বন্ধুদের খোচা খেতে খেতে বাসর ঘরে বীর পুরুষের মতো প্রবেশ করেই ফেললাম । প্রবেশ করার পূর্বে হার্টবিট কিছুটা কম থাকলেও প্রবেশ করার পর এটা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে লাগলো।
লাজুক ছেলেটি একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে থাকবে, মেয়েটা তাকে পছন্দ করবে কি না? মেয়েটি তাকে স্বাভাবিক ভাবে নিবে কি না? এগুলো ভাবতে ভাবতে কপাল ঘামতে শুরু করে দিলো । এতো ভয় পাওয়ার কি আছে , তার সাথেই তো সারাজীবন থাকতে হবে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই রাকিব, এভাবে নিজেই নিজেকে সাহস দিতে লাগলাম । এরকম পরিস্থিতিতে এই অসহায় ছেলেটিকে কেউ সাহায্য করার ও নেই । তার পর নিজেকে শক্ত করলাম । একটু একটু করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম । সে চুপটি করে বসে আছে । আমি তার ঘোমটা খুলে মুখ দেখার জন্য নিজেকে শক্তভাবে প্রস্তুত করলাম ।
কিন্তু বেচারা হাত কিছুতেই তার ঘোমটা খোলার সাহস পাচ্ছিলো না । মেয়েটি বুঝতে পারলো আমি ভীষন ভাবে লজ্জিত তাই ও নিজেই নিজের ঘোমটা তুললো । তার চন্দ্রমুখ টা দেখে আমি হতভাগ হয়ে চেয়ে থাকলাম আর অবাক হলাম । তার হরিণী চোখ আর ঘন মেঘ বর্ণ চুল আমাকে ভাষাহীন করেছে ।
মিষ্টি :-- এই যে মিস্টার, এতো করে কি দেখছেন হুম!
আমি :-- ইয়ে মানে , না কিছু না । দুরে গিয়ে টেবিলে
রাখা পানি পান করলাম । বুঝতে পারলাম
মেয়েটি মুচকি মুচকি হাসছে । এবার একটু
সাহস পেলাম । মেয়েটির নিশ্চয় আমাকে
একটু পছন্দ করেছে । আবার তার কাছে
গেলাম ।
আমি :-- আচ্ছা তোমার নাম তো মিষ্টি তাই না?
মিষ্টি :-- মানে কি ! বিয়ে করেছেন অথচ নাম জানেন না?
আমি :-- ইয়ে না মানে!
মিষ্টি :-- এতো মানে মানে করবেন না তো ।
বুঝতে পারলাম মেয়েটার আমার থেকে সাহস বেশি ।
আমি :-- আচ্ছা একটা কথা বলবো?
মিষ্টি :-- হুম
আমি :-- আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি । আমার প্রস্তাব শুনে সে মুচকি হাসতে লাগল । নব বধূ না হলে মনে হয় অট্টহাসিই দিতো । বাসর ঘরে বউকে বন্ধুর প্রস্তাব দিতেই হয়তো এতো হাসি । সে মাথা নেড়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল।
মিষ্টি :-- হুম হতে পারি
আমি:-- একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে মনে বাধা দিলো । তাই বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলাম । একে অপরকে ভালো করে বুঝা, ভালো ভাবে জানা উচিত । একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা যা আমার প্রতিদিনরই স্বপ্ন ছিলো । স্বামী স্ত্রী সবচেয়ে বন্ধুর সম্পর্ক ভালো হয় । যখন দুজনে দুজনার মনের কাছাকাছি এসে থাকতে পারবো তখন শরীর এমনিতেই কাছে আসবে ।
আমি :-- ছাদে যাবেন এখন? খুব সুন্দর পূর্ণিমা!
মিষ্টি :-- হুম
আমি :-- আজকে সারা রাত গল্প করে কাটাই চলেন ! আমার এমন আবদার শুনে খুব খুশি হলো সে । দুজনে ছাদে গেলাম । চাদের আলোয় মিষ্টিকে যেন জান্নাতের হুর মনে হচ্ছে ।
আমি :-- আচ্ছা মিষ্টি পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক কোনগুলো? আর ভালোবাসা কোনগুলো? মিষ্টি চাদের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো।
মিষ্টি :-- প্রথম যখন আমি আপনাদের বাসায় পা দিলাম তখন আপনার মা আমাকে শক্ত করে বুকে ধরেছিলেন । আমার মনে হয়েছিল আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি এটা হচ্ছে সুন্দর সম্পর্ক । আমাকে আপনার মায়ের নিজের মেয়ে মনে করা আর আমি আপনার মাকে নিজের শ্বাশুড়ি নয়, নিজের মা মনে করা । আপনার বাবা যখন বলেছিলেন আমার কোনো মেয়ে নেই । এখন আমি একটা লক্ষী মেয়ে পেয়ে গেছি, সেটা হচ্ছে ভালোবাসা আমি তো হতভাগ হয়ে তার দিকে চেয়ে আছি। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান ছেলে মনে হচ্ছে যে আমার কথা না বলে , আমার পরিবারের কথা আর আমার মা বাবার কথা আখে ভাবে। সেই মেয়ের মতো কেউ ভালোবাসতে পারবে না আমি একটু অভিমানের নাটক করে বললাম।
আমি :-- আমি বুঝি কিছুই না? হুম!
মিষ্টি :-- এই যে আপনি এই রাতে একটা মেয়েকে পেয়েও তার শরীর কে ভালো না বেসে তার কাছে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, একটা সুন্দর রাত উপহার দিচ্ছেন , আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত উপহার দিচ্ছেন । এটা হচ্ছে একটা মেয়ের প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধাবোধ । যা প্রত্যেকটি মেয়ে তার স্বামীর কাছে থেকে আশা করে। মিষ্টির মুখে স্বামী ডাকটা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম । মিষ্টি আমার হাত ধরে ফেললো আর বলল।
মিষ্টি :-- এই যে লাজুক ছেলে, এতো ভয় পাচ্ছেন কেন? আমি একটা জিনিস চাই, কি দিতে পারবেন তো ?
আমি :-- হুম পারবো।
মিষ্টি :-- আমাকে একটা রাজকন্যা গিফট করতে হবে, সেদিন আমি লজ্জাকন্ঠে বলেছিলাম।
শুধু ভালোবাসতে হবে, পৃথিবীর সব সুখ এনে দিবো তোমায়।
প্রতিটি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এরকম সুমধুর হোক।
Writer:- Unknown