> তৃণশয্যা ১৬, ১৯ শেষ পর্ব - Bangla new story - নিয়াজ মুকিত
-->

তৃণশয্যা ১৬, ১৯ শেষ পর্ব - Bangla new story - নিয়াজ মুকিত

তৃণশয্যা - bangla story - boipoka

হানিমুন যাওয়ার দিন সকালে চারু সর্বপ্রথম ঘুম থেকে উঠে।সে তারাতারি করে আদনানকে ডেকে দেয়।আজ সকাল ১০টায় তাদের ফ্লাইট।আদনান উঠে ফ্রেস হয়ে আসে।চারু কফি বানিয়ে এনে আদনানকে দেয়।তারপর সে নিজে ফ্রেস হতে যায়।চারু ফ্রেস হয়ে এসে কফির কাপটা হাতে নেয়।কালকে সব ব্যাগ গুছিয়ে রাখার কারনে এখন গোছাতে হচ্ছেনা তাদের।আদনান নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টা বাজে।সে তারাতারি চারুকে রেডি হতে বলে নিজে রেডি হতে যায়।চারুও আর সেখানে বসে না থেকে রেডি হতে যায়।
আজকে চারুর মনটা অজানা এক খুশিতে ভরে গেছে।সে তারাতারি রেডি হয়ে নেয়।চারু রেডি হয়ে এক রুম থেকে আরেক রুমে যাবার পথে দেখে কিছু কাটা পড়ে আছে।যেকোনো সময় কারো পায়ে লাগতে পারে ভেবে চারু কাটা গুলো তুলে নিয়ে গিয়ে জানালার ধারে রাখতে ধরে।কিন্তু জানালার ধারে রাখতে ধরলেই কাটা গুলো তার হাত থেকে পিচলে নিচে পড়ে যায়।চারু সেদিকে আর মনোযোগ না দিয়ে আদনানের কাছে যায়।আদনানও রেডি হয়ে পড়েছে।অথঃপর ব্যাগ নিয়ে দুজনে রওয়ানা দেয়।
আদনান বাহিরে বের হয়ে অনেকক্ষন গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে।তাদের বাসাটা গলির ভিতরে হওয়ায় এত সকালে কিছুতেই গাড়ি পায় না তারা।এদিকে ৯টা বাজতে চলেছে।
হঠাৎ আদনানের মনে হয় এয়ারপোর্টের সাথে তো তার মামার বাসা।তাদের অনেক গাড়ি আছে।আমি গাড়িটা সেখানে রাখলে কোনো প্রবলেম হবে না।এই ভেবে আদনান গাড়িটা বের করতে যায়।গাড়ি বের করতে গিয়ে চারুর ফেলা সেই কাটাগুলোতে লেগে টায়ার পান্চার হয়ে যায়।টায়ারের অবস্থা দেখে মুচড়ে পড়ে আদনান।তাদের মনে হয় আর যাওয়া হবে না।সে দ্রুত দারোয়ানকে দিয়ে মেকারকে ডেকে আনে।মেকার নিজের কাজে লেগে পড়ে।
এই পান্চার হওয়ার কারনে চারু মনে মনে নিজেকে গালি দিতে দিতে শেষ করে ফেলছে।সে যদি তখন কাটা গুলো সেখানে রাখতে না যেত তাহলে এত বিপদ হতো না।
কাটায় কাটায় 9:30 বাজে।এমন সময় মেকার বলে ওঠে,কাজ শেষ।তারাতারি মেকারের টাকা পরিশোধ করে গাড়ি চালাতে শুরু করে আদনান।গাড়িটা খানিকটা জোড়েই চালাতে থাকে সে।কয়েকমিনিটের মধ্যে সে তার মামার বাসায় পৌছে যায়।সেখানে গাড়ি রেখে কারো সাথে কোনো কথা না বলে দৌড়ে বের হয় চারুকে নিয়ে।হাতে তাদের মাত্র ১৪মিনিট সময় রয়েছে।এয়ারপোর্টের সাথেই আদনানের মামার বাসা হওয়ায় এয়ারপোর্ট যেতে আর কোনো যানবাহনের প্রয়োজন হয় না তাদের।
দুজনে একসাথে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করে।আদনান চারুকে এক জায়গায় রেখে সবকিছু ঠিকঠাক করতে যায়।৫মিনিটের মধ্যে সে সব কিছু ঠিকঠাক করে আসে।তারপর চারুকে নিয়ে সোজা প্লেনে উঠে পড়ে।একজন কেয়ারটেকার তাদের সিট দেখিয়ে দেয়।দুজনে আরাম করে সিটে বসে পড়ে।
২৭.
প্লেন উড়তে শুরু করে।চারু জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।জানালা খোলা নিষেধ থাকার কারনে জানালা খুলতে পারছে না সে।তবে জানালার কাচ পরিষ্কার হওয়ায় সবকিছু ভালোভাবেই দেখা যায়।প্লেন আকাশে উঠে যায়।চারু এবার মাথা ঘুরিয়ে আদনানের দিকে তাকায়।আদনান নিজের মোবাইলের মধ্যে ডুবে রয়েছে।চারু মাথা এগিয়ে দিয়ে দেখার চেষ্টা করে আদনান কি করছে?চারু দেখে আদনান নিত্তিয়ার বাকি ছবিগুলোও ডিলেট করে দিচ্ছে,তখন যে গুলো ডিলেট করতে পারেনি।চারু মনে মনে খুব খুশি হয়।সে আমেরিকায় গিয়ে আদনানকে সম্পুর্ন নিজের করে নিবে ভেবে অনেকটাই খুশি হয় সে।
আদনান নিজের কাজ শেষ করে চারুর দিকে ফিরে তাকায়।চারু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সে চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়।সাথে বলে ওঠে,
---' Past is Past..আমি আর অতীত নিয়ে ভাববো না,ভাববো বর্তমান নিয়ে।তবে তুই যদি মনে করে থাকিস আমি অলরেডি নিতিকে ভুলে বসে আছি,সেটাও তোর ভুল।স্ত্তৃতি বড়ো বেদনার চারু।এটা সহজে মোছা কিংবা ধোয়া যায় না।তবে সেটা নিয়ে ভাববো কম।বর্তমানকে ইনজয় করবো। '
আদনানের কথাগুলো প্রচন্ড রকমের ভালো লাগে চারুর।তার ইচ্ছা করে আদনানকে জড়িয়ে ধরে পাপ্পি দিতে।কিন্তু সিটবেল্টটার কারনে তা কিছুতেই পারেনা।তবে পাওনা রেখে দেয়,এটা পরবর্তি একটা সময় দিয়ে দেবে।আদনান এবার সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে দেখে আদনানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।চারু বুঝতে পারেনা আদনান কাঁদছে কেন?সে আদনানকে ডাকে হাত দিয়ে।আদনান চোখ খুলে পানি মুছে চারুর দিকে তাকায়।চারু আদনানের দিকে বিরক্তি ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে,
---' এখনি না এত্তবড় লেকচার দিলেন।এখন আবার কান্না করতেছেন কেন?খুব তো বললেন,অতীত নিয়ে ভাববেন না,বর্তমানকে ইনজয় করবেন।তাহলে কান্না করতেছেন কেন? '
কথাগুলো বেশ বিরক্তি নিয়েই বলে চারু।আদনান তার দিকে তাকিয়ে স্লান একটা হাসি দিয়ে বলে,
---' আমি কি করবো বল?যখনি চোখ বন্ধ করি তখন নিত্তিয়া চলে আসে আমার সামনে।আমি যখনই চোখ বন্ধ করি তখনই সে এসে আমাকে বলে,কিভাবে পারলে আদনান?তাকে দেখলেই আমার কান্না পায়।আমি কি করবো বল তুই? '
চারু আদনানের কথা শুনে নিজের কঠোর ভাব ধরে রেখে বলে,
---' আমি নিতি ফিতি বুঝি না।আপনি আমার বর।আপনি শুধু আমার কথাই মনে করবেন,আর আমার জন্য কাদবেন।আপনি যদি অন্যকারো জন্য কাদেন তাহলে আমি গিয়ে সেই মেয়েটাকে মেরে আসবো।থাক সে এজগতে আর থাক সে ওই জগতে।মনে রাইখেন! '
চারু কথা শুনে হালকা হাসি পায় আদনানের।সে চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।চারুও এবার হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে প্লেন এসে থামে লস অ্যাঞ্জেলিস বিমান বন্দরে।চারু আর আদনান বিমান থেকে নেমে রওনা দেয় হোটেলের উদ্দেশ্য।আদনান একটা হোটেল বুক করে চারুকে নিয়ে রুমের মধ্যে যায়।চারু রুমে প্রবেশ করেই বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে।আদনান ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।
এইসময় কলিংবেল বেজে ওঠে।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন হোটেল বয়।সে চারুকে ইংরেজিতে কথা বলে।কিন্তু চারু তার কথার মাথামুন্ডু আলাদা করতে পারে না।সে ঢ্যাপঢ্যাপ করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।একপর্যায়ে ছেলেটা বিরক্ত হয়ে ইংরেজিতে বলে,ইডিয়েট পারসন।ইডিয়েট কথাটা বুঝতে পারে চারু।ছেলেটা যে তাকে অপমাম করলো সেটাও ধরে ফেলে বুদ্ধিমতি চারু।সে একটানে ছেলেটাকে ভিতরে নিয়ে আসে।বিছানার উপর ফেলে দেয় ছেলেটাকে।তারপর ছেলেটাকে মারার জন্য তার দিকে ঝুকতে শুরু করে।এই মুহুর্তে ওয়াসরুমের দরজা খুলে যায়।আদনান অবাক হয়ে তাকায় চারু আর ছেলেটার দিকে।চারু তারাতারি উঠে দাঁড়ায়।ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে চারুকে আরো একবার ইডিয়েট বলে চলে যায়।
আদনান চারুর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকায়।সে চারুর সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।আদনানের এমন ব্যবহারে বেশ কষ্ট পায় চারু।তবে কি আদনান তাকে ভুল বুঝলো?


আদনান চারুর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।চারু কয়েকবার আদনানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও‌ প্রতিবারই ব্যার্থ হয় সে।আদনান নিশ্চুপ‌ হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকে।চারু এবার কান্না করতে করতে সোফায় বসে পড়ে।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে।কত বড় ভুল‌ করেছে সে।সত্ত্যি একটা ইডিয়েট আমি।এভাবে নিজে নিজেকে গালি দিতে থাকে চারু।
একপর্যায়ে চারু তার সামনে থাকা কাচের গ্লাসটা মেঝেতে ফেলে দেয়।হঠাৎ এরকম শব্দে মাথা তুলে পিছনে তাকায় আদনান।চারু একটা কাচের টুকরো তুলে নিজের হাত কাটছে।আদনান সেদিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।চারু ছলছল ‌চোখে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান আস্তে করে চারুর হাত থেকে কাচের টুকরোটা নেয়।চারু কিছু বলতে ধরলে আদনান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
---' কিছু বলা লাগবে না।নিজের ক্ষতি করে কি‌ লাভ? '
চারু ছলছল‌ চোখে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
---' দেখেন আমার কোনো দোষ নাই।আমি তাকে...'
চারুর কথাটার ইতি টানতে দেয় না আদনান।সে চারুর কোনো ‌কথা না শুনে বিছানায় গিয়ে ধপ‌ করে শুয়ে পড়ে।চারু নিজের রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।রক্ত দিয়ে হাতের মধ্যে লেখে আদনান।তারপর কান্না করতে করতে সোফায় সুয়ে পড়ে চারু।ঘুমিয়ে যায় সেখানেই।
এদিকে আদনান বিছানায় শুয়ে আছে কিন্তু ঘুম আসছে না চোখে।আজকে এই দিনটা সে আলাদা ভাবে উদযাপন করতে চায়।আজকের দিনটাতে সে একজনকে আপন করে নিবে।একেবারে নিজের করে নিবে।
আদনান বারবার মোবাইলের ঘড়ি দেখতে‌ থাকে।অস্থির হয়ে আছে সে,কখন ১২টা বাজবে।একপর্যায়ে তার অপেক্ষার সময় ফুরিয়ে যায়।ঘড়ি জানান দেয় ১২টা বেজে গেছে।আদনান লাফ‌ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।আস্তে করে সে চারুর চোখটা বেধে দেয়।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন চারু এসবের কিছুই‌ বুঝতে পারেনা।আদনান আস্তে করে চারুকে কোলে তুলে নেয়।চারু একবার চোখের পাতা খুলে সব অন্ধকার দেখে আবার চোখের পাতা বন্ধ করে নেয়।চারু ঘুমের ছায়াতলে থাকার কারনে বিষয়টা নিয়ে তত মাথা ঘামায় না।আদনান লিফ্টে করে সোজা উঠে যায় হোটেলের ছাদে।এবার সে চারুকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
মুহুর্তের মধ্যে চারুর চোখের ঘুম ছুটে যায়।চারু একটান দিয়ে খুলে ফেলে নিজের চোখের বাধন।পটা-পট ফুটে ওঠে লাল-নীল-হলুদ রংয়ের ফটকা।জ্বলে নানা রংয়ের লাইট।চারু মাথা তুলে উপরে তাকায়।জোৎনা রাতের চাঁদের আলো এসে পড়ছে তার গায়ে।এমন সময় কেউ একজন বসে পড়ে তার সামনে।হাতে একটা ফুলের তোড়া।চারু হালকা আলোয় আদনানকে বেশ ভালোভাবেই চিনতে পারে।
আদনান নিজের হাতে থাকা ফুলের তোড়াটা চারুর দিকে‌ এগিয়ে দিয়ে বলে,
---' প্রিয়তমা,
স্রষ্টার সৃষ্টি এই ধরনীতে সবাই কিছুদিনের জন্য এসেছে।একদিন সবাই‌ চলে যাবে সবার মায়া ত্যাগ করে।কিছুক্ষনের এই সময়ে সবাই চায় আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে থাকতে।আমি ব্যাতিক্রম কেউ নই।আমি সারাটা জীবন আনন্দ-উল্লাস করে কাটাতে চাই,তবে একা নয়।আমি আমার সারাজীবনের সাথি হিসেবে তোমাকে চাই।নিচের এই সমুদ্র ঢেউ যেমন আজীবন থাকবে,তেমনি তুমি আজীবন আমার রিদয়ে থাকবে।পুর্ব আকাশে সুর্য ওঠে এটা যেমন সত্য,তেমনি আমার ভালোবাসাও সত্য।স্রষ্টার এই নিয়ম গুলোকে যেমন কেউ পাল্টাতে পারবে না।তেমনি আমার ভালোবাসাকেও কেউ‌ পাল্টাতে পারবে না একমাত্র আল্লাহ বাদে।আমি আমার এই‌ ছোট্ট খানিকক্ষনের জীবনে তোমাকে পাশে চাই।তুমি কি আমার পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবে??? '
এইসব কথা বলে চারুর দিকে তাকায় আদনান।চারু কান্না করতে করতে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।আদনানও ‌আজ কোনো প্রকার দ্বিধা ছাড়া জড়িয়ে ধরে চারুকে।চারু আদনানকে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে বলে,
---' আমি জানতাম আমার সত্ত্যিকারের ভালোবাসা কখনো‌ মিথ্যা হবে না।আমি তোমার এই খানিকক্ষনের জীবনের সঙ্গী হতে রাজি।তবে আল্লাহর কাছে আমার একটাই চাওয়া একসঙ্গে যেন আমাদের মৃত্যু হয়।আমি কখনো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো‌ না। '
আদনান চারুর নাকে সাথে নিজের নাক লাগিয়ে বলতে শুরু করে,
---' এই চাওয়াটা আমারও।একজনকে হারিয়ে বেঁচে আছি।আরেকজন হারিয়ে পারবো‌ না।আল্লাহর কাছে একটা চাওয়া মৃত্যু যে আমাদের এক সঙ্গে হয়। '
এই বলে আদনান চারুর ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিশিয়ে দেয়।এতদিনের তৃষ্ণার্ত চারু আর আদনান দুইজনেই‌ নিজের তৃষ্ণা দুর করার চেষ্টা শুরু করে।
২৯.
' চারু এবার ঘুমানো দরকার।কালকে সকালে উঠে ঘুরতে যাব '
চারু নিজের নিজের তর্জনী আঙ্গুল আদনানের ঠোটের উপর রেখে খানিকটা ফিসফিসিয়ে বলে,
---' কোলে নিয়ে যাও না প্লিজ! '
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি‌ দিয়ে কোলে তুলে‌ নেয় চারুকে।চারু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আদনানের গলাটা।আদনান চারুর সাথে দুষ্টমি করতে করতে রুমে পৌছে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।চারু আদনানের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।আদনানও ঘুমিয়ে যায় চারুর সাথে।
পরেরদিন সকাল বেলা দুজনেই একসাথে বাহিরে বের হয়।প্রথমে তারা একটা রেষ্টুয়েন্টে যায় ব্রেকফাষ্ট করতে।ব্রেকফাষ্ট করার সময় চারু হঠাৎ আদনানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
---' তুমি কিভাবে এত আয়োজন করলে কালকে '
আদনান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে কাহিনী গুলা।ছেলেটা এসেছিল আদনানের সাথে কথা বলতে।আদনান বের হয়ে দেখে চারু ছেলেটার সাথে কথা বলছে।চারু‌ এখনো‌ আদনানকে দেখেনি।কিন্তু আদনান প্রথম থেকে সব দেখেছে।সে চারুকে সন্দেহ করেনি,সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য এরকম ব্যবহার করেছে।আর সেই ছেলেটাই সব সাজিয়েছে বুঝলে।
চারু আদনানের প্রত্যেকটা কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রবন করে।তারপর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
---' বাদ দাও।আমি যে সাঁতার পারিনা তাহলে সাগরে নামবো‌ কেমনে '
চারুর কথা শুনে আদনান চুপ করে থেকে কিছুক্ষন ভাবে।তারপর সে কো‌নো‌ কথা না বলে উঠে দাঁড়ায়।চারুও‌ নিজের খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ায়।আদনান বিল পরিশোধ করে চারুকে নিয়ে বের হয়।তারা দুজনে সিদ্ধান্ত নেয় আজকে সমুদ্রে নামবে না বরং চারদিকের সব ঘুড়ে ঘুড়ে দেখবে।প্লান অনুযায়ী তারা দুজনে ঘুরতে থাকে চারদিকে।
চারু এক জায়গায় গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।একজন বুড়া লোক কিছু কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই‌ তাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।চারু আদনানকে নিয়ে সেখানে যায়।বুড়াটা চারুর দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে ইংরেজিতে কি যেন বলে?চারু বুঝতে পারেনা।চারু একটা কাগজ তুলে নেয়।কাগজটা খুলতেই এক আজব কথা লেখা উঠে...


চারু লোকটার হাত থেকে একটা কাগজ তুলে নেয় নিজের দখলে।তারপর কাগজটা খুলে দেখে ইংরেজিতে কিছু লেখা।চারু আস্তে আস্তে ইংরেজিটা পড়তে শুরু করে।উপস্থিত সবাই তার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।আদনানও মাথা এগিয়ে দিয়ে চারুর হাতের কাগজটা পড়তে শুরু করে।কাগজে যা লেখা তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়,
' সাবধান!সামনে অনেক বড় বিপদ আসতেছে।প্রাণহানি হতে পারে। '
চারু মাথা তুলে আদনানের দিকে তাকায়।আদনান চারুর দিকে তাকায়,চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের মধ্যে।চারুর মনের ভিতরে ভয়ের বন্যা বইছে।আদনান বিষয়টাকে উড়িয়ে দেয়ার ভান করে চারুকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।চারু বার বার আদনানের দিকে দেখছে।অজানা এক ভয় কাজ করছে তার ভিতরে।লোকটার কথাগুলো যদি সত্ত্যি হয় তখন।চারু ভয় ভয় গলায় আদনানকে বলে,
---' আজকে আর না ঘুরি।চলেন হোটেলে যাই! '
আদনান চারুর কথা শুনে মাথা ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকায়।চারুর চোখে-মুখে ভয় দেখে আদনান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
---' এত ভয়ের কিছু নেই।এসব লোক টাকা কামানোর জন্য এরকম করে।তুই অযাথা ভয় পাচ্ছিস।ওকে আজ ঘোরাঘুরি করবো না।তবে কালকে অবশ্যই করবো। '
এই বলে আদনান চারুকে নিয়ে হোটেলের পথে রওনা হয়।চারু মনে আল্লাহকে ডাকছে যাতে লোকটার লেখা কাগজটার কথা গুলো সত্ত্যি না হয়।একপর্যায়ে দুজনে হোটেলের ভিতরে নিজের রুমে প্রবেশ করে।আদনান চারুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।চারু বিছানায় বসে ভাবতে থাকে অনেককিছু।তাদের আর এখানে থাকা ঠিক হবে না।কিন্তু আদনান যে এসব কথা শুনবে না সেটা ঢের আন্দাজ করতে পারছে চারু।
আদনান বাহিরে বের হয় চারুকে ফ্রেস হতে বলে।চারু ওয়াসরুমে প্রবেশ করে ফ্রেস হতে।চারু ফ্রেস হয়ে বের হয়।সে বের হয়ে দেখে আদনান কিছু খাবারের প্যাকেট নিয়ে বসে আছে।চারু বুঝতে পারে সে ফ্রেস হওয়ার সময় আদনান এসব আনিয়েছে।চারু গিয়ে আদনানের সঙ্গে বসে পড়ে।পেটের মধ্যে বেশ কিছুটা ক্ষিধে থাকার কারনে দুজনে বেশ তৃপ্তি সহকারে খাবারগুলো খায়।তারপর দুজনে শুয়ে পড়ে কিছুটা জিড়িয়ে নেয়ার জন্য।চারু আদনানের বুকের মধ্যে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সেই কথাটা।
তারা যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন সুর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে যায় যায় ভাব।আদনান উঠে দেখে চারু বিছানার উপর বসে গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবছে?আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।সে ফ্রেস হয়ে বাহিরে এসে দেখে চারু তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে পাসওয়ার্ড খোলার ব্যার্থ চেষ্টা করছে।চারু আদনানকে দেখে ফোনটা বিছানার উপর রেখে দেয়।
৩০.
পরেরদিন সকালবেলা থেকেই চারুর মনের ভয়টা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।আদনান চারুকে নিয়ে বের হয় হোটেল থেকে।তারপর দুজনে মিলে একটা রেষ্টুয়েন্টে বসে জমিয়ে ব্রেকফাষ্ট করে নেয়।ব্রেকফাষ্ট করার সময় দুজনে বাসায় কথা বলেছে।ব্রেকফাষ্ট করে তারা রেষ্টুয়েন্ট থেকে বের হয়।আদনান চারদিকে তাকাতে থাকে।এক জায়গায় গিয়ে তার চোখ আটকে যায়।কিছু লোক একটা টেবিলকে ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছে।আদনান টেবিলের সামনে খুটিতে গেথে দেয়া সাইনবোর্ডটা পড়ে জানতে পারে,এখানে ইয়টে করে ভ্রমনের টিকিট বিক্রি হয়।
আদনান চারুকে বললে চারু প্রথমে না করে।পরবর্তিতে আদনানের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে রাজি হয়ে যায় চারু।চারু রাজি হয়েছে দেখে টপাটপ দুটা টিকিট কেটে ফেলে আদনান।দুজনে কিছু পপকর্নের প্যাকেট নিয়ে ইয়টে উঠে পড়ে।
তাদের মতো আরো অনেক মানুষে ভরে গেছে ফ্লাইং এঞ্জেল ইয়টটা।ইয়টের চারদিকে বিচরণ করছে অনেক লোক।তবে বেশিরভাগই কাপল।একপর্যায়ে বেজে ওঠে ইয়টের ভিতরে থাকা সাউন্ড সিষ্টেম।সমস্ত যাত্রীদের উদ্দেশ্য কথা বলে ওঠে একটা পুরুষ কণ্ঠ।পুরুষ মানুষটার কথা চারু না বুঝলেও আদনান বুঝতে পারে।লোকটা ইংরেজিতে যা বলছে তার বাংলা অ‌নুবাদ করলে দাঁড়ায়,
---' সম্মানিত সুধি,সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।আমাদের ফ্লাইং এঞ্জেল ইয়টটা নিয়ে আমরা আজকে একটা দ্বীপে যাব।দ্বীপটাতে কম বেশি সবই রয়েছে।রয়েছে বড় একটা পাহাড়।সেখানে আমরা ৫ঘন্টা সময় থাকবো।তারপর নিজ নিজ দায়িত্বে সবাই এসে ইয়টে উঠে পড়বেন। '
এই ঘোষণাটা দেয়ার পর ইয়টটা চলতে শুরু করে।দক্ষ হাতে ইয়টটা চালাচ্ছে অভিজ্ঞ ৩-৪জন নাবিক।তারা জানায় দ্বীপটাতে যেতে মাত্র ৩০মিনিট সময় লাগে।
অথ:এব ৩০মিনিট পর ইয়ট ভেড়ানো হয় দ্বীপের কাছে।এক এক করে নামতে থাকে ইয়টের লোকগুলো।আদনান চারুকে নিয়ে নেমে আসে ইয়ট থেকে।চারুর মন থেকে কিছুক্ষনের জন্য ভয়টা চলে গেছে।আদনান চারুকে নিয়ে প্রথমে চারদিকটা ঘুড়ে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।তারপর সব শেষে তারা পাহাড়ে উঠবে।
প্লান অনুযায়ী হতে থাকে সব কাজ।আদনান আর চারু দুজনে হাতে হাত ধরে ঘুরতে থাকে দ্বীপের চারদিকটা।তাদের মতো আরো অনেক দ্বীপের চারদিকটা ঘুড়ে দেখছে।
দেখতে দেখতে তাদের ৫ঘন্টা সময়ের ৩ঘন্টা চলে যায়।আদনান চারু দুজনে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।আদনান দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষনা করে ১০মিনিট বিশ্রান নিয়ে পাহারে ওঠা শুরু করবে।আদনানের ঘোষনার সাথে সহমত হয় চারু।দুজনে বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসে পড়ে একটা গাছের নিচে।
১০মিনিট পর,
আদনান উঠে দাঁড়ায়।চারুও আদনানের সাথে উঠে দাঁড়িয়ে হাটতে শুরু করে পাহারের দিকে।তাদের মতো আরো‌ অনেকে পাহাড়ে উঠছে।আদনান আর‌ চারু দুজনে উঠতে শুরু করে।চারু আদনানের বামহাত ধরে আছে নিজের ডান হাত দিয়ে।আদনান আগে আগে উঠছে আর চারু তার পিছন পিছন উঠছে।অনেকে আবার পাহাড়ের মধ্যে বসে আছে।আদনান আর‌ চারু দুজনে এক জায়গায় বসে খানিকটা জিড়িয়ে নিতে।
দুজনে ৫মিনিট জিড়িয়ে আবার উঠতে শুরু করে।জীবনে এই প্রথম এত বড় পাহাড়ে উঠছে চারু।এর আগেও বাংলাদেশে অবস্থিত পাহাড়পুরে ঘুরতে গিয়ে সেখানে উঠেছিল চারু,তবে সেই পাহাড় আর এই পাহাড়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে।
একপর্যায়ে তারা দুজনে উঠে পড়ে পাহাড়ের চুড়ায়।সেখানে আরো কয়েকজোড়া দম্পত্তি দাঁড়িয়ে আছে।আদনান তার মোবাইল বের করে চারদিকের ছবি তুলছে থাকে।চারু অবাক হয়ে চারদিকটা দেখছে।এত সুন্দর দৃশ্য সে জীবনেও দেখেনি।আদনান চারুকে জড়িয়ে ধরে পিক তুলে।
পাহাড়ের উপরে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর উপরে অবস্থান কারীরা সবাই নিচে নামতে‌ শুরু করে।চারু আর আদনানও সবার সাথে নামতে শুরু করে।
৩১.
হঠাৎ থরথর করে কেঁপে ওঠে পাহাড়টা,মনে হয় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।উপরে অবস্থান কারীরা সবাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আস্তে আস্তে সব ঘোলাটে দেখছে চারু আর আদনান দুজনে।পাহাড় থেকে ধপ ধপ করে পড়ছে মানুষগুলো।একপর্যায়ে আদনান চারু দুজনে ধপ করে নিচে পড়ে যায়।


থরথর করে কেঁপে উঠে ভু-খন্ড।উপর থেকে পড়তে শুরু করে মানুষের বৃষ্টি।সেই তালিকায় নাম থাকে আদনান ও চারু দুইজনেরই।উপর থেকে নিচে পড়ে‌ যায় দুজনেই।নিচে পড়ার সাথে সাথে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে তারা।
৩২.
দীর্ঘ ১০দিন পর আদনান চোখ খুললেও চারু চোখ চোখ খোলেনি।আদনান চোখ খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে চারদিকটা।তার পাশে রিমি আর তার মা-বাবা বসে আছে।চারু পাশের বেডে শুয়ে আছে নিথর হয়ে।
ছেলেকে চোখ খুলতে দেখে হালিম সাহেব ও রাহিনা বেগমের মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।রাহিনা বেগম কান্না করতে করতে আদনানকে জড়িয়ে ধরেন।রিমি গিয়ে বসে পড়ে চারুর পাশে।আদনান উঠে বসার চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়।শরিরের মধ্যে প্রচুর ব্যাথা।আদনানকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেও আদনান কো‌নো কথার উত্তর না দিয়ে চুপ‌ করে শুয়ে থাকে।সে মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।চারুর যেন কিছু না হয়।এর মাঝে ডাক্তার এসে আদনানকে ঔষধ দিয়ে গেছে এবং চারুকে দেখে গেছে।ডাক্তারটাকে দেখে আদনান বুঝতে পারে তারা এখনো আমেরিকাতেই আছে।
আদনান এবার চোখ খুলে তার মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করে,
---' তোমাদের কে খবর দিল? '
হালিম সাহেব মুখের গম্ভীর ভাব ধরে রেখে বলে,
---' ইয়ট ম্যানেজমেন্ট।যারা যারা পাহাড়ে উঠেছে তাদের সবারই ক্ষতি হয়েছে।৮জন নাকি মারাও গেছে। '
আদনান চোখ দুটো বন্ধ করে বলে,
---' হঠাৎ ভুমিকম্প হওয়ার কারনে এতকিছু হয়েছে,না হলে কিছুই হত না। '
এই মুহুর্তে গোঙ্গানির আওয়াজ পায় আদনান।মুহুর্তের মধ্যে সে তার চোখ জোড়া খুলে ফেলে।মাথা ঘুড়িয়ে তাকায় চারুর দিকে।চারু চোখ খুলে‌ আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের মধ্যে চোখা-চোখি হয়ে যায়।দুজনের চোখের কোণেই পানি দেখা যায়।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে থাকে।তাকে থামানোর চেষ্টা করে রিমি ও তার মা।সাথে যোগ দেয় হালিম সাহেবও।হালিম সাহেব ঘোষণা করেন,এরা দুজনই সুস্থ হলে আরো কয়েকটা দিন ছুটি কাটিয়ে চলে যাব আমরা।
৩৩.
দেখতে দেখতে কেটে যায় ৫দিন।মোটা-মুটি সুস্থ হয়ে ওঠে আদনান ও চারু।ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে দুজনেই।হালিম সাহেব ও রাহিনা বেগমের মাথা থেকে অনেক বড় একটা চিন্তা নেমে যায়।রিমিতো এই ভেবে খুশি যে তারা আরো কয়েকটা দিন আমেরিকাতে থাকছে।চারু আর আদনানও ‌খুব খুশি।তারা দুজন দুজনকে পু‌নরায় ফিরে পেয়েছে।
পরেরদিন সকালেই হালিম সাহেব জানিয়ে দেন সমস্ত দিনের ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা।শুরুতেই তারা রেষ্টুয়েন্টে ব্রেকফাষ্ট করবে,তারপর ঘোরাঘুরি শুরু করবে।হোটেলে আরো দুটো রুম ভাড়া নেয়া হয়েছে।একটা রিমি আর তার মা।একটাতে হালিম সাহেব।আর আগের রুমেই রয়েছে আদনান ও চারু।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই বেড়িয়ে পরে রেষ্টুয়েন্টের উদ্দেশ্যে।রেষ্টুয়েন্টে গিয়ে খাবার অর্ডার করে হালিম সাহেব।পেটের মধ্যে ক্ষিধা থাকার কারনে সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া শেষ করে।খাওয়া শেষ করে তারা সবাই বের হয় রেষ্টুয়েন্ট থেকে।
হালিম সাহেব এর আগে আরো কয়েকবার এসেছিলেন এইখানে।অবশ্যই অফিস থেকে।তাই এখানকার অনেক জায়গাই হালিম সাহেবের চেনা।তাই তিনি সবাইকে নিয়ে রওনা দেন ম্যাজিক মাউনটাইনে।সেখানে অনেক বেড়ানোর জায়গা আছে।
একপর্যায়ে গাড়ি এসে তাদের নামিয়ে দেয় ম্যাজিক মাউনটাইনে।টিকিট কেটে এক এক করে ভিতরে প্রবেশ করে সবাই।ভিন্ন ভিন্ন রাইড দেখে সেখানে উঠার ইচ্ছাপ্রকাশ করে চারু ও রিমি দুজনে।এক এক করে প্রায় সব রাইডেই উঠে হালিম সাহেবের পরিবার।
একপর্যায়ে সূর্য কিরন দিতে শুরু করে মাথার ঠিক উপর থেকে।সবার পেটে ক্ষুধার ঘন্টা বেজে ওঠে টং টং করে।হালিম সাহেব সবাইকে নিয়ে সেখানকার একটা ভালো‌ রেষ্টুয়েন্টে প্রবেশ করেন।কয়েকবার এখানে আসার খাতিরে এখানকার একটা বাঙ্গালি ম্যাচিয়ারের সাথে ভাব জমে ওঠে হালিম সাহেবের।সেই লোকটা সবাইকে খাবার এনে দেয়।সবাই খাওয়া শেষ করে বের হয়ে আসে।
বাহিরে বের হয়ে হঠাৎ করে আদনান বলে ওঠে,
---' বাবা,আমি আর চারু ওদিকে যাই। '
হালিম সাহেব ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলেন,
---' যাও '
রিমি চারুর দিকে তাকিয়ে তার কানে কানে বলে,
---' কি ব্যাপার? '
রিমির কথায় চারু একটু একটু লজ্জা পায়।আদনান চারুর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে অন্যদিকে।চারু আদনানের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
---' এদিকে কেন আসতে চাইলেন? '
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
---' এমনি।আমার আর হাটতে ইচ্ছা করতেছে না।আসার সময় এদিকে একটা পার্ক দেখেছি।সেখানে গিয়ে বসবো‌ একটু। '
এই বলে চারুর হাত ধরে আবার হাটতে শুরু করে আদনান।চারুও আদনানের সাথে পা মিলিয়ে চলতে শুরু করে।একপর্যায়ে তারা এসে পৌছায় পার্কটাতে।চারু অবাক হয়ে পার্কটার দিকে তাকায়।এত সুন্দর জায়গা সে বাবা জন্মে,মায়ের জন্মে,কারো জন্মেই দেখেনি।কি সুন্দর সবুজ ঘাস?একেকটা করে ঘাসের উচ্চতা প্রায় ৩-৪ ইঞ্চি।
আদনান চারুকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।তাদের মতো‌ আরো অনেকেই বসে রয়েছে সেখানে।আদনান চারুকে নিয়ে বসে একটা গাছের নিচে।
চারু অবাক হয়ে চারদিকে তাকাতে থাকে।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
---' সেদিন যদি ছেলেটাকে সাপের ভয় না দেখাতি তাহলে কিন্তু পালাতো ‌না ছেলেটা।আর আমিও তোকে পেতাম না। '
হঠাৎ আদনানের মুখে সাপের কথা শুনে খানিকটা চমকে যায় চারু।আদনান কিভাবে জানলো?আদনান যদি তার বাবা-মাকে বলে দেয় শেষ।চারু মনের কথা যেন বুঝতে পারে আদনান।তাই চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' ভয় নেই,ভয় নেই।বলবো‌ না। '
চারু এবার দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয়।আদনান চারুর কোলে‌ মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।চারু আদনানের মাথাটা নিজের কোলের উপর নিয়ে আদনানের চুলগুলোতে বিলি কাটতে থাকে।একপর্যায়ে চারু আসতে আসতে আদনানের দিকে ঝুকে পড়ে।আদনান এক টানে চারুকে নিজের পাশে শুইয়ে দেয়।
দুজনে তাকায় উপরে থাকা আকাশটার দিকে।সম্পুর্ন তৃণভূমিকে ঘিরে রয়েছে নীল আকাশটা।আদনান চারুর দিকে তাকায়।চারুও তাকায় আদনানের দিকে।চারু আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
---' আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া,সারাজীবন যেন এরকম একসাথে শুয়ে থাকতে পারি। '
আদনান চারুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে,
---' এরকম ঘাসের উপর শুয়ে থাকার ইচ্ছা আমার নেই।আমি বিছানায় থাকতে চাই। '
চারু হেসে বলে,--' কিন্তু আমি এই তৃণের উপরে শয্যা অবস্থায় থাকতে চাই।আই মিন তৃণশয্যা।ঘাসের উপরে থাকতে চাই আমি। '
আদনান জোর প্রতিবাদ করতে যায় এই কথার।কিন্তু ততক্ষনে চারু নিজের ঠোট দিয়ে আটকে ধরে আদনানের ঠোট।কোনো‌ কথা বলার সুযোগ দেয় না আদনানকে...


সমাপ্ত...



Writer:- 
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner