বই রিভিউ
বই- নষ্ট মেয়ে।
লেখক- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রকাশনী- মৌচাক।
গ্রামের এক দরিদ্র মাষ্টারের মেয়ে কমল। হতদরিদ্র পরিবার। দুই ভাই শহরে চাকরি করে কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ নেই কমলদের। এরা নিজেদের আখেড় গুটিয়ে নিয়েছে। বাবা ও বোনকে তারা বোঝা ভেবে দুরে সরে গেছে। মাষ্টারের সাধ্য নেই কমলকে ভালো কোনো পরিবারে বিয়ে দেবার। তাই তাকে শেষ পর্যন্ত তার বড় বোনের স্বামীর কাছেই বিয়ে বসতে হয়। বড়বোন কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছে। তবে আত্মহত্যার কারন কমলদের কাছে অগ্যাত। আর দশটা মেয়ের মতো কমলও আলাদা একটা আশা নিয়ে স্বামীর সংসারে যায়। কিন্তু এধরনের পরিবারগুলোতে যা হবার তাই হয়। কিছুদিন ভালো থাকার পর স্বামীর আসল রুপ তার চোখে ধরা পড়ে। সে নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাকে মার খেতে হয়। গরীবের মেয়ে কোথাও যাবার যায়গা নেই। তাই অগত্যা মার খেয়েই সহ্য করে পড়ে থাকতে হয়। কমল এর আগে কোনো পুরুষের ভালোবাসা পায়নি। কিন্তু সেখানে এক অনাকাঙ্খিত পুরুষ তারজন্য ভালোবাসা নিয়ে বসে থাকে। তাই স্বামীর অগোচরে সে সেই পুরুষের সাথে চলে যায় নতুন সুখের সন্ধানে যা সে সারাজীবন খুজে বেড়িয়েছে। সেখানে সত্যিই যেনো কোনো ভালোবাসার দেবতা একরাশ ভালোবাসা নিয়ে তার অপেক্ষায় ছিলো। কমলের জীবনটা বদলে যায়। সে নিজেকে সুখী ও পরিতৃপ্ত বোধ করে। কিন্তু কমলের ঘরে হয়তো লক্ষীর প্রতিমা ছিলো না, তাই অলক্ষীর সুযোগ হয় কমলের দুর্ভাগ্য বয়ে আনবার। এরপর কি হয়? সবাই হয়তো ভাববেন যেহেতু বইয়ের নাম নষ্ট মেয়ে তাই কমলের জীবনে আসা নতুন পুরুষটাই বুঝি কিছু একটা করলো, তাই তো? না, আমি আর বাকিটা বলবোনা। আপনাদের পড়ে জানতে হবে কি হলো।
বইতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষন ক্ষমতা যে অসাধারন তা বুঝতে পেরেছি। গ্রাম্য একটি মেয়ের জীবনের ট্র্যাজেডিকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পড়লে এক পর্যায়ে মনে হয় দরিদ্র থাকা এ সমাজে পাপ করার মতো। যে গল্প তিনি লিখেছেন তা নিরেট বাস্তবতা এবং এ ধরনের বাস্তবতার শিকার আমাদের সমাজের, আমাদের আশেপাশের অনেক মেয়েরাই হচ্ছে। এটা নিছক উপন্যাস না, এটা দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের প্রতি সামাজিক অবহেলার একটুকরো উদাহরন মাত্র। কমলের মাধ্যমে অসংখ্য মেয়ের জীবন ফুটে উঠেছে। যাদের একরাশ স্বপ্ন থাকে তবে সে স্বপ্ন তুচ্ছ হয়ে যায়। একটা সময় সে পরিণত হয় সমাজের চোখে ঘৃণ্য একজন মানুষে। কিছু বই আছে মানুষের মন, বিবেককে জাগ্রত করে। এটা এমন একটা বই যার সেই ক্ষমতা
আছে।
রেটিং- ৪.৭৫/৫.০০
লেখকঃ- Rashel Ahamed