> পদ্মা নদীর মাঝি
-->

পদ্মা নদীর মাঝি


মানিক বন্দোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি
কথাসাহিত্যিক! তার প্রকৃত নাম 'প্রবােধকুমার বন্দোপাধ্যায়'! তার লেখার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম ইত্যাদি!
'পদ্মা নদীর মাঝি' তার অনবদ্য রচনা! এটি তার রচিত
উপন্যাসগুলাের মধ্যে সর্বাধিক পঠিত, আলােচিত এবং
একাধিক বিদেশি ভাষায় অনূদিত একটি জনপ্রিয় উপন্যাস! ১৯৩৬ সালে গ্রন্থাকারে উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতীয় উপন্যাসগুলাের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনূদিত হওয়ার গৌরব অর্জন করে এই উপন্যাসটি! পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে বিখ্যাত পরিচালক 'গৌতম ঘোষ' এই অসাধারণ উপন্যাসটিকে সেলুলয়েড ফিতায় বন্ধি করেন!

“পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসের পটভূমি বাংলাদেশের পদ্মার তীরবর্তী বিক্রমপুর-ফরিদপুর অঞ্চল!উপন্যাসে পদ্মার তীরবর্তী কেতুপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলাের মাঝি এবং জেলেদের জীবনালেখ্য বর্ণিত হয়েছে!

☘️(Spoiler Alert)

☘️Movie: "Padma Nadir Majhi"

☘️Director: Goutam Ghose

☘️ Cast: Champa, Roopa Ganguly,
      Raisul Islam Asad, Utpal Dutt

☘️Genre: Drama

☘️Language: Bengali 

☘️IMDb: 8.2/10

☘️Personal Rating: 10 /10

কেতুপুর গ্রামের দরিদ্র মাঝি 'কুবের'! নিজের নৌকা না থাকায় সে অন্যের নৌকা চালায় এবং পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ ধরে তার জীবিকা নির্বাহ করে! স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসারে কুবেরই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি! তার স্ত্রীর নাম মালা! মালা দেখতে এত সুন্দর না হলেও মােটামুটি সুন্দরী বলা চলে! তবে মালার সবচেয়ে বড় যে খুঁত সেটা হলাে সে জন্মগতভাবে পঙ্গু!  তবুও কুবের তার স্ত্রীকে প্রচন্ড ভালােবাসে! কারণ, নিম্ন পর্যায়ের মানুষ হলেও কুবের মাঝির একটি খাঁটি  মন আছে! কিন্তু সেই মনেই আচমকা এক নিষিদ্ধ প্রেম জাগ্রত হয়! কুবের তার শ্যালিকা কপিলার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাকে নিয়ে আলাদা সংসার করার স্বপ্ন দেখে!
.
'কপিলা' এই সিনেমার অন্যতম মূল নারী চরিত্র! সম্পর্কে সে মালার বােন, কুবের মাঝির শ্যালিকা এবং আরেকজনের স্ত্রী! স্বামীর সাথে মনের মিল না হওয়ায়  স্বামীর সংসার ছেড়ে সে বাপের বাড়ি চলে আসে! 
এক ভয়াল বন্যায় কপিলা তার বোন মালার বাড়িতে আশ্রয় নেয়!
.
কপিলা চতুর, চঞ্চল এবং অত্যধিক বুদ্ধিসম্পন্ন মহিলা! সে মালার মতাে অসহায় নয়! তাইতো কপিলা প্রতিটি মুহূর্তে কুবেরের  ভালবাসা অনুভব করে এবং সময় পেলেই বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে সেই অনুভূতিকে উস্কে দেয়! 
অদ্ভুতভাবে, স্বামীর প্রতিও কপিলার ভালবাসা অটুট রয়েছে! তাইতো স্বামী তাকে ফেরত নিতে এলে সে বাধ্য স্ত্রীর মতােই শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যায়!
.
সিনেমার সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র হলাে 'হােসেন মিয়া!' সে প্রকৃতপক্ষে কি কাজ করে সে সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি! মানুষ শুধু দেখেছে সহায়-সম্বলহীন হােসেন মিয়া আশ্চর্যজনকভাবে হুট করেই যেন অনেক অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে গিয়েছে!
লােকমুখে প্রচলিত হােসেন মিয়া সমুদ্রের বুকে একটি
জনমানবহীন দ্বীপ কিনেছে, যার নাম দিয়েছে 'ময়নাদ্বীপ'! সে তার দ্বীপটিতে একটি জনসমাজ গড়তে চায়! সেই উদ্দেশ্যে হোসেন মিয়া বিভিন্ন এলাকার হতদরিদ্র মানুষদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে, কখনাে বা বুদ্ধির জালে ফেলে বাধ্য করে তাদের ময়নাদ্বীপে নিয়ে যায় এবং সেখানে রেখে আসে!
.
হােসেন মিয়ার চতুরতার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন সে
সুকৌশলে কুবের মাঝিকে চুরির অভিযােগে ফঁসিয়ে দেয়! জেল খাটার ভয়ে কুবের মাঝি হােসেন মিয়ার শরণাপন্ন হয়! হােসেন মিয়া তখন তাকে ময়নাদ্বীপে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়! কুবের সেখানে যেতে রাজি হলে কপিলাও কুবেরের সাথে যেতে চায়!
পুরাে সিনেমায় কুবেরের প্রতি কপিলার অনুভূতি থাকা না থাকা নিয়ে দ্বিধা থাকলেও এখানে এসে স্পষ্ট হয় যে, কপিলাও কুবেরকে ভালােবাসে এবং কুবেরের মতাে সেও স্বপ্ন দেখে একসাথে সংসার করার! তাইতো কুবের  ময়নাদ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে কপিলা বলে উঠে- 'আমারে নিবা মাঝি লগে?' 

কপিলার এই নিদারুণ আকাঙ্ক্ষাকে সম্মতি দিয়ে কুবের তার ময়নাদ্বীপের নিরুদ্দেশ যাত্রায় সঙ্গী করে তাকে, আর পেছনে ফেলে রেখে যায় তাদের সমস্ত অতীত!

সার্বিক পর্যালোচনাঃ

কিছু কিছু সিনেমা দেখলে নিজের কাছে গর্ব হয়, বুকটা ভরে যায় আনন্দে! 'পদ্মা নদীর মাঝি' তেমনি একটি সিনেমা! সিনেমার দুর্দান্ত লোকেশন, সিনেমাটোগ্রাফি, যথোপযুক্ত গান, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আর সর্বপরি প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর মন্ত্রমুগ্ধ অভিনয় পুরোটা সময় স্ক্রিনে চোখ আটকে রাখে! মনে হয়, পুরো উপন্যাসটাই যেনো জীবন্ত হয়ে উঠেছে পর্দায়! 
কি অসাধারণ! কি অসাধারণ! 
.
'মালা' চরিত্রে চম্পা, 'কপিলা' চরিত্রে রূপা গাঙ্গুলি, 'কুবের মাঝি' চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং 'হোসেন মিয়া' চরিত্রে উৎপল দত্ত তাদের জাত চিনিয়েছে!  প্রত্যেকেই এক একটা মহা মূল্যবান ডায়মন্ড!  শুধু তাই নয়- সিনেমার প্রতিটি ছোট চরিত্রও এক কথায় অনবদ্য অভিনয় দেখিয়ে গেছে!

একটি কালজয়ী উপন্যাসকে এতোটা নিখুঁতভাবে পর্দায় উপস্থাপন করে পরিচালক 'গৌতম ঘোষ' প্রমাণ করেছেন তিনি 'সত্যজিৎ রায়ের যোগ্য উত্তরসূরী'! 
এই সিনেমাটিকে ১০ টি অস্কারে ভূষিত করা হলেও আমার কাছে কম মনে হতো! 
অস্কারপ্রাপ্তি অধরা থাকলেও এই সিনেমাটি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছে! 
সত্যি- এমন পরিচালক যে কোন দেশের জন্য আশীর্বাদ! যারা এখনো সিনেমাটি দেখেননি, তারা দেখে নিতে পারেন এই নান্দনিক ক্লাসিক সিনেমাটি! সিনেমা দেখে মন তো ভাল হবেই, চোখও আরাম পাবে নিখুঁত শৈল্পিক কাজ দেখে!
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner