> স্বপ্ন বিভ্রাট - Bangla New Funny Story - Boipoka365
-->

স্বপ্ন বিভ্রাট - Bangla New Funny Story - Boipoka365


Comics

আমার স্বামী বাসায় নেই মাস তিনেক হলো!

উনি যাবার সময় আমার কাছে এসে নাকের সাথে নাক মিলিয়ে বলেছিলো, প্রতি মাসে অন্তত একটা হলেও চিঠি লেখবো। আমি তার চিঠির অপেক্ষায় রইলাম!

.

বাড়ির উঠোনের মাঝখানটায় একটা পিওন এসে দাড়ালো। হাতে চিঠির খাম!

নারুভা, পাশের ঘর থেকে দৌঁড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্ল, মা শোনো... বাবার চিঠি এসেছে!

আমি আঁতকে উঠলাম। চুলোয় রান্না রেখে, শাড়ীর আঁচল ঠোঁটে কামড়ে ধরে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালাম! 

-- আমার শাশুড়ী পিওনের দিকে আসতে আসতে বল্লেন, কি... আমার খোকার চিডি আইছে?

-- পিওন শুকনো হাসি দিয়ে বল্ল, জ্বি খালাম্মা। 

.

-- নারুভা আমায় জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, মা তুমি কাদছো কেন? বাবার চিঠি আসছে তুমি খুশি হওনি?

-- আমি নারুভাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বল্লাম, চোখে ধোঁয়া লেগেছে রে মা। একটু পর চোখের জ্বল এমনিতেই শুকিয়ে যাবে।

.

-- উঠোন থেকে আমার শাশুড়ী চোখ রাঙিয়ে বল্লেন, এখানে খারাইয়া কি দেহ? চুলায় কি যেন পুরার গন্ধ পাইতাছি?

-- আমি চোখে পানি নিয়েই এক ফালি হাসলাম, কতদিন পর আমার শাশুড়ী আমায় তুমি করে বল্ল! কি সুখ, কি সুখ! 

.

আচ্ছা, নারুভার বাবা চিঠিতে কি লিখছে? 

হয়তো এমন লিখেছে, রুপা... তুমি পেট ভরে খাও তো? রাতে তোমার ঠিকঠাক ঘুম হয়? ঘুমের মধ্যে কি আমি স্বপ্নে আসি? আলতো করে কি তোমার শাড়ীর আঁচল সরিয়ে চুল সরিয়ে দেই? 

আহ্... আর ভাবতে পারছিনা। কি লজ্জা, কি লজ্জা!

-- নারুভা হঠাৎ এসে বল্ল, একি মা তোমার হাতে দেখি ফোসকা পরলো! 

-- আমি, আমার মেয়েকে কিছু বলতে পারলাম না।

-- আমার শাশুড়ী পিছন থেকে এসে বল্ল, কিরে হারামজাদি পাতিলের ভাত পরছে কেমনে?

-- আমি কাপা কাপা গলায় বল্লাম, মার ফেলতে গিয়ে হাত ফসকে পরে গেছে।

-- আমার চুলের মুষ্টি ধরে শাশুড়ী বলতে লাগলো, কপাল পুড়া মাইয়া। ভাত তো ফালাইছেই আবার পাতিলটাও ভাংছে। 

.

আমি চুপ চাপ দাড়িয়ে চুলের টান সহ্য করছি, এইতো আমার গালে একটা থাপ্পড় ও বসে গেলো। তারপর গরম খুন্তি চেপে ধরলো পিঠে। 

.

একটা নতুন খেলা শুরু হলো!

আমার শাশুড়ী মেরে যাচ্ছে, আমি সহ্য করে যাচ্ছি। মারতে মারতে ওনি যদি ক্লান্ত হয়, এই খেলায় আমি জিতে যাবো। যদি আমি অজ্ঞান হই, আমার শাশুড়ী জিতে যাবে। 

আমাদের এই খেলা প্রায়ই হয়। কখনো আমি জিতি কখনো জিতেন শাশুড়ী। 

আজকে যেই জিতুক আমি খুশিই থাকবো। নারুভার বাবা আজ চিঠি পাঠিয়েছে। ওনার হাত দিয়ে লেখা চিঠিটা গভীর রাতে বুকে জড়িয়ে কাঁদবো। আমার সব "হার" চোখের জ্বলে ভাসিয়ে দিবো। আহ্... কি সুখ, কি সুখ!

সুখের এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

.

দু'ঘন্টা পর সন্ধা। সন্ধার আজানের শব্দে আমার হুস ফিরলো।

নারুভা আমার পায়ের কাছে বসে আছে। আমি নারুভাকে বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু আঁকলাম। মেয়েটা কেদে কেমন চোখ ফুলিয়ে রাখলো।

-- নিরবতা ভেঙ্গে নারুভা বিরবির করে বল্ল, জানো মা, বাবা নাকি তোমায় চিঠি লেখেনি! 

আমার বুকে ঝড় শুরু হলো। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। নির্বিকার এই আমি টা কে নিজের কাছে জীবন্ত মমীর মত মনে হচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম, আমি দিন দিন হেরেই যাচ্ছি।

আমার মেয়ে আমায় শক্ত করে ধরে বল্ল, মা তুমি হারোনি। আমি তোমায় ভালোবাসি, মা।

.

.

৩ বছর পর,

নারুভার বাবা আজ বাড়ি আসবে, আজ থেকে আমার কোনো দুঃখ থাকবেনা। ছোট দুঃখ, বড় দুঃখ, সব দুঃখ মাটিতে পিষে ফেলবো। দুঃখ মাটিতে পিষলে মনের উর্বরতা বাড়ে, আর সুখ পিষলে মনে একটা বটবৃক্ষ তৈরি হয়, যার নাম "সুখবট"!

এই তিন বছরে নারুভার বাবা মোট ৩৭টা চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু আমার জন্য একটাও না। পুরুষ মানুষ বড় পাষাণ! 

চিঠি না পাঠাক,তাতে কি? হয়তো, হাতে অনেক কাজ ছিলো। 

সমস্যা নেই, আজ তিনি আসবেন। এই সুখেই আমার মনে প্রকান্ড সুখবট তৈরি হয়েছে। আমি এখন হাসবো। কিন্তু আমার চোখে জ্বল কেন!

.

বিকেলের ট্রেনে নারুভার বাবা আসবেন। নারুভার মাঝে এই নিয়ে কত্ত আনন্দ! 

বাড়িতে আয়োজন শুরু হলো... শরবত বানানো হলো, উঠোনে চেয়ার দেয়া হলো, গোসলের পানি তোলা হলো, ভালো হাতপাখা রেডি করা হলো, হারিকেনে তেল ভর্তি করা হলো। 

আমার ছোট্ট মেয়েটা আজ সব কাজ যেন দৌঁড়ে দৌঁড়ে করছে।

আমি সুন্দর একটা শাড়ী বের করলাম। এ-শাড়ীটাও কয়েক জায়গায় ছিড়ে গেছে। মনে মনে বল্লাম, ছিড়ে গেছে তাতে কি? ছেড়া যায়গা টুকু ভিতরে রেখে পরলেই হয়। 

আমি, শাড়ী টা পড়ে নিলাম। চোখে আই ব্রু আঁকালাম। ঠোঁটে লিপস্টিক আঁকতে আঁকতে ভাবলাম, পিঠে খুন্তি দিয়ে পুড়ে যাওয়া দাগটা তার চোখে পরবে তো? যদি পরে আমি বোধহয় লজ্জায় লাল হয়ে যাবো।

.

বাহির থেকে নারুভা বলে উঠলো, মা ও মা... বাবা আসছে বাবা।

আমার বুক, ধুঁক করে উঠলো। আয়নায় তাকিয়ে লজ্জায় চোখবুঁজে ফেল্লাম। এই চোখ কিভাবে খুলবো আমার জানা নেই। চোখ মিটমিট করে ঘরের দরজা ধরে দাড়ালাম।

.

নারুভার বাবা বাড়ি আসলো, আহ্... মানুষটা কে কত ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আমি ভালো করে চোখ খুল্লাম। 

চোখ খোলে মনে হলো, আমি কেমন ঘাবড়ে গেলাম!

নারুভাকে উনি কোলে নেয়নি! এমন কি হাতটাও ধরলো না আমার মেয়ের! কিন্তু, ওনার সাথে সুন্দর মহিলা টা কে! তাও কেমন অসভ্যের মত হাত ধরে আছে! 

টের পেলাম, আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।

-- আমার শাশুড়ী এগিয়ে গিয়ে বল্ল, এটাই কি আমার লাল টুকটুকে নতুন বউ? 

-- মেয়েটা, ক্লান্ত মুখে এক ফালি হেসে মাথা নিচু করলো। ইসস... কি লজ্জা, কি লজ্জা! লজ্জাতেই তো নারীর সুখ,নারীর সৌন্দর্য। 

.

-- শাশুড়ী আমার দিকে কাজের মেয়ের মত তাকিয়ে বল্লেন, এই মেয়ে দরজায় খারাইয়া দেখচো কি? তাদের বাতাস করো।

আমার চোখের জ্বল শুকিয়ে গেলো। প্রকৃতির পরিবর্তনে সাগর শুকিয়ে যে মরুভূমি হয় এ আর নতুন কি?

.

-- নারুভার বাবা আমায় বল্ল, তুমি তো অনেক রোগা হয়ে গেছো। পাশের মেয়েটা মুচকি হাসলো।

-- আমি নিরব দাড়িয়ে হাতপাখা নাড়িয়েই যাচ্ছি। সাথে আমিও একটু হাসলাম। কি আজিব,এই হাসিতে আমার সুখবটের ডালপালা ভেংগে যাচ্ছে কেন? মনে মনে বল্লাম... কি সুখ, কি সুখ!

.

রাতে আমার ঘর ছেড়ে দিতে হলো। আমি এসে শাশুড়ীর ঘরের মেজেতে বিছানা পাতলাম। রাতের সাথে পাল্ল দিয়ে চোখের জোয়ার বাড়লো। জোয়ারের স্রোতে আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। আমি অতল ঘুমে তলিয়ে যেতে লাগলাম।

আবারো আমার গভীর স্বপ্নে টের পেলাম, নারুভার বাবা এসে শুইলো আমার পাশে! আমার পিঠ থেকে শাড়ী সরাল, ব্লাউজের দু'টো বুতাম খুলে খুন্তি দিয়ে পুড়ানো দাগে ঠোঁট ছোঁয়াল! আমি কেপে উঠলাম। 

তার একটা হাত আমার পেটে ঝাপটে ধরলো! আমার চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছে! 

আমি খুব করে চাইলাম এই স্বপ্নটা না ভাঙ্গুক! 

.

.

রাত, তিনটে...

.

নাঈম (নারুভার বাবা)...

আমি টের পেলাম, রুপার চোখের জ্বলে আমার বুক ভিজে একাকার। 

-- আমি চোখবুঁজেই ডাক দিলাম, রুপা... এই রুপা? তুমি কাঁদছো কেন?

-- রুপা শোয়া থেকে উঠে বসে গেলো। ডিম লাইটের আলোয় আমার দিকে প্রখর চোখে তাকিয়ে বল্ল, মেয়েটা কই?

-- আমি ব্রু কুঁচকে বল্লাম, রাত তিনটের সময় কিসের মেয়ে? কি স্বপ্ন দেখে কি বলছো?

-- রুপা আমার চোখমুখে খামচে ধরে বল্ল, এখন মনে নেই, না? গত তিন বছরে আমায় একটা চিঠিও দেও নাই!  এতো দিন পর বাসায় আসছো কিন্তু আমার মেয়েকে তুমি কোলে পর্যন্ত নেওনি, অথচ বিয়ে করে একটা লাল টুকটুক মেয়ের হাত ধরে বাসায় ঢুকছো! আমায় দিয়ে বাতাস পর্যন্ত করালে! আর এখন বলছো কিসের মেয়ে! 

-- আমি হা হয়ে বল্লাম, দু-মাস হলো বিয়ে হলো। কোন রাত তোমায় ছাড়া থাকিনি। আর তুমি এসব কি বলছ? 

বিশ্বাস করো, যা হবার স্বপ্নে হয়েছে বাস্তবে কিচ্ছু না।

.

-- রুপা আরো কঠিন হয়ে আমার দিকে তাকালো! 

-- আমি বুঝতে পারলাম, আমি এখন বড় রকমের আসামি! আমার দোষ, স্বপ্নে কেন অন্য মেয়েকে বিয়ে করলাম!

.

চার দিকে নিঝুম রাত, সিলিং ফ্যানের হু হু শব্দ। 

রুপা ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে।

আমি একা খাটের এক কোণে গৃহপালিত স্বামীর মত বসে আছি। এখন, আমার শোয়া একদম নিষেধ!

.

.

( সমাপ্তি ) 

.

.


Writer: Nayeem Nahmed

NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner