> স্মৃতিগন্ধা
-->

স্মৃতিগন্ধা


বইয়ের নামঃ স্মৃতিগন্ধা 
লেখকঃ সাদাত হোসাইন 
প্রকাশনীঃ অন্যধারা

~জানি যাচ্ছি,ফেলে সন্ধ্যা 
সাথে তোমাকেও,স্মৃতিগন্ধা!

★কাহিনিসংক্ষেপঃ 

ভূবনডাঙা গ্রামে মহিতোষ মাস্টার ও তার পরিবার নিয়ে মূলত উপন্যাসটি। মুক্তিযুদ্ধে অনেক হিন্দু পরিবার বর্ডার পেরিয়ে পাশের দেশে চলে গিয়েছিলেন। আবার অনেকে দেশের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে আত্মীয়-পরিজন ছাড়া একা রয়ে গেছে এই দেশে। সেরকম একটি পরিবার হচ্ছে মহিতোষ মাস্টারের পরিবার। কিন্তু দুটো অল্প বয়সী মেয়ে ঘরে নিয়ে পড়লেন বড় বিপদে! প্রায় রাতে টিনের চালে ঢিল পড়ে। বিভিন্ন সমস্যায় ভীত হয়ে প্রিয় মাতৃভূমি, নিজের বসতভিটা ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মহিতোষ মাস্টার৷ জমি বিক্রি করতে গিয়ে পড়েন আরেক বিপদে। গ্রামের জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার ষড়যন্ত্রে কেউই তাঁর জমি কিনতে চান না। জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া নামমাত্র মূল্যে কিংবা বিনামূল্যে ঐ জমি নেয়ার ফন্দি আঁটেন। ভয় দেখিয়ে, বিপদে ফেলে জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া কি সফল হবেন জমির মালিক হতে? নাকি মহিতোষ মাস্টারের ভাগ্য তার প্রতি সহায় হবে? 

মহিতোষ মাস্টারের দুই মেয়ে; চারু ও পারু। ভিন্নধর্মী প্রেম টা এখনও  আমাদের দেশে অনেক বড় ব্যাপার। আর তখনকার প্রেক্ষাপটে তো এই ব্যাপারটা অনেক ভয়ংকর অপরাধ। সেরকম অপরাধ  করে বসে পারু ও ফরিদ। একদিকে তার বাবা দেশ ছেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন,অন্যদিকে সে ভালোবেসে ফেলেছে গ্রামের মুসলমান ছেলেকে। এক সময় ভালোবেসে ফরিদের হাত ধরে হারিয়ে যায় পারু।কিন্তু মহিতোষ তো বাবা। সে নেমে পড়ে মেয়ের খোঁজে। যতদিন মেয়েকে না পাবে সে ও পরিবারের কাছে ফিরবে না। তারপর কি হয়? অজানা গন্তব্যের দিকে ছুঁটে যাওয়া পারু-ফরিদের যাত্রা কি শেষ হবে? মহিতোষ কি খুঁজে পাবে তার মেয়েকে?

দেশ ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট,ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট,চিরচেনা জায়গা ছেড়ে পরবাসে যাওয়ার কষ্ট, এত টুইস্ট,এত ষড়যন্ত্র সবকিছু ছাঁপিয়ে বারবার মেয়ের জন্য বাবার হাহাকার টা বারবার মনে দাগ কেটে যায়। সারাক্ষণ মনে হবে, ইশ!একটু ওদের দেখা হয়ে যাক৷ 

মহিতোষ মাস্টার যার অনেক পরিচয়ের মধ্যে প্রধান পরিচয় হলো উনি পারুর বাবা। মমতাময়ী মায়ের উদাহরণ, গল্প, উপন্যাসের তো অভাব নেই। এই উপন্যাস একজন মমতাময়ী বাবার উপন্যাস।

★পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 

সামনের কাহিনি আন্দাজ করতে করতে এগোনো আমার স্বভাব। এই বইটি পড়ার সময়ে তার ব্যতিক্রম হয় নি।কিন্তু বারবার আমি ধোঁকা খাচ্ছিলাম।যখন যা ভেবেছি তাতেই ভুল প্রমাণিত হচ্ছিলাম।  মহিতোষ মাস্টারের জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম আবার পারুর জন্যও তার থেকে কিছু কম নয়। বারবার নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করছিলাম,আমি বেঁচে থাকতে যাতে কখনো আমার বাবার এরকম দিন না আসে! 

"আচ্ছা মানুষ যখন সীমানা পেরোয়, তাহলে তার দুঃখগুলোও কি সীমানা পেরোয়? না-কি কাঁটাতারে আটকে থাকে? না-কি দুঃখগুলো পাখির মতো, সে দেশ, সীমানা, কাঁটাতারের কিছুই বোঝে না! সে কেবল মানুষ বোঝে, মানুষ!" এই লাইনগুলো যখন পড়ছিলাম তখনকার অনুভূতিটা কখনোই লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। নিজের বাসা ছেড়ে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে গেলেও মন কেমন করে! সেখানে নিচের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া! ভাবলেও আঁতকে উঠি। 

বইটায় ছোট ছোট কবিতাগুলো বরাবরের মতোই চার লাইনে চারশ লাইন অনুভূতি প্রকাশের মতো। বইয়ের পেইজ যত শেষ হচ্ছিল তত মন খারাপ হচ্ছিল। এই মন খারাপ ভাবটা আগামী বছর ২য় খন্ড আসার আগে কাটবে না। 

★প্রিয় কিছু লাইনঃ 

~ভালোবাসার জন্য আলাদা কোনো রূপ বা গুণের প্রয়োজন পড়ে না। ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন হয় কেবল ভালোবাসারই।

~দেশের মানুষ খারাপ হতে পারে, কিন্তু দেশ কখনো খারাপ হয় না। তেমনি ধর্মের মানুষ খারাপ হতে পারে,কিন্তু ধর্ম কখনো খারাপ হয় না। 

~যে অভিমান বোঝে না, সে আবার কিসের প্রেমিক? প্রেমিক হতে হলে অভিমান বুঝতে হয়।

~জগতে এমন কিছু মানুষ থাকে,যাদের উপস্থিতির চেয়ে অনুপস্থিতিই বেশি তীব্র হয়ে ওঠে। 

★অনুভূতিকথনঃ 

বইটা টেবিলে রেখে দিয়েছিলাম ২য় খন্ড আসলে একবারে পড়বো বলে। প্রিয় লেখকের বই না পড়ে রেখে দেয়া যে আমার জন্য কত কঠিন সেটা একমাত্র আমি জানি আর আল্লাহ জানেন! আর সেই আমি মার্চের ২৩ তারিখে কিনা বই শুরু করলাম এপ্রিলের ২৯ তারিখ। প্ল্যান ছিল একটু একটু করে পড়বো। কিন্তু শুরু করার পর শেষ না করে উঠতে পারলাম না। আর এখন কিভাবে এত অপেক্ষা করব বুঝে উঠতে পারছি না। প্রতিবার ই সাদাত ভাইয়ার বই পড়া শেষে কিছুক্ষণ বসে থাকি। কি হলো ভাবতে থাকি! এবার ও ব্যতিক্রম নয়। এই বইটা পড়ার আগে পর্যন্ত  সাদাত ভাইয়ার লিখা আমার সবচেয়ে প্রিয় বই "নির্বাসন" ছিল। আর এখন এই বইটা সবচেয়ে প্রিয়। 

"যেতে যেতেও ফিরে আসবার বাহানা কুড়াই" লাইনটার মতো ই স্মৃতিগন্ধা ফিরে আসুক। ২য় খন্ড টা তাড়াতাড়ি আসুক। 

রেটিংঃ ৫/৫
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner