সকাল ১০ টা, খুব আরামে ঘুমুচ্ছিলাম কিন্তু বন্ধুজাতি নামক যে পদার্থ আছে এদের আবার আরাম সহ্য হয় না।।তো আমার আরামটা যে তাদের সহ্য হবে সেই আশা করাটাও রীতিমতো নিরাশা।।তাই এই সক্কাল বেলা ফোনের বাজখাই রিংটোনে চোখ মেলে তাকাতে হলো আমায়।।বিরক্ত নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়েই দেখি বেস্টুর কল।।নামটা দেখে বিরক্তিটা মুহূর্তেই কয়েক ধাপ বেড়ে গেলো। ।ইচ্ছে করছে ফোনের মধ্যে ডুকে হারামিটাকে কয়েকটা চড় থাপড়া দিয়ে আসি...বিরক্তিকর।।
।হ্যা বল,,কি বলবি?
।
দোস্ত??(চেঁচিয়ে)
।
কি হয়েছে?
।
দোস্ত??
।
থাপ্পর চিনোস??এক থাপ্পরে গাল ফাটায় ফেলবো।দোস্ত দোস্ত না করে ঝেরে কাঁশ।কাহিনী কি?
।
দোস্ত,, জানিস কি হয়ছে??
।
তুই বলবি না আমি ফোন রাখবো??
।
আরে রেগে জানিস কেন??
।
না রাগবো কেন?তোর মধুর সুর শুনে নাচতে ইচ্ছে করছে(তীক্ষ্ণ গলায়)
।
তো নাচ না,,,আমি মানা করছি নাকি??
।
এই তুই ফোন রাখ,,,শালা হারামি।
।
আরে আরে শুন শুন,,,জানিস ওই ম্যাজিস্টেট আমার জন্য ভেলেন্টাইন গিফ্ট পাঠায়ছে,,,ভাবা যায়??
।
ভাবা যায় কি না সেটা বসে বসে চিন্তা কর। আমি রাখছি।।খবরদার সারাদিনে কল করে মাথা খাবি তো খুন করবো।।
।
ওকে কিছু বলতে না দিতেই ফোনটা কেঁটে দিলাম।।এই এক প্যারাময় মাইয়া।একটা বিষয় মাথায় ঢুকলে ওটা রিপিটেডলি চলতে থাকে ওর মাথায়।।এমনি মেজাজ আমার চারশো বিশ তার উপর আসছে গাঁজাখোরি গল্প শোনাতে।।সেই রাত বারটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত বসে ছিলাম বয়ফ্রেন্ড নামক মানুষটার একটা ম্যাসেজের আশায়।এটলিস্ট একটা উইশ তো করবে,,হাজার হলেও আজ ভ্যালেন্টাইস ডে।।কোথাকার কোন ম্যাজিস্ট্রেট আমার বেস্টুকে সকাল না হতেই গিফ্ট পাঠিয়ে চলেছে আর উনার কোনো খবর নাই।।কেমনডা লাগে??তাই বিরক্ত হয়ে শেষ মেশ আমিই ফোন দিলাম।।তিন তিনটা বার রিং হওয়ার পর মহারাজের ফোন ধরার সুযোগ হলো।।ফোনটা ধরেই বাজখাঁই গলায় বলে উঠলেন,,
।
কি সমস্যা তোর??
।
কি সমস্যা মানে??কই তুমি?
।
কই আমি মানে??এতো সকালে একটা ব্যাচেলার ছেলেকে তুই ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করছিস তোর লজ্জা করছে না?আবার জিজ্ঞেস করছিস আমি কই??
।
এখানে লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু আমি খুঁজে পাচ্ছি না শুভ্র ভাই,,সো লজ্জা পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।।আর এখন সকাল??দুপুর হতে চললো,, দশটা বেজে গেছে অলরেডি(রাগী গলায়)
।
দশটা বাজছে তো তোর সমস্যা কি??ব্যাচেলারদের দশটা সময়ও ভোর চারটা।।আর শুক্রবার হলে তো কথাই নেই।।
।
ফাউল কথা বাদ দিয়ে বলো তো তুমি আছোটা কই??
।
কই আবার??ভার্সিটির হলের যে সিটটা আমার জন্য বরাদ্দ তার উপর কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলাম।।কিন্তু তুই আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছিস। ফাজিল মেয়ে।(দমক দিয়ে)
।
তোমার কাছে আমার থেকে ঘুম বড় হলো, শুভ্র ভাই?
।
অবশ্যই বড়।আরে তুই থাকিস সুদূর ময়মনসিংহ।। এই নিঃসঙ্গ চট্টগ্রামে এই ঘুমই আমার সাথী,,, যা এবার ফুট।।
।
কিহহহ এতো অপমান,,,ফাইন তুমি থাকো তোমার ঘুম নিয়ে,, অসহ্য...
।
এই এই কখন থেকে তুমি তুমি করছিস।ভুলে গেছিস আমি তোর থেকে ছয় বছরের বড়।আপনি বল...
।
কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে। ঠিক এই সময়ই আপু একটা বাসন্তী রঙের শাড়ি নিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো,,
।
এই রোদ.?শাড়িটাতে আমায় কেমন মানাবে রে??
।
ভালো...কিন্তু কেনো?
।
তোর ভাইয়ার সাথে ঘুরতে যাবো ভালোবাসা দিবস বলে কথা।
।
ভাইয়া ময়মনসিংহ কখন এলো,?(অবাক হয়ে)
।
কাল রাতে এসেছে।।আমি যাই রেডি হই...
।
এবার রাগটা আরো মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো,,মানুষের বয়ফ্রেন্ড ঢাকা থেকে চলে আসছে আর এই বলদটা একটা উইশ পর্যন্ত করতে পারছেন না।।এতো ঘুম উনার।।ইচ্ছে করছে উনার বিছানায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে আসি যত্তোসব।।এতো মেজাজ খারাপের মধ্যে আবারো ফোনটা বেজে উঠলো...ভেবেছিলাম আবারো আমার তাড় ছিঁড়া বেস্টু কিন্তু না প্লাবন ফোন দিয়েছে।।অনিচ্ছা সত্যেও ফোনটা ধরলাম..
।
কি সমস্যা??(বিরক্তি নিয়ে)
।
বহুত সমস্যা দোস্ত,,
।
সমস্যা নিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মর,, আমাকে ফোন দিছিস কেন??
।
আরে দোস্ত,,,গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে যাবো কি গিফ্ট দিবো বুঝতাছি না।।কিছু সাজেস্ট কর তো।
।
আমার মাথা গিফ্ট কর ডাফার...
।
তোর মাথা গিফ্ট করলে তো শুভ্র ভাই আমার মাথা কেটে ফেলবে রে..
।
শালা,,মর তুই শুভ্র ভাইয়ের চামচা।।
।
ফোনটা কেঁটে মুখ ফুলিয়ে বসে আছি।।আপুও দেখলাম নাচতে নাচতে সেজেগুজে বেরিয়ে গেলো।।আমি বুঝতে পারছি না, আমি কার ভারা ভাতে ছাই দিছি যার জন্য শুভ্র ভাইয়ের মতো এমন এক আনরোমান্টিক অপদার্থ বিএফ জুটছে কপালে।।..সারাটাদিন এভাবেই কেটে গেলো একটা বার ফোনটাও দেই নি সে,কে জানে নতুন কাউকে পেয়েছে কিনা।কি মনে করে বিকেলের দিকে একা একাই সাজতে বসে গেলাম।নীল শাড়ি,,হাত ভরা নীল চুরি,,চোখে ঘন কাজল,,কপালে ছোট্ট টিপ, লম্বাচুলগুলো খোলে দিয়ে পায়ের পায়েলের রুনুঝুনু শব্দ তুলে হাঁটা দিলাম ছাঁদের দিকে।।ছাদের এক কোনায় আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি আজ থেকে দুইবছর আগের কথা।।আজকের এই দিনটাতেই শুভ্র ভাই প্রোপোজ করেছিলো আমায়।।কি অদ্ভুত ছিলো সব......
।
বই পড়ছিলাম হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠলো।।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১১ টা বেজে ৫৫ মিনিট।এতো রাতে শুভ্র ভাইয়ার ফোন দেখে অবাক হলাম।অবাকের পালা শেষ করে ফোনটা কানে নিয়ে সালাম দিয়েই বললাম,,
।
শুভ্র ভাই এতো রাতে?
।
ওয়ালাইকুমুস সালাম,,নিচে আয়।
।
মানে??(অবাক হয়ে)
।
মানে হলো।।তোরা যে দু' তলায় থাকিস।।তার সিঁড়ি বেয়ে তর তর করে নিচে নেমে আয়।।আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।
।
মানে কি?এতো রাতে তুমি রাস্তায় কি করো??
।
মশাদের সাথে পিকনিক করি,,ডাফার।।এতো কথা বলিস কেন??নিজে নামতে বলছি নিচে নাম ব্যস
।
আমি পারবো না।।এতো রাতে নিচে ইম্পসিবল।
।
সবই পসিবল।।দুই মিনিটের মধ্যে নিচে আয়,,
।
পারবো না।
।
তুই পারবি,,,তোর বাপসহ পারবে
।
তাহলে বাবাকেই বলো,, রাখছি
।
খবরদার রোদ,,,দুইমিনিটের মধ্যে নিচে না নামলে তোর অবস্থা যে আমি কি করবো,,তুই চিন্তাও করতে পারবি না।
।
কথাটা বলেই ফোনটা কেঁটে দিলো শুভ্র ভাই।।লও ঠেলা,,শুভ্র ভাইকে আমি যথেষ্ট ভয় পাই,,আম্মুকে তারচেয়েও বেশি ভয় পাই।।তবুও ভয় ভয় পায়ে আম্মুর রুমে উঁকি দিলাম,,আম্মু এখনো ঘুমায় নি।।কি করবো এখন?অনেক ভেবে আম্মুকে বললাম,,নিচ তলার মাহিমা আপুর কাছ থেকে ক্যালকুলেটার আনতে যাচ্ছি আমারটা কাজ করছে না।।আম্মু কিছুক্ষণ আমার দিকে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মন দিলেন।।আমিও দোয়া দুরুদ পড়ে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়।সোডিয়ামের আলোতে স্পষ্টই দেখতে পেলাম এলোমেলো চুলে,, একরাশ ক্লান্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র ভাই।।গায়ে ব্রাউন টি-শার্ট,,একটা ব্ল্যাক জ্যাকেট,,ব্লু জিন্স,,কেটস আর ঘাড়ে একটা ব্যাগ।।আমাকে দেখেই ক্লান্তিমাখা হাসি দিয়েই বলে উঠলেন,,
।
এসেছিস??
।
হুম,,এখানে কোনো ডেকেছো??বাসায় চলো।।
।
নাহ,,এতো রাতে বাসায় গেলে ফুপি সন্দেহ করবে।
।
কেনো??
।
তুই বুঝবি না হাদা,,
।
কথাটা বলেই একগুচ্ছ টকটকে লাল গোলাপ বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে।।।কোনো ফর্মালিটি না করেই বলে উঠলেন,,,
।
ফুলগুলো হাতে নে।।তোর জন্য।।খবরদার রোদ ছুড়ে ফেলবি না বা এটা বলবি না যে নিবি না।।নিজের টিউশনির টাকায় কিনেছি,,টাকার মায়া বড় মায়ারে পিচ্চি,,সো ছুড়াছুঁড়ি করবি তো এক চড়।
।
কিন্তু এগুলো কেন??(কনফিউশড হয়ে)
।
দেখ রোদ,,,তুই আমার দিকে ভাই ভাই নজরে তাকালেও আমি কিন্তু তোর দিকে ওলওয়েজ প্রেম প্রেম নজরেই তাকাই।।বুঝছিস??বুঝিস নি??
।
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম যে বুঝি নি।।উনি চরম বিরক্তি নিয়ে আমার হাতে একটা উপন্যাসের বই গুঁজে দিয়ে বলে উঠলেন,,,
।
তোর বুঝা লাগবে না।।এখন উত্তর দক্ষিণ না তাকিয়ে সোজা রুমে যা।।
।
কিন্তু??
।
দেখ রোদ,,পুরো আট ঘন্টা জার্নি করে আসছি।।এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবো কাল আবারো বেক করতে হবে।। সো কাহিনী না করে যা এখান থেকে...
।
আমিও আর কিছু না বলে ঘুরে দাঁড়ালাম।।দুই কদম ফেলতেই পিছে থেকে ডাক পড়লো,,
।
রোদ??
।
হুহ(পিছু ফিরে)
।
এদিকে আয়...
।
আমি উনার কাছে আসতেই নিচে বসে আমার পায়ের দিকে হাত বাড়ালেন আমি ওমনি লাফিয়ে উঠলাম,",করেন কি শুভ্র ভাই??" তার উত্তরে বিরক্তিমাখা চাহনী দিয়ে বলে উঠলেন,,"এতো লাফাস কেন??চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।।তোর পা কেটে নিয়ে যাবো না।" আমিও এবার চুপচাপ মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইলাম।।উনি আমার পায়ে একটা কিছু পড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েই কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন,,"ভালোবাসি তোকে,, এটা বুঝতে এতোক্ষণ লাগে??" কথাটা শুনে দুই মিনিট হ্যাং মেরে দাঁড়িয়ে থেকে বোকার মতে বলে উঠলাম,," তুমি কি আমায় প্রোপোজ করছো শুভ্র ভাই?"আমার কথাটা কানে যেতেই দিলেন এক ধমক।।সেদিন উনার এক ধমকে দৌড়ে পালিয়েছিলাম ।।কথাটা ভাবতেই মনের অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোনে।দুই বছর ঘুরে আজও ওই একইদিনে দাঁড়িয়ে আছি আমি।।তারিখটা যেমন সেইম ঠিক তেমনই আমিও আগের মতোই আছি।।শুধু বদলে যাওয়া বছরগুলোর মতো বদলে গেছে শুভ্র ভাই,,,হঠাৎই পায়ের শব্দে পিছে ফিরে তাকালাম।।নীল পাঞ্জাবী,, এলোমেলো চুল,,ক্লান্তি ভরা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র ভাই।। সেইদিনের মতো আজও ক্লান্ত সে।কেন জানি অবাক হলাম না,,মন বলছিলো উনি আসবেন।।উনি হাসি মুখে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ গুঁজে দিতে দিতে বলে উঠলেন,,,
।
কি রে??শাড়ি পড়ে পেত্নী সেজে আছিস কেন??আমি পেত্নীদের দেখে ক্রাশ খাই না।।
।
উনার কথায় হেসে উঠলাম।।হাত দিয়ে উনার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললাম,,,
।
তো মশাই এতোক্ষণে??
।
আর বলিস না,,রাতে বাস মিস হয়ে গিয়েছিলো।।সকালে বাস পেলাম দশটায় আর এখানে আসতে আসতে পাঁচটা।। বাস থেকে নেমেই সোজা তোর কাছে।।ক্ষুধায় পেট জ্বলে গেল।।
।
উইশ করো নি কেন??(মুখ কালো করে)
।
উইশ করার কি আছে??তুই আমার জন্য ওলওয়েজ স্পেশাল।।স্পেসিফিক কোনো দিনে ভালোবাসা দেখাতে পারবো না।
।
কথাটা বলেই নিচে বসে পড়লেন উনি।।।আমি অবাক হয়ে বললাম,," নিচে বসলে কেনো?"
।
আমার ইচ্ছে তোর কি?এই এই তুই নিচে বসতেছিস কেন?
।
আমার ইচ্ছে তোমার কি?(নিচে বসতে বসতে মুচকি হেসে)
।
খুব পেকেছিস,,
।
কথাটা বলেই আবারো আমার পায়ের দিকে হাত বাড়ালেন।।আমি পা সড়িয়ে নিতে গেলেই শক্ত করে চেপে ধরে রাগী চোখে তাকালেন আমার দিকে।।এবার আমি চুপ।।গালে হাত দিয়ে উনার পাগলামো দেখছি।।পকেট থেকে আলতার কৌটা বের করে খুব যত্ন করে লাগাচ্ছেন পায়ে।।
।
এসব কি??
।
দেখছিস না??তোর এই গেটাপের সাথে আলতাটাই মিসিং ছিলো।এবার পার্ফেক্ট।
।
কিভাবে জানলে শাড়ি পড়বো?
।
তোকে তোর থেকেও বেশি জানি আমি।।
।
উনার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।।এই ছেলেটা আমায় হাজারবার নতুন নতুন পদ্ধতিতে মুগ্ধ করে চলেছে ক্রমাগত।।সবার বয়ফ্রেন্ডের মতো দামি দামি গিফ্ট কখনোই দেয় না সে।।কিন্তু প্রত্যেকবারই অদ্ভুত সব কাজ করে অসাধারন কিছু মোমেন্ট ক্রিয়েট করে সে।।এগুলোতেই যে প্রশান্তি!! হঠাৎই উনি বলে উঠলেন,,,
।
তুই কাল থেকে দুই ঘন্টা করে রোদে দাঁড়িয়ে থাকবি।।এটা তোর হোমওয়ার্ক। বুঝলি?
।
কিন্তু কোনো? (অবাক হয়ে)
।
তুই ফরসা হয়ে যাচ্ছিস।।তোর উজ্জল শ্যাম রংটায় আমার চাই।।ফরসা হলে খুন করে ফেলবো।।
।
এহহ,,,নিজে যে সাদা ভূত সেটা??
।
ওটা আমায় মানায়,,আর এটা তোকে।।আমি এই তোকেটাকেই চাই সারাজীবন ,,উইথআউট এনি চেঞ্জেস।।এই বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ,,এক ফোঁটাও চেঞ্জ হবি না বলে দিলাম।
।
হুহ,,
।
আচ্ছা চুল খুলে রাখছিস কেন??খোঁপা কর।।দাঁড়া আমি করে দিচ্ছি,,কিভাবে করতে হয় সেটা বলে দে শুধু।।আজ নিজে হাতে খোঁপা বেঁধে বেলি ফুলের মালা জড়াবো তাতে।।
।
উনি খোঁপা করার চেষ্টা করছেন,,,আমি খিলখিল করে হাসছি আর উনি সমান তালে বকে চলেছেন।।।এভাবে বত্রিশ দাঁত বের করে হাসলে নাকি তার বুকে ব্যাথা করে।।ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে আম্মু ছাদে এসে হাজির।।আম্মুকে দেখেই সে বিদ্যুৎ বেগে উঠে দাঁড়ালো।আমিও লজ্জায় লাল,,,
।
কি রে শুভ্র কখন এলি?
।
এইতো কিছুক্ষণ ফুপি,,
।
তা হঠাৎ??
।
গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসছি।।ভালোবাসা দিবস বলে কথা।
।
ও তাই?তো কই তোর গার্লফ্রেন্ড??(ভ্রু কুচঁকে)
।
বা...বাড়িতে ওর বাপের বাড়িতে।।হেহেহে(জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে)
।
আচ্ছা??খুব ভালো,,তো রোদ?তোর হাতে এতো ফুল? কে দিলো?
।
এবার দুজনেই মাথা চুলকাতে লাগলাম।। মা যে বুঝে গেছে তা বেশ বুঝতে পারছি।।শুভ্র একটা গাঁজাখোরি যুক্তি দিতে গিয়েছিলো মা ওকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েই মুচকি হেসে বলে উঠলেন,,,
।
হয়েছে,,লাগবে না। বেশ বুঝতে পারছি।ড্রামা শেষ হলে খেতে আয়।।রোদ আজ বিরিয়ানি রান্না করেছে।।
।
কিহহহহ??আমার বউ...(মা তাকাতেই)মানে বোন,,আমার বোন রান্না করছে?
।
উনার কথায় মা হাসতে হাসতে নিচে নেমে গেলেন।।আমিও হাসতে হাসতে শেষ।।সেই হাসিতে মিশে আছে তার মুগ্ধতা, যে মুগ্ধতায় আমি হাজারবার মুগ্ধ হতে চাই।
.
কি রে?এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন?খুব সুন্দর লাগছে বুঝি আমায়? লাগারই কথা!!জানিস?বাসে তিনটা মেয়ে কনটিনিউয়াসলি পুরো ৫ ঘন্টা আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো।আই থিংক দে আর ক্রাশড অন মি।বাট আই এম সারপ্রাইজড দেট মেয়েগুলো এতোসময় ঘাড় বেকিয়ে তাকিয়ে থাকার পরও তাদের ঘার একদম ফিট।।কিভাবে সম্ভব?এই? তোর ঘাড়টা এদিকে আনতো দেখি...স্পেশাল কিছু লাগাস নাকি তোরা ঘাড়ে...
.
আমি কিছু না বলে বিরক্তি নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।।যেনো উনি আস্ত একটা বিরক্তির ডিব্বা।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তাতে উনার কোনো যায়ই আসছে না।।উনি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-
.
মেয়েগুলো আহাম্মকের চূড়ান্ত বুঝলি?উইথ আউট ব্রাশ করা একটা ছেলের প্রেমে পড়ে গেলো?স্ট্রেঞ্জ!!তাহলে বুঝতে পারছিস?আমি ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে গাড়িতে উঠলো মেয়েরা পুরাই ফিট মারবে।
.
তুমি চিটাগং টু ময়মনসিংহ চলে আসলে ব্রাশ না করেই??(অবাক হয়ে)
.
হ্যা তো?রাতে ঘুমই হচ্ছিলো না।বুঝতে পারছিলাম আমায় এখানে আসতে হবে..হবেই হবে,,নয়তো ঘুম হবে না।।তাই চারটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম হাঁটতে...হাঁটতে হাটঁতে বাসস্ট্যান্ড।।ভাবলাম আমি বাসের সামনে বাস আমার সামনে শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থেকে কি লাভ??তাই ঠুস করে উঠে গেলাম বাসে।।বাসে তো আর টুথপেষ্ট রাখে না..সো ব্রাশ করার প্রশ্নই আসে না।
.
আমি এবার ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।লাল টি-শার্ট,, এ্যাশ রঙের একটা থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট,,বামহাতে কালো রঙের ব্রেসলেট টাইপ কিছু একটা,, চুলগুলো অগোছালো।।দেখতে মাশাআল্লাহ সুন্দরই লাগছে পুরাই পাবনা ফেরত পাগল।এই অবস্থায় কেউ চিটাগং থেকে ময়মনসিংহ চলে আসতে পারে জানা ছিলো না।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম...
.
কি এতো ইম্পোর্টেট কাজ ছিলো যে তোমায় আসতেই হলো??
.
সেটা তোকে কেন বলবো?তোকে বলে আমার লাভ??নিজেকে কি তুই প্রেসিডেন্ট মনে করিস নাকি??এনিওয়ে?শুনলাম হাত ফাত কেটে বিদিগিস্তা অবস্থা করেছিস।কই দেখি কোন হাত?
.
তোমাকে দেখাবো কেন?তোমাকে দেখালে আমার লাভ?নিজেকে কি ডাক্তার মনে করো নাকি?এনিওয়ে?শুনলাম পাগল হয়ে গেছো,,পাবনায় ছিট টিট বুক করিয়েছো নাকি??
.
আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিস।এতো কথা কই পাস??কাহিনী কি?প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি। জানিস তো?পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে,,আর মেয়েদের কথা ফুটে প্রেমিকেরই তরে।।
.
ফাতরা লজিক।আর আমি প্রেম করলেই তোমার শশুড়ের কি শুনি?
.
আমার শশুড়েরই তো সব রে।তার মেয়ে প্রেমে পড়ছে... তার জামাইবাবাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।।এটা কি চিন্তার বিষয় না??
.
মানে?(কনফিউজড হয়ে)
.
মানে সহজ।তুই প্রেমে পড়লে ডেবিট ক্রেডিট সবদিক দিয়েই আমার শশুড়েরই লস।। বুঝলি?বুঝিস নি?
.
আমি মাথা নাড়িয়ে না জানালাম।।যার অর্থ আমি বুঝি নি। আমার প্রেমে পড়ার সাথে উনার শশুড়ের লাভ ক্ষতির সম্পর্ক কি হতে পারে?? আজিব!!
উনি আমার ব্যান্ডেজ করা হাতটা আলতো ভাবে হাতে তুলে নিলেন,,পকেট থেকে বেলিফুলের মালার গোছা বের করে,, একের পর এক পেঁচাতে লাগলেন হাতে।।রহস্যময়ী হাসি দিয়ে ধীর গলায় বলে উঠলেন-
.
ধর তুই পালিয়ে টালিয়ে গেলি তাহলে লস কার হবে?আলটিমেটলি আমার শশুড়ের।।তার আদরের মেয়ে,, আমার মতো সুদর্শন,,ভদ্র,,ইন্টেলিজেন্ট একটা জামাই রেখে কোন আহাম্মকের সাথে ভেগে যাচ্ছে বিষয়টা কেমন না??মানসম্মান তো ডাহা পানিতে,,তাও আবার ড্রেনের পানি।।
.
কথাটা বলে আমার নাকটা টেনে দিয়ে হেঁটে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলেন।আমি আহাম্মকের মতো বসে আছি।। আমি ভাগলে উনার শশুরের মানসম্মান কেন পানিতে থাকবে??উনি কি ইন্ডাইরেক্টলি আমার বাবাকে শশুর ডেকে গেলেন??অদ্ভুত!!!
.
এখানে কি করছেন আপনি?আপনার সাহস দেখে আমি হতবাক!!
.
উনি আমার কথাটাকে যেনো জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেললেন।বাঁকা হাসি দিয়ে চিন্তিত মুখে বলে উঠলেন-
.
এই তুই যে ঘুমোনোর সময় এমন ভুসভুস করে নিশ্বাস ছাড়িস জানা ছিলো না তো...আবার দেখি ফুসফুস করে কথাও বলিস...কি মারাত্মক ব্যাপার!!তোকে পুরোপুরি গরু গরু লাগছিলো রে।তোর বর তো রাতে তোর এমন ভুসভুস ফুসফুস শব্দ শুনে রীতিমতো হার্ট অ্যাটাক করবে ।
.
উনার কথায় মেজাজটায় খারাপ হয়ে গেলো।।মনে মনে চরম কিছু গালি দিয়ে দিলাম মুহূর্তেই।আমি ঘুমালে ভুস ভুস শব্দ করি না ঠুসঠুস শব্দ করি তাতে উনার বাপের কি?যত্তসব আবাল জাতি!!কিন্তু মুখে বললাম-
.
সেটা আমার আর আমার বরের ব্যাপার।তুমি আমার বরকে নিয়ে চিন্তা করে প্রেশার বাড়াচ্ছো কেন বুঝলাম না!!
.
কি বলছিস তুই? আমি প্রেশার বাড়াবো না?অবশ্যই বাড়াবো...তোর বাপে তো তোকে সরকারি চাকরীওয়ালা ছাড়া বিয়ে দিবে না।তুই ভাবতে পারছিস, একজন সরকারি চাকুরীজীবি আমাদের দেশের কতো বড় সম্পদ!!আর তোর মতো একটা ভুসভুস করা মেয়েকে বিয়ে করে দেশের এতোবড় সম্পদ রাতের আধাঁরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে... তা আমি একজন ভার্সিটি ছাত্র হয়ে হতে দিতে পারি?? কিছুতেই হতে দিতে পারি না।।কিছুতেই না...
.
শুভ্র ভাইয়ার কথায় উনার চুলগুলো টেনে ছেঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।।এক সেকেন্ডেই দেশের সচেতন নাগরিক হয়ে গেছেন উনি...যে কি না কোল্ড ড্রিংকস্ এর বোতল রাস্তায় ছুঁড়ে মারে সে মুহূর্তেই নিজেকে সুনাগরিক দাবি করছে,, ভাবা যায়??হুহ।
.
আমার ঘুমের জন্য কেউ হার্ট আট্যাক হয়ে মরে যাবে?আশ্চর্য!!তাহলে তুমি যে এতোক্ষণ ঝুঁকে ঝুঁকে আমার ভুসভুস ফুসফুস ঠুসঠুস শব্দ শুনছিলে তাতে তুমি হার্ট আট্যাক করলে না কেন শুনি??
.
আরে....আমি তো হলাম স্ট্রং বয় তাই এসব আট্যাক ফ্যাটাকে আমার কিচ্ছু হয় না।।এসব কথা বাদ দে...একটু কাছে এসে বোস তো..তোকে একটা জরুরি কথা বলবো...আয়...
.
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই উনি আবারও তাড়া দিয়ে উঠলেন-
.
কি রে কাছে আসতে বললাম তো।।তাড়াতাড়ি আয়...আমার তো কনসেনট্রেশান ব্রেক হচ্ছে রে বাবা!!
.
আমি চুপচাপ উনার দিকে একটু এগিয়ে বসলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললেন-
.
ওরে বাবা...তুই তো সো ফাস্ট।।ওড়না টুড়না কি সব তোর ড্রেস আপ সেন্স থেকে আউট করে দিয়েছিস নাকি?তবে তেমন খারাপ লাগছে না...
.
উনার কথায় নিজের দিকে তাকিয়েই চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম...আমার গায়ে ওড়না নেই!! ওহ শিট।।তাড়াতাড়ি আশেপাশে হাঁতরিয়ে ওড়না খুঁজতে লাগলাম।।দরকারের সময় দরকারী জিনিসগুলো কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না...এবার যে পাবো তাও আশা করতে পারলাম না।।অসহায় দৃষ্টিতে কম্বল ধরে টান দিতেই......উনি হাসতে হাসতে পাশের টি-টেবিল থেকে ওড়নাটা নিয়ে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারলেন।লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার উপক্রম আমার!!ছিহ ছিহ...।উনি আগের মতো স্বাভাবিক গলায় ফিসফিস করে বলে উঠলেন-
.
কিরে বললাম না জরুরি কথা বলবো? এগিয়ে আয়!!
.
কথাটা বলে অপেক্ষা না করে নিজেই একটু চেপে এসে বলে উঠলেন-
.
এই রোদু....স্বপ্নে প্রেম টেম করিস নাকি?এতো ফুসফাসের কারণ কি?(ভ্রু নাচিয়ে)বিষয়টা কিন্তু ব্যাপক চিন্তার বুঝলি?তোর বাপ শুনলে তো সোজা হার্ট অ্যাটাক.... মাইয়া তার স্বপ্নেও প্রেম করে...ভাবা যায়??
.
এই মুহূর্তে উনাকে চরম কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করছে আমার।।যা শুনলে উনি কান চেপে ধরে বলবেন-" ছেঁড়ে দে মা... কেঁদে বাঁচি" কিন্তু সমস্যা হলো এই জাতীয় কোনো গালি এই মুহূর্তে মনেই পড়ছে না।।মার প্রতি খুব বিরক্ত লাগছে এবার...মা সব শিখিয়েছে গালিটা কেনো শেখায় নি বুঝতে পারছি না।তাহলে এই অতি অভদ্র লোকটিকে অতি ভদ্রতার সাথে কিছু গালি উপহার দেওয়া যেতো।হুহ...আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে উনি আবারও বলে উঠলেন-
.
কি রে বললি না যে।।স্বপ্নে প্রেম টেম করছিলি নাকি??কোন স্টেপ পর্যন্ত পৌঁছেছে তোদের প্রেম?হাত ধরাধরি নাকি এরও আগে...বুঝতে পারছিস তো কি বলছি?
.
এবার আর নেওয়া যাচ্ছে না।।ইচ্চে তো করছে একটা লাথি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিই উনাকে। ইচ্ছেটাকে সংবরণ করে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম-
.
গেইট লস্ট!! বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে।।বিনা অনুমতিতে একটা মেয়ের রুমে ঢুকে যাওয়াটা কোনো ভদ্রলোকের বিহেভিয়ারের মধ্যে পড়ে বলে আমার মনে হয় না।।খুব তো সুনাগরিক সুনাগরিক করে দেশ উদ্ধার করছিলে... মেয়েদের রুমে ঢুকে যাওয়া সুনাগরিকের কয় নম্বর নীতি বলবে প্লিজ??(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
উনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন -"নিজের বউয়ের রুমে আসতে পারমিশন লাগে নাকি, বোকা!!" উনার কথায় চোখ মুখ লাল করে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলাম..."মানে?" উনি হুট করে আমার গালে একটা চুমু খেয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন...যেতে যেতে বলে গেলেন.." মানে হলো... তুই বড্ড বোকা !!"আমি রোবটের মতো বসে আছি।। কোনো সেন্স কাজ করছে না আমার।।রিয়েক্ট বাটন নষ্ট হয়ে গেলো না তো??কি মারাত্মক ব্যাপার...মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরছে..."এটা কি হলো?" "এটা কি হলো?" কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলাম।।আড্ডার আসর মেতে উঠেছে চরম ভাবে ঠিক তখনই কোথা থেকে আমার ফুপির ছোট্ট মেয়েটা দৌড়ে এসে শুভ্র ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-" দাদাভাই?তুমি যে তখন রোদাপু কে পাপ্পি দিলে আমায় দিবে না?আমারও পাপ্পি চাই...চাই-ই চাই" ওর কথায় শুভ্র ভাইয়া বিষম খেলেন।।সবাই অবাক দৃষ্টিতে একবার আমার দিকে তো আবার শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে।।আমি আবারও বরফ হয়ে বসে রইলাম।।মাথায় আবারও একটা কথায় ঘুরছে...এটা কি হলো???
.
এই রোদু তুই নাকি দুঃখভরা পোষ্ট দিয়ে আকাশে বাতাসে দুঃখ ছড়াচ্ছিস??তাই এই বালতিটা আনলাম বুঝলি?
.
আমি মাথা নাড়লাম যার অর্থ আমি বুঝি নি।দুঃখের সাথে বালতির কি সম্পর্ক হতে পারে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না আমি।।বিস্ফারিত চোখে বলে উঠলাম-
.
দুঃখের সাথে বালতির কি সম্পর্ক শুভ্র ভাই?
.
উনি বিরক্ত মুখে বলে উঠলেন-
.
আহ্ রোদ...তুই তো দেখি নিম্নশ্রেণীর বোকা।আরে...বালতিটা কিনেছি তোর দুঃখ জমিয়ে রাখার জন্য...এভাবে আকাশে বাতাসে দুঃখ না উড়িয়ে জমিয়ে রাখ বুঝলি?বাংলাদেশে কখন কি মার্কেট পেয়ে যায় বলা মুশকিল....দেখা গেলো দুঃখ বেঁচে তুই বিল গেটস টাইপ কেউ একজন হয়ে গলি।।বালতিটা কিন্তু আর. এফ. এল এর...ফাটাফাটির কোনো ভয় নেই বুঝলি?নির্ভয়ে কষ্ট জমা।।তুই একটা কাজ করতে পারিস...একটা টার্গেট ঠিক করে ফেলতে পারিস যে প্রতিদিন ঠিক কতো লিটার করে কষ্ট জমাবি...
.
আমি নাক মুখ কুঁচকে দাড়িয়ে আছি।এই মানুষটা যে আমাকে পচাঁনো ছাড়া ভালো কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এ বাড়িতে পা রাখতে পারে না তা প্রমানিত!!আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলেন উনি-
.
কি রে?এমন পাবদা মাছের মতো "হা" করে তাকিয়ে আছিস কেন? বালতি পছন্দ হয় নি?
.
না পছন্দ হয় নি।আপনার কি মনে হচ্ছে না শুভ্র ভাই?আমার কষ্টের তুলনায় বালতিটা একটু বেশিই ছোট!!
.
বলিস কি রে?বেশি ছোট হয়ে গেছে?দোকানের সবচেয়ে বড় সাইজের বালতিটাই তো আনলাম!!দোকানদার কি আমায় ঠকিয়ে দিলো রে রোদু?
.
নাহ শুভ্র ভাই!!দোকানদার আপনাকে ঠকায় নি....আপনার উচিত ছিলো একটা টাংকি কেনা.... বিশাল টাংকি..বুঝলেন??
.
টাংকি?? ফাজলামো করিস তুই আমার সাথে?টাংকিটা রাখতি কোথায় তুই?তোর বাপের টাকে??এনিওয়ে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে রেখেছিস কেন??খোল বলছি...দেখতে তো পুরাই পেত্নী পেত্নী লাগছে তোকে!!হুমায়ুন আহমেদের একটা কথা আছে-" মেয়েরা যদি জানতো মাথায় তোয়ালে জড়ানো অবস্থায় তাদের পেত্নীর মতো লাগে তাহলে মিনিটে মিনিটে ফিট খেতো।"
.
উনার কথা শুনে আমি হতবাক।।মেয়েরা ফিট খেতো কিনা জানি না তবে উনার কথা শুনে হুমায়ুন আহমেদ যে ফিট খেতো তা আমি নিশ্চিত...আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলাম-
.
এমন কোনো কথা হুমায়ুন আহমেদ বলে নি শুভ্র ভাই...উনি খুব সুন্দর কিছু বলেছিলেন।যেমন ধরো " মেয়েরা যদি জানতো মাথায় তোয়ালে জড়ানো অবস্থায় তাদের সব চেয়ে বেশি সুন্দর লাগে তাহলে বিয়ের দাওয়াতগুলোতেও মেয়েরা মাথায় তোয়ালে জড়িয়েই যেতে" এমন টাইপ কিছু একটা বলেছিলেন উনি।।আর আপনি তো পুরো ব্যাপারটাকেই ঘুরিয়ে দিলেন।
.
তোকে দেখে যে ফিলিংসটা হলো সেটাই হুমায়ুন আহমেদের উক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করলাম বুঝলি??তুই যদি এমন পেচিয়ে পুচিয়ে বিয়ে বাড়ি যাস তো সব ছেলের বুকই কেঁপে উঠবে,,,সেন্সও হারাতে পারে....পেত্নী দেখে কে না ভয় পায় বল??সবাই তো আর আমার মতো সাহসী নয়!!
.
উনার কথায় গা জ্বালা করছে আমার।।এখনই যে মাথা ব্যাথাটা শুরু হবে তাও বুঝতে পারছি।।শুভ্র ভাই যতোবার আসেন ততোবারই মাথা ব্যাথার উপসর্গটা দেখা দেয় আমার....উনি হলেন একজন জ্বলজ্যান্ত মাথা ব্যাথা!!হঠাৎ করেই ওঠে এসে আমার ঠিক সামনে দাঁড়ালেন উনি...মাথা থেকে টাওয়ালটা একটানে খুলে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে উঠলেন-
.
খুব টায়ার্ড লাগছে রে?ভেজা টাওয়ালে মুখ মুছলে ক্লান্তি ২ মিনিটে ৪০% কমে যায়....
.
কথাটা বলে টাওয়াল টা বাম হাত থেকে ডান হাতে রেখে বাম হাতে আমার কিছু চুল নাকের কাছে নিয়ে জোড়ে একটা শ্বাস টেনে নিয়েই চোখ বন্ধ করলেন উনি।চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে চোখটা মেলেই বলে উঠলেন-
.
কি মারাত্মক ব্যাপার রে রোদু!!তোর চুলে কি দুর্গন্ধ!!করোনা রোগীদের শ্বাস কষ্টের মূলীভূত কারণ যে তোর দুর্গন্ধ চুল তা তো জানা ছিলো না।।তোর এই চুলের গন্ধ শুকলে তো বিনা নোটিশে হার্ট আট্যাক।
.
উনার কথায় রাগে পিত্তি জ্বলে গেলো আমার।।মাত্র শ্যাম্পু করে বেরোলাম আর মহাশয় বলছে আমার চুলে গন্ধ!! তাও যেন তেন গন্ধ নয় হার্ট আট্যাক টাইপ গন্ধ... ভাবা যায়??রাগী কন্ঠে বলে উঠলাম আমি-
.
এতোই যেহেতু গন্ধ তো আপনি এখনো ঠিক আছেন কিভাবে??আপনার হার্ট আট্যাক হলো না কেন শুনি??শ্বাস কষ্ট হচ্ছে বলেও তো মনে হচ্ছে না...
.
আমার কথা শুনে হালকা টলে উঠে...কাঁপা গলায় বলে উঠলেন-
.
কে বললো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে না?ভয়ানক শ্বাসকষ্ট হচ্ছে.... দেখ? দাঁড়িয়েই থাকতে পারছি না....বুকেও তো ব্যাথা করছে রে!!এবার বুঝি আমি শেষ...
.
কথাটা বলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন উনি।।চোখদুটো বন্ধ।আমি চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি। কি ড্রামাবাজ লোক রে বাবা।বেশকিছুক্ষণ পরও কোনো নড়নচড়ন না দেখে উনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।।উনার উপর ঝুঁকে পড়ে চোখের উপর হাত নাড়লাম....কিন্তু নাহ! নো রিয়েকশন!!পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নেবো বলে সোজা হতে নিলেই বাম হাতে উনার উপর পড়া আমার ভেজা চুলগুলো আবারও টেনে ধরলেন উনি....ডানহাতে পকেট থেকে টিপের পাতা বের করে তার থেকে ছোট্ট কালো টিপটা লাগিয়ে দিলেন আমার ভেজা কপালে।।আমি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছি।।উনি স্বাভাবিকভাবেই উঠে বসে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন-"পেত্নী লাগছে তোকে" চুপচাপ বসে আছি আমি....মাথাটা ঝিমঝিম করছে আমার।।পকেট থেকে আরো দুটো টিপের পাতা বের করে পাশে রেখেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি।।রুম থেকেই কানে আসছে স্বাভাবিক ঝরঝরে কন্ঠে আম্মুর কাছ থেকে কফি চাইছেন তিনি।তাহলে আমার শরীরটা কাঁপছে কেন??কেন জানি মনে হচ্ছে কালো টিপটাই খুব সুন্দর লাগছে আমায়।।কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে ইচ্ছে করছে না...থাকুক না একটু কৌতূহল .... মাথারা ব্যাথাটা শুরু হয়ে গেছে আবার....ইশশ কি যন্ত্রণা...শুভ্রময় যন্ত্রণা..
.
কি রে রোদু...রান্না ঘরে কি করিস তুই??ব্রাস্ট টাস্ট করার পরিকল্পনা আছে নাকি???
.
রান্নাঘরে সবাই রান্না করতেই ঢুকে শুভ্র ভাই....কখনো কেউ ফুটবল খেলতে ঢুকেছে বলে তো মনে হয় না...
.
ওহহো তুই তাহলে রান্না করতে ঢুকেছিস ??তাহলে তো হলোই.... আমি বরং যাই আর্মির পেদানো খেয়ে হলেও কয়েক পাতা মেট্রো টেবলেট আনি...
.
মেট্রো টেবলেট দিয়ে কি হবে??(ভ্রু কুঁচকে)
.
তোর এই থার্ডক্লাস খাবার খেয়ে পেটের সমস্যা তো অনিবার্য।। আমি এতো রেসপন্সেবল ছেলে হয়ে তো আর ফুপ্পি ফুপাকে বাথরুমে দৌড়াতে দেখতে পারি না...তাই আগে থেকেই মেডিসিন রেডি....ব্রেকফাস্ট শেষ হতেই টুস করে একটা টেবলেট গিলে ফেলবে...ব্যাস খতম...
.
উনার কথায় রেগে রগণচন্ডী রূপ ধারণ করলাম আমি।আমার রান্না থার্ডক্লাস??এতো বড় অপমান!!নাক মুখ ফুলিয়ে রাগী চোখে উনার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম-
.
আমার রান্নার কথা বাদ দেন...আপনি নিজে কি হ্যা??আপনি তো কোনো ক্লাসেই পড়েন না....এমন ক্লাসহীন মানুষেরই হাইক্লাস খাবার খেলে মেট্রো টেবলেটের জন্য দৌড়াদৌড়ি করা লাগে।। এজ লাইক ইউউউ...
.
কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিলাম আমি।।বেশি বলে ফেলেছি মনে হয়।এতোটুকু বলা মোটেও উচিত হয় নি আমার....নিশ্চয় এবার ভূবন কাঁপানো থাপ্পড় পড়বে আমার গালে।।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মুচকি হাসলেন উনি...রান্না ঘরের দরজায় ঠেস দিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়েই বলে উঠলেন-
.
নিজেরটা আমার উপর চালাচ্ছিস রোদু। তোর তো আমার ক্লাস সম্পর্কে ধারনায় নাই...জানিস ভার্সিটিতে মেয়ে ....
.
উনার মুখে মেয়ে কথাটা শুনে বেখেয়ালিভাবে উনার দিকে তাকিয়েই পেঁয়াজ ছুড়লাম তেলে...সাথে সাথেই তেল ছিঁটে কি বিশ্রী অবস্থা!!!উনি তাড়াহুড়ো করে আমাকে সরিয়ে দাঁড় করিয়েই বলে উঠলেন-
.
এখনই তো পুড়ে মরতি রোদু.....ওখানেই দাঁড়া এদিকে আসবি না একদম...কোথাও লাগে নি তো??জ্বলছে কোথাও??তুই বরং এক কাজ কর...কি করতে হবে আমায় বল আমি করে দিচ্ছি...
.
উনার কথায় অবাক হলাম আমি।।ভূতের মুখে রাম নাম।।উনি আর রান্না?জীবনে রান্নাঘরে ঢুকেছেন কিনা সন্দেহ।চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলাম-
.
আপনি রান্না করবেন??পাগল নাকি??এসব আপনার দ্বারা হবে না...সরুন তো।। পরে দেখা যাবে তেল টেল ছিটিয়ে নিজেই পুড়ে যাবেন....
.
একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।।যেখানে দাঁড়াতে বলছি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক।আমি পুড়লে পুড়লাম।।তুই তো পুড়বি না তাতেই হবে।।
.
আজব তো!!আপনি পুড়লে সমস্যা নেই তো আমি পুড়লে কি সমস্যা??আমার শরীর আমি পুড়াবো তাতে আপনার কি??সরুন তো...আমি রান্না করবো মানে করবো!!
.
এহহহ বললেই হলো??তোর শরীরের উপর তোর অধিকার খুবই অল্প বুঝলি??আর তাছাড়া মেয়ে মানুষ তুই...এমনি তো এটম বম...মানুষ তো তোর পাশে ঘেষতেই ভয় পায়...পরে দেখা যাবে...পুড়ে টুড়ে কয়লা হয়ে আছিস..তখন বিয়ে দেওয়া কতো কষ্টের হবে ভাবতে পারছিস??আহারে...আমার তো তোর বাপের কথা ভাবতেই স্যামপেথি স্যামপেথি ফিলিংস আসছে রে!!তাই বলছি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক...বেশি লাফালাফি করবি তো তুলে নিয়ে ছাঁদ থেকে ফেলে দিবো।।সো নো নড়াচড়া...একবার নড়াচড়ার করলে দুটো করে থাপ্পড়।। দুই গালে দুটো!!একটা দিলে নাকি বিয়ে হয় না??তাই দুটো.....কুসংস্কার হলেও রিস্ক নেওয়া যাবে না।।পরে দেখা যাবে....তোর বিয়ে হচ্ছে না বলে আমিও চিরকুমার থেকে গেলাম!!নো!! নো ওয়ে...বিয়ে তো আমায় করতেই হবে...দেশের প্রডাকশন বাড়ানোর মতো একটা মহান কর্তব্য আমার পালন করতে হবে না??অবশ্যই হবে।। আমি তো ডিশিসন নিয়ে নিয়েছি বছরে বছরে একজন করে..
.
উনার কথায় আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম উনি রান্না থেকে বিয়ে...বিয়ে থেকে বাচ্চা পর্যন্ত চলে গেছেন।।কি সাংঘাতিক ব্যাপার।।আমি চোখ বড় বড় করে জিগ্যেস করলাম-
.
আমার বিয়ের সাথে আপনার বিয়ের কি সম্পর্ক শুভ্র ভাই।।আপনি চাইলে এখনি বিয়ে করতে পারেন....চিরকুমার থাকবেন কেন??
.
আরে এখন কেমনে?? বউ তো ছোট অনেক...ছোট বউ বিয়ে করলে তো আরেক প্যারা....এভাবে "হা" তাকিয়ে থাকিস না তো!!এসব গম্ভীর বিষয় তুই বুঝবি না... তুই তো থার্ড গ্রেডের বোকা রে রোদু।।
.
উনি আমার সাথে কথা বলতে বলতেই মাংস বসিয়ে দিলেন চুলোয়...বাহ!!এই খাটাস আবার রান্নাও পারে নাকি??আমি বিস্ময় নিয়ে সসপেনের দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎই উনি চোখ কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
.
কি রে? ঘোড়ার মতো সামনে চুল কেটেছিস দেখি।।কপালে পিম্পল হয়েছে নাকি?পিম্পল ঢাকার জন্য এই স্টাইল করেছিস??একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে....এমনি তো বাচ্চা দেখায় তোকে এখন তো একদমই....(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) একটু বড় হওয়ার ট্রাই করতে পারিস না??দিন দিন যে হারে ছোট হচ্ছিস .. ভবিষ্যতে তো তোর বাচ্চারাও কনফিউজড হয়ে যাবে....মা ডাকবে নাকি বাবু!!!ফর্সাও হয়েছিস দেখছি....তোকে না বলেছি রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে??একটা কথাও তো শুনিস না....চূড়ান্ত ফাজিল হয়েছিস তুই!!
.
উনার কথায় রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে আমার।।অসীম রাগ নিয়ে কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই আম্মু বিস্ময় মাখা কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
এই রোদ?তুই না জোড় করে রান্না করতে এলি??এতো জোড়াজুড়ি করে এসে এখন ছেলেটাকে দিয়ে খাটাচ্ছিস??
.
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই শুভ্র ভাইয়া দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
ফুপ্পি?তোমার ছোট মেয়েটা যে চূড়ান্ত রকম ফাজিল হয়েছে তা কি তুমি জানো??আমি বাসায় ঢুকতেই বলে উঠলো...শুভ্র ভাই? ফুপির বাড়ি তো মানুষ মাসেও আসে না...আর আপনি তো চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন থেকে সপ্তাহে দু'বার করে চলে আসেন...এসব কি??এতো ঘন ঘন আসার জন্য আপনাকে পানিশমেন্ট দেওয়া উচিত।। আর আপনার পানিশমেন্ট হলো...এখানে এসে রান্না করবেন।।ফুপ্পি?আমি ওকে বললাম তাহলে আমি চলে যাই...আর আসবো না।।আমার কথাটা শুনেই নাক মুখ ফুলিয়ে কি বললো জানো??
.
আম্মু তখন রাগের চরম পর্যায়ে।।কোনো রকম রাগ ধমন করে বললেন-"কি বললো??" সাথে সাথেই গভীর উৎসাহ নিয়ে বলে উঠলেন উনি-
.
ও বললো...না আসলে না আসবেন...কিন্তু আজকে রান্না না করে যেতে পারবেন না।।আগে রান্না করুন তারপর বিদেয় হোন।।তুমি বুঝতে পারছো ফুপ্পি??কতো বড় অপমান!!!
.
কিহ?এতোবড় সাহস ওর??একটা থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদপ মেয়ে।।(কাঁদো কাঁদো গলায়) আমার একমাত্র ভাইয়ের একটা মাত্র ছেলেকে তোরা এভাবে অপমান করিস??আজ তোর বাপের বোনের ছেলে আসলে তো তুলে তুলে খাওয়াতি।।আমার ভাইয়ের ছেলে বলেই এতো কথা??শুভ্র??তুই প্রতিদিন এই বাড়িতে আসবি...দেখি কে কি বলে....ফাজিল মেয়ে কোথাকার....বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখিস নি.??
.
রাগে আমার মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম।। রাগী চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।।উনি মার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন-
.
দেখো ফুপ্পি কিভাবে তাকাচ্ছে!!আমি আর আসবো না তোমাদের বাসায়।।তুমি রোদু কে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে ফুপ্পি!!আমরা তো তাড়িয়ে দিবোই না পারলে পার্মানেন্টলিই রেখে দিবো...এভাবে কাজ করাবো না একদম....বরং আদর-যত্ন করে রাখবো হুহ।।যত্নের মধ্যে রান্না করে খাওয়াবো....আর আদর তো আদরই.. আদর তো কতো ধরনেরই হয়!!সব আদরই ফ্রী...(দাঁত কেলিয়ে)
.
মা উনার কথায় কি বুঝলেন আল্লাহ মালুম।।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
দেখেছিস কতো ভালোবাসে ও তোদের??আর তোরা??ছি ছি...এই দিনটিও দেখতে হলো আমাকে..??
.
আম্মু যখন আহাজারি করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই আমার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডান চোখ টা টিপেই বলে উঠলেন- "যাবি নাকি আদর খেতে??"
.
আমি কোনো কথা না বলে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।।এখানে দাঁড়ানো আর সম্ভব নয়... কিছুতেই না....আর একটু দাঁড়ালে এই ব্যাক্তিটাকে খুনই করে ফেলবো আমি!!উফফ...কি বিরক্তিকর!!