২২৩ টা মিসড কল দেখে যেটুকু ঘুম ঘুম ভাব ছিল তাও জানালা দিয়ে ফুড়ুৎ করে পলায়ন করল।এত গুলো কল কেউ কিভাবে দিতে পারে।সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই দেখি আলআবি ভাইয়ার এতগুলো কল। সারারাত ধরে কি আলআবি ভাইয়া না ঘুমিয়ে আমাকে কলই করে গিয়েছেন।তাতে আমার কি?যা হয়েছে, ভালো হয়েছে। একদম উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। আমাকে কল করেছেন মাত্র একরাত।আর আমি যে কতগুলো রাত অপেক্ষা করেছি তা?
হালকা পাতলা নাস্তা বানিয়ে খেয়ে আলআবি ভাইয়ার দেওয়া সেদিনের সেই কালো বোরখা আর হিজাব টা গায়ে চাপিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।সাদু আর ওর আম্মু কোন এক কারণে ওদের গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। ভার্সিটি দুই দিন মিস যাওয়ায় একাই বেড়িয়ে পরলাম।
ভার্সিটিতে কিছু "হায়-হ্যালো"করার ফ্রেন্ড রয়েছে। ওদের সাথে বসেই ক্লাস করলাম।শেষের যে ক্লাস টা হওয়ার কথা ছিল সেটা ক্যানসেল হয়ে যাওয়ায় আমি মনে মনে ভেবে নিলাম নিশাদ ভাইয়ার কাছে যাব। গতদিনের একটা ইম্পর্টেন্ট লেকচার মিস হওয়াতে ই মূলত নিশাদ ভাইয়ার কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম।নিশাদ ভাইয়া হলো আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র। সেই সাথে ডিপার্টমেন্টের টপারদের মধ্যে একজন।পড়াশোনা বুঝে নেয়া ছাড়া তার সাথে আর অন্য কোনো কারণে সাক্ষাৎ হয় না।ভার্সিটি লাইফেও কিছু শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে, যারা পড়াশোনা ছাড়া কিছুই বোঝে না।তাদের সাথে বন্ধু মহলের পরিবর্তে পাওয়া যায় বইমহল।এই নিশাদ ভাইয়াও ওইসব শিক্ষার্থীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ক্লাসে গিয়ে তাকে না পেয়ে লাইব্রেরিমুখী হলাম। কারণ এই বান্দার বিচরণ কেবল ক্লাস আর লাইব্রেরিতেই।
লাইব্রেরি তে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম নিশাদ ভাইয়া বইয়ে মুখ গুঁজে আছেন। আমি গিয়ে তার সামনাসামনি বসতেই ঝড়ের গতিতে কেউ একজন এসে আমার পাশে বসে পরলো।তাকাতেই দেখি আলআবি ভাইয়া আমার পাশে বসে বসে হাপাচ্ছেন।তাকে এখানে দেখেই তার ২২৩ টা কলের কথা মনে পরে গেল।হায়!হায়! এখন এখানে বসেই দু-চারটা টা লাগিয়ে দিবে নাকি? সামনে চোখ পড়তেই দেখে নিশাদ ভাইয়া আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চাহনি বলে দিচ্ছি আমাদের দুজনকে তার সামনে বসে থাকতে দেখে তিনি কিছুটা বিরক্ত। আমি যখনই কিছু বলার জন্য উদ্যত হলাম তখন আলআবি ভাইয়া নিশাদ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
-- ও যেটা বুঝতে এসেছে তাড়াতাড়ি ওকে সেটা বুঝিয়ে দাও।
আলআবি ভাইয়ার কথা শুনে আমি তার দিকে তাকিয়ে তড়িৎ গতিতে বললাম,,,
--আপনি কি করে জানেন আমি এখানে কিসের জন্যে এসেছি?
-- তুমি দিনে কয় কদম ফেলো সেই খবরও আমার কানে আসে।(আলআবি ভাইয়া)
আমাদের কথার মাঝেই নিশাদ ভাইয়া বলে উঠলেন,,,
-- আমার মনে হয় আপনাদের দুজনের একটু ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে আসা দরকার।
নিশাদ ভাইয়ার কথা শেষ হতেই আলআবি ভাইয়া আমার বাম হাত চেপে ধরে বললেন,,,
--আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র বলে তোমাকে আজ অন্যের কাছ থেকে পড়া বুঝে নেয়ার সুযোগ টা দিচ্ছি।
কথাটা বলেই উনি নিশাদ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,,,
--ওর যেটাতে প্রবলেম আছে সেটা সলভ করে দাও।
নিশাদ ভাইয়ার কাছে যেহেতু আগেও প্রবলেম সলভ করতে এসেছিলাম সেহেতু ভাইয়া বুঝে গিয়েছেন আলআবি ভাইয়া কিসের কথা বলছেন।আমি যখন কিছু বলতে যাব তার আগেই নিশাদ ভাইয়া বলল,,,
--জুইঁ শুরু করি তাহলে?
আমি আর কোনো কথা বাড়ালাম না।আমার সমস্যা গুলো নিশাদ ভাইয়াকে দেখাতে লাগলাম। আলআবি ভাইয়া সেই যে আমার হাত ধরে রেখেছেন ছাড়ার নাম গন্ধ ও নেই।আমি হাত টা ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতেই আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,
--কি সমস্যা?
--আপনার কি সমস্যা? এভাবে হাত ধরে রেখেছেন কেন? আমি ভালো ভাবে মনোযোগ দিতে পারছি না আপনার জন্য।(আমি)
কথাগুলো বলতেই আলআবি ভাইয়া হাতটা ছেড়ে দিলেন। হাত ছাড়া পেতেই আমি বইয়ের ওপর পুনরায় চোখ রাখলাম। তৎক্ষণাৎ ই হাতে টান লাগতে আবার ও হাতের দিকে তাকালাম।হাতের দিকে তাকাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। আলআবি ভাইয়া তার এক হাতে আর আমার আরেক হাতে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছেন। আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই একটা গা জালানো হাসি আমার দিকে ছুড়লেন। ঠোঁটের কোণে সেই হাসি বজায় রেখে বললেন,,,
-- এটা কল না ধরার জন্য শাস্তি।
তার কথায় আমি থ হয়ে গেলাম।কি বলছেন উনি এগুলো?এমন শাস্তি তো আমি আমার দাদার জন্মেও দেখিনি। এখন কোন উপায়ও নেই। এভাবেই আমাকে থাকতে হবে। তাই আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম। কোনমতে পড়াটুকু বুঝে তাড়াতাড়ি করে আলআবি ভাইয়াকে নিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসলাম। এতক্ষণ লাইব্রেরিতে আমরা নিচু স্বরে ই কথা বলছিলাম। বাইরে এসে আলআবি ভাইয়াকে স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম,,,
--শাস্তি দিয়েছেন এবার খুশি তো? তাড়াতাড়ি এখন এটাকে খুলুন।আমি বাসায় যাব।
-- আমার হাতকড়া, আমার ইচ্ছে। তাই যখন আমার মন চাইবে তখনই খুলবো(আলআবি ভাইয়া)
তার কথা শুনে আমি জোরে বলে উঠলাম,,,
--কি?কি বললেন?
--জানোই তো এক কথা আমি দুবার বলি না।
-- ভার্সিটিতে না হয় ঢুকেই গিয়েছেন। কিন্তু আপনি লাইব্রেরি তে কি করে ঢুকলেন আগে সেটা বলুন।(আমি)
-- তোমার হাজবেন্ডের পরিচয় দিয়েছি।বলেছি আমি আমার বউকে নিয়ে যেতে এসেছি। (আলআবি ভাইয়া)
--কি? কাকে কাকে বলে বেরিয়েছেন এ কথা?(আমি)
-- কাউকে না শুধুমাত্র তোমাদের ভিসি স্যার কে বলেছি।(আলআবি ভাইয়া)
তার কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পড়ল।তরতর করে রাগ বাড়তে লাগল। বেশ জোরালো কন্ঠেই তাকে বললাম,,,
--কি সব বলে বেড়াচ্ছেন আপনি?আর ভিসি স্যার কে কি করে বললেন এগুলো? লজ্জা শরমের ছিটেফোটাও তো দেখছি আপনার মধ্যে নেই। দেড় বছরে কি সব খেয়ে ফেলেছেন?
--আরে তার তো জানার অধিকার আছে তার বউমা কে হবে।(আলআবি ভাইয়া)
--মানে?(আমি)
-- মানে হল আমরা দূর সম্পর্কের চাচা ভাতিজা।(আলআবি ভাইয়া)
তার কোথায় আমি একটু দমে গেলাম তারপর বললাম,,,
-- আপনারা যা ইচ্ছা তাই হন।আপনি কেন বলবেন আমি আপনার বউ? এরপর আর আমাকে উল্টোপাল্টা কথা বলে দেখেন। আমি কিন্তু সোজা গিয়ে নারী উত্যক্তের কেস করব।
আমার কথার তিনি কোনো জবাব না দিয়ে সোজা হেঁটে যেতে লাগলেন। হাতে টান অনুভব করায় আমিও তার পিছু ছুটলাম। তার পিছু পিছু হাঁটছি আর বারবার হাতকড়াটা খুলে দিতে বলছি। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার কোন কথাই তার শ্রবণন্দ্রিয় পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাচ্ছে না। ভার্সিটি থেকে বের হয়ে একটা রিকশায় উঠে পড়লেন সাথে আমাকেও টেনে রিকশায় উঠালেন। রিক্সায় উঠে তাকে বললাম,,,
--বাসার সামনে গিয়ে ছেড়ে দিবেন তাইতো? এটা বললেই তো হয়।
এটুকু বলেই আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে বসে রইলাম। আমাদের রিকশার হুডি তুলে দেওয়া। বাইরে পরিবেশ স্বাভাবিক। না আছে রোদ আর না আছে আকাশে মেঘ। সেইসাথে আবহাওয়াটাও বলতে গেলে নাতিশীতোষ্ণ। আমার আর আলআবি ভাইয়ার মাঝখানে দেড়-দুই ইঞ্চির মতো ফাঁকা রয়েছে। তবে তার ডানহাত আর আমার বাম হাত একসাথে মিলানো।
রিক্সাটা আমাদের ভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে একটু এগিয়ে বাসার দিকে না গিয়ে উল্টো পথে চলতে লাগলো। আসলে আলআবি ভাইয়া যখন রিকশায় উঠেছেন তখন রিক্সাওয়ালা মামাকে কি বলেছেন সেটা স্পষ্ট শুনতে পাইনি। অচেনা পথ দেখে আমি বলে উঠলাম,,,
-- আরে মামা এই রাস্তা না তো। আপনি তো অন্য রাস্তায় চলে এসেছেন।
তখন রিক্সাওয়ালা মামা পেছনে ফিরে আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকালেন। তিনি রিক্সাওয়ালা মামাকে ইশারায় আশ্বস্ত করলেন এই রাস্তা দিয়েই যেতে। তখন আমি আলআবি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম,,,
-- আপনার মতলবটা কি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
-- এত কথা কেন বল তুমি? মুখ দিয়ে আর একটা শব্দ বের করলে এই রিক্সা সোজা কাজী অফিসে গিয়ে থামবে।জানোই তো কাজী অফিসে কি করা হয়। কি জানো না? (আলআবি ভাইয়া)
শেষের কথাটা বলে তার এক ভ্রু উঁচু করে আমার দিকে তাকালেন।তার কথার অর্থ বুঝতে আমার বেগ পেতে হলো না। তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললাম,,,
--সারাদিন বউ বউ আর বিয়ে বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই আপনার?
-- কতগুলো কথা বলে ফেললে। এখনতো আমি নিজেও এই রিকশাকে কাজী অফিসে যাওয়া থেকে থামাতে পারবে না।(আলআবি ভাইয়া)
তার কথায় আমার মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেল। কারণ একবার সে যা বলে সেটা করে ছাড়ে। তাহলে কি সত্যি সত্যি উনি আজকেই আমাকে বিয়ে করে ফেলবেন? আমি এখন তাহলে কি করব? রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড়ে চলে যাবো? হাতটা একটু উঁচু করতেই মনে পড়ল এই খবিশ লোকটা তো সেই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আমার কি হবে? এই মানুষরূপী খবিশ টাকে জব্দ করার আগেই কি বিয়ে হয়ে যাবে? রিক্সাটা হঠাৎ থামতেই আমার ভাবনার মধ্যে তালা ঝুলে যায়। রিক্সায় বসা থেকে সামনে দৃষ্টি পড়তেই আমার শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। সামনে একটা সাইনবোর্ড এ কালো রং এর মধ্যে সাদা রং দিয়ে খুব সুন্দর করে নিপুন হাতে লেখা আছে--------"কাজী অফিস"।
আমি ভয়ে ভয়ে একবার সাইনবোর্ড দিকে তাকাচ্ছি আর একবার আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি। তখন আমাকে আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,
-- কি হলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। শুভ কাজে নাকি দেরি করতে হয় না।
আলআবি ভাইয়া আমাকে টান দিয়ে রিক্সা থেকে নামিয়ে নিলেন। রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে সোজা কাজী অফিসের দিকে হাঁটা ধরলেন। আমি যেতে না চাইলে এক প্রকার টেনেই সঙ্গে করে নিয়ে চললেন।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলআবি ভাইয়া হাসতে হাসতে গলে পরছেন।বহুদিন পর তার এমন দম ফাটা হাসি যেমন আমায় মুগ্ধ করছে তেমন কিছুটা রাগও হচ্ছে।রাগটা মূলত হচ্ছে নিজের উপর ই।নিজের বোকামিতে নিজেকে ই এখন মনে মনে বকে চলেছি।
কিছুক্ষণ আগে,,,
আলআবি ভাইয়া আমাকে নিয়ে সোজা কাজী অফিসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ যপে যাচ্ছি। ঠিক অফিসটার সামনে আসতেই চোখ বুজে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলাম,,,
--আমি বিয়ের জন্য এখনো রেডি নই।আমি বিয়ে করব না।
কথাটা বলে চোখ খুলেই দেখি আলআবি ভাইয়া আমাকে নিয়ে কাজী অফিস টা পেড়িয়ে পাশের ছোট গলিটা দিয়ে সুরসুর করে ঢুকে গেলেন।আমি তার দিকে তাকিয়ে তার পিছুপিছুই হেঁটে যাচ্ছি। গলিটার শেষ মাথায় এসে আলআবি ভাইয়া দাঁড়িয়ে পরলেন। তার দিকে হতবাক হয়ে আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখেই এখন এই ভাবে হাসছেন।তার দিকে তাকিয়ে তার হাসি দেখেই বুঝতে পারলাম উনি আমাকে কিভাবে বোকা বানিয়েছেন।
আলআবি ভাইয়া কোনো রকমে হাসি থামিয়ে ব্যঙ্গ করে বললেন,,,
--আমি বিয়ে করব না।
বলেই আবারও শরীর দুলিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলেন।আমি রেগে তাকে বললাম,,,
--একদম দাঁত বের করে হাসবেন না।আস্তো খবিশ!!! কোথায় নিচ্ছেন আমাকে?
--খবিশ বলায় তোমার শাস্তির মেয়াদ আরও বাড়লো।ভেবেছিলাম এখনই হাতকড়া খুলে ফেলব কিন্তু মুডটাই তুমি নষ্ট করে দিলে।
তিনি কথা শেষ করে আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ ই দিলেন না। পাশেই আর একটা সরু গলিতে ঢুকে পড়লাম আমরা। এই গলিটারও একেবারে শেষ মাথায় এসে একটা গেটের সামনে দাড়িয়ে পড়লাম আমরা।সামনেই একটা খোলামেলা জায়গায় দেখা যাচ্ছে। যার শেষ প্রান্তে সারি সারি ঘর দেখা যাচ্ছে। সবগুলোই সাদা রং এর সেমিপাকা ঘর।খোলামেলা জায়গায় কিছু বাচ্চারা খেলছে। এক প্রান্তে রয়েছে টিউবওয়েল। কেউ কেউ টিউবওয়েল থেকে পানি নিচ্ছে।কয়েকটা মুরগি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।এখানে না হলেও ২৫-৩০ টা ঘর রয়েছে। আমি যখন এসব দেখতে ব্যস্ত তখন আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,
--যেটা দেখছ এটা আমার ২য় পরিবার।আমার জীবন ওতোপ্রোতো ভাবে ওদের সাথে জড়িত।
আলআবি ভাইয়ার কথায় আমি তার দিকে তাকালাম। দেখি আলআবি ভাইয়া একদৃষ্টিতে খেলতে থাকা বাচ্চা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন।আলআবি ভাইয়া আবার বলতে লাগলেন,,,
--যে বাচ্চাটাকে দেখছ চোখ না বেঁধেই কানামাছি খেলছে ও চোখেই দেখতে পায় না।
আমি ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখি সত্যি ই ৭-৮ বছর এর একটা মেয়ে নির্বিঘ্নে কানামাছি খেলে যাচ্ছে চোখ না বেধে ই।আলআবি ভাইয়ার কথায় আবার তার দিকে তাকালাম।
--চার দিন বাদেই বাচ্চা টার আই ট্রান্সপ্ল্যান্ট হবে। (আলআবি ভাইয়া)
আমাকে ইশারা করে একটা ছেলেকে দেখিয়ে বললেন,,,
--ওখানে খেলার দর্শক সেজে বসে থাকা ছেলেটার পায়ের একটা রগ শুঁকিয়ে গিয়েছে। ছেলেটা ভালো করে হাটতে পারে না।দুই দিন পরেই ওর অপারেশন। ওই যে ওখানে দেখ,যে বুড়ো মহিলা টা বসে আছে তার আপনজন বলতে আমি আর এখানে থাকা মানুষগুলো ছাড়া কেউ নেই।টিউবওয়েল এর ওখানে যে মেয়েটাকে দেখছ ওকে ওর ভালোবাসার মানুষটা ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছিল।এখানে আজ মেয়েটা এসেছে ১৩ দিন হয়েছে। কাল ওকে ওর পরিবার এর কাছে হস্তান্তর করব।ওদিকটায় যে ৩ টা ঘর দেখছ তাতে কিছু পথ শিশু থাকে।ওদের প্রত্যেককেই ৫-৬ বছর বয়সে আমি পেয়েছি। তবে এখন ওরা পথশিশু নয়।
তার কথা আমি একমনে শুনে যাচ্ছিলাম। আলআবি ভাইয়া সামনের খোলামেলা জায়গাটা দেখিয়ে বললেন,,,
--এখানে প্রতিদিন ওদের পাঠশালা বসাই।স্কুলে যা যা শিখে আসে সেগুলো আমাকেও এসে শিখাতে শুরু করে দেয়।সজল আর নিয়াজও মাঝে মাঝে আসে ওদের সাথে আড্ডা দিতে। এই মানুষ গুলোও আমার বাবার আরেকটা পরিবার ছিল।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই মানুষ গুলোকে আমার জীবনে আনতে অনেক দেরি করে ফলেছি।ওদের দেয়া পরিচয় টাই এখন আমার বড় পরিচয় --"বড় ভাই"।
আলআবি ভাইয়া কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন। আমার কানে এখনো তার বলা কথা গুলো বেজে যাচ্ছে।মুহূর্তে মুহূর্তে তাকে আমি নতুন রূপে আবিষ্কার করছি।আর কত রূপ আছে তার?সারাজীবন এমন একটা মানুষের সাথে থাকার সৌভাগ্য কি হবে আমার?
গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই বাচ্চা গুলো একেবারে মৌমাছির মতো ধেয়ে আসলো আমাদের কাছে।আমাদের পিছনেই শাফিন ভাইয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম।দেখি শাফিন ভাইয়ার হাতে অনেকগুলো চিপসের প্যাকেট আর চকলেট। তার পিছনেই একটা ভ্যানে রান্নার সরঞ্জাম সাথে বাজারও রয়েছে। বাচ্চাগুলোর সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো।ওরা বসয়ের চেয়ে একটু বেশিই পাকা।একটা পিচ্চি মেয়ে তো বলেই বসলো,,,
--বড় ভাই এইডা আফনের বউ?
মেয়েটার কথায় আমি থতমত খেয়ে আলআবি ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি দিতেই দেখি উনি হাসি হাসি মুখ করে বাচ্চা টাকে বললেন,,,
--সারাজীবনের #বর্ষণ_সঙ্গিনী।
পিচ্চি টার ছোট মাথায় আলআবি ভাইয়ার বলা কথাটার অর্থ বোধগম্য না হলেও আমার ঠিকই বোধগম্য হয়েছে।তার কথায় একটুও বিরক্তি বা রাগ আমার মধ্যে ধারণ করতে পারলাম না।কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎ করেই মনে পরলো তাকে তো রাগ দেখাতে হবে।আমি তো তাকে শিক্ষা দিব।তৎক্ষনাৎ আমি একটু মিথ্যে রাগ এনে আলআবি ভাইয়ার দিকে রাগীদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,,
--আমি কারো বর্ষণ সঙ্গিনী না।
--আমার জানা মতে তোমাকে তো কেউ কিছুই জিজ্ঞেস করে নি।তাহলে একা একা পাগলের মতো বিলাপ করে যাচ্ছ কেন?(আলআবি ভাইয়া)
আমাকে আলআবি ভাইয়া কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছেন। আমি তার পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে বললাম,,,
--আপনি কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন।আমি পাগ.....
আর কিছু বলতে পারলাম না।আমাকে নিয়ে আলআবি ভাইয়া তার দেখানো সেই বুড়ো মহিলার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলেন। আলআবি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে মহিলাটি বললেন,,,
--এতো সময় লাগে তোর আহনে।
আমাকে দেখিয়ে আলআবি ভাইয়া বললেন,,,
--ওনার ভার্সিটি থেকে আসতে দেরি হয়েছে।
--কি কিহের থেইকা?(বুড়ো মহিলা)
--ভার্সিটি।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়া জোড়ে কথাটা বললেন। আমি আলআবি ভাইয়াকে আস্তে করে বললাম,,,
--আপনি এতো জোড়ে কথা বলছেন কেন?
--তার কানে একটু প্রবলেম আছে। (আলআবি ভাইয়া)
--ওওহ (আমি)
আমি তাকে হাত দিয়ে ইশারা করে সালাম দিলাম সাথে মুখেও বললাম,,,
--আসসালামু আলাইকুম।
--ওয়ালাইকুম আসসালাম।তুমিই তাইলে জুইঁ?(বুড়ো মহিলা)
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালাম।তখন আলআবি ভাইয়া দুষ্টমির স্বরে বললেন,,,
--সিতারা বানু কেমন লাগলো?চলবে তো?
--আরে চলবো মানে ফালাইবো।আয় তুই এইহানে বয়।কহন থেইকা দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া কথা কইতাছোস। (সিতারা বানু)
সিতারা বানু আলআবি ভাইয়া কে চৌকি দেখিয়ে বসতে বলায় আলআবি ভাইয়া গিয়ে বসে পরলেন।হাতে হাতকড়া থাকাতে আমাকেও তার পাশাপাশি বসে পড়তে হলো।আমাকে উদ্দেশ্য করে সিতারা বানু বলে উঠলেন,,,
--কি গো মাইয়া তুমি দেহি আমার নাতিডারে ছাড়া একমুহূর্তও থাকতে পারো না।হাত ধইরাই রাহো দেহি।বুজবার পারছি বেশিই ভালোবাসা তোমগো মইধ্যে।তোমার কতা কইতে কইতেই তো আমার কানডারে ঝালাপালা কইরা একেবারে বয়রা বানাইয়া তুইছে আমারে। এহন থিকা তুমিই তোমার জনরে সামলাও।বহো তোমরা আমি একটু আইতাছি।
সিতারা বানুর কথায় আমি বকাবনে গেলাম।কি বলে গেলেন উনি।হাত পিছনে রাখায় আমাদের হাতকড়া এখনো কারো চোখে পরেনি।আমি আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি মিটমিটিয়ে হাসছেন।
--আমি আমার জনকে সামলাবো মানে?আপনি বুড়ো মানুষটাকে কি বলেছেন? আমার তো এখন মনে হচ্ছে আপনি পুরো এলাকায় ঢোল পিটিয়ে বলেছেন আমি আপনার বউ। আপনার সাথে আর এক মুহূর্ত থাকা যাবে না। তাড়াতাড়ি আমার হাত খুলুন। আমি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাব।
এক নিশ্বাসে আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললাম। আলআবি ভাইয়া আমার দিকে একটু চেপে বসে বললেন,,,
--আমাকে এই আইডিয়াটা আগে কেন বললে না? তাহলে তো এত কষ্ট করতে হত না। চলো তাহলে এখনি আইডিয়া টা কাজে লাগিয়ে ফেলি।
কথাটা শেষ করে আলআবি ভাইয়া বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লেন।আমি হড়বড়িয়ে তাকে বললাম,,,
-- কোথায় যাব? এখন আবার কোন অঘটন ঘটাতে চলেছেন?
--তুমি না একটু আগে বললে ঢোল পিটিয়ে পুরো এলাকাকে বলতে হবে।তোমার কথা ফেলি কি করে বলো?
--উফ! আপনি আসলেই একটা খবিশ।(আমি)
-- তোমার তো দেখি আজকে ছাড়া পাবার কোন ইচ্ছে নেই।(আলআবি ভাইয়)
--কি বললেন?(আমি)
-- আরও একবার খবিশ বলে ফেলেছ। আজকে দিনের মধ্যেও তোমাকে ছাড়ছি না,গজদন্তিনী।(আলআবি ভাইয়া)
--এই গজদন্তিনী উদয় হলো কোথা থেকে আবার? (আমি)
আলআবি ভাইয়া হুট করে ই আমার অনেক টা কাছে এসে কানে কানে ফিসফিসে গলায় বললেন,,,
-- গজদন্তিনী! তুমি কি জানো তোমার গজ দাঁত বিশিষ্ট হাসি দেখলে তোমার গজদাঁতে আমার ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগে।কথাটা মনে আছে নিশ্চয়ই।এখন যদি আর একবার ছাড়া পাওয়ার কথা বলো তবে আমার এই ইচ্ছেটা পূরণ করতে বেশি সময় লাগবে না।
আলআবি ভাইয়া এভাবে কাছে আসলেই আমার হৃদপিণ্ড তার ধকধক শব্দ ধ্বনি কে তড়িৎ গতিতে বাড়িয়ে দেয়।আমার আঙুলের ডগা গুলো ঈষৎ শীতল হয়ে যায়।আলআবি ভাইয়ার ফিসফিসে আওয়াজ শরীরে চিকন এক শিহরণের দোলা দিয়ে যায়।আমি নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে আলআবি ভাইয়ার কাছ থেকে দুইকদম পিছিয়ে এলাম।মনের অভ্যন্তরে কেমন অনুভূতি অনুভব করছি তা নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না।কিন্ত এতটুকু বুঝতে পারছি যে লজ্জা আমাকে পূর্ণ রূপে গ্রাস করে ফেলেছে।যার কারণে চোখ তুলে তার দিকে তাকাতে অব্দি পারছি না।মাথা নিচু করে ওইভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। এর মধ্যেই দেখলাম সিতারা বানুর সাথে আরেকটা পিচ্চি মেয়ে ভাত নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন।সাথে তরকারিও আছে।আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
--খাড়ইয়া আছো ক্যান?আমার ছোট চৌকিতে বইবার মন চায় না তাই তো?
--না না।এমন কিছু না।আপনি ভুল ভাবছেন।(আমি)
--তুমি আবার এগুলো এনেছ কেন?(আলআবি ভাইয়া)
--তোর লেইগা আনছি নাকি।তুই তো দিনে ১৪ বার কইরা আহোছ।জুইঁবুড়ি তো ১৪ বার আহে না।এই প্রথম আইলো।খালি মুখে কি রাহন যায় ওরে।(সিতারা বানু)
তার জুইঁবুড়ি ডাকটা অতি সামান্য হলেও কেন যেন আমার কাছে খুব ভালো লাগলো।আমি হাসি মুখ করে বললাম,,,
--এতো দিন আসিনি তবে এখন থেকে আসবো।আর কি এনেছেন আমার জন্য?খুব খিদে পেয়েছে। দুপুরে এখনো খাওয়া হয়নি।তাড়তাড়ি দিন।
আমার এইটুকু কথাতে তার মুখে খুশির হাসি ফুটে উঠল। তাকে দেখেই বুঝতে পারছি তিনি বেজায় খুশী হয়েছেন। খেতে বসে আমি আর আলআবি ভাইয়া পাশাপাশি বসে আছি।আমি আমার মতো খাওয়া শুরু করে দিলাম। কিন্তু আলআবি ভাইয়া চুপচাপ বসে আছেন।তাকে বসে থাকতে দেখে আমার যে কি পরিমাণ খুশি হচ্ছে। খুশির কারণ হলো হাতকড়ায় রয়েছে আমার বাম হাত কিন্তু আলআবি ভাইয়ার রয়েছে ডান হাত। বেচারার মুখ টা একেবারে দেখার মতোন হয়েছে। মনে মনে আমি হাসতে হাসতে কয়টা গড়াগড়ি যে খেয়েছি তার হিসেব নেই। সিতারা বানু সামনে আছেন বলে মন ভরে হাসতে পারছি না। আলআবি ভাইয়াকে না খেয়ে চুপ করে বসে থাকতে দেখে সিতারা বানু বলে উঠলেন,,,
--কি হইলো তোর?খাইতাছো না ক্যান?
--তোমার জুইঁবুড়ি ই তো খেতে দিচ্ছে না। (আলআবি ভাইয়া)
--ক্যান?আমার জুইঁবুড়ি তোরে কোন দিক দিয়া ধইরা রাখছে?(সিতারা বানু)
আলআবি ভাইয়া আমার আর তার হাতটা সামনে এনে দেখালেন।আলআবি ভাইয়া বললেন,,,
--চাবি আমার অফিসে রেখে এসেছি।
সিতারা বানু আমাদের দুজনকে দেখে হেসে ফেললেন। তারপর আমাকে বললেল,,,
--আমার নাতিডা একটু শয়তানি করে বেশি।এহন কি আর করবা।খাড়াও দেহি কি করা যায়।
তার কথা শুনে আমি হাসি হাসি মুখ করে আলআবি ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। সিতারা বানু রুম ত্যাগের আগেই আলআবি ভাইয়া বললেন,,,
--আমার কাছে কিন্তু উপায় একটা আছে।
--কি?(সিতারা বানু)
--আমাদের দুজনের হাত আটকানো কিন্তু তোমার হাত তো আর আটকানো না।তাই জলদি এসে আমাকে আর তোমার জুইঁ বুড়িকে খাইয়ে দাও।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়ার কথায় আমিও হাত ধুয়ে নিলাম।সিতারা বানু এসে আমাদের দুজনকে খাওয়াতে শুরু করলেন।রক্তের সম্পর্ক থেকে যে আত্মার সম্পর্ক বড় তার উদাহরণ এই সিতারা বানু। কতো যত্নে আমাদের দুজনকে খাওয়াচ্ছেন।
খাওয়া শেষ করে জানতে পারলাম এখানে মাগরিবের নামাজ এর পরে ছোট পরিসরে মিলাদ পড়ানো হবে।নিয়াজ ভাইয়াকে আমিই নিজে কল করে বলি আমি এখানে আছি। ভেবেছিলাম নিয়াজ ভাইয়া বলবে আমি এখানে কি করি বা এখানে আসলাম কি করে এসব জিজ্ঞেস করবে কিন্তু ভাইয়া এসব কিছুই জিজ্ঞেস করে নি। মনে একটা খটকা লাগলো।নিয়াজ ভাইয়া কিছু বলল না কেন?হাতকড়ার চাবি আনার জন্য শাফিন ভাইয়াকে পাঠানো হয়েছে।আলআবি ভাইয়াকে যখন বলেছি নামাজ পরতে হবে আলআবি ভাইয়া ও আর দেরি করেন নি।দ্রুত শাফিন ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।এর মধ্যেই হাতে টান পরলো।দেখি আলআবি ভাইয়া আমাকে ধরে টানছেন।তার দিকে তাকাতেই উনি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললেন,,,
--একটু ওয়াশরুমে যেতে হবে।
তার কথায় কেমন প্রতিক্রিয়া করবো বুঝতে পারছি না।তবে তাকে জব্দ কার ভালো সুযোগ পেয়ে গেলাম।আমি বললাম,,,
--তো যান।ধরে রেখেছি নাকি আমি?
--তুমি ভালো করেই জানো আমি কিসের কথা বলছি।(আলআবি ভাইয়া)
আমি একটু ভ্রু কুচকে বললাম,,,
--কিসের কথা বলছেন?
--তুমি এখানে খুঁটি গেড়ে বসে থাকলে আমি ওয়াশরুমে যাবো কি করে।(আলআবি ভাইয়া)
--তা আমি আপনার সঙ্গে এক সাথে ওয়াশরুমে যাব কি করে।(আমি)
আমার কথায় তিনি দমে গেলেন। তারপর শাফিন ভাইয়াকে কল করে তাড়াতাড়ি করে আসতে বললেন।আমি আলআবি ভাইয়া কে বললাম,,,
--অন্যের জন্য গর্ত করলে নিজেকেই পড়তে হয়।
বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যেই শাফিন ভাইয়া চাবি নিয়ে এসে পড়লেন। হাতটা ছাড়া পেয়ে যোহরের নামাজ আদায় করে নিলাম। নামাজ শেষে সিতারা বানু আর বাচ্চাগুলোর সাথে ভালোই সময় কেটে গেল।
বিকেলের দিকে নিয়াজ ভাইয়া, ভাবি আর বাবাকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম। তাদের থেকে জানতে পারলাম নিয়াজ ভাইয়া এ জায়গা সম্পর্কে আগেই অবগত ছিল। তবে ভাবি আর বাবা জানতে পেরেছে আজকে সকালে। সকালবেলা নাকি আলআবি ভাইয়া নিয়াজ ভাইয়া কে কল করে সবাইকে নিয়ে এখানে মিলাদ উপলক্ষে আসতে বলেছেন। আমাকে ভার্সিটি থেকে আলআবি ভাইয়া এখানে নিয়ে আসবেন সেটা নাকি আগেই নিয়াজ ভাইয়াকে বলে দিয়েছিলেন। নিয়াজ ভাইয়াকে যখন আমি কল করেছিলাম, তখন আমাকে চমকে দেয়ার জন্য ই নাকি বলেনি যে তারাও এখানে আসবে।
আলআবি ভাইয়ার বাবা এই জায়গার নাম দিয়েছেন "পরিবার"। এখানে ঢোকার আগে গেটে দেখেছিলাম একটা সাইনবোর্ড টানানো "পরিবার" নামে।
"পরিবার" থেকে আমরা প্রায় আটটার দিকে আমাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। চল্লিশ মিনিটের মত সময় লাগে ওখান থেকে আমাদের বাসায় আসতে। রাতে ঘুমানোর জন্য যখন বিছানায় শুয়ে পড়ি তখন ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। আমার জানা ছিল এই সময়ে কে ফোন দিতে পারে। তাই ফোনটা রিসিভ করার জন্য যখন হাতে নিলাম তখন ফোনের স্ক্রিনে বর্ষণ সঙ্গী নামটা দেখে আলআবি ভাইয়ার বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল---
" তোমাকে এখানে এনে আজকে ওই বাচ্চা ছেলে-মেয়ে গুলোকে না দেখিয়েই মিলাদ পড়িয়ে বিদায় দিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু বাচ্চা গুলোর কথা তোমাকে এই জন্যে বললাম যাতে তুমি জানতে পারো আমি কয়েকদিন ব্যস্ত থাকবো,তোমার সাথে হয়তো দেখাটাও করতে পারবো না। তাই প্লিজ যখন আমি দিন শেষে কল করব তখন কথা না বললেও অন্তত ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে রেখো। তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেই না হয় রাত পাড় করবো"
আমার ভাবনার মধ্যেই ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গিয়ে দ্বিতীয়বার বাজতে লাগল। ফোনটা রিসিভ করে কথা বললাম না। কেবল কানে ধরে রাখলাম। এই মুহূর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ওপাশ থেকে ভেসে আসা কন্ঠটা চুপচাপ শুনতে ইচ্ছে করছে। ওপাশ থেকে শান্ত কন্ঠে ভেসে আসলো -"হ্যালো, হ্যালো। শুনতে পাচ্ছ? হ্যালো। সত্যি কথা বলবে না "এরপর তার আর কোন শব্দ শোনা যায়নি তবে। আমরা কেউই কল টা কাটিনি।
এভাবে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো সেকেন্ড, অনেক গুলো মিনিট, অনেকগুলো ঘন্টা আর সেই সাথে কেটে গেছে পাঁচদিন। এই পাঁচ দিনে আমার সঙ্গে আলআবি ভাইয়ার কোনো দেখা সাক্ষাত হয় নি।কিন্তু প্রতিদিন রাতে সে কল করতো। তবে কেউ কোন কথা বলতাম না। আলআবি ভাইয়া কিছু সময় "হ্যালো হ্যালো" বলে চুপ হয়ে যেতেন।ওভাবেই কেটে যেত রাত। সকালে উঠে আমি কলটা কাটতাম।
ঘড়িতে রাত আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট। আমি,নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি রেডি হচ্ছি। কারণ আমরা আজ বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা দিব। আমাদের বাস রাত সাড়ে নয়টায় ছাড়বে। নিয়াজ ভাইয়ার অফিস থেকেই বাস দেওয়া হবে। যে রিসোর্টের ওপেনিং সেলিব্রেশনে আমরা যাচ্ছি সেটা মূলত অন্য কারো নয়।ওটা আলআবি ভাইয়ার নিজের।তাই অফিসের প্রত্যেকটা স্টাফ কেই নেয়া হচ্ছে।বলতে গেলে কিছুটা পিকনিকের মতোও।অর্থ্যাৎ এক কাজে দুই কাজ হচ্ছে।
চলবে...
Writer:- হুমাশা এহতেশাম