> বারবারোস - Barbaroslar - খাইরুদ্দিন বারবারোসা - History - ইতিহাস
-->

বারবারোস - Barbaroslar - খাইরুদ্দিন বারবারোসা - History - ইতিহাস

বারবারোস - Barbaroslar - খাইরুদ্দিন বারবারোসা - History - ইতিহাস


খাইরুদ্দিন বারবারোসা-King Of The Sea


খাইরুদ্দিন বারবারোসা ১৪৭৮ (খ্রি.) লেসবোস দ্বীপপুঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে খাইরুদ্দিন বারবারোসা-র নাম ছিল “খিজির”। যদিও বারবারোসা ও তার ডাক নাম। মূল নাম বারবারোস হাইরেদ্দিন পাশা যা তার নৌ-সেনাপতি অবস্থায় জানা যায়। তবে তার আরো অনেক ডাক নাম রয়েছে।
স্পেনের অ্যাডমিরাল আন্দ্রে ডুরিয়োর নেতৃত্বে সম্মিলিত খ্রিস্টান বাহিনী হলি লিগের বিরুদ্ধে ১৫৩৮ সালে প্রিভিজার ক্রসেডে বারবারোসার বিজয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের আধিপত্যকে আরো বেশি সুরক্ষিত করে। এই আধিপত্য স্থায়ী ছিল, ১৫৭১ সালে ল্যাপান্টোর যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত।
খাইরুদ্দিনের নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তিনি আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত তুর্কী সিপাহি ইয়াকুবের পুত্র ছিলেন ও তার বাবা উসমানীয়দের দ্বারা এই দ্বীপপুঞ্জ অধিকৃত হওয়ার পর এখানে বসবাস করা শুরু করেন। তার মায়ের নাম ক্যাটিরিনা, তিনি ছিলেন একজন গ্রিক।
ইয়াকুব ও ক্যাটিরিনার দুটি মেয়ে এবং চার জন ছেলে ছিল; ইছাখ, অরুজ, খিজির ও ইলিয়াস। ক্রমেই ইয়াকুব কুমার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান এবং একটি নৌকা সংগ্রহ করে তার মালামাল নিয়ে বাণিজ্য করতে বের হন। তার চার ছেলেরা তাদের বাবাকে ব্যবসায় সাহায্য করত কিন্তু তার মেয়েদের কথা খুব বেশি জানা যায় না। চার ভাইয়ের মাঝে খিজির (বারবারোস) ছিলেন তৃতীয়।


প্রথমদিকে অরুজ তার পিতাকে নৌকার কাজে সাহায্য করত তখন বারবারোস হাড়ি পাতিল তৈরির কাজে সহয়তা করত। চার ভাই তাদের শুরুটা হয়েছিলো ব্যবসায়ী হিসেবে। তারা বাবার কাছ থেকে নৌকা চালানো শিখেছিলো। সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহণের ব্যবসা শুরু করে। বেশ কয়েক বছর একসঙ্গে কাজ করার পর, চার ভাই ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন অংশে নিজেদের আলাদা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু রোডস দ্বীপভিত্তিক প্রাইভেটিয়ার্স বাহিনী ‘নাইট টেম্পলাররা‘ তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি সাধন করতে থাকে।


এরই চূড়ান্ত রূপ হিসেবে খিস্টান টেম্পলাররা মেঝ ভাই অরুচকে বন্দি করে এবং দাস হিসেবে রেখে দেয়। অরুজ ২/৩ বছর নিদারুণ কষ্টে বন্দি জীবন পার করেন। তারপর ঐকান্তিক চেষ্টায় টেম্পলারদের কাছ থেকে পালাতে সক্ষম হন। পালিয়ে আসার পর অরুজ ছোট ভাই বারবারোসের (খিজির) সঙ্গে মিলে খ্রিস্টান জলদস্যুদের শিক্ষা দিতে দুই ভাই সমুদ্রে ‘পর্যবেক্ষক দল’ গড়ে তোলেন।
তার ভাইরা প্রথমদিকে নাবিক হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীকালে প্রাইভেটিয়ার (শত্রু-জাহাজ আক্রমণ ও লুণ্ঠনের অধিকারপ্রাপ্ত বেসরকারী জাহাজ) হিসেবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে কাজ শুরু করেন। একের পর এক অসংখ্য খ্রিস্টান জলদস্যু জাহাজে আক্রমণ পরিচালনা করেন। আক্রমণগুলো সফল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল অর্থ-সম্পদও হস্তগত করেন বারবারোসা ভাতৃদ্বয়।
একসময় তারা নিজেদের শক্তির জায়গাটুকু বুঝতে পারেন এবং সেটাকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রে নাইট টেম্পলারসহ অন্যান্য খ্রিস্টান জলদস্যু জাহাজ লুট করেন। এভাবেই তারা স্পেনীয় এবং অসংখ্য ইউরোপীয় রাজ্যের চোখের বালিতে পরিণত হন।


বারবারোসা ভাতৃদ্বয় ১৫১৬ খ্রিঃ আলজিয়ার্স আক্রমণ করেন। ফলে এই অঞ্চলটি স্পেনীয়দের হাত থেকে মুসলিমদের হাতে চলে আসে।


আলজিয়ার্সকে মুক্ত করার পর সুলতানের সুনজরে আসেন অরুজ ও বারবারোসাদের উপর। ফলে এবার তারা জনসম্মুখে আসেন। উসমানীয়রা দুই ভাইয়ের সাথে চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করে। যে চুক্তির মাধ্যমে সুলতান অরুজকে আলজিয়ার্সের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব দেন। আর খিজির তথা বারবাররোসাকে পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের নৌ-সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন।
অরুজ স্পেনীয়দের সঙ্গে এক সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হন।


পোপের নৌ ত্রুসেডঃ-


পোপ তৃতীয় পল বারবারোসার বিরুদ্ধে ১৫৩৮ খ্রিঃ একটি নৌ ক্রুসেডের আয়োজন করেন। পোপের নেতৃত্বে স্পেন, জেনোয়া, ভেনিস প্রজাতন্ত্র, পাপাল রাজ্য, এবং মাল্টার নাইটদের সমন্বয়ে একটি বিশাল নৌ-বাহিনী গড় তুলে। এই বিশাল যৌথ বাহিনীর নাম দেয় “পবিত্র সংঘ” হলি লিগ। এই পবিত্র সংঘের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো যে কোনো মূল্যে বারবারোসার নেতৃত্বাধীন মুসলিম নৌ-বাহিনীকে পরাজিত করা।
পোপের নৌবহরের দায়িত্ব দেওয়া হয় অ্যাডমিরাল আন্ড্রে ডরিয়ারকে। এই বিশাল নৌ-বহরে রণতরী ছিল ১৫৭টি। অপরদিকে বারবারোসার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর রণতরী ছিল ১২২টি।
১৫৩৮ খ্রিঃদের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রেভেজায় সংঘটিত এই নৌ যুদ্ধে বারবারোসার বাহিনীর কাছে নাজুক ভাবে পরাজিত হয় পোপের যৌথ বাহিনী তথা প্রবিত্র সংঘ। সমাপ্ত হয় ক্রুসেডের বেস্তে যায় হলি লিগ।
মুসলিমরা যৌথ বাহিনীর ১০টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিলো। খ্রিস্টানদের ৩৬টি জাহাজ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এবং আরও ৩টি জাহাজ মুসলমানদের হাতে চলে যায়। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে উসমানীয়রা একটি জাহাজও হারায় নি। তবে তাদের ৪০০ জনের মত মুসলিম সৈনিক শহিদ হয় এবং প্রায় ৮০০ জন সৈনিক আহত হয়। খ্রিস্টান হলি লিগের ৩,০০০ নাবিক মুসলমানদের কাছে বন্দি হয়। ফলে রাত না পেরুতেই অ্যাডমিরাল আন্ড্রে ডরিয়া নিজ বাহিনীকে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ছিটকে পরেন রাতের আধারে।
চমৎকার এই যুদ্ধ জয়ের পর, উসমানী সুলতানের তোপকাপি প্রাসাদ যেন বারবারোসাকে অভ্যর্থনা জানাতে আকুল হয়ে ছিলো। তখন উসমানী সিংহাসনে ছিলেন সুলতান সুলেমান। তিনি বারবারোসাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং তাকে পুরষ্কার হিসেবে সমগ্র উসমানী নৌ-বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল হিসেবে পদোন্নতি দেন। সেই সঙ্গে উত্তর আফ্রিকা এবং রোডসের প্রধান প্রশাসক হিসেবেও নিয়োগ করেন বারবারোসা কে আর উপাধি দেন খাইরুদ্দিন অর্থাৎ ধার্মিকতা বা ইসলাম ধর্মের জন্য শ্রেষ্ঠ ।
পরের বছরগুলোতে বারবারোসা তিউনিস এবং ত্রিপলি অটোমান শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন।


খাইরুদ্দিন বারবারোসা ‘র অবসর জীবনঃ-


অসুস্থ হয়ে পরলে তিনি তার পুত্রের হাতে আলজিয়ার্সের শাসনভার ন্যস্ত করেন এবং ১৫৪৫ উসমানীয় রাজধানী ততকালীন কন্সটান্টিনোপলে বর্তমানের ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন। সেখানে কিছুদিন থেকে অস্থির হয়ে আবার জীবনের শেষ অভিযানে বের হয়ে স্পেনের নৌ-বন্দরগুলোতে হামলা চালিয়ে বোমাবর্ষন করে ফিরে আসেন।
আগে থেকেই আসুস্থ থাকায় ৪-ই জুলাই, ১৫৪৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন সমুদ্রের রাজা হিসেবে খ্যাত খাইরুদ্দিন বারবারোসা।
তার মৃর্ত্যুর খবর পেয়ে তখন হলি লীগের সম্মিলিত বাহিনী আনন্দ উৎসব করে ও পোপ নিজেও খুশীতে বিশেষ বানী দেন! কারণ খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে তার কোন পরাজয়ের ইতিহাস নেই। তিনি বিভিন্ন নৌ-যুদ্ধে খৃষ্টানদের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি করেছিলেন তা ইতিহাসে আর কেউ করতে পারেনি।
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner