Mysterying Story |
চোখে মুখে পানি ছিটানোর পর শফিকের জ্ঞান ফিরল। সবাই কৌতুহলী। নিসার ছবি দেখে শফিক এত ভয় পেল কেন? কে নিসা?
- কি হলো শফিক? এমন করছিলি কেন? নিসার ছবিতে কি এমন আছে যা দেখা মাত্রই তুই ভয় পেয়ে গেলি?
- তুই সত্যি সত্যি ওই মেয়েটার সাথেই ঘোরাফেরা করছিলি?
- হ্যাঁ রে বাবা হ্যাঁ। এক সপ্তাহ আগেও তো পাশের পাহাড়টায় ওকে নিয়ে বেড়াতে গেলাম।
- কি??? কি বললি? পাশের পাহাড়টায় ওর সাথে বেড়াতেও গিয়েছিলি?
- হ্যাঁ গিয়েছিলাম তো। কিন্তু কেন?
- তুই ওই পাহাড়ে গেলি আর বেঁচে ফিরলি?
- কি সব বলছিস বল তো? ওই পাহাড়ে গেলে বেঁচে না ফেরার কি আছে? আচ্ছা তুই নিসার সম্পর্কে কি বলছিলি তখন?
- নিসা দুই বছর আগে পাশের ওই পাহাড় থেকে নিচে খাদে পড়ে মারা গেছে। তারপর থেকে ওই পাহাড়ে কেউ উঠলে তারা আর বেঁচে ফিরে না। আর আশ্চর্যের কথা হলো ওখানে সব যুবক ছেলেরা যায় আর পরে তাদের লাশ খাদে পাওয়া যায়।
- কি?? কি বলছিস তুই? এই সিরিয়াস সিচুয়েশন এও তোর ফাজলামি করতে ভালো লাগছে?
- ফাজলামি না রে ভাই। দাঁড়া মাকে ডাকছি। মা, মা, এদিকে এসো তো।
- কি হয়েছে বাবা?(মা)
- মা এই মেয়েটাকে চিনো না?
- হ্যাঁ চিনি তো। বছর দুয়েক আগে মারা গেছে। কিন্তু কি হয়েছে?
- কিছু না মা। তুমি এখন যাও।
- এবার বিশ্বাস হল তো?(নেহালকে)
- আমার তো হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। কি সব বলছিস তুই আর আন্টি! (নেহাল)
.
যে স্টুডিওতে নিসার ছবি প্রিন্ট করতে দেওয়া ছিল সেই স্টুডিওতে নেহাল গেল। ছবিগুলো নিলো। আশ্চর্য! কোন ছবিতেই নিসাকে দেখা যাচ্ছে না। নিসার পেছনে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে শুধুমাত্র প্রকৃতির ছবি তোলা হয়েছে। নেহাল কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তাহলে কি..... নিসা একটা আত্মা?
নেহালের সাথে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে ওর বন্ধুরা আর হিমছড়িতে থাকতে চাইছে না। যদিও নেহালের এখন ফিরে যাবার ইচ্ছে নেই। নিসার রহস্য উদঘাটন করে তবেই সে ফিরবে। কিন্তু বন্ধুরা ওকে থাকতে দিবে না। যদি কোনও বিপদ হয় কে সামলাবে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও নেহালকে ফিরে যেতে হলো।
ফিরে যাওয়ার পর থেকে নেহাল স্বাভাবিক হতে পারছে না। একদিকে নিসার প্রতি তার ভালবাসা। অন্যদিকে নিসার মৃত্যুর পরেও ওর সামনে আসা। সত্যিই কি নিসা মৃত? নাকি সবার চোখে মৃত সেজে নিসা চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে? তাই যদি হয় তাহলে নেহালের সামনে আসল কেন? নেহাল তো ওখানে থাকেও না। কখনও নিসার সাথে দেখাও হয় নি। সবকিছু নেহালকে ভাবাচ্ছে। দু-দন্ড স্থির হয়ে বসতে পারছে না।
.
নেহাল আর নিসা পাশাপাশি বসে আছে হিমছড়ির সেই ঝর্ণার সামনে। দুজনেই চুপ। নেহালের মনে অনেক প্রশ্ন। কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না। ওর মনে একটাই ভয়। এতদিন পর নিসাকে পেয়েছে। আবার হারিয়ে ফেলবে নাতো?
নিসা বলতে শুরু করল,
- আমি জানি তুমি অনেক কিছু জানতে চাও। কিছু কারণে আমি তোমার সামনে আসতে পারছিলাম না। তাই বলতে পারি নি। এখন বলছি।
- বলো নিসা, সব খুলে বলো।
- চাচার মৃত্যুর পর আমি যখন খুব ভেঙে পড়ি, তখন আমাদের এলাকার ছেলে সিফাতের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। আমি সিফাতকে বন্ধু ভাবলেও সিফাত আমাকে ভালোবাসতো। অনেকবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। সিফাতের পরিবারকে আমি চিনতাম। ওরা আমার মত অনাথাকে কখনওই মেনে নিত না। এভাবেই চলতে লাগল আমাদের বন্ধুত্ব। একদিন সিফাত আমাকে ওই পাহাড়ে নিয়ে গেল যেখানে আমি তোমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। পাহাড়ে কেউ ছিল না। আমাকে একা পেয়ে সিফাত আমার সম্মান নষ্ট করতে চাইল। তখন ওর সাথে হাতাহাতির এক পর্যায়ে আমি পাহাড় থেকে খাদে পড়ে যাই। তখনই আমার মৃত্যু হয়।
- তারপর?
- মৃত্যুর পর আমি প্রতিশোধের নেশায় ঘুরতে থাকি। সিফাত একদিন বাইক চালিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ আমি ওর সামনে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকি। আর ও ভয় পেয়ে বাইক এক্সিডেন্টে মারা যায়।
- কিন্তু তুমি আমাকে বেছে নিলে কেন?
- তারপর থেকে আমি ছেলেদের একা পেলেই ওদের সামনে যেতাম। আমার রূপে মুগ্ধ হয়ে যেত ওরা। ওদেরকে ঠিক সেভাবেই ওই পাহাড়ে নিয়ে যেতাম যেভাবে তোমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আমি ওদের মেরে ফেলতাম। ছেলেদের প্রতি ঘৃণা জমে গিয়েছিল মনে।
আমি তোমাকেও মেরে ফেলার জন্য ওই পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুমিও খারাপ। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। সব ছেলেরা খারাপ হয়না। তুমি আমার ভুল ভেঙে দিয়েছিলে। তাই আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর আর তোমার সামনে আসি নি। কিন্তু আমি দূর থেকে তোমাকে দেখতাম। যখন দেখলাম তুমি আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছ তখন আমার মনে হল তোমাকে সবটা বলা উচিত। তাই আজ তোমাকে এখানে ডেকেছি।
- নিসা, তুমি কি আমার জীবনে সত্যি নিসা হয়ে আসতে পারো না? মানুষ হয়ে?
- সেটা যে সম্ভব না নেহাল। আমি যে অন্য জগতে আছি। আমাকে এখন যেতে হবে। ভালো থেকো। তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলাম। আমাকে নিয়ে ভেবো না। আমি আর কোনও ছেলের ক্ষতি করব না।
- নিসা যেও না। প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
নিসা শুনল না। একটা আলোর কাছাকাছি চলে গেল। থেমে গিয়ে পেছনে ফিরে বলল,
- নেহাল, ভূতদের শীত লাগে না। গরমও লাগে না।
বলেই নিসা আলোতে মিলিয়ে গেল।
ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল নেহাল। তাহলে কি এটা স্বপ্ন ছিল? মোবাইলে সময় ভোর ৪:৩০ মিনিট। বুকের উপর তার নিজের আঁকা নিসার ছবিটা দেখল। কি অদ্ভূত মায়া চোখদুটোতে। এই চোখ আর কখনও সে দেখতে পাবে না?
.
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকছে নেহাল। ছবিতে শরতের আকাশ এঁকেছে। নীল সাদা মেঘের লুকোচুরি খেলা। মাঠে কয়েকজন বাচ্চা খেলা করছে। এমনই কিছু দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে ছবিতে। এমন সময় কেউ পেছন থেকে বলল,
- আকাশের রঙটা নীল না হয়ে মেঘের হালকা কালচে রঙ দিলে ভালো হতো। মেঘের মাঝে সূর্য উঁকি দিচ্ছে এমন আকাশ।
কথাটা শুনে চমকে উঠল নেহাল। আগেও এভাবে কেউ বলেছিল!
পেছনে ফিরে দেখল অপরিচিত একটা মুখ। কিন্তু সেই মায়াবী চোখ। সেই মায়া, সেই দুষ্টুমি চোখজোড়ায়। হা করে তাকিয়ে দেখছে নেহাল।
- কি হল জনাব? আর কতক্ষণ হা করে থাকবেন? আরে আমি ভূত না, মানুষ। এই দেখুন চিমটি কাটলাম। এবার চলুন তো গাছের ছায়ায় গিয়ে বসি। উফ যে গরম, দেখুন না কেমন ঘামছি।
বলেই মেয়েটা মুচকি হাসতে লাগল। কয়েক মুহুর্ত পর নেহালও মুচকি হাসল। তারপর ওরা পুকুরপাড়ে গাছের ছায়ায় গিয়ে বসল।
(সমাপ্ত)
Writer: Asma Aktar Urmi