> কালার সমাচার - Bangla Funny Story - Boipoka365
-->

কালার সমাচার - Bangla Funny Story - Boipoka365


Comics

মার্কেটের কাপড়-পট্টিতে এদিকওদিক ঘুরাঘুরি করছি, পাঁচটা সেভেনআপের মিনি বোতল শপিং ব্যাগে নিয়ে। বারবার দোকানদারেরা আমাকে ডাকলেও লজ্জায় চাইতে পারছি না কিছু।

ঘুম ভাঙলো ঈশিতার কলে৷ ঈশিতা হচ্ছে আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড, কলিজার টুকরা। কল রিসিভ করে বললাম,  " এত সকালে কল কেন? তুমি তো বারোটার আগে ঘুম থেকে উঠোই না, আজ কী হলো! "

লক্ষ্য করলাম ঈশিতা কিছু না বলে শুধু ফুপিয়ে কান্না করছে। তাই আবারও প্রশ্ন করলাম,  " কান্না করছো কেন? কেউ কিছু বলেছে? "

ঈশিতা মুখ খুললো,  " এই ঈদে আমার করোনা থ্রি-পিস চাই৷ "

আমি হাসিমুখে বললাম,৷ " কী যে বলো না বাবু! তুমি চাইলে তোমাকে একটা না, দুইটা না, পাঁচটা থ্রিপিস কিনে দিবো আমি। "

প্রেমিকা আমার কথায় আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলল,  " সত্যি? তুমি আমাকে পাঁচটা থ্রিপিস কিনে দিবা? "

এইরে! বাশ খেয়ে ফেললাম বোধহয়। ঈদে প্রেমিকাকে পাঁচটা থ্রিপিস কিনে দিতে হবে এই ভেবে আবেগে দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসলো আমার। আমাকে চুপ থাকতে দেখে প্রেমিকা আবারও বলল,  " বাবু, আমি তো তোমার সাথে মার্কেটে যেতে পারবো না। আমি কালারগুলো বলে দিচ্ছি ওইগুলার মধ্যে নিয়ে আসবে কেমন? "

আমি বাপ্পারাজের ছ্যাঁকা খাওয়া ফিলিংস নিয়ে বললাম,  " হ্যাঁ, বলো বাবু। "

" এই ধরো, একটা আনবে হলুদের মধ্যে। জৈষ্ঠ্যমাসের কাঁঠাল পেঁকে একেবারে নরম হয়ে গেলে ওই কাঁঠালের কোষের  রংটা যেমন হয়, ওইটার সাথে পাঁকা জইয়া আমের রস মিশালে যেমনটা রং হবে ওইরকম আনবে কেমন? তবে থ্রিপিস কিন্তু করোনা ব্র‍্যান্ডের হতে হবে। "

গফের কথাগুলো আমার মাথায় ঢুকলো না কোনোভাবেই। মাথার উপর দিয়ে চুলগুলো একদম ঘেঁষে চলে গেল। বললাম,  " আচ্ছা ঠিক আছে। আমি নোট করতেছি, আবার বলো। "

সে অবাক হয়ে বলল,  " এই সাধারণ কথাগুলো মনে রাখতে পারছো না তুমি!"  তারপর প্রথম থ্রিপিসের বর্ণনা দিয়ে আবার বলতে লাগল,   " আরেকটা আনবে ছাঁই কালারের মধ্যে। দুইশত পঞ্চাশ গ্রাম ছাঁইয়ের সাথে এক মিনি ডিব্বা সাদা রং মিশিয়ে ওইটায় আধা কেজি পানি দিলে যেমন কালার হবে ওউ কালারের মধ্যে আনবে একটা থ্রিপিস। "

গার্লফ্রেন্ডের কথামতো খাতায় লিখছি, কিন্তু চোখের জলে খাতাটা ভেসে যাবে মনে হচ্ছে। প্রেমিকা আবার বলল,  " আরেকটা আনবে নীলের মধ্যে হাল্কা। এই ধরো, বিশটা থাঁনকুনি পাতার বেঁটে তারপর একগ্লাস পানিতে মিশিয়ে সেটার মাঝে আধা গ্লাস নীল রং ছেড়ে তারপর দশটা আইষ্ঠা পাতা মিশিয়ে আধঘন্টা রাখার পর যে রংটা হবে এইটার মতো আনবে একটা। 

আমি কিছু না বলে লিখতে থাকলাম৷ ওদিকে খাতা ভিজে মেঝেতে বন্যা বয়ে যাচ্ছে৷ ঈশিতাকে চুপ থাকতে দেখে বললাম,  " তারপর বলো। "

সে আবারও বলতে লাগল,  " একটা থ্রিপিস নিবে পিংক কালারের মধ্যে। একটা আস্ত ডালিমের সবগুলো রস একত্রিত করার পর একটা গ্লাসে নিয়ে ওইটায় লাল শাকের রস একশ গ্রাম মিশাবে তারপর রোদে শুকিয়ে একগ্লাসকে আধা গ্লাস করার পর যে রং হবে ওই কালারের একটা থ্রিপিস কিনবে হুম? "

প্রেমিকার এমন কথা শুনে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার। তবুও উত্তর দিলাম,  " আচ্ছা, আরেকটা বলো। "  ভাবলাম এটা বললেই আপাতত বাঁচি। 

ঈশিতা আবার বলতে লাগল,  " এটা নিবে সিম্পল কালারের মধ্যে গর্জিয়াস দেখে। যেমন ধরো, পঁচা কলার জুস বানিয়ে এটার সাথে কিছুটা ছাঁই মিশিয়ে তারপর কিছুটা বাঁটানো কালোজিরা দিয়ে যেমন হবে তেমনটা হলেই চলবে। "

আমি বললাম,  " আচ্ছা ঠিক আছে। এরকম দেখেই পাঁচটা থ্রিপিস আনবো। এখন রাখছি। "

বলেই কল কেটে দিলাম। আর একটু থাকলে মরে যেতাম নিশ্চিত।

ঈশিতা কল দিয়ে থ্রিপিসের কথা বলার পর আর আমার ঘুম হচ্ছে না। দোকানদারকে গিয়ে এরকম রঙের থ্রিপিস চাইলে গণপিটুনি পড়তেও পারে৷ তাই ভাবলাম বাসাতে এই রঙগুলো তৈরি করা যাক। যেই ভাবা, সেই কাজ। 

নিজেকে সায়েন্স পড়ুয়া ব্যাঙের পেট কাটা বিশেষজ্ঞ মনে হচ্ছে। 

ঘন্টাখানেক আমাকে পাগল থাকতে হয়েছিলো মাটির চুলা থেকে ছাঁই আনা, দাঁড়িপাল্লাও লাগল সঠিক মাপ করতে। দোকান থেকে রং আনা, পাঁকা কাঁঠালের কোষ, থানকুনি পাতা'সহ আরও অনেক কিছু জোগাড় করতে হচ্ছিলো।  

অবশেষে পাঁচটি মিনি বোতলে পাঁচটি থ্রিপিসের রং সংগ্রহ করতে সক্ষম হলাম। এতকিছু করতে পেরে নিজেকে বিজ্ঞানী মনে হচ্ছে এখন।

শপিংমলের এদিকওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি, দোকানদারের কাছে গিয়ে কিছু চাইতেও লজ্জা করছে। এমন সময় দেখলাম বন্ধু নাসির আসছে একটা জুসের বোতল হাতে নিয়ে। তার কাছে গিয়ে বললাম,  " বন্ধু গলাটা শুকিয়ে গেছে, জুসটা দে তো, একটু ভিজিয়ে নিই। "

তখন নাসির বলল,  " এটার মধ্যে কী আছে জানিস? "

" হ্যাঁ, জানি তো। বছরের সেরা আমের সুস্বাদু রস। "

নাসির রাগী ভাব নিয়ে বলল,  " আপনি ভুল বকছেন কেন? এতে আছে টকটকে লাল তরমুজের ঠিক মধ্যিখানের কলিজাটার রস, এই রংকে কিছুটা সবুজ করার জন্য মেশানো হয়েছে পেয়ারা পাতার রস, আরও আছে পাঁকা কলার সুস্বাদু রস৷ "

বন্ধুর মুখে রসে-রসে এত রসের কথা শুনে আবেগে দুচোখ বেয়ে রস ঝরতে লাগল। বুঝতে পারলাম, আমি আর বন্ধু একই পথের যাত্রী। বুকভাঙা ক্ষত নিয়ে বন্ধুটাকে জড়িয়ে ধরলাম। 

দুজন একত্রিত হয়ে কিছুটা সাহস পেলাম এবার দোকানে যাওয়ার জন্য৷ একটা দোকানের দিকে খুশি মনে দু'জন এগোচ্ছিলাম, তখন লক্ষ্য করলাম দোকানের সামনে একটা লোককে ঝাঁটাপেটা করা হচ্ছে। পাশের একটা লোককে এই ঝাঁটাপেটার কারণ জিজ্ঞেস করতে যা বলল, তা শুনে আর দোকানে ঢোকার ইচ্ছে আমাদের হলো না। পাশের লোকটা বলেছিল,  " সাদার মধ্যে হাল্কা আর গাঢ় সাদা থ্রিপিস খুঁজতে এসেছিল লোকটা। তাই তাকে পাগল ভেবে ট্রিটমেন্ট দেয়া হচ্ছে এখন। "



( সমাপ্ত )




Writer: Sajeeb AS

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner