দীর্ঘ ২ ঘন্টার মতো পথ অতিক্রমের পর আলআবি ভাইয়া তার বাইক টা বন্ধ করে দেন।চারপাশে নীলাভ আলোরা লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠেছে।এই আবছা নীলাভ আলোতেই বুঝতে পারছি আলআবি ভাইয়া যে রাস্তায় বাইক থামিয়েছেন তার আশে পাশে বাস টার্মিনাল।আলআবি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে আমি বলে উঠলাম,,,
-- কোথায় এসেছি আমরা?
আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করে আর বললেন,,,
--গেলেই দেখতে পাবে।
কিছুটা আগানোর পর আলআবি ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে পরলেন।আমাদের সামনে বিশাল বড় এক জলরাশি। আলআবি ভাইয়া বললেন,,,
--এটা পদ্মা নদী। তুমি এখন মাওয়া ঘাটে।
আশেপাশে পরখ করে দেখি এদিকটায় মানুষের সমাগম খুব একটা নেই। তবে বাস টার্মিনালের ওখানে মোটামুটি মানুষ ছিল।আলআবি ভাইয়া আমাকে ইশারা করে সামনে দেখালেন।সামনে তাকাতেই চোখ জোড়া জুড়িয়ে গেল। ভোর বেলার সূর্যের উদয়ের সময়ে পরিবেশে মৃদু সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সূর্যটা দিগন্তের নিচে অবস্থান করেছে। সূর্য টা দেখা না গেলেও সূর্যের অবস্থান কোনদিকে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে তার লালাভ আলোর রেখা।সূর্যের একাংশ দিগন্তের উপরে চলে আসছে এবং তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে উঠছে। অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির ছাপ পরলো।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি রক্তিম আভার দিকে।সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে রক্তিম বৃত্ত ততই তার রূপ স্পষ্ট করে তুলছে।আশেপাশে থেকেই কানে ভেসে আসছে দক্ষ কন্ঠের মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি।আযান শেষ হতেই সূর্য তার পরিপূর্ণ রূপে উদিত হলো।নদীর পানিতে ভেসে উঠেছে সূর্য্যি মামার চোখ ধাঁধান স্বর্নালী অবয়ব।নদী তার চকচকে সোনালী বর্ণের পানিতে দৃষ্টি দিতে বারণ করছে।
হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম আমার ঢিলে হাত খোঁপা টা সম্পূর্ণ রূপে খুলে গেছে।মনে হচ্ছে কেউ আমার চুলে হাত গলিয়ে দিয়ে খোঁপা করছে।ঘাড়ে একটা বলিষ্ঠ হাতের ছোঁয়ায় আমি খানিক কেঁপে উঠলাম।পাশে লক্ষ্য করতেই দেখি আলআবি ভাইয়া নেই।বুঝতে দেরি হলো না আমার পিছনে কে দাঁড়িয়ে খোঁপা করছে।খোঁপা করা শেষ হতেই মনে হলো খোঁপায় কিছু একটা গুঁজে দেওয়া হচ্ছে।
মিহি একটা কন্ঠ এসে কানে বাজতেই শুনতে পেলাম,,,
--হবে কি আমার সারাজীবনের বর্ষণ সঙ্গিনী?হবে কি তোমার বর্ষণ সঙ্গীর #বর্ষণ_সঙ্গিনী?
কথাটা কর্ণপাত হতেই আমার চোখ জোড়া অশ্রুসিক্ত হয়ে আসতে চাইল। এই মুহূর্তে কারো মুখে কোন কথা নেই। সেই একই ভঙ্গিমায় দুজন দাঁড়িয়ে আছি। হৃদপিণ্ড ক্রমশ তার ধুকধুক শব্দের বাজনা বাজিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তেটার অনুভূতি আমার কাছে অবর্ণনীয়। পৃথিবীর কোনো ভাষাতেই প্রকাশ করে বোঝাতে পারবোনা কতটা সুখ মনে দোলা দিচ্ছে। চোখের অশ্রুবিন্দু কে আর ধরে রাখতে পারলাম না। দরদরিয়ে গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগল।একেই বুঝি বলে সুখের কান্না। এই মাহেন্দ্রক্ষণেরই তো অপেক্ষায় ছিলাম আমি।
দুই বছর ধরে যাকে আমি ভালবেসেছি তাকে আমি চিনব না কি করে?আমার বর্ষণ সঙ্গীকে তো চিনে গিয়েছিলাম সেদিনই যেদিন তার অফিসে বসে শাল সেলাই করেছিলাম।আমি এতটাও বোকা নই (যতটা হুমাশার পাঠক পাঠিকারা ভাবে)।সেদিন তার অফিসে তার হাতের সেই গোটা গোটা লেখা আমাকে বলে দিয়েছিল কে আমার বর্ষণ সঙ্গী। হাতের লেখা এক ব্যক্তির সঙ্গে আরেক ব্যক্তির মিল থাকতেই পারে তবে অবিকল একই রকমের হয় না। সেদিন আমি আমার বর্ষণ সঙ্গীর হাতের লেখা চিনতে মোটেও ভুল করিনি। ওইদিনই ভেবে নিয়েছিলাম আলআবি ভাইয়াই আমার অদেখা বর্ষণ সঙ্গী। তবে তার আচার-আচরণে খুব একটা নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। আর তাকে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগও পাচ্ছিলাম না। ঠিক সেই সময়ে নিয়াজ ভাইয়া যখন বলে আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে তখনই সঠিক সুযোগটা পেয়ে যাই। ইচ্ছে করেই তার দেয়া শাড়িটা পড়ে যাই। সেদিন ভেবে নিয়েছিলাম যদি আলআবি ভাইয়া আমাকে একটু পরিমাণ হলেও ভালোবাসেন তাহলে ঠিকই আসবেন। আর সে এসে তার বোকামির পরিচয় ও দিয়েছেন। আগে নিশ্চিত না থাকলেও সেদিন নিশ্চিত হয়ে যাই় আমার বর্ষণ সঙ্গী আর কেউ নয় বরং আলআবি ভাইয়াই।
তার হাতের লেখা দেখার পর থেকেই যতবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছে ঠিক ততবারই আমার মন বলেছে এই বুঝি সে বলবে "আমি ই তোমার বর্ষণ সঙ্গী"কিন্তু সে বলেনি। তার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষায় ছিলাম আমি। আজ তা সার্থক হলো। কিন্তু তার এত অভিনয় এর পেছনের কাহিনী আমার জানা নেই। শুরু থেকেই তিনি অভিনয় করে গিয়েছেন। তাকে তো এমনি এমনি ছাড় দিব না। তার অভিনয়ের পালা শেষ হলেও এবার আমার অভিনয়ের পালা শুরু।
নিজের মনের সঙ্গে যখন কথাগুলো বলছিলাম ঠিক তখন দেখি আলআবি ভাইয়া আমার মুখোমুখি দাঁড়ানো। তিনি কখন আমার সামনে এসেছে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। আমার সামনে দাঁড়িয়েই তিনি তার মোবাইল টা আমার সামনে তুলে ধরে বলে উঠলেন,,,
--কেমন হয়েছে?
আমি মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি একটা ছবিতে খুব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমার খোঁপায় একটা বেলি ফুলের মালা নিপুণ হাতে গুঁজে দেওয়া। বেলি ফুলের মালাটা দেখে এতক্ষণে বুঝতে পারলাম কোথা থেকে বেলিফুলের ঘ্রাণের সুবাস আসছিল। মনের মধ্যে খুব খুশি খুশি লাগছে। আলআবি ভাইয়াকেও অনেক উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। মুখে হাসি আনতে গিয়ে ও আনলাম না।মুখের মধ্যে গম্ভীরতা টেনে আনলাম।আলআবি ভাইয়া আমাকে কথা না বলতে দেখে মোবাইলটা তার পাঞ্জাবির পকেটে গুঁজে বললেন,,,
--আমার উত্তর কিন্তু এখনো পাইনি?
--আমি আপনাকে বর্ষণ সঙ্গী হিসেবে মানি না।এই দেড় বছরে না ছিল আপনার কোন খোঁজ, আর না নিয়েছেন আমার কোনো খোঁজ।আজ হুট করে এসে বলছেন আমি তোমার বর্ষণ সঙ্গী। বললেই হলো নাকি?(আমি)
আমার কথায় তার মধ্যে কিছুটা রাগের আভাস দেখতে পাচ্ছি। উনি জোরে কথা বলতে গিয়েও বললেন না। তার বদলে আমার হাত দুটো তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলতে লাগলেন,,,
-- তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো? তাহলে বলতে পারো। আমি তোমাকে প্রমান দেখাতে পারি যে আমিই তোমার বর্ষণ সঙ্গী।
কথাগুলো শেষ করে পাঞ্জাবির পকেট এ পায়জামার পকেট এ হাতাহাতি শুরু করলেন। তাকে দেখে অনেক উত্তেজিত মনে হচ্ছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে, আমাদের সেই পুরনো মেসেজগুলো বের করে আমার সামনে ধরে বলতে লাগলেন,,,
--দেখো এই যে এগুলো, এগুলো তো মানবে। আমাদের পুরনো মেসেজ।
তারপর পুনরায় মোবাইল নিয়ে কিছু ছবি বের করলেন। আমার সামনে ধরতেই দেখলাম তার পাঠানো সব চিঠিগুলোর ছবি। আলআবি ভাইয়া উৎকণ্ঠা হয়ে বললেন,,,
--এগুলো ?এগুলো তো মানবে। তোমাকে পাঠানো সব চিঠির ছবি।
-- আমাকে বোকা মনে করেছেন? আজকাল ফেক মেসেজ বানানোর অনেক অ্যাপস আছে। আর আপনিও তো বলেছিলেন বর্ষণ সঙ্গীর সাথে আপনার আত্মার সম্পর্ক। তার মানে নিশ্চয়ই সে আপনার ভাই বা বন্ধু বা কোনো আত্মীয়-স্বজন। তার থেকেই হয়তো ছবিগুলো নিয়েছেন। আমি আপনাকে এই মুহূর্তে মানতে পারছি না(আমি)
--আমিই তোমার বর্ষণ সঙ্গী৷ ট্রাস্ট মি!।বিশ্বাস কেন করছ না।ড্যাম ইট!
লাস্টের কথাটা তিনি আমার হাত ধরে ঝাকিয়ে চিৎকার করে বললেন। আহা! মনে কি যে শান্তি অনুভব হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না। চেয়েছিলাম একদিন সে এই ভাবেই চিৎকার করে বলবে আমিই তোমার বর্ষণ সঙ্গী। এই মুহুর্তটা তার কাছে বিষাদ ময় হলেও আমার কাছে জীবনের সবচাইতে প্রিয় অনুভূতির মুহূর্ত। আশেপাশে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। বেড়েছে বলতে গেলে ভুল হবে। বলতে হবে প্রচুর পরিমানে বেড়েছে। প্রায় প্রত্যেকেই একবার হলেও আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা দেখতে শোচনীয় লাগছে না। তাই তার থেকে হাত ছাড়িয়ে বললাম,,,
--সকাল হয়ে গিয়েছে।আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন
আমার কথা শেষ হতে না হতেই তিনি আমার হাত খুব শক্ত করে ধরে হাটতে লাগলেন। এমন ভাবে হাতটা ধরে রেখেছেন মনে হচ্ছে তার ভিতরে সকল ক্ষোভ আমার এই হাতের উপরে ঝারছেন। কয়েক কদম এগিয়ে তিনি থেমে গেলে। পিছনে আমার দিকে ফিরে একটা সাদা রঙের মাস্ক পরিয়ে দিলেন। তারপর পুনরায় আবার হাত ধরে হাটতে লাগলেন। এরমধ্যে আমাদের আর কোন কথা হলো না।
তার বাইকটা যেখানে ছিল সেখানে এসে আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন বাইকে উঠে বসে আছেন কিন্তু আমাকে ওঠার জন্য বলছেন না। বুঝতে পারছি মশাইয়ের রাগ এখন সাত আসমানে। আমিও কিছু না বলে বাইকে উঠে বসলাম। বাইক স্টার্ট হতেই ভয়ে সিঁটিয়ে গেলাম। বাইকে চড়েছি নাকি রকেটে চড়েছি তা বোঝা মুশকিল। হাত দিয়ে আলআবি ভাইয়ার পাঞ্জাবির কাঁধে অংশ কোনমতে চেপে ধরে বসে রয়েছি। একটু পর অবস্থা বেগতিক দেখে দুই হাত দিয়ে তার কাঁধের পাঞ্জাবি খামচে ধরে বসে রইলাম। রাস্তাঘাটে মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যানবাহনের ভীড়। এই মুহূর্তে আমার একটা হাইওয়ে দিয়ে ছুটে চলেছি। আগের তুলনায় বাইক এখন কিছুটা ধীর গতিতে চলছে। কিন্তু একে ও স্বাভাবিক গতি বলা যাচ্ছে না। প্রায় আধা ঘন্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টার মতো সময় হবে আমরা বাইকে উঠেছি। হঠাৎ করেই দেখি আলআবি ভাইয়া বাইক ঘোরাতে শুরু করেছেন। অর্থাৎ আবার পিছনের রাস্তায় ব্যাক করছেন। পুনরায় আগের রাস্তায় যেতে দেখে আমি তড়িৎ গতিতে বলে উঠলাম,,,
--আপনি কোথায় যাচ্ছেন আবার? এই রাস্তা দিয়েই না আমরা আসলাম?
আমার প্রশ্নের পৃষ্ঠে কোন জবাব পেলাম না। কিন্তু আমি থেমে থাকলাম না। তাকে আবারো জিজ্ঞেস করতে লাগলাম। অনেক সময় ধরে তাকে জিজ্ঞেস করার পরেও কোন জবাব পেলাম না। তখন আমি নিজে থেকেই দমে গেলাম।
এতক্ষণ বাসার চিন্তা না হলেও এখন হচ্ছে। কারণ এখন সকাল সাড়ে ছয়টা।আর কিছুক্ষণ পরেই ভাবী এসে আমার রুমে ডাকাডাকি শুরু করবে। তখন তো আমাকে পাবেনা। আর আমি বাসায় গিয়েই বা কি বলবো? ভেবেছিলাম সকাল-সকাল বাসায় পৌঁছে যাব, কিন্তু এখন পড়ে গেলাম আরেক টেনশনে।
আমার ভাবনার মাঝেই বাইকটা থেমে গেল। আশেপাশে পরখ করে দেখি সারি সারি অনেকগুলো খাবার এর রেস্তোরা। মনে মনে ভাবছি আলআবি ভাইয়ার যখন ক্ষুধা পেয়েছে তখন আগে এখান থেকে খেয়ে নিলেন না কেন? অর্ধেক রাস্তা থেকে আবার কেন ফিরে আসলেন? হাতে টান পড়তে আমার হুশ ফিরে আসলো। এবারও হাতটা একটু জোরে চেপে ধরেছেন। উফ!বুঝি না আমার হাত ধরেই কেন সারাক্ষণ ওনার টানাটানি করতে হবে?
একটা রেস্তোরাঁর ভেতরে যেতেই পেটের ক্ষুধা থেকে মনের ক্ষুধা তরতর করে বেড়ে উঠলো। তার কারণ হলো একটাই- ইলিশ মাছ। চারদিকে মাছির মতো ইলিশ ভাজার ঘ্রাণ ভোঁ ভোঁ করছে।সেই সাথে মানুষের কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ তো রয়েছেই।
আলআবি ভাইয়া আমাকে নিয়ে একেবারে শেষের একটা টেবিলে বসে পড়লেন। বসা মাত্রই টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগলেন। পুরো বোতলের পানি শেষ করে ফললেন। যখন তিনি পানি খাচ্ছিলেন তখন তার ছোট তিলযুক্ত কন্ঠনালিটা বারবার উপর-নিচ হচ্ছিল।বারবার মনে একটা কথাই ভেসে আসছিল।তা হলো সকল যুবকের ই পানি খাওয়ার দৃশ্য কি এতটা মোহনীয় হয় নাকি শুধু এই মানুষটাই পানি খেলে তার কন্ঠনালি এতটা মোহনীয় লাগে? আমি যখন এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তখন তার গম্ভীর কণ্ঠধ্বনি তে আমার সম্বিত ফিরে এলো।
-- আমাকে বর্ষণ সঙ্গী হিসেবে নাই মানতে পারো। আলাবি হিসেবেও নাই মানতে পারো। কিন্তু নিজের স্বামী হিসেবে মানতে হবে এই কথাটা নিজের মগজে ভাল করে গেঁথে নাও।কজ, এক কথা আমি তোমাকে বারবার বলব না।
--আপনি আমাকে বর্ষণ সঙ্গিনী হিসেবে মানবেন নাকি জুইঁ হিসেবে মানবেন তা আপনার ব্যাপার। কিন্তু ভুলেও এই মুহুর্তে বউ হিসেবে একদমই মানতে পারবেন না বলে দিলাম।
আলআবি ভাইয়া তার কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমিও তাকে পাল্টা জবাব দিয়ে দিলাম। দেড় বছর সে আত্মগোপন করে আমার থেকে দূরে দূরে ছিলেন। এবার তাকেও বোঝাবো দূরে দূরে থাকার মজা। আমি তার দিকে তাকিয়ে আমার কথাটা শেষ করলাম। দেখি সে কটমট করে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছেন। তার এমন চাহনিকে মনে মনে আমি একটু হলেও ভয় পাই। তাই তার দিকে আর না তাকিয়ে আশেপাশে পরখ করতে লাগলাম। তার থেকে চোখ ফিরানো মাত্রই তিনি হুট করে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়লেন আমার দিকে। তার এভাবে দাঁড়ানো দেখে আমি হকচকিয়ে তার দিকে তাকালাম। কিছু বুঝে উঠার আগে ই তিনি তার ওষ্ঠদ্বয় আমার কপালে ছোঁয়ালেন তারপর আবার নিজের স্থানে বসে পড়লেন।বসেই বলে উঠলেন,,,
--আর কিছু? কি যেন বলছিলে?
বলেই আমার দিকে তার সেই চিরচেনা ইবলিসি মার্কা হাসি ছুঁড়ে দিলেন। তার আকস্মিক এমন কাজে আর কথায় আমি একরাশ লজ্জা নিয়ে স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম।তার যে হুটহাট মুড চেঞ্জ হওয়ার ব্যামো রয়েছে তা আমার অজানা নয়। তবে তার এমন আচার-আচরণ আমার ঠিক হজম হচ্ছে না। আমাদের কয়েক হাত দূরে ই পাশের টেবিলে একজোড়া মধ্য বয়স্ক দম্পতি দেখা যাচ্ছে। সাথে রয়েছে তাদের ছয় অথবা সাত বছরের একটা মেয়ে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আলআবি ভাইয়ার এমন এহেন কান্ড দেখে ফেলেছেন।তারা মিটমিট করে হাসছেন। যা আমাকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। আমি আলআবি ভাইয়া কে কোন জবাব দিলাম না মাথা নিচু করে বসে রইলাম। এর মধ্যে একজন ওয়েটার এসে আমাদের জিজ্ঞেস করলেন আমরা কি খাবো। এখানে মূলত এখন ভাত আর ইলিশ মাছের নানা রকম আইটেম পাওয়া যাবে। এছাড়া তাদের কাছে আর কিছু নেই।আলআবি ভাইয়া কি কি অর্ডার করলেন সেদিকে আমার কর্ণ পাত হলো না।আমি নিরব মনে আশেপাশের মানষ দেখতে ব্যস্ত ছিলাম।আশে পাশে দেখে যা বুঝলাম তাহলো এখানে আগতো প্রায় সব মানুষই হয়তোবা পদ্মা নদীর ওপারে যাবে আর নয়তো পদ্মা নদী পেরিয়ে এসেছে।পেট পূজো হলেই নিজের গন্তব্য মুখী হবে।
বই পুস্তকে পড়া এই পদ্মা নদী আজই প্রথম দর্শন করলাম। প্রিয় মানুষ টার সাথে অপরিচিত স্থানে ঘোরাঘুরি করায় অন্যরকম অনুভূতি জড়িয়ে থাকে। কতগুলো অচেনা মুখের ভিড়ে কেবল একটা চেনা মুখের উপরই থাকে সকল আশা ভরসা।
আমি আলআবি ভাইয়ার মুখোমুখি বসে আছি। একটু পর পর তাকে আড় চোখে দেখে নিচ্ছি। তাকে যে আমি বারবার পরখ করছি সে হয়তো তা বুঝতে পারছেন না। বুঝবেন কি করে, সে তো তার মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত আছেন।তার হাতে মোবাইল দেখে বাসার কথা ফের মনে পরলো।তাই তাকে ডাক দিয়ে বসলাম,,,
--আলআবি ভাইয়া?
আমার ডাকে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা করে ভ্রুকুটি করলেন তারপর বললেন,,,
--আমি তোমার কোনো জন্মেরই ভাই হই না।তাই এরপর থেকে ভাইয়া ডাক যেন না শুনি।
--আপনি আমার এ জন্মের ই ভাই।এহ্ আসছে ভাইয়া ডাক যেন না শুনি।আপনি যদি আগেই আপনার পরিচয় দিতেন তাহলে হয়তো ভাইয়া ডাকতাম শুনতে হতো না।এখন তো একশো বার বলব ভাই। ভাই! ভাই! ভাই!(আমি)
--তখন তো কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়েছ।এরপর আর একবার ভাইয়া বলে দেখ, ঠোঁটের ছোঁয়া এরপর যেখানে দিব তা তোমার ধারণার বাইরে হবে।(আলআবি ভাইয়া)
আমি নাক মুখ কুঁচকিয়ে বলে উঠলাম,,,
--নির্লজ্জ লোক! দিন দিন মুখটাকেও নষ্ট করে ফেলছেন।
উনি কিছু বলার আগেই একজন লোক এসে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত ভর্তি দুটো প্লেট টেবিলের উপর রাখলেন।এরপর প্লেটে করে রাখলেন ভাজা ইলিশ মাছের সাথে নানান রকমের ভর্তা। আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলাম এভাবে কোন খোলামেলা রেস্তোরাঁয় বসে ভাত খাওয়াটাও আমার জীবনে প্রথম। তাঁর জন্যেই রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কিছু নতুন নতুন অনুভূতিকে আলিঙ্গন করতে পারলাম। তেতুল বলতেই যেমন জিভে জল এসে পড়ে তেমন ইলিশ মাছ নাম শুনলেই আমার জিভে জল এসে পড়ে। তাই আশেপাশের কোন খবর না নিয়েই যখন নিজের পেট পূজোয় ব্যস্ত ছিলাম তখন হঠাৎ করে আলআবি ভাইয়ার প্লেটের দিকে চোখ পরল। দেখি উনি বিনা ইলিশ মাছেই কেবলমাত্র ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে যাচ্ছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
-- আপনি মাছ নিবেন না?
আলআবি ভাইয়া আমার দিকে কিছুটা অসহায় চাহনি দিয়ে বললেন,,,
-- এই মাছে প্রচুর কাঁটা তাই.....
এটুকু বলেই থেমে গেলেন।তারও আর বলার প্রয়োজন হলো না।আমার যা বোঝার তা বুঝে গিয়েছি।আমার জন্মদিনের দিন আমি লক্ষ্য করেছিলাম উনি ইলিশ মাছ নেন নি।সেদিন তার না খাওয়ার পিছনে যে এই কাহিনী ছিল তা আজ জানতে পারলাম।তার পানে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সামনে থাকা মাছের প্লেট থেকে এক পিছ মাছ নিয়ে সন্তপর্ণে কাঁটা বেছে বেছে তার প্লেটে উঠিয়ে দিলাম।আমার থেকে এমন ব্যবহার হয়তো তার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল।তিনি আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে খাওয়া শুরু করলেন।
ইলিশ মাছের কথা মনে পড়তেই সেদিন রাতের কথাও মনে পড়ে গেল।কথা টা অনেকদিন ধরেই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেদিন আমাকে সিঁড়িতে ধাক্কাটা কে মেরেছিল? যদি আলআবি ভাইয়াই হয়ে থাকেন, তাহলে বলতে হয় সে হয়তোবা ছাঁদে থাকতেই তার বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনেছেন।তাই তার হিতাহিত জ্ঞান হয়তোবা সাময়িকের জন্য লোপ পেয়েছিল। বাবার এমন একটা সংবাদ শুনে যেকোন সন্তানেরই দিশেহারা অবস্থা হয়ে যাবে।তার উপর আলআবি ভাইয়ার সাথে তার বাবার সম্পর্ক ছিল গভীর বন্ধুত্বের। ওই সময়ে তার ওইরকম আচরণ মেনে নেয়া গেলেও দেড় বছরের আত্মগোপন একেবারে ই মেনে নেয়া যায় না। কোন কারণের জন্য তার এমন করতে হলো? ভেবেই আমি কূল পাচ্ছিনা। আর যদি অন্য কেউই আমাকে ধাক্কা দিয়ে থাকে তাহলে, আমাকে ধাক্কা দেয়ার তার কি উদ্দেশ্য ছিল? মোটকথা সেদিন রাতের ঘটনার কিছুর সাথেই কিছুর যোগ সূত্র খুঁজে পাচ্ছিনা।মনে মনে ভেবে নিলাম তাকে এসম্পর্কে জিজ্ঞেস করব। কিন্তু এখন না। আরো কয়েকদিন পরে। কারন এখন তো আমি তার সাথে দূরে থাকার অভিনয় অভিনয় খেলা খেলবো।
আমার আকাশ কুসুম ভাবনার মধ্যে ই আমাদের খাওয় শেষ হলো। রেস্তোরাঁর বাইরে এসে সামনেই তার সাদা বর্ণের গাড়িটা দাঁড়ানো দেখলাম। গাড়ির বাইরে শাফিন নামের ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। আমরা দুজনে গাড়ির কাছে যেতেই শাফিন বলে উঠলো,,,
-- ভাই আপনার বাইক পাঠিয়ে দিয়েছি আর এই যে গাড়ির চাবি।
বলেই শাফিন আরেকটা ছেলের সাথে একটা বাইকে করেই চলে গেল।শাফিন চলে যেতেই আমি আলআবি ভাইয়া কে প্রশ্ন করলাম,,,
--গাড়ীতে কেন?বাইকেই তো ঠিক ছিলাম।ফুড়ফুড়ে বাতাস খেতে খেতে বাসায় যেতাম।
--হ্যাঁ আর আমি আমার বউয়ের চেহারাটা সবাইকে দেখাতে দেখাতে যেতাম তাই না? (আলআবি ভাইয়া)
--কে আপনার বউ? কীসের বউ? আর আমি তো মাস্ক পড়েই আছি।(আমি)
--আসো দেখাই কীসের বউ।(আলআবি ভাইয়া)
কথাটা বলা শেষেই তার মুখে দুষ্টুমি ভরা হাসির ছাপ দেখতে পেলাম।তিনি একপা একপা করে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি দ্রুতগতিতে গিয়ে গাড়ি তে উঠে বসলাম। গাড়ি কিছুদূর যাওয়ার পর আমি আলআবি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
-- আচ্ছা আমাদের যেতে আর কত সময় লাগবে?
--দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। জ্যামে পড়লে তিন ঘন্টার মতোও লাগতে পারে। (আলআবি ভাইয়া)
এখন প্রায় পৌনে আটটা বাজে। তার মানে বাসায় যেতে যেতে দশটা বা দশটার বেশি বেজে যাবে। আমি আলআবি ভাইয়াকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,,,
-- বাবা আর ভাইয়া যখন জিজ্ঞেস করবে কোথায় ছিলাম? বাসায় গিয়ে তখন আমি কি বলবো? (আমি)
--সেটা তোমার ব্যাপার। (আলআবি ভাইয়া)
--কি!!! আমার ব্যাপার মানে? আপনি ই তো আমাকে নিয়ে এসেছেন।(আমি)
-- আমি তোমাকে কোন জোরজবরদস্তি করেছি নাকি। বর্ষণ সঙ্গীর নাম শুনেই তো তুমি লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আসলে।
এই মুহূর্তে তার উপর খুব রাগ হচ্ছে বলার মত কিছু মুখেও আসছে না। তার দিকে কটমট করে তাকালাম কিন্তু তাতে তার কোনো ভাবান্তর নেই। সে একমনে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে থেকে সিটে মাথা এলিয়ে দিলাম। ভাবতে লাগলাম বাসায় যেয়ে কি বলা যায়।
আমার ভাবনার রাজ্য থেকে কখন যে ঘুমের রাজ্যে চলে গিয়েছে তা টের পাইনি। ঘুম ভাঙতেই দেখি আমার জানালার পাশের গ্লাস টা খোলা সেই সাথে আমার চুলের খোঁপা টাও খোলা। জানালা দিয়ে মাঝারি গতির বাতাস এসে আমার চুলকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। মূলত এলোমেলো চুল আমার মুখে আছড়ে পড়ার কারনেই ঘুমটা ভেঙে গিয়েছে। আমার পাশেই লক্ষ্য করলাম আলআবি ভাইয়া একমনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। গাড়ির স্টিয়ারিং এর সাথে ঝুলছে খোপায় লেপ্টে থাকা বেলি ফুলের মালাটা। মালাটা ওখানে দেখে একটু অবাক হলাম। কারণ আমার মনে হচ্ছে খোঁপাটা খুলে চুল এলোমেলো হয়েছে বাতাসের বেগে। সেই হিসেবে মালাটা আমার চুলে খোলা অবস্থায় থাকতো অথবা নিচে পড়ে যেত। মানে আমার আশেপাশে ই থাকতো। অত দূরে গেল কিভাবে? ওহ নিশ্চয়ই আলআবি ভাইয়া রেখেছেন।মালাটা থেকে এখন তীব্র সুবাস ছড়াচ্ছে না। কিন্তু তাও মৃদু একটা সুবাস ছড়িয়ে আছে পুরো গাড়ি জুড়ে।
প্রায় দশ টার দিকে গাড়ি আমাদের এলাকায় ঢুকলো। কিন্তু আমার বাসার রাস্তায় না ঢুকে সাদুদের বাসার রাস্তার দিকে ঢুকছে। ওদের বাসার রাস্তা দেখে আমি বলে উঠলাম,,,
--এই রাস্তায় কেন ঢুকছেন আপনি? আমাদের বাসার রাস্তা তো পেছনে বা দিকে ফেলে এসেছেন।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই গাড়ি সাদুদের বাসার গেটের সামনে থেমে গেল। আলআবি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
--তোমার বান্ধবীর থেকে গিয়ে যেকোন একটা নোট নিয়ে আসো। এক মিনিটের মধ্যে যাবে আর আসবে। নো গসিপ। বাসায় গিয়ে বলবে তোমার বান্ধবীর বাসায় এসেছিলে নোট আনার জন্য। এতোটুকু বললেই হবে। বাকিটা নিয়াজ সামলে নিবে।
--মানে?নিয়াজ ভাইয়া কি করবে আবার?কি সামলাবে? (আমি)
-- তাড়াতাড়ি যাও আমার সময় নেই হাতে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। সাদুকে এর আগে আমি আলআবি ভাইয়ার কথা বলেছিলাম। তাই ওকে সবকিছু বলা লাগেনি। শুধু আলআবি ভাইয়ার স্বীকারোক্তি মুখে বলে তারাহুরো করে একটা নোট নিয়ে আবার নেমে পড়লাম। বাসায় এসে আলআবি ভাইয়ার শেখানো বুলি গুলোই বললাম। আজও বর্ষণ সঙ্গীর চক্করে ভার্সিটি মিস হয়ে গেল। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিশাল বড় একটা ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে শুয়ে পরলাম।
সন্ধ্যাবেলায় ভাইয়া অফিস থেকে এসেই দারুণ একটা খবর দিলো। নিয়াজ ভাইয়ার ভাষ্য মতে তাদের কনস্ট্রাকশন কম্পানি মানে আলআবি ভাইয়াদের কম্পানি বান্দরবানে তিন বছরের একটা রিসোর্ট প্রজেক্ট শেষ করেছে। এক সপ্তাহ বাদেই রিসোর্টের ওপেনিং সেলিব্রেশন।আমরা মাত্র ছয় দিন পরে ই চার দিনের জন্য পুরো পরিবার বান্দরবান যাচ্ছি। অফিস থেকেই তাকে সকল খরচাপাতি দেওয়া হবে। ভাইয়ার কথায় যেমন খুশি হয়েছি ঠিক তেমনই মনে একটা খটকা লাগছে। ওপেনিং সেরেমানিতে ভাইয়া একলা যেতে পারে বড়জোর সাথে করে ভাবিকে নিতে পারে কিন্তু পুরো পরিবার শুদ্ধ আমন্ত্রিত কেন? যাই হোক আমি এতকিছু দিয়ে আমি কি করব? ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ যখন পেয়েছি তখন আমি শুধু ঘুরে বেড়াবো। রাতে খাবার টেবিলে বাবা জানিয়ে দিল সে যাবেনা। বাবা বলল আমরা তিনজন যেন যাই অনেক জোরাজুরির পরেও বাবাকে রাজি করতে পারলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো আমরা তিনজনেই যাব। ভাবির প্রেগনেন্সির দেড় মাসের একটু বেশি চলছে। তাই আপাতত এই মুহূর্তে ভাবির খুব একটা বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না।
রাতে সাড়ে এগারোটার দিকে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।সে সময় আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে সেই চিরচেনা নামটা জ্বলজ্বল করছে --"বর্ষণ সঙ্গী"।আজ দেড় বছরেরও বেশি সময় পর এই নাম্বার থেকে আবার কল আসলো। অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। কলটা তাড়াহুড়ো করে রিসিভ করতে গিয়েও থেমে গেলাম। ভাবলাম একটু মজা দেখাতে হবে তাকে। ফোনের সাইলেন্ট মুড অন করে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ঘুম তো দূরের কথা চোখের পলকটাই ফেলতে ইচ্ছে করছেনা। একদৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছি।প্রথমে কলটা রিসিভ করতে ইচ্ছে না করলেও এখন একটু প্রিয় মানুষটার গলার স্বর শুনতে খুব ইচ্ছে করছে। মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে মস্তিষ্ককের পরাজয় করে ঘোষণা করে চারবারের সময় রিং হতেই কলটা রিসিভ করে বসলাম।
--আসসালামু আলাইকুম। (আমি)
--ওয়ালাইকুম আসসালাম। ফোন ধরতে এতে সময় লাগে কেন?(আলআবি ভাইয়া)
--আমার ফোন,আমার ইচ্ছে। (আমি)
--তোমার দেখছি ইদানীং মুখে খই ফুটছে।ব্যাপার কি?(আলআবি ভাইয়া)
-- ব্যাপার হলো আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। আপনার সঙ্গে খেজুরে আলাপ করার ইচ্ছে মোটেও নেই।(আমি)
-- আমারও তোমার সঙ্গে খেজুরে আলাপ করার কোনো ইচ্ছা নেই। (আলআবি ভাইয়া)
--তাহলে আপনি ফোন দিয়েছেন কেন শুনি? (আমি)
--প্রেম আলাপ করার জন্য(আলআবি ভাইয়া)
-- তাহলে বসে বসে আপনার ঘরের মশার সাথে প্রেমালাপ করুন আমি রাখলাম।(আমি)
কথাটা বলেই আর এক মুহুর্ত দেরি করলাম না। সঙ্গে সঙ্গে কলটা কেটে দিলাম। ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রেখে দিলাম। তারপর দু চোখের পাতা বন্ধ করে নিলাম। এবার খুব শান্তির ঘুম হবে।
চলবে...
Writer:- হুমাশা এহতেশাম