ স্যরি আরকি ইস্টাব্লিশ্ড হওয়া।
"ওহ্ আচ্ছা। কি কি রান্না জানো তুমি?"
-অনেক কিছুই।
ছেলের ছোট ভাই বললো "আপু আপনার প্রিয় একটা রান্নার রেসিপি বলেন তো?"
-পরিমান মত চাল ভালো ভাবে ধুয়ে তাতে পরিমাণ মত পানি দিয়ে রাইচ কুকারে বসিয়ে দিলেই কিছুক্ষণ পরে ভাত রান্না হয়ে যাবে।
আমার এমন কথায় আমার বাবা-মা আত্মীয় স্বজনসহ ছেলেপক্ষ সবাই হতভম্ব হয়ে গেলেন।
হতভম্ব কাটিয়ে ওঠার জন্য একজন বললো 'মা একটু হেটে দেখাও তো!"
-আন্টি দরজা দিয়ে আমি হুইল চেয়ারে এখানে আসিনি যদিও। তারপরেও যখন বলছেন দেখাচ্ছি।
আমার এমন কথার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। ছেলের খালা উঠে বললেন আচ্ছা মা তোমার চুলগুলো দেখি তো একটু মাথার কাপড়টা সরাও।
আমি চুল দেখাতেই তিনি বললেন "বাহ্ মাশাল্লাহ! আচ্ছা মা শাড়ি পড়তে পারো না তাইনা?"
-পারলে কি আর পার্লারে যাই বলেন। কতগুলো টাকা দিয়ে আসলাম এই সাজগোছের জন্যে।
তার হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো আমার এমন উত্তরে।
সবাই চুপচাপ। আমি বললাম "আচ্ছা আপনাদের ছেলে আসে নি কেন?"
ছেলের মা বললো "আসলে আজ ওর একটা বিশেষ দিন তো তাই একটু বিজি আছে৷ আমরা এখান থেকে গেলেই ও............"
কথা শেষ করার আগেই বললাম "ওহ্ আচ্ছা। সমস্যা নেই। ছেলে আসেনি তো কি হয়েছে আপনারা তো এসেছেন। আমরাও একদিন বিশেষহীন দিনে গিয়ে আপনার ছেলেকে দেখে আসবো। তাকে সাঁজিয়ে গুজিয়ে রাখবেন।"
আমি কিছু বললেই পরিবেশটা একদম শান্ত হয়ে যায় দেখছি! পরিবেশে একটু হৈ চৈ আনার জন্য বললাম "আচ্ছা চুল দেখালাম, হেটে দেখালাম এবার খেয়ে দেখাই?"
বলেই সামনে সাজানো খাবারগুলো খাওয়া শুরু করলাম। পেটে খুব ক্ষুধা। সকালে উঠেই পার্লারে গিয়ে বসে আছি। খিদা তো লাগারই কথা। অবশ্য আমার সকাল মানে ১২ টা।
খেতে খেতে পাশের বাসার আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম "খুব ভালো হয়েছে আন্টি। এগুলো নিশ্চয়ই আপনি বানিয়েছেন!"
ছেলেপক্ষকে বললাম "নিন! লজ্জা করছেন কেন? খুব মজা হয়েছে। তাছাড়া আপনাদের জন্যই এগুলো করা হয়েছে।"
পরিবেশটাতে এবার সত্যিই হৈচৈ লেগে গেছে। ছেলেপক্ষ উঠে চলে যাবার উপক্রম।
আমি তখন বললাম "কি ব্যাপার আপনারা মেয়ে দেখে কোনো টাকা-পয়সা না দিয়ে চলে যাচ্ছেন কেন? আমি বিভিন্ন মেয়েদের গ্রুপে দেখেছি মেয়ে দেখে ছেলেপক্ষরা দশ হাজার, পনের হাজার করে টাকা দেয়। আপনাদের যেহেতু মেয়ে পছন্দ হয়নি সেহেতু পাঁচ হাজার টাকা তো দিবেন"
আমার কথা শেষ করে আমার পক্ষের দিকে তাকাতেই দেখি সবার চোখ কপালে উঠে ডিম হয়ে রয়েছে। একটুপরেই অমলেট হয়ে যাবে তাপে।
ছেলেপক্ষ থেকে ছেলের বাবা এসে হাতে পাঁচ টা কচকচে এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বললেন দুঃখিত আমাদের মনে ছিলো না।
আমি হাসি দিয়ে বললাম "নাহ্ ঠিক আছে আমি এখন আর কিছু মনে করবো না। ধন্যবাদ আবার আসবেন।"
তারা বের হওয়ার পরই আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। মা'কে দেখেছি ঝাটা খুঁজতে গেছেন। বাবা মা'কে হেল্প করার জন্য সাথেই গিয়েছে। ছোট বোনটাকে দায়িত্ব দিয়েছে দরজা বন্ধ করার। আমি ওকে বললাম "যেতে দে বইন। আসার সময় এক বক্স চকোলেট আর সাথে করে তোর দুলাভাই নিয়ে আসবো চিন্তা করিস না।"
বের হয়ে সোজা ক্রাশের জন্য গিফ্ট কিনে তার সঙ্গে দেখা করতে চলে গেলাম তার বাসায়।
নায়িকাদের মত স্লো মোশনে হেঁটে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে কলিংবেল বাজাতেই দেখি ক্রাশ দরজা খুলে দিলো।
আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে হ্যাপি বার্থ ডে বলে গিফ্ট টা আগাতেই এক মহিলা "কে এসেছে রে?" বলতে বলতে দরজার কাছেই চলে এলেন।
আমি তার দিকে তাকাতেই ক্রাশ পরিচায় করিয়ে দিলেন "ইনি তার মা"
আমি তাড়াহুড়ো করে গিফ্ট টা ক্রাশের মায়ের হাতে দিয়ে বললাম এটার দাম পাঁচ হাজার টাকা আন্টি। রেখে দিন।
-বলেই দিলাম দৌড়।
এক দৌড়ে নিচে নেমে এসে দম নিচ্ছিলাম আর ভাবলাম যাক বেঁচে গেছি ভাগ্যিস ক্রাশ খবরটা আমি যাওয়ার আগে জানেনি। তাহলে আমার খবর ছিলো। কিন্তু এখন তো সে জেনে গেছে যে তার জন্যই আজ আমাকে তার বাবা মা দেখতে গিয়েছিলেন। ভাবতেই হঠাৎ দেখি পিছনে ক্রাশ চিৎকার করে বলছে "ঐ মেয়ে দাড়া। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।"
আমি তাড়াতাড়ি একটা রিক্সায় উঠে পড়লাম আর চিৎকার করে বললাম "ভাই আমি কি কাউরে গালি দিছি? আমি তো ইম্প্রেস করার জন্য পাঁচ হাজার টাকাই দিয়া গেলাম। একটাও টাকা রাখিনি"
( সমাপ্ত )
লেখাঃ তৃষ্ণা জান্নাত।