আয়িশা (রাঃ) এর মন খারাপ। রাসূলের সঙ্গে কি একটা ঠুনকো কারণে যেন হঠাৎ ই অভিমান করে বসেছেন। স্বচ্ছ কাচের মতো কিশোরী মন তো, একটু আচরেই গভীর দাগ পরে যায়।
অভিমানে সকাল থেকে না খাওয়া। কিশোরী মুখটা এতটুকুন হয়ে আছে মর্মযাতনায়। রাসূল ও সকাল থেকে ঘরে নেই। সেই যে বেরিয়েছেন, আর ফেরার নামটি নেই। একা একা অভিমান আর কতক্ষণ আগলে রাখা যায়? একজন যে তাঁর মুখ থেকে একটু সুরেলা ডাক শুনার জন্য বসে আছে, সেদিকে কি তাঁর কোনো খেয়াল আছে?বুক ফেটে কান্না আসছে কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কাঁদতে পারছেন না। আর রাসূলের অন্য স্ত্রীরা যদি জানতে পারেন যে এই সামান্য কারণে আয়িশা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন, কি হাসাহাসিটাই না করবেন তারা!
তাহলে একা একা এখন কি করবেন অভিমানী আয়িশা?এ যাতনা তাঁর যে আর সহ্য হচ্ছে না!কখন আসবেন তিঁনি? কখন ডাকবেন প্রিয়তম নাম ধরে?
ঘরের দরজায় টোকা পরল। মুহুর্তে আয়িশার মুখে দেখা দিল ভরা চন্দ্রিমার রোশনাই। হৃদয়টা কেমন খলবলিয়ে উঠল। মনে হচ্ছে এতক্ষনের অভিমানে জমানো কথা সব একসঙ্গে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তিঁনিও কঠিন পাত্রী!
সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আয়িশা সালামের জবাব দিলেন, তবে মোটেও ফিরে তাকালেন না তাঁর দিকে। এত সহজে হেরে যাওয়ার পাত্রী নন তিঁনি!বুকভরা অভিমান এত সস্তাদরে বিকোবেন না। মহামূল্যে কিনতে হবে আজ।তিঁনি অপেক্ষা করছেন।
রাসূলের হাতে একটি খেজুরের পাত্র। কিছুক্ষণ আগেই মাত্র এক সাহাবী তার বাগানের সবচেয়ে ভালো কিছু খেজুর রাসূল সমীপে হাদিয়া দিয়ে গেছেন। তিঁনি জানেন এ খেজুরগুলো আয়িশার খুব পছন্দ। তাই দেরি না করে চলে এসেছেন ঘরে। ঘরে যে আয়েশা অভিমান করে বসে আছেন, সেটাও তাঁর অগোচরে নয়। এবং তিঁনি ভালো করেই জানেন অভিমানী কিশোরী আয়িশার রাগ কিভাবে ভাঙাতে হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডাক দিলেন, "হোমায়রা পাখি"! এই দেখো তোমার প্রিয় খেজুর। আল্লাহর নাম নিয়ে খেজুরগুলো খেয়ে নাও।"
আয়িশার বুক থেকে সমস্ত অভিমান এক নিমিষে যেন হাওয়া হয়ে উবে গেল। আহ!কি মধুর করে ডাকেন তিঁনি।
তিঁনি ফিরে তাকালেন। থালা থেকে দু'টি খেজুর উঠিয়ে মুখে দিতে দিতে কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, "আল্লাহর নামেই তো খাবো। এতদিন কি আমি আমার বাবার নামে খেয়েছি?"
কিশোরী আয়িশার এমন "আচ্ছারকম" জবাব শুনে রাসূল অনেকক্ষণ ধরে হাসলেন.
বই: "প্রিয়তমা