> তৃণশয্যা পর্ব ৬, ১০ - Bangla story - নিয়াজ মুকিত
-->

তৃণশয্যা পর্ব ৬, ১০ - Bangla story - নিয়াজ মুকিত



চারু অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।আদনানের ঠোটের কোনে হাসি।কিন্তু আদনানতো অন্য একজনকে ভালোবাসে তাহলে হাসতেছে কেন?নাকি আদনানের মনে অন্যকিছু চলছে?আমজাদ সাহেব আবার বলতে শুরু করেন,
---' বিয়েটাতে অনুষ্ঠান করবো না ঘরোয়া ভাবেই হবে। '
আদনান কিছু না বলে চুপ হয়ে আছে।কিন্তু চারু মুখ ফুটে বলে,
---' বাবা,এটা কেমন সিদ্ধান্ত?আমি রাজি নই।তুমি অন্য যে কোনো ছেলের সাথে বিয়ে দাও তবুও করবো ‌কিন্তু এই বিয়ে করবো ‌না। '
চারুর বাবা আমজাদ সাহেব রেগে চারুর দিকে তাকান।চারু খানিকটা ভয় পেয়ে যায়।সাথে সাথে নিচু করে নেয় নিজের মাথাটা।কিন্তু চারু অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে আদনান কিছু বলছে না কেন?সে না সেই মেয়েটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে,তাহলে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে কেন?আমজাদ তার শেষ কথা বলে চলে যান।তার শেষ কথা ছিল,কেউ রাজি থাকুক আর না থাকুক এই বিয়ে হবেই।আমজাদ সাহেবের পর আদনানের মা ও চারুর মা সেখান থেকে চলে যায়।আদনান ধপ করে বসে পড়ে বিছানায়।চারু লজ্জায় আদনানের দিকে তাকাতে পারছে না।
আদনান মাথা নিচু করে গম্ভীর হয়ে কিছু ভাবছে।সে ইশারায় চারুকে সামনের সোফায় বসতে বলে।চারু তার কথা মতো চুপ করে সোফাটাতে বসে পড়ে।আদনান উঠে গিয়ে লাগিয়ে দেয় দরজাটা।তারপর আবার গিয়ে বসে পড়ে আগের জায়গায়।মুখ তুলে তাকায় চারুর দিকে।একসঙ্গে চারুও তাকায় আদনানের দিকে।চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।চারুকে অবাক করে দিয়ে আদনান হা হা করে হেসে ওঠে।চারু আদনানকে দেখছে আর ভাবছে,পাগল হয়ে গেল নাকি লোকটা।চারু কিছুটা ভয় নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় আদনানকে বলে,
---' ভাইয়া,আপনি এভাবে হাসতেছেন কেন? '
কথাটা শুনে হাসিটা থেমে যায় আদনানের।চোখ লাল করে তাকায় চারুর দিকে।রক্তিম চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায় চারু।আদনান উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে,
---' তোর কপালটা সত্ত্যি পোড়া।একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হলো তাকে ভাগিয়ে দিলি।আমার মতে তাকেই তোর বিয়ে করা ভালো ছিল।আর আমি তো তোর মতো নিচু ক্লাসের কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো‌ না।তাই তোর জন্য কষ্টে হাসি পাচ্ছে।তোর বাবাকে বলে দিস,আমি বিয়ে করতে পারবো না। '
চারু ভালো করেই বুঝতে পারছে আদনান তাকে অপমান করলো।তবুও মুখ বুঝে সহ্য করে চারু কোনো ‌কথা বলে না।তার মতে একটা পবিত্র ভালোবাসা পূর্ণতা পাক এটাই বেশি।সে নিচু ক্লাসের মেয়ে নিচু ক্লাসেরই কোনো ছেলেকে বিয়ে করে নেবে।এসব ভাবতে ভাবতে চারু সেখান থেকে বের হয়ে আসে।তারপর রওনা দেয় ছাদের উদ্দেশ্য।ছাদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায় যেখানে দাঁড়ালে অত সহজে বোঝা যায় না যে ওখানে কেউ আছে।চারু এক দৃষ্টিতে তাকায় আকাশের দিকে।
এই মুহুর্তে কারো উপস্থিতি টের পায় চারু।মাথা ঘুরিয়ে তাকায় পিছনের দিকে।আদনান একটা ফোন হাতে পায়চারি করছে।মনে হয় মেয়েটাকে ফোন দিতে চাচ্ছে।একপর্যায়ে আদনান ফোনটা কানের কাছে ধরে বলে,
---' নিত্তিয়া তুমি কেমন আছো এখন।আমি আজকে রাতেই যাবো। '
ওপাশ থেকে কি বলে সেটা শোনার কৌতুহল ধরে রাখতে পারেনা চারু।তখনকার মতো নিঃশব্দে আগাতে থাকে আদনানের দিকে।দাঁড়িয়ে পড়ে একবারে আদনানের পিছে।ওপাশ থেকে বলছে,
---' নাহ,প্লিজ তুমি এসো না।বাবা শটগান নিয়ে পাহারা দিচ্ছে।আমার বিয়েটা দিতে না পারলে তার লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।তুমি এসো না।তোমার কিছু হলে আমি সত্ত্যিই বাঁচতে পারবো ‌না। '
এই বলে ওপাশ থেকে ভেসে আসে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ।সাথে সাথে কেটে যায় ফোনটা।চারু সেখান থেকে সড়ে পড়ার আগেই আদনান পিছনে ঘোরে।চারু বরফের মতো জমে যায়।আদনান চারুকে দেখে চমকে ওঠে।চারু দৌড়ে পালাতে ধরলে আদনান তার হাতটা ধরে দোলানায় বসিয়ে দেয়।আদনান রেগে তাকায় চারুর দিকে।চারু মাথা নিচু করে ফেলে।
আদনান এবার চারুর মাথাটা ধরে বলে,
---' আমার পিছনে দাঁড়িয়ে কি শুনছিলি?বল তারাতারি? '
কথাটা আদনান খানিকটা চিল্লিয়েই বলে।চারু চমকে ওঠে আদনানের গলার আওয়াজে।ভয়ে কাপতে কাপতে বলে,
---' মেয়েটার ক-থা '
আদনান এবার খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
---' সব শুনেছিস? '
চারু মাথা নাড়িয়ে হা-বোধক উত্তর দেয়।আদনান আস্তে করে বসে পড়ে চারুর পাশে।তারপর চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' হুম আমি ওই মেয়েটাকে ভালোবাসি।নিজের থেকেও বেশি।সেও আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু হঠাৎ তার বাবা বিয়ে ঠিক করে।সে পালাতে ধরলে তার বাবা ধরে ফেলে।তারপর‌ একটা ঘরে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে।না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে? '
এই বলে মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলে আদনান।চারু কিছুটা ভয় নিয়ে তার হাতটা আদনানের কাধের উপরে রাখে।তারপর আদনানকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বলে,
---' আজকে তো তাকে আনতে যাবে।আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে। '
সাথে সাথে আদনান চারুর দিকে তাকায়।তার শুকিয়ে যাওয়া গলাটা দিয়ে বলে,
---' কি বুদ্ধি? '
চারু এবার আদনানের দিকে ঘুরে বসে।তারপর চারদিকে তাকিয়ে নেয় একবার।তারপর আস্তে করে বলে,
---' তুমি যদি তাকে বের করতে যাও তাহলেতো ‌তোমাকে ধরে ফেলবে।তারচেয়ে আমি তার বান্ধবি সেজে যাব।তারপর তাকে বাসা থেকে বের করে আনবো।তুমি বাহিরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবে।আমি তোমাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে চলে আসবো। '
চারুর এই প্লানটা মনে ধরে আদনানের।তাইতো চারুর পিঠে খুব জোরে একটা মেরে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
---' ভালো বুদ্ধি বের করেছিস।যা তোদের থেকে আর ৩০০টাকা নিব না। '
এদিকে মাইরটা খুব জোরে হওয়ায় পিঠটাতে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে চারুর।আদনান দোলনা থেকে উঠে চলে যায়।চারু বসে ব্যাথায় হাত দিয়ে মালিশ করতে থাকে।
১০.
অবশেষে চলে আসে কাঙ্খিত সেই সময়।আদনান আর চারু দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটার বাড়ির সামনে।চারু আদনানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।দারোয়ান জিজ্ঞাসা করে জেনে ‌নেয় নিত্তিয়াদের ফ্লাট কোনটা।দারোয়ানের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী চারু দরজার সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজায়।দরজা খুলে দেয় এক মহিলা।চারুকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
---' কি চাই? '
চারু সাথে সাথে উত্তর দেয়,-' নিত্তিয়ার সাথে দেখা করবো।আমার একটা নোট তার কাছে আছে। '
মহিলা বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে চারুকে ভিতরে ‌‌নিয়ে যায়।তারপর একটা দরজার সামনে গিয়ে দরজায় মারতে মারতে বলে,
---' নিতি তোর বান্ধবি‌ এসেছে। '
সাথে সাথে খুলে‌ যায় দরজা।নীল রংয়ের জামা পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারুর সামনে।চারু তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।তারপর দরজাটা লাগিয়ে দেয়।নিত্তিয়ার মা বোকা মহিলা সেখান থেকে চলে যায়।চারু দেখতে পায় ঘরের বিছানার মধ্যে শিকল।নিত্তিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
---' এই মেয়ে তুমি কে? '
চারু সাথে সাথে বলে,--' আদনান ভাইয়া পাঠাইছে তোমাকে নিয়ে যেতে। '
মেয়েটা সাথে সাথে বলে,' চলো। '
এই বলে সে চারুকে নিয়ে একটা জানলার সামনে আসে।জানালা দিয়ে লাফ দেয় প্রথমে নিতি।তারপর চারু।রোডের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে আদনান।চারু আর নিত্তিয়াকে আসতে দেখে বাইকে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।নিত্তিয়া আর চারু দৌড় দেয় আদনানকে লক্ষ্য করে।এই মুহুর্তে একটা ট্রাক চলে আসে তাদের সামনে।আদনান থ মেরে যায়।খুব জোরে একটা চিল্লান শোনা যায়।আদনান দৌড়ে সেখানে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।দেখার চেষ্টা করে কার ক্ষতি হলো।চারু দেহটা পড়ে আছে।তারপাশে নিত্তিয়া।আদনান পরিক্ষা করতে শুরু করে দুজনকে।নিত্তিয়ার আগে চারুকে পরিক্ষা করে।চারুর নার্ভ ধরে সে।তারপর আস্তে করে ছেড়ে দেয়। চারু...


আদনান আগে চারুর নার্ভ চেক করে।চারুর থেকে ১০হাত দুরে পরে আছে নিত্তিয়া।নিত্তিয়ার মাথা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে কিন্তু চারুর মাথা দিয়ে নয় হাত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।আদনান চারুর নার্ভ চেক করে বুঝতে পারে চারুর নিশ্বাস বইছে এখনো।তারপর দৌড়ে আদনান চলে যায় নিত্তিয়ার কাছে।চোখের পানি ফেলতে ফেলতে নিত্তিয়ার হাতটা ধরে।হাতটা ধরেই চমকে ওঠে আদনান।সবকিছু ঠান্ডা হয়ে গেছে।আদনান নার্ভ চেক করে নিত্তিয়ার।নার্ভ চেক করেই আদনান নিত্তিয়ার হাতটা নিজের বুকের মধ্যে ধরে কান্না করতে শুরু করে।এদিকে চারুর হাত দিয়ে রক্ত বইছে এখনো।
এই মুহুর্তে আদনানের কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছেনা সে?নিত্তিয়াতো এই পৃথিবীকে,আদনানকে বিদায় জানিয়ে ওপারে চলে গেছে কিন্তু চারুতো এখনো আছে।তাকে বাঁচাতে হবে।আদনান মুহুর্তের মধ্যে উঠে দাঁড়ায়।ভাবতে শুরু করে নিত্তিয়ার লাশ টাকে কোথায় রাখবে?আদনান কোলে তুলে নেয় নিত্তিয়াকে।নিত্তিয়ার রক্তে ভিজে যায় আদনানের সাদা পাঞ্জাবী।আদনান নিত্তিয়ার লাশটাকে নিয়ে গিয়ে রাখে তাদের বাসার সামনে।
তারপর দৌড়ে এসে চারুকে নিজের বাইকে তোলে।চারুকে এই অবস্তায় নিয়ে যাওয়া যাবে না তাহলে ঢলে পড়ে যাবে।আদনান চারুকে বাইকের সামনে বসায়।চারুর নিথর দেহটা পড়ে যেতে ধরে।আদনান অনেক কষ্টে চারুকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বাইক চালাতে শুরু করে।কাছাকাছি মেডিকেল থাকায় বেশি কষ্ট করতে হয় না আদনানকে।সে মেডিকেলের সামনে এসে চারুকে নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর ডাক্তার ডাক্তার বলে চিল্লাতে চিল্লাতে ভিতরে প্রবেশ করে আদনান।তার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।আদনানকে এই অবস্তায় দেখে এগিয়ে আসে একজন ডাক্তার।তিনি কয়েকজন নার্সকে আদেশ দেন চারুকে ভিতরে নিয়ে যেতে।তিনি আদনানকে অপেক্ষা করতে বলে নিজে ভিতরে প্রবেশ করেন।
আদনান ধপ করে বসে পড়ে মেঝেতে।সাথে সাথে আবার উঠে দাঁড়ায় আদনান।কান্না করতে করতে বাইক নিয়ে আবার রওনা দেয় নিত্তিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে।কিছুক্ষন পরই সেখানে পৌছায় আদনান।নিত্তিয়ার মৃত দেহটা এখনো পড়ে আছে দরজার সামনে।আদনান নিত্তিয়াকে কোলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে।একপর্যায়ে রাস্তায় হোচট খেয়ে পড়ে যায় আদনান।নিত্তিয়া তার কোল থেকে ঢলে পড়ে।আদনান নিত্তিয়া জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে জোরে জোরে।
১১.
কিছুক্ষন পরই জ্ঞান ফেরে চারুর।তাকিয়ে দেখে হাতে ব্যান্ডেজ করা।পাশে দাঁড়িয়ে আশে একজন সুদর্শন ডাক্তার।চারু খানিকটা উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে,
---' আমি কি এখন নিরাপদ?আর কতক্ষন অজ্ঞান হয়ে ছিলাম? '
চারুর মুখের কথা শুনে ডাক্তারটা খানিকটা হেসে বলে,
---' ১ঘন্টা যাবৎ আপনি অজ্ঞান ছিলেন।আপনি এখন নিরাপদ।শুধু মাত্র এই হাতটাতে চোট পেয়েছে আপনার।আপনাকে একটা ছেলে কোলে নিয়ে এসেছিল।কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। '
চারু বুঝতে পারছে ডাক্তার কার কথা বলছে।নিজের জন্যে যতটা না চিন্তা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে নিত্তিয়ার জন্য।নিত্তিয়া ঠিক আছে কিনা নেই।চারু আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়।ডাক্তার তাকে নিষেধ করলেও সে শুনে না।তাকে এখন কষ্ট করে হলেও নিত্তিয়াদের বাসায় যেতে হবে।চারু বের হয়ে হাটতে শুরু করে।রাস্তা দিয়ে হাটতেছে আর চারদিকে তাকাচ্ছে।
প্রায় ১০মিনিট হাটার পর চারু এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে দেখতে পায়।ভালো করে দেখার জন্য আরেকটু সামনে যায়।সামনে এগিয়েই‌ চমকে ওঠে চারু।মাটিতে পড়ে আছে নিত্তিয়ার দেহ।তার বুকের উপর মাথা রেখে নিরবে কান্না করছে আদনান।রাতের চাদের আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে আদনানের মুখটা।
চারু আদনানকে দেখলেও আদনান এখনো চারুকে দেখতে পায়নি।আদনান এবার উঠে দাঁড়ায়।তারপর নিত্তিয়ার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর রক্তাক্ত কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।চোখদুটোতেও ছুয়ে দেয় ভালোবাসার পরশ।তারপর চুলগুলো নাড়তে নাড়তে আদনান বলতে শুরু করে,
---' নিতি তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে এভাবে।আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।মনটা বারবার বলছে,নিতি যায়নি এইতো নিতি শুয়ে আছে। '
এইটুকু কথা বলে চোখের পানি মুছে আদনান আবার বলতে শুরু করে,
---' যাই হোক।আমি জানি তুমি আর ফিরে আসবে না।কিন্তু তোমার এই দেহটা সারাজীবন আমার কাছে থাকবে।তুমি শুধু আমার থাকবে।যেদিন আমার মৃত্যু হবে সেদিন এক সঙ্গে একই‌কবরে দুজ‌নই থাকবো।আমি থাকতে তোমাকে কারো হতে দেব না।এই মাটিও যেন তোমাকে ছুতে না পারে। '
এই বলে নিজের মাথাটা নিত্তিয়ার বুকের উপর রাখে আদনান।চারু সব কিছু দেখছিল ‌এতক্ষন ধরে।চারুর চোখের পানি বাধ মানছে না।চারু আস্তে আস্তে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।আদনানের কাছে গিয়ে ধপ করে বসে থাকে।একহাতে ব্যান্ডেজ থাকার কারনে অন্যহাতটা দিয়ে আদনানের মাথায় হাত দেয়।আদনান চমকে ওঠে।তারাতারি করে উঠে বসে।সামনে চারুকে দেখে সাথে সাথে চারুকে জড়িয়ে ধরে আদনান।চারুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে আদনান।চারুও এক হাত দিয়ে আদনানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
১২.
' বাবা আদনান,ছেড়ে দেও ‌না ওকে।ওতো মরে গেছে।ওকে রেখে কি হবে।তুমি ওকে ছেড়ে দেও।ওর জানাজা হবেতো। '
কথাটা আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে আদনানের মা।তার সাথে নিত্তিয়ার মা-বাবা,চারুর বাবা-মা সবাই রয়েছে।সবাই খবর পেয়ে এসে ভিড় জমিয়েছে রাস্তাটায়।চারুই আদনানের মোবাইলটা দিয়ে চারুর বাবা-মাকে কল দিয়েছে।আশেপাশের কয়েকজন প্রতিবেশিও আছে সেখানে।আদনান এখনো নিত্তিয়াকে ধরে আছে।
একপর্যায়ে নিত্তিয়ার বাবার কথামতো আদনানকে নিত্তিয়ার কাছ থেকে আলাদা করে নেয় কয়েকজন প্রতিবেশি।সাথে সাথে নিত্তিয়াকে সেখান থেকে নিয়ে যায় কয়েকজন মহিলা।আদনান পাগলের মতো‌ গালাগাল করছে।সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিত্তিয়ার কাছে যাওয়ার।একপর্যায়ে নিত্তিয়াকে ভিতরে ‌নিয়ে যেতে দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আদনান।
১৩.
নিত্তিয়ার কবরের উপর শুয়ে আছে আদনান।তার পাশে বসে আছে চারু।দুজনের চোখ দিয়েই পানি পড়ছে।দিনের আলো ফুটেছে অনেক আগেই।গোরস্থানে মানুষ আসছে আত্মীয়দের করব যিয়ারত করার জন্য।চারু আদনানকে তোলার চেষ্টা করলে আদনান চারুকে ঝটকে ফেলে দেয়।তারপর আদনান কবরটার উপর শুয়ে বলতে শুরু করে,
---' নিতি,তোমার সাথে শেষ দেখাটাও ‌হলো না।মাফ ‌করে দিও আমাকে।তোমার বুকে মাথা রেখে কাটাতে চেয়েছিলাম সারাজীবন।কিন্তু ভাগ্য আমার পক্ষে ছিল না।জানো ‌এখ‌ন আমার খুব মনে পড়ছে তোমার কথাগুলো।ইচ্ছা করছে তোমার কাছে চলে যেতে।আমি তোমার কাছে যাব..'
এইবলে আদনান পাশে থাকা একটা লোহা হাতে তুলে নেয়।নিজেই নিজের মাথায় মারার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।চারু দৌর দেয় আসনানের দিকে...


আদনান লোহাটা নিজের মাথায় মারার আগেই চারু দৌড়ে এসে হাতটা এগিয়ে দেয়।ফলস্বরুপ মাইরটা লাগে চারুর হাতে।চারু ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে।আদনান হাতে থাকা লোহাটা ফেলে দিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তারপর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলে,
---' কেন আমাকে মরতে দিচ্ছিস না চারু।আটকাচ্ছিস কেন?ওপারে যে আমার নিতি আমার জন্য অপেক্ষা করছে?আমাকে কেন তার কাছে যেতে দিচ্ছিস না তুই?কেন কেন কেন..? '
এই বলে আবার কান্না করতে করতে কবরটা খুড়তে থাকে আদনান।পাগলের মতো মাটি সড়াচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে।সাথে মুখ দিয়ে বলছে,
---' আমি আসছি নিতি।তুমি শুধু আমার সাথেই থাকবে।তোমার আর আমার কবর হবে একটা। '
এই বলে আরো জোরে খুড়তে থাকে আদনান।আদনানের পাগলামি দেখে চারু দৌড়ে আসে আদনানের সাম‌নে।আদনানের মুখটা নিজের দিকে করে নেয়।তারপর দুইহাত দিয়ে আদনানের মুখটা শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করে,
---' ভাইয়া কি করছো তুমি?এটা বিশ্বাস করো যে নিত্তিয়া আপু আর আমাদের মাঝে নেই।সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।আর কখনো আসবে না।এটা বিশ্বাস করো..'
আদনান চারুকে ঝটকে ফেলে দেয়।তারপর আবার মাটি সড়াতে শুরু করে।
---' না নিতি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি তার কাছে যাবোই।কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে। ' আদনান মাটি খুড়তে খুড়তে বলতে থাকে।
এই মুহুর্তে সেখানে উপস্তিত হয় রিমি আর রিমির বাবা।ছেলের এই অবস্থা শুনে শত কাজ ছেড়ে চলে এসেছেন তিনি।তিনি দৌড়ে নিজের ছেলের কাছে যান।এক ঝটকায় ছেলেকে নিজের দিকে করে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন।আদনানও নিজের বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে,
---' বাবা!আমার সব চলে গেল।জীবনের মুল্যবান জিনিসটাকে হাড়িয়ে ফেললাম।জীবন থেকে চলে গেল সব সুখ শান্তি।বাবা আমার এখন তার কাছে যাওয়া উচিত তাইনা।সে নিশ্চয় আমার জন্য বসে আছে।বাবা আমি যাই বেশিক্ষন অপেক্ষা করানো যাবে না নিতিকে।খুব রেগে যাবে কিন্তু,শেষে আবার তার রাগ ভাঙ্গতে অনেক কষ্ট করতে হবে আমাকে।আমি যাই হ্যাঁ বাবা.. '
ছেলের পাগলামি দেখে কান্নার আওয়াজ আরো বেরে যায় হালিম সাহেবের।ছেলেকে বুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
---' না বাবা!সে অনেক স্বার্থপর,তোমাকে রেখে চলে গেছে।কয়েকদিন পর আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে তার কাছে যাবো।তুমি আর কারো কথা না ভাবো কিন্তু তোমার এই ছেলেটার কথা ভাবো।তুমি তো ‌বলতে আমি তোমার ছেলে তুমি আবার বাবা।আজকে কেন এই ছেলেটাকে এতিম করে চলে যেতে চাচ্ছো।কোনো বাবা কি নিজের ছেলেকে এতিম করতে পারে বলো? '
এই বলে তিনি আদনানকে আরো জোরে ধরিয়ে ধরেন।মুখটা চুমুতে ভড়িয়ে দেন আদনানের।বাবা-ছেলের এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না চারু আর রিমি দুজনেই।আদনান কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।তাকে ধরাধরি‌ করে গাড়িতে তোলে সবাই।আদনানের বাবা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন।ভাইয়ের মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছে রিমি।সাথে বিসর্জন দিচ্ছে চোখের পানি।চারু মাথা নিচু করে বসে আছে।
১৪.
সন্ধ্যা নামছে পশ্চিম আকাশে।এখনো জ্ঞান ফেরেনি আদনানের।আজকে যে বিয়ের কথা ছিল সেটা বেমালুম ভুলে গেছে বাসার সবাই।সবাই‌ আদনানকে ঘিরে বসে আছে।চারু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।আজ তার দোষের কারনেই আদনানের এই অবস্তা।তখন যদি দেখে শুনে রাস্তাটা পার হতো তাহলে‌ এটা হতো না।চারুর নিজেই আবার নিজের মনকে বলে,তারতো কোনো দোষ নেই।সেতো দেখতেছিল নিত্তিয়াইতো দৌড় দিল।
হঠাৎ চোখ খুলে যায় আদনানের।চোখ পিটপিট করে তাকাতে থাকে চারদিকে।বাসার সবাইকে নিজের সামনে‌ দেখে খানিকটা অবাকই হয় সে।তারপর আস্তে করে উঠে বসে বিছানায়।সে উঠে বসতেই তার বাবা-মা দুজনেই একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে,
---' এখন কেমন লাগছে বাবা? '
আদনান তার বাবা-মা দুজনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,' ভালো।কিন্তু খুব ক্ষুধা লাগছে। '
ছেলের ক্ষুধার কথা শুনে সাথে সাথে খাবার আনতে যান মা।এদিকে আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।একপর্যায়ে সে চারুকে বলে,
---' কিরে,তুই মাথা নিচু করে কি ভাবছিস?নিশ্চয় বিয়ের কথ... '
কথাটা সম্পুর্ন করে না আদনান।তার আগেই খাবার নিয়ে এসে তার সামনে ধরে তার মা।আদনান একবার তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।তারপর খেতে শুরু করে।সবাই বুঝতে পারছে সদ্য অজ্ঞান থেকে উঠে নিত্তিয়ার কথা ভুলে গেছে আদনান।কেউ মনে করিয়েও দিচ্ছে না তাকে।
খাওয়া শেষ করে আদনান উঠে দাঁড়ায়।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' তোমরা সবাই একটু বাহিরে যাওতো।আমি গুরুত্বপুর্ন একটা কাজ করবো। '
এই মুহুর্তে ছেলেকে একা ছাড়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই হালিম সাহেবের।তবুও অনিচ্ছাসত্ত্বে সবাইকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে আসেন তিনি।ধপ করে সোফায় বসে পড়েন হালিম সাহেব।চোখের কোনে জলজল করছে পানি কণা।হালিম সাহেবের এই অবস্তা দেখে চারুর বাবা আমজাদ সাহেব বলেন,
---' এই মুহুর্তে আমাদের এখানে থাকা ঠিক নয়।আমরা বরং আজকেই চলে যাই! '
আমজাদ সাহেবের এই কথাটা শুনে মাথা তুলে তার দিকে তাকান হালিম সাহেব।চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলেন,
---' নাহ।আপনাদের এখন এখানেই থাকতে হবে।আমার ছেলে যতদিন সুস্থ হয়নি ততদিন এখানেই থাকবেন আপনারা।আর আজকেতো চারু আর আদনানের বিয়ের ডেট ছিল।আজকেতো হলো না তবে কালকে বিয়ে হবে।আমি জানি এই মুহুর্তে আদনানকে একমাত্র চারুই ঠিক রাখতে পারবে।সেদিন আমি দেখেছি সব চারু কিভাবে আদনানকে বোঝাতে পারে। '
এই বলে তিনি উঠে দাঁড়ান।আস্তে আস্তে চারুর দিকে এগোতে থাকেন।একেবারে চারুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চারুর হাতটা ধরে নিজের হাতের উপর রেখে বলেন,
---' চারু মা,তুমি আমার মেয়ের বয়সি।তোমার কাছে আজকে একটা অনুরোধ করবো।এটাই তোমার কাছে আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়া।তুমি আমার ছেলেটার পাশে থেকে তাকে আবার আগের মতো‌ করো প্লিজ।আমি অনুরোধ করছি...'
চারু কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।হ্যা বলবে নাকি না বলবে বুঝতে পারছে না।সে এক এক করে তার বাবা মায়ের দিকে তাকায়।সবাই চোখের ইশারায় হ্যা বলতে বলে।অবশেষে সে তাকায় রিমির দিকে।রিমি চোখের ইশারায় চারুকে অনুরোধ করে হ্যা বলতে।চারু তার চোখ বন্ধ করে হ্যা বলতে যাবে এই মুহুর্তে তার হাত থেকে নিজের হাতটা সড়িয়ে নেন হালিম সাহেব।
চারু অবাক হয়ে চোখ খুলে তাকায় সামনের দিকে।একটা ছেলে এসে জড়িয়ে ধরে চারুকে।ছেলেটার পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তার মা।চারুও জড়িয়ে ধরে ছেলেটাকে।তারপর সে ছেলেটার কপালে চুমু খায়। ছেলেটা তার গালে চুমু খায়।সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।


ছেলেটা চারুর গালে চুমু খেলো।চারুও ছেলেটার গালে চুমু খায়।এতক্ষন সবার মুখটা মরমরা থাকলেও এখন কিছুটা হাসি ফুটে ওঠে সবার মুখে।পিছন থেকে ছেলের মা এসে ধপ করে বসে পড়ে সোফায়।চারু ছেলেটাকে নিজের কোলে তুলে নেয়।আসলে ছেলেটা চারুর চাচাতো ভাই।৫বছর বয়সে পা দিয়েছে কয়েকদিন আগেঅনেকদিন থেকে চারুর সাথে তার দেখা নাই।তাই এখানে চারুকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে ছেলেটা।
চারুর চাচিমার সাথে কথা বলছে সবাই।রিমি আর চারু ছেলেটা মানে রাব্বির সাথে মজা করছে।কিছুটা মুহুর্তের জন্য সবাই ভুলে গেছে আদনানের কথা।একপর্যায়ে চারুর চাচিমা চারুকে নিজের কাছে ডাকে।চারু রাব্বিকে রিমির কোলে দিয়ে আস্তে করে বসে পড়ে তার চাচিমার পাশে।বসতেই তার চাচিমা তাকে জিজ্ঞাসা করে,
---' কেমন আছিস মা?সেই ২বছর আগে গেছিলাম তারপর আর তোর সাথে দেখাই না।দুরে থাকি বলে কি একটু আসবিও না? '
চারু হাসি মুখে বলে,
---' এখনতো দেখা হলো।তুমি যদি আমাদের সাথে রংপুরে থাকতে তাহলেতো ‌প্রতিদিন দেখা করতাম।তুমিতো এখানে তাই দেখা হয়না। '
চারুর চাচিমা আর কোনো কথা না বলে রিমির মায়ের কাছ থেকে ওয়াসরুমের ঠিকানা নিয়ে সেদিকে রওনা হয়।তিনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে হালিম সাহেব আবার বলে ওঠে,
---' চারু মা,তুই কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলি না এখনো। '
চারু পুনরায় তার বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
---' আমি রাজি '
কথাটা শুনে হালিম সাহেব সহ সকলের মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।চারু লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে উঠে রিমির রুমের দিকে রওনা দেয়।যাওয়ার পথে হঠাৎ-ই মনে হয় আদনানের কথা।দৌড় দেয় সেদিকে।চারু দরজায় হাত দিতেই দরজাটা খুলে যায়।ভিতরে বিছানার উপর শুয়ে আছে আদনান।চারু আস্তে করে ভিতরে প্রবেশ করে আদনানের হাতে থাকা জিনিসটা দেখে খুব জোরে চিল্লিয়ে ওঠে।
তার চিৎকার শুনে সবাই তারাতারি‌ করে সেখানে উপস্তিত হয়।উপস্থিত হয়ে সবাই থমকে দাঁড়ায়।আদনানের মুখ দিয়ে গোল্লা বের হতে শুরু করেছে।হাতে ঘুমের ওষুধের পাতা।হালিম সাহেব আর আদনানের মা মাথায় হাত দিয়ে সেখানেই বসে পড়ে।চারু হাত-পা সব কিছু অবশ হয়ে গেছে।রিমি থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়।এই মুহুর্তে যে একটা আম্বুলেঞ্চ দরকার সেটা কারো মনে ঢুকছে না।
সবার এই অবস্থা দেখে নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে আম্বুলেঞ্চকে ফোন করে চারুর চাচি।কিছুক্ষনে মধ্যে পৌছে যায় আম্বুলেঞ্চ।কয়েকজন লোক আদনানকে ধরে আম্বুলেঞ্চে তোলে।আদনানের সাথে আম্বুলেঞ্চে ওঠে তার বাবা-মা ও চারু।বাকিরা বাড়িতেই থেকে যায়।
১৫.
আদনানের অপারেশন চলছে।ডাক্তার বলেছে একসাথে ৪টা ঘুমের ওষুধ খাওয়ার জন্য কিছুটা রিক্স আছে তবে বেশি না।ডাক্তারের কথায় কিছুটা হলেও আস্থা পেয়েছে হালিম সাহেব ও তার স্ত্রী,সাথে চারুও।তবে সবারই মনের মধ্যে একটা চিন্তা ঘুরঘুর করছে।
১ঘন্টা পর,
অপারেশন চেম্বার থেকে বের হয়ে আসে ডাক্তার।দৌড়ে তার কাছে যায় হালিম সাহেব।তার পিছন পিছন চারু ও রিমির মা রাহিনা বেগমও যায়।হালিম সাহেব ডাক্তারকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ডাক্তার বলে,
---' আপনাদের ভাগ্য ভালো যে ঠিক সময়ই নিয়ে এসেছেন।আর একটু হলেই হয়তো বড় ধরনের সমস্যা হতো।তবে এখন ঠিক আছে।জ্ঞান ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে '
এই বলে ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়।ডাক্তারের কথায় অনেকটা আস্থা পায় সবাই।সবাই গিয়ে বসে পড়ে চেয়ারে।বসার সাথে সাথেই হালিম সাহেব চারু আর রাহিনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' আমি জানি আদনান কেন ঘুমের ওষুধ খেয়েছে।সে তখন নিজে থেকেই ভালো হওয়ার অভিনয় করেছিল।নিত্তিয়াকে ভুলে থাকার অভিনয় করেছিল।সে আমাদের কষ্ট দিতে চায় না।তাই আমাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।তারপর...'
এই কথাগুলো শোনার পর রাহিনা বেগম হালিম সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' তুমি এত কিছু জানলে কিভাবে? '
হালিম সাহেব কো‌নো কথা না বলে তার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে রাহিনা বেগমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
---' এইখান থেকে '
রাহিনা বেগম স্বামীর কাছ থেকে এক ঝটকায় কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করে।চারুও মাথাটা এগিয়ে দিয়ে পড়তে শুরু করে।কিছুক্ষন আগে হালিম সাহেব যে কথাগুলো বললেন তাই সাজিয়ে লেখা আছে এতে।পড়া শেষ হলে মাথা তুলে হালিম সাহেবের দিকে তাকায় স্ত্রী রাহিনা বেগম।তার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।তিনি খানিকটা কান্না মৃশ্রিত গলায় বলেন,
---' আমার ছেলেটার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।সে কেন বুঝতেছে না যে আত্মহত্যা মহাপাপ।তাকে এখন চোখে চোখে রাখা প্রয়োজন।পাশ থেকে সাপোর্ট করা প্রয়োজন।এই সবকিছুই চারু করতে পারবে।আমি বাসায় গিয়েই কাজি সাহেবকে ফোন দিব।আজকেই বিয়ে হবে। '
চারু কোনো কথা না বলে একদৃষ্টিতে আদনানের ক্যাবিনের দিকে তাকিয়ে আছে।মনের মধ্যে হাজারো উল্টাপাল্টা ভাবনা আসতেছে।সে বুঝতে পারছে আদনান তাকে খুব সহজে মেনে নেবে না।ভালোবাসবে না তাকে।কারন তার জীবনে একজন ছিল যাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতো।কিন্তু চারু আদনানকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে।অতীতে চারুর জীবনে কেউ ছিল না।আদনানই প্রথম পুরুষ চারুর জীবনের।
হঠাৎ আদনানের ক্যাবিন থেকে একটা নার্স বের হয়ে আসে।তারপর হাসিমুখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' ওনার জ্ঞান ফিরেছে।আপনারা দেখে আসুন। '
এই কথা শোনা মাত্র আর এক সেকেন্ডও সেখানে বসে থাকেনা কেউ।সবাই গিয়ে প্রবেশ করে আদনানের ক্যাবিনে।আদনান উপরের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখের পানি ফেলতেছে।
১৬.
পরেরদিন সকালে তার রিলিজ হয়।বাসায় নিয়ে আসা হয় তাকে।বাসায় ঢুকেই চমকে ওঠে সবাই।বাসাটাকে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে।কাজি সাহেব এসে বসে আছে।কে করলো এসব বুঝতে পারছে না কেউ?রিমি হাসিমুখে সবাইকে দেখছে।তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার খালাতো ভাই ইশান।বয়সে রিমির ছোট সে।সবাই বুঝতে পারে কে করেছে এসব।
রিমি দরজা থেকেই চারুকে আলাদা করে নিজের রুমে নিয়ে যায়।ইশান আর আমজাদ সাহেব আদনানকে তার রুমে নিয়ে যায়।ভুলিয়ে ভালিয়ে একটা পাঞ্জাবী পড়ায় আদনানকে।
অবশেষে দুজনে এসে বসে কাজির সামনে।সবার অনুমতি নিয়ে বিয়ে পড়াতে শুরু করেন কাজি সাহেব।প্রথমে চারুকে তিনবার কবুল বলতে বলতে চারু কিছুটা চোখের পানি ফেলে কবুল বলে দেয়।কিন্তু আদনা‌নকে বলতেই আদনান চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায়।তার চোখ দিয়ে আগুনের ফোয়ারা ছুটছে মনে হয়।
তার সাথে উঠে দাঁড়ায় তার বাবা ও মা।তার মা তার সামনে গিয়ে আদনানের হাতটা ধরে তার নিজেরই মাথার উপর রেখে বলে,
---' আজকে তোর ভালোবাসার প্রমাণ হবে।তুই যদি নিত্তিয়াকে সত্ত্যিই ভালোবেসে থাকিস তাহলে এখনি কবুল বলবি পর যদি না ভালোবাসতিস তার সাথে ছলনা করেছিস তাহলে বলবি না।এখন কি করবি বল? '
আদনান খানিকটা রেগে বলে,
---' মা আমি নিত্তিয়ার সাথে ছলনা করিনি।তাকে মন থেকেই ভালোবেসেছি।তাকে ছাড়া আমি অন্যকাউকে বিয়ে করার কথা ভাবিনি আর ভাবতেও চাইনা। '
সাথে সাথে আদনানের বাবা বলে,
---' তাহলে কবুল বল।বাবা দেখ নিত্তিয়া মারা গেছে।সে ওপাশ থেকে চেয়ে আছে কখন তুই কবুল বলবি।তুই কবুল বললেই সে চলে যাবে।খুব খুশি হবে। '
তবুও আদনান রাজি হয় না।শেষ পর্যন্ত আর কোনো উপায় না পেয়ে রাহিনা বেগম ফলকাটা ছুরিটা নিজের গলায় ধরেন।আদনান এই দেখে চমকে ওঠে।রাহিনা বেগম আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' তুই কবুল না বললে এটাই আমার শেষ কথা হবে। '
আদনান মায়ের দিকে তাকিয়ে ধপ‌করে বসে পড়ে।এই মুহুর্তের নিত্তিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে।নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো যাকে তাকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছে আদনান।আদনান কিভাবে এটা করতে পারতেছে।সে তো নিত্তিয়া বলেছিল কখনো তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না।আদনান এসব ভাবতে ভাবতে চোখের পানি ফেলতে শুরু করে।তারপর নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে পরপর তিনবার কবুল বলে দেয় আদনান।
কবুল বলার পর এক মিনিটও সেখানে থাকেনা সে।রওনা দেয় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে।খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে মনে করে তার পিছন পিছন যায় চারু।আদনান নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়ার আগেই ভিতরে প্রবেশ করে চারু।আদনান চারুকে দেখে খুব রেগে যায়।সে চারুকে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার উপর চেপে বসে।পকেট থেকে বের করে ডেসলাইট।
চারু ভিষন চমকে যায়।আদনান ডেসলাইটটাতে আগুন জালাতে জালাতে বলে,
---' তুই নিত্তিয়া আর আমার মাঝে এসেছিস।তোকে মারলে আমার আর নিত্তিয়ার মাঝে আর কেউ থাকবে না। '
এই বলে আদদান চারুর শাড়ির আচলের কাছে আগুন নিয়ে যায়।হুট করে শাড়ির আচলে লেগে যায় আগুন..


আগুন লেগে যায় চারুর শাড়ির আচলে।আদনান এখনো চারুর উপরে বসে আছে।আগুন আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে।আদনান থ মেরে শুধু দেখছে।চারু বুঝতে পারছে এভাবে থাকলে তাকে আগুনে পুড়ে মরতে হবে।এদিকে শাড়ির আচল থেকে বেডশীটও পুড়তে শুরু করেছে।আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে আগুনের আচ।একপর্যায়ে চারুর পেটে লাগে আগুনের ছ্যাঁকা।চারু এক ঝটকায় আদনানকে উপর থেকে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।দৌড় দেয় বাথরুমের উদ্দেশ্যে।দৌড়ানোর কারনে বাতাস পেয়ে আগুন আরো উঠতে শুরু করে।তবে বাথরুমে প্রবেশ করে বাথট্যাবে শাড়ির আচলটা রাখতে একেবারে নিভে যায় আগুন।চারু দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয় তারপর একটা মগে পানি নিয়ে দৌড়ে ঘরের মধ্যে আসে।এসেই পানি গুলো ঢেলে দেয় বিছানার উপর।আগুনটা নিভে যায় বেডশীট থেকে।তবে অর্ধেকের চেয়ে বেশি পোড়া গেছে বেডশীট ও তোশক।আরেকটু হলে বেডটাতেও আগুন লাগতো।
আদনান এখনো নিচেই পড়ে আছে।চারু একবার আদনানের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।চুপিচুপি সে প্রবেশ করে রিমির রুমে।রিমি নেই দেখে তারাতারি দরজাটা লাগিয়ে দেয়।তারপর ব্যাগ থেকে একটা জামা বের করে বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়।চেঞ্জ করে এসে সে আবার আদনানের রুমে যায়।আদনান সোফার উপর বসে আছে আর বেডশীটটা দেখছে।
চারু প্রবেশ করতে তার নজরটা পড়ে চারুর দিকে।চারু আদনানের সামনে দিয়ে বেডটার কাছে যায়।তারাতারি করে বেডশীটটা তুলে ফেলে।তোশক পোড়া যাওয়ার কারনে আরেকটা বড় বেডশীট বিছিয়ে দেয় সে।এবার সে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান তার দিকে তাকিয়ে আছে।হাতে দেশলাইটটা এখনো‌ আছে।
১৭.
সমস্ত দিনটা পার করে ডিনার টেবিলে বসে আছে সবাই।লক্ষ্য ডিনার করা।রাহিনা বেগম সবাইকে খাবার তুলে দিচ্ছেন।আদনান প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।কমবেশি সবার নজরই তার দিকে শুধুমাত্র চারু বাদে।তার পেটে প্রচন্ড ক্ষিধা থাকার কারনে নজরটা খাবারের দিকে।রাহিনা বেগম চারুর প্লেটে খাবার দিতেই চারু খেতে শুরু করে।খাওয়ার মাঝখানে আমজাদ সাহেব বলে ওঠে,
---' তাহলে আমরা কালকে চলে‌ যাচ্ছি। '
এই কথাটা শুনে হালিম সাহেব কড়া চোখে তাকান আমজাদ সাহেবের দিকে।
---' কালকে যাবেন মানে,আরো কয়েকদিন থাকুন ' হালিম সাহেব বলে।তার কথার প্রতিউত্তরে আমজাদ সাহেব বলে ওঠে,
---' নাহ আর থাকা যাবেনা।অনেকদিন হইছে,অফিসের একটা গুরুত্বপুর্ণ কাজ আছে তাই যেতে হবে। '
শেষ পর্যন্ত সবাই অনেক জোর করলেও আমজাদ সাহেব নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন।বাবা-মা চলে যাবে শুনে মনটা প্রচুর খারাপ হয়ে যায় চারুর।চোখের কোনে পানি চলে আসে।রিমি চারুর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,
---' খালা-খালু কালকে যাবে তার দুইদিন পর আবার আমরা খালা-খালুর বাসায় যাব। '
রিমির এই কথাটা শুনে মুখ তুলে তার দিকে তাকায় চারু।রিমির হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।রিমির কথার উত্তরে আমজাদ সাহেব বলে,
---' অবশ্যই যাবে '
সেদিনের মতো শেষ হয়ে খাওয়া-দাওয়া।সবার আগে টেবিল থেকে উঠে পড়ে আদনান।কারো সাথে কোনো কথা না বলে পানি খেয়ে চলে যায় নিজের রুমে।চারু সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
---' আমি কি আজ রিমির সাথে থাকবো! '
চারুর এরকম বোকা বোকা প্রশ্নে বিব্রত হয় তার বাবা-মা।কিন্তু রিমি মুচকি হেসে বলে,
---' বিয়ের পর কেউ বরের সাথে না থেকে ননদের সাথে থাকে নাকি '
চারু বুঝতে পারে তাকে আজ আদনানের সাথে থাকতে হবে।সকালের ঘটনার পর আদনানের সাথে একবারও কথা বলেনি চারু।আদনান কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও এড়িয়ে গেছে চারু।চারু খাবার শেষ করে পানি খেয়ে রওনা দেয় আদনানের ঘরের উদ্দেশ্য।আস্তে করে দরজা খুলে দেখে আদনান কি করতেছে?কিন্তু সে আদনানকে ঘরে দেখতে পায় না।কৌতুহল নিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে চারু।
ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয় সে।তারপর ছোক-ছোক করে খুঁজতে শুরু করে আদনান নামক বস্তুটাকে।চারু খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে দেখতে পায় আদনান ব্যালকনির ইজি চেয়ারটা বসে আছে।বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আছে নীল ডায়েরীটা।চারু আস্তে আস্তে করে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একোর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে আদনানের ঠিক পিছনে।আদনান নীল ডায়েরীটা বুকে জড়িয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।চারু মনে মনে ভাবে,এই ছেলেটা এত ছ্যাচকাঁদুনি কেন?একটা মেয়ের জন্য কেউ এরকম থেকে থেকে কাঁদে।
চারু গিয়ে দাঁড়ায় একেবারে আদনানের সামনে।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে ভালো করে বসে।চারু সরাসরি আদনানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
---' ঘুমাবেন না! '
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
---' তুই ঘুমিয়ে পড় '
চারু এবার দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে।তারপর একটা টুল নিয়ে গিয়ে ঠিক আদনানের সামনে বসে পড়ে।আদনান অবাক হয়ে চারুকে দেখছে।এবার চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
---' আমি আপনার মতো ছিঁচকাদুনে ছেলে জীবনেও দেখি নাই।একটা মেয়ের জন্য কেউ এভাবে কাঁদে বলেন? '
চারুর বলার ভঙ্গি এমন ছিল যা দেখে আদনান না হেসে পারে না।আদনানকে হাসাতে পেরে চারু নিজে নিজে খুশি হয়।আদনান ঠোটের কোণে হাসিটা রেখে বলে,
---' আমি কই কান্না করতেছি।আমিতো এমনি বসে আছি।ভাবছি তখনকার জন্য তুই আমাকে মাফ করেছিস কিনা? '
চারু ভাবে এই সুযোগ।সে আদনানকে বলবে আপনি যদি আমার এই কথাটা রাখতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে মাফ করবো।
তার ভাবনার শেষে আদনান বলে ওঠে,
---' তুই কি আমাকে মাফ করেছিস? '
চারু গলাটা পরিষ্কার করে বলে,
---' নাহ করিনি তবে করতে পারি যদি আপনি আমার একটা কথা রাখতে পারেন। '
আদনান ভ্রু-কুঁচকে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
---' কি কথা? '
চারু হাসতে হাসতে বলে,
---' আপনি আর কখনো কাঁদবেন না।কখনো না!কথা দিন? '
এই বলে চারু তার হাতটা আদনানের দিকে এগিয়ে দেয়।আদনান কি যেন ভেবে হাসতে হাসতে চারুর হাতের উপর হাত রেখে বলে,
---' আচ্ছা যা কথা দিলাম। '
চারু এবার বলে,--' চলুন ঘুমিয়ে পড়ি '
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,--' তুই ঘুমা আমি একটু পর ঘুমাবো '
চারু ধপ করে আদনানের কোলে বসে পড়ে।চারুর এরকম কাজে আদনান অবাকের শেষ সীমানা পার হয়ে যায়।মুহুর্তের মধ্যে তার মাথার তার আবার ছিড়ে যায়।পকেট থেকে বের করে পকেট নাইফ।যেটা তার কাছে সবসময় থাকে।শুধু তার কাছে নয় পকেট নাইফ কমবেশি অনেক মানুষের কাছেই থাকে।এই নাইফটা দিয়ে কোনো কোনো সময় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আদনান নাইফটা বের করে।চারু চমকে ওঠে।সে কোল থেকে ওঠার আগেই....





Writer:- নিয়াজ মুকিত 
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner