> একটি পারিবারিক গল্প - Bangla Short Story - Boipoka365
-->

একটি পারিবারিক গল্প - Bangla Short Story - Boipoka365


Bangla Short Story

বোনের বিয়ের পর এই প্রথম তার শ্বশুরবাড়িতে এলাম। আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে সে কী কান্না! কাঁদতে কাঁদতে তার অভিযোগ, আমরা তাকে বিয়ে দিয়ে পর করে দিছি, ভুলে গেছি, আরও কত কী। অথচ বিয়ে হয়ছে এখনও দু'মাস নয়দিন। পরবর্তীতে নিজেকে সামলাতে বোনের অনেকক্ষণ লাগলো। তাও তার শাশুড়ির কথায় শান্ত হয়েছে। নাস্তা/ফলফ্রুটসের প্যাকেটগুলো ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে শাশুড়ি তার উদ্দেশ্য বললেন, 'হয়ছে, ছেলেটা এতদূর থেকে এসেছে, একটু বসতে দাও। একটু ঠান্ডা শরবত দাও। এভাবেই কি কান্না করবা?'

বোন চোখ মুছে আমাকে বসতে দিয়ে ভেতরে চলে গেল। ওর শ্বশুরবাড়িটা কেমন যেন ফাঁকা। মানুষজন নেই। হয়তো সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। ভেতর থেকে ওর শাশুড়ি এসে আমার সাথে গল্প করতে লাগলেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন, বাড়ির খবর জানতে চাইলেন, কে কেমন আছে, এটা সেটা। কিছুক্ষণ পর বোন একটা ঠান্ডা শরবত আর কিছু বিস্কুট নিয়ে এসে সামনে রাখলো। আমি শরবতে চুমুক দিলাম। বোন তার শাশুড়িকে ভেতরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কী যেন আলাপ করতে লাগলো। আমি তার উদ্দেশ্যে বললাম, 'মণি, আমার জন্য কিছু করতে হবে না। তোকে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই আসলাম। একটু পর চলে যাবো।'

ভেতর থেকে মণির শাশুড়ি হাসতে হাসতে এসে বললো, 'কী বলো বাবাজি, বোনের শ্বশুরবাড়িতে এসেছো, এভাবে খালিমুখে কি যাওয়া যায়? আমাদের একটা সম্মান আছে না? ওর শ্বশুরকে ফোন করেছি। আসতেছে।'

ওর শ্বশুর এলেন। বেলা তখন প্রায় বারোটা। সাথে একগাদা বাজার নিয়ে এসেছেন। গরমে ঘেমে নেয়ে গেছেন তিনি। আমার উদ্দেশ্য হাসিমুখে বললেন, 'বাবাজি বসো, একটু গোসল করে আসি।' 

'ঠিক আছে আঙ্কেল।' প্রত্যুত্তরে আমিও হাসলাম। 

শ্বশুরবাড়িতে বোনকে দেখলাম, একেবারেই বদলে গেছে। যে মেয়েকে বাপের বাড়িতে ভাতসুদ্ধ বেড়ে দিতে হতো, সে হয়ে গেছে পুরোদস্তুর গৃহিণী। ভাই এসেছে, তার জন্য আয়োজন তো করতেই হবে। না হলে যে শ্বশুরবাড়ির বদনাম হবে। বিয়ের পর বোনটা কতকিছু বুঝতে শিখেছে। হয়তো পরিবেশ মানুষকে শেখাতে ভালোবাসে। 

দুপুরে খাওয়ার সময় মণির বরও চলে এলো অফিস থেকে। ফোন করে মণি বলে দিয়েছে আমি এসেছি। তাই ছুটি নিয়েই এসেছে তাড়াতাড়ি। তারপর সে তার ফর্মালিটি দেখালো। দুপুরে একসাথে খেতে বসলাম। একপাশে বসে মণি আমাদের খাওয়াদাওয়া দেখতে লাগলো। ওর চেহারায় একটা খুশির আমেজ ছড়িয়ে আছে। হয়তো আমি এসেছি বলে। ওকে আমাদের সাথে খেতে বললাম, কিন্তু ও খাবে না। ওভাবেই বসে থাকবে। আর আমাদের কী কী লাগবে সেটার খেয়াল রাখবে। ও আমাকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। আমি খেতে খেতে জবাব দিচ্ছিলাম। এতক্ষণ রান্নাবাড়ার কাজে হয়তো প্রশ্নগুলো করার সুযোগ পায়নি। প্রশ্নগুলোর উত্তর শুনে শুনে তার চেহারাটা পাল্টে যেতে থাকে। এতবছর যে পরিবেশে সে বড়ো হয়েছে, হয়তো এখনও তার মায়া কাটাতে পারেনি।

'ভাইয়া, বাবা-মা আমাকে নিয়ে গল্প করে? আমাকে দেখতে আসবে বলেছিল। এখনও আসেনি।

'আসবে। বাড়িতে একটু কাজ চলছে। ওটা শেষ হোক। তারপর আসবে।'

'বাড়ির ছাদটা এখনও দেয়া হয়নি?'

'ছাদ হয়ে গেছে। তৃতীয় তলার পিলার ওঠছে।'

'আমার রুমটাতে এখন কে থাকে? সজিব থাকবে বলেছিল। ও রুমটা পাওয়ার জন্য আমার সাথে কী ঝগড়াটাই না করেছিল। আমি দিইনি। ও থাকে এখন ওই রুমে?'

'না, ওকে থাকতে বলেছিল আম্মু। কিন্তু, ও থাকেনি। বলে, ও ওখানে থাকলে ওর আপুর ছোঁয়াটা আর থাকবে না।'

আমার কথাটা শেষ হতেই মণি শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে ওঠলো। আমি তার কান্না থামানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই থামে না। তার বরও খাওয়া থামিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো,

 'মণি, থামো। এভাবে কান্না করতে হয় না।'

মণি তবুও কান্না করতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে শাড়ির আচলে চোখ মুছতে লাগলো। তারপর বললো,

 'ও ওই রুমটা পাওয়ার জন্য আমার সাথে প্রতিদিন ঝগড়া করতো। এখন বোনের জন্য আদর বেড়ে গেছে তাই না? ও আসুক, ওকে আমি আগে পাই, তারপর কান মলে দেবো।'

'আচ্ছা, কান মলে দিস ভালো করে। এখন কান্না থামা তো।' বললাম আমি।

মণি চোখ মুছলো। শান্ত হলো। জোরে একটা নিশ্বাস নিলো। তারপর বাটি থেকে বড়ো একটা মাংসের টুকরো আমার প্লেটে দিয়ে বললো, 'এ কী ভাইয়া, তুমি দেখি কিছুই নিচ্ছো না?'

'আরে আরে, থাম। এত খাবার কি খাওয়া যায়।' বোনকে রুখার অব্যর্থ চেষ্টা করলাম। 

'বোনের বাসায় এসেছো, খেতে তো হবেই।' বলেই মণি তার বরকেও একটু শাসিয়ে দিলো, 'আমার ভাইটা এসেছে। একটু তো খাতিরদারি করো।'

'করছি তো।' বলেই হাসলো ওর বর। মণি আবারও আমাকে প্রশ্ন করতে লাগলো।

'বাড়ির সামনে বড়ো আমগাছটায় যে একটা দোলনা বেঁধেছিলাম, ওটা আছে?'

'থাকবে না? তোর দোলনা। যখনই তুই যাবি বাড়িতে, দোলবি।'

'ওখানে গাছটা কেটে খামার না কী যেন করবে বলছিল?'

'ওসব আর করবে না। বাড়ির একটা মাত্র মেয়ে তুই। তোর কোনোকিছুই নষ্ট হতে দিতে চায় না বাবা-মা।'

বোন আমার দিকে নির্বাক চেয়ে থাকে। তার মুখে কোনো কথা ফুটে না।

বিকেলের দিকে আমি বের হয় চলে যাওয়ার জন্য। মণি আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি তাকে শান্ত করলাম। সে চোখ মুছে বললো, 'মাঝেমাঝে এসো এই বোনকে দেখতে। বাবা মাকেও আসতে বলো। সজিবকেও আসতে বলবা, ওর সাথে আমার বোঝাপড়া আছে।'

আমি ওর সব কথায় সম্মত জানালাম। সজিবের সাথে যে ও কী বোঝাপড়া করবে সেটাও আমি খুব ভালো করে জানি। ওকে পেলেই হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা জড়িয়ে ধরে কাঁদবে। সজিবও নিজেকে রুখতে পারবে না। দুজনই ওরা পিঠাপিঠি ছিল। আর সারাক্ষণ এটা ওটা নিয়ে ঝগড়া করতো। তবুও ঝগড়ার আড়ালে ভাইবোনের ভালোবাসাটা সীমাহীন। 

আমি বাইক ছেড়ে দিলাম। মণি তখনও ভেজাচোখে মুখে আঁচল চেপে গেইট থেকে উঁকি দিচ্ছিল। হয়তো ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষণ আমার শেষবিন্দুটি মুছে না যাবে পথ থেকে।



( সমাপ্ত )




Writer: Shohel Rana.

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner