> মায়াবিনী প্রথম পর্ব - Mysterying Story - Boipoka365
-->

মায়াবিনী প্রথম পর্ব - Mysterying Story - Boipoka365


Mysterying Story

ঝর্ণায় গোসল করছে নেহাল। আর অদূরে বসে খিলখিল করে হাসছে তার সদ্য পরিচয় হওয়া বান্ধবি নিসা। সদ্য পরিচয় হওয়া মানে হিমছড়ি এসেই নিসার সাথে নেহালের পরিচয় হয়েছে। সাত দিনের পরিচয়ে সম্পর্কটা বন্ধুত্ব অব্দি গড়িয়েছে। বলা যায় বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু। নিসার মনে কি আছে নেহাল জানে না। কিন্তু নেহাল নিসাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। অবশ্য নেহাল সেটা প্রকাশ করতে চায় না। নিসার মত সুন্দরী মেয়ের জন্য অনেক ছেলেই হয়ত অপেক্ষা করে বসে আছে। এমনও হতে পারে তাদের মধ্যে থেকে কাউকে নিসা গ্রহণও করে ফেলেছে। সুদূর খুলনা থেকে আসা মাত্র সাতদিনের পরিচয়ে একটা ছেলেকে নিসা কেনই বা ভালবাসবে। তাই মনের কথা প্রকাশ করে নেহাল কষ্ট পেতে চায় না। সাতদিন আগে নিসার সাথে নেহালের পরিচয় হয়। ঝর্ণার সামনে বসে ছবি আঁকছিল নেহাল। ভরদুপুরে কড়া রোদ থাকা সত্ত্বেও গাছের ছায়ায় বসে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ছবি আঁকছিল। ছবি আঁকা এবং ছবি তোলা দুটোই নেহালের শখ। তাই গলায় ডিএসএলআর সবসময় ঝুলানো থাকে। আর সুযোগ পেলেই রং তুলি নিয়ে বসে যায়। সেদিন ঝর্ণার ছবি আঁকছিল তখনই পেছন থেকে কারো কথা শুনতে পেল,

- আকাশটা নীল রঙের না দিয়ে মেঘযুক্ত কালচে রঙ দিলে বেশি ভালো লাগত। আবার মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্য উকি দিচ্ছে। নিচে ঝর্ণা। অসম্ভব সুন্দর হতো!

মেয়েটা কথাগুলো বলেই যাচ্ছে। আর নেহাল ওর দিকে হা করে চেয়ে আছে। কোন মেয়ের চোখ এত সুন্দর হয়? এর আগেও ভার্সিটির অনেক বান্ধবিদের সাথে কথা হয়েছে, ঘোরাফেরা হয়েছে তাদের সাথে।  কারো চোখই এত মায়াবী লাগে নি। 

- কি হলো? শুধু দেখবেন? না-কি কিছু বলবেন?

- জি? না মানে... হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন। পরেরবার অমন করেই আঁকব।

- এই ভরদুপুরে গরমে নির্জনে বসে ছবি আঁকছেন যে?

- ছবি আঁকার জন্য নির্জনতাই ভালো। বেশি মানুষ থাকলে মন দিয়ে ছবি আঁকা যায় না। অন্যদিন এ সময়ে অনেক মানুষ থাকে। আজ জায়গাটা নির্জন তাই ছবি আঁকতে বসলাম।

- আমিও বসি আপনার সাথে?

- নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হিসেবে আপনার মত একজন অপ্সরা পাশে থাকলে মন্দ হবে না। বরং ছবিটা আরও সু্ন্দর হবে।

- হাহা তাই নাকি.... তবেই বসেই পড়লাম।

- নাম কি আপনার?

- নিসা।

- নিসা... মানে নারী। সুন্দর নাম। কে রেখেছিল নামটা?

- দুঃসম্পর্কের এক চাচা।

- চাচা কেন? বাবা মা?

- আমি যখন খুব ছোটো চাচা আমাকে রাস্তায় কুড়িয়ে পান। আমার কোনও পরিচয় তিনি পান নি। নিজের মেয়ের মত আমাকে বড়ো করে তোলেন। লেখাপড়া শেখান। কিন্তু চাচী আমাকে পছন্দ করতেন না। কেনই বা করবে বলুন? নিজের সন্তান থাকতে অন্যের সন্তানকে কেউ আপন ভাবতে পারে? চাচা একটা এক্সিডেন্টে মারা যান। তখন থেকে চাচী আমার সাথে আরও বেশি দুর্ব্যবহার শুরু করেন। তবুও চাচীর কাছেই থাকতাম। কোথায় যাব!

- তারপর কি হলো?

- কিছুদন পর চাচী অন্য এক ভদ্রলোককে বিয়ে করেন। চাচী মাঝবয়সী হবেন। একা একজন মহিলার সমাজে বেঁচে থাকা খুব কষ্টের।

- ঠিক বলেছেন।

- চাচীর বিয়ের পর ওনার নতুন শ্বশুরবাড়িতে আমার আর জায়গা হলো না। তারপর একটা বস্তিতে থাকা শুরু করি। একটা দোকানে কাজ করি। নিজের খাওয়া পরা চলে।

- আসলে জীবন কখন কোনদিকে মোড় নেয় আমরা কেউ জানি না।

- আপনার কথা বলুন।

- আমি নেহাল। খুলনায় বাড়ি। এখানে একটা বন্ধুর বাড়ি আছে। সে আমার সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। গরমের ছুটিতে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ওর বাসায় বেড়াতে এসেছি।

- তাহলে আপনি একা কেন? ওরা কোথায়?

- আমি যখন ছবি আঁকি তখন একাই থাকি। তাই ওদের এখন আসতে মানা করেছি।

- ছবি আঁকার সময় একা থাকেন... তাহলে আমাকে বসার অনুমতি দিলেন যে?

- হয়তোবা আপনার সঙ্গটা এখন প্রয়োজন ছিল।

.

কথার ফাঁকে ফাঁকে নেহাল নিসার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। যখনই নিসার চোখে চোখে পড়ছিল নেহাল চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। নিসা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসছিল। পরেরদিন আবার একই সময়ে নেহাল এখানে ছবি আঁকতে আসল। তবে এবার পুরোপুরি ছবি আঁকার টানে না। কিছুটা অচেনা মেয়েটির টানে। মেয়েটিও সেদিন আবার আসলো। এভাবে প্রতিদিন ওরা একজন আরেকজনের টানে আসছে। নেহালের সাথে অন্য কেউ আসতে চাইলে নেহাল ছবি আঁকার বাহানায় তাকে মানা করে দিচ্ছে। নিসার অনেক ছবি তুলেছে আজ নেহাল তার ক্যামেরায়। গতকাল বন্ধুর বাসায় ফিরে নিসার একটা স্কেচ তৈরি করেছে সে। যেদিন চলে যাবে সেদিন নিসাকে ওটা গিফট করবে। 

আজ এতটাই গরম পড়েছে যে গরম সহ্য করতে না পেরে নেহাল ঝর্ণায় গোসল করতে নেমে পড়েছে। আর এটা দেখে নিসা খিলখিল করে হাসছে।

- এত হাসার কি আছে?

- ছবি আঁকতে আঁকতে কাউকে গোসল করতে এই প্রথম দেখলাম। আবার সাথে অন্য কোন জামাকাপড়ও নেই। ভেজা শরীরে থাকবে না-কি? অদ্ভুত তুমি!

- অদ্ভুত তো তুমি। এই খা খা রোদ্দুরেও তোমার গরম লাগছে না। আমি সারাক্ষণ গরম বলে চিল্লাচ্ছি আর তুমি সেটারও মজা নিচ্ছো।

- কি করব বলো? আমার যে গরম লাগে না।

- কেন? তুমি কি ভূত যে গরম লাগে না?

- হাহাহা, ভূত হতেও তো পারি। আচ্ছা ভূতদের কি গরম লাগে না?

- সেটা তো কোনও ভূতই বলতে পারবে।

- তোমার যদি কখনও ভূতের সাথে দেখা হয় জিজ্ঞেস করবে কিন্তু!

- যাও তো তুমি। তোমার হাসি দেখে আমার গা জ্বলছে।

- সে তো আমি যাবই। সারাদিন তোমার কাছে থাকব না-কি?

- সারাদিন থাকলেই বা কে মানা করবে!

- পেট চালাতে হবে তো না-কি? আচ্ছা বেশ আজ সারাদিন তোমার সাথেই থাকব।

- সত্যি??

- হ্যাঁ সত্যি। তবে একটা শর্ত আছে।

- কি শর্ত?

- আমাকে পাহাড়ে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে।

- সে তো অনেক সময়ের ব্যাপার।

- তাই তো এখনই বলছি। সবে তো দুপুর হলো। আমরা সন্ধ্যার আগেই ফিরতে পারব।

- আচ্ছা বেশ। তুমি তবে কিছুক্ষণ এখানে বসো। আমি বন্ধুর বাসায় গিয়ে জামাকাপড় বদল করে আসছি। ছবি আজ আঁকা হবে না। ফ্রেম পেপারস রঙ তুলি সব রেখে আসছি। তুমি একটু অপেক্ষা করো।

.

ওরা দুজন এখন পাহাড়ের চূড়ায়। পাহাড়টা ছোটো তাই চড়তে বেশি সময় লাগে নি। কিন্তু পাহাড়ের আশে পাশে অনেক খাদ আছে। নিচে পড়লে বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। ওরা দুজন গল্প আর হাসি তামাশা করতে করতে একে অপরের খুব কাছে চলে এল। কখন যে নেহাল নিসার এতটা কাছে চলে এসেছে সে বুঝতেও পারে নি। দুজন দুজনের হাত ধরে আছে। আবেগের বশে নেহাল নিসাকে চুম্বন করবে ঠিক সেই সময়ে নেহালের হুশ ফিরে এল। ছিটকে সরে গেল নেহাল।

- আমাকে ক্ষমা করো নিসা। আমি মোহে পড়ে তোমার সাথে অসভ্যতা করতে যাচ্ছিলাম। আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি ইচ্ছে করে করি নি। ভুলক্রমে হয়ে যাচ্ছিল। আমি খুব বেশি লজ্জিত নিসা। প্লিজ চলো। আমরা এখনই ফিরব। আমার এখানে থাকতে ইচ্ছা করছে না। চলো ফিরে যাই।

নেহালের কথাগুলো নিসা অবাক হয়ে শুনছে। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে নেহালের দিকে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। 

- কি হল নিসা? কিছু বলছ না কেন?

- হুম?? হ্যাঁ শুনছি।

- চলো ফিরে যাই।

- আচ্ছা চলো।

.

ওরা দুজন যার যার ঘরে ফিরে গেল। তারপর থেকে এক সপ্তাহ নিসার কোন খোঁজ নেই। নেহাল প্রতিদিন ঝর্ণার সামনে গিয়ে বসে থাকে। নিসা আসে না। গত দুদিন নাওয়া খাওয়া সব ছেড়ে সারাদিন ঝর্ণার সামনে বসে আছে। কিন্তু নিসা আসছে না। নেহাল বুঝতে পেরেছে যে নিসা ওর ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে বা রাগ করেছে। তাই ও নেহালের কাছে আসছে না। কিন্তু নেহাল কি করবে। ও তো নিসার ঠিকানাও জানে না। ওর হঠাৎ এই পরিবর্তন দেখে বন্ধুরা বারবার জিজ্ঞেস করছে যে কি হয়েছে। অবশেষে নেহাল ওর বন্ধুদের নিসার কথা বলল। সবাই যখন নিসার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইল, তখন নেহালের কাছে ক্যামেরায় তোলা আর নিজের আঁকা একটা ছবি ছাড়া নিসার ব্যাপারে আর কোন তথ্য নেই। যার বাসায় ওরা বেড়াতে গেছে, সেই বন্ধু শফিক বলল,

- আচ্ছা ওর ছবি দেখা। আমার এলাকার মেয়ে যেহেতু আমি চিনতে পারি। যদি না চিনি তবুও খোঁজ নিতে পারব।

- ক্যামেরা তো দোকানে। ছবিগুলো প্রিন্ট করতে দিয়েছি। যাবার সময় ওকে দিব তাই। আপাতত আমার আঁকা ছবিটা আছে।

- আচ্ছা ওটাই দেখা।

- এই নে। এটাই ওর ছবি।

.

নিসার ছবিটা হাতে নিয়ে দেখা মাত্রই শফিক চমকে উঠল। ওর চোখগুলো ভয়ে বড় বড় হয়ে গেল। শফিক ঘামতে শুরু করল।

- কিরে শফিক? কি হলো? এমন করছিস কেন?

- এএএ...এই ছবিটা তুই কোথায় পেয়েছিস?

- কোথায় পাব আবার? আমি এঁকেছি। 

- কি সব আবোল তাবোল বকছিস? তুই এঁকেছিস?

- আবোল তাবোল তো তুই বকছিস। আমার নিজের আঁকা ছবি নিয়ে সন্দেহ করছিস। আচ্ছা বল আমি ছাড়া আর কে-ই বা আঁকবে?

- তুই ঠিক এই মেয়েটাকেই দেখেছিস? নাকি ওর মতো হালকা দেখতে অন্য কেউ?

- দেখ শফিক এখন কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে। অন্য কারো ছবি আঁকব কেন? যাকে দেখেছি তার ছবিই এঁকেছি।

- এটাতো নিসা!

- তো আমি কখন বললাম যে এটা অন্য কেউ?

- এ তো দুবছর আগে..... দুবছর আগে.....

বলতে বলতে শফিক অজ্ঞান হয়ে গেল।



চলবে......



Writer: Asma Aktar Urmi


NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner