আদনান হাসতে হাসতে বলে,
---' নাইফ দেখে ভয় পেয়ে গেছিস চারু।মনে করেছিস নাইফ দিয়ে তোকে মারবো।আরে না,নাইফ দিয়ে এইযে পিনটা তুলব। '
এই বলে ইজি চেয়ারের মধ্যে একটা আলপিন দেখায় আদনান।চারু আলপিনটা দেখে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে।সে মনে করেছিল আদনান মনে হয় নাইফ দিয়ে তার হাত কেটে দিবে।কিন্তু এরকম হবে ভাবেনি।
আদনান মন দিয়ে পিনটা তুলছে।চারু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।পিন তোলা শেষ হলে নাইফটা আবার পকেটে রেখে দেয় আদনান।মাথা তুলে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
---' শোন,তোকে একটা কাজ করতে হবে আমার হয়ে।পারবি? '
চারু টুলটা টেনে গালে হাত দিয়ে বসে বাচ্চাদের মতো করে বলে,
---' কি কাজ বলো,চেষ্টা করবো! '
আদনান এবার নীল ডায়েরীটা চারুর হাতে দেয়।তারপর ইজি চেয়ার থেকে উঠে বসে।রওনা দেয় রুমের দিকে।কিছুক্ষন পর বের হয়ে আসে আদনান।হাতে একটা খাম।খামটাও চারুর হাতে দেয় সে।তারপর চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
---' এই জিনিসগুলো তোর কাছে রাখবি।কখনো হাড়িয়ে ফেলবি না।আমি কালকে ঢাকা চলে যাব।কবে আসবো জানি না।তুই এই জিনিসগুলো ভালো করে রাখবি।অবশ্য আমি রাখতে পারতাম তবে এগুলো দেখলে আমি খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ি।তুই এইগুলো তোর কাছে রাখবি।কি পারবি না? '
চারু শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলে কিন্তু মুখে কোনোকথা বলে না।আদনান আবার বলতে শুরু করে,
---' আমি বুঝতে পেরেছি এই চট্টগ্রামে আমার থাকা যাবেনা।এখানে থাকলে অতসহজে ভুলতে পারবো না নিতিকে।ঢাকা গিয়ে বাবার অফিসের ব্যাঞ্চটা দেখা-শোনা করবো।কাজের মধ্যে থাকবো।যদি ভুলতে পারি নিতিকে। '
চারু ডায়েরীটা আর খামটা একহাতে নিয়ে অন্যহাতটা আদনানের চেয়ারের হাতলে রাখে।চোখটা স্থির রাখে আদনানের দিকে,যাতে আদনান তার দিকে তাকালেই চোখা-চোখি হয়।চারু এবার বলে,
---' আমিও যাব আপনার সঙ্গে তাইনা '
চারুর ৫বাক্যের এই কথাটা শুনে মাথা তুলে তার দিকে তাকায় আদনান।চোখা-চোখি হয়ে যায় দুজনের মধ্যে।আদনান চারুর চোখের দিকে তাকানো অবস্থায় বলে,
---' নাহ,আমি একাই যাব।দেখ আমাদের বিয়ে হয়েছে ঠিকই বাট আমার অনিচ্ছাসত্ত্বে।তুই যদিও আমাকে স্বামী মনে করিস কিন্তু আমি তোকে স্ত্রী মনে করিনা।আমি শুধু মাত্র নি...'
এইটুকু বলে থেমে যায় আদনান।মোবাইল বেজে ওঠে পকেট থেকে।এতোরাতে কে ফোন দিল ভেবে অবাক হয় সে?কৌতুহল নিয়ে ফোনটা উপরে তোলে।ফোনের স্কিনে ভেসে ওঠে রনিক নামটা।রনিক আদনানের বন্ধু।আদনান তাকে ঢাকা যাওয়ার টিকেট জোগার করতে বলেছিল।তাই মনে হয় ফোন দিয়েছে।আদনান ফোনটা রিসিভ করে।রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে বলে ওঠে,
---' দোস্ত টিকেট পাই নাই।কালকে পর্যন্ত কোনো বাস ঢাকা যাবেনা। '
এই বলে ফোন কেটে দেয় ওপাশের লোকটা।আদনান অবাক হয়ে ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে।রনিকের উপর তার রাগ বাড়তেছে।তাকে কথাটুকুও বলার সুযোগ দিল না।ফোনে লাউড স্পিকার দেয়া থাকার কারনে সব শুনতে পায় চারু।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
---' আমি অতকিছু বুঝিনা,আমি আপনার সাথে ঢাকা যাব।যদি আমাকে না নেওয়ার কথা ভেবে থাকেন তাহলে আমার থেকে ভয়ংকর কেউ হবে না। '
এই বলে ডায়েরী আর খামটা নিয়ে হনহন করে রুমে চলে আসে চারু।ডায়েরী আর খামটা বেডের উপর ফেলে দিয়ে নিজে সোফায় বসে পড়ে।অনেক হয়েছে আর না।কি পেয়েছে তাকে সবাই?পুতুলের মতো ব্যবহার করছে সবাই।যার সাথে বিয়ে হলো সে নাকি স্ত্রী হিসেবে মানে না।ঢাকাও নিয়ে যাবেনা।এটা কোন ধরনের ফাজলামি।চারু মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় আজ থেকে সে অন্যরকম হয়ে যাবে।আদনান ভালোবাসবে ঠিকই কিন্তু সেটা অন্যভাবে।
চারু বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে কি করা যায়?এইসময় আদনান এসে চারুর পাশে শুয়ে পড়ে।চারু টপ করে আদনানের বুকের উপর শুয়ে পড়ে।আদনান চারুকে সড়ানোর চেষ্টা করলে চারু আদনানের ঠোট দুটো নিজের দখলে করে নেয়।আদনানে চোখ বড় বড় করে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু চারু আদনানের ঠোটের স্বাদ নিতেই ব্যাস্ত।
প্রায় ১মিনিট পর আদনান চারুকে এক ঝটকায় বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর চোখ লাল করে তাকায় চারুর দিকে।আগে চারু ভয় পেলেও এখন আর ভয় পায় না।সে উল্টো চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,
---' কি শয়তানি শুরু করেছেন?বিয়ে করবেন আমাকে,ভালোবাসবেন অন্য একজনকে।ফাজলামি পাইছেন।আজ থেকে আর তা হবে না।আপনি শুধু আমার,এই চারুর।এখন থেকে কেউ আপনার দিকে তাকালে চোখ তুলে নেব। '
এই বলে চারু আদনানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।চারুর এহেন ব্যবহার আদনানকে আকাশ থেকে ফেলে দিয়েছে।কালকে যে মেয়েটা কথা বলতে ভয় পেত,আজকে সে এত বড় বড় কথা বলছে কি করে?আদনান চারুকে অনেক সড়ানোর চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয় না তার পক্ষে।শেষ পর্যন্ত দুইজনে ওই অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে।
১৮.
সকাল বেলা উঠে চারু দেখতে পায় সে শুধু বিছানায় পড়ে আছে।পাশে তাকিয়ে দেখে আদনান নেই।চারু তারাতারি করে উঠে বসে।চোখ পিটপিট করে তাকাতে থাকে সম্পুর্নটাতে।বোঝার চেষ্টা করে আদনান তাকে রেখে পালিয়ে গেছে কিনা?তারাতারি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় চারু।ওরনা ঠিক করে দৌড় দেয় বেলকনির দিকে।বেলকনিতে গিয়ে দেখে আদনান নেই।অথ:পর চারু রুম থেকে বের হয়ে দৌড় দেয় ছাদে।ছাদের গিয়েই চোখে পড়ে আদনানকে।এত সকালে ছাদে কি করছে আদনান তা দেখার জন্য চুপি চুপি তার দিকে এগোতে থাকে চারু।সে আদনানের কাছাকাছি যেতেই ঝট করে তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় আদনান।তারপর ভ্রু-নাচিয়ে বলে,
---' কি চুপ করে আমার পিছনে আসতেছিস কেন? '
হঠাৎ আদনান এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কারনে থতমত খেয়ে যায় চারু।তোতলাতে তোতলাতে বলে,
---' এমনি,এত সকালে কি করছেন দেখছিলাম আরকি? '
চারুর কথা মোটেও বিশ্বাস হয় না আদনানের।সে ভ্রু-নাচিয়ে আবার বলে,
---' সত্য কথা বল! '
চারু মাথা নাড়িয়ে বলে এটাই সত্য।এবার আদনানের একটু হলেও বিশ্বাস হয়।সে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে।তারপর একটা ফোল্ডারে প্রবেশ করে যেখানে শুধু তার আর নিত্তিয়ার ছবি।আদনান একের পর একটা ছবি দেখতে শুরু করে।এদিকে চারুর মাথা খিব গরম হয়ে যায়।তার স্বামী তার সামনে অন্য একটা মেয়ের ছবি দেখছে এটা মানতে পারেনা সে।সে চিলের মতো আদনানের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে ছুড়ে মারে মাটিতে।
নিজের মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলতে দেখে মাথার তার ছিড়ে যায় আদনানের।জলন্ত চোখে তাকায় চারুর দিকে।চারুও জলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।দুইজনেরই মাথার তার ছিড়ে গেছে।হঠাৎ চারু এমন কাজ করে বসে যা আদনান কল্পনাও করতে পারেনি।আদনানের অবস্থা বর্তমান এমন যে মৃত্যু যেকোন সময়েই হতে পারে..
---' এতদিন থেকে কি করছেন করছেন?সেটা বড় কথা নয়,বড় কথা এখন আপনি আমার বর।আমার সামনে অন্য মেয়ের ছবি দেখবেন,কান্না করবেন এসব মানবো না।এবারের জন্য বাঁচিয়ে দিচ্ছি।পরেরবার সোজা উপরে।হুহ..'
এই বলে একটানে আদনানকে একটানে কোণা থেকে নিয়ে আসে মাঝে।আদনান নিজেকে সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়ে চারুর উপরে।দুজনে ধপাস করে পড়ে যায় ছাদের মেঝেতে।চারু নিচে তার উপরে আদনান।এতজোরে পরার কারনে আদনানের খানিকটা লাগে।সে অবাক হয়ে চারুর দিকে তাকায়।চারু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আদনান তারাতারি উঠে দাঁড়ায়।আদনান উঠে দাঁড়ালে চারুও উঠে দাঁড়ায়।
আদনান কোনো কথা না বলে চারুর দিকে একবার তাকিয়ে ছাদ থেকে নিচে নামতে শুরু করে।আদনান নিচে নামতেই চারু নিজেই নিজের বুকে এক ফু দেয়।মনে মনে তারিফ করে নিজের।এতসাহস সে কিভাবে পেল ভাবতেই অবাক হয় সে।চারু মনে মনে বলে,এখন থেকে এইরকম অত্যাচার তোমাকে সহ্য করতে হবে মি.আদনান।আমি পারবোনা এটা দেখতে যে আমার স্বামী আমার সামনে অন্যএকটা মেয়ের ছবি দেখে কান্না করছে।
১৯.
ব্রেকফাষ্টের টেবিলে বসে আছে সবাই।ব্রেকফাষ্ট করে চারু বাবা-মা রওনা দেবে।তাদের এগিয়ে দিয়ে আসার দায়িত্ব পড়েছে আদনান আর চারুর উপর।প্রথমে আদনান যেতে না চাইলেও পড়ে যেতে রাজি হয়।
ব্রেকফাষ্ট করে গাড়ি বের করে আদনান।এক এক করে সবাই উঠে বসে গাড়িতে।গাড়ির সামনের সিটে আদনানের সাথে বসে পড়ে চারু,পিছনে তার বাবা-মা।
একপর্যায়ে তারা এসে থামে বাসষ্টান্ডে।তারপর গাড়িতে উঠে পড়ে চারুর বাবা-মা।বিদায়ের মুহুর্তে চারু ততটা কান্না করেনি তবে চোখের পানি বাধ মানেনি।চারু মন খারাপ করে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।কিছুক্ষন পর আদনান এসে বসে পড়ে গাড়িতে।সে চারুকে থ মেরে বসে থাকতে দেখে কোনো কথা না বলে গাড়িতে বসে পড়ে।তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
---' সিটবেল্ট পড়ে নে! '
আদনানের আদেশ পেয়ে সিটবেল্ট পড়ার চেষ্টা করে চারু।কিন্তু আগে থেকে অভ্যাস না থাকায় প্রতিবারে ফলাফল হয় ব্যার্থ।বারবার ব্যার্থ হয়ে একপর্যায়ে খুব রেগে যায় চারু।চিৎকার করে বলে,
---' ধুর,পড়বোই না। '
এই বলে সে সিটবেল্ট না পড়ে বসে থাকে।আদনান টের চোখে তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে।চারু একটা বিষয় লক্ষ্য করে আদনান তাদের বাসার রাস্তায় না গিয়ে অন্য একটা রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।চারু একবার আদনানের দিকে তাকিয়ে তারপর চুপ করে বসে থাকে।আদনান এক মনে এক ধ্যানে গাড়ি চালাচ্ছে।
একপর্যায়ে গাড়ি এসে থামে একটা কাশবনে।জায়গাটা খুব নির্জন।আদনান গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।সে চারুর সাথে কোনো কথা না বলে চুপ করে হাটতে শুরু করে।চারু অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে টপ করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।তারপর সে দৌড়ে আদনানের কাছে যায়।আদনান টের চোখে তার দিকে তাকিয়ে আবার হাটায় মন দেয়।
কাশবনে কাশ ফুলে ভরে গেছে।সাথে হালকা বাতাস ফুল গুলো দুলিয়ে দিচ্ছে।এর ফলে কাশবনের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে কয়েকগুন।হালকা বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায় আদনান চারু দুজনেরই।আদনান তার কপালে পড়া চুলগুলো হাত দিয়ে উপরে তুলে দেয়।চারু তার চুল ঠিক করে ব্যান দিয়ে ভালোভাবে আটকে দেয়।
আদনান গিয়ে বসে পড়ে একটা বেঞ্চে।চারু গিয়ে চুপটি করে বসে পড়ে আদনানের পাশে।তাদের মতো অনেক জুটি বসে আছে চারদিকে।কারো দিকে কেউ তাকাচ্ছেনা।সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে।
আদনান চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।চারু কৌতুহল নিয়ে উপরে তাকায় কি আছে দেখার জন্য?কিন্তু সে উপরে আকাশ ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না।অধৈর্য্য হয়ে মাথা নিচে নামিয়ে বিরবির করতে থাকে সে?
তাকে এরকম বিরবির করতে দেখে আদনান তাকে জিজ্ঞাসা করে,
---' বিরবির না করে কি বলতেছিস জোরেই বল।আমরাতো গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি,আমাদেরও তো শোনার অধিকার আছে! '
চারু দীর্ঘ সময় ধরে আদনানের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দেয়,তারপর খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলে,
---' এইযে,আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন?কি দেখতেছেন কে জানে?পাগল হইছেন নাকি এটাই ভাবছি..'
চারুর কথা শুনে আদনান হো হো করে হেসে ওঠে।হাসতে হাসতে বলে,
---' পাগল হইনাই,প্রকৃতি দেখছি।পাগল হইলে তো এতক্ষনে ওইযে আইসক্রিম ওয়ালার সব আইসক্রিম নিয়া পালিয়ে যাইতাম। '
আইসক্রিমের কথা শুনে মনটা আনন্দে নেচে ওঠে চারুর।সেই কতদিন ধরে আইসক্রিম খায়না সে।বাসায় থাকতে প্রতিদিন ৩টা করে আইসক্রিম খাইতো আর এখানে একটাও খাইতে পারে না।চারু তারাতারি উঠে দাঁড়ায় অথ:পর আদনানের হাতটা ধরে টানতে শুরু করে।
আদনানকে টানতে টানতে আইসক্রিম ওয়ালার সামনে নিয়ে আসে সে।আইসক্রিম ওয়ালার সামনে আসলে আদনান চারুর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভালোভাবে দাঁড়ায়।ততক্ষনে চারু আইসক্রিম ওয়ালাকে অডার্র দিয়ে দিয়েছে।
চারুর কথামতো আইসক্রিম ওয়ালা তাকে অনেক গুলা আইসক্রিম দেয়।চারু সেগুলো নিয়ে আগের জায়গায় ফিরে আসে।বিল নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
আদনান বিল মিটিয়ে দিয়ে মুখটা গোমড়া করে এসে চারুর পাশে বসে।এদিকে চারু মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে।চকিতে সে একবার তাকায় আদনানের দিকে।আদনানের মুখ গোমড়া দেখে একটু হেসে ওঠে চারু।তারপর নিজের একটা আইসক্রিম এগিয়ে দেয় আদনানের দিকে।
আদনান মনে হয় এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল।সে এক মিনিটও দেরি না করে চারুর হাত থেকে আইসক্রিমটা নিজের দখলে করে নেয়।তারপর দুইজনেই মনের সুখে আইসক্রিম খেতে থাকে।
২০.
' ইস,ছেলেটা পুরাই লাড্ডু।একটা যদি ইয়ে করতে পারতাম, '
মেয়েটার এরকম উগ্র মনোভাব কানে আসে চারু ও আদনান দুইজনেরই।আদনান চারুকে রাগানোর জন্য সামনে থাকা মেয়েটার উদ্দেশ্য হাত নারে।প্রতিউত্তরে মেয়েটাও হাত নারে।চারু খুব রেগে যায়।সে সাটাম উঠে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা আইসক্রিমটা ছুড়ে মারে খুব জোড়ে।তারপর দ্রুতপায়ে এগোতে শুরু করে মেয়েটার দিকে।একেবারে এসে থামে মেয়েটার সামনে।
মেয়েটার বয়স চারুর সমানই হবে।চারু মেয়েটাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ঠাস করে একটা মেরে দেয়।তারপর মেয়েটার চুল ধরে চিল্লিয়ে বলে,
---' কি করবি?বল,কি করবি? '
মেয়েটা কান্না করতে শুরু করে দেয়।মেয়েটার কান্নার আওয়াজ শুনে তার গার্ডিয়ান ছুটে আসে।মেয়েটার গার্ডিয়ানকে দেখে চারু ভিষন ভরকে যায়।সে মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যায় আদনানের কাছে।তারপর আদনানের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।চারুর চোখে এরকম ভয় আদনান খুব কমই দেখেছে।কিন্তু কেন এত ভয় পাচ্ছে সে?লোকটা কে?নাকি লোকটা চারুর...
একপর্যায়ে লোকটা এসে দাঁড়ায় চারুদের সামনে।চারু ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ে ছোটবেলার মাইরের কথা।এখনো দাগ রয়েছে শরিরে।লোকটা আদনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
---' আমি কালাম '
আদনান কালাম সাহেবের হাতটা ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,
---' আমি আদনান '
কালাম সাহেব এবার চারুকে আদনানের পিছন থেকে সামনে নিয়ে আসেন।চারু এখনো ভয়ে চোখ বন্ধ করেই আছে।কালাম সাহেব তাকে চমকে দিয়ে বলে,
---' চারু মা,তোর সাথে এভাবে দেখা হবে আমি ভাবতেও পারিনি।সেই কতদিন ধরে দেখা নেই তোর সাথে। '
কালাম সাহেবের মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে মনের ভিতর হতে খানিকটা ভয় উধাও হয়ে যায়।চারু আস্তে করে চোখ খুলে নেয়।কালাম সাহেবকে তার বিশ্বাস নাই।এদিকে কালাম সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে চারুকে দেখছে মেয়েটা।চারু কালাম সাহেবের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে মেয়েটার কাছ থেকে মাফ নিয়ে কালাম সাহেবকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আদনানকে টানতে টানতে গাড়িতে তোলে।আদনান বাধ্য করে গাড়ি চালাতে।
আদনান গাড়ি চালিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করলে চারু দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয়।এতক্ষন নিরব দর্শকের মতো চারুর সব কার্যকলাপ দেখছিল আদনান।এবার সে মুখ ফুটিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
---' এই লোকটা কেরে চারু,যাকে দেখে তুই এত ভয় পেলি।আমাকে টেনে নিয়ে এলি।কাহিনীটা কী? '
চারু আদনানের দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করে,
---' আর বলো না,ওই কামাল বেটা খুব পাজি।আমাদের স্কুলের গণিত টিচার ছিল।আমি একদিন একটা অঙ্ক পাইনি দেখে বেটা দুইটা ইয়া বড় বেত আমার পিঠে ভাঙ্গছে।এখনো দাগ আছে মাইরের।দেখবা! '
এই বলে চারু নিজের জামা উপরে তুলে আদনানকে পিঠি দেখাতে যায়।আদনান হাত নাড়িয়ে বলে,দরকার নাই।
কিছুক্ষন গাড়ি চালানোর পর আদনান চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' তুই কি অঙ্ক করতে পারিস না? '
চারু নিজের মাথা নিচে করে বলে,
---' এই অঙ্ক জিনিসটা আমার মাথায় ঢুকে না।খুব কঠিন একটা বিষয়।আমি অঙ্ক করতে পারি তবে ততটা ভালো না। '
চারু এই কথাটা শোনামাত্র আদনানের মুখে ফুটে উঠে রহস্যময়ী এক হাসি।চারু অবাক হয়ে আদনানকে দেখছে আর বোঝার চেষ্টা করছে হাসির কারন কি?কিন্তু একপর্যায়ে তারা বাসায় পৌছে যায় কিন্তু চারু হাসির কারনটা খুঁজে পায় না।
২১.
' বাবা,আমি ঢাকা যাব কালকে।সব ঠিক-ঠাক হয়েছে।আমি কালকেই ঢাকা যাচ্ছি! '
এই কথা বলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় আদনান।তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উপস্থিত আমজনতা।আদনান রওনা দেয় তার রুমের উদ্দেশ্য।রুমের কাছাকাছি যেতেই পিছন থেকে তাকে ডাকে তার বাবা।আদনান বাধ্য হয়ে পিছনে ফিরে এসে আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে।আট জোড়া চোখের লক্ষ এখন সে।হালিম সাহেব আদনানের দিকে ঝুকে তাকে জিজ্ঞাসা করে,
---' অফিসতো এখন বন্ধ।একমাস বন্ধ থাকবে।এত তারাতারি কেন যাবে তুমি? '
হালিম সাহেবের এত বড় একটা প্রশ্নের জবাব কয়েকটা বাক্যের মধ্যে দিয়ে দেয় আদনান।সে সোজা বলে দেয়,
---' কয়েকদিন ঘুরবো '
হালিম সাহেব সাথে সাথে বলে ওঠে,
---' তাহলে চারুও তোমার সাথে যাচ্ছে। '
আদনান এক এক করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,-' নাহ '
রাহিনা বেগম ছেলের অবস্থা বুঝতে পারছেন।এই মুহুর্তে ছেলেকে যে একা ছাড়া যাবেনা সেটাও ঢের বুঝতে পারছেন।তাই তিনি খানিকটা কঠোর হয়ে বলেন,
---' আদনান চুপ কর।চারু যাবে তোর সাথে।ওখানে অফিসের জন্য যে ফ্লাটটা আছে সেখানে উঠবি তোরা দুইজনেই।আর গাড়ি নিয়ে যাবি এখান থেকে। '
হালিম সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে,
---' তুমি পাগল হইছো,এতদুর গাড়িতে করে যাবে! '
রাহিনা বেগম নিজের কঠোর ভাব ধরে রেখেই বলে,
---' হুম যাবে।তাতে কতদিন লাগে লাগুক।ওরা গাড়িতেই যাবে। '
স্ত্রীর কথার উপর কথা বলার সাহস পান না হালিম সাহেব।তিনি চুপ হয়ে বসে থাকেন।বাবাকে এভাবে হারতে দেখে আদনান চুপসে যায়।সে জানে এখানে আর কোনো কথাই কাজ হবে না।চারুকে নিয়ে যেতেই হবে তার সাথে।
আদনান কোনো কথা না বলে চুপ করে উঠে দাঁড়ায়।আদনানের পর উঠে দাঁড়ায় হালিম সাহেব।খানিকক্ষন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি উপহার দিয়ে চলে যান তিনি।আদনান আর তার বাবা নিজ নিজ লক্ষ্যে পৌঁছার সাথে সাথে রাহিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চারু।রিমি তাকিয়ে দেখছে আর হাসছে।চারু রাহিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরা অবস্তায় বলে,
---' খালামনি,আমি ভাবতেও পারি নাই তুমি এত তারাতারি,এত সহজে ওনাকে রাজি করতে পারবে।কালকে উনি বলেছিল,মরে গেলেও আমাকে নিয়ে যাবে না। '
চারু কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় রাহিনা বেগম।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' সব গুছিয়ে নিস।সব গোছানো হলে একবার আমার রুমে আসিসতো। '
এই বলে রাহিনা বেগম সেই স্থান ত্যাগ করে।চারু মাথা ঘুরিয়ে তাকায় রিমির দিকে।দুজনের মধ্যে চোখা-চোখি হয়ে যায়।একপর্যায়ে হেসে ফেলে দুইজনেই।রিমি হাসতে হাসতে বলে,
---' তাইলে ভাবিজান,আপনার ঢাকা যাওয়া পাকা।ইস,তোর ভাগ্য কত ভালো দেখ।একই বয়স দুজনের অথচ আমি বন্ধি হয়ে থাকবো আর তুই মজায় মজায় ঘুরে বেড়াবি।আর ইউ লাকি চারু '
রিমির কথায় চারু না হেসে পারে না।সে রিমির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমকে লক্ষ করে রওনা দেয়।রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দেয় কেউ।চারু ঝট করে পিছনে তাকায়।আদনান দাঁড়িয়ে আছে পিছনে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারন করেছে।আদনান আস্তে আস্তে চারুর দিকে এগোচ্ছে।
অন্যকেউ হলে এতক্ষনে ভয়ে পিছিয়ে যেত কিন্তু চারু করছে তার উল্টোটা।সে আরো আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একপর্যায়ে দুজনেই খুব কাছাকাছি চলে আসে।তাদের দুজনের মধ্যে ফাকা রয়েছে কয়েক ইঞ্চি।
চারুর দৃষ্টি আদনানের মুখের দিকে।আদনান বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে চারুর দিকে।চারু আস্তে আস্তে আদনানের আরো কাছে আসতেছে।আদনানের পারফিউমের গন্ধে পাগল হয়ে যাচ্ছে চারু।সে আদনানের দিকে এগোতে এগোতে একবারে আদনানের শরিরের সাথে লেগে যায়।আদনান বিব্রত হয়ে খানিকটা পিছিয়ে যায়।চারু তার হাতটা দিয়ে আদনানের মুখটা ছুয়ে দেয়।আদনান জলন্ত চোখে তাকায় চারুর দিকে।
তার রাগান্তিত চোখকেও চারু ভয় পায়।এতে ঢের বিরক্ত হয় আদনান।চারু তার তর্জনী আঙ্গুলটা দিয়ে আদনানের ঠোটটা নাড়াচাড়া শুরু করে।আদনান পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে যায়।চারু নিজের মুখখানা আদনানের মুখের কাছাকাছি নিয়ে আসে।চারুর ঘন লাল লিপষ্টিক পাগল করছে আদনানকে।চারুর নিশ্বাশ পড়তে থাকে আদনানের মুখে।চারু নিজের ঠোটদুটো নিয়ে যায় আদনানের ঠোটের সামনে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই মুহুর্তে দরজায় বাড়ি মারে কেউ।সাথে সাথে চারুকে সড়িয়ে দিয়ে ভালো হয়ে দাঁড়ায় আদনান।চারু দরজা খুলতে যেতে যেতে বলে,
---' আজকে বাঁচলেও পরবর্তিতে সেই সুযোগ পাবেনা। '
চারু দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে থাকা আগন্তুক চারুকে সড়িয়ে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আদনানকে।চারু মেয়েটাকে দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।আদনানও চারুর দিকে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে..
---' আপু তুমি কেমন আছো? '
এভাবে আদনানকে ছাড়িয়ে নেওয়া মোটেও পছন্দ হয়নি তিনার,সেটা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তবুএ চারুর কথার উত্তর দেয় সে।এদিকে তিনা কি মনে করেছে আর কি মনে করেনি সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নাই চারুর।সে তিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' আপু তুমি বাহিরে অপেক্ষা করো আমরা সব গুছিয়ে নিয়ে একেবারে যাই '
চারুর এই কথাটায় প্রচন্ড রেগে যায় তিনা।জলন্ত চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
---' তুমি কে হে?আমাকে ঘর থেকে বের হতে বলছো '
তিনার কথার উত্তর চারু হাসি মুখেই দেয়।সে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
---' ওনার বউ।তুমি বাহিরে বসো আমরা আসতেছি।আর যদি বাহিরে যেতে না চাও,তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব 'এই কথাটা খানিকটা চিল্লিয়েই বলে চারু।
চারুর কথায় খানিকটা হলেও ভরকে যায় তিনা।আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা রুম থেকে বের হতে ধরে।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিমি।সে এতক্ষন সব কিছু দেখছিল আর হাসতেছিল।সেও চলে যায় সেখান থেকে।
সবাই বের হয়ে গেলে চারু খুব জোরে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।আদনান চুপ করে বসে পড়ে সোফায়।চারু রাগি চোখে তাকায় আদনানের দিকে সাথে এক পা-দু পা করে এগোতে থাকে তার দিকে।আদনান এখনো চুপ হয়ে বসে আছে।
চারু গিয়ে আদনানের পাশে বসে পড়ে।তারপর আদনানের মাথার চুলগুলো টেনে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,
---' খুব শখ,নিজের বউকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করার। '
চারুর কথায় আদনান কোনো উত্তর না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকায়।সে বুঝতে পারছে না তার দোষটা কোথায়।তিনা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো বলেই তো সেও জড়িয়ে ধরলো।আদনানের এরকম তাকানো দেখে চারুর প্রচন্ড হাসি পায়।কিন্তু সেই হাসিটাকে গোপন করে মুখে রাগি ভাবটা ধরে রেখে বলে,
---' এটাই লাষ্ট,আরেকবার যদি কোনো মেয়ের দিকে তাকানো বা ঢলাঢলি করছো তাহলে সোজা নিত্তিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেব '
নিত্তিয়ার কথা শুনে ঝট করে আদনান চারুর দিকে তাকায়।তারপর তারাতারি বসা থেকে উঠে পড়ে সে।এক ছো দিয়ে টেবিলের উপর থেকে নীল ডায়েরীটা তুলে নেয়।তারপর রওনা হয় ব্যালকনির দিকে।হঠাৎ আদনানের এমন ব্যবহারে খানিকটা ভরকে যায় চারু।সেও আদনানের পিছন পিছন ব্যালকনিতে যায়।আদনান ইজি চেয়ারটায় বসে আছে।চারু কোনো কথা না বলে আদনানের কোলে বসে।সে আদনানের চোখে পানি দেখে খানিকটা চমকে ওঠে কিন্তু পরবর্তিতে আবার রেগেও যায়।
সে ছো মেরে আদনানের কাছ থেকে নীল ডায়েরীটা নিজের দখলে করে নেয়।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে পানি,মুখ দিয়ে কোনো কথা বলছে না।চারু আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে নিজের ঠোট দুটো মিশিয়ে দেয় আদনানের ঠোটের সাথে।আজকে আদনানও রেসপন্স করছে।চারু খুশিতে দুইহাত দিয়ে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।আদনান তার হাত দুটো এগিয়ে দিতে চেয়েও দেয় না।সে নিত্তিয়ার সবগুণই চারুর মাঝে খুঁজে পেয়েছে শুধু মাত্র একটা ছাড়া।কি সেটা..
২২.
' আদনান-চারু,তোমাদের দুজনের সাথে তিনাও ঢাকা যেতে চাচ্ছে।তোমাদের কি মত? '
হালিম সাহেবের এই কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায় চারু।তবুও মুখে হাসি ভাব রেখে বলে,
---' খালু,তিনা আপুর কি কাজ ঢাকায় গিয়ে? '
হালিম সাহেবকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনা বলে ওঠে,
---' আমার খুব ইমপর্ট্যান্ট একটা কাজ আছে ঢাকায়।কালকের মধ্যে যেতে না পারলে শেষ।প্লেনেরও টিকেট পাইনি। '
চারু এক এক করে রাহিনা বেগম,রিমি ও আদনানের দিকে তাকায়।আদনান বাদে সবার মুখেই অস্বস্তি।চারু তার মুখের হাসিটা মুখেই রেখে বলে,
---' কিন্তু আপু আমাদেরতো ঢাকা পৌছাতে সাতদিন লাগবে।ঢাকা যাওয়ার পথে আমরা অনেককিছু ঘুরে দেখবো।অনেক জায়গায় থাকবো।কি বলেন আপনি? '
এই বলে আদনানের দিকে তাকায় চারু।আদনান না বলার জন্য মুখ খুলতেই চারু পা দিয়ে আদনানের পায়ে খুব জোড়ে একটা পাড়া দেয়।আদনান না বলতে গিয়েও হা বলে দেয়।আদনানের হ্যা শুনে হালিম সাহেব তিনার দিকে তাকিয়ে বলেন,
---' ওদের সাথে তাহলে তোমার যাওয়া হবে না মা।আচ্ছা তুমি চিন্তা করিওনা আমি এখনি প্লেনের টিকেট ম্যানেজ করছি। '
তিনা আর কোনো কথা না বলে সাইট ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নেয়।তারপর রওনা দেয় গেটের উদ্দেশ্যে।যাওয়ার সময় পিছনে না তাকিয়ে বলে,
---' তোমরা সবাই অনেক স্বার্থপর '
তার কথায় মনে মনে হেসে ওঠে রিমি ও চারু।চারু এবার নিজের ল্যাগেজটা নিয়ে হালিম সাহেবকে সালাম করে তারপর রাহিনা বেগমকে সালাম করে।সবার শেষে সে রিমিকে জড়িয়ে ধরে।রিমিও চারুকে জড়িয়ে ধরে চারু গালে চুমু খায়।
বাসার সবাই তাদের এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত আসে।সবার অনুমতি নিয়ে গাড়িতে প্রবেশ করে আদনান আর চারু।আদনান গাড়ি চালাতে শুরু করে।চারু জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাহিরের দৃশ্য দেখতে শুরু করে।
২৩.
' সিটবেল্টটা বাধ না চারু,নাহলে সমস্যা হতে পারে। '
আদনানের কথা শুনে খানিকটা রেগে যায় চারু।চোখ রাঙ্গিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
---' তুমি জানো আমি সিটবেল্ট বাধতে পারিনা তারপরেও কেন বাধতে বলো।আমি পারবো না।দরকার হলে তুমি বেধে যায়! '
শেষ পর্যন্ত আদনান আর কোনো উপায় না পেয়ে চারু দিকে ঝুকে তার সিট বেল্টটা লাগাতে শুরু করে।চারু নিশ্চুপ হয়ে আদনানকে দেখছে।আদনান সামনের দিকে তাকিয়ে সিটবেল্টটা বাধতে থাকে।
সিটবেল্ট বাধা শেষ হওয়ার সাথে সাথে চারু আদনানকে নিজের দিকে করে নেয়।চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।
আদনান চারুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।চারুও আদনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাহিরে প্রকৃতি দেখায় ব্যাস্ত হয়।গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে।আদনান মাঝে মাঝে চারুর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে ব্যাপারটা চারুর নজর এড়ায় না।আদনান যখনি তার দিকে তাকায় সে চোখ মেরে দেয়।
একপর্যায়ে চারু আদনানের কাধের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।আদনান চারুর মাথা সড়িয়ে না দিয়ে ওই অবস্থায় গাড়ি চালাতে থাকে।আদনান আড় চোখে চারুর দিকে তাকাচ্ছে ঘনঘন।কিছুক্ষনের জন্যে হলেও তার মনে হচ্ছে নিত্তিয়া যেন তার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে।চারু আর নিত্তিয়ার মধ্যে ৯৫℅ মিল খুজে পায় আদনান।কিন্তু বাকি ৫℅ খুজে পায়।কোনো একটা ঘাটতি আছে চারুর মাঝে যা নিত্তিয়ার ছিল না।আদনান গাড়িটা থামিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তার মনে হচ্ছে এটা নিত্তিয়াই।চারু নিত্তিয়ার মতো নীল শাড়ি লাল লিপষ্টিক পড়েছে।
হঠাৎ চোখ খুলে ফেলে চারু।আদনানকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড খুশি হয় সে।মুহুর্তের মধ্যে খুশিটা মিলিয়ে যায়।পিছন থেকে একটা লোক লাঠি দিয়ে আদনানের গাড়িটাতে একটা বারি মারে.
---' এখানে মাঝরাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়েছেন কেন?একটু সামনে এগোন। '
লোকটার কথা শুনেই বোঝা যায় লোকটা ট্রাফিক পুলিশ।কিছুক্ষনের মধ্যে প্রমাণটাও পেয়ে যায় চারু।লোকটা তার ক্যাপটা মাথায় দিয়ে অন্য গাড়ি গুলোকে সড়িয়ে দিতে থাকে।আদনান গাড়ি চালানো শুরু করে আবার।চারু মুখ থম করে বসে থাকে।তার ইচ্ছা করতেছে লোকটাকে আচ্ছা করে বকে দিতে।আজকে প্রথম আদনান তার দিকে ওভাবে তাকালো,কি সুন্দর একটা হ্যাপি হ্যাপি মোমেন্ট তৈরি হয়েছিল।সেই সময় ঠাস করে বাড়ি মেরে সব তছনছ করে দেয় লোকটা।তারই বা কি দোষ?তার কাজই তো এসব করা।
সব ভেবে চারু মাথা নিচু করে বসে থাকে।
আদনান চারুর দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে।তবে হাসিটা স্বজোড়ে না লুকিয়ে লুকিয়ে।চারু মত মুখ করে নিত্তিয়াও বসে থাকতো যখন মন খারাপ হতো।আদনান চারুকে দেখতেছে আর নিত্তিয়ার সাথে কাটানো সময় গুলো মনে করে খানিকটা আনন্দ পাচ্ছে।
চারু হঠাৎ মাথা তুলে আদনানের দিকে তাকায়।আদনানের লুকিয়ে লুকিয়ে হাসা তার রাগকে সুধ-আসল ছাড়াই দ্বিগুন করে দেয়।সে ঘুড়ে আদনানের দিকে বসতে যায় কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সিটবেল্টটা।চারু মাথাটা আদনানের দিকে করে খানিকটা জোড়ে বলে,
---' আপনি হাসতেছেন!কত্তবড় খারাপ লোক আপনি।কখনো তো আমাকে দেখেন না।আজকে একটু দেখছিলেন।সেই সময় ওই লোকটা সব তছনছ করে দিল।আর আপনি হাসতেছেন। '
আদনান চারুর দিকে একবার তাকিয়ে হাসির পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দেয়।আদনানের এই হাসির পরিমাণটা চারুর রাগকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।আদনান হাসতে হাসতে বলে,
---' হাসবো না তো কি করবো?তোর মুখটা তো দেখার মতো।হা হা '
আদনানের এমন বিটকেলে হাসি সহ্য করতে পারে না চারু।কিন্তু সিটবেল্টটার কারনে কিছু করতেও পারছে না।শেষ পর্যন্ত রাগে দুঃখে কাঁদতে শুরু করে চারু।চারুর কান্না দেখে অবাক হয়ে গাড়ি থামায় আদনান।নিজের সিটবেল্টটা খুলে চারুর দিকে ঘুরে বসে।চারু এখনও কান্না করেই যাচ্ছে।আদনান মুচকি হাসি দিয়ে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' আরে আরে কান্না করতেছিস কেন?এখানে কান্না করার কি হলো? '
আদনানের কথা শুনে চারুর কান্নার পরিমাণ আরো বেরে যায়।সে ইশারায় আদনানকে সিটবেল্টটা খুলে দিতে বলে।চারু এরকম ইশারা পেয়ে আদনান হো হো করে হেসে ওঠে।আদনানের হাসি দেখে চারুর কান্না উড়ে যায়।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে হাসিটা কিসের জন্য।আদনান নিজের হাসিটা বজায় রেখে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' তুই যে রকম তিড়িং-বিড়িং করে লাফাস,তোকে আটকে রাখার জন্য এই সিটবেল্টটাই পারফেক্ট।তুই ঢাকা পৌছা পর্যন্ত ওই অবস্থায় থাকবি। '
এই বলে আদনান পুনরায় গাড়ি চালায় মনযোগ দেয়।এর মধ্যে ওরা অনেক জায়গায় থামলেও আদনান এক বারের জন্যেও চারু বেল্ট খুলে দেয় নি।চারু অনেকবার খোলানোর চেষ্টা করলেও প্রতিবারে ব্যার্থ হয় সে।
২৪.
অবশেষে সব বাধা-বিপত্তি পেড়িয়ে ঢাকায় নিজের বাসায় পৌছায় তারা।আদনান গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে সব মাল নামায়।সব কিছু ঘরের ভিতরে রেখে এসে সব শেষে চারুকে নামায় আদনান।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে ভো একটা দৌড় মারে ঘরের দিকে।আদনান গাড়িটা পার্ক করে ভিতরে যায়।সে মনে করেছে চারু নিশ্চয় এখন কান্না করবো।করারই তো কথা এতসুন্দর একটা জার্নি সে উপভোগ করতে পারলো না।
আদনান ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে চারুকে দেখে চমকে ওঠে।চারু অলরেডি কাজে লেগে পড়েছে।সে আদনানকে দেখে কাজে লেগে পড়তে বলে।রাত নেমেছে।আদনানও চারুর সাথে কাজে লেগে পড়ে।কাজের মধ্যেখানে দুজনের মধ্যে কোনো প্রকার কথা আদান-প্রদান হয় না।দুইজনে নিশ্চুপ হয়ে কাজে লেগে থাকে।
একপর্যায়ে দুইজনের পেটই জানান দেয় যে তারা ক্ষুধার্ত।দুজন কাজ রেখে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।সবকিছু গোছানো প্রায় শেষ।শুধুমাত্র বিছানাটা গুছিয়ে শুয়ে পড়া বাকি।
আদনান সোফায় বসে পড়লে চারু ব্যাগ থেকে খাবারের প্যাকেট গুলো বের করে।আসার পথে আদনান দুটো ডিনার প্যাকেট নিয়েছিল।চারু খাবারের প্যাকেট বের করে চমকে ওঠে।একটা প্যাকেটের সব খাবার প্যাকেট ছিড়ে ব্যাগে পড়ে আছে।চারু আস্তে করে ছেড়া প্যাকেট তুলে ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়।অবশিষ্ট থাকে একটা প্যাকেট কিন্তু তারা মানুষ দুইজন।
চারু সেই অবশিষ্ট প্যাকেটটা আদনানকে দেয়।আদনান প্যাকেটটা নিতে ঘপঘপ করে খেতে শুরু করে।চারু পেটের ক্ষুধা নিয়ে এক দৃষ্টিতে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে তার পেটের ক্ষুধা বাড়ছে তো বাড়ছে।সে ক্ষুধা একদমই সহ্য করতে পারে না।আদনানও চারুর দিকে না তাকিয়ে একাই মনে সুখে খেয়েই যাচ্ছে।
রাগে,দুঃখে,ক্ষিধায় চারু কান্না করা শুরু করে দেয়।হঠাৎ করে কান্না করে ওঠায় খানিকটা অবাক হয়ে খাওয়া থামিয়ে তার দিকে তাকায় আদনান।চারু আদনানকে দেখে কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দেয়।আদনান প্যাকেটটা নিজের কোলের উপর রেখে ভ্রু-নাচিয়ে চারুকে জিজ্ঞাসা করে,
---' কান্না করতেছিস কেন?কি হইছে? '
চারু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে,
---' আপনি কত্তবড় খারাপ,একাই সব খেয়ে যাচ্ছেন।এদিকে আমি ক্ষিধায় মরে যাচ্ছি সেটা একবারও দেখছেন না।কি প্যাকেট নিছেন ওটা সব ছিড়ে পড়ে গেছে?আর আপনি একাই খেয়ে যাচ্ছেন আমাকে একটু দিচ্ছেনও না '
এই বলে আবার কান্না করতে শুরু করে চারু।আদনান একবার চারুর দিকে আরেকবার নিজের পেটের দিকে তাকায়।শেষ পর্যন্ত কি মনে করে খাবারের প্যাকেটটা চারুকে দিয়ে দেয়।তারপর সে বেসিনের উদ্দেশ্য রওনা দেয় হাত ধোয়ার জন্য।
চারু কান্না থামিয়ে খেতে শুরু করে।খাওয়ার এক পর্যায়ে তার মনে হয় সে যেমন ক্ষুধা সহ্য করতে না পারে,আদনানও যদি সেরকম ক্ষুধা সহ্য করতে না পারে।তার চেয়ে এই প্যাকেটটা দুজনে ভাগাভাগি করে খাই।তাতে কিছুটা হলে আমারও পেট ভরবে ওনারও পেট ভরবে।
এই ভেবে চারু খাবারের প্যাকেট নিয়ে গিয়ে সোফায় আদনানের পাশে বসে।কিছুটা খাবার হাতে তুলে নিয়ে আদনানের মুখের সামনে ধরে।আদনান নিজের মুখের সামনে খাবার দেখে মোবাইল থেকে চোখ তুলে তাকায় সেই আগন্তুকের দিকে,যে তার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরেছে।
আদনান চারুর দিকে তাকায়।চারু আদনানের দিকে খাবার তুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।আদনান তার দিকে তাকালে চোখাচোখি হয়ে যায় দুইজনের।চারু নিজের হাতের খাবার আদনানের মুখে তুলে দেয়।আদনান নিশ্চুপ হয়ে খাবার খাচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে।
চারু আদনানের কান্না দেখে তাকে হাসানোর জন্য বলে,
---' খাইছে,আবার শুরু হইলো ফ্যাচফ্যাচ কান্না।বুঝিনা বাপু,একটা ছেলে কেমনে এতটা ছ্যাচকাদুনে হতে পারে। '
এরকম হাসি-খুশিতে সাড়াজীবন কাটিয়ে দিতে না পারলেও খাওয়াটা হাসি-খুশিতেই শেষ হয় দুজনের।দুজনে হাত ধুয়ে এসে গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে বিছানার মধ্যে।
২৫.
বিছানায় শুয়ে দুইজনেই।চারু বারবার আদনানের বুকে মাথা রাখার চেষ্টা করলেও ফলাফল প্রতিবারে ব্যার্থই দাঁড়ায়।একপর্যায়ে সে রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে।আদনান টের চোখ দিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তারপর এমন একটা ভাব নিয়ে শুয়ে থাকে মনে হয় সে কিছুই জানেনা।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে খপ করে আদনানের হাত দুটো চিপে ধরে।তারপর এক লাফে আদনানের বুকে শুয়ে দুহাত দিয়ে আদনান আকড়ে ধরে নিজের মতো করে।দুইবার চেষ্টার পর আদনান যখন ব্যার্থ হয় তখন চেষ্টা করাই বাদ দিয়ে দেয়।
আদনান চেষ্টা করা বাদ দেয়াতে চারু মনে করে আদনান মনে হয় আর কিছু করবে না।কিন্তু এদিকে আদনানের মনে যে এরকম শয়তানি ছিল সেটা কে জানে?চারু এক ঢিল দিতেই আদনান চারুকে নিচে ফেলে নিজের চারুর উপর শুয়ে পড়ে।আদনানের এত বড় শরিরের ওজন চারু সহ্য করতে পারে না।সে আদনানকে সড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে।
ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনের ঠোট একত্র হয় যায়।এরকম কিছু ঘটবে দুজনের কেউ আশা করেনি।চারুর লাল লিপষ্টিক আদনানের ঠোট ছুয়ে কিছুটা দাগ করে দেয়।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়।দুজনের মধ্যেই ফুটে ওঠে লজ্জা নামক বস্তুটা।
আদনান আস্তে করে চারুর উপর থেকে নেমে গিয়ে অন্যপাশে মাথা করে শুয়ে পড়ে।চারুও একই কাজ করে।সেও অন্যপাশে মাথা করে শুয়ে পড়ে।হঠাৎ এরকম কিছু হবে দুজনের কেউই ভাবেনি।প্রস্তুতও ছিল না তারা এই রকম ঘটনার জন্য।তার জন্য খানিকটা লজ্জা পায় দুইজনেই।দুজন দুদিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সেদিনের মতো।
২৬.
সকালবেলা সবার আগে ঘুম ভেঙ্গে যায় চারু নামের মেয়েটির।তারাতারি বিছানা থেকে উঠে জানালার পর্দাটা সড়িয়ে দেয়।পর্দা সড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একফালি রোদ এসে গ্রাস করে নেয় তাকে।চারু হাসিমুখে তাকায় পাশে শুয়ে থাকা আদনানের দিকে।আদনানের ওষ্ঠের মধ্যে সে দেখতে পায় লাল লিপষ্টিকের দাগ।সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে উঠে পড়ে বিছানা থেকে।
এদিকে রোদের আলো এসে পড়ে আদনানের মুখে।ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।সে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়।সুর্য্যি মামার আলো এসে গ্রাস করে তার চোখকে।সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ভাবে,সত্ত্যি আজকে সকালটা অপুর্ব সুন্দর।
এই মুহুর্তে এক কাপ কফি নিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায় চারু।সে কফির কাপটা এগিয়ে দেয় আদনানের দিকে।আদনান চারুর দিকে হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে বিনিময়ে একটা হাসি উপহার দেয় চারুকে।চারু খানিকটা দৌড়ে রান্নাঘরে যায়।তারপর নিজের কফির কাপটা নিয়ে আসে শোবার রুমে।আদনান বিছানায় আর চারু সোফায় বসে পড়ে।
দুজনে ঘন ঘন চুমুক বসাতে থাকে কফির কাপে।কারো মুখে কোনোরকম কথা ফুটছে না।সবাই নিজ নিজ কফির কাপের দিকে মনোযোগ দিয়ে বসে আছে।একপর্যায়ে কফি শেষ করে আদনান কাপটা চারুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
---' সত্ত্যি,কফিটা অসাধারণ ছিল।থ্যাংকস '
চারু আদনানের কথার প্রতিউত্তরে ওয়েকলাম বলে।আদনান বিছানা থেকে উঠে বসে রওনা হয় ওয়াসরুমের দিকে।ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসে সে।এরপর চারু যায় ফ্রেস হতে।সেও ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসে।
চারু গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।আদনান মোবাইল টিপছে।চারু সোফা থেকে উঠে মাথা চাড়া দিয়ে দেখার চেষ্টা করে আদনান কি দেখছে?আদনান যা করছে তা দেখে সে অবাক হয়ে যায়।আদনান নিত্তিয়ার সব ছবি নিজের ফোন থেকে ডিলেট করছে।চারু যেমন অবাক হয় তেমন খুশিও হয় এই ভেবে যে সে নিশ্চয় আদনানের মনে একটু হলেও নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছে।
এই মুহুর্তে কলিংবেল বেজে ওঠে।চারু দরজা খোলার জন্য যেতে ধরলে আদনান তাকে বসিয়ে দেয়।সে খানিকটা সন্দেহ নিয়ে এগোয় দরজার দিকে।কে আসলো এত তারাতারি?ওরাতো ঢাকার কাউকে চেনে না।আদনান আস্তে করে দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন ডাক-পিয়ন।তার পোষাক দেখে আদনান চিনে ফেলে।ডাক-পিয়ন আদনানের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে এক জায়গায় সিগনেচার নিয়ে চলে যায়।আদনান অবাক হয়ে চিঠিটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে ভিতরে আসে।চিঠি!কে পাঠালো!খামের উপরে লেখা আছে রাহিনা বেগম।তার মায়ের নাম।মা কে চিঠি পাঠাবে?এসব প্রশ্ন ঘুরঘুর করতে থাকে তার মাথায়।
সে চিঠিটা নিয়ে এসে বিছানায় বসে পড়ে।চারু আদনানের হাতে চিঠিটা দেখে অবাক হয়ে আদনানকে প্রশ্ন করে,
---' চিঠি,কে দিল? '
আদনান খামটা খুলতে খুলতে বলে,
---' উপরেতো আম্মুর নাম লেখা।দেখা যাক ভিতরে কি থাকে? '
রাহিনা বেগমের নাম লেখা আছে শুনে চারুর আগ্রহ আরোবেড়ে যায়।সেও আদনানের দিকে ঝুকে পড়ে।আদনান খামটা খুলে প্রথমে দুটো প্লেনের টিকেট বের করে।তারপর সেই টিকেট দুটা চারুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আস্তে করে বের করে আনে একটা বড় কালার পেপার।পেপারটার ভাজ খুলতে শুরু করে আদনান।ভাজ খুলতেই চোখের সামনে ফুটে ওঠে বিভিন্ন কালার পেন্সিল দিয়ে রং করা একটা লেখা।লেখাটা হলো,
হ্যাপি হানিমুন
আদনান কাগজটা দেখে চারুর দিকে এগিয়ে দেয় কাগজটা।চারুও ভালোভাবে লক্ষ করে কাগজটা।কাগজটাতে সুন্দর করে লেখা আছে হ্যাপি হানিমুন।আর কোনো কিছু লেখা নেই কাগজটাতে।আদনান এবার চারুর হাত থেকে টিকিট দুটো নেয় দেখার জন্য যে কোথায় যাচ্ছে তারা।টিকিট দুটোতে লেখা আছে,ঢাকা টু লস অ্যাঞ্জেলস।জায়গাটা প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে,হলিউড থেকে মাত্র কয়েক মাইল দুরে।
চারু খানিকটা আনন্দ নিয়ে আদনানকে জিজ্ঞাসা করে,
---' কোথায় যাচ্ছি আমরা? '
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
---' প্রশান্ত মহাসাগরে যাচ্ছি,আর মাত্র ২দিন পর।তুই একাই যাস আমি যাবো না। '
আদনানের এহেন কথা শুনে তার দিকে তাকায় চারু।চকিতে বুঝে ফেলে এটা মজা ছিল।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।তার দেখা-দেখে আদনানও হেসে ফেলে।সে হাসতে হাসতে বলে,
---' আম্মু কতটা চালাক।সে আমাদের আসার আগেই ডাক-অফিসে চিঠি দিয়ে এসেছে কিন্তু আমাদের সড়াসড়ি দেয়নি।ওফ সিট।ভিসা গুলো কই '
এই বলে সে আবার খামের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়।বের করে আনে ঝকঝকে দুটো টুরিষ্ট ভিসা বই।দুজনের মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির এক হাসি।
২৬.
আমেরিকা যাওয়ার দিন সকাল বেলা এক নতুন একটা অঘটন ঘটিয়ে বসে থাকে চারু।এদিকে ঘনিয়ে আসছে ফ্লাইটের সময়।তাদের যাওয়া হবে কি হবেনা সবকিছু এখন ডিপেন্ড করছে একটা মেকানিকের হাত।তবে আর কয়েকমিনিটের মধ্যে শেষ না হলে তাদের আর যাওয়া হবে না আমেরিকা।হবে না কোন প্রকার...
Writer:- নিয়াজ মুকিত